#জলতরঙ্গের_সুর
পর্ব – ৩১
লেখা – আসফিয়া রহমান
অনুমতি ছাড়া কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ❌
[রিয়াক্ট দিয়ে তারপর পড়া শুরু করুন]
সকালের রোদ ফোটার আগেই জেগে উঠেছে পুরো বাড়ি। উঠোনে একপাশে বড় বড় পাতিলে ভুরিভোজের আয়োজন শুরু হয়েছে। সেখান থেকে ভেসে আসছে নানারকম মসলার ঘ্রাণ।
ঊর্মি তখনও ঘুমিয়ে, এমন সময় ইশা দৌড়ে এসে ডাকতে শুরু করল, “আরে আপু, আর কত ঘুমাবে? আজ তোমার বিয়ের দিন!”
ঘুম জড়ানো চোখ মেলে ঊর্মি প্রথমে কিছুই বুঝতে পারল না। তারপর হঠাৎই বুকের ভেতর কেমন ধক করে উঠল— এতদিন ধরে যে দিনের জন্য চারপাশ এত সরগরম ছিল, সেই দিনটা আজ চলে এসেছে তবে!
“ওঠো ওঠো, তাড়াতাড়ি!” ইশা ঠেলতে শুরু করল ওকে।
“আহ্ ইশা! উঠছি তো! কটা বাজে?”
“সাতটা…”
“মাত্র সাতটা! এর মধ্যেই এমন চেঁচামেচি শুরু করেছে সবাই!”
“উফ্, তুমি কী আপু! বিয়েবাড়িতে তো ফজরের পর থেকেই এসব শুরু হয়। সামির ভাইয়ের বিয়েতে দেখোনি? ওঠো না…”
“ধ্যাত! ভাল্লাগে না!” বিরক্ত হয়ে ঊর্মি উঠে বসলো, “আম্মু কোথায়?”
“বাবুর্চিদের ওখানে।”
“হ্যাঁ? রান্নাও শুরু হয়ে গেছে!”
“ইয়েস, কনে সাহেবা! আপনি এখন উঠিয়া মাটিতে আপনার পায়ের ধুলা দিয়া আমাদেরকে কৃতার্থ করুন…!”
ইশার বলার ধরন দেখে এবার হেসে ফেলল ঊর্মি। বালিশের পাশ থেকে ফোনটা হাতে তুলে নিতেই ইশা আবার বলল, “আপনার বর মহাশয়ের কতগুলো মিসড কল আসিয়াছে দেখুন… তিনি আপনাকে না পাইয়া ব্যতিব্যস্ত হইয়া আমাকে কল করিয়াছিলেন। হায় প্রেম! হায়! আমি কী করলাম এ জীবনে!” ইশা বুকে হাত চেপে ব্যথার ভান করল।
ঊর্মি পাশ থেকে বালিশটা তুলে ছুড়ে মারলো, “ইশাআআ…”
ইশা হাসতে হাসতে দৌড়ে বের হয়ে গেল ঘর থেকে।
ঊর্মিও হেসে ফেলল এবার। হাসতে হাসতে কল দিল কল্লোলের নাম্বারে।
— হ্যালো…
— গুড মর্নিং আবরার! কল দিয়েছিলেন?
— গুড মর্নিং! হ্যাঁ… তুমি বোধহয় ঘুমাচ্ছিলে। পরে ইশার সাথে কথা হয়েছে।
— হুঁ, ইশা এতক্ষণ এটা নিয়েই জ্বালাচ্ছিল আমাকে!
— তাই! কী করছো তুমি?
— কিছু না, মাত্র উঠেছি। আপনি?
— উমম… I’m missing you…
— Me too… আপনারা রওনা হবেন কখন?
— ন’টা-সাড়ে ন’টায় মেইবি। ফুপিরা এসেছে।
— আমি আজকে অনেক খুশি আবরার! I’m waiting for you my love…
— উফ্… এভাবে বোলো না সুইটহার্ট! পরে দেখা যাবে বরযাত্রী ফেলে বর আগে আগে শ্বশুরবাড়ি হাজির হয়েছে। মান সম্মানের ব্যাপার স্যাপার! তারচেয়ে এসব বরং রাতের জন্য তুলে রাখো, তখন কাজে দেবে…
— আবরার! আপনি আবার শুরু করলেন!
— কলের মধ্যে শুরু করা যায় নাকি সুইটহার্ট! তারজন্য তো কাছে আসতে হবে…
ইশ্! এই মানুষটা দিন দিন অসভ্য হচ্ছে! নিজের না হয় লজ্জা শরম নেই, তাই বলে ঊর্মিও কি ওর মতো বেশরম নাকি!
— আ-আমি রাখছি!
কল্লোলকে কথা বলার সুযোগ না ফোনটা কেটে দিলো ঊর্মি। খালি লজ্জা দেয়ার ধান্দায় থাকে এই লোক! অসহ্য!
আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বে তাকিয়ে ঊর্মি হেসে ফেলল অজান্তেই। এই অসহ্য পুরুষটাকেই স্থায়ীভাবে নিজের করে পাওয়ার জন্য কী তাড়া ওর! কিভাবে এই পুরুষটাকে এতটা ভালোবেসে ফেলল ও?
ওর মনে পড়ল প্রথম যেদিন ট্রেনে পাশাপাশি বসেছিল ওরা। জানালার পাশে সিট না পড়ায় বেজায় মন খারাপ হয়েছিল ওর। কিছুক্ষণ পরে যখন এই পুরুষটা জানালার পাশের সিটটা দখল করে বসেছিল, তখনো বেজায় রাগ হয়েছিল টিকিট কাউন্টারের লোকগুলোর উপর। কোন আক্কেলে ওরা পুরুষ মানুষকে জানালার পাশে সিট দেয়?
পরে অবশ্য তার সাথে সিটটা এক্সচেঞ্জ করে নিয়েছিল। কিন্তু তখনও কোন কথাবার্তা হয়নি ওদের। পরে ট্রেন যখন একটা জায়গায় দীর্ঘ বিরতি নিল, সেখানে ধানক্ষেতের মাঝ দিয়ে মাটির রাস্তা ধরে পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে প্রথম কথা হয়েছিল ওদের।
তারপর তো সামির ভাইয়ের বিয়েতে সিঁড়ির মাঝে পুরুষটার সাথে ধাক্কা খেয়ে চমকে উঠেছিল ও। এই লোক এখানে কী করছে! পরে অবশ্য জেনেছিল সে সামির ভাইয়ের বন্ধু। হলুদের রাতে আবার ইশার পিছে ছুটতে ছুটতে পেছন থেকে এই লোকটার গালে হলুদ মাখিয়ে দিয়েছিল ও। কি বিচ্ছিরি একটা কান্ড হয়েছিল তারপর!!
পুরনো কথা মনে করে ঊর্মি হাসি পেল ওর।
কি সব দিন ছিল সেসব…
“একা একা বসে বসে হাসছো কেন! সকাল সকাল ভুতে ধরলো নাকি?” ইশা গলা শুনে ধ্যান ভাঙলো ঊর্মির,
“এখনো ফ্রেশ হওনি তুমি! কি করছো বসে বসে?”
“এই তো যাচ্ছি!” উর্মি উঠে দাঁড়ালো।
“একেবারে গোসল করে ফেলো, পার্লারের মেয়েরা চলে আসবে একটু পরেই…”
“হ্যাঁ, আমিও সেটাই ভাবছি…”
———
ফোনটা কেটে যেতেই হাসতে হাসতে কল্লোলের মুখটা মলিন হলো। হাসি নিভে গেছে। ঊর্মি যখন জানবে, রিসেপশনের পরেরদিন সকালেই ওকে চলে যেতে হবে, তখন কী প্রতিক্রিয়া দেবে মেয়েটা?
বিয়ের একদিন পরেই ঊর্মিকে ফেলে চলে যেতে হবে, এরকম কিছু যে কখনো হতে পারে এটা তো কখনো কল্পনাতেই ছিল না ওর। ঊর্মি বিশ্বাস করবে তো ওকে?
মেয়েটা যখন অভিমান করে বসবে তখন কল্লোল কিভাবে সামলাবে ওকে?
———
ঊর্মি সময় নিয়ে গোসল করল। গোসল সেরে বেরোতেই দেখল ঘরটা যেন ছোটখাটো মিনি-পার্লারে পরিণত হয়েছে। দুজন মেকআপ আর্টিস্ট, একজন হেয়ার স্টাইলিস্ট, জামাকাপড় নিয়ে ব্যস্ত সবাই। ইশা একপাশে দাঁড়িয়ে সবকিছুর তদারকি করছে। ঘরভর্তি সাজসজ্জার ব্যাগ, প্রসাধনের বাক্স আরো হাবিজাবি অনেক কিছু।
ঊর্মিকে বোরোতে দেখেই হৈচৈ শুরু করল ইশা,
“এই যে আমাদের ব্রাইড চলে এসেছে… সাইড প্লিজ… সাইড প্লিজ!”
ঊর্মির হাত ধরে বিছানায় বসালো ও। ঊর্মি প্রথমে একটু অস্বস্তি বোধ করলেও ধীরে ধীরে ওর ঠোঁটেও হাসি ফুটল।
মেরুন শাড়ির সাথে চোখের গর্জিয়াস মেকআপ, ঠোঁটের খয়েরি আভা, আর কপালে ছোট্ট পাথরের টিপ। আয়নায় তাকাতেই নিজের প্রতিচ্ছবিকে যেন নতুন করে চিনল ঊর্মি।
ও আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে আছে একদৃষ্টিতে। চারপাশের কোলাহলের ভেতরও ওর বুকের ভেতরে অদ্ভুত শান্তির ঢেউ। মনে হচ্ছে, সবকিছু এত সুন্দরভাবে হচ্ছে যেন সত্যিই ও কোনো স্বপ্নের ভেতরে বসে আছে।
ঠিক তখনই ঊর্মির দিকে তাকিয়ে ইশা ফিসফিস করে বলল, “আপু, ভাইয়া কিন্তু আজকে তোমার থেকে চোখ ফেরাতে পারবে না…”
ঊর্মির মনে পড়ে গেল কল্লোলের নেশাক্ত দৃষ্টি। বুকের ভেতর হঠাৎ কেমন কাঁপুনি উঠল ওর।
ও আয়নায় নিজের চোখে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ। ইশা মজা করে আবার বলল, “হায় হায়, আপুর গাল তো লাল টুকটুক করছে! ভাইয়াকে দেখার আগেই এই অবস্থা, পরে কী হবে?”
ঊর্মি চোখ রাঙালো ইশাকে।
কিন্তু সেই চোখ রাঙানোর আড়ালে যে সত্যিই ঊর্মির বুকের ভেতর তখন অনবরত খেলে যাচ্ছে এক সমুদ্র ঢেউ সেটা বুঝতে দিল না কাউকেই।
____________________
হঠাৎ করে বাইরে শোরগোল শোনা যেতেই ইশা এক ছুটে বাইরে গেল। এক ছুটে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে উঁকি মেরে আবার আরেক ছুটে ফিরে এলো, “আপু! বরযাত্রী এসে গেছে… ভাইয়াও…”
ঊর্মির বুক ধক করে উঠল। হাত-পা কেমন যেন অবশ হয়ে গেল। চোখের সামনে ভাসলো শুধু একটাই মুখ— আবরার। এতদিন ধরে যে মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা, সেই মুহূর্তটা এসে গেছে অবশেষে।
এর মধ্যে ইশা আবার বলল, “আমি গেটে যাচ্ছি, ভাইয়ার পকেট আজকে ফাঁকা করব…”
ঊর্মি কিছু বলার আগেই চোখ টিপে দাঁত কেলিয়ে ইশা বেরিয়ে গেল।
ঊর্মি নিঃশ্বাস আটকে বসে রইল বিছানায়। আঙুলগুলো অনবরত ওড়নার কিনারা মুচড়ে চলেছে। বাইরে ভেসে আসছে সানাইয়ের সুর, উচ্ছ্বসিত চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ— একেকটা ধ্বনি যেন বুকের ভেতর গিয়ে আরও জোরে কাঁপন ধরাচ্ছে।
ওদিকে গেটের কাছে তখন ভিড় জমেছে। কল্লোল গাড়ি থেকে নামতেই হৈচৈ পড়ে গেল চারপাশে। সবাই ভিড় করে দাঁড়িয়েছে গেটের কাছে। কল্লোলের মুখে গম্ভীরতার আড়ালে একরাশ অদ্ভুত আবেগ খেলা করছে তখন— আজ ওর জীবনের সবচেয়ে বড় দায়িত্বটা নিতে এসেছে ও।
গেটে বাধা হয়েছে লাল ফিতা। কাজিনরা মিলে গেটের দু’পাশে দাঁড়িয়ে রীতিমতো পাহারা বসিয়েছে। ইশা দাঁড়িয়েছে একেবারে সামনে। বরযাত্রী বর নিয়ে ভেতরে ঢুকতে চাইলে বাধা দিল ওরা। ইশা কোমরে হাত রেখে দাঁড়াল, ওর চোখে শয়তানি হাসি,
“এভাবে তো ঢোকা যাবে না, দুলাভাই! আগে টোল দিন, তারপর ঢুকতে পারবেন।”
কল্লোল ভ্রু কুঁচকালো, ঠোঁটে চাপা হাসি,
“টোল? টোল আবার কী?”
পাশ থেকে রায়হান বলল, “এই যে বাচ্চারা, আমরা ওসব টোল-ফোল দিতে পারবো না! রাস্তা ছাড়ুন…”
ইশা চোখ বড়বড় করে তাকালো, “এই যে মিস্টার, আপনি কাকে বাচ্চা বলছেন?”
রাহিল হাত দিয়ে ইশারা করলো, “আপনার সৈন্যবাহিনীকে!”
ইশা মুখ গম্ভীর করল, “ওসব কথার জাল তৈরি করে লাভ নেই বেয়াইমশাই! টাকা বিনা গেট আমরা ছাড়ছি না…”
কল্লোল হাসি চেপে মাথা নাড়ল, “তোমরা তো একেবারে ব্ল্যাকমেইলিং শুরু করেছো ইশা!”
“ব্ল্যাকমেইল নয় দুলাভাই, একে বলে ‘কনে পক্ষের ন্যায্য দাবিদাওয়া’। টাকাটা দিন, নাহলে ঢুকতে পারবেন না।
No money, no honey. আপনার হানি একা একা ঘরে বসে অপেক্ষা করছে…” ইশা চোখ টিপল।
নিজের অজান্তেই এবার চোখ বড় বড় হয়ে গেল কল্লোলের। কী সাংঘাতিক মেয়েরে বাবা! কী বলে এসব!
কল্লোলের আরেক কাজিন মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
“তাহলে তো কনের পক্ষে শর্ত বেশ কড়া… কিন্তু টাকাটা কত?”
ইশা ভ্রু উঁচু করল, “এই তো এতক্ষণে কাজের কথায় এসেছেন। শুনুন দুলাভাই, আমার আপু কিন্তু অমূল্য। তাই টোলও তেমনই অমূল্য হবে।”
পাশ থেকে উর্মির খালাতো বোন ইশার সাথে যোগ দিল, “কমপক্ষে ত্রিশ হাজার!”
“কি??” রাহিল হাঁ করে তাকাল, “তোমাদের মাথা ঠিক আছে? এটা গেট টোল নাকি মুক্তিপণ?”
রায়হান ভ্রু কুঁচকে বলল,
“আসলে এরা কল্লোলকে নেভি অফিসার জানে তো, তাই ভাবছে ডলার দিয়ে দিবে।”
“ফালতু কথা বলবেন না একদম! আমার একমাত্র দুলাভাই হিসেবে এটুকু আবদার তো করতেই পারি, তাই না দুলাভাই?”
কল্লোল অসহায় চোখে তাকালো, “ত্রিশ হাজার বেশি হয়ে যাচ্ছে ইশা! তুমিও তো আমার একমাত্র শালী, আমার দিকটাও তো একটু বুঝবে…”
ইশা দুই আঙুল তুলে ধরে চোখ ছোট ছোট করে তাকালো, “এসব শুকনো কথায় চিড়ে ভিজবে না, বিশ হাজার দিন!”
রাহিল অবাক মুখে বলল, “এদের কি ডিমান্ড রে ভাই!!”
ইশা জিভ বের করে বলল, “কনের বোনেরা যা পারে, তা কেউ পারে না। দুলাভাই, টাকা দিন।”
রায়হান বলল, “আমরা পাঁচ হাজার দেব। নিলে নেন, না নিলে নাই!”
“নিলে নেন না নিলে নাই মানে? বর নিয়ে ফেরত যাবেন নাকি?”
ইশার কথা শুনে কল্লোল রায়হানের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো।
ইশা এবার হাসতে হাসতে বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে। পনেরো হাজার।”
শেষমেশ অনেক খুনসুটি, দরকষাকষির পর কল্লোল নিজের মানিব্যাগ থেকে মোটা নোটের বান্ডিল বের করে ইশার হাতে দিল।
ইশা নাটকীয় ভঙ্গিতে হাত তুলে বলল,
“চলুন দুলাভাই, এবার আপনাকে আমাদের রানীর দরবারে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হলো।”
কাঁচি দিয়ে ফিতা কেটে ভেতরে পা বাড়াল কল্লোল, উর্মির মা মিষ্টি খাওয়ালেন জামাইকে। চারদিক থেকে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে বরণ করা হলো বরযাত্রীকে।
__________________________
ঊর্মি যখন ইশার হাত ধরে স্টেজে উঠল, মুহূর্তেই যেন চারপাশ নিস্তব্ধ হয়ে গেল। চারদিকে ক্যামেরার ফ্ল্যাশ ঝলসে উঠেছে, কিন্তু কল্লোলের চোখের পলক থেমে গেছে তখন।
মেরুন রঙা শাড়িতে কি অপূর্ব লাগছে মেয়েটাকে। মেকআপে ওর সৌন্দর্য ঢাকা পড়েনি, বরং আরও ফুটে উঠেছে। কপালের টিপ, কানের ঝুমকা, ঠোঁটের লাজুক হাসি— সব মিলিয়ে কল্লোলের মনে হচ্ছে যেন ও বুঝি অন্য কোন জগতে চলে এসেছে।
ঊর্মি লাজুক ভঙ্গিতে কল্লোলের হাতে হাত রেখে ওর পাশে বসল, কিন্তু ওর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিটা এড়াতে পারল না। চোখাচোখি হতেই বুকের ভেতর কেমন ঝড় বয়ে গেল দু’জনেরই।
ইশা ফিসফিস করে বলল, “দুলাভাই, এভাবে তাকিয়ে থাকলে কিন্তু আপুর মেকআপ নষ্ট হয়ে যাবে।”
সবাই হেসে উঠল, কিন্তু কল্লোল সামান্য মুচকি হাসি দিয়ে আবার চোখ ফেরাল ঊর্মির দিকে।
কাজী মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বিয়ের আকদ শুরু করলেন। কাগজপত্র পড়া হলো, সাক্ষীদের সামনে তিনবার করে উচ্চারিত হলো সম্মতির শব্দ—
“কবুল, কবুল, কবুল।”
কল্লোলের গলা দৃপ্ত, ঊর্মির গলা কম্পমান— তিনবার উচ্চারিত শব্দটা যেন আজীবনের বাঁধনে বেঁধে দিল ওদের।
আকদ শেষ হতেই চারপাশে করতালি আর “মাশাআল্লাহ” ধ্বনি উঠল। বড়রা দোয়া করলেন, ছোটরা হৈচৈ। তারপরই শুরু হলো উপহার দেয়া-নেয়ার আনুষ্ঠানিকতা। তার সাথে স্টেজে ফুলের বৃষ্টি, মিষ্টির আস্বাদ, আনন্দ আর হাসির রোল তো আছেই।
কল্লোলের ঠোঁট জুড়ে তখন তৃপ্তির হাসি—
আজ থেকে ঊর্মি শুধু ওর, চিরদিনের জন্য।
To be continued…
#জলতরঙ্গের_সুর
পর্ব – ৩২ [রোমান্টিক এলার্ট ‼️]
লেখা – জলতরঙ্গের সুর
অনুমতি ছাড়া কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ❌
[রিয়াক্ট দিয়ে তারপর পড়া শুরু করুন]
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হতে হতে সন্ধ্যা গড়ালো। বাড়ির আঙিনায় তখন অদ্ভুত ভারী নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে। ঊর্মি মায়ের হাত শক্ত করে ধরে আছে, যেন ছাড়তেই চাইছে না। তিনি জড়িয়ে ধরলেন ঊর্মিকে। উথলে আসা কান্নাটা সামলাতে পারলেন না।
ইশাও কাঁদতে কাঁদতে গলা জড়িয়ে ধরল, “আপু, তুমি না থাকলে আমি কার সাথে সব শেয়ার করব?”
ঊর্মির চোখ বেয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু গড়ালো। ও হাত বুলালো বোনের মাথায়।
বাবা নিরবে দাঁড়িয়ে ছিলেন দূরে। মুখে কথা নেই, চোখে অশ্রু চিকচিক করছে। অবশেষে তিনিও এগিয়ে এসে মেয়ের মাথায় হাত রাখলেন।
“মা, সবসময় সম্মানের সাথে থাকবে। স্বামীকে আপনজন ভাববে। আমরা আছি তোমার পাশে সবসময়, তুমি একা নও।”
ঊর্মি বাবার বুকে মুখ লুকিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। কল্লোল ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ওর বুকেও কেমন চাপা টান ধরেছে। এই মেয়েটার একফোঁটা চোখের পানি সহ্য হয় না ওর।
ঊর্মির বাবা প্রাণপ্রিয় মেয়ের হাত তুলে দিলেন জামাইয়ের হাতে, “আমার মেয়েটাকে আগলে রেখো, বাবা…”
কল্লোল ওনার হাতের ওপর আরেক হাত রেখে ভরসা দিল। সামির এগিয়ে এলো ওর কাছে, “চোখ বন্ধ করে আমার বোনকে তোর হাতে তুলে দিয়েছি কল্লোল, তার যথাযথ মর্যাদা রাখিস…”
কল্লোল জরিয়ে ধরলো ওকে, “তোকে যতই ধন্যবাদ দিই, সেটা কম হবে সামির। তুই না থাকলে আজকের দিনটা এত সহজে আসতো না… আমি তোর কাছে চির কৃতজ্ঞ হয়ে থাকব…”
“বন্ধুত্বে no sorry, no thanks. আমার বোনটাকে শুধু ভালো রাখিস…”
কল্লোল ওর কাঁধ চাপড়ে মাথা নাড়ল। কল্লোল সরে যেতেই ঊর্মি জড়িয়ে ধরল সামিরকে।
“তুই কেন কাঁদছিস পাগলি! তুই এখন শুধু হাসবি… নো কান্নাকাটি। আর আমার বন্ধুকে ভালো রাখার দায়িত্বটাও কিন্তু দিয়েছি তোকে, সেটা খেয়াল আছে তো? সেটাও যেন ঠিকঠাক ভাবে পালন হয়…”
আত্মীয়-স্বজনরা সবাই ঊর্মিকে এগিয়ে দিল গাড়ির দিকে। ঊর্মি বারবার পিছন ফিরে বাড়ির দিকে তাকাচ্ছিল। নিজের ঘর, নিজের উঠোন, পরিচিত সব
মুখ— আজ থেকে সবই যেন অন্য রকম।
গাড়ির দরজা বন্ধ হতেই আবার কান্নার স্রোত উঠলো। গাড়ি ধীরে ধীরে এগিয়ে চলল ঊর্মির নতুন ঠিকানার দিকে। জানলার ফাঁক দিয়ে ঊর্মির ভেজা চোখ তখনও খুঁজে ফিরছিল বাড়িটাকে— যেখানে ওর শৈশব, ওর হাসি-কান্না সবকিছু রয়ে গেল।
————
পুরোটা রাস্তা ঊর্মি কেঁদেছে। কল্লোল সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করলেও কাজ হয়নি। অগত্যা অসহায় হয়ে ও ঊর্মির মাথাটা চেপে ধরেছিল নিজের বুকের মধ্যে।
এর মধ্যেই গাড়ির দোলায় ঊর্মির মোশন সিকনেসের সমস্যাটা বেড়ে গেল। পেটে অস্বস্তি, মাথা ঘুরতে শুরু করলো। মুখ ফ্যাকাশে হয়ে আসছিল ধীরে ধীরে।
কল্লোল সঙ্গে সঙ্গেই খেয়াল করল, “খারাপ লাগছে, লিটল বার্ড?”
ঊর্মি উত্তর দিল না, কেবল ক্লান্ত চোখ মেলে তাকাল।
কল্লোল ড্রাইভারকে ধীরে চালাতে বলল। তারপর নিজের রুমাল বের করে ঊর্মির কপালের ঘাম মুছল। ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে দিল ওর হাতে, “একটু পানি খাও। ভালো লাগবে।”
ঊর্মি কাঁপা হাতে বোতল নিলেও তেমন খেতে পারল না। চোখ আধো বন্ধ, শরীর কেমন যেন শক্তিহীন হয়ে পড়ছে। কল্লোল উদ্বিগ্ন গলায় ফিসফিস করে বলল, “আর একটু ধৈর্য ধরো… আমরা পৌঁছে যাচ্ছি।”
অগত্যা ঊর্মি মাথা হেলিয়ে আবার কল্লোলের বুকেই ঠেসে দিল। ক্লান্তি আর কান্নায় ভিজে যেন নিস্তেজ হয়ে গেছে শরীর।
একটু পরই গাড়ি থামল। বাইরে থেকে উচ্ছাসের শব্দ কানে এলো— কল্লোলের ফ্ল্যাটে জড়ো হয়েছে সবাই। অপেক্ষা করছে বর-কনেকে বরণ করে নেবার জন্য।
কল্লোল ঊর্মির কানে আস্তে করে বলল, “আমরা এসে পড়েছি সুইটহার্ট! চল ভেতরে যাই। সবাই অপেক্ষা করছে।”
বুকে মাথা ঠেসে রাখা মেয়েটা একটুও নড়ল না। যেন সমস্ত শক্তি ফুরিয়ে এসেছে ওর। কল্লোল গভীর শ্বাস নিল। ও জানত, এই মুহূর্তে ঊর্মিকে হাঁটিয়ে নামানো সম্ভব না। দরজা খুলে গাড়ি থেকে নামল ও, তারপর আলতো করে দু’হাতে তুলে নিল ঊর্মিকে।
চারপাশে সঙ্গে সঙ্গে হৈচৈ পড়ে গেল। হাসি-ঠাট্টায় মেতে উঠল সবাই। কিন্তু কল্লোলের মুখে গাম্ভীর্যের আড়ালে তখন উদ্বেগ স্পষ্ট। ওর জন্য এ মুহূর্তটা মোটেই রোমান্সের নয়, বরং দায়িত্ব আর চিন্তার।
ঊর্মির মাথা ওর কাঁধে হেলে আছে, চোখ বন্ধ, শরীর নিস্তেজ। ফুলের পাপড়ি ছিটানো হলো, লাল আলপনার ওপর দিয়ে কল্লোল ধীরে পা বাড়াল ফ্ল্যাটের ভেতর।
রাহেলা চৌধুরী এগিয়ে এসে আতঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকালেন,
“কী হয়েছে ঊর্মির? চোখ মুখ এমন লাগছে কেন?”
কল্লোল শান্ত গলায় উত্তর দিল, “কিছু না, মোশন সিকনেস। রেস্ট করলে ঠিক হয়ে যাবে।”
সবাই বুঝতে পেরে আর কোনো আনুষ্ঠানিকতা না করে বরং পথ ছেড়ে দিল। কল্লোল সরাসরি ঊর্মিকে নিয়ে ঢুকে গেল ভেতরে— সেই ঘরে, যেটা আজ থেকে ওদের নতুন সংসারের প্রথম ঠিকানা।
ঘরটা সাজানো হয়েছে তাজা লাল গোলাপ দিয়ে। অথচ সেই সৌন্দর্য খেয়াল করার মতো অবস্থা নেই ঊর্মির।
কল্লোল ধীরে ধীরে ওকে বিছানায় শুইয়ে দিল। বালিশে মাথা রাখতেই নিঃশ্বাসে যেন একটু স্বস্তির ছোঁয়া পেল ঊর্মি। কপালের চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল, কল্লোল হাত বাড়িয়ে সযত্নে গুছিয়ে দিল।
“খারাপ লাগছে এখনো?”
ঊর্মি আধো চোখ মেলে তাকাল। খুব ক্লান্ত ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল, “না… শুধু একটু মাথা ঘোরাচ্ছে।”
কল্লোল হালকা হাসল, ওর কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বলল, “রেস্ট করলে ঠিক হয়ে যাবে।”
টেবিলের ওপর রাখা গ্লাসটা তুলে নিয়ে পানি খাওয়ালো ঊর্মিকে। তারপর খেয়াল করল, মেহেদীর রঙে রাঙা হাতটা এখনো অল্প কাঁপছে। কল্লোল আলতো করে হাতটা নিজের হাতে ধরল।
বাইরে থেকে এখনো হাসি-ঠাট্টার শব্দ ভেসে আসছে, কিন্তু ঘরের ভেতরে যেন অন্য আবহ— শান্ত, কোমল, আর খানিকটা অস্বস্তিতে ভরা। ঊর্মি চোখ বুজে ফিসফিসিয়ে বলল, “আজ এত লোকজনের ভিড়ে… কান্নাকাটি করে… শরীরটা আর মানছে না আবরার। আপনি রাগ করেননি তো?”
কল্লোল চোখ মেলে চেয়ে থাকল অনেকক্ষণ। তারপর মৃদু স্বরে উত্তর দিল, “তোমার মনে হয় তোমার অসুস্থতায় আমি রাগ করব?”
ঊর্মি ঠোঁটে ক্লান্ত হাসি ফুটল, “জানি না… ভয় হচ্ছিল। আজকে তো আমাদের ফার্স্ট নাইট…”
কল্লোল ওর হাতটা আরও শক্ত করে ধরল। গভীর গলায় বলল, “ফার্স্ট নাইট মানেই কি আড়ম্বর আর ঘনিষ্ঠতা? আমার কাছে ফার্স্ট নাইট মানে তোমাকে নিজের কাছে পাওয়া। তোমাকে আগলে রাখা…”
ঊর্মির চোখের কোণে আসা পানিটা কল্লোল আঙুলের ছোঁয়ায় মুছে দিল। তারপর বালিশটা ঠিক করে দিল।
“টেক রেস্ট, সুইটহার্ট। আমার কাছে তোমার সুস্থতা আগে…”
ঊর্মির ক্লান্ত শরীরে একরাশ শান্তি নামল। চোখের পাতা ধীরে ধীরে ভারী হয়ে এল ওর।
———
ঊর্মির ঘুম ভাঙলো মাঝরাতে। ঘুম ভাঙতেই উপলব্ধি করল কারো বাহুডোরে আটকে আছে ও। ঘাড় ঘুরিয়ে চাইতেই কাঙ্খিত মুখটার দেখা মিলল। হাসি ফুটল ঠোঁটজুড়ে। হাত বাড়িয়ে প্রিয় পুরুষটার গালে স্পর্শ করল ও। তারপর খুব সাবধানে আস্তে করে মাথা উঠিয়ে সন্তর্পনে চুমু খেলো পুরুষালি পুরু ঠোঁটদুটোয়।
ঊর্মির প্রিয় পুরুষটা ফট করে চোখ মেলে চাইলো। তাকে চোখ মেলতে দেখে ঘাবড়ে গেল বোকা মেয়েটা। তড়িঘড়ি করে চোখ বুজে ঘুমের ভান ধরল।
কল্লোল হাসলো প্রেয়সীর কান্ডে। ও যে ঘুমায়নি সেটা বুঝতে পারেনি মেয়েটা। ঘুমায়নি বলতে ঘুম আসেনি ওর। ঊর্মিকে ওর যাবার খবরটা কী করে দেবে সেই চিন্তাটা মাথায় জেঁকে বসতেই ঘুম নামক বস্তুটা পালিয়েছে বহুদূর।
ঊর্মি তখন ওর বুকে চোখ বন্ধ করে ঘাপটি মেরে আছে। চোখের পাপড়িগুলো কাঁপছে ওর। কল্লোল মাথা নামিয়ে নব বিবাহিত স্ত্রীর ঠোঁটে চুমু খেল। কেঁপে উঠলো ঊর্মি, তবে চোখ মেলল না। কল্লোল এবার ওর বন্ধ দুচোখের পাতায় চুমু খেলো। এবার কেঁপে উঠে চোখ মেললো মেয়েটা। কাঁপা দৃষ্টি রাখল প্রিয় পুরুষের পানে।
“আব…”
শব্দটা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে কল্লোল প্রেয়সীর নরম ঠোটজোড়া আঁকড়ে ধরল নিজের পুরুষালি ঠোঁটজোড়া দিয়ে। ঘরটা নিস্তব্ধ, শুধু দুজনের হৃদস্পন্দনের শব্দ ধ্বনিত হচ্ছে নীরবতার ভিতর।
ঊর্মির আঙুলগুলো অচেতনেই গিয়ে আঁকড়ে ধরল কল্লোলের বুকের টিশার্ট। ঊর্মির বুকের ভেতর অনবরত ঢেউ খেলে যাচ্ছে, শরীর কেঁপে উঠছে প্রতিটা স্পর্শে। কল্লোলের আঙুল গিয়ে থামল ওর গালের পাশে, তারপর নামল চিবুকের নিচে।
ঊর্মির নিঃশ্বাস যখন প্রায় বন্ধ হবার উপক্রম তার আগমুহূর্তে কল্লোল ওর ঠোঁট ছেড়ে সরে এলো।
ঊর্মি হাপাতে হাপাতে লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিল,
“আপনি… এত… রাতে জেগে আছেন কেন?”
কল্লোল ধীরে ধীরে ওর এলোমেলো চুলগুলো কানের পেছনে সরিয়ে দিল। গভীর চোখদুটো খেলা করছে ঊর্মির সমস্ত মুখশ্রীজুড়ে।
“তোমার ঘুম ভাঙ্গার অপেক্ষা করছিলাম…”
ঊর্মির বুক কাঁপন ধরলো কল্লোলের দৃষ্টি দেখে। এই দৃষ্টির মতিগতি তো ভালো ঠেকছে না!
কল্লোল ততক্ষণে ওর গ্রীবাদেশে মুখ ডুবিয়েছে। কিন্তু উর্মির কানের ঝুমকোগুলো আর গলার গহনা ওকে নিজের কার্যসাধন করতে বাধা দিচ্ছে।
কল্লোল মুখ তুলে ওর কান থেকে এক এক করে ঝুমকা দুটো খুলল। তারপর ঘাড়ের পেছনে হাত দিতেই ঊর্মি শিউরে উঠে চোখ বন্ধ করে ফেলল।
“ক-ক-কী ক-করছেন-ন আবরার…”
কল্লোল ওর তুলতুলে ঠোঁটে টুপ করে চুমু খেয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত হলো। গহনা খুলে ঝুমকোগুলোসহ বেড সাইড টেবিলে রাখল। তারপর আবার ঝুঁকে এলো ঊর্মির ওপর। তর্জনী আঙুলে কপাল স্পর্শ করে ধীরে ধীরে নাক বেয়ে নামল ঠোঁটের ওপর। ঊর্মি আবারো কেঁপে উঠলো।
“আব…”
ঠোঁটে স্লাইড করতে থাকা তর্জনীটা থেমে গেল,
“শশশ্, don’t talk.”
আবার প্রেয়সীর ঠোঁটের ওপর নিজের দখলদারিত্ব জাহির করতে ব্যস্ত হলো পুরুষালি পুরু ঠোঁটদুটো। তবে অল্প সময়ের জন্য। অল্পক্ষণ পরেই ঠোঁটদুটো মসৃণ গ্রিবাদেশে নিজেদের অবস্থান বুঝে নিল। সেখানে ছোট ছোট বর্ষণে অস্থির স্পর্শের ঝড় তুলতে তুলতে কাঁধের আঁচলটা ধরে টান দিল। কিন্তু সেফটিপিনের বাঁধায় ব্যর্থ হলো সে চেষ্টা।
বিরক্ত হয়ে আবারো গ্রিবাদেশ থেকে মুখ তুলল কল্লোল। এতক্ষণ চোখ বন্ধ থাকলেও আঁচলে টান পড়ার সাথে সাথেই চোখ মেলে তাকিয়েছে ঊর্মি। কল্লোলের চোখে স্পষ্ট বিরক্তি দেখল ও।
“শাড়িতে কী লাগিয়েছো এগুলো?”
লজ্জায় গলার স্বর বের হলো না ঊর্মির। কল্লোল অধৈর্য ভঙ্গিতে এক ঝটকায় ঊর্মিকে পেছন ফেরালো। তারপর টান মেরে সেফটিপিনটা খুলে ছুড়ে মারল কোথাও।
ঊর্মি লজ্জায় বুজে আসা স্বরে কোনোরকমে বলল, “আ-আরো অ-অনেকগুলো আছে…”
কল্লোল প্রশ্নবোধক চোখে তাকালো, “আরো অনেক আছে? কোথায়?” প্রশ্নবোধক দৃষ্টিটা ধীরে ধীরে বিরক্তিতে বদলে গেল।
প্রশ্ন শুনে ঊর্মির লজ্জায় মরি মরি অবস্থা। নিজের ওপরেই রাগ হল ওর। কেন যে ঘুম ভাঙার পর উঠে ফ্রেশ হলো না! নিজে থেকে কল্লোলকে চুমু খেয়েই তো নিজের সর্বনাশটা নিজেই ডাকলো।
কল্লোল ততক্ষণে উঠে বসেছে, “যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।” ওর গলার স্বর গম্ভীর।
ঊর্মিও উঠে বসলো, “সরি আবরার…”
কল্লোল কিছু বলল না। ঊর্মি বিছানা থেকে নামলো। ঘরের কোণায় রাখা স্যুটকেস খুলে প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে ওয়াশরুমে যাবার আগে বিছানার কাছে এসে কল্লোলকে অবাক করে দিয়ে ঝুঁকে আচমকা চুমু খেলো ওর কপালে। তারপর কল্লোল কিছু বুঝে ওঠার আগেই দৌড়ে ঢুকে গেল ওয়াশরুমে।
ঊর্মির ঔষধে কাজ হলো। খিঁচড়ে যাওয়া মেজাজটা এতে শান্ত হল খানিকটা। কল্লোল দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো।
To be continued…