#Ayesha
#ArrangedMarriage
পর্ব: 29+30
আমি: ফাহাদ আমি জানি তুমি আছো আমার জন্য আছ, কেন এত কষ্ট দিলে? আমি ভালো নেই তোমাকে ছাড়া, আমাকে রেখে আর কোথাও যেও না প্লিজ।।
আমি আস্তে আস্তে চোখ খুলে চারপাশ ভালো করে তাকিয়ে দেখি আবার সেই জগন্য হসপিটালের বেডে আমাকে শুয়ে রাখা হয়েছে, ধীরে ধীরে উঠে বসলাম হাত টা খুব ব্যাথা করছে আমি তাকিয়ে দেখি হাত বাঁধা, যখন দরজা ধাক্কাছিলাম তখন হয় তো কেটে থাকবে, আমি উঠে কেবিন থেকে বের হলাম, বাইরে কেউ নেই।। হসপিটাল থেকে বের হয়ে যাচ্ছি।। আমি একটু আগের ঘটনা মনে করে নিজের মাথায় নিজেই ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করছে, জানিনা আবার কাকে ফাহাদ ভেবে জড়িয়ে ধরে ছিলাম, কে আবার আমাকে নিয়ে আসলো, আর হয়েছে আমার এক রোগ কোনো কিছু হতে না হতেই সেন্সলেস হয়ে যাই।।।
একজন নার্স হেঁটে যাচ্ছে আমার পাশ দিয়ে
আমি: শুনুন
নার্স: জ্বী বলেন
আমি: কয়টা বাজে?
নার্স: (হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল) এইতো 5টা
আমি: থ্যাংকস
নার্স চলে গেল, আমি হসপিটাল এর সীমানা পার করে রাস্তায় দাড়িয়ে আছি, জানিনা কি এখন কি করবো, কোথায় যাবো, কেন বা এখানে এসেছি, কত মানুষ রাস্তায় সবাই সবার নিজের গতিতে চলছে, হটাৎ একটা বাচ্চা মেয়ে অটো থেকে নামলো ভাড়া না দিয়েই চলে যাচ্ছে অটো ওয়ালাও বাচ্চা ভেবে কিছু বলেনি, পাশের কুকুর টা তার নিজের পেটের দায়ে ড্রেন থেকে নষ্ট খাবার ছিড়ে নিয়ে খাচ্ছে, আবার রিকশা করে 2জুটি কি সুন্দর হেঁসে খেলে যাচ্ছে মনে হচ্ছে
ওদের থেকে সুখী আর কেউ এই পৃথিবীতে নেই, কি অদ্ভুত জীবন।।
অসহ্য লাগে আমার এইসব, সহ্য করতে পারিনা কোনো প্রেম ভালোবাসা।। আমি আমার উল্টা রাস্তা ঘুরে হসপিটালে চলে আসলাম।।
কেবিনে ঢুকার সময় ভিতরে সবার বড় বড় ধমকের স্বরে আওয়াজ শুনা যাচ্ছে,,
বাবা: কি করছিলে তোমরা? এত গুলো মানুষ থাকতেও কিভাবে আমার মেয়ে টা বের হয়ে গেল? সবাই নিজের চোখে দেখছ ওর কষ্ট টা তার পরেও কিভাবে ওকে একা কেবিনে রেখে যাও
বুবু: চাচ্চু আমি ওয়াশরুম গেলাম যাওয়ার আগে ওকে বেডেই দেখে গেছি কিন্তু 1মিনিটে ও বের হয়ে যাবে কিভাবে বুঝবো?
আমি কেবিনের ভিতর ঢুকতেই দেখি সায়েম আর আমান ওদের কথা শুনছে, বাবা আর বুবু মুখ মুখী, বুবুর পাশ থেকে দরজা সরাসরি দেখা যায়, ও আমাকে দেখে ডাক দিল
বুবু: আইশি আবার কই গিয়েছিলি? কে নিয়ে এসেছে তোকে?
আমি: ভালো লাগছিলো না তাই বাইরে হাঁটতে গিয়েছিলাম
বুবু: আমাকে বলতি
বাবা: আয়েশা যাও অনেক কষ্ট দিয়েছ অনেক শুয়ে রেস্ট নাও।
বাবা বের হয়ে গেল সাথে আমান ছেলে টাও
সায়েম: তুই যে একা বাড়ি আসতে পারিস আমি ভুলে গিয়েছিলাম
আমি: ভালো করেছিস এইবার সর
সায়েম: একটা কথা
আমি: আমার এখন কিছু শুনার ইচ্ছা নেই
বুবু: (ফল কাটতে কাটতে বললো) তোর জন্য সুখবর শুন
আমি: (আমার সব সুখবর ফাহাদ হারিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে হারিয়ে গেছে, আর কোনো রং নেই আমার জীবনে, সব ঝাপসা, কোনো সুখবর ও আমার জন্য থাকতে পারেনা, যদি সুখবর কেউ দিতে চায় ফাহাদকে এনে দিতে হবে) বুবু আমার কিছু শুনতে ইচ্ছা করছে না
বুবু আর কিছু বলল না, আজ কালের মধ্যে আমাকে হসপিটাল থেকে রিলিজ দেয়ার কথা, ভালো লাগেনা হসপিটাল, ২য় বারের মত হসপিটালে শুয়েছি, একবার ময়মনসিংহ ওই মহিলা কে রক্ত দেয়ার সময় আর এখন, জানিনা আর কত বার ভর্তি হতে হয় এই নরক জায়গায়।।
আজ আমাকে বাসায় নিয়ে এসেছে 2দিন, ফাহাদ নেই 18দিন হয়ে গেল, জানিনা কি করছে, কেমন আছে।।
আমি সেই আগের দিন শুরু করলাম নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য, বিকালে কোচিং করে আসার সময় একা একা বসে ছিলাম রেল ক্রসিং, যেখানে ফাহাদের সাথে লাস্ট বার বসা হয়েছিল ওর হাতে খাওয়া হয়েছিল, মানুষ আসছে যাচ্ছে আবার খালি হয়ে যাচ্ছে, আমি শুধু সময়ের গতিকে দেখছি, একটু আগে এখানে কত মানুষ ছিল এখন আমি ছাড়া একটা পিপড়েও নেই।।
হটাৎ কেউ জিজ্ঞেস করলো কোথায় যাবেন?
আমি পাশে তাকিয়ে দেখি ফাহাদ, আমি পাত্তা দিলাম না, আমি জানি এমন টা কখনো হবেনা, এর আগেও কতবার ভেবেছি ও এসে আমাকে ডাকছে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলছে কি হয়েছে আমার বউ টার, কিন্ত আফসোস সব সময় ভুল প্রমাণিত হয়েছে, তাই এখনও পাত্তা দিলাম না, একদিন তো ফাহাদ ভেবেই আমান এর উপর রাগ অভিমান, মনের ভিতর কুড়ে খাওয়া সব আবেগ বলে দিয়েছি।। কিন্ত আর না, ও আমার কাছে কখনো এত সহজে ফিরবে না, হয়তো আরো ভুগাবে না হয় একে বারে মেরে শান্তি পাবে।।
+কি হলো কথা বলছেন না কেন?
আমি চুপ করেই আছি, তাকাবো না তাকালেই আবার ভুল করবো আগের মত
+আমাকে চিনেন নি?
+আজব আমি একটা মানুষ, মুখ ঘুরিয়ে থাকার কি মানে?
+ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি আবার যেন ফাহাদ ফাহাদ করে অজ্ঞান না হয়ে যান
আমি যাওয়ার কথা শুনেই উঠে দাড়ালাম, কিন্ত না এত দুর্বল হলে চলবে না আবার বসে গেলাম।। ওই ফাহাদ রূপি ছেলে আমার সামনে পকেটে হাত দিয়ে দাড়ালো।
+অনেক সাহস হয়েছে আপনার একা একা রেল ক্রসিং চলে আসেন
আমি: কি চাই আপনার? কে আপনি?
+আশ্চর্য এই কিছুদিনে একেবারে ভুলে গেলা?
আমি: শুনেন ফাহাদের ধরন নিয়ে আসলেই আপনি ফাহাদ হয়ে যাবেন না আর আমিও আপনাকে ফাহাদ মনে করছি না, সো গেট আউট
+২য় বারের মত আর একটা চড় খেতে চাও?
আমি: আপনি কি আমাকে একা বসতে দিবেন না? তাহলে আপনি থাকেন আমি চলে যাচ্ছি।।
বলেই হেঁটে কিছুটা সামনে চলে আসলাম, ওই ফাহাদ রূপি মানুষ টা আমার হাত ধরে আটকে দিল
+কোথায় যাচ্ছ?
আমি: (আমার হাত টা ওর থেকে ছাড়িয়ে) এত সাহস কি করে হয় আপনার? আমার হাত ধরেন কোন সাহসে? আপনি যদি এখন এই মুহূর্তে আমার সামনে থেকে না সরেন তাহলে আমি লোক জন ডেকে আনবো
+আনো, তারাও দেখুক বউ গুলো কতটা নির্দয়, স্বামীর সাথে কি রকম ব্যাবহার করে
আমি: ননসেন্স
টাস করে একটা থাপ্পর দিল আমার বাম গালে, আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই ও আমাকে কোলে তুলে নিল,
আমি ভাবছি কল্পনায় মানুষ থাপ্পড় ও দেয় নাকি? কোলে ও তুলে? বাহ ব্যাপার রহস্যজনক হলেও তো মজার।।
সামনে একটা গাড়িতে বসালো, প্রাইভেট কার।। ও ড্রাইভিং সিটে বসে আমার সিট বেল্ট বেঁধে দিলো, গাড়ি ড্রাইভ করছে। আমি আকাশ পাতাল ভাবছি, কি হচ্ছে আমার সাথে, সত্যি সত্যি আমি জেগে আছি? নিজের হাতে নিজেই খামচি দিলাম, না ব্যাথা পেয়েছি। আমি ওই ছেলের দিকে তাকালাম একেবারে হবু হু ফাহাদ, আমি ওর হাত টা টেনে একটা জোরে কামড় দিলাম, ও গাড়ি ব্রেক করে আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে।। আমি আস্তে করে আমার হাত টা ওর গালে রাখলাম, ওকে হালকা করে জড়িয়ে ধরলাম, হ্যাঁ সেই সুবাস, সেই চেনা অনুভূতি, সেই নিরাপদ আশ্রয় আমার।।
আমি মুখ তুলে ওর দিকে তাকালাম
আমি: ফাহাদ
ফাহাদ: বিশ্বাস হয়েছে?
আমি: কই ছিলে এতদিন? কোথা থেকে আসলে? কিভাবে থাকলে আমাকে ছাড়া এতদিন? একটু ও কষ্ট হয় নি?
ফাহাদ: আমি তোমাকে বাসায় নিয়ে সব টা বলবো
আমি: আমি তোমাকে মাফ করবো না ফাহাদ, অনেক কষ্ট দিয়েছ, ভালোবাসলে এত কষ্ট দিতে পারতে না।। আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না তুমি আমার সামনে।।
ও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমার কপালে,গালে, ঠোঁটে কিস করল, কিছুক্ষন পর ছেড়ে দিলো
ফাহাদ: বিশ্বাস হয়েছে?
আমি: আমি লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিলাম, মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললাম।।
চলবে
#Ayesha
#ArrangedMarriage
পর্ব-30
ও ওর ঠোঁট দুটো আমার ঠোঁটে ডুবিয়ে দিল, কিছুক্ষন পর ছেড়ে দিলো
ফাহাদ: বিশ্বাস হয়েছে?
আমি: আমি লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিলাম, মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললাম।।
ও আমাকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসলো সবাই স্বাভাবিক ভাবেই আছে, কারোর কোনো এক্সাইটমেন্ট নেই, আমি দৌড়ে মার কাছে যেতে চাইল ও খোপ করে আমার হাত ধরে ফেললো
আমি: ছাড়ো মাকে বলে আসি
ফাহাদ: সবাই জানে
আমি: কিইই? (ও তাড়াতাড়ি আমার মুখ চেপে ধরে আমার রুমে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়)
ফাহাদ: যাও ফ্রেশ হয়ে আসো
আমি: কোথাও যাবনা আমি আগে বলবে কি করেছ এতদিন? কোথায় ছিলে? হটাৎ করে কোথা থেকে আসলে? আর বাবা মা সবাই কিভাবে জানে তুমি আসছ? বলো?
ফাহাদ বিছানায় বসে হাত মুঠো করে কপালে 2বার লাগালো, বিছানা থেকে উঠে জানালার রেলিং ধরে দাঁড়ালো।।
ফাহাদ: আমি ওইদিন ঢাকা যাওয়ার টিকিট ঠিকই কেটে ছিলাম কিন্ত শেষ পর্যন্ত ঢাকা যেতে পারিনি।
আমি: কেন?
ফাহাদ: তুমি যখন ঐভাবে আমার চলতি ট্রেনের দিকে তাকিয়ে ছিলে ইচ্ছে করছিল লাফ দিয়ে নেমে যাই, নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে ভিতরে বসলাম, হটাৎ আমার ফোন বেজে উঠলো আমি রিসিভ করি, অভিক আমার সাথে ভালো মন্দ কথা শেষ করে জিজ্ঞেস করে আমি কোথায়? আমি বললাম ট্রেনে আছি, ঢাকা যাচ্ছি। কাল চিটাগং যাবো।। ও তখন বলল ও আজকেই চিটাগং যাবে, ওর সাথে ওর দুলাভাই এর গাড়ি আছে আমি চাইলে যেতে পারি, আমিও ভাবলাম কাল আবার কষ্ট করে যাবো তাই কিছু না ভেবেই ওকে হ্যাঁ বলে দেই এবং পরের স্টেশনেই নেমে যাই, তখন একটা দুর্ঘটনা হয় আমার ফোন টা চুরি হয়ে যায়, অভিক ঐখান থেকে আমাকে নিয়ে যায়।।
পরের দিন আমি চিটাগং পৌঁছে যেই কেস টা ঝুলে ছিল ওইটা সলভ করতেই এতটা সময় নষ্ট হয়ে যায়, এত টা বিজি ছিলাম আমি তোমাকে ফোন করার টাইমেই পাইনি। তাও যতটা সময় চেষ্টা করেছি ততটা সময় ফোন অফ না হয় বিজি। আমি 16দিনের মাথায় ঢাকা আসি, একটু লেট না করে ও আমি বাসা যেয়ে শাওয়ার নিয়ে নেত্রকোনা আসি।। তোমার বাসায় ফোন দিলাম কারোর ফোন ধরছে না। তোমার ফোনের কথা আর কি বলবো? তারপর আমি রনিকে ফোন দেই ও জানায় তুমি হসপিটালে অ্যাডমিট, আমার মাথা কাজ করছিল না আমি দৌড়ে যাই হসপিটালে কিন্ত ঐখানে যেয়ে যা দেখলাম তার জন্য আমি মুটেও প্রস্তুত ছিলাম না।।
এতক্ষণ আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে তার কথা গুলো শুনছিলাম, আর চোখের সামনে আমার কষ্টের দিন গুলো ভেসে উঠলো,
আমি: কি দেখলে?
ফাহাদ: আমান তোমাকে ওর হাতে করে খাইয়ে দিচ্ছে
আমি: আর তুমি অন্য কিছু ভেবে নিলে?
ফাহাদ: পিছন থেকে এমন ভেবে ছিল মনে হচ্ছিল ও তোমায়….
আমি: কি?
ফাহাদ: কিছুনা
আমি: বল
ফাহাদ: কিস করছে
আমি: ছি ফাহাদ
ফাহাদ: সরি
আমি: তোমার আমাকে নিয়ে এমন নুংরা মেন্টালিটি ছিল? কিভাবে ভাবলে তোমার আয়েশা অন্য ছেলের সাথে… ছি
ফাহাদ: আমার মাথা কাজ করছিল না তাই রাগে ঐখান থেকে বের হয়ে রনির বাসায় যাই
আমি: তারমানে রনি ভাই তোমার কথা শুনেই এইগুলা আমাকে বললো?
ফাহাদ: হুমম
আমি বিছানায় বসে পরলাম, চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে
আমি: আমি ডির্টি ছিলাম ফাহাদ?
ফাহাদ: (আমার সামনে বসে আমার চোখের সামনে বসে চোখে পানি মুছে দিত চাইলো, আমি ওর হাত সরিয়ে দিলাম ও তাও জোর করেই মুছে দিল) কখনো না
আমি: আমি কোনোদিন রনি ভাইকে ক্ষমা করব না কোনোদিন না।। আর তোমার কথা কি বলব
ফাহাদ: সরি আয়েশা
আমি: ফিরিয়ে দিতে পারবে আমার সেই দিন গুলো? ভুলিয়ে দিতে পারবে? পারবেনা
ফাহাদ: মাথা নিচু করে হুমম বললো
আমি: সবাই কিভাবে জানলো তোমার কথা?
ফাহাদ: আমি ঐখান থেকে রনির বাসায় যাই আমার চোখ মুখ লাল দেখে ও জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? অনেক জোরাজোরিতে বলি সবটা, তারপর ও তোমায় ফোন দেয়, আমি না করার পরেও ও তোমাকে এইসব বলল, ও তোমাকে এইসব বলতে বলতে এক পর্যায় লিমিট ক্রস করে যায়, তাই ওর থেকে ফোন নিয়ে কেটে দিয়ে ওকে এক থাপ্পর দেই, ও আমাকে অনেক বুঝায় তোমাকে ভুলে যেতে। ও আমার মাথায় খুব ভালো করে ঢুকিয়ে দিয়েছিল তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করে নেই, আমি রাগে অনেক ভাঙচুর করেছি।। তার কিছুক্ষন পর যখন তুমি আসলে ও আমায় আলমারির পিছনে লুকিয়ে থাকতে বলেছিল, আমিও দেখতে চেয়েছি আসলে তুমি আমার আয়েশা আছ কি না, কিন্ত তোমার কান্না দেখে আমি নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না, আমাকে আলমারির পিছনে থেকে বের হতে দেখেই ও তোমায় ঐভাবে বের করে মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল।। আমি রাগে ওর কলার চেপে ধরি ও আমায় বলল আর একটু দেখতে, তারপর আমি রাগে টেবিলে থাকা গ্লাস টা জুড়ে আচার মারি।। তার পরেই তোমার দরজা খুলার জন্য আকুতি শুনে ও দরজা খুলে দেয়, আমি তোমার পিছনেই দাড়িয়ে ছিলাম, হটাৎ তোমার হাতে রক্ত দেখে নিজেকে সামলাতে না পেরে তোমার সামনে যাই।। তোমাকে ঐখান থেকে হসপিটালে রেখে ময়মনসিংহ আসি, মা বাবা আমাকে দেখে অনেক কান্না কাটি করে তোমার কথা বলে। পরের দিন আবার আমি নেত্রকোনা আসি হসপিটাল আসতেই তোমার বাবা মা বনু সায়েম সবটা বুঝানোর পরে নিজের উপর প্রচুর রাগ হচ্ছিল, কিভাবে নিজে লয়ার হয়ে চোখের দেখা, কানে শুনা কথা বিশ্বাস করলাম, মাঝখান থেকে তোমাকে ভিক্টিম বানিয়ে দিলাম।।
আমি তোমাকে যখন দেখতে গিয়েছিলাম তখন তুমি ঘুমে ছিলে তাই ডাকিনি।।
পরের দিন আমানের সাথে দেখা করি ওর সাথে ভালো ফ্রেন্ড শিপ হয়ে যায়।। আজ তোমাকে দেখতে আসছিলাম।। বাসায় অনেক্ষন বসে ছিলাম, বোর হচ্ছিলাম তাই রেল ক্রসিং ঘুরতে এসে তোমাকে পেলাম।। তারপরের টা তো তুমি জানোই
আমি ওর এইসব কথার পরে কোনো জবাব দিলাম না। ও আছে সবাই জেনেও আমাকে কেউ কিছু বলেনি। আমি কি কারোর কিছু হই নাকি? যদি হতাম তাহলে এইভাবে কষ্ট পেতে দিত না।। আর ফাহাদ তোমাকে এর শাস্তি আমি দিবো এতদিন কেন আমায় কষ্ট দিলে ইচ্ছে করে? এখন দেখ কষ্ট কাকে বলে।।
আমি উঠে কাপড় বের করে ওয়াশরুম ঢুকে যাই, এই ঠাণ্ডায় 30মিনিট ঠান্ডা পানির নিচে শাওয়ার নেই, ফাহাদ অনেক্ষন দরজা খুলার জন্য বলছে কিন্ত আমি আমার মতই সব করছি।।
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে লিভিং রুম চলে গেলাম।। ফাহাদ আমার পিছন পিছন আসলো।। আমি টিভি দেখছি ও আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আমায় দেখছে, আমার মুটেও ভালো লাগছে না।। আমি উঠে ড্রায়নিং এ চলে গেলাম, খেতে বসেও শান্তি নেই, খাওয়া শেষ করে ছাদে গেলাম, সন্ধ্যা হয়ে গেছে কেমন ভূতের বাড়ির মত লাগছে, সে এখনো আমার পিছু পিছু ঘুরছে, কিন্ত কিছুই বলছে না, বেটা আমার পিছুই ছাড়ছে না। আমিও কথা বলবো না দেখব কি করে, আমাকে এত কষ্ট কেন দিল? আমি কি এত সহজে ছেড়ে দিবো নাকি?
আমি রুমে এসে যেয়ে দরজা বন্ধ করবো সে এই মুহূর্তে হাত দিয়ে আটকে দিয়েছে, আমি ছোট মানুষ তার হাতির মত বডির সাথে পারি নাকি? তাই সেচ্ছায় ছেড়ে দিলাম। হেরে যাবো জেনেও লড়ে যাওয়া আমার মত বুদ্ধিমানদের কাজ না।।
আমি চেয়ার টেনে টেবিলে বসলাম, তিনি পিছনে চেয়ার ধরে দাড়িয়ে আছে।।
আমি আমার মত পরছি, হটাৎ পিছন থেকে মনে হলো হালকা হয়ে গেছি, পিছনে তাকিয়ে দেখি তিনি নেই, ড্রেসিং টেবিলে কি জানি খুঁজছে আমি পাত্তা দিলাম না, রুম থেকে বের হয়ে গিয়েছে আমি সেই ফাঁকে ফোনটা হাতে নিতেই সে হাজির দরজা বন্ধ করার শব্দ শুনে মোবাইল টা জামার উপর রেখে ওরনা দিয়ে ঢেকে আবার পড়া শুরু করলাম।।
মনে হলো মাথায় কিছু পড়ছে আমি চুলে হাত দিলাম, হাত লাগতেই হাত পুরা ভিজে গেল, আমি হাত সামনে এনে দেখি কুমারীকা তেলের গন্ধ। রাগে সারা শরীর জ্বলছে, চুলে তেল দেইনা এক থেকে দেড় বছর হয়ে যাবে, তেল দিলে তেল উঠাতে পারিনা এই ভয়ে তেল ও দেয়া হয় না, কিন্ত ও এটা কি করলো? রাগে উঠে দাড়াবো সে আমার কাঁধে ধরে ঠাসা দিয়ে আবার আগের মত চেয়ারে বসিয়ে দিল।। চুলের ক্লিপ খুলে মাথা চুল মালিশ করে দিচ্ছে,, আমিও আরাম পেয়ে চেয়ারে মাথা এলিয়ে দিলাম, কিন্ত এমন ভান করে আছি যেন খুব বিরক্ত হচ্ছি।।
ওর তেল দেয়া শেষ হলে চিরুনি নিয়ে চুল উল্টা পাল্টা কি করছে, আমি এক টানে ছাড়িয়ে নিয়ে দেখি উল্টা পাল্টা বেনুণী করা শুরু করছে আমি চুল ঠিক করে বেনুনী করে শুয়ে পরলাম।।
ও লাইট অফ করে কম্বল আমার গায়ে দিয়ে নিজেও আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে, আমি অনেক আটকিয়েও ওকে জড়িয়ে ধরা থেকে সরাতে পারিনি।
ফাহাদ: বউ শুন
আমি: চুপ আছি
ফাহাদ: ওই বউ
লক্ষ্মী বউ
সোনা বউ
ভালো বউ
জামাই পাগল বউ
পঁচা বউ, খাটাশ বউ, নির্দয় বউ, জামাই এর সাথে কথা না বলা বউ,
আমি: কি সমস্যা প্যান প্যান ঘ্যান ঘ্যান করতেছ কি জন্যে?
ফাহাদ: বউ এর রাগ ভাঙাই
আমি: সরো আমি ঘুমাবো
ফাহাদ: নো ওয়ে
আমি: আপনি থাকেন আমি উঠে যাচ্ছি (বলেই উঠতে যাবো কিন্ত ও আমাকে আবার শুয়ে দেয়)
ফাহাদ: শুন শুন তোমাকে একটা গল্প শুনাই
আমি: আপনার গল্প আপনার কাছেই রাখেন
ফাহাদ: আপনি? এক সাথে আপনি হয়ে গেলাম?
আমি: যে যেমন তার জন্য তেমনি দরকার
ফাহাদ: জীবনে শুনেছ বিয়ের পর স্বামী স্ত্রী কখনও কুমার কুমারী থাকে?
আমি: মানে?
ফাহাদ: আমি শুনেছি, আই মিন দেখেছিও
আমি: কোথায়?
ফাহাদ: ওইটা তোমার জন্য ধাঁধা (বলেই চোখ টিপি দিয়ে ব্রু নাচাচ্ছে)
আমি: (আমি ভাবতে বসলাম লাগলাম এমন ও হয় নাকি? হলে হোক আমার কি? তবে বুদ্ধি করে কিছু একটা তো বলা লাগবে)
ফাহাদ: কি হলো ঐদিনের মত ঢং করে চুল ফু দিয়ে বল দেখি
আমি: আর কে আমি আপনি
ফাহাদ: এক্সেটলি
আমি ওর কথা শুনে হা হয়ে আছি, আমি তো জাস্ট ড্রামা করে বলেছি, এখন ও কি করবে? আমি আস্তে করে উঠতে চাইলাম ও আবার আমায় ধরে ফেললো
ফাহাদ: কোথায় যাচ্ছ? আমি না থাকায় যাক তোমায় বুদ্ধি টা একটু বেড়েছে কংগ্রেস কংগ্রেস, এখন তোমাকে উপহার দিবো
আমি: কি?
ফাহাদ: গেস কর (আবার ব্রু নাচাচ্ছে)
আমি: ছি
ফাহাদ: কিসের ছি?
আমি: ছাড়ো আমি বুবুর সাথে শুবো।
ফাহাদ: ইস জামাই রেখে অন্য ঘরে যাওয়াচ্ছি (কথা শেষ করেই আমার উপর উঠে পরলো)
আমি: ও মাগো মরে গেলাম, সর শয়তান ছেলে, আমাকে হসপিটালের বেড পর্যন্ত শুয়িয়ে এখন এসেছিস ঢং দেখাতে? আমি তোর ঢং এ ভুলছি না।। ছাড় বলছি, ছাড় শয়তান
ফাহাদ: ওই মেয়ে ওই চুপ, এইসব কি কথা জামাইকে তুই বলে কেউ ফাজিল? ছাড় বলছি ছাড় শয়তান কি? মনে হচ্ছে আমি ডিবজল আর তুই নিরুপায় নায়কা
আমি: (আমি ওর কথা শুনেই হেসে দিলাম)
ফাহাদ: (এমন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে আমাকে হাসাতে পেরে সে সার্থক)
আমি ওর তাকানো দেখে হাসি থামিয়ে দিলাম।। এখন সে হাসতে হাসতে আমার ঘাড়ের নিচে মুখ ঘুজেছে।।
কিছুক্ষন পর ফাহাদ জিজ্ঞেস করলো
ফাহাদ: আচ্ছা লাভ বাইট টা যে দিয়ে গিয়েছিলাম ওইটা কই? পাচ্ছি না তো
আমি: ডান পাশে
ফাহাদ: (বাম দিকে ঘুরিয়ে দেখছে) প্রায় মিলিয়ে গেছে আবার দেয়া লাগবে
আমি: ওকে এক ধাক্কায় সরিয়ে দিলাম
চলবে