#Ayesha
#ArrangedMarriage
পর্ব-27+28
আমি আর কিছু দেখতে পাচ্ছি না আমার চোখ অন্ধকার হয়ে আসছে হাত থেকে রিমুট টা নিচে পরে গেল।।
আমি নিজেকে সামলে নিলাম আমি আমার পার্স আর ফোনটা নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম, রেল ক্রসিং যাচ্ছি, রাস্তা টা যেনো শেষ হয় না, 10মিনিটের রাস্তা 10ঘণ্টা মনে হচ্ছে, মনে মনে আল্লাহ কে ডাকছি।। ফাহাদকে ঐখানে পাবনা জেনেও জানিনা কেন যাচ্ছি।। বার বার দোয়া দুরুদ পরছি, আল্লাহ আমার ফাহাদকে তুমি ফিরিয়ে দাও ফাহাদের যেনো কিছু না হয়, আমি পারবো না এত কষ্ট সইতে, আমি যে ছোট থেকেই নূরের পুতুল ছিলাম, হাত থেকে পরার আগেই সেই পুতুল ভেঙে যায় আমি তো তার থেকেও হালকা ছিলাম।। সবাই তো আমাকে এইভাবেই আগলে রেখেছিল, ফাহাদ তো তার থেকেও বেশি ছিল, একটা ফুলের টুকাও লাগতে দিতো না, ও কি জানেনা ওর আয়েশার কি অবস্থা হচ্ছে? ও কি জানে আমি একা একা বাসা থেকে বের হয়ে রেল ক্রসিং আসছি, জানলে কি করবে? যাই করুক আমার সামনে থেকে করুক, আল্লাহ আমি কেন ভাবছি আমার ফাহাদ ও ওই ট্রেনে অ্যাকসিডেন্ট করেছে ও তো অন্য কোথাও নেমেও যেতে পারে, আল্লাহ এমন টাই যেনো হয় আমাকে খারাপ চিন্তা থেকে দূরে রাখ,
রাস্তায় সবাই চায়ের স্টল গুলোতে ভিড় করেছে দেখা যাচ্ছে, ঐখান থেকে কেউ একজন বলে উঠলো ট্রেনের কেউ নাকি বেঁচে নেই, যেইভাবে অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে বেঁচে থাকার নাকি কথাও না, আমি আমার 2কান হাত দিয়ে চেপে ধরলাম।। এইসব কিচ্ছু হবেনা ফাহাদ ওর আয়েশা কে ছেড়ে যেতে পারেনা।
আমি রিকশা থেকে নেমে ফ্লাটফ্রমের ভিতরে যাচ্ছি, পা গুলো আমার চলছে না তাও টেনে টেনে নিচ্ছি।। হাঁটতে হাঁটতে ও যেই জায়গায় চোখ আটকে গেলো, যেখানে ও আমাকে খাইয়েছিল আমি সেইখানে বসে ওর বসা জায়গায় হাত বুলাচ্ছি, চোখ বন্ধ করে আড়াই ঘন্টা আগের সময় টা ফিল করার চেষ্টা করছি।।
পুরা ফ্লাটফ্রম খালি আমি একা বসে আছি, একটু সামনে এগিয়ে আমি আমার জায়গায় দাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে উপলব্ধি করছি ও আমার হাত টা আগের ন্যায় ধরে আছে আমি ধীর পায়ে হেঁটে হেঁটে এগিয়ে যাচ্ছি।
আমার যখনই মনে হলো আমার ফাহাদ ওই ট্রেন যাত্রীদের মধ্যে একজন আমি ফ্লাটফ্রম কাপিয়ে চিৎকার করে ফাহাদ ডাক দিলাম।।
+ফাহাদ প্লিজ লক্ষ্মীটি ফিরে আসো দেখ তোমার আয়েশা বাসা থেকে একা এত দূর চলে আসছে তুমি সায়েম কে ফোন দিবেনা? আমাকে নিতে বলবে না? দেখ তুমি না আসলে আমি কিন্ত এখানেই বসে থাকবো, তোমার কি ভালো লাগবে? ফিরে আসো ফাহাদ, আমি জানি আমার ফাহাদের কিচ্ছু হবেনা, আমার ফাহাদ আমাকে রেখে কোথাও যেতে পারেনা।।
আমি হাটু ভাজ করে নিচে বসে আছি, একটা কাক পক্ষিও আমার কান্নার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে না,
আমার ফোন ভেজেই চলছে, আমি ফোন তুলছি না, জানি আমার ফাহাদ ফোন করেনি, কিভাবে করবে ও কোন অবস্থায় আছে আল্লাহ জানেন।।
+আল্লাহ তুমি আমার ফাহাদকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও আমি তোমার কাছে আর কোনোদিন কিচ্ছু চাইবো না।। ফাহাদের যদি কিছু হয় আমি কি নিয়ে থাকবো? আমি তো মরেই যাবো।।
আমি চিৎকার করে ফাহাদকে ডাকছি।। ফাহাদ আসছে না আমার কাছে, আমার ডাকে ও সারা দিচ্ছে না।।
হটাৎ কারোর স্পর্শ আমার কাঁধে টের পেলাম, আমি চোখ বন্ধ করে ওর হাঁটু জড়িয়ে আছি
+ফাহাদ তুমি এসেছ? দেখ আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, আমি বাসা থেকে একা একা চলে আসছি তুমি প্লিজ আমাকে নিয়ে যাও, আমি জানি তুমি ফিরে আসবে দেখ আমার বিশ্বাস ভুল না।।
আমার চোখ আসতে আসতে বন্ধ হয়ে আসছে।।
আমার চোখ গুলো খুব ব্যাথা করছে, খুলতেই পারছি না তাও কোনো রকম চোখ খুলে দেখি আমি একটা বেডে শুয়ে আছি, চার পাশে তাকিয়ে বুঝলাম এটা সদর হসপিটাল, আমি কোনরকম উঠে বসলাম, বেড থেকে নামতে যাবো তখনই হাতে ব্যাথা লাগছে কিছু একটার মধ্যে আটকে আছে মনে হলো, আমি তাকিয়ে দেখি আমাকে সেলাইন দিয়া হচ্ছে, আমি ফাহাদ বলে চিৎকার দিতেই বাবা বুবু সায়েম ভিতরে ঢুকলো।।
বুবু এসে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে, সায়েম পিছনের বালিশ টা বেডের সাথে হেলান দিয়ে আমাকে ঐখানে শুয়াতে চাইলো, আমি বসে থেকেই ওকে জিজ্ঞেস করলাম
আমি: সায়েম তোর ভাইয়া কই?
সায়েম চুপ করে আছে
আমি: কি হলো? তোর ভাইয়া কই?
বুবু: আয়শি তুই রেস্ট নে তুই অনেক উইক
আমি: বুবু বলো না ফাহাদ কোথায়? ও নিশ্চই আমার উপর খুব রেগে আছে তাইনা? আমি কেন একা বাসা থেকে বের হলাম বলে? ওকে বুঝিয়ে বল আমি আর ওর অবাধ্য হবো না, আর কোথাও একা যাবনা, ওর সব কথা শুনবো। সায়েম যা তোর ভাইয়া কে ডেকে আন বল তোর ছোট আপু আর এমন করবেনা, যদি এমন করি তাহলে সামনে মাসে ওর আসা লাগবেনা শাস্তি হিসেবে মেনে নিবো।। যা না সায়েম
বাবা আমার মাথার কাছে দাড়িয়ে আমার মাথায় হাত বুলাচ্ছে
বাবা: মা শান্ত হ, ফাহাদ ট্রেন অ্যাকসিডেন্ট করেছে, ফাহাদকে এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি, ফাহাদকে খুঁজ চলছে এখনও কোনো খবর পাইনি, তুই চিন্তা করিস না ফাহাদ এর কিচ্ছু হবেনা
আমি: (বাবার হাত টা আমার থেকে সরিয়ে নিলাম) বাবা তুমি ভুল করছ, তুমি জাননা ফাহাদেই আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে আর এখন সে রাগ করে আমার সামনে আসছে না, বাবা তুমি প্লিজ ওকে বল না আমি আর একা বের হবো না ও তোমার কথা ফেলতে পারবেনা দেখ।
বাবা: শান্ত হ মা।
আমি: ফাহাদকে এনে দাও আমি শান্ত হয়ে যাবো।
বাবা: চুপ কর মা তুই এমনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিস
আমি: তোমরা সবাই সার্থপর, শুধু নিজের মেয়ের কথা ভাবছো, তোমার জামাই অ্যাকসিডেন্ট করেছে বাবা, কত তো বলতে তোমার অনেক বড় বড় আত্মীয় স্বজন, তাহলে তাদের কেন বলছো না আমার ফাহাদকে খুঁজে দিতে? যদি সেই আত্মীয় স্বজন কোনো কাজেই না লাগে তাদের দিয়ে কি হবে?
বাবা বাইরে চলে গেল কিছুক্ষন পর একটা ছেলেকে নিয়ে ভিতরে ঢুকলো, এই ছেলেকে আমি চিনি হ্যাঁ এ তো ঐ ছেলে যার সাথে আমার ধাক্কা লেগেছিল, কিন্ত ও এখানে কেন?
বাবা: (ওকে দেখিয়ে বললো) ও আমান ঐ তোকে এখানে এনে ভর্তি করে আমাদের ফোন করেছে, (বাবা আবার আমার মাথার কাছে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে)
আমি: বাবা তুমি মিথ্যা বলছো তাই না? আমি জানি আমার ফাহাদ আমাকে এখানে এনেছে, তুমি ফাহাদকে ডেকে দাও না
বাবা: মা ফাহাদ কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা তুই শান্ত হ
বুবু কাদছ
আমি: বুবুর হাত ধরে বললাম, বুবু তুমি কেনো কাদছো? দেখ ফাহাদের কিচ্ছু হবেনা ও আমাকে কথা দিয়েছে আমাকে রেখে ও কোথাও যাবেনা, তুমি কেদো না ফাহাদ ঠিক চলে আসবে।।
আমি বাবার দিকে তাকিয়ে বললাম বাবা আমার ফোন টা দাও
বাবা ফোন টা আমার হাতে দিল, বাকি সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে
+হ্যালো ফাহাদ তুমি কখন পৌঁছেছ? তুমি কি জানো ওরা সবাই তোমাকে নিয়ে কি সব বাজে কথা বলছে, তুমি নাকি আর ফিরবে না তোমাকে নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা,
+কে বলবে আর তোমার বনু আব্বাজী বলছে নাও তুমি ওদের সাথে কথা বলে ওদের বলে দাও তো তুমি ঠিক আছো।
বাবা আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে ওর কথা গুলো শুনছে সাথে আমার গুলো ও শুনা যাচ্ছে, যখনই আমাদের কথা হতো আমি রেকর্ড করে রেখে দিতাম তারপর শুয়ে শুয়ে শুনতাম, এটাও সেই রেকর্ডিং এর একটা
বাবা এইবার নিজেকে সামলাতে না পেরে কেদে দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো,
বাবা: এমন করিস না মা তুই অসুস্থ হয়ে যাবি, সকাল থেকে কিছু খাস নি, খেয়ে নে
আমি: বাবা তুমি তো আমার ফাহাদকে আমার কাছে এনে দিয়েছিলে তাহলে এখন কেন আনতে পারছ না? এনে দাও বাবা, আমি তো তোমাদের কাছে কখনো কিছু চাইনি সব না চাওয়ার আগেই দিতে, কিন্ত আজ ফার্স্ট অ্যান্ড লাস্ট বার ফাহাদকে চাচ্ছি এনে দাও বাবা।।
বাবা উঠে চলে গেলো বুবুর হাতে খাবার, আমার মুখে দিচ্ছে
আমি: খাবোনা
বুবু: সকাল থেকে কিছু খাস নি
আমি: খেয়েছি
বুবু: মিথ্যে বলিস না চুপ চাপ খেয়ে নে বোন
আমি: ফাহাদ সকালে আমাকে ওর হাতে রুটি খাইয়ে গিয়েছিল, আমার পেটের ভিতর এখনও ওর হাতে খাওয়ানো খাবার গুলো আছে, আমার শরীরে এখনও ওর স্পর্শ, আমার হাতের আংটি টা ও লাস্ট বার খুলে পড়িয়ে দিয়েছিল, আমি কি করে ওর যাওয়ার সাথে সাথে ওর চিহ্ন মুছে ফেলবো? ও আমাকে রেখে যেতে পারে আমি পারিনা ওকে দেখিয়ে দিবো ও না থাকলে আমি কতটা কষ্ট পাই, ও আসলে আমি আর ওর সাথে কথাই বলবো না।
বুবু: এক হাতে প্লেট অন্য হাতে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে
আমি: সায়েম শুন আমার রুমে ড্রেসিং টেবিলের উপর একটা প্যাকেট রাখা ওইটা নিয়ে আসবি?
সায়েম: কি আছে ঐখানে?
আমি: সকালের রুটি কলা গুলো, আমার খিদে পেয়েছে যদি খাই ওইগুলো খাবো আর কিছুনা
আমি বুবুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কয়টা বাজে?
বুবু: 5টা
আমি: 7ঘণ্টা আমি হসপিটালে? বাবাআআআ
বাবা দৌড়ে রুমে ঢুকলো, আমার কাছে এসে দাড়ালো
বাবা: কি হয়েছে মা?
আমি: ফাহাদের ট্রেন অ্যাকসিডেন্ট করে 7ঘণ্টা হয়ে গেছে তোমরা কি করছো বসে বসে? একটা খবর আনতে পারলে না এখনও? আমি যাবো ময়মনসিংহ আমাকে নিয়ে যাও
বাবা: তোর শরীর দূর্বল এই অবস্থায় তোকে কোথাও নেওয়া যাবেনা
আমি: আমি যাবই
ডক্টর এসে বলে গেছে আমাকে বেশি ট্রেস না দিতে, এতক্ষণ কড়া ডোজের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিল যার কারণে এখন প্রেসার পরলে খারাপ কিছু হতে পারে।।
বাবা: তুই যেয়ে কি করবি?ফাহাদকে পেলে না হয় যেতাম
আমি: আমি নিজের চোখে দেখতে চাই কোথায় কি হয়েছে, আমি ওকে সব হসপিটাল খুজবো ও কিভাবে আমার থেকে লুকিয়ে থাকে আমিও দেখব।
বাবা বাধ্য হয়ে রাজি হলো বললো ঠিক আছে সকালে নিয়ে যাবে।।
আমি আমার হাতের আংটি টা ধরে আছি আলতো করে হাত টা ছুয়ে দেখছি যেনো ওর হাতের স্পর্শ গুলো মুছে না যায়, আমি বুবুকে বললাম আমার ব্যাগ টা দাও, বুবু পাশ থেকে ব্যাগ টা আমার হাতে দিলো
আমি: বুবু জানো ফাহাদ যাওয়ার আগে আমাকে কি জানি দিয়ে গিয়েছিল বলছে বাসায় যেয়ে খুলতে, দাড়াও দেখি কি দিয়েছে
আমি পার্স থেকে ওই প্যাকেট টা হাতে নিলাম, আসতে করে খামের মুখ টা খুললাম, ভিতর থেকে হাত বের করতেই দেখি কত গুলো হাজার টাকা নোট, বুবু আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, আমিও অবাক হয়ে আছি এত গুলো টাকা দেখে
বুবু: তুই চেয়ে ছিলি?
আমি: না
বুবু আমার হাত থেকে টাকা গুলো নিয়ে গুনে দেখলো 15হাজার
আমি ভাবছি এত টাকা আমায় কেন দিল, আমি খামের ভিতর হাত দিতেই একটা ছোট চিরকুট হাতে উঠলো
“এখানে 15হাজার টাকা আছে, সায়েমকে নাকি 5হাজার দিবে বলছিলে? ওইটা ওকে দিও আর 9হাজার জুতার দাম দিলাম আর 1হাজার তোমাকে ফ্রী।।
ফাহাদ”
বুবুর আমার হাত থেকে চিঠি টা পরে আবার আমায় দিয়ে দিলো, আমি চিঠিটা বুকে জড়িয়ে আছি, চোখ বন্ধ করে ওর কথা গুলো ভাবছি।।
সকাল 7টায় বাসা থেকে রওনা দিলাম শম্ভুগঞ্জ এর উদ্দেশ্যে। আমি বাবা আর সায়েম সাথে আমান নামের ছেলে টাও গেল,
অ্যাকসিডেন্ট স্পট থেকে শুরু করে শম্ভুগঞ্জ ময়মনসিংহ সব হসপিটাল খুঁজা শেষ।।সন্ধ্যায় ক্লান্ত হয়ে বাসায় এসেছি।।মামুনি ফোন দিয়ে কান্না করছে বার বার জিজ্ঞেস করছে আমার ছেলে যাওয়ার আগে কি করছিল কি বলেছিল এইসব।।
উনার কান্নায় আমি আরো দূর্বল হয়ে পরছি, উনি তো মা নিজের হাতে ছেলেকে এত বড় করেছে তাদের অবস্থা তো আমার চেয়ে ও খারাপ।।
1দিন যায় 2দিন যায় করতে করতে আজ 15দিন ও নেই, এখনও কোনো খুঁজ খবর পাওয়া যায়নি, সবাই কোনো না কোনোভাবে বাকিদের খুঁজ পেয়েছে শুধু আমরাই পেলাম না।
আমি আজ 5দিন হসপিটালে সেলাইন এর উপর নির্ভর করছি, আমি এই কতদিনে নিজের মধ্যে অনেক পরিবর্তন দেখেছি, আমার নিজেকে অনেক বড় মনে হচ্ছে যেই আয়েশা বাবা মা ভাই বোনের উপর নির্ভর ছিল সে এখন নিজেকে সামলাতে শিখে গেছে, সাথে ফাহাদের পরিবারের শক্তি হয়ে দাড়িয়েছে, মনে হচ্ছে চোখের পলকে এতটা ম্যাচিউর হয়ে গেলাম।। কতদিন গুলো দিন আমি ফাহাদ কে ছাড়া কিভাবে বেঁচে আছি?
এই অপেক্ষা আর কত? আমান আমাকে শক্তি দিয়েছে ফাহাদ আসে সেই বিশ্বাস দিয়েছে, ওর কারণে এখনও আমি লড়ে যেতে পারছি।।
চলবে
#Ayesha
#ArrangedMarriage
পর্ব-28
এই অপেক্ষা আর কত? আমান আমাকে শক্তি দিয়েছে ফাহাদ আসে সেই বিশ্বাস দিয়েছে, ওর কারণে এখনও আমি লড়ে যেতে পারছি।।
হটাৎ কেউ কিছু বললো, আমি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি আমান
আমি: কিছু বললেন?
আমান: (পানির গ্লাস টা এগিয়ে দিল বললো) তখন না পানি খেতে চাইলে?
আমি পানির গ্লাস টা নিয়ে পানি পান করে ওর হাতে দিলাম ও গ্লাস টা টেবিলের উপর রেখে আমায় জিজ্ঞেস করলো
আমান: এখন কেমন লাগছে? নাকি হসপিটালে বাসা বাড়ি করার প্ল্যান করছ?
আমি: আমি তো যেতেই চাই আপনারা ডক্টরের সাথে ভালো করে কথা বলছেন না যার কারণে যেতে দিচ্ছেনা
আমান: ম্যাডাম আপনি যদি সুস্থ না হোন তাহলে ডক্টর কেন ছাড়বে বলেন?
আমি: সুস্থ আছি
আমান: তাহলে এইগুলা খেয়ে নাও দেখি (টিফিন বক্সের কভার টা খুলে আমার সামনে রাখলো)
আমি মুখে তিক্ততার ভাব এনে ওর দিকে তাকালাম, ও জোর করেই আমার টিফিন বক্স টা আমার হাতে দিল আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম, ও নিজ হাতে লঙ্কা মাখিয়ে আমার সামনে ধরলো আমি মুখ উল্টো পাশে ঘুরিয়ে নিলাম, ওই ছেলে আমার 2 গাল ধরে মুখে ভাত দিচ্ছে, আমি একা যেইদিন ময়মনসিংহ গেলাম ঐদিনের কথা মনে পড়ে গেল ফাহাদ তো ঠিক এইভাবেই আমাকে খাইয়ে দিয়েছিল।।
আমার চোখ পানি চলে আসছে, আমি আমার ডান হাতের উল্টো পাশ দিয়ে চোখের পানি মুছে দিয়েছি, আমান কিছু বলেনি হয়তো আমার এই কান্নার মানে বুঝেছে।।
আমান: এইবার রেস্ট নাও
আমি: আমার ফোন টা কোথায়?
আমান: ফাহাদ কে ফোন দিবে?
আমি: প্লিজ ফোনটা দিন
ও আমার ব্যাগ টা আমার হাতে দিল, আমি বুবু কে ফোন দিলাম
বুবু: হ্যাঁ বল
আমি: কই তুমি এখনও আসলে না?
বুবু: এইতো এসে পড়েছি
আমি: তারাতারি আসো একা একা কত ভালো লাগে?
বুবু: আসছি আসছি
বুবু ফোন কেটে দিয়েছে, আমি মামুনি কে ফোন দিলাম, মামুনি ফোন তুলছে না, আঙ্কেল কে ফোন দিলাম
আমি: আসসালামু ওয়ালাইকুম
আঙ্কেল: ওলাইকুম আসসালাম, কেমন আছো মা এখন?
আমি: ভালো আছি, আঙ্কেল মামুনি ফোন তুলছে না কেন? আপনি জানেন তো আমি কতটা ভয় পাই, মামুনি কে ফোনটা দিন প্লিজ
আঙ্কেল: দিচ্ছি মা একটু হোল্ড কর
মামুনি: হুমম বল
আমি: ফোন কেন তুলছিলে না? তোমার ছেলে নেই বলে আমাকে এইভাবে পর কেন করে দিচ্ছ মা? আমি তো তোমার মেয়ে তুমি তো বলেছিলে, তাহলে কিভাবে মেয়ের সাথে এমন ব্যাবহার করছ? কি করছিলে এতক্ষণ? নিশ্চই জানালার পাশে ছেলের ছবি জড়িয়ে কাদছিলে? তোমার ছেলে সার্থপর তাই আমাদের এইভাবে রেখে আরামে দিন কাটাচ্ছে।। আর আমরা ও তার জন্য কি না কি করছি, দেখ অনেক কথা বলেছি তুমি খেয়েছ? ফারিয়া কই? এখন কোনো বাহানা না দিয়ে তাড়াতাড়ি খেয়ে আমাকে ফোন দিবে।
মামুনি: এত বড় হয়ে গেলি মা, সেই তো দেড় মাস আগে ছোট পিচ্ছি মেয়েকে বউ বানানোর জন্য গিয়েছিলাম।। আর এখন দেখ সময়ের ব্যাবধানে কত কি হয়ে গেল
আমি: দেখ তুমি কি এইসব কথা বলবে না খেতে যাবে? আমি কিন্ত আর ফোন দিবো না দেখ।।
মামুনি: হেঁ হেঁ যাচ্ছি, বাপরে এক সাথে আগুন জ্বালিয়ে দিলি, তুই খেয়েছিস?
আমি: হ্যাঁ ওই আমান খাইয়ে দিয়েছি…. আমি থেমে গেলাম আর কিছু বললাম না
মামুনি: ওই ছেলেটা খুব ভালো তাইনা?
আমি ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ও আমাদের কথা গুলো গিলছে আমিও শুনিয়ে শুনিয়ে বললাম তোমার ছেলে বেস্ট তার উপরে কেউ কোনোদিন যেতে পারবেনা বুঝেছ?
মামুনি: পাগলী মেয়ে আমার রাখছি
আমি: হুমম ঠিক আছে খেয়ে নাও।।
আমি ফোনটা হাতে নিয়ে হেলান দিয়ে শুয়ে আছি, চোখ বন্ধ করে ফাহাদের কথা ভাবছি, প্রতিদিন আমার আর কোনো কাজ নেই সবাইকে সামলিয়ে ফাহাদকে নিয়ে ভাবতে বসি। ওর কথা বলা ওর যত্ন নেওয়া ওর পরিপাটি কাজ গুলো করে নেয়া কোনো কিছুতেই ওর কমতি ছিল না কপাল করে পেয়ে ছিলাম কিন্ত ধরে রাখতে পারিনি। কিন্ত আমি জানি ও ঠিক কোথাও না কোথাও আছে, শুধু আমার জন্য আছে।।
+আয়েশা
আমি চোখ খুলে দেখি বুবু দাড়িয়ে আছে
বুবু: ঘুমাচ্ছিলি?
আমি: না
বুবু: বুঝেছি, আমান ভাইয়া কোথায়? মা তোদের জন্য খাবার পাঠিয়েছে, চাচী চাচ্চু সন্ধ্যায় আসবে।।
আমি: বুবু আমি তো খেয়েছি
বুবু: কি খেয়েছিস
আমি: দুপুরে তো অবশ্যই ভাতেই খাবো, আমান নামের ছেলে টা তো আনলো
বুবু: দেরি হচ্ছে বলে হয়তো হোটেল থেকে এনেছে।
আমি: হবে হয়তো, (কিছুক্ষন চুপ থেকে আবার বুবুকে জিজ্ঞেস করলাম) বুবু হোটেল থেকে কি টিফিন বক্সে খাবার দেয় নাকি? আলু ভাজি ছাড়া কিসব হাবিজাবি তরকারি ছিল একদম ঘরুয়া রান্না ছিল যেমন মা চাচী করে
বুবু: তাহলে হয়তো ওর বাসা থেকে এনেছে
আমি: কিন্ত ও কেন কষ্ট করে এইসব করবে?
বুবু: কি জানি ওকেই জিজ্ঞেস করিস।। তবে ছেলেটা ভালো আছে, বিসিএস স্টাডি করছে সব কিছুতে ফার্স্ট ক্লাস
আমি: পছন্দ হয়েছে তোমার?
বুবু: ধুর কি সব বলিস, বুবু পাশের বেডে ধুম করে শুয়ে পরেছে ফোন নিয়ে আমি ওই ছেলের এইসব ঘটনা গুলো ভাবছি।।
হটাৎ রনি ভাইয়ের ফোন
আমি: আসসালামু ওয়ালাইকুম রনি ভাই কেমন আছো?
রনি: আমরা যেমনি থাকি তুমি বেশ সুখেই আছ বোন
আমি: মজা করছো তুমি তাইনা? এইভাবে কথা বলো না প্লিজ আমি তো ইচ্ছে করে হসপিটালে অ্যাডমিট হইনি তুমি তো সবটাই জানো
রনি ভাই: হ্যাঁ এটা ঠিক বলেছ আমি সব জানি, কিন্ত এতদিন দেখেও তোমাকে জানতে পারলাম না চিনতে পারলাম না আফসোস
আমি: রনি ভাই প্লিজ স্টপ ইউর ডির্টি টক
রনি: ডির্টি ইউ আয়েশা ছি আমি তোমায় কোনোদিন এমন ভাবিনি…. আরো কিছু বলতে চাইল কিন্ত কথার মাঝখানেই মনে হলো কেউ লাইন কেটে দিলো
আমার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে, রনি ভাই এইসব কি বললো? কেন বললো? কি করেছি আমি?
আয়েশা কাদছ কেন?
আমি মাথা তুলে দেখি আমান আমার সামনে দাড়িয়ে কথাটা বললো, বুবু দরফর করে উঠে আমার কাছে আসলো, মাথায় হাত বুলাচ্ছে
আমি: বুবু
বুবু: কাদিস না আয়েশি আর কত কষ্ট পাবি বল?
আমি: (আমি ফোন টা বুবুর হাতে দিতে চাইলাম, কিন্ত আমান আমার হাত থেকে ফোন টা নিয়ে বলছে)
আমান: রনি কে
বুবু: আমাদের কাজিন ফাহাদের ফ্রেন্ড ছিল
আমান: আয়েশা উনি কি তোমাকে কিছু বলেছে?
বুবু: ও কি বলবে?
আমান: প্লিজ ওকে বলতে দাও, বল আয়েশা কিছু কি বলেছে?
আমি কান্নার কারণে ঠিক ভাবে শ্বাস নিতে পারছি না, কথা বলা তো দূরে থাক, আমান আমার কল রেকর্ড বের করে ভলিউম বাড়িয়ে বুবু আর আমাম কথা গুলো শুনলো।।
বুবু: ও এমন কথা কেন তোকে বলবে? ওর এত সাহস কি করে হয়?
আমান রাগে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেল, আমি এখনও আগের মতোই কেদেই যাচ্ছি।।
সায়েম রুমে দৌড়ে আসলো, হাঁপাচ্ছে অনেক যার কারণে ও কিছু বলতে চেয়ে ও পারছেনা।। বুবু ওকে এক গ্লাস পানি দিয়ে চেয়ারে বসালো
বুবু: এইবার আসতে ধীরে বল কি হয়েছে? এইভাবে দৌড়ে কোথা থেকে আসলি? আর হাপাচ্ছিস কেন?
সায়েম: বুবু বুবু
বুবু: হ্যাঁ বল
সায়েম: ভাইয়া
বুবু: কোন ভাইয়া?
সায়েম: ফাহাদ, ফাহাদ ভাইয়া
আমি এতক্ষন বসে থেকে ওর এই অবস্থা কেন দেখছিলাম, কারণ এর আগেও ক্রিকেট খেলতে যেয়ে এইভাবে মার খেয়ে এসেছে, কিন্ত যখনই ফাহাদের নাম বললো, আমি আমার হাত থেকে এক টানে সেলাইন খুলে সায়েমের কাছে গেলাম
আমি: সায়েম তুই ফাহাদকে দেখেছিস?? বল হ্যাঁ কি না?
সায়েম: হ্যাঁ
আমি: কোথায়? তাড়াতাড়ি বল
সায়েম: আমি মাঠে খেলা দেখছিলাম তখন দেখি ভাইয়ার মত কেউ, আমি খেলা রেখে ভাইয়ার কাছে যাওয়ার আগেই ভাইয়া একটা প্রাইভেট কারে উঠে চলে গেল
বুবু: কতক্ষন আগে দেখেছিস?
সায়েম: এইতো আধা ঘন্টা হবে
বুবু: বলদ তাহলে এখন কেন বলছিস ফোন কেন করিস নি?
সায়েম: আমার মাথা কাজ করছিল না আমার কাছে টাকাও ছিল না তাই দৌড়ে দৌড়ে এসেছি
আমি বেডের পাশ থেকে ওরনা টা নিয়ে বের হয়ে গেলাম, বুবু সায়েমকে নিয়ে ব্যাস্ত আমাকে খেয়াল করেনি। আমি হেঁটে হেঁটে মাঠের পাশে চলে এসেছি আমি কিছু ভাবতে পারছি না কি করবো কোথায় যাবো কিছু বুঝতেসি না, হটাৎ রনি ভাইয়ের ঐভাবে কেন কথা বললো মনে হতেই আমি রনি ভাইয়ের বাসার উদ্দেশ্য যাচ্ছি।।
কলিং বেল বাজাচ্ছি কেউ দরজা খুলছে না, আমি আমার ইচ্ছেমত কলিংবেল চাপছি।।
আমাকে না দেখেই রনি ভাই বলল
রনি: বললাম না টাকা নাই বার বার কেন ডিস্টার্ব করছিস হারামজাদা
আমি রনি ভাইয়ের এইসব কথা পাত্তা না দিয়ে রনি ভাইয়ের বাসার সব গুলো ঘর ওয়াশরুম খুঁজছি, কিন্ত ফাহাদ কে পাচ্ছি না, আমার বিশ্বাস ফাহাদ এখানেই আছে
রনি ভাই: (আমার সামনে দাড়িয়ে বলছে) কি চাই এখানে? এখানে কেউ নেই তুমি বের হও এখন থেকে
আমি: রনি ভাই বল না আমার ফাহাদ কোথায়? আমি জানি ও তোমার কাছে আছে বের করে আনো ওকে
রনি ভাই: ফাহাদ এখানে কোথা থেকে আসবে? আর তোমার কি ফাহাদকে কোনো প্রয়োজন আছে? নতুন কেউকে তো ঠিকই জুটিয়ে নিয়েছ
আমি: আমি তোমাকে সব টা বলবো আগে ফাহাদ কে আনো, যাও না প্লিজ
রনি ভাই: বের হও
আমি: প্লিজ রনি ভাই
রনি ভাই: আই সে গেট আউট (বলেই আমার হাত ধরে দরকার বাইরে বের করে দিলো)
আমি রনি ভাইয়ের বাসার সামনে সিড়িতে বসে পরলাম।
আমার মাথা কাজ করছে না কি করবো কিচ্ছু বুঝতেসি না, রনি ভাই কে আমি কোনোদিন ক্ষমা করবো না কোনোদিন না।।
হটাৎ ভিতর থেকে কিছু ভাঙার আওয়াজ পাচ্ছি আমি ভয় পেয়ে উঠে দাড়ালাম, কেউ ভিতর থেকে জোরে জোরে চিৎকার করছে, আমি ওর দরজায় মাথা রেখে শুনার চেষ্টা করছি
রনি ভাই: হোয়াই ম্যান হোয়াই? যে তোকে ছাড়া থাকতে পারে তুই কেন পারবিনা ফরগেট ইট
+আমি ভালোবেসেছি, যতটা কেউ কেউকে বাসে না, তুই প্লিজ এইসব বলিস না
আমার কথা গুলো ফাহাদের কথায় মত লাগলো, আমি আমার 2হাত দিয়ে ইচ্ছে মত দরজায় ধাক্কা দিচ্ছি, রনি ভাই দরজা খুল বলে চিৎকার করছি
রনি ভাই ভিতর থেকে এক টানে দরজা খুলতেই আমি বেসামাল হয়ে ভিতরে ঢুকে গেলাম।
রনি ভাই: আচ্ছা বেহায়া মেয়ে তুমি আয়েশা
আমি: ফাহাদ কে বের কর রনি ভাই
রনি: বানিয়ে আনব নাকি?
আমি: তুমি তোমার ঘরেই লুকিয়ে রেখেছ, আমি স্পষ্ট ওর কথা শুনেছি
রনি: তুমি নিজেই তো খুঁজে দেখেছিলে, পেয়েছো?
আমি: এখন আছে
রনি ভাই: যাও বের কর
আমি মেঝেতে বসে পরলাম চিৎকার করে বলছি আমার ফাহাদকে বের করে দাও রনি ভাই, তোমার পায়ে ধরি আনো আমার ফাহাদকে, আমার ফাহাদকে বের না করলে আমি এখান থেকে 1 পা ও নড়ব না, আমি আমার মত কেদেই যাচ্ছি, কারোর মায়া নেই আমার জীবন মরণ নিয়ে, এক সময় মনে হলো হয়তো আমারই ভুল না হয় ফাহাদ ওর চোখের সামনে ওর আয়েশা এইভাবে কাদছে সহ্য করতে পারতো না।।
হটাৎ কারোর 2টা পা আমার সামনে দাড়ালো, আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে তাও জোর করে খুলে রেখেছি শুধু মানুষ টা কে দেখার জন্য,
আমি ওই মুখের দিকে তাকালাম ঝাপসা একটা মুখ কিন্ত আমি জানি এটাই আমার ফাহাদ
আমি উঠে দাঁড়ালাম কোনরকম 2কদম এগিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।।
আমি: ফাহাদ আমি জানি তুমি আছো আমার জন্য আছ, কেন এত কষ্ট দিলে? আমি ভালো নেই তোমাকে ছাড়া, আমাকে রেখে আর কোথাও যেও না প্লিজ।।
চলবে