#আমার_সঞ্চারী
পর্ব-৭
#শ্রীমতি_প্রজ্ঞা_মঞ্জরী
🚫এলার্ট
নানান মিউজিকাল ইন্সট্রুমেন্ট দিয়ে সাজানো ঘরটা যেন ধ্বংস স্তুপে পরিণত হয়েছে।সেন্টার টেবিলের ভাঙ্গা কাঁচের টুকরো গুলো মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।দামি ফ্লাওয়ার ভাস দিয়ে সাজানো ঘরটার একটা ফ্লাওয়ার ভাসও অক্ষত নেই!শখের ড্রামসেটটাও অবহেলায় পড়ে আছে ফ্লোরে।
এই ধ্বংস স্তুপের মাঝে এক এক জোড়া শীতল-সজল চক্ষু নির্নিমেষ দৃষ্টতে তাকিয়ে আছে সিলিং এর দিকে।হাতে পছন্দের গিটার, যেটার দু-তিনটা তার সম্ভবত ছিঁড়ে গেছে।এটায় কি আর সুর তোলা সম্ভবপর হবে?
ক্ষতবিক্ষত ডান হাতটা দিয়ে গিটারের তারগুলো কোনো রকমে জোড়া লাগিয়ে টুং টাং সুর উঠলো গিটারে।
“তোমার আকাশ ধরার সখ, আমার সমুদ্দুরে চোখ
আমি কী আর দেবো বলো? তোমার শুধুই ভালো হোক
তোমার ভোলা-ভালা হাসি, আমার বুকের ভেতর ঝড়
তুমি চলতি ট্রেনের হাওয়া, আমি কাঁপি থরথর
তোমার নানান বাহানায় আমার জায়গাটা কোথায়?
আমি কী একঘরে থাকি, ছিল কত কথা বাকি
তোমার গোপন সবই রয়, আমার আপন মনে হয়
আমি ভোরের ঝরা পাতা, আমার মরার কীসের ভয়?
তোমার নরম, কাতর হাত, আমার দিনের মতো রাত
তুমি ঝিনুক কোড়াও যদি আমি হবো শান্ত নদী
আমার আসার সময় হলে, তুমি হাত ফুচকে গেলে
তোমার যাবার পায় তারা, আমি হই যে দিশেহারা
তুমি অন্য গ্রহের চাঁদ, আমার একলা থাকার ছাদ
তোমার ফেরার সম্ভাবনা অমাবস্যায় জোছনা
তোমার গোপন সবই রয়, আমার আপন মনে হয়
আমি ভোরের ঝরা পাতা, আমার মরার কীসের ভয়?
তুমি অন্য গ্রহের চাঁদ, আমার একলা থাকার ছাদ
তোমার ফেরার সম্ভাবনা অমাবস্যায় জোছনা
তোমার গোপন সবই রয়, আমার আপন মনে হয়
আমি ভোরের ঝরা পাতা, আমার মরার কীসের ভয়?”
গান শেষ হতেই চোখজোড়া বন্ধ করলো ভীর।কার্ণিশ বেয়ে উষ্ণ জল গড়িয়ে পড়লো।
-“তুইও আমায় ছেড়ে অন্য কারো হলি প্রাণ?একটু ভালোবাসা কি আমার প্রাপ্য নয়?আমি যা চাই তার সবটাই কি অন্য কারো হতে হবে?তোকে আমি আগে ভালোবেসেছি প্রাণ,আমি আগে চেয়েছি তোকে।তোর বয়স তখন কতো ছিল জানিস?মাত্র পনেরো!আমি ভীর পাটোয়ারি পনেরো বছরের সঞ্চারী শিকদারের প্রেমে পড়লাম!এই তিনটা বছর তোকে আমি চেয়েছি চাতক পাখির ন্যায়।প্রতি মূহুর্তে তোকে আমি চেয়েছি প্রাণ!তুই কিনা অন্য কারো বউ হলি?অন্য কারো নামে বাকিটা জীবন তুই কাটিয়ে দিবি?কেন আমার হলি না প্রাণ?কেন?দেখ না আমি ছোট থেকে সব হারিয়েছি,মা কে হারিয়েছি,বাবা তো ঠেকেও নেই!তোকে নিয়ে আমার সবটা ছিলো প্রাণ।এই কপালপোড়া ভীর পাটোয়ারি তোকে নিজের বধু রূপে ঘরে আনতে চেয়েছিলো।তুই এই ঘরেই আসলি কিন্তু আমার হয়ে না,আমার ভাইয়ের বউ হয়ে!”
এতোটুকু বলে থামলো ভীর।বুকের ভেতরের অসহ্য যন্ত্রণা না পারছে গিলতে আর না পারছে উগড়ে দিতে।
-“তুই আমার প্রাণ;শুধুই আমার।সাহিলের থেকে তোকে আমি বাঁচাবোই প্রাণ,বাঁচাবোই।”
পাটোয়ারি বাড়ির সদর দরজায় সঞ্চারীর হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে সাহিল।নীদ্র,জান্নাতি,রুমি,হাবিব ওদের পিছনেই দাঁড়িয়ে।
-“তোমার লজ্জা করছে না সাহিল?নিজের হবু স্ত্রীর কাজিনকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছো?”
-“লজ্জা থাকলে বিয়ে-শাদী করা যায়না বাবা।আর হালাল ভাবে বিয়ে করে আনলাম লজ্জা কেন লাগবে?কট তো আর খাইনি।”
আজহার পাটোয়ারি ঠিক হজম করতে পারলেন না সাহিলের কথা।গম্ভীর রগচটা সাহিল কি করে এমন বেয়াদবের ন্যায় মুখ চালাচ্ছে ভেবে পাচ্ছেন না তিনি।
-“সাহিল!অভদ্রের ন্যায় আচরণ করছো কেন?ওয়াসির শিকদারের মেয়েকে ঘরে তুলেছো তুমি!তোমার ধারণা আছে এর ফলাফল কি হবে?তাছাড়া জান্নাতির বাবাকে আমি কথা দিয়েছি, কয়েকদিন পরেই তোমাদের বিয়ে।”
-“কথা তুমি দিয়েছো বাবা।জান্নাতিকে আংটিও তুমি, মা আর ফুপ্পি মিলে পড়িয়ে এসেছো।এখানে আমি হ্যাঁ কিংবা না কিছুই বলিনি।”
-“ওয়াসির শিকদারের মেয়েকে পুত্রবধূ হিসেবে আমি আজহার পাটোয়ারি নিজের জীবদ্দশায় কোনোদিন স্বীকৃতি দেব না এই কথাটা নিজেদের মাথায় ঢুকিয়ে নেও।”
-“আমি সাহিল পাটোয়ারিও নিজের ওয়াইফকে ছাড়বো না,এটা তুমিও জেনে রাখো বাবা।”
-“এই মেয়েকে নিয়ে সংসার করতে চাইলে আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবে।এই মেয়ের ছাঁয়াও আমার বাড়িতে আমি মেনে নেব না।”
সাহিলের মা সাম্মী পাটোয়ারি এতক্ষণ এক কোণে দাঁড়িয়ে সবটা শুনেছেন।বাবা-ছেলের মাঝে কথা বলাটা তিনি ঠিক মনে করেননি।তবে সাহিলকে বাড়ি ছাড়তে বললে তিনি আর চুপ করে থাকেন না।
-“আমার ছেলে আর ছেলের বউ এই বাড়িতেই থাকবে।তাদের অধিকার আছে এখানে।যদি ওদের বেরিয়ে যেতে হয় তবে আমিও এই সংসার ত্যাগ করবো এই কথা আপনাকে আমি স্পষ্ট জানিয়ে দিলাম।”
আজহার পাটোয়ারি স্ত্রীর কথা শুনে অবাক হয়ে যান।সাম্মী পাটোয়ারি কখনো তার মুখের উপর কথা বলেনি, আজ সাহিল আর এই মেয়েটার জন্য তাকে বাড়ি ছাড়ার হুমকি দিচ্ছে!ভেবেই রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে তার।
-“তোমাদের ফ্যামিলি মেলোড্রামা শেষ হলে বলো,আমি বউ নিয়ে ঘরে যাই।সারারাত ঘুম হয়নি আমার।”
আজহার পাটোয়ারি আর দাঁড়ালেন না।হনহনিয়ে চলে গেলেন নিজের ঘরের দিকে।
সাহিল সঞ্চারীর হাতটা টেনে দোতলায় নিজের ঘরের দিকে নিয়ে গেল।সাম্মী পাটোয়ারি নীদ্র,জান্নাতি,রুমি আর হাবিবের জন্য গেস্ট রুমে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন।
সাহিলের রুমের বড় বেডটার উপর পা দুলিয়ে বসে আছে সঞ্চারী।বড় বড় চোখ মেলে সাহিলের পুরোটা ঘর চেক করছে।এ্যাশঘরটা আধুনিক ফার্নিচার দিয়ে সাজিয়ে রাখা;বড় বেড,একটা দেয়ালের অর্ধেকটা জোড়া কাবার্ড,ড্রেসিং টেবিল,একটা ছোট্ট ফ্রিজ ও আছে,এক পাশে একটা সিঙ্গেল সোফা ও সেন্টার টেবিল, অন্যপাশে একটা ছোট্ট বুক শেলফ।সাহিলের ঘরটা মূলত একটা পার্টিশন দিয়ে দু’ভাগে ভাগ করা।বেডরুমের একটা পোর্সন নিজের কাজের জন্য বরাদ্দ রেখেছে সাহিল।
সঞ্চারী খাট থেকে উঠে স্লাইডিং ডোরটা খুলে সাহিলের কাজের যায়গায় প্রবেশ করে।এখানে একটা টেবিলের উপর ল্যাপটপ, ফাইল,পেপার,পেন এসব রাখা।পাশের দেয়ালটা জুড়ে পুরোটাই বই।ঘরের এক কোণে রং-তুলি রাখা।কতগুলো সাদা ক্যানভাস আর কতগুলো রঙিন ক্যানভাস অর্থাৎ ছবি আঁকা আছে তাতে।
-“উনি ছবি ও আঁকেন?” সঞ্চারী অবাক হয়।এতো এতো বই,পেইন্টিং এর জিনিস!উনি এতো কিছু কখন করেন?
সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা একটা পেইন্টিং উন্মুক্ত করলো সঞ্চারী।ছবিতে শুধু দু’টো চোখ আঁকা।সঞ্চারীর মনে হলো পেইন্টিং টা বোধ হয় কমপ্লিট হয়নি।
সঞ্চারী বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো ছবির চোখ জোড়ার দিক।একটু পরিচিত ঠেকলো তার কাছে।চোখের মণি জোড়া ধূসর বর্ণের।সঞ্চারীর মনে পড়লো সাহিলের চোখের মণিও ধূসর বর্ণের তবে এই চোখজোড়া একটা মেয়ের।কার চোখ এগুলো?কেন এঁকেছে সাহিল?
সঞ্চারী পেইন্টিং টা আবার আগের মতো করে ঢেকে রাখলো।বিশাল বুক শেলফের কাছে গিয়ে বইগুলোতে হাত বুলাতে লাগলো।একটা প্যাটার্ন মেনে বইগুলো সাজিয়ে রাখা।একপাশে দেশীয় ফিকশন, নন-ফিকশান, উপন্যাস অন্যপাশে ভিন্ন দেশের রাইটারদের বইগুলো সাজিয়ে রাখা।
সঞ্চারী কয়েকটা বই বের করলো। “The sinner”, “Twist me”, “His” নামের তিনটা বই সঞ্চারী হাতে নিল।বইয়ের পাতা গুলো শুধু উল্টে পালটে দেখলো।বিভিন্ন প্যারায় রেড পেন দিয়ে আন্ডারলাইন করা।আবার কোথাও হাইলাইটার দিয়ে হাইলাইট করা।
-“এই লোক নভেল ও এভাবে পড়ে!আমিতো নিজের ক্লাসে বইও এভাবে হাইলাইট করে পড়ি না!কি আছে এই বইতে?পড়ে দেখা দরকার।”
বলেই “The sinner” বইটা খুলে সাহিলের আন্ডারলাইন করে রাখা অংশ গুলো থেকে একটু পড়তে গেলেই কেউ ছো মেরে বইটা হাত থেকে নিয়ে গেলো।সঞ্চারী চমকে উঠে তাকাতেই দেখলো সাহিল সামনে দাঁড়িয়ে।চুলগুলো ভেজা ভেজা ঠেকছে,ড্রেসও চেইঞ্জ করে এসেছে।
-“ভোর হয়ে এসেছে প্রায়।এর ভিতর আবার শাওয়ার নিয়েছেন?” অবাক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো সঞ্চারী।
-“শাওয়ার নেইনি নিরু।এমনি ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেইঞ্জ করেছি।”
-“বইটা নিলেন কেন?আর এগুলো কিসের বই?এভাবে মার্ক করে রেখেছেন কেন বইয়ের মধ্যে?”
কপট রাগ দেখিয়ে বললো সঞ্চারী।
-“তোমার এগুলো জানার বয়স হয়নি নিরুপমা।বয়স হলে প্রাক্টিকালি সব দেখিয়ে দেব।আমি কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী।”
বলেই চোখ মারলো সাহিল।সঞ্চারী হা হয়ে গেল সাহিলের আচরণে।ওই বই গুলোর পাশেই দেখলো “Haunting Adeline” বইটা।সঞ্চারী কপাল কুচকে সাহিলকে জিজ্ঞেস করলো,
“এখানে রাখা বইগুলোকি সব একই ধরনের?”
“হ্যাঁ, কেন?”
সঞ্চারী এবার বুঝলো সাহিল কেন তাকে বইটা পড়তে দেয়নি।”Haunting Adeline” বইটা সঞ্চারী গুগল থেকে একটু পড়েছিলো আর রিভিউ দেখেছে, এটা যে এডাল্ট ধাঁচের বই তা সঞ্চারী জানে।
-“ওটা আমি একটুখানি পড়েছি।এতোটাও অবুঝ না আমি!বয়স এইট্টিন প্লাস;কয়েকদিন পর নাইনটিন হবে।আ’ম এ গ্রোন-আপ নাউ।”
বুকশেলফ এ রাখা “Haunting Adeline” বইটের দিকে আঙ্গুল তাক করে বললো সঞ্চারী।
সাহিল সঞ্চারীর অভিব্যক্তি দেখে কোমরে হাত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসতে লাগলো।মাথাটা নিচু করে হাসতে হাসতে ডানে বায়ে নাড়ালো।
-“কতটুকু পড়েছো বউ?পরীক্ষা নেই?প্রাক্টিকাল এক্সাম! নেব?”
সঞ্চারী এবার লজ্জায় পড়ে যায়।সাহিলের লাগামহীন কথার মানে বুঝে মাথাটা নিচু করে নেয় সে।
সাহিল টেবিলের উপর বইগুলো রেখে এক হাতে সঞ্চারীর কোমর পেঁচিয়ে কাছে টেনে নেয়।সঞ্চারীকে একটু উঁচু করে টেবিলের উপর বসিয়ে পিঠ আকড়ে ধরে তার।সঞ্চারী হকচকিয়ে ওঠে এমন কাণ্ডে;দু’হাতে সাহিলের শার্টের বুকের কাছের অংশটা খামচে ধরে সে।
সাহিল কোনো ধরণের সতর্কসংকেত ব্যতিত ঝড় তুললো সঞ্চারীর নরম ওষ্ঠপুটে।সঞ্চারীর মস্তিকে সবটা তালগোল পাঁকিয়ে গেল;তবে নিজের অবস্থান ঠাহর করতে পেরেই চোখজোড়া বন্ধ করে সাহিলের সাথে তাল মেলাতে শুরু করলো।
সাহিলের হাত তখন সঞ্চারীর উন্মুক্ত কোমড়ে বিচরণ করছে।সঞ্চারী সাহিলের অপ্রতিরোধ্য ঠোঁটের গতির সাথে পেরে উঠতে না পেরে ক্ষণে ক্ষণে মৃদু কেঁপে উঠছে।
কিন্তু সাহিলের থেকে ছাড়া পাওয়ার নামগন্ধ নেই তার।সাহিল একপর্যায়ে সঞ্চারীর ঠোঁটে নিজের জিভ ছোঁয়তেই সঞ্চারী সাহিলের শার্টের উপর দিয়ে তার বুকটা খামচে ধরলো।সাহিল ব্যাথা পেলেও চোখ খিঁচে সহ্য করে নিলো কিছুটা।কিন্তু হাতের বাঁধন বা ঠোঁটের অপ্রতিরোধ্যতা কমলো না।
সঞ্চারীর এবার দম আটকে আসার উপক্রম হয়েছে।সে ক্রমাগত সাহিলের বুকে ধাক্কা দিয়ে তাকে দূরে সরাতে চেষ্টা করতে লাগলো;তবে ব্যর্থ হলো সে।সঞ্চারীর চোখের কার্ণিশ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়লে সাহিল আস্তে করে সঞ্চারীর ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে নিজের কপালের সাথে সঞ্চারীর কপালটা ঠেকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে।
দম আটকে মুখটা রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে সঞ্চারীর।সাহিল হাঁপাতে হাঁপাতে ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে সঞ্চারীর দিকে তাকায়।সঞ্চারী তখনো চোখজোড়া বন্ধ করে নিজেকে শ্বাস নিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
সাহিল সঞ্চারীর নাকের ডগায় একটা ছোট্ট চুমু খেয়ে দু’হাতের সাহায্যে সঞ্চারীর মুখটা উপরে তোলে।
-“প্রিপেয়ার ইয়্যুরসেল্ফ বউ;এটা ডেমো ছিলো।এর থেকে লং টাইম কিস অপেক্ষা করছে তোমার জন্য।এতোটুকু তে এমন মরিমরি হাল হলে সাহিল পাটোয়ারির বাচ্চার মা হবে কি করে বলো বউ?তুমি না পাঁচটা বাচ্চা চাও?”
সাহিলের কথায় ফট করে চোখ খোলে সঞ্চারী।সাহিল কি করে জানলো যে সে পাঁচটা বাচ্চা নেওয়ার প্ল্যানিং করে রেখেছে?
-“আপনি কি করে…?”
-“আমি সব জানি বউ।তোমার সবগুলো জিনিসের আমার কাছে এ টু যেড হিসেব থাকে।এইযে ধরো তোমার ডান শোল্ডারের একটু নিচের দিকে একটা কালো কুচকুচে তিল আছে!এটা হয়তো তুমিও জানো না।” বলেই মনোমুগ্ধকর এক হাসি দেয় সাহিল।
-“আর কি কি জানেন আপনি?”
-“তোমার আশিক হিসেবে যতটুকু জানা দরকার সবটাই জেনে নিয়েছি।বাকিটা আস্তে আস্তে খুলবো আর জানবো।”
সাহিলের কথায় চোখ বড় বড় করে তাকায় সঞ্চারী।সাহিল এমন ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যেন এটা ভীষণ নরমাল কনভারসেশন তাদের মাঝে।
-“ছিহঃ আপনি এমন ডাবল মিনিং কথাবার্তা কোত্থেকে শিখলেন?”
-“এটাকে ডাবল মিনিং কথা বলেনা নিরু,এটাকে বলে বউরের সাথে ফ্র্যাংকলি কথা বলা।”
সঞ্চারীর এভার ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে।সে সাহিলের থেকে ছুটতে চাইলে সাহল বলে ওঠে,
-“এখনি ছাড়বো না বউ।আমার বাসরের ২% ও হয়নি।সবার বাসর রাত হয় আমার কি কপাল দেখো!বাসর ভোর করতে হবে!”
-“আপনি করুন আপনার বাসর।নির্লজ্জ পুরুষমানুষ।”
-“আমি লজ্জাশীল হলে তোমার লজ্জা ভাঙ্গাতে পারবো না বউ।আর লজ্জা নারীর ভূষণ আমি ওসব দিয়ে কি করবো?তুমি বরং বেশি করে লজ্জা পাও আর আমি তোমার লজ্জা ভাঙ্গাই উইথ ডিফরেন্ট স্টাইল এন্ড পজিশন?”
-“ইসসস…আপনি ভারী অসভ্য।নতুন বউকে এসব বলছেন!আল্লাহ বাঁচাও।”
-“গত রাতেও রিজেক্ট করেছি বলে কাঁদছিলে।হাসপাতালে অবধি নিয়ে গেলাম!এখন বলছো আল্লাহ বাঁচাও?গিরগিটির মতো ক্ষণে ক্ষণে রূপ পাল্টাও কেন নিরু?এক রঙ্গা থাকো,শুধু মাঝে মাঝে লজ্জায় লাল-নীল হলে সমস্যা নেই।”
-“উফফফ!সরুন তো ছাড়ুন আমায়।আমি গিরগিটি না?তো গিরগিটি বিয়ে করেছেন কেন?ছেড়ে দি…”
সঞ্চারী কথা শেষ করতে পারেনা সাহিল তার আগেই সঞ্চারীর বাহু চেপে ধরে চরম আক্রশে।
“ছেড়ে দেওয়ার কথা মুখে আনলে জান নিয়ে নেব।তোর লাইফে সব ফ্রিডম এলাউড বউ শুধু আমায় ছেড়ে যাওয়ার বা আমার থেকে মুক্তি পাওয়ার ফ্রিডম বাদে।আর আমি ছাড়া বাকি সব পুরুষ তোর জন্য নিষিদ্ধ, আমিই তোর জীবনের প্রথম আর শেষ পুরুষ আর তুই আমার ইহকাল আর পরকালের একমাত্র নারী।প্রথমবার বলেছিস তাই ছেড়ে দিলাম পরেরবার বললে পাটোয়ারি বাড়ি থেকে পরপর দু’টো লাশ বেরোবে;একটা তোর অন্যটা আমার।তোকে মেরে তারপর নিজে মরবো।তবুও তোর মুক্তি নেই নিরুপমা,তুই আমার;শুধুই আমার।”
সাহিল সঞ্চারীর উত্তরের অপেক্ষা না করে তাকে কোলে তুলে নিয়ে অফিস কক্ষের থেকে বেডরুমের দিকে হাঁটা দিলো।
-“বাচ্চা বউ একটা, এমনিতেই রাত পেরিয়ে গেছে আবার আমার দিনের বাসরটাও নষ্ট করার পায়তারা করছে।ইচ্ছা করছে আছাড় মারি ধরে।এজন্যই বাবা বলেছিলো ওয়াসির শিকদারের মেয়েকে বিয়ে না করতে।জামাইর রোম্যান্সের সাথে শত্রুতা করছে ব্যাড ওম্যান।”
চলবে…
#আমার_সঞ্চারী
পর্ব-৮
#শ্রীমতি_প্রজ্ঞা_মঞ্জরী (লেখিকা)
খাটের উপর মুখ লটকিয়ে বসে আছে সঞ্চারী।গায়ে এলোমেলো ভাবে পড়া বিয়ের শাড়িটা, আর গয়নাগুলো খাটের উপরে পড়ে আছে।রাগে দুঃখে সঞ্চারীর এখন ইচ্ছে করছে সাহিলের মাথা ফাটিয়ে দিতে।
কিছুক্ষণ আগে,
সাহিল সঞ্চারীকে কোলে করে নিয়ে বেডের উপর বসিয়ে মাথা থেকে দোপাট্টা টা সাবধানে খুলার চেষ্টা করলে একটা হেয়ারপিনে চুলে বেশ টান অনুভব করে সঞ্চারী।চিল্লিয়ে বলে ওঠে,
-“আহহহহ…ধীরে!এতো জোরে দিচ্ছেন কেন?”
-“অশ্লীল আওয়াজ আর অশ্লীল কথা দু’টোই অফ করো নিরুপমা।সকাল হয়ে গেছে, এখন কিছু করতে পারবো না।তবে রাতে পুরোটা পুষিয়ে দেব একদম পাক্কা প্রমিস।”
সাহিলের কথায় সঞ্চারীর রাগ হয় ভীষণ।
-“এই দেখুন একদম আমার কথার বাজে মিনিং বের করবেন না।আমি বলেছি আমার চুলে ব্যাথা লাগছে আস্তে টান দিতে।আর আপনি?মাথার ভর্তি ডার্টি জিনিস নিয়ে ঘুরেন।অবশ্য যেসব বই পড়েন তাতে ব্রেইন না ওটা ড্রেন হয়ে গেছে এতোদিনে।নির্লজ্জ কোথাকার!”
-“একদম ব্রেইন কে ড্রেন বলবে না।মাস্টার্স ডিগ্রিধারী আমি;তাও অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় ইউনিভার্সিটি থেকে।ব্রেন নিয়ে কিছু বললে কিন্তু ভালো হবেনা বলে দিলাম।”
-“ইসসস যেইনা ব্রেইন!এসব আজেবাজে নভেল পড়ে সময় পেতেন নাকি পড়াশোনা করার!সত্যি বলেন দেখি?চুরি করে এনেছেন ডিগ্রী?নাকি সার্টিফিকেট ফ্রম নিলক্ষেত?”
-“একদম নিলক্ষেত বলবেনা।মাথায় তো রাখো সব গুলিস্তান মার্কা বুদ্ধি!এজন্যই এসব চুরি-চামারি ভালো বুঝ তুমি।আমি গুলশান এরিয়ার ব্রেইন নিয়ে চলি একদম ফার্স্ট ক্লাস।”
-“ফার্স্ট ক্লাস?নাকি করাপশন ক্লাস? এই আপনি ট্যাক্স দেন তো ঠিকমতো? নাকি কালোটাকার পাহাড় বানিয়েছেন?”
-“দেখ বউ, ঘরের বউয়ের জামাইর আদর সোহাগে থাকা শেখা উচিৎ।এতো পটর পটর করো না,প্রথম দিনেই জামাইর সয়-সম্পদ নিয়ে টান দিচ্ছো দেখছি!”
-“আপনি বললেন বলেই বললাম!আমার বয়েই গেছে আপনার সয়-সম্পত্তি ধরে টান মারতে!যেইনা সম্পদ নাম রাখছে আবার জহরত!”
সাহিল এবার সঞ্চারীকে একটানে নিজের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে নেয়।
-“তোমার জামাইর যে সম্পদ আছে না বউ?তুমি আজীবন খেয়ে পড়েও আরাম আয়েশে উড়াতে পারবে।সম্পদ নিয়ে খোঁচা মেরোনা বউ,ফোকাস অন মি।আর আমার সব থেকে বড় সম্পদ তো তোমার নামে দু’ঘন্টা আগেই লিখে দিয়েছ।”
-“কোন সম্পদ?” ভ্রু-কুচকে জিজ্ঞেস করে সঞ্চারী।
সাহিল মুখে উত্তর করেনা,ঠোঁট কামড়ে নিচের দিকে ইশারা করে।
সঞ্চারী প্রথমে বুঝতে না পারলেও একটু পর ঠিকই বুঝে।সে ছিটকে সরে যায় সাহিলের থেকে।
-“ছিহঃ কেমন অশ্লীল কথা।আসতাগফিরুল্লাহ!”
সাহিল কিছু বলতে যাবে এমন সময় দরজায় কড়া নাড়ে কেউ।
-“সাহিল তোমার বাবা নিচে ডাকছেন,নিচে এসো।”
সাম্মী পাটোয়ারির আওয়াজ পেয়ে সাহিল বিছানা থেকে উঠে দরজা খোলে।
-“আসছি মা।”
-“সঞ্চারীকেও নিয়ে এসো,তোমার বাবা ডেকেছেন।”
সাহিল মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালেই সাম্মী পাটোয়ারি চলে যান।সঞ্চারী নিজের শাড়ি ঠিক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।সাহিল রুমে এসে নিজের ফোনটা হাতে নেয়।
-“চেইঞ্জ করে নাও।আর আমি না ডাকলে নিচে আসবে না।”
-“মা যে বলে গেলেন আমাকেও নিচে যেতে?”
-“আমি তোমায় যেটা বলছি সেটা শুন।চেইঞ্জ করে নাও আর ঠোঁটে অয়েনমেন্ট লাগিয়ে নিও বেড সাইট টেবিলের ড্রয়ারে আছে।সবাইকে দেখাতে হবেনা যে তোমার জামাই কতো রোম্যান্টিক।”
সঞ্চারীকে উত্তর করার সুযোগ না দিয়ে সাহিল ফোন টিপটে টিপটে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
বর্তমান,
-“একটা নাকউঁচু লোককে বিয়ে করেছি,ভালোও বাসবে আবার এটিটিউড ও দেখাবে।সিম্পলি রিডিকিউলাস!”
কথাটা বলেই সঞ্চারী ওয়াশরুমে চলে যায়।
পাটোয়ারি বাড়ির ড্রয়িংরুমের সোফায় মুখোমুখি বসে আছে সাহিল এবং ওয়াসির শিকদার।সাহিলের মুখে চির চেনা শীতলতা আর ওয়াসির শিকদার যেন ক্রোধে ফেটা পড়ছেন।সাহিলের পাশেই বসে আছেন আজহার পাটোয়ারি ও হাবিব।
জান্নাতির বাবা ওমর মৃধা ও এসেছেন ওয়াসির শিকদারের সাথে।
-“আমার মেয়ে কোথায়?তুমি কোন সাহসে আমার মেয়েকে ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেছো সাহিল?”
ওয়াসির শিকদার ক্রোধান্বিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন সাহিলকে।
-“আপনার মেয়ে তার ঘরে আছে,ফ্রেশ হচ্ছে।আপনার মেয়েকে আমি ভালোবাসি তাই বিয়ে করেছি,ট্রাপে ফেলার মতো কিছুই ঘটেনি।”
-“একদম আমার সামনে অডাসিটি দেখাবে না সাহিল।আমার মেয়েটার বয়স সবে আঠারো,ওকে ফুঁসলিয়ে তুমি নিজের জিম্মায় নিয়েছো!ভালোয় ভালোয় বলছি আমার মেয়েকে ছেড়ে দাও;আদারওয়াইজ আমি কি জিনিস তা তোমার বাবা খুব ভালো করেই জানেন।তাইনা আজহার সাহেব?”
-“আপনি আমার বাবার বয়সি প্লাস আমার শ্বশুর হন সম্পর্কে।তাই আপনাকে অডাসিটি বা এটিটিউড কোনো টাই দেখাচ্ছিনা।তবে আমি আমার ফ্যামিলি নিয়ে বড্ড পসিসিভ,আমার বাবাকে আমার সামনে থ্রেট দেওয়ার মতো ভুলটা করবেন না।আর বাকি রইলো সঞ্চারীর কথা,শি ইজ মাই ওয়াইফ নাও।মৃত্যুর আগ অবধি ওকে আমার থেকে কেউ আলাদা করতে পারবে না একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ছাড়া।”
সাহিলের কথায় ওয়াসির শিকদার কিছুটা দমে গেলেন।তবে তেমন প্রতিক্রিয়া দেখালেন না।
অন্যদিকে আজহার পাটোয়ারির মুখে তখন গর্বিত হাসির ঝিলিক।
“তোমার জন্য এটাই ভালো হবে তুমি আমার কথা মতো আমার মেয়েকে আমার হাতে তুলে দাও।যত টাকা দরকার আমি দেব তোমায়।”
ওয়াসির শিকদারের কথায় তাচ্ছিল্য ভরা হাসি দেয় সাহিল।সোফায় আরাম করে গা এলিয়ে দিয়ে পায়ের উপর পা তুলে নেয় সে।
-“কাম অন শ্বশুর মশাই,এতো চিপ প্রস্তাব রাখবেন আমি ভাবি নি।বাংলা সিনেমার চৌধুরী সাহেবের মতো ডায়লগ দিয়েন না;আমি বাপ্পারাজ নই।আমি হিরো ও নই আমি ভিলেন।আপনার মেয়ের জন্য আমি জান দিতেও পারি আর জান নেওয়ার নমুনা তো আপনার জানাই আছে।আপনার মেয়ে আমার কাছে দুনিয়াবি সকল মায়ার ঊর্ধ্বে,দুনিয়াতে এমন কোনোকিছুর অস্তিত্ব নেই যার বিনিময় আমি আমার স্ত্রীকে অন্যের হাতে তুলে দেব।”
-“ভুল করছো সাহিল পাটোয়ারি,দারুণ বিজনেস ডিল হতে পারতো।”
-“ওয়াইফ নিয়ে নো ডিল শ্বশুর জি।ওয়াইফ ইজ বিয়ন্ড এভ্রিথিং,এভরিওয়ান এন্ড ইভেন বিয়ন্ড মাই ওউন লাইফ।”
-“ডায়লগ দেওয়া অফ করো,তোমার এনগেইজমেন্ট হয়ে গেছে।আমার মেয়েকে বিয়ে করে তুমি জান্নাতিকে ঠকিয়েছ।”
-“আপনার ভাগ্নি আমার আর আপনার মেয়ের বিয়ের প্রথম সাক্ষী হিসেবে সই করেছে শ্বশুর মশাই!আপনার মতো কাঁচা খিলাড়ী আমি নই।সময়ের কাজ সময়ে করি, নাহলে আপনার মতো অতীতের ভুলের জন্য কপাল চাপড়াতে হতো।আটাশ বছর আগের করা ছোট্ট ভুলের জন্য যেমন আজ আপনার কপাল চাপড়াতে হয়!শুধু চুল পাকলেই হয়না,ঘটে বুদ্ধিটাও থাকা দরকার।”
সাহিলের এমন মক করে কথা বলা মেনে নিতে পারেনা ওয়াসির শিকদার।নিজের ব্লেজারের নিচ থেকে রিভলভার টা বের করে দাঁড়িয়ে যায় সোফা থেকে।সোজা তাক করে সাহিলের মাথা বরাবর।
সাহিলের এতে কোনো হেলদোল দেখা যায়না।সে যেন এটাই চাইছিলো,ওয়াশির শিকদার যেন উত্তেজিত হয়ে যান।
ড্রয়িংরুমে উপস্থিত সবাই ভয়ে দাঁড়িয়ে গেল বসা থেকে শুধু সাহিল বাদে।
-“তোর মতো অবৈধভাবে জন্মান ছেলে কিনা ওয়াসির শিকদারকে জ্ঞান দেয়?ব্লাডি বা*স্টার্ড।”
সাহিলের এবার চোয়াল শক্ত হয়ে এলো,চোখজোড়ায় যেন ধপ করে আগুন জ্বেলে উঠলো।সাহিল বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।নিজের টি শার্ট এর পিছন থেকে রিভলভার টা বের করে ওয়াসির শিকদারের কপাল বরাবর তাক করে।
-“আমায় নিয়ে কথা বললে কিচ্ছু বললাম না,কিন্তু আমার মা কে নিয়ে বলার দুঃসাহস দেখিয়েছিস তুই!আমার মা এই পৃথিবীর সব থেকে পবিত্র নারী,তাকে নিয়ে নোংরা কথা বলার স্পর্ধা দেখিয়েছিস তুই জানোয়ার?হারাম*জাদা এই তোর সাহস কি করে হয়?এখানে তোকে মেরে তোর লাশটা গুম করে দিলে কাকপক্ষী তেও টের পাবেনা।কুত্তা* বাচ্চা তোর অপরাধের শাস্তি আমি এখনি দিতে পারতাম কিন্তু তুই আমার অপরাধীর নোস।তুই আমার বউয়ের অপরাধী, তাই তোকে নির্মম মৃত্যু আমার বউ দিবে নিজের হাতে।”
সাহিলের কথায় পাটোয়ারি বাড়ির থমথমে পরিবেশ মূহুর্তের মধ্যে কেঁপে উঠলো।সাম্মী পাটোয়ারি,জান্নাতি, রুমি সবাই ঘরে ছিল।সাহিলের হুঙ্কার শুনে সবাই একপ্রকার দৌঁড়ে এলো ড্রয়িংরুমে।
ওয়াসির পাটোয়ারি সাহিলের কথায় হো হো করে হেসে ওঠে।ব্যাঙ্গাত্তক ভঙ্গিমায় বলে ওঠে,
-“আমার মেয়ে আমার এই পৃথিবীর বুকে সবথেকে বেশি ভালোবাসে।আমার মেয়ে আমাকে মারবে!নাইস জোক সাহিল পাটোয়ারি।”
-“আরে ডেট ওভার ব্রেইনওয়ালা বুইড়া,আমার বউ তো তোর মেয়ে ই না!ভুলে গেছিস?মনে করিয়ে দেব ওয়াসির শিকদার?”
সাহিলের কথা শুনে ওয়াসির শিকদারের চেহারার রঙ উবে গেলো,হাতটা টলে উঠলো সহসায়।কাঁপা গাতে রিভলভার টা ধরে রেখে বলে উঠলেন,
-“হোয়াট রাবিশ! সঞ্চারী আমার মেয়ে,আমার রক্ত বইছে ওর শরীরে।মনগড়া কথা বলে নিজের চরিত্রের দাগ ঢাকতে চাইছিস সাহিল পাটোয়ারি?”
-“সাহিল পাটোয়ারি মন গড়া কথা বলেনা ওয়াসির শিকদার।তোর অতীতে যে কেঁচো খুড়তে কেউটে বেরোবে তা তুই ভালো করেই জানিস।”
উপস্থিত সবাই বিস্ময়ে মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।সাহিলের এমন রূপের সাথে তারা পরিচিত নয়।তার উপর সাহিলের হঠাৎ ওয়াসির শিকদারকে এমন কথা বলা!
জান্নাতি ভাবতে ভাবতে সিঁড়ির দিকে নজর দিতেই দেখে সঞ্চারী চোখ ভরা জল নিয়ে সিঁড়ির কোণে দাঁড়িয়ে আছে।
-“সঞ্চারী?”
জান্নাতির কথায় সবাই তার নজর লক্ষ্য করে উপর দিকে তাকায়।সঞ্চারীর সজল আঁখিজোড়া দেখে সাহিলের বুকের ভেতর মুচড়ে ওঠে।সে রিভলভার টা কোনোরকম কোমরে গুঁজে দৌঁড়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠে।
-“এখানে কি করছো বউ?নিচে আসতে বারন করেছিলাম আমি।ঘরে যাও এক্ষুণি।”
সঞ্চারী কথা বলেনা;অপলক দৃষ্টিতে কেবল তাকিয়ে থাকে সাহিলের দিকে।তার চোখের এক অদ্ভুত কঠোরতা!
-“ওয়াসির শিকদার আমার বাবা নন?”
-“ঘরে চলো নিরু।”
-“আমি ওয়াসির শিকদারের মেয়ে নই?”
সাহিল সঞ্চারীর বাহু ধরে বলে ওঠে,
-“সব বলবো নিরু ঘরে চলো।”
সঞ্চারী ঝাটকা দিয়ে সাহিলের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়।দৌঁড়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে ওয়াসির শিকদারের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
-“বাবা?সাহিল কি বলছে?আমি তোমার মেয়ে নই বাবা?তুমি আমার বাবা নও?”
ওয়াসির শিকদার হকচকিয়ে গেছেন।পরিস্থিতি সামলে নিতে সে সঞ্চারীকে জড়ি ধরেন।সঞ্চারী বাবার বুক পেয়ে কান্নার গতি বাড়িয়ে দেয়।
-“তুমি আমার মেয়ে আম্মা।আমি-ই তোমার বাবা।সাহিল ভালো ছেলে নয় মা,ওর কথা বিশ্বাস করো না।”
সঞ্চারীর মাথায় অনবরত হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলেন ওয়াসির শিকদার।
-“আমি তোমার মেয়ে না বাবা? আমি তো তোমারই মেয়ে বলো বাবা?আমি ওয়াসির শিকদারের মেয়ে সঞ্চারী শিকদার। তাইনা বাবা?”
-“হ্যাঁ মা।তুমি আমার মেয়ে।কান্না থামাও মা।এই বাড়িতে আর এক মূহুর্তও তোমায় আমি রাখবো না।ওই ছেলে তোমায় ভয় দেখিয়ে বিয়ে করেছে না?আমি তোমায় নিয়ে যাবো মা।এই বাড়িতে তোমার থাকতে হবেনা।”
বলেই সঞ্চারীর হাত ধরে হাঁটা দেন ওয়াসির শিকদার।তবে বেশি দূর যেতে পারেন না,তার আগেই সাহিল সঞ্চারীর অন্য হাত টেনে ধরে।
সঞ্চারী ঘাড় ঘুরিয়ে সাহিলের দিকে তাকায়।সাহিল সঞ্চারীর দিকেই তাকিয়ে ছিলো ফলে চোখাচোখি হয় তাদের।
-“এই বাড়িতে লাল শাড়ি পেঁচিয়ে এসেছিলে সঞ্চারী,কিন্তু এই বাড়ি ছেড়ে তুমি তখনি বেরোবে যখন তোমার পড়নে কাফনের কাপড় থাকবে।এর আগে সাহিল পাটোয়ারির ওয়াইফ,পাটোয়ারি বাড়ির বউ এই বাড়ি থেকে এক চুলও নড়বে না।”
সঞ্চারী দৃঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাহিলের দিকে।কেন যেন অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে তার মনের মধ্যে।
ওয়াসির পাটোয়ারি কিছু বলতে যাবেন এমন সময় সঞ্চারী বলে ওঠে,
-“তুমি চলে যাও বাবা।আমি আমার স্বামী,আমার সংসার ছেড়ে কোথাও যাবোনা।আমায় ভুল বুঝোনা বাবা,আমি তো তোমার মেয়ে বলো!আমি এমন কিছু করিনি যাতে আমায় ভবিষ্যতে পচতাতে হবে।”
-“অসম্ভব!এই জানোয়ার ছেলের সাথে আমি কিছুতেই তোমায় থাকতে দিতে পারিনা।আর তুমিতো জানোই এরা বিজনেসে আমাদের রাইভাল!তোমায় গুটি হিসেবে ইউজ করতে চাইছে ওরা।বুঝো একটু মা!আর সাহিল কতোটা হিংস্র তুমি তো দেখলেই!ও আমায় অবধি ছাড়লো না!তোমার সাথেও ও এমন বিহেভ করবে।চলে এসো মা।”
-“সাহিল আমায় খুব ভালোবাসে বাবা।তার থেকেও বড় কথা আমি ওনাকে ভালোবাসি।রেগে গেছে বলে এমন রুড বিহেভ করেছে,তোমরও তো রাগলে মাথা ঠিক থাকেনা বাবা,এগুলো ধরে বসে থাকা যায় বলো!”
-“তবুও…”
-“আমার বউ আমার সাথেই থাকবে,তাইনা বউ?”
সঞ্চারীকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলে ওঠে সাহিল।সঞ্চারী সাহিলের চোখের দিকে তাকায়,মাথা উপর-নিচ দুলিয়ে বোঝায়, “হ্যাঁ আমি থাকবো।”
ওয়াসির শিকদারের মুখটা কালো হয়ে যায়।
-“বেশ,থাকো তুমি!তবে মনে রেখো সঞ্চারী এই ছেলে যদি তোমায় কোনোভাবে নির্যাতন করে তবে বাবার কাছে চলে আসবে।আমার কাছে তুমি সবার আগে।”
বলেই গটগট করে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।জান্নাতির বাবা এসবের মাঝে ছিলেন নির্বিকার!তবে তার চোখে ছিলো এক অদ্ভুত রহস্যের জটলা।
-“জান্নাতি,চলে এসো।”
বলেই বাইরে বেরিয়ে গেলেন তিনি।জান্নাতি রুমে গিয়ে নিজের ব্যাগটা এনে এনগেইজমেন্ট এর আংটিটা সাম্মী পাটোয়ারির হাতে দিয়ে বেরিয়ে গেলো।যাওয়ার আগে সঞ্চারীর মাথায় হাত রেখে বললো,
-“ভালো থাকিস চড়ুইপাখি।নিজের যত্ন নিস;মন দিয়ে সংসার করিস আর আপাই কে ভুলে যাস না কেমন?”
সঞ্চারী বিনাবাক্যে জড়িয়ে ধরে জান্নাতিকে।ভাঙ্গা কণ্ঠে বলে ওঠে,”সরি আপাই।বিয়ে ভাঙ্গার বদনাম জুটবে তোমার কপালে;আর তা শুধু আমার জন্য।”
-“হুশ,বেশি পাঁকা পাঁকা কথা বলিস না।আমার বিয়ে করার ইচ্ছে থাকলে আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তোদের বিয়ে দিতাম না।ইয়্যু গাইস আর মেইড ফর ইচ আদার চড়ুইপাখি।”
সাহিলের দিকে তাকিয়ে জান্নাতি বললো, “খেয়াল রেখো ওর।একটু খামখেয়ালিপনা করে তবে বোকো না বেশি।”
সাহিল মাথা নাড়িয়ে আশ্বস্ত করে জান্নাতিকে।
পাটোয়ারি বাড়ির বিশাল ড্রয়িংরুমে এখন কেবল পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত।সকলের চেহারা থমথমে, মুখে কোনো কথা নেই।নীরবতা যেন বাঁধ দিয়ে দিয়েছে সকলের মাঝে।
তবে এই নীরবতা ভাঙ্গিয়ে বিকট এক শব্দে কেঁপে উঠলো পুরো পাটোয়ারি বাড়ি।প্রত্যেকটা সদস্য তড়িৎ গতিতে কেঁপে উঠলো।সাম্মী পাটোয়ারি শব্দটা ভীরের রুম থেকে আসছে বলে ধারণা করলেন,কাউকে কিছু না বলেই দৌঁড়ে সিঁড়ি বেয়ে চলে গেলেন ভীরের ঘরের দিকে।সবাই যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে সাম্মী পাটোয়ারির এমন আকর্ষাৎ দৌঁড়ে যাওয়ায়।
উপরে গিয়ে সাম্মী পাটোয়ারি ভীরের ঘরের দরজা খোলা পেয়ে ভিতরে প্রবেশ করেই চিল্লিয়ে বলে উঠলেন,
“ভীর….”
চলবে…