নীড়বৃষ্টি পর্ব-১৯

0
5

নীড়বৃষ্টি
লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান
১৯.

সে রাতে শেষমেশ স্নেহার আর জ্বর আসে না। পরের দিন সকাল থেকেই সে ফুরফুরে অনুভব করে। রেডি হয়ে ক্লাসেও যায়। তবে ক্লাসে ঠিকঠাক মন বসাতে পারে না আর। মনে মনে ভাবতে থাকে কী করে এই আকাশ নামক ঝঞ্জাট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কিন্তু মিনিটের পর মিনিট, ঘন্টার পর ঘন্টা ভেবেও সে উপযুক্ত কোনো উপায় খুঁজে পায় না। শেষ পর্যন্ত স্নেহা ঠিক করে সে নিজের ভাষাতেই কথা বলবে ওই চ্যাংড়ার সাথে। সরাসরি, স্পষ্ট ভাষায় বলবে যেন তার পিছু ছাড়ে।

ভাবনা অনুযায়ী কাজে লেগে পড়ে স্নেহা। ক্লাস শেষে বের হতেই সে মুখোমুখি হয়ে যায় ফাতড়া আকাশের। দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে মিরিন্ডা খাচ্ছে। স্নেহাকে দেখতেই সোজা হয়ে দাঁড়ায়। পরনের পোশাক আশাক খুব একটা সুবিধাজনক নয়। কেমন মাস্তানদের মতো সেজে আছে। যাকগে, সে-সব দেখা স্নেহার কাজ নয়। সে এগিয়ে গিয়ে সরাসরি আকাশের মুখোমুখি দাঁড়ায়। আকাশ এতে চমকায়। সে আশা করেছিল স্নেহা সবসময়ের মতো তাকে অদেখা করে চলে যাবে। কিন্তু ম্যাডামের মনে বোধহয় একটু মায়া জন্মেছে। স্নেহা সোজাসাপ্টা বলে,

“আধঘন্টা পর, ক্যাম্পাসের বাহিরে কাঠবাদাম গাছের ওখানে চলে আসবে। জরুরী কথা আছে। বি অন টাইম। এক মিনিটের বেশি অপেক্ষা করবো না আমি।”

নিজের কথা শেষ করেই স্নেহা হনহনিয়ে ক্যান্টিনের দিকে চলে যায়। আকাশ দাঁড়িয়ে রয় বিশ্ব জয়ের হাসি ঠোঁটে নিয়ে। সে আন্দাজ করতে পারছে স্নেহা তাকে কী বলবে। কিন্তু তার সে-সব নিয়ে মাথাব্যথা নেই। স্নেহা আজ প্রথম নিজ থেকে এপ্রোচ করেছে, এটাই তার জন্য বড়ো ব্যাপার।

__________

উত্তপ্ত আবহাওয়া আজ ছুটি নিয়েছে। প্রকৃতি জুড়ে ছুটছে দমকা হাওয়া। সে-ই হাওয়ায় রাস্তার ধূলোবালি, শুকনো পাতা সব উড়ছে। উড়ছে স্নেহার আঁচলও। কিন্তু স্নেহা সেটাকে বেশিক্ষণ উড়ার সুযোগ দিলো না। ওড়না শালের মতো এমনভাবে গায়ে প্যাঁচিয়ে নিলো যে সেটার এক অংশও আর ঝুলে নেই। ক্যাম্পাস গেট পেরিয়ে রাস্তা সংলগ্ন কাঠবাদাম গাছের দিকে অগ্রসর হতে হতে সে দূর থেকেই আকাশকে দেখতে পায়। স্নেহা ছোট করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে। মনে মনে সে যে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়ার জন্যই প্রস্তুত। এজন্যই মানুষের চলাচল আছে এমন রাস্তার ধারে দেখা করতে বলেছে। যেন সামান্য তেড়িবেড়ি করলে স্নেহা ঘুরিয়ে দুটো লাগাতে পারে।

আকাশ গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন চালাচ্ছিল। স্নেহাকে দেখতেই সে ফোন রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। জিজ্ঞেস করে,

“এখানে কথা বলবে? নাকি রিকশা ডাকবো? নিরিবিলি কোথাও গিয়ে বসতে চাও?”

কী চমৎকার মামার বাড়ির আবদার। যেন জনম জনমের পরিচয় তাদের! স্নেহার জঘন্য মেজাজ খারাপ হয়। সে মনে মনে বলে উঠে,

“শালার পুরুষ জাত। আমাকে পাগলা কুত্তা কামড়িয়েছে যে তোর সঙ্গে নিরিবিলি কোথাও গিয়ে বসবো? আমার চেহারা দেখে আমাকে কচি খুকি মনে হয়? চ্যাংড়া, লাফাঙ্গা যত্তসব। খালি চিপায় যাওয়ার ধান্দা খুঁজে।”

স্নেহার চেহারার প্রতিক্রিয়া দেখে আকাশ সাফ বুঝে যায় যে স্নেহা তার প্রস্তাবে বিরক্ত। তাই সে বলে,

“জরুরী কথা কী?”

“দেখো, ভাই। তুমি আমার থেকে বয়সে ছোট না-কি বড়ো সেটা আমার কাছে ফ্যাক্ট না। কারণ তুমি-ই আমার কাছে কোনো ফ্যাক্ট না। ওইসব কবিতা টবিতার ভাষা মনে নেই। কী যেন শীতল পাটি, ছায়া হ্যানত্যান কী লিখেছ না? ওগুলোর জন্য আমার তোমাকে দরকার নেই। হলে আমার ঘুমানোর জন্য তোষক, চাদর, বালিশ আছে। বাহিরে রোদ বৃষ্টির জন্য ছাতা আছে। আর নিজের খেয়াল নিজের রাখার মতো এবিলিটিও আছে। তাই নিজের দরদ নিজের কাছে রাখো। আমাকে স্টক করা বন্ধ করো। শাট দ্যা চ্যাপ্টার!”

আকাশ মোটেও অবাক হয় না। বরং স্বাভাবিক স্বরে জিজ্ঞেস করে,

“ব্যস, এট্টুকই?”

স্নেহা এবার মেজাজ খারাপ নিয়ে বলে,

“দেখো ছেলে, নিজের লাগাম টানো। তুমি যা করছো, এসবে আমি বিরক্ত হচ্ছি। আমাকে রাগিও না।”

বলেই স্নেহা পিছু ঘুরে চলে যেতে নেয়। কিন্তু ঠিক সে-ই মুহূর্তেই পেছন থেকে আকাশ তার এক হাতের কব্জি চেপে ধরে বাঁধা দেয় কিছু বলার উদ্দেশ্যে। স্নেহা সে কথা শোনার অপেক্ষা করে না, বরং ঘুরে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দেয় সরাসরি। আকাশ নিজের ডান গাল চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে স্নেহার পানে তাকিয়ে। স্নেহার তখন রাগে শরীর রি রি করে কাপছে। এতটা দুঃসাহস, এতটা? তার হাত ছুঁয়েছে? স্নেহার ইচ্ছে করছে রাগে এই ছেলের হাত এক কোপে ফেলে দিতে। অনুমতি ছাড়া যে-ই ছেলে কোনো মেয়ের হাত ধরার সাহস রাখে, সে-ই ছেলে আরো অনেক কিছু করারই সাহস রাখে।

স্নেহা রাগে কাঁপতে কাঁপতে কেবল বলে,

“একদম হাত কেটে দিবো, অসভ্য। একদম কেটে দিবো। ছোঁয়ার সাহস কী করে হয়? তোর বাপের প্রোপার্টি হই আমি? থাপড়ে প্রেমের ভূত ছুটিয়ে দিবো। আমার আশেপাশে আর কখনো দেখলে খুব খারাপ হবে।”

আকাশ ততক্ষণে আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে অনুনয় শুরু করেছে,

“আই এম সরি। ভুল হয়েছে, স্নেহা। আমার খারাপ ইন্টেনশন ছিল না। তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাইছিলাম। প্লিজ… সরি… আমার বুঝা উচিত ছিল তুমি সেন্সিটিভ।”

স্নেহা এসব সস্তা কথা শোনার আগ্রহ দেখালো না। রাস্তায় আশেপাশে ইতিমধ্যে মানুষ জমা হয়ে গিয়েছে। সে দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করে। একটা রিকশা ডেকে দ্রুত উঠে বসে। নিতুনদের বাসার ঠিকানা বলে একা হাতেই হুড টেনে নেয়। রিকশায় বসে তখনও সে কাঁপছে। সে যা ভয় পাচ্ছিলো তাই হলো। ছেলেটা বেপরোয়া আচরণ করে বসেছে। রাগের মাথায় স্নেহাও চড় দিয়ে ফেলেছে। এখন? এখন যদি স্নেহার কোনো ক্ষতি করে? এমপির না শালা হয়? অসম্ভব তো না। কী করবে স্নেহা? ভয় হচ্ছে তার। সবাই যে-ই মেয়েটাকে সিমেন্টের তৈরী ভেবে বসে, সে-ই মেয়েটা আসলেই ভয় পাচ্ছে। ভয়ে দিশেহারা অনুভব করছে। এই আপদ স্নেহার কতটুকু ক্ষতি করে থামবে? কে জানে!

__________

নিতুনদের বাসায় স্নেহা প্রবেশ করে অস্বাভাবিক অবস্থায়। নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে চাইলেও সম্ভব হয় না। তার ফ্যাকাশে মুখ দেখে নীলা বেগম চিন্তিত হোন। মেয়েটাকে নিতুনের রুমে না নিয়ে লিভিং রুমে বসতে দেয়। স্নেহার তখনও দুঃশ্চিন্তায় শরীর কাঁপছে। আন্টির এতো প্রশ্ন তার কান অব্দি যায় না। সে কেবল নিজ থেকে বলে বসে,

“আন্টি, পানি হবে?”

নীলা বেগম খুব অবাক হয়। এই মেয়েটা ইতিপূর্বে কখনো মুখ ফুটে পানি চায় নি। আজ চাইছে। খুব খারাপ কোনো কারণে? নীলা বেগম আপাতত কিছু জিজ্ঞেস করে না। চলে যায় দ্রুত পানি নিয়ে আসতে।

অয়ন বাসায় ছিল। নিজ রুমে সিভিল আউটফিটে রেডি হচ্ছিল সে থানায় যাওয়ার জন্য। আজ তেমন জরুরী কাজ না থাকায় সে বাসায় রয়ে গিয়েছিল লাঞ্চ শেষে বের হবে বলে। কলিংবেলের শব্দ শুনতেই সে বুঝে গিয়েছিল যে নিতুনের মিস এসেছে। তাই তো দ্রুত হেয়ার ব্রাশ করে গায়ে পারফিউম মাখছিল। কিন্তু রুম ছেড়ে বের হতেই লিভিং রুমে স্নেহাকে ওভাবে বসে থাকতে দেখে সে চমকে তাকায়। স্নেহাকে চিনতে কষ্ট হয়। মেয়েটার চোখে মুখে আতংক মিশে আছে মনে হচ্ছে।

অয়ন কিছু বুঝে উঠতে পারে না। সামনে খাবার টেবিলে আম্মুকে দেখতে পায় আম্মুর কাছে যায়। জিজ্ঞেস করে,

“উনার কী হয়েছে?”

নীলা বেগম চিন্তিত স্বরে জবাব দেয়,

“জানি না। মুখ কেমন দেখাচ্ছে। পানি চাইলো শুধু। জোর করে এই মেয়েকে কখনো সামান্য নাস্তা অব্দি করানো যায় না। আজ প্রথম নিজ থেকে পানি চাইছে।”

অয়নের অস্থির লাগছে। সে জানে না এ-ই মুহুর্তে স্নেহার সামনে যাওয়া ঠিক হবে কি-না। কিন্তু সে তবুও চুপচাপ আম্মুর পিছুপিছু লিভিং রুমের দরজা অব্দি যায়। আম্মু বুদ্ধিমান নারী, তিনি সামলে নিতে পারবেন। তাই স্নেহাকে অস্বস্তিতে না ফেলতে অয়ন দূরেই দাঁড়িয়ে রয়।

স্নেহা পানির গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে পুরো পানি শেষ করে। নীলা বেগম কিছু জিজ্ঞেস করেন না। মেয়েটার পিঠে হাত বুলিয়ে দেন আলতো করে। অয়ন দূরে হাত পকেটে ভরে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে স্নেহাকে। তার মাথায় কেবল একটাই সম্ভাবনা উঁকি দেয়। স্নেহার পিছু নেওয়া সে-ই লাফাঙ্গা ছেলেটা কি কোনোভাবে স্নেহাকে উত্যক্ত করেছে? অয়ন মনে মনে প্রার্থনা করে যেন এরকমটা না হয়ে থাকে। না-হয় অয়নের হাতে খুব মার খাবে। সে-ই খুব মারটা জঘন্য ধরনের হবে। পুলিশের লোকেরা মারের ক্ষেত্রে খুবই বেরহম কিসিমের হয়।

স্নেহা এক মিনিটের মধ্যেই ধাতস্থ হয়ে নিজেকে সামলে নেয়। নীলা বেগমকে মিছে অযুহাত দেখিয়ে বলে,

“সরি আন্টি, গলা শুকিয়েছিল। নিতুন রুমে আছে? আমি ওকে পড়িয়ে ফেলি তাহলে।”

স্নেহা নিজ থেকে আগ্রহ না দেখানোতে নীলা বেগমও আর আগ বাড়িয়ে কিছু জিজ্ঞেস করে না। কেবল বলেন,

“শরীর খারাপ লাগলে আন্টিকে বলবে।”

স্নেহা ব্যাগ কাধে তুলে উঠে দাঁড়ায়। অয়নকে পাশ কেটে বেরিয়ে যায়। সোজা চলে যায় নিতুনের রুমে। অয়ন তখনও দাঁড়িয়ে রয় আপন জায়গায়। নীলা বেগম এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,

“তোমার দেরি হয়ে যাচ্ছে না, বাবা?”

অয়ন বাহানা দেখায়,

“ধূলোঝড় হচ্ছে, আম্মু। এই অবস্থায় বাইক চালানো ঝামেলা। রুমে কিছুক্ষণ রেস্ট নেই আমি। বাতাস কমলে পরে বের হবো।”

__________

বিজ্ঞান বইয়ের আলোর অধ্যায় খুলে বসে আছে নিতুন। মিস তাকে হাইলাইটার দিয়ে দাগানো লাইনগুলো রিভিশন দিতে দিয়েছে। সে-ই ফাঁকে স্নেহা তার গতকালের হোমওয়ার্ক চেক করছে। হঠাৎ মিস তাকে ডেকে বলে,

“অংক শুধু আটটা করেছো কেন? আরো দুটো না দিয়েছিলাম? ওগুলো করো নি?”

নিতুন সত্য স্বীকার করে বলে,

“না, মিস। ম্যাথ দুটো আমি বুঝছিলাম না। আরেকবার বুঝিয়ে দেওয়া যাবে আজকে?”

স্নেহা খুশি হয় নিতুনের উপর। কিছুদিন আগেও এই ছেলে হোমওয়ার্ক করতো না একদিনও। কপাল গুণে কখনো করলেও, সেটা গাইড বা সলিউশন দেখে করে রাখতো। সে-ই তুলনায় ছেলেটার মধ্যে ভালোই ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। স্নেহা হাফ ছেড়ে বাঁচে এতে। সে বেশ স্বাভাবিক স্বরেই বলে,

“আচ্ছা, পড়ানো শেষে এই দুটো ম্যাথ আলাদা করে বুঝিয়ে দিবো। তুমি এখন রিভিশন দাও। পড়া ধরলে কিন্তু উত্তর দেওয়ার সময় আটকালে মাইর খাবা।”

নিতুন আবার পড়ায় মন দেয়। স্নেহার ঠিক সে-ই মুহূর্তে ফোনের রিংটোন বেজে উঠে। সে দ্রুত ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে একটা আননোন নাম্বার। স্নেহা কলটা রিসিভ করে না। বরং কল কেটে দিয়ে ফোন সাইলেন্ট করে ফেলে। তবে এক সেকেন্ডের জন্য ওয়াই-ফাইটা অন করতেই তার হোয়াটসঅ্যাপে এসে ভীড় করতে দেখা যায় ৯৯+ ম্যাসেজ। স্নেহা চমকায় কিছুটা। আননোন একটা নাম্বার থেকে এতগুলো ম্যাসেজ দেখে সে অবাক হয়েছে কিছুটা। হোয়াটসঅ্যাপে যেতেই এক এক করে সবগুলো ম্যাসেজ সে পড়তে শুরু করে।

“Sneha, I’m so sorry.
Look, please I’m sorry.
আমার ইন্টেনশন ছিল না খারাপ কিছু।
রাগ করে থেকো না, প্লিজ।
স্নেহা, ফর গড সেক রিপ্লাই করো।
আমি জানি আমি বেস্ট না।
কিন্তু একটা সুযোগ দাও।
Sneha, I beg you.
আমি শুধু তোমাকে থামাতে চাইছিলাম।
প্লিজ, বোঝার চেষ্টা করো।
আমি তোমাকে কখনো ছাড়বো না।
স্নেহা, আই লাভ ইউ…
প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড।
I really love you.
Give me a chance.
স্নেহা, আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
এতো কেন ইগনোর করো আমাকে?
কী চাও তুমি?
তুমি যা বলবে আমি তা-ই হবো।
তবুও একটা সুযোগ দাও।
তোমার সব কথা মানবো, কিন্তু তোমাকে ছাড়বো না।
Sneha…
Snehaaa…
কী করলে বুঝবে যে আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি?
আমি কি পাগলামি করবো কোনো?
হাত কেটে তোমার নাম লিখবো…”

ব্যস, আর কিছু পড়ার সাহস হয় না স্নেহার। তার নিজেরই মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে ইতিমধ্যে। এতো জঘন্য পরিস্থিতিতে আগে কখনো পড়ে নি সে। কী করবে সে? এই ছেলে এতটা ডেস্পারেট কেন? আল্লাহ… স্নেহা কী করে এই তারছিড়ার থেকে রেহাই পাবে?

এতো ভাবনায় ডুবে থাকা স্নেহার ফোনে আবারও একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে। স্নেহার চোখ এড়ায় না তা। সে নিতুনের দিকে আড়চোখে তাকায়। ছেলেটা খেয়াল করছে মিসের এই অস্বাভাবিক আচরণ। স্নেহা একটা বড়ো করে নিঃশ্বাস ফেলে নিতুনকে বলে,

“তুমি রিভিশন দিতে থাকো, আমি একটু কলটা এটেন্ড করে আসি।”

কথাটুকু বলেই স্নেহা দ্রুত ফোন হাতে নিতুনের রুমের বারান্দায় চলে যায়। কলটা আকাশই করছে বলে তার ধারণা। একটু ঠান্ডা মাথায় ছেলেটাকে বুঝ দেওয়ার জন্য সে যে-ই না কলটা রিসিভ করে হ্যালো বলে, সঙ্গে সঙ্গে অপরপ্রান্ত থেকে একটা অপরিচিত যুবক বলে উঠে,

“ভাবী? ভাবী… আকাশ হাত কেটে ফেলছে। ভাবী, ওর অবস্থা ভালো না…”

বাকি আর কিছু কান অব্দি পৌঁছায় না স্নেহার। হুট করেই সে অনুভব করে গতরাতের সে-ই চোরা জ্বরটা তাকে এক মুহূর্তে কাবু করে নিয়েছে। দুঃশ্চিন্তা পুরোপুরি ভাবে গ্রাস করে ফেলেছে স্নেহার মস্তিষ্ক। ছেলেটা সুইসাইড করেছে? বেঁচে আছে না-কি মরে গিয়েছে? সুইসাইড করার আগে কি সুইসাইড নোটে স্নেহার নাম লিখেছে? নাম লেখার অবশ্য প্রয়োজন নেই। স্নেহা এভাবেও ফেঁসে যাবে এই কেসে। পুলিশ কি ওকে ধরবে? তারপর? তারপর কী হবে? কী হবে? স্নেহা কী করবে? ও পিছু নিতে না বলেছে, মরতে তো বলে নি। ওর জীবন এভাবে আজাব কেন বানাচ্ছে সবাই?

এতো এতো প্রশ্ন, ভয়, দুঃশ্চিন্তা, জ্বর, আতংক সব কিছুর ভার আর বইতে পারে না স্নেহা। ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়ে। শরীর অসাড় হয়ে আসছে। মস্তিষ্কও কেমন শূন্য হয়ে আসছে। আতংকে পুরো শরীর জমে বরফ হয়ে গিয়েছে তার। কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে আসে।

চলবে…

[ কপি করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ]