ঘর কুটুম পর্ব-১২

0
3

#_ঘর_কুটুম_
#_মারিয়া_রশিদ_
#_পর্ব_১২_

কলেজ করিডোর দিয়ে অরুনিমা হেঁটে যাচ্ছে। সদ্য শেষ হওয়া ক্লাসের হালকা ক্লান্তি তার চোখে মুখে। হাতে নোটখাতা, কাঁধে ব্যাগ, চোখে ব্যাস্ততা। সে সোজা এগিয়ে যাচ্ছে টিচার্স রুমের দিকে। হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠলো ব্যাগের ভেতর থেকে। মোবাইলটা বের করতেই স্ক্রিনে ভেসে উঠলো পরিচিত নাম আরাভ। এই কয়েকদিনে আরাভ অনেকবার ফোন করেছে। কথা হয়েছে, হাসাহাসি হয়েছে, এমনকি দু-একবার রাগও হয়েছে। অথচ, প্রতিবারই কোনো না কোনোভাবে মীমাংসা হয়ে গেছে। অরুনিমার নিঃসঙ্গ জীবনে আরাভ যেন আচমকা এসে পড়া এক টুকরো উষ্ণতা। প্রথমদিকে সে দূরে রাখার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু আরাভ ছিলো অদ্ভুত একধরনের নাছোড়। শেষমেশ, সে নিজেই আর চেষ্টাটা করেনি। কারণ? ভালো লাগছিলো। কলটা রিসিভ করলো অরুনিমা। গলায় স্বাভাবিক ভঙ্গি রেখে বলল সে,
–” জি, বলুন?”

ওপাশ থেকে আরাভের কণ্ঠ ভেসে এলো,
–” কলেজ থেকে বের হবে কখন?”

–” কেন?”

–” তোমার সঙ্গে দেখা করতে চাই।”

–” আমি চাই না।”
সোজা জবাব দিল অরুনিমা। আরাভ একটু থেমে বললো,
–” তুমি কি চাও, আমি এখন কলেজে ঢুকে যাই? সামনে এসে দাঁড়াই তোমার?”

অরুনিমা থেমে দাঁড়ায় করিডোরের মাঝখানে। গলার স্বর একটু নিচু করে ফিসফিস করে বলে,
–” আপনি সব সময় এমন জেদ করেন কেন? বলেন তো?”

আরাভ হাসে না, রাগও করে না। কেবল একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়,
–” কখন বের হবে বলো?”

অরুনিমা গলার স্বর মোলায়েম রেখে বলে,
–” আজ কলেজ শেষ করে একটু রুপন্তির বাসায় যাবো। ওর বাচ্চাকে দেখতে যাবো।”

একটু চুপচাপ হয়ে যায় ওপাশ। তারপর আরাভ বলে,
–” ওহ। আমি ড্রপ করে দেই?”

–” না, থাক। আমি একাই যেতে পারবো। আপনাকে কষ্ট করতে হবে না। আপনি রেস্ট নিন গিয়ে।”

আরাভ কিছু বলে না। ঠাস করে কল কেটে দেয়। অরুনিমা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছুক্ষণ মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকে, আড়চোখে যেন প্রশ্ন উঁকি দেয়। এমন করলো কেন মানুষটা? সে তো না করেছিলো, মানে না মানা, এই তো স্বাভাবিক। কিন্তু, আরাভ হঠাৎ এভাবে কিছু না বলেই ফোন রেখে দিলো কেন? হালকা কপালে ভাঁজ পড়ে। না চাইলেও মনটা খারাপ হয়ে যায়। অরুনিমা ধীরে মোবাইলটা ব্যাগে ঢুকিয়ে নেয়। তারপর নিঃশব্দ পায়ে এগিয়ে যায় অফিস রুমের দিকে।

সন্ধ্যা নেমেছে শহরে। রুপন্তির বাসা থেকে বেরিয়ে আসার সময় অরুনিমা একবার চারপাশে চোখ বোলায়। দোকানপাটে রঙিন বাতির ঝলকানি, ফুটপাতে হাঁটা মানুষ, কাঁচের ভেতর আলো জ্বলা শোরুম, সব মিলিয়ে মনে হয় যেন দেশটা বদলে গেছে। অচেনা এক শহরের মতো লাগে। অথচ এই তো প্রতিদিনের রাস্তা। ফুটপাত ধরে হেঁটে চলেছে সে। পায়ের ছন্দের সঙ্গে যেন মনেরও একটা তাল মিশে আছে। হঠাৎ করেই আরাভের কথা মনে পড়ে যায়। মুখের কোণে এক চিলতে হাসি খেলে যায়। সকালবেলা কলেজে ফোন কেটে দেওয়াটা অরুনিমার একটু খারাপ লেগেছিলো ঠিকই। কিন্তু ক্লাস শেষে কলেজ গেট পেরোতেই দেখে, গাড়ির পাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরাভ। চুপচাপ। তার সেই চিরচেনা চোখের দৃষ্টি নিয়ে। একটাও কথা না বলে, তাকে রুপন্তির বাসার সামনে ড্রপ করে দিয়ে যায়।

একটা দীর্ঘ, চাপা নিশ্বাস ফেলে অরুনিমা। ভেতরে জমে থাকা আবেগগুলো যেন একটু উথলে ওঠে। যতই সে দূরে থাকতে চায়, ততই যেন আরাভ ধীরে ধীরে ঘিরে ফেলে তাকে। একটা সময় ছিল যখন ওরকম যত্ন, ওরকম দায়িত্ব সবকিছুকেই অরুনিমা বিরক্তিকর মনে করতো। এখন কেন জানি সেই দায়িত্বে একটা আশ্রয় খুঁজে পায় সে। একটা বড় শপিংমলের সামনে এসে থামে। মনে হয়, কিছু কেনাকাটা দরকার। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে, আরাভের মেসেজ এসেছে। অরুনিমা উত্তর দিয়ে ফোনটা ব্যাগে রেখে দেয়, তারপর ঢুকে পড়ে শপিংমলের ভেতরে। বাইরে যতটা কোলাহল, ভেতরে ততটাই শান্ত। হালকা আলো, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ। অরুনিমা ধীরে ধীরে দোকান ঘুরে দেখে, জামা কাপড় টাচ করে, রঙ বিচার করে। এমন সময়, পেছন থেকে এক কিশোর কণ্ঠ ভেসে আসে,
–” আপুনি?”

ঘুরে দাঁড়ায় অরুনিমা। উঁচু লম্বা একটা ছেলে। বয়স খুব বেশি না, স্কুলেরই হবে। ছেলেটাকে চিনতে দেরি হয় না তার। ও অরকো। তার মায়ের দ্বিতীয় সংসারের ছেলে। কয়েকবার তার বাসায় এসেছে। অরকো এগিয়ে এসে হেসে বলে,
–” আপুনি! তুমিও শপিং করতে এসেছো? আমি আর আম্মুও এসেছি।”

অরুনিমার চোখ একটু খুঁজে বেড়ায় আশেপাশে। হয়তো মা কে একবার দেখার আশায়।

–” তোমার আম্মু কোথায়?”
প্রশ্নটা একরকম নিজের অজান্তেই বেরিয়ে আসে অরুনিমার মুখে।

–” ভেতরের একটা শপে।”

–” তুমি এখানে বাইরে দাঁড়িয়ে কী করছো?”

–” আমি ঘুরে ঘুরে দেখছি কি কেনা যায়। চলো, তোমার সঙ্গে আম্মুর দেখা করাই।”

অরুনিমার মুখ শক্ত হয়। চোখে যেন হঠাৎ কিছু একটা নামে, ধোঁয়ার মতো।
–” থাক। তার কোনো প্রয়োজন নেই। তুমি তোমার আম্মুর কাছে যাও।”

কথাটা বলে অরুনিমা পা বাড়ায়। কিন্তু পেছন থেকে আবার সেই মায়া মাখা কণ্ঠস্বর,
–” আপুনি!”

চলে যেতে গিয়েও থেমে যায় অরুনিমা। ডাকে ছিলো একরকম নির্মল আবেগ। মুখ ফিরিয়ে তাকায় সে। অরকো ধীরে বললো,
–” আমি তোমাকে অনেক মিস করি, আপুনি! তুমি আমাদের সঙ্গে থাকলে অনেক মজা হতো, অনেক ভালো লাগতো। আমার আপুনি আমার সাথেই থাকতো। আম্মুও তোমাকে খুব মিস করে।”

চোখ ঝাপসা হয়ে আসে অরুনিমার। কিছু বলে না সে। তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে বেরিয়ে আসে শপিংমলের দরজা দিয়ে। বুকের ভেতরটা খালি খালি লাগে। যেন কোনো শব্দ নেই, অথচ কানে কেবল বাজে একটা শব্দ, ভালোবাসার না বলা কথা, চেনা অচেনার টান, কিছু অব্যক্ত সম্পর্কের শিকড়। ছেলেটা তাকে ভাই বোনের মায়ায় জড়াতে চাচ্ছে নাকি? চোখের কোণে পানি এসে যায়। নিজের অজান্তেই হাত মুছে নেয় সেগুলো। এমন সময় পাশ থেকে খুব পরিচিত, মোলায়েম এক কণ্ঠ ভেসে আসে,
–” অরু!”

চমকে ঘুরে দাঁড়াল অরুনিমা। তার সামনে দাঁড়িয়ে আরাভ। সাদা রঙের একখানা সিম্পল টি-শার্ট পরা, তার সাথে কালো ব্যাগি প্যান্ট। হালকা এলোমেলো চুল, চোখেমুখে একরকম অন্যমনস্ক সৌন্দর্য। দোকানপাটের ঝলমলে আলো এসে পড়েছে আরাভের মুখে। সেই আলোর আড়ালে তার গাঢ় চোখজোড়া যেন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কিছু বলার আগেই আরাভ এক ধাপ এগিয়ে এল। তার কণ্ঠ নরম, সাবলীল।
–” কি হয়েছে, অরু? তোমার চোখে পানি কেন?”

অরুনিমা দ্রুত চোখের পলক ফেলে নেয়। হাত দিয়ে চোখ মুছে ফেলে অজান্তেই। গলার স্বর স্বাভাবিক রাখার ব্যর্থ চেষ্টায় বলে,
–” কই? না তো।”

আরাভ হালকা হেসে ওঠে। সেই হাসির ভেতর কোথাও একটা অদ্ভুত প্রশ্রয়, একটা মায়া।
–” তুমি যখন নিজেকে লুকাতে চাও, তখন তোমাকে আরও বেশি সুন্দর লাগে।”

মনে হলো, চারপাশের কোলাহল মুহূর্তে থেমে গেছে।
অরুনিমা চুপচাপ তাকিয়ে থাকে ওর মুখের দিকে। খানিক থেমে বলে,
–” আপনি এখানে আসতে গেলেন কেন?”

–” রাত হয়ে গেছে। বাসায় একা যাবা?”
আরাভের কণ্ঠে স্বাভাবিক কর্তব্যবোধ।

–” এতোকাল তো একাই চলেছি।”
অরুনিমার কণ্ঠে একটু কটুক্তি নিজের প্রতি।

–” এতোকাল কি করেছো, আমি জানতে চাই না। কিন্তু এখন আমি আছি, তাই আর একা একা চলা যাবে না।”

শব্দগুলো যেন গায়ে এসে পড়ে। অরুনিমা ধীরে তাকায় আরাভের চোখে। সেই চোখে কোনো দাবী নেই, তাড়া নেই, শুধু একরকম নিশ্চিন্ততা। তারা দু’জন কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। চোখে চোখ রাখে।

–”কতদিন এরকম ভাবে চলবে?”
নীরবতা ভাঙে অরুনিমা।

আরাভের গলা শান্ত, কিন্তু দৃঢ়,
–” আমি সারাজীবন এরকমভাবেই চলতে চাই।”

–” আপনি আমার জীবন সম্পর্কে জানেন না, আরাভ!

–” আমার তোমার জীবন নিয়ে কোনো অবজেকশন নেই।”

অরুনিমা চোখ সরিয়ে নেয়। শপিংমলের কাঁচের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকে। সেখানে তার মা আছেন, আর এক ছোট ছেলে, যে তাকে আপুনি বলে ডেকেছে। সৎ ভাই? এই শব্দটাই যেন কেমন অচেনা ঠেকে যায় অরুনিমার কাছে। কিন্তু সেই ডাকে কেন এত মায়া জমে? কেন বুকটা এত ভারী হয়?

–” কি হয়েছে, অরু?”
আবারও প্রশ্ন করে আরাভ।

অরুনিমা ধীরে মুখ ঘোরায়। মাথা নাড়ে।
–” কিছু না। বাসায় যাবো।”

আরাভ বলল,
–” চলো।”

–” আমি একাই যেতে পারবো।”

আরাভ এবার বিরক্তির ভঙ্গিতে বলল,
–” সব সময় একই কথা বলতে ভালো লাগে না। তাড়াতাড়ি আসো।”

এই বলে সে সোজা গিয়ে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে আরাভ। অরুনিমা দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ।
একটা দীর্ঘ, চাপা নিঃশ্বাস ফেলে। শেষবারের মতো শপিংমলের কাচ ঘেরা আলোকিত জায়গাটার দিকে তাকায়। তারপর ধীরে পা বাড়ায়, আরাভের গাড়িতে উঠে পড়ে। আরাভ গাড়ি স্টার্ট দেয়।

ফ্ল্যাটের দরজাটা খুলে ভেতরে পা রাখল অরুনিমা। পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা আরাভের দিকে একবার তাকিয়ে বলল,
–” আসুন।”

আরাভ চুপচাপ ভেতরে ঢুকে পড়ে। ফ্ল্যাটের ভেতরটা একবার চাউনি মারে চারপাশে। নজরে পড়ে সাদামাটা অথচ পরিচ্ছন্ন একটা জীবন। দেয়ালে কোনো বাড়াবাড়ি নেই, সাজসজ্জায় কিছুমাত্র বাহুল্য নেই, তবু কোথাও যেন একটা শৃঙ্খলা, একটা ব্যক্তিত্ব। জিনিসপত্র অল্প, কিন্তু যত্নে গুছানো। ছোট্ট এই ফ্ল্যাট যেন অরুনিমার নিজের মতো করেই সাজানো একটা ছোট্ট পৃথিবী। প্রয়োজনের বেশি কিছু নেই, কিন্তু অপ্রয়োজনীয় কিছু থাকলে যেটুকু ঘর ছিল, সেটুকু নিজস্বতা হারিয়ে ফেলতো। একটা চেয়ার এগিয়ে দিয়ে অরুনিমা বলল,
–” বসুন।”

আরাভ বসে পড়ে। অরুনিমা একটু ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করে,
–” চা না কফি?”

–” কফি, লো সুগার।”

–” ওকে।”

বলেই সে রান্নাঘরের দিকে চলে যায় অরুনিমা।এদিকে বসে বসে আরাভ ফোনে কিছু একটা স্ক্রল করে দেখে। বাইরের নিঃশব্দতা ঘরের মধ্যে একধরনের ঘনতা তৈরি করে, যেন সময়টা কিছুক্ষণ থেমে গেছে। কিছুক্ষণ পর অরুনিমা ট্রে হাতে ফিরে আসে। এক মগ ধোঁয়া উঠা কফি নিয়ে। আরাভ মগটা হাতে নিয়ে প্রথম চুমুক দিয়ে বলে উঠল,
–” তুমি জোস কফি বানাও তো।”

অরুনিমা হালকা হেসে নেয়। আরাভ ধীরে ধীরে কফি শেষ করে মগটা পাশে টেবিলের ওপর রাখে। তারপর একটু চুপ করে থেকে বলে,
–” কফিটা মজা ছিল।”

–” থ্যাংকস!”
অরুনিমা সংক্ষিপ্ত জবাব দেয়।

আরাভ তখন তার চোখে সরল অথচ স্থির দৃষ্টি নিয়ে বলে,
–” অরু! চলো বিয়ে করি আমরা।”

অরুনিমার মুখ থমকে যায়। এক চিলতে বিস্ময় খেলে যায় চোখে। সে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকায় আরাভের দিকে। আরাভের মুখে দুষ্টু হাসি। অরুনিমা বলে ওঠে,
–” এইসব মজা আমার একদম ভালো লাগে না।”

আরাভের ঠোঁটে এক চিলতে দুষ্টু হাসি খেলে যায়।
–” মজা কে করছে?”

এই এক প্রশ্নে অরুনিমার ভিতরে যেন ঢেউ ওঠে। সে তাকিয়ে থাকে আরাভের দিকে, কিছুক্ষণ নির্বাক। হঠাৎ দেখে, আরাভ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। ধীরে ধীরে তার দিকেই এগিয়ে আসছে। অজান্তেই চেয়ারের পেছনে ঠেস দিয়ে বসে পড়ে অরুনিমা, পিঠটা শক্ত হয়ে আসে। আরাভ এসে দাঁড়ায় তার সামনে। দুই হাত রাখে চেয়ারের হাতলে, ঝুঁকে পড়ে সামান্য। এত কাছ থেকে ওর নিঃশ্বাসের উষ্ণতা লাগে অরুনিমার গালে, কপালে, ঠোঁটে।

–” আ আ আরাভ! কি করছেন?”
কণ্ঠস্বর কেঁপে ওঠে তার।

আরাভ কোনো উত্তর দেয় না। ধীরে একটা ফু দেয় অরুনিমার কপালের দিকে। অরুনিমার চোখ অজান্তেই বন্ধ হয়ে আসে। কপালে হালকা ঘামের ফোঁটা জমে। ঠোঁট কাঁপছে। অদ্ভুত এক শিহরণ খেলে যায় তার শরীর জুড়ে। আরাভ হালকা হাসে। আরাভ মুখ এগিয়ে দেয়। কপালে রাখে একটুকরো ভালোবাসার স্পর্শ। স্পর্শটা এতটাই নিঃশব্দ, এতটাই গভীর যে অরুনিমা চমকে উঠে। চোখ খুলে তাকায় আরাভের দিকে। শরীরের প্রতিটা রক্তকণিকা যেন দ্রুত ছুটছে কোথাও। আরাভ হালকা হেসে বলে,
–” গুড নাইট, শ্যামাবতী!”

এই বলে দরজার দিকে ফিরে হাঁটা দেয়। ফ্ল্যাটের দরজা খুলে বেরিয়ে যায় আরাভ। অরুনিমা বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে থাকে ওর চলে যাওয়ার দিকে। মুহূর্তে ঘেমে ওঠে তার শরীর। বুক ধড়ফড় করতে থাকে। গলা শুকিয়ে গেছে। সে চোখ বন্ধ করে নিজের বুকে হাত রাখে, কিছুটা স্বাভাবিক হতে চায়। কিন্তু পারছে না। সে তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে। সোজা ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে দেয়। পানির নিচে দাঁড়িয়ে থাকে একদম চুপচাপ। ঠাণ্ডা পানিতে যেন গলে যায় তার সমস্ত দুঃশ্চিন্তা, সমস্ত দ্বিধা, সমস্ত অস্বস্তি। কিন্তু একটাই জিনিস গলে না, আরাভের সেই কপালের স্পর্শ। সে চেয়েও ভুলতে পারছে না।

#_চলবে_ইনশাআল্লাহ_🌹