Arranged Marraige part-25+26

0
653

#Ayesha
#ArrangedMarraige

পর্ব-25+26

আমি লাইট অফ করে ডিপ লাইট জ্বালিয়ে দিলাম।। ও আমার মাথাটা ওর বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে গেলো আমিও ওর বুকে মাথা রেখে আল্লাহ কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া আদায় করছি।।

সকাল 7টায় ঘুম ভাঙলো, আমি লাগেজ থেকে একটা গুলাপি শাড়ি বের করে শাওয়ারে চলে গেলাম।। শাওয়ার শেষে শাড়ি পরে আমি ওর পাশে বসলাম কি মায়া মুখ করে ঘুমাচ্ছে।। ওর মুখ টা ভালো করে খেয়াল করলাম, না উজ্জ্বল শ্যামলা ও বলা যায়না ছেলে ফর্সাই ছিল রোদে পুড়ে হয়তবা রং টা কালো হয়ে গেছে।। আমি ওর গালে হাত বুলিয়ে নিজের অজান্তেই কখন ওর বাম গালে চুমু দিয়ে দিলাম খেয়ালেই করিনি, ভাগ্যিস ও ঘুমে না হয় এই নিয়ে হৈ চৈ শুরু করে দিত।।

আমি চুল শুকাতে ছাদে চলে গেলাম।। টাওয়াল টা তারের মধ্যে দিয়ে আমি রেলিং ধরে তার সেই প্রথমদিন দাড়ানোর মত দাড়ানোর চেষ্টা করছি কিন্ত হচ্ছে না। হাত টা আর একটু ভাঁজ হলে, পা গুলো আর একটু লম্বা হলেই হয়ে যেত।।

বসে থাকতে থাকতে সাড়ে আটটা বেজে গেল আধা ঘন্টা ছাদে কাটিয়ে দিলাম।। যাই দেখি উনি উঠছেন কি না,

আমি কিচেনে যেয়ে দেখি মা চা চুলায় বসিয়ে রেখেছে আমি একটা ট্রে নিয়ে কাপ প্লেট নিয়ে চা নিয়ে ওর রুমে গেলাম।।

বাহ এ কি অবস্থা আমরা রুমের?

আমার সব বোন গুলো বান্ধুবী গুলো ওকে ঘিরে বসে আছে, ও বেডের সাথে হেলান দেয়া বাকিরা ওর সামনে গোল হয়ে বসেছে।। কত বড় সাহস আমি কখনো আমার কোনো কিছুতে হাত দিতে দেইনা কেউকে, আর ওরা আমার রুমে এসে আমার বেডে বসে আমার জামাইকে খুঁচাচ্ছে, কত্ত বড় সাহস

আমি চা এর কাপ টা ওর হাতে দিলাম।।

ও মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে থ্যাঙ্কু বলল, আবার ওদের সাথে আড্ডায় যোগ দিলো।। আমি জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছি ও কি বুঝেনা? থাক বুঝা লাগবে না শালীরা কতদিন তার দিন রঙিন রাখে দেখে নিব, এক মাঘে শীত যায়না

আমি মায়ের কাছে চলে গেলাম, মার সাথে হাতে হাতে কাজ করছি।। মা নাস্তা রেডি করে বললো ফাহাদের সব বন্ধুদের ডেকে আনতে আমি খাদিজা কে দিয়ে রনি ভাই দের বাড়ি পাঠালাম।। ওরা সবাই খেতে বসেছে, সবাই নানা রকম প্রশংসা করছে, বলছে পরের বার আসলে আমার হাতের রান্না খাবে।। আমি ও হেসে হেসে বললাম আমার কোনো অসুবিধে নেই। ওদের প্লেটে খাবার দিলাম।। সবাই আয়েশ করেই খাচ্ছে।। আমি ওদের খাবার দিয়ে ড্রয়িং রুমে যেয়ে টিভি দেখছি আর বোলে করে কিছু চিপস পপকর্ন নিয়ে খাচ্ছি।। মিলি 2বার ডেকে গেল ফাহাদ নাকি আমায় ডাকছে আমি যাইনি। থাক ওদের সাথে আমাকে কি দরকার যাবো না আমি।। আমি টিভি অফ করে ছাদে চলে গেলাম।। রিলেং ধরে অনেকক্ষন দাড়িয়ে থাকার পর কাপড় গুলো উল্টিয়ে দিলাম।। নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়াবো তখনই মনে হলো আমি কেন যাবো? নিজের ঘরে নিজেকেই মেহমান মনে হচ্ছে।। বাকিরা আমার ঘর ধকল করে বসে আছে।। বেহায়া বান্ধুবি, বোন গুলার আমার একটুও লাজ লজ্জা নেই, কেউ কি এইভাবে অন্যের জামাইকে নিয়ে বসে থাকে নাকি!!

আর ঐযে উনি, উনি হয়ত ভুলেই গেছে উনার একটা বউ আছে।। থাক আমিও যাবো না মনে করাতে

আমি পিছনের চুল গুলো সামনে এনে বেনুনী করছি, আনমনে এইসব ভাবছি।।

হটাৎ কেউ ঘাড়ে কিস করতে আমি ভয় পেয়ে তড়িঘড়ি করে পিছনে তাকালাম।। এসেছে এখন ঢং করতে। আমি উঠে চলে আসছিলাম ও আমার 2কাধে 2হাত ধরে বসিয়ে দিয়েছে।।

ফাহাদ: বউ আমার রাগ করেছে?
আমি: না, আমি রাগ করার কে?
ফাহাদ: বুঝতেই পারছি
আমি: আমার অনেক কাজ আছে যাচ্ছি
ফাহাদ: কোনো কাজ নেই, সব আমার থেকে পালানোর তাল বাহানা
আমি: আচ্ছা? আপনার কি মনে আছে আমার কথা?
ফাহাদ: আছে বলেই তো বউ এর টানে সুন্দরী শালী দের রেখে চলে আসছি
আমি: আসার কি দরকার ছিল? অর্ধেক দিনেই তো ওদের সাথে কাটিয়ে দিসেন বাকিটা বাকি রাখলেন কেন
ফাহাদ: ম্যাডাম মাত্র সাড়ে দশটা বাজে, এত হিংসা করলে হয়?
আমি: আপনি কি আমাকে হিংসুটে বলতে চাচ্ছেন?
ফাহাদ: ছি তওবা এইসব কি বলছ? আমার বউ তো উদার মনের মানুষ,, কি সুন্দর নিজের স্বামীকে কতগুলো মেয়ের হাতে রেখে চলে আসলো, তোমার জায়গায় অন্য বউ হলে তো আমার ঘাড় থেকে মুন্ডু আলাদা করে দিত।।

আমি বেশ বুঝতে পরছি সে খুব মজা নিচ্ছে।।

আমি: ঐরকম বউ এই আপনার জন্য দরকার ছিল।।
আমি উঠে প্রায় ছাদের দরজার কাছে চলে আসছি, ও এক প্রকার দৌড়ে এসে আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো

আমি: ছাড়েন কেউ দেখে নিবে
ফাহাদ: কি দেখবে জামাই তার বউকে আদর করছে?
আমি: অসভ্যতা করছেন
ফাহাদ: আমার মত ভুলা ভালা মানুষের উপর এত বড় অপবাদ না এইসব সহ্য করা যায়না আমি আজই চলে যাবো।। আর আসবো না তোমার কাছে দেখব একা একা কেমনে থাকো।। থাকতে তো দাম দিলে না

ও যাওয়ার কথা বলতেই আমার বুকটা ধুক করে উঠেছে, মনে হচ্ছে এখনি চলে যাচ্ছে, আমি বুঝতে পারছি চোখের কোণে পানি চলে আসছে

ও পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেই আমার গালে চুমু দিয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আমাকে ওর দিকে ফিরালো

ফাহাদ: আয়েশা
আমি: আমি আমার মুখটা একটু ডান পাশে ঘুরিয়ে ডান হাতে চোখের কোণে জমে থাকা পানিটা মুছে ফেললাম
ফাহাদ: তুমি এমন করলে কিভাবে হবে বল?
আমি: আপনি সত্যিই চলে যাবেন?
ফাহাদ: আজ না হয় কাল তো যেতেই হবে
আমি: ও
ফাহাদ: দেখ তুমি এমন করলে কিন্ত আমি কিন্ত আর আসবো না
আমি: হুমম
ফাহাদ: তোমার সামনে এক্সাম সোনা তাও আমি তোমাকে এক প্রকার জোর করেই বিয়ে করেছি, সবাই বলেছিল তোমার এক্সামের পর, কিন্ত আমার মনের সাথে লড়াই করে আমি পারিনি।। এখন যদি তোমার এক্সাম খারাপ হয়, তার জন্য আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।। তোমার এক্সাম এর পর এসে নিয়ে যেয়ে আমার কাছে অনেকদিন রাখব প্রমিজ
আমি: হুমম
ফাহাদ: কি হুমম? বললাম তো নিয়ে যাবো
আমি: আমার এক্সাম এখনও অনেকদিন বাকি
ফাহাদ: তো?
আমি: আপনি আর আসবেন না?
ফাহাদ: এইভাবে আপনি আপনি করলে কার জন্য আসবো?
আমি: বলেন না?
ফাহাদ: তুমি বলো
আমি: আসবেন
ফাহাদ: গাঁধী তুমি ডাকতে বলছি
আমি: পারবো না
ফাহাদ: আমাকে ছেড়ে পেন্টের পকেটে 2হাত ঢুকিয়ে সামনে হেঁটে হেঁটে বলছে,, তাহলে দেখি কি করা যায়? সামনে মাসে অনেক লম্বা সময় ছুটি, ভেবেছিলাম আসবো তোমায় দেখতে,, এখন যেহেতু তুমি চাও না তাহলে একটা টুর দিব কি বল?
আমি: না
ফাহাদ: না কি?
আমি: আমায় দেখতে আসবেন
ফাহাদ: মনে হচ্ছে পর পুরুষ কে বলছ, ভালো করে বললে ভেবে দেখতে পারি
আমি: আমায় দেখতে আসবা
ফাহাদ: কি বললা শুনি নাই
আমি: আমাকে দেখতে আসবে
ফাহাদ: আবার
আমি: আমাকে দেখতে আসবি
ফাহাদ: এইযে দজ্জালনি হয়ে গেছ এখনি
আমি: কি করবো বার বার বুঝেও না বুঝার ভান করলে
ফাহাদ: আমার সামনে দাড়িয়ে বললো আর যদি আপনি আপনি শুনি আর আসবো না, তোমাকেও নিব না
আমি: যাবনা আপনার সাথে
ফাহাদ: সত্যি?
আমি: না
ফাহাদ: নিচে চলো
আমি: হুমম চলেন
ফাহাদ: আবার আপনি
আমি: ওর গাল টেনে বললাম চলো

ও হেসে দিলো ও আমার কোমরে হাত দিয়ে সিড়ি থেকে নামছে।।

ও শাওয়ারে চলে গেল আমাকে বললো ওর ব্যাগ থেকে এস কালার প্যান্ট আর গ্রীন টিশার্ট বের করে রাখতে আমি সারা ব্যাগ তন্ন তন্ন করে খুঁজে কোনো গ্রীন টিশার্ট পেলাম না, 1টা শার্ট, আর 2টা ফুল স্লিপের ব্লু, ব্ল্যাক টিশার্ট বাকি প্যান্ট ছাড়া কিছুই দেখলাম না।।

ও ভিতর থেকে বলছে ওর ড্রেস গুলো দিতে, আমি শুধু প্যান্ট টা হাতে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলাম হটাৎ একটা দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় আসলো, আমি দৌড়ে বাবার রুম থেকে বাবার একটা লুঙ্গি এনে ওর হাতে ধরিয়ে দিলাম।। ওকে লুঙ্গি পরে দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না।। সব সময় আমাকে বোকা বানানো আজ তোমাকে বোকা বানাবো উকিলবাবু।।

শুরু হয়ে গেছে ভিতর থেকে চিৎকার

ফাহাদ: আয়েশা, আয়েশা, ওই আয়েশা এটা কি দিয়েছ? আমি লুঙ্গি পরতে পারিনা, তুমি প্লিজ প্যান্ট টা দাও
আমি: একদিন পরলে কিচ্ছু হবেনা আমিই তো, আমি কিছু মনে করব না
ফাহাদ: আমার ডায়লগ শিখে আমাকেই দাও, দাড়াও বের হই
আমি: আমিও তো এটাই চাই তাড়াতাড়ি বের হও তো
ফাহাদ: বাবু সোনা মনা কলিজা টুকরা বউ আমার দেখ আমি সত্যি কিন্ত লুঙ্গি সামলাতে পারিনা প্যান্ট টা দাও না প্লিজ
আমি: কোনো দেয়া দেয়ী নেই, নিজের কাজ নিজে কর, আমি পারবনা, লুঙ্গি সামলানো লাগবেনা রুমে এসে জাস্ট প্যান্ট টা পরে নিবে ব্যাস

কোনো শব্দ পাচ্ছি না হটাৎ চুপ হয়ে গেল, আমি পা টিপে টিপে ওয়াসরুমের দরজার কাছে যেতেই টাস করে দরজা খুলার আওয়াজ পেতেই আমি দৌড়ে কিছুটা দূরে দাড়িয়ে বুকে থু থু দিচ্ছি।।

পা টিপে টিপে বের হচ্ছে লুঙ্গিতে গিট্টু দেয়া তাও গিট্টু ধরে ধরে হাঁটছে, উকিল বাবু কে কেমন গ্রামের ছেলে ছেলে লাগছে, আচ্ছা লুঙ্গির নিচের অংশ টা যদি আবার কোমরে এনে বাঁধে তাহলে লুঙ্গি হাঁটুর উপর উঠে যাবে, আর লুঙ্গির উপর যদি একটা কোট পড়িয়ে দেই উফফ কি লাগবে, আরেকবার এই কাজ টা করা লাগবে।।

ও ধীর গতিতে আমার দিকে এগিয়ে আসছে আমি ওর প্যান্ট হাতে নিয়ে বেডের পাশে চলে গেছি, ও আমাকে ধরার চেষ্টা করছে আমি বেডের উপর, জানালায় পাশে, ড্রয়ারের কাছে দৌড়াচ্ছি পিছনে ও লুঙ্গি ধরে ধরে আমাকে ধরার চেষ্টা করছে,, আমি আলমারির কাছে যেতেই

ফাহাদ: আয়েশা একদম এখান থেকে সরবে না বলে দিলাম
আমি তাও এক পা বাড়িয়ে সরে দারালাম
ফাহাদ: দেখ না করেছি কিন্ত
আমি জায়গায় দাড়িয়ে আছি ও আমার পাশে এসে এক হাত আলমারির উপর রেখে অন্য হাত লুঙ্গি ধরে আছে

আমি হটাৎ ওর বুকের দিকে চোখ পড়তেই দেখি ওর বুকের পশম গুলোতে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে, আমি চোখ ঘুরিয়ে নিলাম। তাও চোখ গুলো বার ঐদিকে টানছে আমি অনেক কষ্টে নিজের চোখ সামলে রেখেছি।। এমন লুচ্ছি কি করে হচ্ছি ছি ছি।

ফাহাদ: এমন করলে কেন?
আমি: (আমি ওর দিকে তাকালাম দেখি চুল থেকে পানি পড়ছে, ভিজা চুলে ছেলেদের ও কম সুন্দর লাগেনা, সব ছেলেরা ভিজা চুলে কাক হয় না কিছু ছেলে বক ও হয়) ভালো করেছি
ফাহাদ: প্যান্ট টা দাও
আমি: দিবনা না
ফাহাদ: কিভাবে কায়দা করে নিতে হয় আমিও জানি
আমি: কিভাবে কায়দা করে তোমার থেকে বের হতে হবে আমিও জানি আমিও উকিলের বউ আয়েশা আনজুম (বলেই সামনে থাকা চুল গুলোকে ঢং করে ফু দিয়ে পিছনে নিয়ে গেলাম)

ও আমার এই ভাব দেখে কেমন দুষ্টুমি ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, ও এইবার 2টা হাত আলমারিতে রেখে আমাকে ওর হাত বন্ধী করে ফেলছে, ও আসতে আসতে আমার দিকে এগিয়ে আসছে

আমি: দেখ কাছে আসলেই কিন্ত লুঙ্গি ধরে টান দিব
ফাহাদ: আচ্ছা?

বাইরে থেকে খাদিজা ডাকছে, আমি ওকে সরিয়ে দরজা খুলে দিলাম, দরজা খুলতে খুলতে ওর মুখে প্যান্ট টা ওর মুখে ঢিল দিলাম

ফাহাদ: আমার বুকে আগুন জ্বলুক বাকি সব ভালো থাকুক, যখনই সিরিয়াস মুডে থাকি তখন বউ জ্বালাবে এখন বাইরে থেকে শালী। না এখানে আর বউ নিয়ে থাকা যাবেনা।।

আমি ওর কথা পাত্তা না দিয়ে চলে গেলাম

চলবে

#Ayesha
#ArrangedMarriage

পর্ব-26

ফাহাদ: আমার বুকে আগুন জ্বলুক বাকি সব ভালো থাকুক, যখনই সিরিয়াস মুডে থাকি তখন বউ জ্বালাবে এখন বাইরে থেকে শালী। না এখানে আর বউ নিয়ে থাকা যাবেনা।।

আমি ওর কথা পাত্তা না দিয়ে চলে গেলাম

ও বিকেল বেলা সবাইকে নিয়ে ঘুরতে বের হলো কম হলেও 15/20জন হবে সব আমার বোন বান্ধুবি।। ফাহাদ সারাক্ষণ আমার হাত ধরেই ছিল আমি অনেক ছাড়তে চাইলেও ও চায় নি।। সারাক্ষণ আগলে রেখেছে, আমি ওর কাছে কতটা ইম্পর্ট্যান্ট ও তা খুব ভালো করেই বুঝিয়ে দিয়েছে, আমি ওকে ছেড়ে গেলেও ও আমাকে ছেড়ে যাবেনা আমি চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারি। আমার এই জীবনে আর কিচ্ছু চাওয়ার নেই ওকে পাওয়া অবস্থায় আমার শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেও আক্ষেপ থাকবেনা। একটা মানুষ কে এই কতদিনে কি পরিমাণ ভালোবাসা যায় বিশ্বাস করা যায় ওর সাথে পরিচয় না হলে হয়তো জানতেই পারতাম না।।

রাতে সবাইকে ডিনার করিয়ে, বাসায় চাচী, মা, বাবার জন্য প্যাকেট করিয়ে ও নিজের দায়িত্ব সহকারেই নিয়ে গেল।।

আমি রুমে যেয়ে চেঞ্জ করে শুয়ে আছি, শীতের সময় ও কম্বলের ভেতর দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে

ফাহাদ: কি হয়েছে আমার বউ টার?
আমি: কই কিছুনা তো
ফাহাদ: এমন মন মরা হয়ে আছো যে?
আমি: ভাবছিলাম
ফাহাদ: কি
আমি: এত সব আমার ভাগ্যে ছিল? কারোর নজর লাগবেনা তো?
ফাহাদ: কি মনে হচ্ছে আমাকে অন্য কেউ নিয়ে যাবে?
আমি: ধুর এইসব না
ফাহাদ: তাহলে মরে যাবো?
আমি: ওর দিকে ঘুরে ওকে জড়িয়ে ধরলাম, এইসব কি কথা? আর কখনো যেন এইসব না শুনি বুঝেছ?? তুমি শুধু আমার, যদি কখনো আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবো সত্যি সত্যি ঘাড় থেকে মুন্ডু আলাদা করে দিবো।। তারপর নিজে মরে যাবো
ফাহাদ: বা বাবাহ এত ভালোবাসা?
আমি: হুমম অনেক ভালোবাসা,

কিছুক্ষন এইভাবে শুয়ে থাকার পর,
ফাহাদ আমার জামার ভিতর দিয়ে ওর হাত টা আমার আমার পেটে রাখলো

ফাহাদ: আর 1টা বছর পর এইখানে আমাদের বেবি থাকবে
আমি: ওর দিকে মাথা তুলে ব্রু কুচকে তাকালাম,
ফাহাদ: এইভাবে তাকিয়েছ কেন? দেখ আমি কিন্ত কোনো না শুনবো না, দেড় বছরের মধ্যে মিশন সাকসেস করবো।।

হটাৎ ওর মুখে বেবির কথা শুনে আমি লজ্জায় আমি মাটিতে মিশে যাচ্ছি

ফাহাদ: আচ্ছা কয়টা বেবি নিবে? আমরা 2ভাইবোন আর তোমরা 2বোন তারমানে মোট 4টা বাহ
আমি: কিইই? তোমার লজ্জা সরম নাই নাকি? মুখে যা আসছে তাই বলছ?
ফাহাদ: আরে আমার প্ল্যান টা শুন আগে, 2বারে 2টা বেবি হবে 3র্ড টাইম 2টা একসাথে
আমি: ওর মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরলাম, (না হয় ওর লাগাম ছাড়া কথা বার্তা বের হতেই থাকবে)

ফাহাদ: ও আমার হাত টা সরিয়ে বলবো,, আচ্ছা বেবি জানি কিভাবে হয়?
আমি: (আর সহ্য হচ্ছে না এইবার ওর গলা চেপে ধরলাম) যদি আর একটা কথা বের হয় এখানেই মেরে ফেলবো

ও ওর সেই বিখ্যাত হাসি দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো
ফাহাদ: তোমার হাতে তো সেই কবেই মরে গেছি, এত কেন মায়া তোমার মধ্যে? যেই মায়ায় পরে আমি আর উঠে দাড়াতে পারছি না, অফিস, বাসা, বাইরে ঘুরতে গেলে সব জায়গায় তুমি মাথার ভিতর বন বন কর।।
আমি: আবার পাম্প দিয়া শুরু করছে
ফাহাদ: কি করা বরের ভালোবাসা না বুঝলে!
আমি: সারাজীবন এইভাবেই আগলে রাখবে?
ফাহাদ: মরে গেলেও ছাড়বো না এইভাবেই জ্বালাবো
আমি: আবার? আমি আর কথা বলবো না
ফাহাদ: এত রাগ করলে হয় নাকি?
(বলেই ও আমার কপালে কপাল লাগিয়ে নাকে নাক ঘষছে আসতে করে আমার গলার মধ্যে ওর মুখ ঢুকিয়ে দিয়েছে, গলা ঘাড়ে চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিচ্ছে, হটাৎ ঘাড়ের পাশে জোড়ে একটা কামড় বসালো, আমি চুপ করে ওর ছোয়া গুলো উপলব্ধি করছি, গলার নিচে জামা টা একটু নিচে নামিয়ে বাম পাশে আর একটা কামড় দিল, আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে, ও আমার চোখের পানিটা ঠোঁট দিয়ে মুছে দিল)

ফাহাদ: ভালোবাসার চিহ্ন রেখে গেলাম।।

ফাহাদ: (ও আমার হাত উল্টো করে আমাকে ঘুরিয়ে জড়িয়ে ধরেছে) সকালে 8টায় ট্রেন মাথা টা টিপে দাও ঘুমাবো
আমি: ওর মাথার কাছে হালকা হেলান দিয়ে ওর কপাল টিপে দিচ্ছি, আর ও বাচ্চাদের মত আমার পেটের মধ্যে মাথা দিয়ে 2হাত কোমর জড়িয়ে ধরে আছে।।

সকালে উঠে দেখি ও আয়নার সামনে দাড়িয়ে শার্টের হাতার বোতাম লাগিয়ে একটা জিন্সের জ্যাকেট পরছে, আমাকে দেখে মুচকি হাসি দিয়ে গুড মর্নিং বললো

আমি: আমি উঠতে উঠতে বললাম ডাকেন নি কেন?
ফাহাদ: ঘুমিয়ে ছিলে তাই ডাকিনি,

একই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি 7টা বাজে, আমি: এখান থেকে রেল ক্রসিং যেতে 10মিনিট লাগে, তাহলে এত তারাতারি?
ফাহাদ: ট্রেন ধরতে হলে আগে আগেই যেতে হয়, এক দেরি করে আসবে না হয় তারাতারি আসবে, ওদের কিন্ত লস নেই লস কিন্ত আমাদেরই, আচ্ছা তুমি কি আমার সাথে রেল ক্রসিং পর্যন্ত যাবে?

আমি: তারাগুরি করে উঠে ড্রয়ার থেকে জামা বের করতে করতে বললাম,, ওদের সময়ের দাম আছে আমাদের সময়ের কি দাম নেই?
ফাহাদ: এখন যদি তুমি আমার কথার দাম দিতে চাও 5মিনিটে রেডি হও

আমি 5মিনিটের বদলে 10মিনিট টাইম নিয়ে ওয়াশরূম থেকে বের হলাম, উনি কম্বল বিছানা সব রেডি করে সুন্দর করে বিছানা বসে আছেন

আমি দৌড়ে টাওয়াল টা বিছানায় রেখে বুবুর রুমে চলে গেলাম

ও পিছন ডাকছে
ফাহাদ: আয়েশা অলরেডি অনেক দেরি করে ফেলেছ, প্লিজ তাড়াতাড়ি কর ট্রেন চলে আসবে
আমি: বুবু কে ডেকে তুলে বুবুর এস কালার হিজাব নিয়ে ওর রুম থেকে পরেই আমার রুমে এসে ওকে টেনে তুলে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে গেলাম।। সারা রাস্তা কেউ কথা বলিনি ও আমার হাত ধরেই রিকশা করে রেল ক্রসিং পর্যন্ত গিয়েছে, আমরা প্লাটফর্মে বসে আছি, ট্রেন এখন আসেনি ও দোকান থেকে পাউরুটির প্যাকেট, কলা আর পানি কিনে এনেছে

ফাহাদ: আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো খাও
আমি: আমার সকালে খেতে ইচ্ছে করেনা আমি বাসায় যেয়ে খেয়ে নিবো
ফাহাদ: আমি খুব ভালো করেই জানি তুমি বাসায় যেয়ে দরজা বন্ধ করে চুপ চাপ শুয়ে থেকে 2দিনের ঘটনা গুলো চিন্তা করবে, তাই আমি তোমাকে খাইয়ে রেখে যেতে চাই।। (ও নিজ হাতেই প্যাকেট ছিড়ে কলা থেকে খোসা আলাদা করে আমার মুখের সামনে ধরলো আমিও ওর হাত ধরে খেয়ে নিলাম, 4টা রুটি ও জোড় করেই খাওয়ালো, বাকি গুলো প্যাকেটে করে আমাকে দিয়ে দিলো)
আমি: এইগুলা তোমার সাথে রাখো রাস্তায় খেয়ো
ফাহাদ: আমি রাস্তায় কিছু খেতে পারিনা

আমি আর জোর করলাম না।। ও আমার বাম তুলে বাম হাত টায় একটা চুমু দিলো আলতো করে জড়িয়ে ধরে আবার সাথে সাথেই ছেড়ে দিল, আমার কপালে কিস করলো, ও একটা ছোট খামের মত কিছু দিল, বললো বাসায় যাওয়ার আগে যেনো না খুলি, আমিও কিছু না বলে আমার পার্স এ রেখে দিলাম।। ও আমার জামায় থাকা 2টা পার্ল খুলে নিল ওর পকেটে রেখে দিল
আমি: পার্ল দিয়ে কি করবে?
ফাহাদ: আমার ভালো লাগে যাওয়ার সময় তোমার কোনো কিছু সাথে নিয়ে যেতে
আমি:(আমি আমার হিজাবের ভিতর থেকে চুলের ক্লিপ টা খুলে ওকে দিলাম) আরেকবার আসার সময় কিন্ত এটার বদলে অনেক গুলো আনবে?
ফাহাদ: (ও হাতে নিয়ে বললো) ঠিক আছে ম্যাম।। ও ক্লিপ টাও ওর বাম পাশের পকেটে রেখে পার্ল গুলো শার্টের পকেটে রাখলো।।

ও আমার আজ একটু অন্য রকম লাগছে, বেশি বেশি কাছে চাচ্ছে, হটাৎ হটাৎ জড়িয়ে ধরছে, হাতে চুমু খাচ্ছে আংটি টা খুলে বার বার পরাচ্ছে। আমিও ওর বাচ্চামি গুলো দেখতে লাগলাম।। হটাৎ ট্রেন আসার শব্দে 2জনেই আতকে উঠলাম। ওর চোখ মুখে আমি কেমন ভয় ভয় দেখছি, ট্রেন আসার পর স্পষ্ট বুঝতে পারছি।

আমি: ফাহাদ তোমার কি খারাপ লাগছে? লাগলে বল বাসায় রেস্ট নিয়ে দুপুরের ট্রেনে বের হইও
ফাহাদ: না খারাপ লাগছে না, তোমাকে রেখে যেতে খারাপ লাগছে, এত টা কাছে ছিলাম বলেই হয়তো খারাপ লাগছে, তুমি টেনশন করো না, আমি সায়েম কে ফোন করেছি ও এসে তোমাকে নিয়ে যাবে।।
আমি: এখান থেকে এখানে সায়েমকে বলার কি ছিল? আমি তো একাই চলে যেতে পারতাম
ফাহাদ: (কেউকে ফোন করছে) হ্যালো সায়েম কোথায় তুমি? আমার ট্রেন চলে এসেছে, তোমার আপু একা দাড়িয়ে থাকবে নাকি, হ্যাঁ হ্যাঁ তাড়াতাড়ি আসো, ও ফোন পকেটে ঢুকিয়ে রেখেছে।।

ও পিছনে তাকিয়ে আছে, সায়েম কে দেখতে পেয়েই বললো

ফাহাদ: দেরি হয়ে যাচ্ছে বউ, যাই? তুমি বাসায় যেয়ে আমাকে ফোন দিও।
আমি: হুমম
ফাহাদ: এ্যাই পাগলী কাদছ কেন? এমন করলে কি আমার যেতে ভালো লাগবে?
আমি: যাওয়া লাগবেনা
ফাহাদ: আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে, আমার অনেক কাজ রেখে এসেছি সোনা যেতে হবেই
আমি: ছুটিতে কিন্ত আসবে বলেছ
ফাহাদ: আসবো

আমি ওর হাত ধরে ট্রেন পর্যন্ত তুলে দিয়েছি, ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে কিন্ত ও আমার হাত ছাড়ছে না, আমিও ট্রেনের সাথে এগিয়ে যাচ্ছি, ও আসতে করে হাত টা ছেড়ে দিলো, হয়তো ভেবেছে ও না ছাড়লে আমি ওর হাত টা ছাড়বো না, আমি দৌড়ে যেয়ে আবার ওর হাত ধরার চেষ্টা করলাম কিন্তু ট্রেনের গতি বেড়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত পারলাম না, ও এখনও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি বাসায় যেয়ে ফোন দিলাম, রাস্তায় আছে তাই কথা বুঝা যাচ্ছে না, লাইন কেটে গেল।।

আমি শুয়ে আছি ভালো লাগছেনা কিছু, আর 2দিন তো থাকতে পারতো, আবার নিজে নিজেকে বুঝাচ্ছি অনেকের হাসব্যান্ড বিদেশ থাকে তারা কিভাবে তাকে আমি কেন পারবো না, ও কাজ রেখে সারাদিন আমার কাছে বসে থাকলে কি সরকার ভাত দিবে।।

এইভাবে প্রায় 2ঘণ্টা ঘুমিয়েছিলাম, ঘুম ঘুম চোখে ফোন টা হাতে নিয়ে ওকে ফোন দিলাম, রিং হচ্ছে না, বন্ধ ও বলছে না, কল দিয়ার পর নিজে নিজেই কেটে যাচ্ছে, আমি এত কিছু না ভেবে হাত মুখ ধুয়ে টিভির সামনে বসলাম বাটিতে মুড়ি চানাচুর, চাচী এসে বকে গেলেন সকাল থেকে কিছু না খেয়ে এইসব কেন নিয়েছি,

হটাৎ টিভির সামনে ট্রেন দুর্ঘটনার চিত্র দেখাচ্ছে আমি পাত্তা না দিয়ে গোপাল ভাঁড় দেখতে বসেছি, বাম হাতে রিমুট ডান হাতে মুড়ি মাখাচি, হটাৎ কি মনে করে আবার ওই ট্রেন দূর্ঘনার চ্যানেল টায় নিলাম,, একটা ট্রেন উল্টিয়ে পরে আছে দেখাচ্ছে,

হেডলাইনে লিখা নেত্রকোনা থেকে 8টা 5মিনিটে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী ট্রেন টি শম্ভুগঞ্জ পার হয়ে অন্য আরেকটি বিপরীত মুখী ট্রেনের সংঘর্ষে দুর্ঘটনার কবলিত হয়েছে,, সাংবাদিক টা হাতে নেড়ে নেড়ে কি সব দেখাচ্ছে।।
আমার চোখে শুধু ফাহাদ ভাসছে, ওর হাত ধরে ট্রেনের সাথে যাওয়া, আমাকে জড়িয়ে ধরা, ওর বাচ্চামি গুলো

আমি আর কিছু দেখতে পাচ্ছি না আমার চোখ অন্ধকার হয়ে আসছে হাত থেকে রিমুট টা নিচে পরে গেল।।

চলবে