#_ঘর_কুটুম_
#_মারিয়া_রশিদ_
#_পর্ব_১৩_
ছোয়া রান্নাঘরে রান্নায় ব্যস্ত। শরীরটা এখনো পুরোপুরি সেরে উঠেনি। দূর্বল লাগে, হাত পা ভার হয়ে আসে। তবুও সংসার তো আর থেমে থাকে না। শুয়ে বসে দিন কাটানোর অবকাশ নেই এখানে। শাশুড়ীর কটু কথা তো আছেই। কয়েকদিন রেস্টে থাকায় শাশুড়ী টিপ্পনীও কেটেছে অনেক৷ তবুও এই অদৃশ্য লড়াইয়ের মধ্যেও ছোয়া তার ছোট ছোট ভালোবাসার ছোয়াগুলো আকড়ে ধরে আছে। প্রায় রুপন্তির বাসায় যায়, তিতলির কাছে। তিতলি এখন অনেকটা সুস্থ আছে। ছোয়া যখন তিতলির মুখ দেখে মনে হয়, জীবনের সব হারিয়ে যাওয়া আশারাও আবার ফিরিয়ে আনা যায়। ছোয়া রুপন্তির বাসায় গিয়ে তিতলিকে কোলে নেয়, ঘ্রাণ নেয় তার নরম শরীরের।তিতলির ছোট্ট আদুরে মুখের মায়ায় যেন নিজের না পাওয়া সন্তানের শূন্যতা খানিকটা ভুলে থাকতে পারে সে। কিন্তু, সেইটাও সহ্য হয় না শাশুড়ীর। ছোয়াকে খোঁচা মারতে ভুলে না। এসব কথায় অবশ্য ছোয়ার কানে জল পড়ে না এখন। অভ্যস্ত হয়ে গেছে।
এদিকে শিশির নিজের রুমে বসে অফিসের কাজ করছে। আজ অফিস বন্ধ। অফিস বন্ধ থাকলেও, শিশির বাইরে খুব একটা সময় কাটায় না। ঘরেই বেশি থাকে। মাঝে মাঝে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে যায়, ওরা কল দিলে। কখনো বা ছোয়াকে নিয়ে একটু ঘুরতে যায়। যদিও ছোয়াকে নিয়ে বহুদিন ঘুরতে যাওয়া হয় না। মন টানে না তার, কোথাও আনন্দ খুঁজে পায় না। একটা চাপা ক্লান্তি তার বুকের মধ্যে বাসা বেঁধেছে। এমন সময় দরজায় টোকা পড়ে।
–” আসবো, ভাইয়া?”
শিথীর গলা। শিশির চোখ না তুলেই বলে,
–” আই।”
শিথী ধীরে ভেতরে ঢুকে পাশে রাখা সাইড সোফায় বসে পড়ে। একটু ইতস্তত ভাব। শিশির এক ঝলক তাকায় বোনের দিকে, আবার ল্যাপটপে মন দেয়। তারপর বলে,
–” কিছু বলবি?”
শিথী কয়েক মুহুর্ত চুপ থেকে বললো,
–” হ্যা! একটু কথা বলার দরকার ছিলো। আমারও তো ঐবাড়ি চলে যাওয়ার সময় চলে এসেছে। আর তোর সাথে এই কয়েকদিনে কথা বলার সুযোগও হয়নি আমার। কিন্তু, কথাগুলো বলা খুব দরকার।”
শিশির এবার শিথীর দিকে তাকায়।
–” কি কথা? স্পষ্ট করে বল।”
শিথী একটু সময় নিয়ে বলে,
–” ভাইয়া! আমার মনে হয়, এইবার একটা সিদ্ধান্ত দরকার।”
শিশিরের ভ্রু কুচকে যায়।
–” কোন সিদ্ধান্ত?”
শিথী এবার আর রাখঢাক করে না।
–” এইভাবে জীবন চলতে পারে না, ভাইয়া! দেখ, তোদের বিয়ের কতো গুলো বছর হয়ে গেছে। এখনো একটা সন্তানের মুখ দেখতে পারলি না। শেষ বয়সে এসে তোর আর এই বংশের হাল ধরবে কে, বলতো? একটা সংসার টিকানোর জন্য যেমন ভালোবাসার প্রয়োজন, একই ভাবে একটা সন্তানেরও খুব প্রয়োজন। বাবা মায়েরও তো ইচ্ছে করে, ছেলের ঘরের নাতি নাতনি দেখার। সময় তো আর কম গড়ালো না। এইবার একটা কোনো সিদ্ধান্তে আয়।”
শিশির একটু গম্ভীর হয়ে বললো,
–” কি বলতে চাচ্ছিস তুও?”
শিথীর কন্ঠ ঠান্ডা কিন্তু ধারালো,
–” শুধু আমি একা না, মাও চায় তুই এইবার ডিভোর্স নিয়ে নে।”
শিশির থমকে যায়। শিরশির করে উঠে পুরো শরীর। চোখ মুখ শক্ত হয়ে উঠে।
–” পাগল হয়েছিস তুই?”
–” পাগলামির কিছু নেই, ভাইয়া! যে নারী তোকে সন্তান দিতে পারছে না, তার সঙ্গে থেকে তুই জীবনের সব আশা শেষ করবি কেন? মা তোর জন্য মেয়ে দেখা শুরু করেছে। এবার সময় হয়েছে, দ্রুত ডিভোর্স নিয়ে নে।”
–” এইটা সম্ভব না।”
–” কেন সম্ভব না? তুই কি বুঝছিস না, একটা সংসারে একটা সন্তানের গুরুত্ব কতখানি?”
–” ছোয়া আমার স্ত্রী। একটা সন্তান না হওয়ার জন্য আমি তাকে ছেড়ে দিতে পারবো না। এইটা কি করে হয়? এইটা সম্ভব না।”
শিথীর চোখে বিরক্তি।
–” এইসব আবেগ আর কতোদিন, ভাইয়া? মা তো রোজ কান্না করে। আর পারছে না, মা।”
–” আমি ছোয়াকে ডিভোর্স দিতে পারবো না।”
শিথী উঠে দাড়ায়।
–” তুই এখন বুঝবি না। কিন্তু, একদিন বুঝবি, যখন হাত থেকে সব ফসকে যাবে।”
কথাগুলো বলে রাগ নিয়ে বের হয়ে যায় শিথী। শিশির চোখ বন্ধ করে জোরে নিশ্বাস নেয়। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। বুকের গভীরে কিছু একটা কাঁটার মতো বিঁধে আছে। খাটের বাজুতে হেলান দেয় শিশির। আবারও নিজের অক্ষমতার সম্মূখীন হচ্ছে সে। এই কথাগুলো কি ছোয়াকেও বলা হয়েছে? দীর্ঘশ্বাস ফেলে শিশির। চোখ বন্ধ করে, ঐভাবেই হেলান দিয়ে থাকে সে।
…
রাত গভীর।
শহরের কোলাহল থেমে গেছে অনেক আগেই। চারিদিকে নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে। ব্যস্ত শহর এখন ঘুমন্ত। চারদেয়ালের ভেতর ড্রিম লাইটের নীলচে কালো আলোয় ভরে আছে। একই বিছানায় পাশাপাশি শুয়ে আছে শিশির আর ছোয়া। কিন্তু, সেই পাশাপাশি থাকাটা যেন শুধুই শরীরের মাত্র। তারা দুজনেই দুই দিকে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে আছে। একদিকে মুখ করে শিশির, আর উল্টোদিকে ছোয়া। এক বিছনায়, একই চাদরের নিচে, কিন্তু মনে হচ্ছে, দুইটা ভিন্ন গ্রহে বাস তাদের। এই দুরত্ব অবশ্য নতুন নয়। অনেকদিন ধরেই চলছে এইটা। শুধু যখন শিশিরের শরীরে ক্ষুধা জাগে, শরীর টানে, তখন ছোয়া নিঃশব্দে তার কাছে যায়। ছোয়া নিরব আর ভাঙাচোরা ভালোবাসার মরিচা ধরা গন্ধ নিয়ে শিশিরের কাছে নিজেকে সমর্পন করে দেয়। নিজেকে সঁপে দেয়। কিন্তু, সেই মুহুর্তগুলোর বাইরেটুকু শুধু নিরবতা, উদাসীনতা আর অদেখা দেওয়াল। অচেনা, অনাবিষ্কৃত দুইটি নক্ষত্র।
আজ শিশিরের ঘুম আসছে না। ভেতরে ভেতরে কিছু একটা চেপে বসে আছে বুকের উপর। শিথীর কথাগুলো এখনো কানের ভেতর ছুরির মতো ঘুরপাক খাচ্ছে। এক একটা কথা যেন বুক চিরে যাচ্ছে। কিন্তু, ওরা তো কেউ জানে না সত্যিটা। সন্তান না হওয়ার দায় ছোয়ার না। এই অভিশাপ তো শিশিরের। ডাক্তার যখন রিপোর্টটা দিয়েছিলো, তখন শিশিরের মনে হয়েছিলো, পৃথিবীটা থেমে গেছে। একটা পুরুষের কাছে তার সব থেকে বড় আত্নবিশ্বাস হলো তার পিতৃত্ব। আর সেটা যখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তখন সেই পুরুষের কাছে জীবনটাই ছোট হয়ে যায়। ডাক্তার যা বলেছে, সেই সত্যি আজো ছোয়া ছাড়া কেউ জানে না। কিন্তু, ছোয়া কখনো মুখ খোলেনি৷ কোনোদিন কাউকে বলেনি।
শিশিরের হঠাৎ মনে হয়, শিথীর এইসব কথাগুলো কি ছোয়াকেও বলা হয়েছে? মা কি ছোয়াকে কিছু বলেছে? ছোয়া তো তাকে কখনো কিছু বলেনি। শিথী যখন তার কাছে এসেছে বলেছে, তাহলে ছোয়াকেও বলা হবে অবশ্যই। যদি ছোয়া মুখ ফাস করে ফেলে? যদি ছোয়া বলে ফেলে, এই অক্ষমতা শিশিরের, তার নয়? তবে? যদি বা শিথীর সামনে ছোয়া বলে ফেলে, শিশির অক্ষম? যদি জানাজানি হয়ে যায়? তাহলে? তখন যে শিশিরের শেষ আশ্রয়টুকুও ভেঙে যাবে। পরিবার, আত্মীয়, সমাজ, বন্ধুবান্ধব, সবাই জানবে শিশির সন্তান জন্মদানে অক্ষম। এটা একটা পুরুষের কাছে শুধুই একটা শারীরিক ব্যাপার নয়। এটা তার আত্নপরিচয়, তার অহংকার, সব কিছু ভেঙে তছনছ করে দেওয়া এক সত্য।
শিশির যেন নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। গলা শুকিয়ে আসছে। বুক চেপে ধরে এক অজানা আতঙ্কে। সমাজ যদি জানে? যদি সবাই জেনে যায়, শিশিরের মাঝে ত্রুটি আছে? তবে সে মুখ দেখাবে কি করে? এই সমাজ যে সহানুভূতি দেখায় না। বরং, হাসে, তাচ্ছিল্য করে, ঘৃণা করে। শিশির শোয়া থেকে উঠে বসে। বুকের মধ্যে কাঁটার মতো বিঁধে থাকা অস্বস্তি তাকে শুয়ে থাকতে দিচ্ছে না। একবার ছোয়ার দিকে তাকায় শিশির। ছোয়া ঘুমিয়ে আছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। উল্টো দিকে মুখ করে শুয়ে আছে। হালকা নীলাভ আলোয় রুমটা আলো আধারি হয়ে আছে। যার জন্য, ছোয়া উল্টো দিকে ঘুরে থাকায় মুখটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। শিশির বেড সাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা তুলে নেয়। এক ঢোকে পুরো গ্লাস খালি করে ফেলে। তৃষ্ণাটা আসলে গলায় না, মনের গহীনে। কিন্তু, পানিতে সেই তৃষ্ণা মেটে না।
শিশির আস্তে করে বিছানা থেকে নামে। ধীর পায়ে এগিয়ে যায় বারান্দার দিকে। বারান্দায় দাড়িয়ে সে দীর্ঘ একটা নিশ্বাস নেয়। আকাশটা মেঘলা, আলতো বৃষ্টি পড়ছে। হাওয়া বেশ ঠান্ডা। সেই হাওয়া গায়ে লাগতেই শরীরে লোম খাড়া হয়ে যায়। চারপাশে আলো কম। রাস্তার ল্যাম্পপোস্ট থেকে আলো পড়ে আছে রাস্তায়। শিশির তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে। চোখ বন্ধ করতেই মনে হয়, চারপাশের সমাজ, মানুষ, তার আত্মীয় স্বজন সবাই এগিয়ো আসছে তাকে ধ্বংস করতে। সমাজ তাকে গিলে ফেলতে চাইছে। তারা সবাই জেনে গেছে, সে একজন ব্যর্থ পুরুষ। ত্রুটিপূর্ণ, অক্ষম, অপাংক্তেয়। তাড়াতাড়ি চোখ খুলে ফেলে শিশির। না! সে এই ভয় দেখাতে পারবে না নিজেকে। বুকের ভেতর যেন পাথর চেপে বসেছে। বৃষ্টি একটু বেড়েছে, হাওয়ার গতি জোরালো। আর এক মুহুর্ত বারান্দায় থাকতে পারে না শিশির। দ্রুত ঘরে ফিরে আসে।
ঘরের ভেতর গুমোট নিস্তব্ধতা। বাইরে হালকা বৃষ্টির শব্দ, জানালার কাচে জলরেখা। শিশির ধীর পায়ে বিছানায় বসে। মাথা নিচু, কপালে ভাজ, চোখে গাঢ় ক্লান্তি। তার কাঁধ ভর্তি ভার যেন বছরের। ছোয়া মাথা ঘুরিয়ে তাকায় শিশিরের দিকে। সে হাত বাড়িয়ে বেড সাইড ল্যাম্পের আলো জ্বালিয়ে দেয়। হলদেটে আলোয় ভরে যায় পুরো রুম। শিশিরকে দেখতে খুব অস্থির অস্থির লাগছে। কি হয়েছে মানুষটার? এতো অস্থির উদ্বিগ্ন হয়ে আছে কেন? শিশির মাথা ঘুরিয়ে তাকায় ছোয়ার দিকে। ছোয়া অবাক হয়ে যায়। বৃষ্টির এই মিষ্টি ঠান্ডায় শিশির পুরো ঘেমে আছে। ছোয়া উঠে বসে। এগিয়ে আসে শিশিরের দিকে। ছোয়া ব্যাস্ত হয়ে বলে,
–” শিশির! কি হয়েছে তোমার? অসুস্থ লাগছে?”
শিশির নিঃশব্দে তাকিয়ে রইলো ছোয়ার মুখের দিকে। যেন ছোয়ার চোখের গভীরে কিছু খুঁজছে।
–” কি হলো? কথা বলছো না কেন? শরীর খারাপ লাগছে তোমার?”
ছোয়া আবারও জিজ্ঞেস করে।
শিশিরের কন্ঠ ধরা ধরা,
–” ছোয়া! আমার এতো শক্তি নেই।”
ছোয়া অবাক হয়ে যায়।
–” মানে?”
–” আমি পারবো না, সমাজের তাচ্ছিল্য সহ্য করতে।”
ছোয়া হতভম্ব।
–” আমি তোমার কথার অর্থ বুঝতে পারছি না, শিশির! আমাকে পরিষ্কার করে বলো, প্লিজ!”
শিশির ধীরে ধীরে বলে,
–” তোমাকে মা বা শিথী কিছু বলেছে।”
ছোয়া কিছু সময় চুপ করে তাকিয়ে থাকে শিশিরের দিকে। তারপর আস্তে করে বললো,
–” ডিভোর্সের ব্যাপারে?”
শিশির চোখ বন্ধ করে ফেলে। ধীরে ধীরে দীর্ঘশ্বার বেরিয়ে আসে।
–” তার মানে তুমি সব জানো।”
ছোয়া হালকা হাসে। সেই হাসিতে তির্যক বিষাদ।
–” হ্যা জানি! তারা আমাকে বোঝাতে চেয়েছে, তোমার জীবন নষ্ট না করি। শিশির! তোমার পরিবার যেইটা চাইছে…”
কথা শেষ করতে পারে না ছোয়া। তার আগেই শিশির বলে ওঠে,
–” এইটা সম্ভব না। তুমিও জানো, ছোয়া!”
ছোয়া হালকা হাসে।
–” হ্যা! জানি তো। এইটা সম্ভব না। কারন, তুমি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে অন্য কোথাও বিয়ে করলে, সবাই তোমার ত্রুটি সম্পর্কে জেনে যাবে। সবাই তো আর ছোয়া না, যে সব কিছু চুপচাপ মেনে নিবে।”
শিশির চুপ করে রইলো। ধীরে ধীরে জানালার পাশে গিয়ে দাড়ায়। বাইরের শীতল বাতাস এসে শরীর ছুয়ে যাচ্ছে। ছোয়া বিছানায় বসে আছে চুপচাপ। নীরবতায় বেশ কিছু সময় কেটে যায়। হঠাৎ ছোয়া বললো,
–” আচ্ছা, শিশির! আজ যদি এই সমস্যাটা আমার হতো, তাহলে? তুমি কি তখন আমাকে মেনে নিতে? সংসার করতে চাইতে আমার সাথে?”
প্রশ্নটা শুনে শিশিরের শরীর কেঁপে উঠে। ছোয়া ধীরে ধীরে বলে,
–” আজ যেমন তোমার মা বোন সবাই বলছে ডিভোর্সের কথা। কারন ওরা জানে, সমস্যাটা আসলে আমার ভেতর। যদি ওরা জানতে পারতো, আসলে সমস্যা আমার নয়, সমস্যাটা আসলে তাদের ছেলের। তাহলে, ওরা কি আমাকে মাথায় তুলে রাখতো না?”
শিশির চোখ বন্ধ করে ফেলে। ছোয়ার প্রতিটা কথা তার রক্তে কাটার মতো বিঁধে যাচ্ছে। ছোয়া বলে,
–” আজ যদি সত্যিই সমস্যা আমার মাঝে থাকতো, আজকে বলা তোমার মা বোনের কথায় তুমি কি সম্মতি দিতে না?”
শিশির আস্তে করে ঘুরে তাকায় ছোয়ার দিকে।
–” কি বলছো তুমি এইসব?”
ছোয়ার চোখে জল চিকচিক করছে। শিশিরের পক্ষে ছোয়ার চোখে চোখ রাখা দায় হয়ে হয়ে উঠে। চোখ সরিয়ে নেয় শিশির। ছোয়া হালকা হাসে।
–” ভুল প্রশ্ন করেছি?”
শিশির একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে জানালার দিকে ফিরে তাকায়। ছোয়া বলে,
–” তুমি সমাজের ভয় পাচ্ছো, শিশির! সমাজ তোমাকে নিয়ে হাসবে। অথচ, আমি দোষী না হয়েও, দিনের পর দিন সমাজ আমাকে নিয়ে হাসছে। আমি কটু কথার সম্মুখীন হচ্ছি। এখানে কি তোমার লজ্জা লাগে না? তোমার শরীরের অক্ষমতা আমি বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি। এই শরীরের ত্রুটিতে তোমার কোনো দোষ নেই, এইটা আল্লাহ প্রদত্ত। কিন্তু, তোমার অক্ষমতার ভুক্তভোগী আমি এক নির্দোষ নারী। এইটা কি তোমার অন্যায় না? এইটা কি তোমার দোষ না?”
শিশির জানালার গিরিল শক্ত করে চেপে ধরে। হাতের রগ ফুলে উঠে তার। ছোয়া শান্ত গলায় বললো,
–” এতো চাপ নিও না। আমি কাউকে তোমার এই ত্রুটির কথা বলবো না। স্বামী তুমি আমার, সবটুকু দিয়ে সহ্য করার চেষ্টা করবো। কিন্তু, ডিভোর্স ভিত্তিক তোমাড পরিবারকে কি জবাব দেবে বা আমি কি বলবো, এইটা একটু আমাকে বলে দিও।”
এ কথা বলে ছোয়া হাত বাড়িয়ে ল্যাম্পের আলো নিভিয়ে দেয়। ঘরটা আবারও নিলাভ আধারিতে ভরে যায়। ছোয়া কাঁথা টেনে শুয়ে পড়ে। চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু। সে হাত দিয়ে তা মুছে নেয়। শিশির বাইরে বৃষ্টি ভেজা মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে। অনুভব করে, তার চোখের কোণা দিয়ে গরম পানি গড়িয়ে পড়ছে।
#_চলবে_ইনশাআল্লাহ_🌹