#জলতরঙ্গের_সুর
পর্ব – ২৭
লেখা – আসফিয়া রহমান
অনুমতি ছাড়া কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ❌
সকাল হয়েছে। দক্ষিণমুখী জানালা দিয়ে নরম সূর্যালোক প্রবেশ করছে ঘরে। আলো সরাসরি ঊর্মির চোখের ওপর পড়তেই চোখ কুঁচকে ফেলল ও। হাত দিয়ে আড়াল করার চেষ্টা চালিয়ে বিশেষ লাভ হলো না। অগত্যা বিরক্ত হয়ে উঠে বসলো।
ফ্রেশ হয়ে বিছানা গুছিয়ে সোফায় বসে টিভি চালালো ও। ব্রেকফাস্ট করতে ইচ্ছে করছে না। রাতেও খাওয়া হয়নি, তারপরেও ইচ্ছে করছে না।
বিরক্ত ভঙ্গিতে একটার পর একটা চ্যানেল বদলাচ্ছে ঊর্মি, কোনোটাতেই স্থির হচ্ছে না। এরমধ্যে ডোরবেল বেজে উঠল। অবাক হলো ও।
এত সকালে কে আসতে পারে?
সন্দিহান ভঙ্গিতে দরজার কাছে গিয়ে খুলতেই দেখল— কল্লোল দাঁড়িয়ে আছে।
অবাকের মাত্রা বাড়লো বৈ কমলো না। এই লোক এত সকাল সকাল এখানে কী করছে!
“Good morning my little bird!”
“Good morning.”
ঊর্মি দরজা থেকে সরে দাঁড়িয়ে কল্লোলকে ভেতরে ঢোকার জায়গা করে দিল। কল্লোল ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে জিজ্ঞেস করল, “ব্রেকফাস্ট করেছো?”
ঊর্মি কিছু না বলে সোফায় গিয়ে বসল। কল্লোল দরজা লাগিয়ে হাতের প্যাকেটটা ডাইনিংয়ে রেখে ঊর্মির পাশে এসে বসলো।
“বেশি মিস করেছো আমাকে?
ঊর্মি এবারও কিছু বলল না। কল্লোল অবাক হয়ে ঊর্মির দু কাঁধে হাত রেখে নিজের দিকে ঘোরালো।
“কী হয়েছে ঊর্মি? কথা বলছো না কেন?”
“ভালো লাগছে না…” কাঁধের ওপর থেকে কল্লোলের হাতদুটো সরিয়ে দিল ও। আবারো ব্যস্ত হলো চ্যানেল বদলাতে।
কল্লোল কিছুক্ষণ চুপচাপ ওকে দেখল। তারপর আস্তে করে জিজ্ঞেস করল, “মন খারাপ?”
ঊর্মি তাকালো না ওর দিকে। কল্লোল এবার ঊর্মির হাত থেকে রিমোট নিয়ে টিভিটা বন্ধ করে দিল। ঊর্মি বিরক্ত হয়ে ওর দিকে তাকালো।
“কী সমস্যা?”
“কার?”
ঊর্মি বিরক্তিতে চ সূচক শব্দ করলো। হাত বাড়িয়ে বলল, “রিমোট দিন।”
কল্লোল শান্ত ভঙ্গিতে রিমোটটা পাশে রাখল। তারপর ওর দিকে তাকিয়ে বলল, “ব্রেকফাস্ট করবে চলো। I’m hungry.”
“But I’m not. আপনি গিয়ে খান।”
“ঊর্মি…?” কল্লোল নরম কন্ঠে ডাকলো।
ঊর্মি তাকালো ওর দিকে, “বলুন।”
কল্লোল গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঊর্মির হাত ধরে টান দিল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মেয়েটা হুমরি খেয়ে পরলো শক্তপোক্ত বুকের ওপর। ছটফটানি শুরু হবার আগেই কল্লোল শক্তহাতে ওর পাতলা কোমর আঁকড়ে ধরল। তার সাথে সাথেই শুরু হলো ছটফটানি।
“ছাড়ুন, আবরার!” হাত-পা ছুড়তে ছুড়তে চিৎকার করল ঊর্মি, বের হতে চাইল শক্তপোক্ত হাতের বাঁধন থেকে।
কল্লোল আরও শক্ত করে পাতলা কোমরটা আঁকড়ে ধরল, টুপ করে চুমু খেল নরম তুলতুলে ঠোঁটে।
কেঁপে উঠে এবার একদম শান্ত হয়ে গেল মেয়েটা। মাথা এলিয়ে দিল প্রশস্ত বুকে।
কল্লোল চিন্তিত চোখে মেয়েটার শুকনো মুখটার দিকে তাকালো। কালকে বিকেলেই তো কথা হলো। তখনো তো ঠিক ছিল মেয়েটা। এরমধ্যেই কী হলো?
“সুইটহার্ট?”
ঊর্মি জবাব দিল না। দুহাতে কল্লোলকে আঁকড়ে ধরল।
“কী হয়েছে আমাকে বলবে না?”
ঊর্মি এবার মাথা তুলে কল্লোলের দিকে তাকালো। ধীরে স্বরে বলল, “কাল রাতে বাড়ি থেকে কল এসেছিল…”
“তারপর?”
কল্লোলকে ছেড়ে দিয়ে উঠতে চাইল ঊর্মি। কল্লোল ছাড়লো না ওকে। কোমরে আলতো চাপ দিয়ে আবার কাছে টানল।
“কথা শেষ করো।”
অগত্যা ঊর্মি বাধ্য হলো পুরোটা বলতে।
“কাল রাতে আম্মু কল দিয়েছিল। এতদিন ফোনে ঠিকঠাক নেটওয়ার্ক না থাকায় যোগাযোগ করতে পারেনি। কয়েকদিন আগে সামির ভাইয়ের বাবা মানে বড়বাবা নাকি আমার জন্য বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে এসেছেন।”
এতটুকু বলে ঊর্মি কল্লোলের মুখের দিকে তাকালো।অভিব্যক্তিহীন মুখটায় গাম্ভীর্য ভর করেছে। বাকিটা বলার সাহস পেল না ও।
কল্লোল কিছুক্ষণ নির্বিকারভাবে ঊর্মির দিকে তাকিয়ে রইল, “বাকিটা বলো।”
ঊর্মি কল্লোলের কাছ থেকে একটু সরে বসলো। তারপর নিচের দিকে তাকিয়ে আঙ্গুল দিয়ে অন্য হাতের চামড়া খুঁটতে খুঁটতে মিনমিন করে বলল, “আম্মু বাড়ি যেতে বলেছে।”
কল্লোল ঠান্ডা স্বরে প্রশ্ন করল, “কবে?”
“কাল-পরশুর মধ্যে…”
কল্লোল কিছু না বলে প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করল। দ্রুতহাতে কন্টাক্ট লিস্ট ঘেঁটে একটা নাম্বার বের করে তাতে ডায়াল করার পূর্ব মুহূর্তে ঊর্মি তড়িৎ গতিতে এগিয়ে এসে ওর হাত ধরে ফেলল, “কাকে কল করছেন?”
“সামিরকে।” একশব্দে উত্তর দিল কল্লোল।
“এখন না প্লিজ…!”
আবারো ডায়ালে প্রেস করার আগে ঊর্মি হাত আটকালো। কল্লোল শীতল দৃষ্টিতে তাকালো ওর দিকে।
আমতা আমতা করলো ঊর্মি, “ম-মানে আপনি মাথা ঠান্ডা করুন আগে। উল্টাপাল্টা কিছু বললে হিতে বিপরীত হবে…”
“আমার মাথা ঠান্ডাই আছে।”
“তবুও এখন না… প্লিজ আবরার…”
কল্লোল শুনল। ফোনটা পকেটে গুজে উঠে দাঁড়ালো,
“খাবে এসো।”
ঊর্মিও উঠে দাঁড়ালো। কল্লোলের পেছন পেছন এক পা বাড়ানোর আগেই অন্ধকার হয়ে এলো চারপাশ।
শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে হেলে পড়ার আগেই কল্লোল পেছন ঘুরলো। তড়িৎ গতিতে এগিয়ে এসে আঁকড়ে ধরল ওকে।
“ঊর্মি…?”
মেয়েটা ততক্ষণে হেলে পড়েছে ওর বাহুতে। কল্লোল দ্রুত ঊর্মিকে কোলে তুলে বেডরুমে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল। চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে নরম কন্ঠে ডাকলো, “ঊর্মি…?”
ঊর্মি সাড়া দিল না। কল্লোল এবার গালে আলতো করে চাপড় দিল, “ঊর্মি… শুনতে পাচ্ছো?”
সাড়া নেই। কল্লোলের চোখে উদ্বেগ। অসুস্থতা মেয়েটার পিছু ছাড়ছে না। হাত বাড়িয়ে ওর পালস চেক করে দেখল রক্ত প্রবাহ চলছে ধীরগতিতে।
কল্লোল টেবিলের ওপর থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে আবারো পানি ছিটানো চোখেমুখে। মেয়েটার ঠোঁট সামান্য কেঁপে উঠলো, সংজ্ঞা ফিরলো না।
কল্লোল মাথার পাশে বসে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ওর দিকে। একরাশ ভয় আর অস্থিরতা ভর করেছে চোখে।
ফোন বের করে দ্রুত একজন পরিচিত ডাক্তারের নাম্বারে কল দিল। বাসার ঠিকানা দিয়ে দ্রুত আসতে বলল।
ওপাশ থেকে আশ্বাস পেলেও ওর ভেতরের অস্থিরতা কমলো না। ফোন রেখে আবারো ঝুঁকে পড়ল মেয়েটার কাছে। ঠান্ডা কপালে হাত রাখল। ফিসফিস করে ডাকলো, “ঊর্মি… লিটল বার্ড, একবার চোখ খোলো…”
কোনো সাড়া নেই।
কল্লোল অসহায় ভঙ্গিতে মেয়েটার চুলে হাত বোলাতে লাগল। মনে হলো বুকের ভেতরটা পাথরের মতো ভারী।
______________________________
ডাক্তার স্টেথোস্কোপে ঊর্মির হার্টবিট চেক করলেন, ব্লাড প্রেসার মাপলেন, তারপর চোখের পাতা টেনে রেসপন্স দেখলেন।
পর্যবেক্ষণ শেষে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
“ব্লাড প্রেশার একদম কমে গেছে। শরীর প্রচণ্ড দুর্বল। খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো করছে না মনে হচ্ছে?”
কল্লোল ঊর্মির দিকে তাকিয়ে বলল,
“আম… আমি তো গতকাল রাতে এখানে ছিলাম না। কিছুক্ষণ আগে এসেছি, তাই বলতে পারছি না। তবে গত কয়েকদিন ও হসপিটালে ভর্তি ছিল। ট্রমাটাইজড হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। কাল জার্নি করেও শরীর বেশ খারাপ ছিল।”
ডাক্তার কপালে ভাঁজ ফেলে মাথা নাড়লেন,
“এভাবে চলতে থাকলে শরীর সহ্য করতে পারবে না। শরীর এখনো পুরোপুরি রিকভার করেনি, তার ওপর মানসিক চাপ আর জার্নির ধকল—সব মিলে শরীর ভেঙে পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে অবস্থা আরও খারাপ হবে।”
ব্যাগ থেকে ইনজেকশন বের করতে করতে যোগ করলেন, “আমি আপাতত একটা ইনজেকশন দিচ্ছি, এতে প্রেসার কিছুটা স্টেবল হবে। কিন্তু এটা পারমানেন্ট সল্যুশন নয়। ওর বিশেষ যত্ন দরকার। নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়াতে হবে, ঔঘধপত্র ঠিকঠাক নিতে হবে, আর সবচেয়ে বড় কথা— মানসিক কোনো চাপ যেন না পড়ে।”
কল্লোল নিঃশব্দে মাথা নাড়ল।
ইনজেকশন দেওয়ার পর কিছুক্ষণ চুপচাপ পর্যবেক্ষণ করলেন ডাক্তার। কয়েক মিনিটের মধ্যে ঊর্মির নিস্তেজ শরীরে সামান্য নড়াচড়া হলো। কল্লোল তৎক্ষণাৎ ঝুঁকে ওর গালে চাপড় দিল,“ঊর্মি… শুনতে পাচ্ছো?”
মেয়েটা ধীরে ধীরে চোখ মেলল। প্রথমেই দৃষ্টিতে এলো কল্লোলের উদ্বিগ্ন মুখ। ক্লান্ত চোখে এক পলক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিল। ঠোঁট কাঁপল, ক্ষীণ স্বরে বলল,
“আমি… ঠিক আছি।”
কল্লোল কণ্ঠস্বর গম্ভীর,“না, তুমি ঠিক নেই। কোনো কথা শোন না তুমি। কী অবস্থা করেছ নিজের?
ডাক্তার জিনিসপত্র গুছিয়ে উঠে দাঁড়ালেন,“মিস্টার কল্লোল, ওর মানসিক ও শারীরিক দুই দিকেই যত্ন নিতে হবে। ওকে একা না রাখলে ভালো হয়। কয়েকটা টেস্ট করতে হবে, আমি লিখে দিয়েছি। রিপোর্ট দেখে ঠিকভাবে বোঝা যাবে শরীরে আর কোনো জটিলতা আছে কি না।”
কল্লোল গম্ভীর চোখে ডাক্তারকে আশ্বস্ত করল,“আমি আছি। আর কোনো অবহেলা হবে না।”
ডাক্তার বিদায় নেওয়ার পর ঘরটা নিস্তব্ধ হয়ে গেল।
কল্লোল দরজা বন্ধ করে এসে ডাক্তারের চেয়ারটায় বসল। ঊর্মি ততক্ষণে উঠে বসেছে। কল্লোলের চোয়াল শক্ত হয়ে আছে, দৃষ্টি গম্ভীর।
“তুমি কি ভাবছো, এভাবে বসে বসে নিজের শরীর খারাপ করবে?
ঊর্মি ঠোঁট নাড়াল, “আমি তো…”
কল্লোল কেটে দিল কথা, “Shut up! অজুহাত দেবার চেষ্টা করবে না। শরীরটা এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি, তার ওপর তুমি খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে বসে আছো। সমস্যা কী ঊর্মি?”
ঊর্মি চোখ নামিয়ে নিল। আঙুল দিয়ে চাদরের কোণা খুঁটতে খুঁটতে আস্তে করে বলল, “কাল রাতে আম্মুর সাথে কথা বলার পর আর খেতে ইচ্ছে করেনি…”
কল্লোল কিছুক্ষণ স্থির তাকিয়ে থেকে ঠান্ডা স্বরে জিজ্ঞেস বলল,“তো আম্মুর কথা শুনে তুমি খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেবে? নিজের শরীরের কথা ভাববে না?”
একটু থেমে কল্লোল ঝুঁকে এলো ওর কাছে। হাত দিয়ে ঊর্মির চিবুক উঁচু করল, চোখে চোখ রেখে ধীর স্বরে বলল, “আমি যদি সকালে না আসতাম? ভেবেছো কী হতো?”
ঊর্মির চোখ ভিজে উঠল। মুখে কিছু বলল না ও।
কল্লোল দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওর ভিজে চোখদুটো দেখে নিঃশব্দে নিজের রাগ সামলালো। উঠে গিয়ে ডাইনিং টেবিলের ওপর রাখা ওর নিয়ে আসা প্যাকেটটা খুলে খানিকটা খিচুড়ি প্লেটে করে নিয়ে এসে চেয়ারে বসলো।
“মুখ খোলো।”
ঊর্মি অবাক হয়ে মাথা নাড়ল, “না, আমি—”
কল্লোল ভ্রু কুঁচকে কড়া স্বরে ওর কথা কেটে দিল,
“চুপ! মুখ খোলো।”
ঊর্মি একটু ইতস্তত করে ঠোঁট সামান্য ফাঁক করল।
কল্লোল চামচে ভরে খিচুড়ি এগিয়ে দিল ওর মুখে।অনিচ্ছায় হলেও এক চামচ খেয়ে নিল ঊর্মি।
খেতে খেতে চোখ নামিয়ে আস্তে বলল,
“আমি নিজে খেতে পারি…”
কল্লোল নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে চামচে আবার তুলে বলল,
“পারলে কাল থেকে না খেয়ে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়তে না!”
“আপনি রাগ করেছেন, আবরার…?” খেতে খেতে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করল ঊর্মি।
কল্লোল দীর্ঘশ্বাস ফেলল, “রাগ না ঊর্মি। ভয় পেয়েছি, তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়…”
ঊর্মির চোখ আবার ভিজে উঠল। ও ফিসফিস করে বলল, “আমি… আমি সরি…”
কল্লোল ওর কপালের চুলগুলো সরিয়ে কানের পেছনে গুঁজে দিতে দিতে বলল, “Don’t be sorry. এখন থেকে কথার অবাধ্য হবে না, ঠিক আছে?”
ঊর্মি মাথা নাড়লো। কল্লোল পানির গ্লাসটা ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। খালি প্লেটটা টেবিলের ওপর রেখে ঔষধগুলো নিয়ে এলো। মোড়ক খুলে ওর হাতে দিলে বাধ্য মেয়ের মতো চুপচাপ খেয়ে নিল ঊর্মি।
এবার ওকে শুইয়ে দিয়ে পাতলা কাঁথাটা বুক পর্যন্ত টেনে দিয়ে কপালে আলতো করে চুমু খেল কল্লোল, “Now take rest. No more tension. I’ll handle everything, okay?”
—————
কল্লোল কোনোরকমে নাস্তা করেই সামিরকে ফোন দিয়ে সবকিছু জানালো। গোমড়ামুখো বন্ধুর কীর্তিকলাপ শুনে সামির প্রথমে বিষম খেলেও পরবর্তীতে বন্ধুর হুমকির সম্মুখীন হয়ে রাজি হলো বাড়িতে কথা বলতে। বাড়িতে কল্লোলের কথাটা অ্যারেঞ্জ ম্যারেজের প্রস্তাব হিসেবেই দেবে সামির। কিন্তু তারপরের পুরো বিষয়টাই নির্ভর করছে বড়দের ওপর।
To be continued…
#জলতরঙ্গের_সুর
পর্ব – ২৮
লেখা – আসফিয়া রহমান
অনুমতি ছাড়া কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ❌
পুরো ব্যাপারটা কখন, কীভাবে ঘটেছে ঊর্মি জানে না। দিন তিনেক পরে যখন ওর হোয়াটসঅ্যাপে কল্লোলের বায়োডাটা এলো তখন প্রথম মুহূর্তে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারেনি ও। অবাক নয়নে তাকিয়ে ছিল কিছুক্ষণ।
তারপর বারবার স্ক্রল করে দেখলো ডকুমেন্টটা— ‘আবরার ইমতিয়াজ কল্লোল’, নামটা দেখেই হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল এক লাফে।
ঠিক তখনই ওর মায়ের কল এল। কাঁপা আঙুলে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো মায়ের স্বাভাবিক কন্ঠস্বর,“ঊর্মি, সামিরের বন্ধুর কথা মনে আছে তোর? বিয়েতে এসেছিল যে… কল্লোল- নেভিতে আছে। সামির ওর বায়োডাটা পাঠিয়েছে। তোর বাবা পছন্দ করেছে। আগের যে প্রস্তাবটা তোর বড়বাবা এনেছিল সেটার থেকে কল্লোলকেই বেশি পছন্দ হয়েছে। তোকে পাঠিয়েছি, দেখে জানা।”
ঊর্মি নির্বাক হয়ে বসে রইল। মাথায় কিছুই ঢুকছিল না ওর। সামির? মানে, সামির ভাই এত সহজে রাজি হয়ে গেছে! আবার সবাইকে ম্যানেজও করে ফেলেছে! কীভাবে… মানে কীভাবে?
কলটা কেটে যাওয়ার পর ফোনটা শক্ত করে বুকের কাছে চেপে ধরল ঊর্মি। মনে একরাশ অদ্ভুত অনুভূতি ভর করল একসাথে— ভয়, অবিশ্বাস, আনন্দ, আর স্বস্তি।
আর ঠিক তখনই দরজায় টোকা পড়ল।
কল্লোল ভেতরে ঢুকল নির্লিপ্ত মুখে।
ঊর্মি হকচকিয়ে উঠল। বুকের ভেতর ধুকপুকানি আরও তীব্র হয়ে গেছে। ফোনটা লুকাতে গিয়েও সামলাতে পারল না ও। স্ক্রিনে তখনও খোলা— ‘ BioData of Abrar Imtiaz Kollol”।
কল্লোল ধীর পায়ে এগিয়ে এল। ঠোঁটের কোণে খেলে গেল বাঁকা হাসি, “দেখে ফেলেছো?”
ঊর্মি কাঁপা স্বরে বলল,“এটা… এটা কীভাবে হলো? তিন দিনের মধ্যে…?”
কল্লোল চেয়ার টেনে বসে শান্ত গলায় উত্তর দিল
“অসম্ভবকে সম্ভব করা আমার কাছে নতুন কিছু না, ঊর্মি। আমি তোমাকে বলেছিলাম— I’ll handle everything. And three days was enough for that.”
ঊর্মি হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ওর দিকে। মাথার ভেতর প্রশ্ন গিজগিজ করছে, অথচ ঠোঁট দিয়ে কোনো শব্দ বেরোচ্ছে না।
কল্লোল একটু ঝুঁকে এলো সামনে, দৃষ্টি স্থির ওর চোখে, “এখন কেবল তোমার সম্মতি বাকি সুইটহার্ট।”
ঊর্মির গলা শুকিয়ে এলো। হাতের তালু ঘামে ভিজে উঠেছে। অদ্ভুত এক টানাপোড়েন কাজ করছে বুকের ভেতর।
“সম্মতি…?” ফিসফিস করে বলল ও।
কল্লোল ঠোঁট বাঁকিয়ে নিঃশব্দে হেসে উঠল। ওর গলার স্বরটা এবার অনেক নরম, কিন্তু তাতে যেন চাপা দৃঢ়তা স্পষ্ট, “আমি আমার দিক থেকে সব করেছি। এখন শুধু তুমি ‘হ্যাঁ’ বলবে।”
ঊর্মি চোখ নামিয়ে নিল,“আমি যদি ‘না’ বলি…?”
কল্লোল চেয়ারে হেলান দিল, ঊর্মির ওপর থেকে চোখ সরাল না এক মুহূর্তের জন্যও,“’না’ তুমি বলতে পারবে না, ঊর্মি। কারণ আমার থেকে আলাদা হয়ে জীবনযাপন করার জন্য তোমার জন্ম হয়নি…”
ঊর্মির শ্বাসপ্রশ্বাস এলোমেলো হলো।
বুকের ভেতর কাঁপন ধরলো।
কল্লোল ধীর গলায় আবার বলল, “তুমি ভয় পেতে পারো, দ্বিধায় থাকতে পরো, এমনকি আমার ওপর রাগও করতে পারো। কিন্তু আমাকে অস্বীকার করার ক্ষমতা তোমার নেই। কারণ তুমি নিজেও জানো— তুমি আমার।”
ঊর্মি মাথা তুলে তাকাল অবাক দৃষ্টিতে। ওর গলায় আটকে আসা স্বর ফিসফিস করে বেরোল,“আপনি এমন করে বলছেন… যেন আমার কোনো ইচ্ছে নেই, কোনো স্বাধীনতা নেই…”
কল্লোল স্থির চোখে তাকিয়ে রইল ওর দিকে। ঠান্ডা গলায় বলল, “স্বাধীনতা আছে, ঊর্মি। তুমি চাইলে আমার ওপর রাগ করতে পারো, আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারো। কিন্তু আমাকে বাদ দিয়ে জীবন ভাবতে পারবে না। আমি জানি… আর তুমিও জানো সেটা।”
ঊর্মি ফোনটা চেপে ধরল শক্ত করে। গলায় জমাট বাঁধা স্বর বেরোল ফিসফিসিয়ে, “আমি যদি সত্যিই দূরে যেতে চাই?”
“চেষ্টা করে দেখতে পারো…!” নির্লিপ্ত কন্ঠে কথাটা বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল কল্লোল।
কল্লোল বেড়িয়ে যাওয়ার পর নিশ্চল হয়ে বিছানায় বসে রইল ঊর্মি। কি হয়েছে ওর! ও নিজেও জানে ক্যাপ্টেনের সাথে কতটা জড়িয়ে পড়েছে। তবে কোন ভূতের তাড়া খেয়ে এতক্ষণ এসব বলছিল!?
ঊর্মি নিঃশব্দে চোখ বন্ধ করল। বুকের ভেতর ঝড় উঠছে। এই মানুষটা ওর সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তে কিভাবে পাশে থেকেছিল, আগলে রেখেছিল নিঃশর্ত ভালোবাসা দিয়ে। আর ও কি করলো? সেই মানুষটাকেই এভাবে কষ্ট দিলো?
ওর চোখজোড়া টলমল করে উঠলো। নিজের ওপর রাগ হচ্ছে ভীষণ। দ্রুত বিছানা থেকে নামল ও। ঘরটা নিস্তব্ধ, কেবল ফ্যানের ঘূর্ণনের শব্দ ভাসছে বাতাসে।
প্রথমে লিভিংরুম, তারপর ডাইনিং, কিচেন— সব জায়গা এক এক করে খুঁজে দেখল ও। কল্লোল কোথাও নেই।
ঊর্মি দৌড়ে দরজার কাছে গেল। দরজার লকটাও খোলা। হঠাৎ করে মাথাটা একেবারে ফাঁকা হয়ে গেল ঊর্মির। ধপ করে সোফায় বসে পরল মেয়েটা।
মাথাটা চেপে ধরল দুহাতে।
“আমি… আমি কী আপনাকে হারিয়ে ফেললাম আবরার?
———————
দরজার নব ঘোরানোর শব্দে ঊর্মি মাথা তুলে তাকালো।আগত ব্যক্তি দৃশ্যমান হতেই সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দৌড়ে গিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে জাপটে ধরল তাকে।
আচমকা ধাক্কায় ওপাশের ব্যক্তি পিছিয়ে গেল দুই পা। অবাক হয়ে তাকালো বুকের ওপর বাঁধভাঙা ঢেউয়ের মত অকস্মাৎ প্রবলবেগে আছড়ে পড়া মেয়েটার দিকে। তারপর নিজেও ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে জরিয়ে ধরলো মেয়েটাকে।
মেয়েটা তখন নিজের বোকামির কথা ভেবে কেঁদে চলেছে অনবরত। কল্লোল স্তব্ধ হয়ে কিছুক্ষণ ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইল। শার্টের বুকের অংশটা ভিজে যাচ্ছে চোখের পানিতে, তবু একফোঁটা বিরক্তি নেই ওর মুখে। বরং অদ্ভুত একটা শান্তি যেন নেমে এসেছে সমগ্ৰ মনজুড়ে।
কল্লোল ওর চুলে হাত বুলিয়ে মৃদু স্বরে বলল,
“আমি তো ফার্মেসিতে তোমার ঔষধ আনতে গিয়েছিলাম, ঊর্মি…”
ঊর্মি আরও শক্ত করে আঁকড়ে ধরল ওকে, ফিসফিস করে ভাঙা গলায় বলল, “আমি… আমি আপনাকে হার্ট করতে চাই নি, আবরার… trust me…”
কল্লোল ওর মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরল।
“I know, my little bird. একটা কথা মনে রাখবে— যতই তুমি আমাকে দূরে ঠেলতে চাইবে, আমি ততই তোমার কাছাকাছি আসব।”
ঊর্মি ওর পিঠের কাছে শার্টটা মুঠো করে ধরল। লাল চোখদুটো মেলে তাকালো কল্লোলের দিকে,“আমি খুব ভয় পাই আবরার… যদি কখনো আপনাকে হারিয়ে…”
কল্লোল শব্দ করে চুমু খেল প্রেয়সীর নরম ঠোঁটে।
“শশশ্…”
ঊর্মি কেঁপে উঠে চোখ বুজে আবারো মুখ লুকালো প্রশস্থ বুকটায়। সেই মুহূর্তে ওর মনে হলো— যত ঝড়ই আসুক, এই বুকটার আশ্রয়ই ওর সবচেয়ে নিরাপদ ঠিকানা।
__________________________________
ঊর্মি বসে বসে বায়োডাটা দেখছিল। ফ্যামিলি ডিটেইলে এসে থমকে গেল ও, “আবরারের মা বাবা দুজনেই মৃত?আবরার তো কখনো বলেনি!”
ঊর্মি ওয়াশরুমের দরজার দিকে তাকালো। পানির শব্দ আসছে এখনো। ওর বুকের ভেতরটা হঠাৎ করেই কেমন ভারী হয়ে এলো।
এতোদিন এত কাছে থেকেও কেন আবরার একবারও বলেনি এই কথাটা? ও কি তবে ইচ্ছে করেই লুকিয়ে রেখেছিল? নাকি স্মৃতিগুলো এতটাই বেদনাদায়ক যে মুখে আনতে চায়নি?
ঊর্মির মনে পড়ল— প্রতিবার যখন আবরার ওর পরিবারের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেত, কিংবা বিষয় পাল্টে দিত, তখনও ও কেমন হালকা ভাবে নিয়েছিল। আজ বুঝতে পারছে, তার আড়ালে কী গভীর শূন্যতা লুকিয়ে আছে।
পানির শব্দ থেমে গেল হঠাৎ।
ঊর্মি চমকে উঠে তাড়াতাড়ি ফোনটা বন্ধ করল, যেন কল্লোল বেরিয়েই কিছু টের না পায়।
কয়েক সেকেন্ডের মাথায় কালো টি-শার্টের ওপর সাদা টাওয়াল কাঁধে ঝুলিয়ে কল্লোল বেরিয়ে এলো। ছোট ছোট চুলগুলোয় পানির বিন্দু এখনো চিকচিক করছে।
ঘরের চারপাশ ঘুরে এসে কল্লোলের দৃষ্টি আটকালো ঊর্মির শুকনো মুখে।
“কি করছিলে ঊর্মি?”
ঊর্মি এক মুহূর্তের জন্য থমকালো। ফোনটা টেবিলে রেখে স্বাভাবিক ভাবে বলল,“এভাবেই… কিছু না।”
কল্লোল ভ্রু কুঁচকালো। ধীর পায়ে এগিয়ে এসে দাঁড়াল বিছানার পাশে।
“কিছু না?”
ঊর্মি বিছানার ওপর উঠে দাঁড়িয়ে কিনারায় এসে কল্লোলের কাছাকাছি দাঁড়ালো। বিছানার উপর দাঁড়িয়ে ঊর্মির উচ্চতা কল্লোলের থেকে আধহাত উঁচুতে। ঊর্মি হাত বাড়িয়ে কল্লোলের ভেজা চুলগুলো স্পর্শ করতে করতে বলল, “You look handsome in black
Mr. Abrar…”
ঊর্মির আঙুল ছোট ছোট চুলের ফাঁক গলে ঢুকে পড়তেই কল্লোল স্থির হয়ে দাঁড়াল। চোখের দৃষ্টি বদলালো না ওর,
“হ্যান্ডসাম?” ঠোঁট বাঁকিয়ে মৃদু হাসল ও, “তুমি কি আমাকে ডিসট্র্যাক্ট করার চেষ্টা করছো, সুইটহার্ট?”
ঊর্মি চোখের পলক ফেলল না, চুলগুলোতে আঙুল বুলিয়ে দিতে দিতে হেসে মাথা নাড়ল উপর-নিচ।
কল্লোল হাত বাড়িয়ে ওর সরু কোমরটা আঁকড়ে ধরে কাছে টেনে আনলো।
“জানো, ঊর্মি… ইদানিং তুমি ছাড়া পৃথিবীটা আমার কাছে কেবল সমুদ্রের মতো— সীমাহীন, অথচ শূন্য লাগে…”
ঊর্মির চোখে টলমল করল একফোঁটা অশ্রু, বুকের ভেতর গুমরে উঠল অসংখ্য অনুভূতি।
“আমাকে এভাবে ভালোবাসতে আপনার ভয় করে না আবরার? যদি আমি কখনো…”
কল্লোল সঙ্গে সঙ্গে ওর ঠোঁটে আঙুল চাপা দিল, “শশশ্… কোনো ‘যদি’ নেই। তুমি আমার… শুধু আমার। এটাই চিরন্তন। এটাই সত্যি।”
ঊর্মি নিজেকে আর আটকে রাখতে পারল না। চোখ বুজে কল্লোলকে চেপে ধরল নিজের সাথে। কল্লোল ওর কাঁধে মুখ গুঁজে ফিসফিসিয়ে বললো, “তুমি জানো…? আমি কখনো ভাবিনি… আব্বু আম্মুর পরে আর কাউকে এতটা ভালোবাসতে পারবো… কারো জন্য এতটা চিন্তা করতে পারব…”
ঊর্মি আরও শক্ত করে আঁকড়ে ধরল কল্লোলকে, যেন মানুষটার সব দুঃখ, সব কষ্ট ও ভুলিয়ে দেবে স্পর্শ দিয়েই।
“I love you, Abrar…”
প্রায় না শোনার মতো করেই ফিসফিস করলো ঊর্মি। কিন্তু কল্লোলের কানে শব্দগুলো পৌঁছে গেছে ইতোমধ্যেই। ঊর্মির কাঁধ থেকে মাথা তুলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী… কী বললে তুমি?”
“ক-কই কিছু না তো! কিছু বলিনি…”
কল্লোল স্থির চোখে তাকিয়ে রইল ঊর্মির দিকে। ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ফুটে উঠল, কিন্তু চোখদুটো যেন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে ওকে,
“ঊর্মি…?” গভীর কন্ঠে নামটা উচ্চারণ করল ও, “তুমি আমাকে মিথ্যে বলছো?”
অন্যসময়ের মতো ঊর্মি চোখ নামিয়ে নিতে পারল না। নিচের দিকে তাকালেই কল্লোলের সাথে চোখাচোখি হবে।
ঊর্মি মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালো। বুকের ভেতর ঢাকের মতো বাজছে হৃদস্পন্দন। আঙুলের ডগা কাঁপছে।
কল্লোল আলতো করে ওর থুতনিটা ধরে মুখটা আবার এদিকে ঘোরালো। চোখে চোখ রেখে ফিসফিস করে বলল,“আবার বলো। আমি তোমার ঠোঁট থেকে স্পষ্টভাবে শুনতে চাই।”
ঊর্মি ঠোঁট কামড়ে ধরল, চোখ বুজে নিল এক মুহূর্তের জন্য। ভেতরে চলতে থাকা তুমুল ঝড়টাকে যেন সামলানোর চেষ্টা করছে ও।
কল্লোলের আঙুলের স্পর্শে থুতনিটা আটকে আছে, পালানোর কোনো উপায় নেই। চোখ খুলতেই অদ্ভুত তীক্ষ্ণ অথচ স্নিগ্ধ দৃষ্টিটা ওকে গ্রাস করে নিল একেবারে।
দ্বিধার দেয়াল ভেঙে দম আটকে আসা কণ্ঠে ধীরে ধীরে ফিসফিস করে উচ্চারণ করল ও—
“I… I love you, Abrar.”
কল্লোল মুহূর্তের জন্য থমকে গেল। শব্দগুলো বাতাসে ভেসে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে নিঃশ্বাস ভারী হলো ওর। ধীরে ধীরে দুই হাত বাড়িয়ে ঊর্মির কোমর আঁকড়ে ধরল ও,
“আরেকবার বলো…”
ঊর্মি কাঁপা হাসি দিয়ে আবার ফিসফিস করল,
“I love you…”
পরের মুহূর্তে কল্লোল টান মেরে ওকে বিছানা থেকে নামিয়ে নিচের দিকে ঝুঁকিয়ে নিল নিজের সমান উচ্চতায়। হঠাৎ ভারসাম্য হারিয়ে ঊর্মি দু’হাত দিয়ে কল্লোলের বাহু আঁকড়ে ধরল। কল্লোল এক নিঃশ্বাসে ওকে কাছে টেনে নিল— মুখোমুখি, নিঃশ্বাসে মিশে গেল নিঃশ্বাস। আর তারপর… চোখে চোখ রেখে টানটান নিস্তব্ধতার পর মুহূর্তে কল্লোলের ঠোঁট ছুঁয়ে গেল ঊর্মির ঠোঁটকে। মাঝের সমস্ত দ্বিধা ভেঙে গেল একটা আকাঙ্ক্ষিত আশ্লেষী চুম্বনে।
To be continued…