#জলতরঙ্গের_সুর
পর্ব – ১১
লেখা – আসফিয়া রহমান
অনুমতি ছাড়া কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ❌
জাহাজে ফিরে আসা মাত্রই সক্রিয় হয়ে ওঠে মেডিকেল ইউনিট।
নিশাতের শরীর ছিল ঠান্ডায় অবসন্ন, কিন্তু অক্সিজেন দেয়ার পর দ্রুত রেসপন্স করতে শুরু করে।
তানিয়া সামান্য হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত, হাত-পা জমে গিয়েছিল। এখন কম্বলে মোড়া অবস্থায় স্যালাইন চলছে।
মেহরিনের হাত কেটে গিয়েছিল, ব্যান্ডেজ করে দেয়া হয়েছে। রুবেল ছিল কিছুটা সংজ্ঞাহীন, তবে শরীরের কোন মারাত্মক আঘাত নেই। তাদের সবার অবস্থা স্থিতিশীল বলা যায়। একটু বিশ্রামেই অনেকটাই সেরে উঠবে।
কিন্তু ঊর্মি—
ওর অবস্থা সবচেয়ে বেশি উদ্বেগজনক।
জাহাজের মেডিক ইউনিটে ওকে রাখা হয়েছে আলাদা কেবিনে।
ঘরের আলো মৃদু।
পিছনের জানালাটা বন্ধ। এয়ার কন্ডিশন্ড রুমের তাপমাত্রা উষ্ণতার দিকে।
ঊর্মিকে মুড়ে রাখা হয়েছে মোটা ব্ল্যাঙ্কেটে, ভিজে কাপড় বদলে দেয়া হয়েছে। শরীরটা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল অতিরিক্তভাবে। তাপমাত্রা এখনো স্বাভাবিকের নিচে। পালস স্থিত, কিন্তু শ্বাস-প্রশ্বাস কিছুটা ভারী। আইভি লাইনে চলছে স্যালাইন আর অ্যান্টিবায়োটিকের ডোজ।
ওর চোখ বন্ধ, ঠোঁট ফ্যাকাশে।
শরীরটা যেন নিথর। তবু মাঝে মাঝে খুব হালকা কাঁপছে, হয়তো ঠান্ডায়, হয়তো আতঙ্কের ধকল থেকে।
ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছেন আবরার ইমতিয়াজ কল্লোল। সামনের দাঁড়ানো ডাক্তার কিছু বলছিলেন, তিনি শুধু মাথা নাড়লেন। চোখে স্থির দৃষ্টি।
তার হাতে ধরা ঊর্মির মেডিকেল রিপোর্ট, কিন্তু চোখ পড়ে আছে ওর মুখের উপর।
ওর নিঃশ্বাসের প্রতিটা ওঠানামা সে যেন মনে মনে গুনছে। ঊর্মির শরীরের তাপমাত্রা ছিল বিপজ্জনকভাবে কম। হার্ট রেট খুবই স্লো ছিল শুরুতে, পালস দুর্বল।
মেডিক রিপোর্ট জানাচ্ছে— “She’s stable now, but unconscious. Body temp slowly rising. No signs of internal trauma. She might wake up anytime within the next few hours.”
ডাক্তার চলে যেতে কল্লোল ওর মাথার কাছে রাখা চেয়ার টেনে বসে পড়ল। ওর নিষ্পলক দৃষ্টি স্থির ঊর্মির দিকে।
অক্সিজেন মাস্কের ভিতরে মৃদু ওঠানামা করছে শ্বাস প্রশ্বাস। স্যালাইনের সূচ গেঁথে আছে শীর্ণ ধমনীতে। অক্সিজেন মাস্কের কাঁচে মাঝে মাঝে জমে উঠছে হালকা ধোঁয়া— ঊর্মির নাক-মুখ থেকে বেরোনো ধীর নিঃশ্বাসের প্রমাণস্বরূপ। মুখটা রক্তশূন্য, ঠোঁটজোড়া ফ্যাকাশে। চোখের পাতা নড়ছে না একটুও। নিঃশ্বাসের তালে বুক ওঠা-নামা করছে খুব ধীরে ধীরে।
ডানহাতটা ব্যান্ডেজ করে রাখা হয়েছে, আঙুলগুলো শীতের ছোঁয়ায় যেন হালকা নীলাভ। শিরার ভেতর ধীরে ধীরে প্রবেশ করছে স্যালাইনের তরল।
বুকের এক পাশে ছোট একটা স্ক্র্যাচ, সম্ভবত কাঠের টুকরো কিংবা ভাঙা বোটের অংশে লেগে গিয়েছিল।
ক্যাপ্টেন খুব আলতো করে তার ডান হাতটা রাখলেন সূঁচ গেঁথে থাকা শীর্ণ হাতটার উপর। দুরন্ত পাখির মত ছুটতে থাকা মেয়েটাকে এভাবে শান্ত হয়ে থাকতে দেখে মোটেই ভালো লাগছে না।
কল্লোল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। যেদিন থেকে এই মেয়েটার সাথে তার দেখা হয়েছে সেদিন থেকে নিজের অনুভূতিগুলো আর নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই তার।
কল্লোলের চোখে এক অদ্ভুত দ্বন্দ্ব। মন কী চায়, আর মস্তিষ্ক কী বলে এই নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন তিনি।
তার মনে পড়ে যাচ্ছে পুরনো কিছু দৃশ্য।
একটা হাসি, একটা ঝলমলে মুখ,
মেয়েটা হাসলে যেন চোখে ঝিকমিক করে সূর্যের আলো..
সেদিন কি প্রচন্ড ভয় পেয়ে মেয়েটা জাপটে ধরেছিল ওকে…
শেষ দিন অমন কড়া কথা শুনে মেয়েটার অভিমানী চোখ দুটো…
ঊর্মিদের বাড়ি থেকে চলে আসার পর কল্লোল ভুলে যেতে চেষ্টা করেছিল মেয়েটাকে। কিন্তু আজ এই পরিস্থিতিতে দেখা হয়ে যাওয়াকে কি কোনো কাকতালীয় ঘটনা বলা যায়?
সেন্ট মার্টিনের মূল দ্বীপ ছেড়ে এত দূরে কী করছিল ঊর্মি? সেন্ট মার্টিন থেকে এত দূরে, এমন একটা অফ-রুট দ্বীপে ও ঘুরতে আসবে, এটা কি খুব স্বাভাবিক?
নাকি জীবন কোন অদ্ভুত ছকের ভেতর আবার মুখোমুখি বসিয়েছে ওদের?
ঊর্মির মুখে এখনো লেগে আছে সেই শান্ত নিষ্পলকতা,
যেন গভীর সাগরের তল থেকে তুলে আনা শৈবাল-ভেজা এক নিথর শরীর। হাসি নেই, কথা নেই, এমনকি সেই চঞ্চল চোখজোড়াও বন্ধ। কেউ যেন ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে চুপচাপ।
কল্লোল হাতটা বাড়িয়ে ছুঁয়ে দেয় ওর নরম গাল। ঠান্ডা এখনও। বাইরে তখনো বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে জাহাজের মেটাল ডেকে। কিন্তু ভেতরে, সেই নিঃশব্দ ঘরে, কেবল শোনা যাচ্ছে মৃদু শ্বাসযন্ত্রের শব্দ…
আর এক পুরুষের ভারী নিঃশ্বাস, যে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না—
এটা কি কাকতাল? নাকি অনিবার্য?
_____________________
কেবিনটা নিঃশব্দ।
মেশিনের বিপবিপ শব্দ, স্যালাইনের ফোঁটা পড়ার নিরবিচ্ছিন্ন ছন্দ আর অক্সিজেন মাস্কের নিচে শ্বাস-প্রশ্বাসের কাঁপা শব্দ শোনা যাচ্ছে থেকে থেকে।
বাইরে সাগরের ঢেউ কাঁপন তোলে জাহাজের শরীরে, যেন স্মরণ করিয়ে দেয়, কয়েক ঘণ্টা আগেই ছিল প্রাণপণ এক যুদ্ধ, জীবনের সঙ্গে লড়াই।
কল্লোল তখনও বসে। ওর কনুই এখন ঊর্মির বিছানার কিনারায় ঠেকানো, আঙুল ছুঁয়ে আছে ওর হাতের আঙুলে। সেই সময় কেবিনের দরজা হালকা খুলে উঁকি দিলেন কমিউনিকেশন অফিসার।
“ক্যাপ্টেন, কন্ট্রোল রুম থেকে খোঁজ… একটা নতুন আপডেট এসেছে। তারা আপনাকে চায়।”
কল্লোল ঊর্মির উপর থেকে চোখ সরালেন না, তার গলায় স্থির শীতলতা, “আমি এখন কোথাও যাচ্ছি না।”
অফিসার একটু ইতস্তত করল, “স্যার, ইমার্জেন্সি কিছু
হলে—”
কল্লোল এবার মাথা ঘুরিয়ে তাকালেন তার দিকে।
“তোমরা সামলাও। এন্ড ফারদার এই কেবিনে আমার অনুমতি ছাড়া কেউ আসবে না।”
অফিসার বিষ্মিত দৃষ্টিতে একবার ঊর্মির হাত ধরে রাখা কল্লোলের হাতের দিকে, আরেকবার কল্লোলের গম্ভীর মুখটার দিকে তাকালেন। এক মুহূর্তের মধ্যে তার মাথায় উঁকি দিল ঝাঁকে ঝাঁকে প্রশ্ন।
ক্যাপ্টেন কি এই মেয়েটাকে আগে থেকে চেনেন?
তাদের মধ্যে কি ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্ক আছে?
………
ক্যাপ্টেন আবরার ইমতিয়াজ কল্লোলের মত গম্ভীর, ঠান্ডা স্বভাবের মানুষের এই নতুন রূপ দেখে বেশ ভালো রকমের অবাক হলেও চুপচাপ মাথা নুইয়ে কেবিনের দরজাটা বন্ধ করে দিলেন অফিসার।
দরজা বন্ধ হওয়ার পর ঘরটা আবার নিঃশব্দ হয়ে গেল।
কল্লোল সামান্য ঝুঁকে এল, ওর কনুই ঊর্মির বিছানার কিনারায়। ও নিজের অজান্তেই চোখ বন্ধ করল এক মুহূর্তের জন্য।
ঊর্মির নিঃশ্বাস খুব মৃদু। অক্সিজেন মাস্কের ভিতর দিয়ে বাতাস ঢোকে আর বের হয় বাষ্প ছুঁয়ে।
হঠাৎ করেই ওর ডান হাতের আঙুলের হালকা কাঁপুনি টের পেল কল্লোল।
ও চোখ রাখল মেয়েটার কপালে, পাতলা ভ্রু দুটো সামান্য কুঁচকে আছে যেন। জ্ঞান ফিরে আসছে কি?
ঊর্মির চোখের পাতা কাঁপে কিনা, বোঝা যায় না।
মস্তিষ্ক যেন কোনো অদৃশ্য সংকেত পাঠাচ্ছে, শরীরের ভেতরকার সচেতনতা ধীরে ধীরে ফিরে আসছে চুপিচুপি। কিছুটা সময় লাগে, তারপর চোখের পাতা হালকা দুলে ওঠে খুব আস্তেধীরে। কপালের মাঝখানে ভাঁজ পড়ে, শ্বাসটা একটু গভীর হয়।
ঊর্মির চোখ ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করল।
একচোখ আধখোলা, ঝাপসা, আলো দেখে চোখ ফিরিয়ে নিল একবার। যেন বুঝতে পারছে না কোথায় আছে।
চোখদুটো ক্লান্ত, অচেনা, রঙহীন।
তারপর দুচোখই সামান্য খুলল। কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল সাদা ছাদের দিকে। নিঃশব্দে।
মৃদু গলায় কল্লোল ডেকে উঠল,
“ঊর্মি…”
নিজের নাম শুনে ওর চোখ ধীরে ধীরে ফোকাস করে সেই কণ্ঠের উৎসের দিকে তাকাল।
কল্লোলের মুখটা তখন অদ্ভুত নরম, কিন্তু চোখে একই সাথে খেলা করছে শঙ্কা আর প্রস্তুতি। যদি ও চমকে ওঠে, যদি ঘাবড়ে যায়…
ঊর্মির ঠোঁট দুটো সামান্য নড়লো।
কোনো শব্দ বের হয়নি। কিন্তু সে বোঝার চেষ্টা করল কোথায় আছে। চোখ আবার ঘুরল ঘরের ভেতরটায়, তারপর থেমে গেল কল্লোলের চোখে।
হঠাৎ শরীরটা একটু নড়ল।
তারপর হঠাৎ করেই তীব্র অস্বস্তিতে ধড়মড় করে উঠে বসে উঠতে চাইল…
কল্লোল তৎক্ষণেই হাত বাড়িয়ে ওর কাঁধ চেপে ধরল,
“ঊর্মি… না। এখন না। উঠবে না তুমি।”
ঊর্মির ঠোঁট কাঁপে একটু, কোনো শব্দ বেরোয় না।
হাতে বাঁধা স্যালাইনের টিউব দুলে ওঠে ওর ছটফটানিতে। শরীর ক্লান্ত, কিন্তু মন যেন দিশা খুঁজছে।
কল্লোল তখন আরও কাছে সরে এসে আস্তে করে ওর কপালের ভেজা চুলগুলো সরিয়ে দেয়।
“শুয়ে থাকো, ইউ নিড টু রেস্ট।”
ঊর্মি একটা প্রতিবাদী দৃষ্টি ছুঁড়ে দিল ওর দিকে, কণ্ঠ তখনো ফিরে আসেনি পুরোপুরি, কেবল ঠোঁট নড়ল সামান্য,
“আমি ঠিক আছি…”
কল্লোল এবার গলা একটু নরম করল,
“না, ঠিক আছো বলেই তো আবার ভাঙতে দিচ্ছি না তোমাকে।”
ঊর্মির চোখে কিছুটা বিরক্তি, অসহায়তা আর কিছুটা অভিমান ভেসে উঠল। কিন্তু কল্লোলের চোখে তখন চিন্তার অবিচল ছায়া। আলতো করে ওর কপালের পাশে চুলগুলো সরিয়ে দিতে দিতে সে শুধু বলল,
“এখন শুধু বিশ্রাম। বাকিটা পরে বলব… কথা দিচ্ছি।”
ঊর্মি আবার ছটফট করতে শুরু করল। চোখদুটো ঘোরাচ্ছে আশপাশে, যেন বুঝে নিতে চাইছে এখন কোথায় আছে ও। বুকে ভার, অক্সিজেন মাস্ক থাকার পরেও নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু ভেতরে ভেতরে যে অস্থির হয়ে উঠেছে ও— সেটা যথার্থই প্রকাশ পাচ্ছে ওর আচরণে।
ঊর্মি নিঃশ্বাস নিতে গিয়ে কাশল। চোখের কোণে জল এসে জমল। কণ্ঠ তখনো পুরোপুরি ফিরে আসেনি, কিন্তু ঠোঁট কাঁপছে ওর। অক্সিজেন মাস্কের নিচে ফিসফিস করে ও বলল, “আ-আপনি এখানে কেন? বাকি সবাই… বাকিরা কোথায়…”
কথাটা শেষ করার আগেই আবার একটু উঠে বসার চেষ্টা করল ও। স্যালাইনের সূচ গেঁথে থাকা হাতে টান লেগে মুখ থেকে বেখেয়ালে বেরিয়ে এলো ছোট্ট আর্তনাদ…
“আহ্…”
কল্লোল স্বর এবার কঠিন হলো,
“সবাই নিরাপদে আছে। সবাই… তোমরা সবাই এখন আমাদের জাহাজে। তুমি ঠিক নেই, ঊর্মি।
তারপর থেমে আবার বলল,
তুমি ডুবে যাচ্ছিলে। তোমার শরীরের তাপমাত্রা বিপজ্জনকভাবে নেমে গিয়েছিল। তুমি হাইপোথার্মিয়ায় চলে গিয়েছিলে। তুমি উঠে বসতে চাইছো, এটাই প্রমাণ করছে যে এখনো পুরোপুরি সেরে ওঠোনি। আর কিছু মনে পড়ছে?”
ঊর্মির চোখ তখন হঠাৎ থেমে গেল। দৃষ্টিটা স্থির হলো সামনের দিকে।
একটা ঢেউ, একটা চিৎকার, নিশাতের হাত, রুবেলের গলা, ভাঙা কাঠের বোর্ড…
তবে সেই মুহূর্তের পর যেন সবই সাদা কুয়াশা।
ও ফিসফিস করে বলল,
“আমি… আমি কিছুই বুঝিনি… শুধু বুঝেছিলাম, আমি হারিয়ে যাচ্ছি…”
কল্লোল ওর হাতের উপর হাত রাখল। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, “ ঘুমাও… বাকি কথাগুলো পরে।”
ওর নিস্তেজ শরীরটা আবার ধীরে ধীরে হেলে পড়ল বালিশে। কল্লোল এগিয়ে এসে অক্সিজেন মাস্কটা সোজা করে দিল। ওর চোখ দুটো এবার বন্ধ হয়ে এল ধীরে ধীরে।
ঊর্মির বন্ধ চোখে তখন বিস্ময়— ও তো ভেবেছিল এই মানুষটার ছায়াও মাড়াবে না আর। তবে কীভাবে… ঠিক এই মানুষটাই এল? আবার?
To be continued…
#জলতরঙ্গের_সুর
পর্ব – ১২
লেখা – আসফিয়া রহমান
অনুমতি ছাড়া কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ❌
ঘরের আলো তখনও ম্লান। জানালায় মোটা পর্দা টানা। জানালার বাইরে নীল সাগর সূর্যের আলোয় ঝিকিমিকি করছে। আজকের আবহাওয়া দেখে বোঝার উপায় নেই যে কালকে ঠিক কত বড় একটা ঝড় বয়ে গেছে এই সমুদ্রের বুকে। জাহাজের দুলুনিতে হালকা হয়ে আসা ঘুমটা ভেঙে গেল ঊর্মির।
চোখ খোলার পর প্রথম কিছুক্ষণ ও বুঝে উঠতে পারল না, কোথায় আছে। কিন্তু তারপর ধীরে ধীরে মনে পড়ল—ঝড়, সমুদ্রের প্রবল ঢেউ, ভেসে থাকা কাঠের টুকরো, আর… কল্লোলের চোখদুটো।
তীব্র সন্দেহ হলো একবার— ওগুলো কি স্বপ্ন ছিল?
ও আস্তে আস্তে উঠে বসে। শরীরটা তখনো ক্লান্ত লাগছে ওর, কিন্তু আগের থেকে একটু ভালো। আশেপাশে তাকাতেই ওর চোখ গেল এতক্ষণ ধরে শুয়ে থাকা সাদা বালিশটার উপর।
বালিশের ঠিক পাশে একটা সাদা কাগজ ভাঁজ করে রাখা। ও ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে তুলে নিল সেটা।
সাদা কাগজের মধ্যে পরিষ্কার গুটি গুটি হাতের লেখা।
—
“Get well soon.
— Captain A. I. Kollol”
—
তিনটে শব্দ।
তবু যেন কাগজটার প্রতিটা অক্ষর ওর বুকের কোথাও গিয়ে বিঁধল।
ও কিছু বলল না। মুখ শক্ত করে তাকিয়ে রইল শুধু। চোখের পাতায় অভিমান জমে উঠছে ধীরে ধীরে।
ও জানে, কেউ একটু আগেও এখানে ছিল।
বালিশের ধারে এখনও কারও বসে থাকা স্পর্শ,
ভাঁজ করা কাগজটার গন্ধে মিশে আছে সেই ছায়ামানবের নিঃশ্বাস…
ঊর্মি চোখ তুলে তাকাল না জানালার দিকে, না দরজার দিকে। চোখ নামিয়ে আবার একবার কাগজটা পড়ল।
তারপর কাগজটা বুকের কাছে ধরে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল। তারপর ভ্রু কুঁচকে ঠোঁট ফুলিয়ে ফিসফিস করলো নিজের মনে,
“নিজেই তো নিষেধ করেছিল আশেপাশে আসতে…
এখন আবার নিজেই আমার কাছে এসেছে… হুহ্… আবার চিরকুট রেখে গেছে… যত্তসব!”
ও মোটেই কথা বলবেনা ওই ছায়ামানবটার সাথে। চোখ ভরা অভিমান নিয়ে ও তাকিয়ে রইল কাগজটার দিকে।
—–
অনেক্ষণ পর কাগজটা ধীরে ধীরে ভাঁজ করল ও।
আঙুলের ডগা দিয়ে ছুঁয়ে থাকল কয়েক মুহূর্ত… যেন চায় কিছু অনুভব করতে… অথবা ভুলে যেতে।
তারপর আস্তে করে কাগজটা গুঁজে রাখল বালিশের নিচে। তারপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে পা ছোঁয়ালো মেঝেতে। পায়ের আঙুলে ঠান্ডা লাগল, আশেপাশে কোথাও জুতো জোড়া খুঁজে পেল না ও।
কেবিনটা তখন নিঃশব্দ, কেবল দূর থেকে ইঞ্জিনের একঘেয়ে শব্দ শোনা যায়। ও খালি পায়েই এগিয়ে গেল কেবিনের দরজার দিকে। আস্তে করে দরজাটা ফাঁক করে উঁকি দিল বাইরে।
সামনে লম্বা করিডোর। জাহাজের ধাতব দেয়ালগুলোয় সাদা রঙ, মাঝে মাঝে কমলা রঙের সেফটি বোর্ড ঝুলে আছে। দেয়ালের ওপরে গোল জানালা, তার ভেতর দিয়ে দেখা যাচ্ছে দিগন্ত ছুঁয়ে থাকা নীল সমুদ্র।
একটু দূরে দেখা যাচ্ছে মূল ডেকের অংশ। সেখানে কয়েকজন ক্রু ঘুরছে— কেউ যন্ত্রপাতি দেখছে, কেউ কার্গো লক করছে।
আর মাঝখানে পড়ে আছে একটা কাঠের বাক্স, ভেজা, নোনা জল লেগে ছোপ ছোপ দাগ পড়ে আছে তাতে। সেটার পাশে ঝুঁকে কিছু একটা লিখছে একজন সাদা পোশাকধারী অফিসার।
ঊর্মির চোখ সেদিকে। শব্দ না করে পা টিপে টিপে এগোচ্ছিল ও। মনোযোগ সহকারে পর্যবেক্ষণ করছিল সবার কর্মকাণ্ড।
ঠিক সেই মুহূর্তে ওর পেছন থেকে একটা গম্ভীর গলা ভেসে এল। “আপনি এখানে কি করছেন, মিস?”
ঊর্মি ভয়ানক চমকে উঠল। সমস্ত অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল ওর। সঙ্গে সঙ্গে যেন যন্ত্রের বাটন চেপে থামিয়ে দেয়ার মত আচমকা থেমে গেল ওর পা। ধরফর করা বুকে হাত দিয়ে ধীরে ধীরে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন ফিরল ও।
কল্লোল!
ঊর্মি প্রথমবারের মতো ওকে ইউনিফর্ম পরা অবস্থায় দেখল। সাদা রঙের ইউনিফর্মটা একটু বেশিই মানিয়েছে লোকটার গায়ে। হাতে একটা ডকুমেন্টস ফাইল ধরা, কিন্তু চোখ একদৃষ্টে চেয়ে আছে ওর দিকেই। গলায় পরিচিত গম্ভীরতা, কিন্তু চোখে যেন প্রকাশ পাচ্ছে একটা চাপা উদ্বেগের রেখা।
ঊর্মি ভেতরে ভেতরে ফুঁসে উঠলেও মুখে কিছু বলল না। এভাবে কেউ ভয় দেখায়? একটা মানুষ এমন নিঃশব্দ চলাফেরা করবে কেন? সাধে তো আর ঊর্মি এই ব্যাটার নাম ছায়ামানব রাখেনি! কিন্তু রাগের চেয়ে অভিমানের পাল্লাই যেন ভারী। ঊর্মি ভ্রু কুঁচকে চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে থাকল এক মুহূর্ত। তারপর মুখ ফিরিয়ে আবার তাকাল সামনের দিকে।
কল্লোল এবার এগিয়ে এসে ওর মুখোমুখি দাঁড়ালো। গম্ভীর গলায় বলল, “ঊর্মি, পা খালি কেন? জুতো কোথায় আপনার? এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে ঠান্ডা লাগবে তো! আপনার শরীর এখনো দুর্বল, you know that।”
ঊর্মি ওর কথায় পাত্তা না দিল না। বিরক্তিতে ভরে উঠল ওর ভেতরটা। এরকম কেয়ারিং টাইপের কথাবার্তা বলার মানে কী? তাও আবার এমন গম্ভীর গলায়! সুযোগ পেলেই ধমকানো শুরু করে, কি পেয়েছেটা কি এই লোক!
ও মুখ ঘুরিয়ে ফেলল অন্যদিকে, “আমি ঠিক আছি…”
কথা শেষ করার আগেই বড়সড় একটা ঢেউ এসে দুলিয়ে দিল জাহাজটাকে। ঊর্মির শরীরটাও ভারসাম্য হারিয়ে দুলে ওঠে তারসাথে। তার ওপর এখনো দুর্বলতা, মাথাটা হঠাৎ করে চক্কর দেয়ার বিষয়টাও যুক্ত হলো সেইসাথে।
চোখের সামনে এক মুহূর্তে চারদিক ঘোলা হয়ে এলো। মাথাটা হঠাৎ খালি হয়ে গেল…
সবমিলিয়ে তাল হারিয়ে পড়ে যাওয়ার আগেই কল্লোল কঠোর পেশাদারি দক্ষতায় দ্রুত এগিয়ে এসে ধরে ফেলল ওকে। কাঁধ আর পিঠের মাঝখানে সাপোর্ট দিয়ে ঠেকাল ওর পড়ে যাওয়া।
“হ্যাঁ, ঠিক যে আছেন, সেটা বেশ ভালোই বুঝতে পারছি।”
ঊর্মি এবার নিজের উপরেই বিরক্ত হল। অসহ্য!
এই করোলাটার সামনে পড়ে যেতে হবে কেন? চোখ সরিয়ে নিল ও। নিজেকে সামলে নিতে চাইল, কিন্তু ওর হাত দুটো তখনো কল্লোলের হাতে বন্দী।
“ছাড়ুন আমাকে। আমি দাঁড়াতে পারি।” কড়া কন্ঠে বলার চেষ্টা করল ও।
কল্লোল একচুলও না নড়ে, স্থিরভাবে ওর চোখে তাকিয়ে থাকল। ঠোঁটের আগায় খুব মৃদু, শীতল একটা হাসি।
“ছাড়ব না।” তারপর খুব ধীরে, খুব স্পষ্ট স্বরে ফিসফিস করে বলল, “যদি না ছাড়ি… তাহলে কী করবেন, মিস আরওয়া মাহযাবীন?”
একটা বড়সড় ধাক্কা খেয়ে চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে রইল ঊর্মি। রাগে, লজ্জায়, নাকি অসহায়ত্বে… ও নিজেও বুঝে উঠতে পারল না। গলার কাছে একটা কিছু আটকে গেল বুঝি! এই গোমড়ামুখো, করোলা মার্কা ছায়ামানবটা পাগল-টাগল হয়ে গেল নাকি?
“আপনিই তো বলেছিলেন, আপনার আশপাশে না যেতে… তাহলে এখন নিজেই আমার কাছে আসছেন কেন বারবার?” বুকের ভেতর এতদিন ধরে চেপে রাখা অভিমানটা যেন উথলে উঠল ওর। অভিমানী মুখখানা ফিরিয়ে নিল ও।
“হুঁ… বলেছিলাম,” কল্লোল গলা খাঁকারি দিল হালকা করে, “তাতে কি ম্যাডামের অভিমান হয়েছে?”
ঊর্মি এবার শক্তি খাটিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল কল্লোলের হাতের বাঁধন থেকে।
“কোনো অভিমান-টভিমান হয়নি। আপনার উপর অভিমান করার আমি কে?”
কল্লোল একটু থমকে গেল ওর কথায়। তারপর মুচকি হাসল, সেই হাসিতে মিশে আছে চাপা ব্যথার সুর।
“ঠিকই তো,” মৃদু স্বরে বলল ও, যেন নিজেকেই বলছে, “আপনি তো কেউ নন…”
কথাটা শেষ করল না কল্লোল।
ঊর্মি তাকালো না, মুখ ঘুরিয়ে রাখল। কিন্তু গলার কাছে কেমন খচখচ করছে ওর। ঢোক গেলার চেষ্টা করল ও। বুকের মধ্যে কেমন যেন একটা ভার জমে আছে, নামছে না কিছুতেই।
কল্লোল এক মুহূর্ত ঊর্মির মুখের দিকে তাকিয়ে পড়ে নিল ওর সকল অভিব্যক্তি। তারপর পেছন দিকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ক্রুদের দিকে ইশারা করল।
“ওনার জন্য নরম স্লিপার আর একটা পাতলা শালের ব্যবস্থা করো।”
ঊর্মি কিছু না বলে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। কল্লোলের নির্দেশ শুনে যেন আরেকটু কুঁকড়ে গেল ওর ভেতরটা। এই পাষাণ লোকটা হঠাৎ করেই এমন কেয়ারিং হচ্ছে কেন? কেন যেন মনে হচ্ছিল ওর এখনই কান্না পেয়ে যাবে…!
ঠিক তখনই পেছন থেকে ভেসে এলো একগাদা চেনা গলার আওয়াজ—
“ঊর্মি?!”
“তুই এখানে!”
“আলহামদুলিল্লাহ, উর্মি ঠিক আছে!”
দপদপ করে ছুটে এলো ওরা। নিশাত, তানিয়া, রুবেল, মেহরিন — সবাই একসাথে।
নিশাত এগিয়ে এসে ওর দুহাত ধরে ফেলল, “তুই কেমন আছিস রে? তোর অবস্থা শুনে টেনশনে পড়ে গিয়েছিলাম…”
তানিয়া এসে জড়িয়ে ধরতে গেল ওকে, কিন্তু কল্লোল তৎক্ষণাৎ গম্ভীর স্বরে বলে উঠল, “জাস্ট রিকভার করেছে। অত ঘনিষ্ট কিছু এখন নয়, প্লিজ।”
সবাই একটু থেমে গেল, হাসি থামিয়ে শুধালো,
“উনি কে, উর্মি?”
ঊর্মির চোখ বড় বড় হয়ে গেল। কল্লোল মুখ ঘুরিয়ে নিল, যেন নিজে এড়াতে চাইছে দায়। উর্মি কিছু বলল না, ওর চোখে তখন অস্বস্তি, সাথে এক চিমটি অভিমান। ও মুখ ফিরিয়ে নিল, নীরব প্রতিবাদে।
মেহেরিন ফিসফিস করে বলল, “কিছু তো আছে… কথাবার্তা কেমন যেন কেয়ারিং কেয়ারিং…”
তানিয়া চাপা গলায় বলল, “উমমম… প্রেম প্রেম গন্ধ পাচ্ছি!”
নিশাত বোকা বোকা গলায় একটু জোরেই বলে ফেলল, “হ্যাঁ? এক রাতের মধ্যে প্রেম হয়ে গেছে?”
ঊর্মির গাল লাল হয়ে উঠল এবার। ও চোখ রাঙাল,
“চুপ! চুপ করো সবাই, প্লিজ!”
কল্লোল ততক্ষণে ঘুরে দাঁড়িয়ে হাঁটতে শুরু করেছিল, চলে যেতে যেতে ওর কানে ঠিকই পৌঁছেছিল নিশাতের করা প্রশ্ন—
“এক রাতের মধ্যে প্রেম হয়ে গেছে?”
পায়ের গতি শ্লথ হয়েছিল মুহূর্তের জন্য, থামে নি।
ওর ডান কাঁধটা সামান্য নড়ল যেন- তীব্র সংযমে হাসি কিংবা বিরক্তি লুকিয়ে ফেলল। তারপর চোখ নামিয়ে আবার দ্রুত হাঁটতে শুরু করল করিডোর ধরে, কেবিনের মোড় ঘুরতেই মিলিয়ে গেল দৃষ্টিসীমা থেকে।
ঊর্মি ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।
মুখ না দেখেও বুঝে গেল ছায়ামানবটা সব শুনেছে। ও ধপ করে বসে পড়ল পাশে রাখা একটা কাঠের বাক্সের উপর, মুখটা ফিরিয়ে তাকাল জাহাজের বাইরে। নীল সাগর এখন দিনের আলোয় শান্ত, অনুচ্চ শব্দে দুলিয়ে যাচ্ছে জাহাজটাকে। ওর বুকের ভেতর একটা অনুভূতি ছলাৎ ছলাৎ করে উঠল যেন।
মেহেরিন পাশে বসে ফিসফিস করে বলল, “আচ্ছা, সিরিয়াসলি বল তো, এটা কে?”
ঊর্মি কিছু বলল না, মাথা নিচু করে বসে রইল।
তানিয়া বলল,
“নাহ, মনে হচ্ছে এই ব্যাপারটায় ইনভেস্টিগেশন দরকার।”
নিশাত ফিক করে হেসে বলল,
“আচ্ছা উর্মি, ওনাকে কি আমরা দুলাভাই বলে ডাকতে পারি এখন থেকে?”
ঊর্মি এবার উঠে দাঁড়াল।
“এনাফ! কেউ যদি আর একটা শব্দও বলে… আমি কিন্তু এই জাহাজ থেকেই সাগরে ঝাঁপ দিয়ে দেবো!”
সবাই হেসে উঠল একযোগে।
হাসতে হাসতে ওরা খেয়াল করল ঊর্মির গাল শুধু রাগে নয়, সত্যিকারের লজ্জায় লাজ রাঙা হয়ে গেছে। কিন্তু সেই হাসাহাসির মধ্যে সবার চোখ বেখেয়ালে এড়িয়ে গেল রুবেলের নিরত্তাপ, অন্যমনস্ক চেহারাটা।
—–
হাসির রোল শেষে যখন শান্ত হল সবাই, মেহেরিন তানিয়ার হাত ধরে বলল,
“চল, ওকে একটু রেস্ট নিতে দিই।”
তানিয়া মাথা নেড়ে ঊর্মির দিকে তাকাল,
“ঊর্মি তুই রেস্ট নে, আমরা আবার পরে আসব।”
সবাই একে একে চলে গেল।
ঊর্মি কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর একটা নিঃশ্বাস ফেলে ঘুরে তাকাল, রুবেল তখনো দাঁড়িয়ে আছে কেবিনের দরজার সাথে ঠেস দিয়ে।
চোখে ভাবলেশহীনতা, কিন্তু দৃষ্টিটা আটকে আছে ওর উপরেই।
ঊর্মি ওকে দেখে একটু ইতস্তত করল,
“তুমি এখনো যাওনি?”
রুবেল ঠান্ডা গলায় বলল,
“যাবো… যাওয়ার আগে একটা কথা বলি?”
ঊর্মি তাকাল, অপেক্ষা করল।
রুবেল চোখ সরাল বাইরের দিকে। তারপর নিচু গলায় বলল,“কাউকে কিছু বলতে চাইছো না ঠিকই… কিন্তু আমরা কেউ অন্ধ না, ঊর্মি!”
ঊর্মি কপাল কুঁচকে তাকাল, “মানে?”
ওর গলা স্বাভাবিক, কিন্তু কথার ভেতরে যেন জমে থাকা কিছু উথলে উঠল,
“তুমি সুস্থ হয়ে গেছো দেখে ভালো লাগছে। তবে নতুন একজনকে অনেক কাছাকাছি দেখে একটু বিস্মিত হলাম শুধু। উনি যেভাবে তোমার পাশে দাঁড়াচ্ছেন… সেটা অনেককেই কনফিউজ করবে। বুঝতেই পারছো, তাই না? সবাই হাহা হিহি করছে বলে ভেবো না যে, কেউ কিছু বোঝে না।”
ঊর্মি চমকে তাকাল। গলার স্বর নিচু করে বলল,
“তুমি কী বোঝাতে চাইছো, রুবেল?”
রুবেল একপাশে ঠোঁট টেনে মৃদু হাসল, সেই হাসিটা খুব একটা ভালো লাগলো না ঊর্মির।
“মানে কিছু না। এতদিন মনে করতাম তুমি খুব সহজে কাউকে কাছে আসতে দাও না। বোধহয় ভুল ভেবেছিলাম।”
ঊর্মি কিছু বলতে গিয়েও আটকে গেল।
রুবেল তখন মাথা নাড়িয়ে বলল,
“যাক, সুস্থ হও তাড়াতাড়ি। তুমি ভালো আছো, এইটাই তো আসল কথা, তাই না?”
তারপর ধীরে ধীরে পেছন ঘুরে চলে গেল ও। আর ঊর্মি আহাম্মকের মত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল ওর প্রস্থান।
নতুন একজন… অনেক কাছাকাছি…
কনফিউজ… কেউ অন্ধ না… মানে কী এগুলোর?
কী বলে গেল রুবেল?
To be continued…