#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_১২
আনহা’র কথা শুনে অভ্র থমকে দাঁড়িয়ে আছে। কখনো ভাবিনি এরকম একটা পরিস্থিতিতে পড়বে সে। এদিকে আনহা’র চোখের পানিতে অভ্র’র পাঞ্জাবি ভিজে একাকার! শক্ত করে জরিয়ে আছে সে অভ্র কে কিন্তু চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। খানিকক্ষণ পড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আনহা কে ডাকে সে..
– আনহা!
– …..
– আনহা! কি হচ্ছে টা কি ছাড়ো আমায়!
অভ্র’র থমকানিতে আনহা ছেড়ে দেয় অভ্র’কে। অতঃপর দাঁড়িয়ে নিশ্চুপ হয়ে কাঁদতে থাকে। অভ্র আবার বলে..
– কান্না থামাও!
– …
– ধমক না খেতে চাইলে কান্না থামাও। রাগিও না আমায়!
আনহা অনেক কষ্টে কান্না থামায়। অতঃপর অভ্র বলে উঠে..
– আজ তোমার বিয়ে আর তুমি অন্য একটা ছেলেকে এভাবে জরিয়ে ধরে আছো কেন? মানুষ কি বলবে দেখে!
আনহা অশ্রু ভরা চোখে তাকিয়ে আছে অভ্র’র দিকে। অভ্র আবার বলে উঠে..
– এটা নিয়ে তো তোমার সাথে আমার আগেই কথা হয়েছিল। আমি তোমাকে আগেই না বলে দিয়েছি!
আনহা ভারী গলায় বলে..
– তো আজ আপনি বিয়ে করছেন কেন? আপনি তো বলেছিলেন বিয়ে করবেন না!
– আমি বিয়ে করতে চায়নি আর এখনো চাইনা কিন্তু আমার বোনের কথায় আমি না করতে পারি না। ওর জন্য’ই বিয়ে করছি আমি! আর ওর পছন্দের!
– কেন? আপনার পছন্দ নেই নাকি!
– কিন্তু আমি তোমার মতো স্বার্থপর না আনহা! নিজের স্বার্থ’র চেয়ে বেশি আমার বোনের খুশি আমার কাছে বেশি।
– আমি স্বার্থপর!
– হুম তাই তো! একবার ভেবেছো তুমি নিজের খুশির জন্য আমার কাছে এসেছো কিন্তু যখন বিয়েতে তোমাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না তখন কার অপমান হবে! তোমার মা- বাবা! এটা কি সত্যি ঠিক! বিয়েতে কি তারা জোর করেছিলো তোমায়! তুমি স্বেচ্ছায় বিয়েতে রাজি হয়েছে আর এখন না বলছো।
আনহা কাঁদতে কাঁদতে বলে..
– সেটাতো রাগে বলেছি!
– এইজন্য’ই বলে রেগে করা কোনো কাজ কখনো সঠিক হয় না। যাই হোক বাসায় যাও তোমার বর এতোক্ষণে এসে পড়েছে।
– ….. ( নিঃশব্দে কাঁদতে থাকে )
– আচ্ছা গাড়িতে উঠো আমি ছেড়ে দিয়ে আসছি!
আনহা এবার রেগে বলে..
– একাই যখন এসেছি তখন একাই যেতে পারবো!
অভ্র একটু সাইড হয়ে হাত দিয়ে চলে যেতে বলে। আনহা রেগে সেখান থেকে চলে যেতে নেয়। তখন পিছন থেকে অভ্র বলে…
– তুমি হয়তো ভাবছো আমি তোমার সাথে যা করেছি তা ঠিক করেনি, তুমি হয়তো আরো রেগে যাবে কিন্তু একটা কথা মনে রেখো, একজন কে দুঃখ দিয়ে অন্যজন কখনো সুখী হতে পারে না। আর সে যদি আপনজন হয় তখন তো কথাই নেই। আপনজন হারানোর কষ্ট আমি বুঝি। নিজের মা’কে হারিয়েছি। কিন্তু তোমার সব আছে সেটার অবহেলা করো না। শেষে কিছুই পাবে না।
আনহা অভ্র’র মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সব কিছু শোনে। অতঃপর আবারও এসে অভ্র’র সামনে দাঁড়ায়। বলে উঠে…
– আমি সত্যি আপনাকে অনেক ভালোবাসি! তবে… হয়তো আমার ভাগ্যে আপনি ছিলেন না। ভালো থাকবেন আপনি! আবারও বলছি আমি আপনাকে ভালোবাসি!
অতঃপর আনহা চলে যায় সেখান থেকে। অভ্র একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে যার চলে যাওয়ার পানে!
.
মেহেরিন পুরো বাড়ি খুঁজে যাচ্ছে অভ্র কে। লেহেঙ্গা পড়েছিল তবে এখন হাঁপিয়ে সব খুলে একটা হুডি আর জিন্স পরে আছে।পুরোটাই রাগে,আর এই রাগের কারন অভ্র। সবাই অভ্র কে না খুঁজে মেহেরিন কে খুঁজছে! এদিকে অভ্র’র ফোন ও বাসায় যার কারনে কেউ তাকে পাচ্ছে না। মেহেরিন সোফায় বসে চকলেট খাচ্ছে আর সদর দরজা’র দিকে তাকিয়ে আছে। কখন অভ্র আসবে?
অভ্র আনমনে বাড়িতে ঢুকে দেখে মেহেরিন সোফায় বসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সবার মুখ গম্ভীর। অভ্র মাথায় হাত দিয়ে বলে উঠে..
– আসলে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল! তাই…
মেহেরিন অভ্র’র থেকে মুখ সরিয়ে নেয়। অভ্র ধীরে ধীরে মেহেরিন’র পাশে এসে বসে। অতঃপর বলে..
– কি হয়েছে?
মেহেরিন চোখ ঘুরিয়ে একবার অভ্র’র দিকে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। অভ্র মুচকি হেসে বলে..
– আরে তোমার অন্য ভাবী তো আনতে যায় নি। একটু কাছে গিয়েছি আর চলেও এসেছি।
মেহেরিন মুখ ফুলিয়ে বলে..
– তোমাকে না বলেছিলাম আজকের দিনে কোনো কাজ করবে না।
– আচ্ছা বাবা সরি! সত্যি অনেক লেট হয়ে গেছে। এখন চলো নাহলে তোমার দা কে তারা বউ দিবে না। শেষে আর ভাবী পাবে না।
অভ্র’র কথায় সবাই হেসে। মেহেরিন খিল খিল করে হেসে উঠে। অতঃপর সে অভ্র কে তৈরি হতে যেতে বলে তবে মেহেরিন আর তৈরি হয় না। যা পড়ে আছে সেইভাবেই চলে যায় বিয়েতে। কারন ওইসব পড়ে সে দৌড়াদৌড়ি করতে পারবে না আর কেউ তাকে জোর ও করেনি।কারন জোর করে লাভ নেই! এসব পড়ে থাকা’র মতো ধৈর্য্য তার নেই!
খানিকবাদেই অভ্র তৈরি হয়ে এলে সবাই রওনা দেয় মেয়েদের বাড়ির জন্য। অভ্র এখন অনেকটা স্বাভাবিক! বাস্তব মেনে নিয়েছে সে! সবাই হইহুল্লোড় করছে আর বেশি করছে তো মেহেরিন। তবে সবাই খুশি! শুভ্র খানের সাথে অতিরিক্ত গার্ড দেওয়া হয়েছে কারন তার জীবনের রিস্ক আছে। কাল বিকালেই ব্যাক করবেন তিনি। অভ্র খানের বিয়ে উপলক্ষে মিডিয়া আগে থেকেই এসে উপস্থিত! বিয়ের জন্য একটা পাঁচ তারকা হোটেলে সব ব্যবস্থা করা হয়। মেয়ের পক্ষ থেকে সবাই এসে এখানেই উপস্থিত হবে। মেহেরিন ওরা সবাই সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয়।
মেহেরিন দৌড়ে আগে আগে চলে যায়। কাব্য, নিশি আর নীল ওদের পিছনে যায় বাকিরা অভ্র’র সাথে আসে। অভ্র ভেতরে এসে দেখে খুব ভালোভাবেই ডেকোরেট করা। সব লোকজন সেখানে তবে কনে কে দেখা যাচ্ছে না! সবাই তার এসে কথা বলছে, হুট করেই আলো নিভে গেল আর একটা মাত্র আলো জ্বলে উঠলো। সেই আলোর নিচে মেহেরিন কে দেখা যাচ্ছে! একটা কালো কারুকাজের লেহেঙ্গা পড়া। অভ্র একটু অবাক হলো তবুও ভাবল মেহেরিন’র মুড সবসময় চেঞ্জ হয়। এটাই স্বাভাবিক। ভারী মিষ্টি লাগছে মেহেরিন কে। একদম ফ্রেশ মুখ কোনো সাজ নেই তাতে, শুধু মুখে একগাল হাসি। অভ্র ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে মেহেরিন বলতে শুরু করে…
– আসসালামুয়ালাইকুম সবাইকে, আবার ধন্যবাদ ও। কারন আজ আমাদের এই খুশির একটা মুহুর্তে আমাদের সঙ্গ দেবার জন্য। তো সবার আগ্রহ এখন একজন সে হলো খান পরিবারের বড় বউ মানে আমার মিষ্টি ভাবী। তো আর কাউকে অপেক্ষা করাবো না আমার মিষ্টি ভাবী এখন’ই চলে আসবে।
অতঃপর সেই আলোও নিভে গেল।
অভ্র মিষ্টি ভাবী ডাকটা শুনে খানিকটা অবাক হলো! অতঃপর সদর দরজা খুলে গেল। একটা আলো এসে পড়লো সদর দরজার মুখে। অভ্র নিচ থেকে উপর অবদি তাকে দেখছে। গাঢ় লাল রঙের ভারী কারুকাজের একটা লেহেঙ্গা, দু’হাত ভর্তি লাল চুড়ি, সেই হাতেএকটা গোলাপ ফুল, অভ্র আস্তে আস্তে তার মুখ দেখছে। মুখটা নিচু করা! অভ্র ভ্রু কুঁচকে ভালো ভাবে দেখার চেষ্টা করছে। মেয়েটা মুখ উপর করলে অভ্র প্রায় চমকে গেল। এতো আনহা! অভ্র চোখ বড় বড় করে তাকে দেখছে! হ্যাঁ এটা আনহা’ই ! কোনো সন্দেহ নেই। সদর দরজায় দাঁড়িয়ে আছে আনহা। সব আলো একসাথে জ্বলে উঠল। মিউজিক বাজতে শুরু করলো। তবে আনহা’র মুখে হাসি নেই, সে এতোক্ষণ নিচের দিকেই তাকিয়ে ছিল। সবে সামনে মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে অভ্র তার সামনে দাঁড়ানো। সে অবাক চোখে তাকে দেখেই যাচ্ছে। বোঝার চেষ্টা করছে এটা তার কল্পনা না তো!
#চলবে….