#আমার_সঞ্চারী
পর্ব-৯
#শ্রীমতি_প্রজ্ঞা_মঞ্জরী (লেখিকা)
সঞ্চারী সারা ঘরময় পায়চারী করছে,সাহিল তাকে বেডরুমে লক করে রেখে গেছে।সঞ্চারী যখন লক করার কারণ জিজ্ঞেস করে তখন সাহিল বলে, “তুমি আমার কথা শুনো না নিরু!একটা কথাও কি শুনো তুমি?তখন নিচে আসতে বারণ করেছিলাম তুমি তাও গেছো।এবার তোমার কোনো কথা শুনতে আমি রাজি নই,এখানেই বসে থাকো যতক্ষণ আমি না আসি।”
-“আজ সাহিল বাবার সাথে এমন আচরণ কেন করলেন?আর বাবা?সে-ই বা ওমন নোংরা কথা বললো কেন?ধুর!একটা লোক এই বাড়িতে সোজা কথা বলেনা।”
সঞ্চারী বেশ বিরক্ত হলো,নিজের ফোনটাও কাছে নেই।বোর হচ্ছিলো সঞ্চারী;কিছু একটা ভেবে সাহিলের পার্সোনাল লাইব্রেরী থেকে “Twist Me” বইটা এর করে সাহিলের হাইলাইট করে থাকা অংশ গুলো পড়তে শুরু করলো।
অন্যদিকে,
বেডের উপর অচেতন অবস্থায় শুয়ে আছে ভীর,সাম্মী পাটোয়ারি কাঁদো কাঁদো মুখে ভীরের মাথার কাছে বসে পরম স্নেহে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।ভীর জেগে থাকলে হয়তো এই মূহুর্তে এখানে থাকা একটা মানুষকেও ঘরের ভিতরে এলাউ করতো না সে।সাম্মী পাটোয়ারি এভাবে তার মাথায় হাত রেখেছে এটাও মেনে নিত না ভীর।
আজহার পাটোয়ারি ভীরের রুমে রাখা সিঙ্গেল সোফাটায় বসে আছেন চিন্তিত মুখে।সাহিল এখানে নেই,সে ডাক্তারকে এগিয়ে দিয়ে আসতে গেছে।হাবিব আর রুমি বাড়ি চলে গেছে একটু আগেই;হাবিবের অফিস আছে বলে থাকতে চায়নি সে।
-“ভীর কি ওষুধ গুলো খায়না মা?”
সাহিলের কথায় মুখ তুলে তাকালেন সাম্মী পাটোয়ারি।কিন্তু তার কাছে এই প্রশ্নের উত্তর নেই।
-“আমি জানিনা সাহিল।ভীর নিজের মতো থাকে সবসময়।আমাদের সাথে তেমন কথাও বলেনা।নিজের মতো বাড়িতে আসে যায়,মিউজিক রেকর্ড করে,শো করে।”
-“তাই বলে ওর খেয়াল রাখবে না মা?তুমি কি জানো ও ওষুধ খায়না?ডাক্তার বলে দিয়েছে মা যে ও এভাবে ডিপ্রেশন এর ওষুধ গুলো মিস করতে থাকলে একদিন মানসিক রোগী তে পরিণত হবে।”
সাম্মী পাটোয়ারি কিছু বলতে পারেন না,অঝোরে কাঁদেন শুধু।ভীর কিছুতেই তাকে নিজের মা বলে মেনে নিতে রাজি নয়।এই আঠাশ বছর কম চেষ্টা করেননি সাম্মী পাটোয়ারি কিন্তু ভীর নিজের সিদ্ধান্তে অনড়।
আজহার পাটোয়ারি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন।ভীরের দিকে তাকিয়ে থেকেই সাহিলকে বললেন,
-“কথা আছে সাহিল।আমার ঘরে এসো।”
কালবিলম্ব না করেই আজহার পাটোয়ারি নিজের ঘরে চলে গেলেন।সাহিল ও তার পিঁছু পিঁছু তার ঘরে এলে আজহার পাটোয়ারি তাকে বসতে বললেন।
-“আজ যা হলো,তুমি সঞ্চারীর বাবাকে যা যা বললে তার পরিণতি ভাবতে পারছো সাহিল?”
-“বাবা,তুম যদি আমায় ওয়াসির শিকদারকে নিয়ে সাবধান করে দিতে চাও তবে তোমায় অনুরোধ করবো আর কিছুই বলো না আমায়।আমি জেনে শুনে রক্তের খেলায় নিজের নাম লিখিয়েছি বাবা।এখান থেকে উঠে আসার সুযোগ আমার নেই।হয় জয় নয় ক্ষয়।তবে ভীরু-কাপুরুষের ন্যায় যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে পিছ-পা আমি হব না বাবা।”
-“এটা যুদ্ধ,জয়,পরাজয়ের বিষয় নয় সাহিল।যেই খেলা আঠাশ বছর আগে আমি মাটি চাপা দিয়েছি সেটার কমব খুঁড়ে নতুন যুদ্ধ শুরু করতে যেও না।আমি তোমাদের হারানোর ভয় পাই,এই সর্বনাশের হাত থেকে তোমাদের বাঁচাতে আমি সব কিছু শেষ করেছি।নতুন করে এই রক্তপাতের খেলায় আমি তোমায় নামতে দিতে পারিন।”
-“আমি ইতমধ্যেই যুদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছি বাবা;যুদ্ধের দামামা বেজে গেছে।এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা,এই খেলায় হয় শত্রুপক্ষ থাকবে,নতুবা সাহিল পাটোয়ারি।”
-“ইয়্যু আর ম্যারিড সাহিল।সদ্য বিয়ে করেছো নিজের স্ত্রীর কথা অন্তত চিন্তা করো।”
-“আমার স্ত্রী আমার ফার্স্ট প্রায়োরিটি বাবা।দুনিয়ার যেকোনো কিছুর বিনিময়ে হলেও আমি ওকে নিজের কাছেই রাখবো।ওর জন্য দুনিয়ার সব সমরাঙ্গন আমি জিততে পারি।হারতে হলে শুধু ওর কাছেই হারবো;পুরো দুনিয়ার সামনে সাহিল পাটোয়ারি বিজয়ী সৈনিক হলেও আমার স্ত্রীর সামনে আমি পরাজিত সৈনিক উপাধি পেতেও প্রস্তুত বাবা।”
-“সাহিল তুমি বুঝতে চাইছো না…”
-“আমি সব বুঝতে পারছি বাবা।আর আজ আমার কাছে এটাও স্পষ্ট যে কেন তুমি তোমার প্যাশন আর প্রফেশন জার্নালিজম ছেড়ে দিয়েছিলে।”
আজহার পাটোয়ারি বিস্ফরিত নয়নে তাকিয়ে থাকেন সাহিলের দিকে।সাহিল নিজের বাবার এমন দৃষ্টিতে বাঁকা হাসে।নিজের মধ্যে থাকা হাজারো জটিল প্রশ্নের সমাধান সে এখনো করতে পারেনি,তবে যতটুকু জেনেছে তাতে সমাধান বের করতে যে তাকে অনেকের মুখোশ টেনে খুলতে হবে তা ভালো করেই বুঝতে পারছে।
ঘরের দরজাটা সশব্দে খোলে সাহিল।আজহার পাটোয়ারি কেঁপে ওঠেন।নিজের মস্তিষ্কে ওঠে ঝড়টাকে নিবারণের চিন্তায় মশগুল ছিলেন বিধায় দরজা খোলার শব্দে তিনি অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিলেন।
-“ভয় পাওয়ার অনেক বিষয় সামনে পড়ে আছে বাবা।দরজা খোলার সামান্য শব্দে ভয় পেয় না।”
বলেই বেরিয়ে যায় সাহিল।
আজহার পাটোয়ারি নিজের পাঞ্জাবীর পকেট থেকে ফোনটা বের করে কাউকে ফোন করেন।
-“দেখো,আমার মনে হয় সাহিল কিছু জানতে পেরেছে।কেঁচো খুঁড়টে যদি কেউটে বেরিয়ে পড়ে তাহলে পরিণাম ভয়াবহ হবে।সাহিল এখন সঞ্চারী বলতে উন্মাদ;এমনকি ও আমার কথাও শুনছে না।তোয়াক্কা ই করছে না।”
ফোনের ওপাশের ব্যক্তির কথা শোনা গেলো না।আজহার পাটোয়ারি ফের বলে উঠলেন,
-“আমাদের দেখা করা দরকার।ফ্লোরিশে আজ সন্ধ্যার পর আমি আসবো;তোমরা সময় মতো চলে এসো।ওয়াসির শিকদার আর সাহিলের মধ্যকার এই দ্বন্দ যত এগোবে ততই অতীতের সমস্ত রহস্য বেরিয়ে আসবে।”
………………
সারা দিন পেরিয়ে এখন সন্ধ্যা নেমেছে।সাহিলের ঘরের সাথে এটাচড বেলকনি টায় দাঁড়িয়ে আছে সঞ্চারী।পড়নে লাল খয়েরী রঙা তাঁতের শাড়ি।মুখে নেই কোনো প্রসাধনী, শুধু হাতে কাল বিয়ের সময় দেওয়া বালা জোড়া আছে।সন্ধ্যার স্নিগ্ধ বাতাসে সঞ্চারীর চুলগুলো উড়ছে।সঞ্চারী চোখজোড়া বন্ধ করে লম্বা একটা শ্বাস নিলো।
সাহিল সেই সকালে সঞ্চারীকে ঘরটায় আটকে রেখে গেছে।মাঝে সাম্মী পাটোয়ারি মেইডদের দিয়ে খাবার পাঠিয়ে দিয়েছেন সঞ্চারীর জন্য।সঞ্চারী ঘরে বসেই চুপচাপ খেয়ে নিয়েছে।সাহিল ফিরলে তাকে কি কি প্রশ্ন করবে ভেবে রেখেছে সঞ্চারী।
কাঁধের উপর কারো তপ্ত নিঃস্বাস পেয়ে চোখ মেলে তাকায় সঞ্চারী;ঘুরে দাঁড়াতে চাইলে শক্তপোক্ত হাতের বন্ধনে আটকা পড়ে যায় সে।চেনা পারফিউমের স্মেলে বুঝে নেয় পেছনে থাকা মানুষটা কে!
সঞ্চারী গাল ফুলিয়ে বলে ওঠে,
-“এই আপনার ভালোবাসার বিয়ের নমুনা?একটাদিনও হয়নি বিয়ে করেছেন;অথচ আজ সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি নতুন বউকে ঘরে একা ফেলে রেখে গেছেন।খেলাম কি না, কি করছি, আদৌ বেঁচে আছি কিনা কিছুই খবর নিলেন না।”
চট করে সঞ্চারীর কাঁধ থেকে মাথা তোলে সাহিল।গম্ভীর কণ্ঠে বলে ওঠে,
-“মা কে বলে গেছিলাম ঘরে খাবার দিতে,দেয়নি?আমি দেখছি ওয়েট।”
সাহিল সঞ্চারীকে ছেড়ে দিতে নিলেই সঞ্চারী সাহিলের বাহু আকড়ে ধরে।
-“আরে আরে,খাবার খেয়েছি আমি।ঘরে খাবার দিয়ে গেছিলো।আপনি এমন চট করেই এ্যাকশন সিনে চলে যান কেন?আগে তো মানুষ ট্রেইলার দেখে তারপর না সিনেমা!”
সাহিল সঞ্চারীর কথায় বিন্দুমাত্র পাত্তা না দিয়ে পাঁজালোকে তুলে নেয় সঞ্চারীকে।
-“সারাদিন আমার হাইলাইট করা প্যারাগুলো পড়েছো না বউ?চলো পরীক্ষা নেই।”
-“কিসের পরীক্ষা?আমি কোনো পরীক্ষা দেব না।আপনি নামান আমায়,রাগ করেছি আমি।এক্ষুণি নেমে যাবো, নামান বলছি।”
-“বাচ্চামো করো না বউ,তুমি এখন আর ছোট নেই।সাহিল পাটোয়ারির বউ তুমি,গ্রো আপ নিরুপমা।আর বউয়ের রাগ বেডে ভাঙ্গাতে হয় সাথে বেড ও ভাঙ্গতে হয়।”
সঞ্চারী এবার লজ্জা পায় সাহিলের কথায়।লোকটা এতো নির্লজ্জ!
-“আমি বেজায় নির্লজ্জ টাইপের লোক।ডাবল মিনিং কথাবার্তা বলেন।”
-“আজ থেকে তুমিও বলবে বউ।বই পড়েছো না?লেটস রিক্রিয়েট দোস ডার্টি সিন বউ।”
বলেই সঞ্চারীকে নিয়ে বেডরুমের দিকে হাঁটা দেয় সাহিল।রুমে গিয়ে খাটের উপর ধপাস করে ফেলে দেয় সঞ্চারীকে।বেলকনির দরজাটা আটকে ঘরের সমস্ত পর্দা মেলে দিয়ে সঞ্চারীর উপর ঝুকে আসে সাহিল।
-“Twist Me বইটা পড়েছো না বউ?চলো দেখি আজকে কতটুকু টুইস্ট তুমি নিতে পারো।”
চলবে…
#আমার_সঞ্চারী
পর্ব-১০
#শ্রীমতি_প্রজ্ঞা_মঞ্জরী (লেখিকা)
-“Twist Me বইটা পড়েছো না বউ?চলো দেখি আজকে কতটুকু টুইস্ট তুমি নিতে পারো।”
কথাটুকু বলেই সাহিল সঞ্চারীর দিকে আরেকটু ঝুঁকে যায়।সাহিলের উষ্ণ নিঃশ্বাস সঞ্চারীর মুখের উপর আছড়ে পড়ছে;সঞ্চারী এর সামনে বেশিক্ষণ টিকতে না পেরে চোখজোড়া বন্ধ করে নেয় ধপ করে।
সাহিল নিজের ঠোঁট কামড়ে নিঃশব্দে হেসে ওঠে।ফুঁ দিয়ে সঞ্চারীর মুখের উপরে পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দেয় সযত্নে।সঞ্চারী ঈষৎ কেঁপে ওঠে;চোখ মুখ আরো কিছুটা কুঁচকে নেয়।
কয়েক মূহুর্ত অতিবাহিত হলেও সাহিলের ছোঁয়া না পেয়ে আস্তে আস্তে চোখজোড়া খুলে সঞ্চারী।চোখের সামনে দৃশ্যমান হয় তার ব্যক্তিগত সুদর্শন পুরুষটি।সাহিলকে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশিই ফর্সা লাগে সঞ্চারীর কাছে।মসৃণ গালটায় খোঁচাখোঁচা দাড়ি!সঞ্চারী মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে।
সঞ্চারীর সব থেকে ভালোলাগে সাহিলের ধূসর বর্ণের চোখজোড়া।এমন চোখ সঞ্চারী খুব কমই দেখেছ,তার ধারণা খুব কম মানুষেরই এমন সুন্দর দু’খানা চোখ আছে।যদি থাকেও তবুও সাহিলকে মাত দিতে পারবেনা তারা।এই সুন্দর দু’খানা চোখ শুধুই সাহিলকে মানায়।এই ধূসর মণিজোড়ার সৌন্দর্য সাহিলের কারণেই বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দৃঢ় বিশ্বাস সঞ্চারীর।
সঞ্চারী নিজের ডানহাতটা সাহিলের গালে ঠেকায়,তার চোখে চোখ রেখে বলে ওঠে,
-“আপনার চোখজোড়া এতো সুন্দর কেন সাহিল?জানেন?এমন চোখের মালিক আমি আর দেখিনি।লোকে বলে নীল রঙা চোখের মণি নাকি সবথেকে আকর্ষণীয় কিন্তু ওরা ভুল বলে;ওরা আমার সাহিল পাটোয়ারির ধূসর চোখজোড়া দেখেইনি।দেখলে নিঃসন্দেহে এই চোখের মোহে পড়ে যেত।”
সঞ্চারীর কথায় সাহিল হাসে।তার মোলায়েম হাতের উপর নিজের শক্তপোক্ত হাতখানা দিয়ে কোমল কণ্ঠে বলে ওঠে,
-“তুমি ছাড়া আমি কি হতো নিরুপমা?এমন নিখুঁত করে কে আমায় অবলোকন করতো?কে আমার এই ধূসর চোখজোড়ার হয়ে সকলের ধারণার বিরুদ্ধাচার করতো?কে আমায় এভাবে ভালোবাসতো?এতো উন্মাত্ততা আমি কোথায় পেতাম বলতে পারো?আমি সাহিল পাটোয়ারি পৃথিবীর সবথেকে অভাগা পুরুষের তকমা হাটিয়ে কি করে এক পবিত্র নারীর প্রণয় পুরুষ হয়ে উঠলাম বলো দেখি?”
সঞ্চারী থমকায়!সে কি আসলেই সাহিলকে নিজের ভালোবাসার পরিধি বোঝাতে সক্ষম হয়েছে?নাহ,তার সাহিলের প্রতি ভালোবাসা,সাহিলের প্রতি অবসেসন, পাগলামো এগুলোর পুরোটা সে এখনো সাহিলের কাছে খুলে বলতেই পারেনি।সাহিল এখনো জানেনা তার নিরুপমা তার জন্য কতোটা দূর অবধি যেতে পারে,তার ভালোবাসার জন্য কি কি গড়তে পারে আর কি কি ধ্বংস করতে পারে।
সঞ্চারী আর কোনো উত্তর করেনা।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সাহিলের দিকে,চোখজোড়া যেন জনম জনমের তৃষ্ণা মেটাতে ব্যস্ত।
সাহিল হুট করেই সঞ্চারীর উপর থেকে উঠে পাশে শুয়ে পড়ে,সঞ্চারীকে নিজের বুকের মধ্যে টেনে নেয় আলগোছে।দু’হাতে সঞ্চারীকে আঁকড়ে ধরে চোখজোড়া বন্ধ করে নেয়।
-“তোমার বয়সটা নিতান্তই কম নিরুপমা।একটা পিচ্চি বউ বিয়ে করে এনেছি আমি!দেখো বাসরটাও করতে পারলাম না,একটু কড়া চুমু খেলেই বউটা কেমন নেতিয়ে পড়ে!বড় হয়ে যাও বউ,জলদি করে বড় হয়ে যাও।এভাবে রোজ রোজ বয়সের দোহাই দিয়ে নিজেকে আটকে রাখতে পারবো না আমি।আঠাশ বছর ধরে তৃষ্ণার্ত,ক্ষুধার্ত বাঘের কবলে পড়েছো তুমি,এই ঘাস-পাতা দিয়ে কতদিন নিজেকে বুঝিয়ে রাখবো বলতে পারো?”
সঞ্চারী অবাক হয়।মাথাটা সাহিলের বুক থেকে একটু উঠিয়ে বলে ওঠে,
-“ঘাস-পাতা মানে?”
-“এইযে এই শুকনো শুকনো চুমু,একটু আধটু ছোঁয়া!এতে আমার মন ভরেনা বউ।এগুলো আমার কাছে ঘাস-পাতা ই মনে হয়।”
সঞ্চারী আর কোনো কথা খুঁজে পায়না,এই লোকের এমন উদ্ভট লজিকের সামনে কিছুই দাঁড়াতে পারেনা।
সাহিল সঞ্চারীর কপালে গাঢ় চুমু দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,
-“একটু ঘুমাই বউ?ভীষণ ক্লান্ত লাগছে।তুমিও ঘুমাও, নাহলে তোমার সুদর্শন বরকে দেখতে থাকো।”
সঞ্চারী কিছু না বলে আরেকটু শক্ত করে সাহিলকে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়।চোখ বন্ধ করে পরিচিত পারফিউমের গন্ধটা নিতে থাকে বুক ভরে।
……………………………..
বিশাল স্টেডিয়ামের মাঠে চুল পরিমাণ স্থান ফাঁকা নেই।লোকের কোলাহল,উৎসাহ,উদ্দীপনাময় ধ্বনি মাঠের প্রতিটা আনাচে-কানাচে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
হঠাৎ স্টেডিয়ামের সব লাইট বন্ধ হয়ে গেল!শুধু স্টেজের উপর প্রতিফলিত হলো নীল রঙা স্পট-লাইট।স্টেজে গিটার হাতে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে ভীর।পড়নে ব্ল্যাক জিন্স প্যান্ট,কালো টি-শার্ট উপরে ব্ল্যাক লেদার জ্যাকেট।এলোমেলো হয়ে থাকা চুলগুলো স্টেজের চারপাশে ঘূর্ণায়মান বৈদ্যুতিক পাখার বাতাসে উড়ছে এদিক ওদিক।সকালের ক্ষত বিক্ষত সেই হাতটা সাদা ব্যান্ডেজে মোড়ানো।
ভীর গিটারে টুংটাং সুর তুললে তার পিছনে থাকা বাকিরাও নিজেদের ইন্সট্রুমেন্ট গুলোতে সুরের ঝঙ্কার তুললো।মাথাটা উঁচু করে উচ্ছাসিত দর্শকের দিকে দৃষ্টি নিবন্ধিত রেখে ভীর গাইতে শুরু করলো,
Wo o o o…Wo o o o…
Wo o o o…Wo o o o…
Aasaan nahi yahaan
Aashiq ho jaana
Palkon pe kaanton ko sajaana
Aashiq ko milti hai
Gham ki saugaatein
Sabko naa milta yeh khajaana
Wo o o o…Wo o o o…
Wo o o o…Wo o o o…
Baaton se aage
Waadon se aage
Dekho zara tum kabhi ho o..
Yeh to hai shola
Yeh hai chingari
Yeh hai jawaag bhi
Wo o o o…Wo o o o…
Wo o o o…Wo o o o…
Hmm Jismon ke peechhe
Bhaage ho phirte
Utro kabhi rooh mein ho o..
Hota kya aashiq
Kya aashiqui hai
Hogi khabar tab tumhein
Wo o o o…Wo o o o…
Wo o o o…Wo o o o…
গান শেষ হতেই দর্শকদের করতালি আর উচ্ছাসিত বুলিতে মুখরিত হয়ে উঠলো পুরো স্টেডিয়াম।ভীর তখনো চোখজোড়া বন্ধ করে আছে।ধীরে ধীরে চোখ খুলে সামনে তাকায় ভীর,এতো জনপ্রিয়তা,এতো মানুষ, এতো আলো সবকিছুর মাঝেও যেন কিছুই নেই!
ভীরের ঠোঁটে তাচ্ছিল্য ভরা হাসি দেখা গেল।মনে মনে বলে উঠলো, -“দেখ প্রাণ তুই ছাড়া এতো আয়োজন ও বৃথা মনে হচ্ছে!তুই ছাড়া পুরোটাই বৃথা রে,বিষাক্ত লাগে সব।”
শো শেষ করে ভীর হোটেলে ফিরলো,ক্লান্ত শরীরটা নিয়ে বসে পড়লো সোফায়।চোখজোড়া অসম্ভব জ্বালা করছে ওর।ফোনে ম্যাসেজের নোটিফিকেশন আসতেই ফোনটা হাতে নেয় ভীর।ম্যাসেজটা পড়তেই চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে ওর।ফোনটা পকেটে পুরে বেরিয়ে যায় হোটেলের রুম থেকে;চেক-আউট করে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
শুনশান হাইওয়ে,একটা দু’টো গাড়ির আনাগোনা দেখা যাচ্ছে মাঝে।ভীর তীব্র গতিতে গাড়ি নিয়ে ছুটে চলেছে।এমন সময় কোত্থেকে একটা মেয়ে দৌঁড়ে এলো ভীরের গাড়ির সামনে।স্টেয়ারিং টা ঘুরিয়ে ডান দিকে নিতে গেলে অন্য একটা গাড়ির সাথে সজোরে ধাক্কা খেয়ে দু’পাক ঘুরে রাস্তার পাশের একটা গাছের সাথে বাড়ি খায় ভীরের গাড়িটা।মূহুর্তেই বিলাসবহুল গাড়িটার সামনের ইঞ্জিনের অংশসহ গ্লাসটা দুমড়ে মুচড়ে যায়।গাড়ির ভাঙ্গা জানালা দিয়ে বেরিয়ে আসা পুরুষালী হাতে অনবরত রক্ত ঝরতে দেখা যায়।
…………………..
নিশুতি রাত,জান্নাতি নিজের কাজগুলো শেষ করে ঘুমোতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।আগামীকাল ইউনিভার্সিটি যাবে সে;অনেকদিন বন্ধ গেছে।জান্নাতি বেড সাইড ল্যাম্পটা অফ করতেই তার ফোনটা বেজে উঠলো।আননোন নাম্বার দেখে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে ঠাকলো কিছুক্ষণ,ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভ করতেই,
“Ranjha ho gaye, hum fanaa ho gayeI
Aise tu muskurayi maza aa gaya
Mere rashke qamar tune pehli nazar
Jab nazar se milayi maza aa gaya”
পুরুষালী কণ্ঠে এমন গান শুনে হা হয়ে যায় জান্নাতি।কিছু মূহুর্তের জন্য সব তালগোল পাঁকিয়ে গেছে তার।কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওপাশ থেকে আবার আওয়াজ আসে,
-“ঘুমিয়ে পড়ুন ম্যাডাম,সময় হলে ধরা দিব নিজের থেকেই।গুড নাইট।”
জান্নাতি এবার কণ্ঠের মালিককে চিনতে পারে।নিজেকে বাস্তব জগতে টেনে নামিয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে ওঠে,
-“উড়াউড়ির পাশাপাশি মিস্টার তেলাপোকা দেখছি ইভটিজিং ও করে।দেব নাকি ইভটিজিং এর মামলায় কয়েঘানায় পুরে?”
-“আপনার হৃদয়ের কয়েদখানার বন্দিত্ব আমি আজীবন মানতে রাজি আছি জানু।যাস্ট একবার বলেই দেখেন, দুনিয়া ইধার ছে উধার হয়ে যাবে কিন্তু এই নীদ্র আপনার হৃদয়ের কয়েদখানার বন্দী হিসেবেই থাকবে।”
জান্নাতি থমকায়;হৃদযন্ত্রের ধুকপুকুনি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।নিজের হৃদযন্ত্রের এমন মীরজাফর গিরি সহ্য হলো না জান্নাতির,এভাবে কম্পনের মতো ঘটনা কি ঘটেছে?এভাবে কাঁপছে কেন?
-“জানু কি হ্যাঁ?একদম আজেবাজে নামে ডাকবেন না।”
-“জানু ইজ শর্ট ফর্ম অফ জান্নাতি।ইয়্যু নো না?”
-“এই রাত-বিরাতে ফাজলামো আমার একদম ভালোলাগছেনা মিস্টার তেলাপোকা।জাস্ট গো টু হেল।”
-“কামিং টু ইয়্যুর হার্ট।গুড নাইট সুইটি,সুইট ড্রিমস।” বলেই কলটা কেটে দিলো নীদ্র।
জান্নাতি রেগে চেহারা লাল করে ফেলেছে।ফোনটা ঠাস করে টেবিলের উপর রেখে কাঁথা মুড়ি দিয় শুয়ে পড়লো সে।
অন্যদিকে নীদ্র নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসছে।এই মূহুর্তে সে জান্নাতিদের বাড়ির সামনেই আছে।নিজের প্রিয় অডি গাড়ির ড্রাইভিং সিটে হেলান স্টেয়ারিং এর উপর হাত রেখে মৃদু হাসলো নীদ্র।
-“আমার হৃদয়ে এমন উথালপাতাল ঢেউ তুলে দেওয়ার জন্য আপনাকে যে নিজের বন্দিনী করতেই হচ্ছে মিস জান্নাতি!সেদিন হসপিটালে প্রথমবার ওই টেনশনে পাংশুটে মুখটা দেখেই বুকের ভিতর ঝড় উঠেছিলো।নিজের ভাইয়ের হবু বউরের উপর এহেন অনুভূতি আনার অপরাধে নিজেকে বেশ ছোট মনে হয়েছিলো।কিন্তু সাহিল আর সঞ্চারীর বিয়ের পর আর সেই অপরাধবোধ নেই।ইউসুফ তালুকদার নীদ্রর মিসেস হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকুন মিস জান্নাতি মৃধা।”
বলেই গাড়ি স্টার্ট দিয়ে রাস্তার ধূলিকণা উড়িয়ে চলে গেলো নীদ্র।
…………………..
ফ্লোরিশের বারো তলার ১২০১ নম্বর রুমে বসে আছেন আজহার পাটোয়ারি। সামনেই দু’জন পুরুষলোক বসে আছে।একজনের বয়স ২৫ থেকে ৩০ এর মধ্যে, অন্যজনের বয়স আজহার পাটোয়ারির বয়সি।তাদের মাঝে রাখা কাঁচের টেবিলটায় বিভিন্ন ব্রান্ডের বিদেশি এলকোহল।আজহার পাটোয়ারি বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছেন আর এলকোহল এর গ্লাসে চুমুক দিচ্ছেন।এমনিতে তিনি অতিরিক্ত ড্রিংক না করলেও টেনশনে থাকলে ড্রিংক করার মাত্রাটা বেড়ে যায়।শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরটার ভিতরেও আজহার পাটোয়ারির কপালে সূক্ষ্ম ঘামের রেখা বিদ্যমান।
-“আজহার,মদটা কম গেলো মিয়াঁ!স্যার আসার আগেই টাল্লি হয়ে যাবা তো!।”
আজহার পাটোয়ারি থামেনা,বরং গ্লাসে থাকা বাকি মদটুকু পুরোটা গলায় ঢেলে দিয়ে সশব্দে গ্লাসটা টেবিলের উপর রাখে।
-“টেনশন হচ্ছে স্বপন ভাই।সাহিলকে আপনারা চিনেন না, ও একবার যখন বলেছে যে ও সবটা খুঁজে বের করবে তখন ওকে আটকানো অসম্ভব।শেষে না অন্য কোনো রহস্য বেরিয়ে আসে!”
স্বপন সাহার কপালে তিনটে ভাজ দেখা গেলো।সে তার পাশে বসা যুবকটার দিকে চোখ তুলে তাকালো।ছেলেটার মুখের অভিব্যক্তি ঠিক নির্ণয় করতে পারলেন না তিনি।এখানে এই ছেলে যতবার এসেছে এমন নিজের মতো চুপচাপ বসে থাকে।এলকোহল ছুঁয়েও দেখেনা এমনকি যেখানে আজহার পাটোয়ারি আর স্বপন সাহার মতো পঞ্চাশোর্ধ লোকেরা নারী দেহের নেশায় বুদ হয়ে ফ্লোরিশের রুমগুলোতে রাত কাটায়! নিজেদের হাঁটুর বয়সী মেয়েদের নিজেদের বেড পার্টনার বানিয়ে শরীরের ক্ষুধা মেটায় সেখানে এই ছেলেকে কোনো নারী ছুঁয়ে দেখারও সাহস পায়না।
স্বপন সাহার এখনো মনে আছে সেই রাতের কথা,যেদিন এই ছেলেটাকে প্রথম তাদের এই গোপন মিটিং এ দেখা দিয়েছিলো।ওনাদের রুমে এলকোহল সার্ভ করতে আসা মেয়েগুলো হাঁটুর অনেক উপরে উঠে আসা মিনি স্কার্ট আর ক্রপটপ পড়ে নিজেদের শরীরের আকর্ষণীয় অথচ গোপন অঙ্গগুলো এমন পঞ্চাশোর্ধ লোকেদের দেখিয়ে তাদের সিডিউস করতে ব্যস্ত ছিলো।আজহার পাটোয়ারি বা স্বপন সাহা তখন নিজেদের লোলুপ দৃষ্টি দিয়েই মেয়েগুলোকে খুবলে খাচ্ছিলো।ইচ্ছে করেই মেয়েগুলোর শরীরের স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে কামুকতা পূর্ণ জঘন্য স্পর্শ দিতে ব্যস্ত ছিলো।এমন সময় একটা মেয়ে নতুন ছেলেটার হাত স্পর্শ করতে চাইলে সে ঝাটকা দিয়ে সরিয়ে দেয়।তবে মেয়েটা দমে যাবার পাত্রী নয়,সে আবারো ছেলেটাকে স্পর্শ করতে যায়।
পরপর চারটা গুলির আওয়াজে রুমে উপস্থিত সবাই ভীষণভাবে কেঁপে ওঠে।ওয়েট্রেস মেয়েগুলো দ্রুত নিজেদের সরিয়ে নেয় পুরুষগুলোর কাছ থেকে।স্বপন সাহা আর আজহার পাটোয়ারি হকচকিয়ে তাকান মেঝের দিকে।সেই ওয়েট্রেসের লাশ পড়ে আছে সেখানে।একটা গুলি তার কপাল বরাবর গিয়ে এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে গেছে।দু’টো চোখে বুলেট ঢুকে মাথার পিছন ফুঁড়ে বেরিয়ে গেছে।আর চতুর্থ বুলেটটা ঠিক কণ্ঠনালী বরাবর ফুঁটো করে বেরিয়ে গেছে।লাশের পাশ দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার শরীরে রক্তের ছিঁটে লেগে আছে;থরথরিয়ে কাঁপছে মেয়েটা।
সেদিনের পর থেকে ফ্লোরিশে যখন তারা মিটিং করে,মিটিং রুমে নারী ওয়েটারের প্রবেশ একদমই নিষিদ্ধ হয়ে গেছে।
-“এফ.এস?”
পরিচিত কণ্ঠেস্বর ভেসে আসতেই অতীত থেকে বেরিয়ে আসে স্বপন সাহা।চুপচাপ বসে থাকা ছেলেটা নিজের নাম শুনে পিছন ফিরে তাকায়।মধ্যবয়সী এক লোক আসে তাদের আসরে।কাঁচের টেবিলটার উপরে সাজিয়ে রাখা এলকোহল এর গ্লাস থেকে একটা গ্লাস তুলে নিয়ে আরাম করে বসে পড়ে সোফার উপর।
লোকটা তাদের বস;তাসরিক।এনার কথায়ই আজহার পাটোয়ারির মতো রাঘববোয়াল রা ওঠে আর বসে।
-“এফ.এস?আজও এভাবে মাস্ক পড়ে এসেছো?একটা দিন অন্তত আমাদের সামনে এসো,নিজেকে রিভেইল করো।”
এফ.এস কথা বলেনা।পেন আর পেপার নিয়ে কিছু একটা লিখে টেবিলের উপর রেখে দেয়।
তাসরিক কাগজটা উঠানোর আগেই স্বপন সাহা কাগজটা উঠিয়ে পড়তে শুরু করে,
-“আই হ্যাভ আ মিনিমাল স্ট্যান্ডার মিস্টার তাসরিক।হোপ ইয়্যু উইল আন্ডারস্ট্যান্ড এন্ড নেক্সট টাইম ইয়্যু ওন্ট পুল মাই নার্ভস সেইং দিস এগেইন।আই হ্যাভ সামথিং ইম্পরট্যান্ট টু ডু টুডেই।অলরেডি আমার আধাঘণ্টা আপনি নষ্ট করেছেন।টাইম ইজ মানি ইয়্যু নো!আপনাদের মিটিং এ আমার এসিসটেন্ট থাকবে।হোপ ইয়্যু গাইস উইল নট ওয়েস্ট হিজ টাইম এন্ড ডিসকাস অন সাম ভ্যালিড টপিক।”
এফ.এস বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।পড়নের স্যুটটা দু’হাতে একটা ঝাড়া দিয়ে ঠিক করে বেরিয়ে যায় রুম থেকে।
স্বপন সাহার চোখে যেন ক্রোধের আগুন দাবানলের ন্যায় ছড়িয়ে পড়ছে।সে ভীষণ রাগ নিয়ে টেবিলের উপর একটা থাপ্পড় মেরে বলে ওঠে,
-“দুইদিনের ছোকরা আমাদের ভ্যালিড আর ইনভ্যালিড এর জ্ঞান দিচ্ছে?ও জানে কি আন্ডারওয়ার্ল্ড সম্পর্কে?আপনার জন্য ওকে সহ্য করা লাগে তাসরিক ভাই নাহলে কবেই…”
-“তুমি জানো ও কে? ওর পরিচয় জানো স্বপন?হি ইজ এফ.এস লিডার অফ “ফিনিক্স গ্যাং।” আন্ডারওয়ার্ল্ড এর বাদশাহ এই ছেলে!সমস্ত চোরাকারবারি,ড্রাগস,অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা সবকিছুই এর আন্ডারে চলে।ডু ইয়্যু হ্যাভ এনি ফা*ং আইডিয়া এবাউট “ফিনিক্স গ্যাং?” একটা ভুল আর এখানে আমরা সবাই ছাই হয়ে যাবো,অস্তিত্ব ও খুঁজে পাওয়া যাবেনা আমাদের।”
…………………….
মেঘের গর্জন আর বিদ্যুতের ঝলকানিতে ঘুমটা হালকা হয়ে যায় সঞ্চারীর।বাইরে ঝড়ো হাওয়া বইছে;ঘরের পর্দাগুলো বাতাসের তীব্রতায় উঁড়ছে।হঠাৎ পর্দার সাথে বেঁধে ওয়্যারড্রবের উপরে রাখা কাঁচের ফ্লাওয়ার ভাসটা পড়ে খানখান হয়ে যায়।
আচানাক এমন শব্দে ধরফরিয়ে উঠে সঞ্চারী।পাশে হাতড়িয়ে টেবিল ল্যাম্পের সুইচ অন করে অন্ধকার ঘরটাকে আলোকিত করে।পাশ ফিরে দেখে সাহিল ঘরে নেই,ঘড়ির কাঁটায় তখন অনেক রাত,প্রায় দেড়টা বাজে।এমন সময় সাহিলের অনুপস্থিতি সঞ্চারীর কপালে চিন্তার ভাজ ফেললো।সে বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুম চেক করলো কিন্তু ওয়াশরুমের দরজা খোলা পেয়ে বুঝলো সাহিল এখানে নেই।ঘরের দরজা খুলে বাইরে চেক করতে গেলে দেখে দরজা লক করা।
-“আমাকে এতো রাতে লক করে রেখে কোথায় গেলেন উনি?”
এমন সময় আকাশ কাঁপিয়ে ভারী বর্ষণ শুরু হয়।জানালা দিয়ে বৃষ্টির হেচলা আসছিলো দেখে সঞ্চারী জানালা গুলো আটকে দিতে চায়।কিন্তু বাইরের এমন নৈসর্গিকী সৌন্দর্য সঞ্চারীরকে মুগ্ধ করে,সে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখতে থাকে।দমকা হাওয়ায় বৃষ্টির পানি এসে সঞ্চারীর শাড়ির অর্ধেকটা ভিজিয়ে দিয়েছে ইতমধ্যেই।সঞ্চারী কিছু একটা ভেবে দৌঁড়ে কাবার্ডের কাছে যায়।সাহিল সেখানে আগে থেকেই সঞ্চারীর জন্য শাড়ি,থ্রি-পিস,ওয়ানপিস সহ মেয়েলী প্রয়োজনীয় সব জিনিস দিয়ে সাজিয়ে রেখেছে।
সঞ্চারী খোঁজাখুঁজি করে শিফর্ট জর্জেটের একটা পাতলা সাদা শাড়ি তার সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।একটু পরে শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে আসে সঞ্চারী।ড্রেসিংটেবলের সামনে গিয়ে চোখে গাঢ় করে কাজল দেয় সে,ঠোঁটে লাল টকটকে লিপস্টিক আর গলার দুটো পাতলা সোনালী রঙা চেইন জোড়া লাগিয়ে কোমর বন্ধনী হিসেবে পড়ে নেয়।
অত:পর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে সঞ্চারী।শাড়িটা বেশ পাতলা হওয়ায় শরীরের ভাজগুলো বেশ স্পষ্ট;সঞ্চারী নিজেকে দেখে লজ্জায় লাল হতে থাকে।মনে মনে ভাবে সাহিল অবশ্যই তাকে এই রূপে দেখলে ভীষণ অবাক হবে।
অন্যদিকে,
রুমের হিডেন ক্যামেরায় সঞ্চারীর কর্মকাণ্ড খুব নিখুঁত ভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলো সাহিল।স্ত্রীর এমন আবেদনময়ী রূপে পা থেকে মাথা অবধি শিউরে উঠলো তার।পুরুষালী স্বত্বা বারংবার নিজের অস্তিত্ব আর আধিপত্যের জানান দিয়ে সাহিলের হাল বেহাল করে তুললো।নিজেকে কিছুটা সংযত করে নিজের একপায়ের উপর অন্য পা তুলে চোয়াল শক্ত করে বলে উঠলো,
-“এভাবে পাগল করার ফন্দি এঁটেছ নিরুপমা?তোমার বয়সের দোহায় দিয়ে একটু আগেই নিজেকে সংযত করলাম কিন্তু এখন দেখো এমন হটি-নটি দৃশ্য দেখিয়ে আমার অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে তুলছো তুমি।নিজেকে এখন পা পেঁচিয়ে কনট্রোল করতে হচ্ছে!আজ তোমার খবর আছে বউ,আগামী কয়েকদিন নিজের শরীরের বেহাল দশা বানানোর জন্য প্রস্তুত থাকো।”
চলবে…