#মেহবুব
#তাবাসসুম_তোয়া
#পর্বঃ১০
উনি উনার সোফাটা একহাতে টেনে এনে একদম আমার মুখোমুখি বসলেন। আমি যেন একদম জড়ো হয়ে গেলাম! শামুকের মতো আমার একটা খোলস থাকলে ভালো হতো! খোলসে ঢুকে পড়াতাম! কারো সাধ্য থাকতো না বের করার!
সামনের টেবিলে অনেক রকমেরই খাবার, উনি প্লেটটা আমার দিকে এগিয়ে বললেন,
” খাইয়ে দাও, প্রচুর ক্ষুধা পেয়েছে। ”
আমি প্লেটটা ধরেছি আমার হাত কাঁপছে! স্বাভাবিক হতে পারছি না। উনি পানি এগিয়ে বললেন
”পানি খাও, তবুও তোমাকেই এখন খাওয়াতে হবে।”
আমি পানি খেয়ে শান্ত স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলাম। তারপর এক চামচ কাচ্চি কাঁপা হাতে উনার দিকে এগিয়ে দিলাম। উনি চামচটা ধরে মুখে নিলেন!
” আমার কি তোমার পাখি মনে হয়? পাখির মতো আহার দিচ্ছো! ”
আমার হাঁসফাঁস অবস্থা দেখে বললেন
”হিজাবটা খুলবে? গরম লাগছে না? ”
”ভাইয়ারা, বাপ্পি মাঝে মাঝেই আসছে৷ ”
”নাহ ওরা কেউ আর আসবে না এদিকে। ”
” আসো খুলে দিই।”
উনি এগিয়ে এসে পিন গুলো খুলে হিজাবটা সরিয়ে নিয়ে বিয়ের ওড়নাটা দিয়ে দিলেন মাথার উপরে। তারপর উঠে গিয়ে আম্মুর কাবাডের দরজা খুলে একটা সুতির ওড়না বের করে আনলেন। বিয়ের পাতলা ওড়নাটা সরিয়ে সেটা দিয়ে আমার মাথা ঢেকে দিলেন। আমি চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছি।
উনি আবারও সামনে বসে পড়লেন। আমি কেমনে জানি অনেকখানি স্বাভাবিক হয়ে গেছি। উনি হয়তো জাদু জানেন।
তারপর একটা খালি বাটি এগিয়ে দিয়ে পানির গ্লাসটা তুলে নিয়ে ইশারা করলেন। আমি হাতের দিকে দেখলাম। পুরোটা মেহেদী রাঙা। উনি সেটা খেয়াল করলেন, গ্লাসটা নামিয়ে হাত বাড়িয়ে আমার হাতদুটো ধরলেন। বললেন
” ইন্টারেস্টিং! ”
আমার হাত কাঁপছিলো। উনি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ডিজাইন গুলো দেখলেন। উনার নামের প্রথম অক্ষর ছিলো (T+M) .
তারপর হুট করেই আরেকটা কান্ড ঘটালেন। তাতে আমি পুরোপুরি কেঁপে উঠলাম। উনি নিজে আমার হাতসহ উনার হাতটাও ধুলেন।
এবার হাত দিয়েই তাকে খাইয়ে দিলাম। কত গুলো ফোন এলো এবং শেষে হাসপাতাল থেকেও ফোন এলো। উনি কথা বলছেন আর আমি খাইয়ে দিচ্ছি! উনি বললেন
”আমি আসছি চাচ্চু, নয়টার মধ্যে ওখানে থাকবো।”
চাচ্চু হয়তো নিষেধ করলেন
” তুমি অসুস্থ আসা লাগবে না। ”
উনি বললেন
” চাচ্চু আমি একবারে ফিট আছি, আমি আসছি ”
কথা বলা শেষ করে আমার হাত থেকে প্লেটটা নিলেন। তারপর হাতটা নিয়ে আবারও ধুয়ে দিয়ে টিস্যু দিয়ে যত্ন করে মুছে দিলেন। বললেন,
” এখান থেকে কোনটা খাবে? ”
আমি টেবিলের উপরে থাকা সকল খাবারের দিকে নজর দিলাম। তারপর পায়েসের বাটি দেখালাম। উনি বললেন,
”ওটা নয়,প্লেইন পোলাও আর রোস্ট নাকি বিফ?”
আমি মাথা ঝাঁকালাম!
”কিছুই না ”
উনিও আমার মতোই মাথা ঝাঁকিয়ে অভিনয় করে বললেন,
”এখন “কিছুই না” কোথায় পাবো? রাত হয়েছে অনেক, কালকে দিনে খোঁজ লাগাবো! আজ এগুলো খাও! ”
আমি হাসলাম মুখ চিপে। বললাম
” ক্ষুধা নাই৷”
“ক্ষুধা তৈরি করো। চলো আমার সাথে এখন কয়েক রাউন্ড দৌড়ে আসবে! ”
আমি বললাম
” ইয়া আল্লাহ! নাহ, ক্ষুধা আছে,দেন খাবো।”
” গুড গার্ল। ”
উনি আমাকে ঠেসেঠুসে কয়েক গাল খাওয়ালেন। আমি আর পারছি না! কিন্তু কিছু বলতেও পারছি না। বললেই বলবে চলো কয়েক রাউন্ড দিয়ে আসি! তখন!
আমার দিকে টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বললেন
” আমি আব্বুর ওখানে যাচ্ছি। আমার রুমে একা থাকতে ভয় পাবে? ”
”নাহ আমি কি ছোট নাকি?”
”তাই? কত বড়?”
আমি কপাল কুঁচকে তাকালাম! উনিও কপাল কুঁচকে মাথা দিয়ে আমার কপালে ঠোকা দিলেন! তারপর হেসে বললেন,
”বেশি রাত হলে ঘুমিয়ে পড়ো, কেমন? ”
”আব্বু কেমন আছেন এখন?”
” আছেন মোটামুটি, আসলে আইডেন্টিফাই করা যাচ্ছে না সমস্যাটা কি, দোয়া করো?”
উনি আবারও থেমে বললেন ” যাবে আমার সাথে? তারপর আবার নিজেই বললেন, “না থাক “!
উনি যেতে যেতে আম্মুকে বলছেন,
“তোমার মেয়েকে দেখে রেখো! ”
__________________________
উনি রাতের দিকে এলেন। এগারোটার খানিকটা পরে৷ চাচ্চুরা ঠেলেঠুলে পাঠিয়ে দিয়েছে। উনার এখন পর্যাপ্ত রেস্ট প্রয়োজন! তখনও আমি আম্মুর রুমেই ছিলাম। উনি সব দিকে খোঁজখবর নিয়ে আম্মুর রুমে আসলেন।
আশ্চর্য হয়ে বললেন
” এই মেয়েকে এখনও রুমে পাঠাওনি? ”
আম্মু বললেন
” শর্মি নিম্মিরা ঘর আটকে রেখেছে। ক্যাশ না পেলে ছাড়বে না। ”
উনি বেশ বিরক্ত হলেন। জোরে ডাকলেন জুনায়েদ আর সাকিবকে। ওরা কোথা থেকে হুড়মুড় করে দৌড়ে এলো। আম্মুর পিছনে গিয়ে দাড়িয়ে বললো
”আগেই বলছি ভাইয়া, বাসায় নতুন মেহমান, ভাবীর সামনে আমাদের বেইজ্জতি করোনা। ”
উনি বললেন
” কততে গেট খুলবে? ”
” দশ দিলেই চলবে”
উনি বাপ্পিকে ডেকে বললেন
” ওদের ঝামেলা মিটাও। ”
” ভাইয়া আজ আমি ওদের দলে! ”
উনি আরেকবার দৃষ্টি দিতেই বললো
” আচ্ছা ভাই দেখছি দেখছি! ”
গেট খুলে দিয়ে ফিতা ধরলো গেটের সামনে। আমাকে সাথে নিয়ে উনি গেলেন। আমি ফিতা কাটতেই সবাই বেলুন ফাটালো। আরোও আনন্দ উল্লাস করলো। শর্মি নিম্মিরা আমাকে বিছানার মধ্যে বসিয়ে দিয়ে এলো। উনার ফোন এসেছে। উনি কথা বলতে বলতে নিচের দিকে গেলেন।
_______________________
যখন রুমে এলেন তখনও ফোনে কথা বলতে বলতেই ঢুকলেন। কানে ইয়ার বাড। গেটটা শান্ত ভঙ্গিতে আটকে বিছানার পাশে বালিশ দিয়ে সেখানে হেলান দিলেন। আমি খানিকটা দূরে বসে ছিলাম। উনি ঝুঁকে আমাকে টেনে নিয়ে কোলের মধ্যে ফেললেন৷
তারপর কথা বলতেই থাকলেন। কিসব গোডাউন এক রাতের মধ্যে খালি হলো কিভাবে! এবং কোথায় কোথায় মাল সরাতে পারে সেসব নিয়ে বিস্তারিত। হয়তো লোকটা ইন্ডিয়ান। উনি হিন্দিতে বলছিলেন।
আমি চুপচাপ উনার কথা শুনছিলাম। কিছুটা পর আমাকে সামনাসামনি বসিয়ে এক এক করে আমার কানের দুল দুটো খুলে নিলো। কানের আশেপাশে উনার কড়কড়ে হাতের স্পর্শ পেতেই আমি জমে গেলাম। অথচ মানুষটা কি নির্বিকার! তখনও কথা বলেই যাচ্ছে। দুল দুটো হাতের তালুতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলেন। সে দুটোকে পাশের টি টেবিলে রেখে,এবার অন্যান্য অর্নামেন্টস খুলতে লাগলেন। আমি একদম জড়সড় হয়ে আছি, কুঁকড়ে যাওয়া দেখে আমার মুখের দিকে তাকালেন!
ফোনের ভয়েস মিউট করে, ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন
” কোন সমস্যা? ”
আমি মাথা ঝাঁকিয়ে না বললাম। উনি উঠে এসে আমার পিছনে বসলেন। বিয়ের ওড়নাটা মাথা থেকে সরালেন। চুলগুলোকে গজরা দিয়ে পেঁচিয়ে সুন্দর করে খোপা করা ছিলো। উনি দেখে বললেন
“এগুলোকে এভাবে পেচিঁয়েছো কেন? আমি দেখবো কিভাবে? ”
গাজরাটা খুলে দেখতে পেলেন হাজার হাজার ক্লিপ। সেটা দেখেই বললেন
” What a disaster!”
হতাশ হলেন। তবুও হাল ছাড়লেন না, ক্যাপ্টেন মশাই এতো অল্পে হাল ছাড়া মানুষ নন !
উনি কথা বলতে বলতে এক এক করে চুলের কাটা গুলো খুলতে লাগলেন! একটা কাটায় বেশ খানিকটা গুতো খেয়েছি। জায়গাটা হয়তো লাল হয়ে আছে মনে হয়? উনি তটস্থ হলেন। উঠে গিয়ে ফাস্ট এইড বক্স এনে সেখানে স্যাভলন দিয়ে মুছে দিলেন।
”এটা করতে কে বলেছে? এটা এভাবে তোমার মাথায় লেগে আছে তুমি টের পাওনি? ”
আমি টের পেয়েছি! যখনই উনি টান দিয়েছেন তখনই মাথায় একটা কাটা বিধে যাওয়ার মতো হয়েছে কিন্তু বলতে পারিনি। উঠানোর পরে ব্যাথা চলে গেছে আর আমি সে মূহুর্তে ইমোশনের রোলার কোস্টারে বসে আছি। এসব ছোট খাট বিষয় অনুভব করতে পারছি না।
তারপর সব গুলো ক্লিপ ছাড়িয়ে আমাকে বসিয়ে গেলেন ড্রেসিং টেবিলের সামনে। আমি ভীষণ অবাক হয়ে উনার কর্মকাণ্ড দেখছি আর লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যাচ্ছি! মানুষটা এতো স্বাভাবিক কিভাবে!
রুমের গেট খুলে বের হয়ে গেলেন। উনার মামাতো বোন নিম্মিকে ডেকে আনলেন। চিরুনিটা হাতে দিয়ে ইশারা করে বললেন,
”চুলটা ঠিক করে দাও।”
উনি আমাকে ইশারা করে বললেন,
”আমি কথা শেষ করে আসছি। ”
নিম্মি চুপচাপ চুলের জট গুলো খুলছে,
”ভাইয়া এতক্ষণ তোমার চুলের পিছনে লেগে ছিলো? এই চুল ঠিক করতে ভাইয়ের সারারাত লাগতো আমি নিশ্চিত! ”
একবার চুলে জোড়ে টান পড়ায় আমার মাথা হেলে গেল। উনি বারান্দা থেকে সেটা খেয়াল করেছেন।
তুড়ি বাজিয়ে নিম্মিকে কিছু ইশারা করলো। নিম্মি ড্রেসিং টেবিলের সামনে এ্যলোভেরা জেলটা দেখলো। তেলের সাথে খানিকটা এ্যলোভেরা মিশিয়ে নিয়ে ধীরে ধীরে জট খুলতে থাকলো।
”ভাবী, তোমার এই বিশাল চুল সামলাও কিভাবে?”
আমি হাসলাম!
টুকটাক কথা বলছি আর ও চুল ঠিক করে দিচ্ছে। ওর যখন শেষ হয়ে গেল ও চলে গেল। আমি কি করবো?
ভারী লেহেঙ্গাটা চেঞ্জ করবো ভাবলাম! এটাই আমাকে ভীষণ কষ্ট দিয়েছে আজ! আমি উঠে লাগেজ থেকে থ্রি পিস নিলাম। চেঞ্জ করবো কিনা বুঝতে পারছি না। বারান্দার দিকে তাকালাম। উনি আমার হাতের দিকে তাকিয়ে ইশারায় না বললেন এবং নিজের দিকে দেখালেন!
মানে কি? উনি চেঞ্জ করাবেন?
নাহ বাবা৷ আমি মানবো না। আমি ওয়াশরুমের দিকে যেতেই উনি এলেন। লাগেজ থেকে একটা সুতি শাড়ি বের করে আমার হাতে দিলেন। আমি এবার বুঝলাম।
আমি চেঞ্জ করে বের হতে নিলেই শুনতে পেলাম, উনি বলছেন
”সর্দারজি, আজ মেরা শাদি হুয়া হ্যায়। মুঝকো আব কে লিয়ে ছোড় দো।”
”সর্দারজি হয়তো চমকে বললেন, কাব?”
উনি বললেন ” আজ দোপেহের মে! ”
অপর পাশে কি বললো জানি না, উনি বললেন
”it’s ok সর্বদাজি, আপ ক্যাপ্টেন সাঈদ ঔর ফারুক সে বাত কর লিজিয়ে।”
উনি কথা শেষ করে কান থেকে ইয়ার বাড গুলো খুললেন। ফোনটা সুইচ অফ করলেন। তারপর উনি কাবাড থেকে নিজের টিশার্ট আর টাউজার নিয়ে চেঞ্জ করতে চলে গেলেন ওয়াশরুমে। আমি তখন পুরো রুমের দিকে তাকালাম। নিচে প্রায় পুরোটা বেলুন দিয়ে ভর্তি!
আমি বিছানায় ছড়ানো ছিটানো ফুল গুলোকে একত্র করে বেড সাইডের বিনে রাখলাম।
উনি ফ্রেশ হয়ে বের হলেন। আমি তখন চুপচাপ ড্রেসিং টেবিলের পাশে দাড়িয়ে ভাবছি কি করবো?
উনাকে দেখলাম জায়নামাজ বিছালো দুটো। আমাকে ইশারা করলো। আমি শাড়ির উপর নামাজের হিজাবটা চাপিয়ে নিলাম।
নামাজ শেষে উনি অনেকক্ষণ দোয়া করলেন। আল্লাহর কাছে অশ্রু শিক্ত আর্জি পেশ করলেন। তারপর অনেকক্ষণ দুজন সেখানেই বসে থাকলাম।
উনি উঠে গেট খুলে বাইরে গেলেন।
আমি জায়নামাজ গুছিয়ে রাখলাম। উনি ফিরলেন ট্রে হাতে সেখানে কফি, ফ্রুটস আর কুকিজ ছিলো । সেটা নিয়ে রাখলেন বারান্দার বেতের টেবিলের উপর। তারপর গেট বন্ধ করে আমার দিকে এগিয়ে এলেন। তারপর চুপচাপ আমার সামনে এসে দাড়ালেন। উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি শাড়ির আঁচল দিয়ে নিজেকে আরোও সুন্দর করে ঢেকে নিলাম। উনার দিকে তাকাবো না তাই এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছি।ঐ চোখ জোড়া দিয়ে উনি একদৃষ্টিতে আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন। আমি দাড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না। সে দৃষ্টি ছিলো ধারালো, প্রখর! উনি বললেন
”কিছুক্ষণ শান্ত হয়ে দাড়িয়ে থাকতে পারো? দেখতে দাও আমাকে! তোমাকে আসলে মুহাইমিনের সাথে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়া উচিত! এতো দৌড়াদৌড়ি করতে পারো!! ”
সে কথায় আমার লজ্জা আরোও বেড়ে গেল। আমি ঘুরে গেলাম। দিবো না দেখতে।
উনি ধীরে পিছনে এসে দাড়িয়ে আমার মাথা থেকে শাড়ির আঁচল নামিয়ে দিলেন। তারপর আমার করা হাত খোপাটা খুলে দিলেন। চুল ঢেউ তুলে খুলে গেল!
” এক্সাক্টলি আমি এটাই দেখতে দাড়িয়েছি তুমি দেখছি আমার মাইন্ড রিড করা শিখে গেছ! ”
মনে মনে বললাম আমি কখনই এটার জন্য ঘুরি নাই! আপনার ঐ চোখের দৃষ্টি থেকে বাঁচতে ঘুরেছি!
উনি চুলে হাত দিলেন কতক্ষণ এবং ফিসফিসিয়ে বললেন
”pleasant fragrance and simply mesmerizing.”
তারপর উনি কাঁধের পাশের চুল সরিয়ে আমার কানের কাছে খুব আদ্র কন্ঠে বললেন,
মেহবুব, my love,I am deeply thankful to you from the very depths of my heart. You have made me proud, honored, and truly respected in every way by listening to every word of mine all these years. My heart is forever grateful to you and only for you.”
আমি অনুভূতি শূন্য হয়ে আকাশে ভাসতে থাকলাম! কানে বাজলো ‘ only for you ‘
আমার মাথা ঘুরে উঠলো। আমি টলকে পড়তে নিলে সে আমাকে ধরে নিলো। ডান হাতটা বাড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার খুলে একটা বক্স বের করলেন। সেখানে একটা লকেট ছিলো ডায়মন্ডের। উনি নিজ হাতে সেটা আমাকে পরিয়ে দিলেন।
তারপর আমাকে কোলে তুলে নিলেন। বারান্দায় থাকা বেতের সোফায় আমাকে নিয়ে বসালেন৷
আমার পাশে বসে আমাকে আবারও কোলের মধ্যে নিলেন। তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন
” আজ সারারাত আমি তোমার গল্প শুনবো আর তুমি আমার! রাজি? ”
আমি মাথা নাড়ালাম। কফির মগটা হাতে দিয়ে উনিই প্রথম উনার গল্প শুরু করলেন। সেই খুব রিজার্ভ আর ইন্ট্রোভার্ট টাইপের মানুষটা টুকটুক করে বলে চললো, তার জীবনে ছুটে চলা ছোট বালিকাটির কথা! সে বালিকা কি আমি ছিলাম?
গল্প শুরু হলো রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ থেকে শুরু করে ভাটিয়ারীর মিলিটারি একাডেমি ছাড়িয়ে বান্দরবানের প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকা অব্দি।
আমার দেখতে ইচ্ছে হলো সেই টেবিলের ডেস্কটা উনি যেখানে আমার নাম লিখেছেন। আমার দেখতে ইচ্ছে হলো সেই প্রশিক্ষণার্থীকে যাকে উনি ভুলে ক্যাডেট মুনিবা ডেকে ফেলেছিলেন! আমার খুব দেখতে ইচ্ছে হলো সেই বিশাল প্যারেড গ্রাউন্ড। আরোও কত শত জায়গা যেগুলো উনি ঘুরেছেন, যেখানে উনি হঠাৎ আমাকে কল্পনা করতেন!
আমি উনার গত পনেরো বছরের আনাচেকানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। আর উনি আমাকে যত্ন করে আগলে বসে ছিলেন।
চলবে……