#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_১৭
আহিয়ান আজ নিহা’র জন্য অন্যরকম কিছু ভাবছে। যাতে নিহা আর আহি’র প্রমে পড়ে। কিন্তু কি করা যায়? এসব ভাবতে ভাবতে প্রায় আজ ৩ দিন হলো। এই ভাবনার কারনে নিহা’র সাথে এখন অবদি দেখা করেনি আহিয়ান। এদিকে ৩ দিন ধরে আহিয়ান’র কোনো খোঁজ না পেয়ে নিহা’র একটু চিন্তা হতে লাগলো। যে প্রতিদিন এসে তাকে বিরক্ত করে আজ ৩ দিন হলো তার কোনো দেখা নেই। ঠিক আছে তো? নাকি কিছু হয়েছে! চিন্তা কমছে না কিছুতেই। নিহা বাসায় এস ডেভিল দিয়ে আহিয়ান’র ফোন নাম্বার আর বাড়ির ঠিকানা নিল। অতঃপর বাসার সামনে গিয়ে ফোন দিল আহিয়ান কে। কয়েকবার ফোন বাজার পর ওপাশ থেকে কেউ রিসিভ করল। বলে উঠল….
– হ্যালো কে বলছেন?
– ভূতনি বলছি!
আহিয়ান লাফ মেরে উঠে। ফোন আবার চেক করে অতঃপর বলে উঠে..
– কে কে বলছেন?
– নিহারিকা নিহা খান বলছি! এখনও চিনতে পারছেন না নাকি ভুলে গেছেন!
– আরে ভূতনি তুমি! না না তোমাকে কি করে ভুলবো!
– তাহলে বাসা থেকে বের হন, দাঁড়িয়ে আছি আমি!
– কোথায়?
– আপনার বাসার সামনে!
– কিহহহ! ১০ সেকেন্ড দাঁড়াও আমি এক্ষুনি আসছি!
বলেই ফোন টা রেখে ঝড়ের গতিতে বের হলো আহিয়ান।
বাইরে এসে দেখে গাড়ির উপরে বসে আছে নিহা। আহিয়ান তাকে ভূতনি বলে ডাক দিলে নিহা চোখের সানগ্লাস টা খুলে আহিয়ান’র দিকে তাকায়। দেখে একটা জিন্স পড়া আর হলুদ রঙের টি শার্ট পড়া। উস্কো খুস্কো চুল, মুখের দাড়ি ও খানিকটা বেড়ে গেছে। নিহা বলে উঠে..
– আপনি আহিয়ান চৌধুরী তো!
– নিচে নামো!
নিচে নেমে বলে..
– এ কি হাল আপনার!
– তোমার জন্য সব!
– আমার জন্য!
– হ্যাঁ তোমারই জন্য, তোমাকে ইমপ্রেস করার চক্করে আমার এই হাল। গত ৩ দিন ধরে ঘর থেকেই বের হয় নি।
– ওহ্ আচ্ছা এই কারনে আপনি বাসা বের হন নি। আর আমি ভাবলাম..
– কি ভাবলে।
– ভাবলাম আপদ বিদায় হয়েছে,
– এতো সহজে না। চলো বাসার ভিতরে চলো।
– না আমি শুধু আপনার খবর নিতে এসেছিলাম। এখন সব ঠিক আছে আমি গেলাম।
– কিন্তু ভূতনি শোন তো।
– কিহহ?
– হয়তো এখন আমার সাথে বাসার ভিতরে চলো নাহলে তোমার বিকেল আমাকে দাও।
– আপনাকে ভয় পাই নাকি আমি!
– রিকুয়েস্ট করছি তো। এখন বলো..
– দেখছি!
– তার মানে তুমি আসবে।
নিহা কিছু না বলে গাড়িতে উঠে চলে গেল।
.
নিশান আজ পুরো ভার্সিটি জুরে শুধু নিশি কে খুঁজতে লাগলো। নিশি কে খুঁজতে খুঁজতে আনমনে হাঁটতে গিয়ে কারো সাথে ধাক্কা খেলো। তার হাতে থাকা সমস্ত বই পড়ে গেল। নিশান নিচের দিকে তাকিয়ে সরি বলে বই গুলো তুলে তাকে দিতে লাগলো। আর বলতে লাগলো…
– সরি আপু খেয়াল করিনি, আসলে একটা বাঁদর মেয়েকে খুঁজছিলাম। মেয়েটা কাল আমার বারো টা বাজিয়ে দিয়েছে। তার জন্য’ই এসব হলো।
বলেই মেয়েটার দিকে তাকাল। তাকে দেখে অবাক হয়ে নিশান। এ যে নিশি! নিশি ভ্রু কুঁচকে বলল…
– আমাকে খুঁজছিলে বুঝি!
– তু..তুমি!
– কেন অবাক হলে নাকি!
– তুমি এখানে কি করছো।
– এই ভার্সিটির স্টুডেন আমি।
– ….
– আমাকে কেন খুঁজছিলে?
– সরি বলার জন্য!
– বাহ অনেক বেশি সরি বলো তো তুমি!
– ….
– এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আচ্ছা যাই হোক নিজের ভুল গুলো স্বীকার করছো তাহলে, নাহলে সরি বলতে আসবে কেন?
– হুম আমি জানি আমি ভুল করেছি, কিন্তু তুমি! তুমি এমন কাজটা কেন করলে?
– নাহলে কি তুমি আজ এসে সরি বলে নিজের ভুল স্বীকার করতে!
– ….
– কি হলো বলো?
– হয়তো না কারন তুমি সত্যি টা জানতে না।
– হুম এটাই!
– কিন্তু তোমার এই কান্ড তো আমার চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে!
– মানে…
– কিছু না! কফি খাবে, খেতে খেতে কথা বলবো।
– ঠিক আছে!
.
নীল ভার্সিটির ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। কিছু নতুন চেহারা আজ দেখা যাচ্ছে ভার্সিটিতে। হয়তো তারা প্রথম বর্ষের স্টুডেন। ইশা দূর থেকে নীল কে দেখে দৌড়ে আসতে লাগল। নীল ওকে দেখে হতাশা প্রকাশ করল। এদিকে ইশা আসতে গিয়ে একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা খেলো। ইশা দাঁড়িয়ে মেয়েটাকে ইচ্ছে মতো ঝাড়তে লাগলো। মেয়েটাও কম না সেও কথা শুনাতে লাগলো ইশা কে। দু’মিনিটের মধ্যেই দু’জনের মধ্যে ঝড় উঠতে লাগলো। নীলের তো মনে হচ্ছে এবার মারামারি করবে। মেয়েটা পিছনে ঘুরে থাকার কারনে নীল তাকে দেখতে পাচ্ছে না। নীল আর বসে রইল না, উঠে তাদের কাছে যেতে লাগলো। এরমধ্যে হঠাৎ করেই ইশা মেয়েটাকে চড় দেবার জন্য হাত তুলল। মেয়েটাও কম না ইশা’র হাত ধরে মুচরে দিয়ে পিছনে ঘুরিয়ে নিল। নীল ওর বন্ধুর সবাই দৌড়ে সেখানে গেল। নীল এবার মেয়েটার মুখ দেখল, লাল ফর্সা গায়ের রং, হরিণী চোখ দেখতে বেশ লাগছে। তবে মুখের কোথাও বিন্দু মাত্র হাসি নেই কারণ সে রেগে আছে। নীল এখানে একটা মিষ্টি হাসির অভাব করছিলো।এর মাঝেই ইশা চেঁচিয়ে নীল কে ডাক দিলো। নীল বলে উঠে..
– এই মেয়ে ওর হাত ছাড়ো!
– কেন ছাড়বো? এই মেয়ে যখন আমায় মেরেছে তখন!
– তুমি ওর হাত ছাড়ো, কে তুমি? দেখে তো মনে হচ্ছে নতুন স্টুডেন!
– আমি নীলাশা! আর হ্যাঁ আমি নতুন স্টুডেন। আর নতুন স্টুডেন বলেই আমাকে না জেনে চুন্নি টা আমাকে মারতে আসছিলো।
ইশা বলে উঠে..
– কি তুই আমাকে চুন্নি বললি! বেবী কিছু বলো না!
– ওহ্ আচ্ছা এটা তাহলে তোমার বেবী! তাই তো বলি এতো দরদ কিসের!
নীল ধমক দিয়ে বলে..
– এই মেয়ে হাত ছাড়ো ওর! তুমি জানো ও তোমার সিনিয়র। সিনিয়রের গায়ে হাত তুলো কিভাবে তুমি।
– যেভাবে এই চুন্নি তুলে ঠিক সেভাবে!
– বেবী!
নীল আর কিছু না ভেবে নীলাশা’র হাত ধরে ইশা’র হাতটা ছাড়িয়ে নিলো। আর বললো…
– এরপর যাতে এরকম করতে না দেখি বুঝলে তুমি!
বলেই নীল ইশা কে নিয়ে চলে গেল। নীল রাবার পর’ই নীলাশা যেখানে দাঁড়িয়ে বক বক করতে লাগলো..
– ইশ এই চুন্নি টার বেবী’র কথা আমি কেন শুনতে যাবো হুমম! এর পরের বার এই চুন্নি’র বেবী টা আসলে তার হাতটাও মুচরে দেবো। দুই টাকে এক সাথে শিক্ষা দেবো। দেখবো কি বলে আমায় ! এই নীলাশা কাউকে ভয় পায় না!
.
নিহা বিকালে আহিয়ান’র দাওয়া ঠিকানায় চলে যায়। গিয়ে দেখে একটা নদী! আহিয়ান বসে আছে সেই নদীর ঘাটে। নিহা আসলেই আহিয়ান দাঁড়িয়ে যায়। নিহা জিজ্ঞেস করে…
– এখানে কেন আমরা!
– ঘুরবো বলে!
– কোথায় ঘুরবো!
– এই নৌকায় করে পুরো নদীতে ঘুরবো।
– তারপর!
– তারপর আর কি আমার অনুভূতি সম্পর্কে তোমায় বলবো আর তুমি আমায় বলবে!
– ওহ আচ্ছা!
– হুম চলো এখন!
বলেই নিহা’র হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল। অতঃপর দুজনে নৌকায় উঠল। কিন্তু নৌকায় কোনো মাঝি নেই। তাহলে নৌকা চালাবে কে? আহিয়ান মৃদু হেসে বলল..
– নৌকা আমি চালাবো!
– আমি মরার কোনো শখ নেই!
– আরে ভূতনি আমি পারবো। টানা ২ ঘন্টা ধরে প্র্যাকটিস করেছি।
– আপনার মনে হয় এই ২ ঘন্টার প্র্যাকটিসে আপনি পারবেন নৌকা চালাতে!
– অবশ্যই!
– আমি গেলাম!
– আরে আরে ভূতনি এমন করো না প্লিজ! বসো না।
আমি বললাম তো আমি পারবো। কথা দিচ্ছি তোমায়!
নিহা একবার আহিয়ান’র দিকে তাকাল। অতঃপর বসে পরল। আহিয়ান নৌকা চালাতে শুরু করল। তবুও নিহা’র খুব ভয় করছে। কিন্তু আহিয়ান বেশ ভালোই নৌকা চালাচ্ছে। দেখতে দেখতে দুজনে নদীর মাঝে এসে পড়ল। আহি নৌকা থামিয়ে দিল। নিহা আশপাশ দেখতে লাগলো। সবুজ গাছ গাছালিতে ভরা চারদিক। মানুষ জন কেউ নেই শুধু তারা দুজন। পুরো প্রকৃতি নিস্তব্ধ। নিহা এই নিরবতা ভালোই লাগছিলো। এরমধ্যে ঠান্ডা বাতাস বইতে লাগলো। নিহা দাঁড়িয়ে হাত দুটো ছেড়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বাতাসকে অনুভব করতে লাগলো। হঠাৎ করেই কোমরে কারো স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলো সে। তার ঘাড়ে গরম নিঃশ্বাস পড়ছে তার। নিহা’র বুঝতে বাকি নেই এটা আহি! নিহা দ্রুত সরে যাবার চেষ্টা করল কিন্তু আহিয়ান নিহা হাত ধরে তার কাছে টানল। দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। আহিয়ান বলে উঠে…
– ভূতনি লাফালাফি কম করো, নাহলে দুজনে গিয়ে নদীতে পড়বো।
নিহা মাথা নাড়লো। আহিয়ান নিহার এলোমেলো চুল গুলো কানের পিছনে গুঁজে দিলো। দুজন দুজনকে এভাবে দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। সূর্যের লাল আভা দেখা যাচ্ছে কিন্তু আহিয়ান’র চোখ খানিকক্ষণ’র জন্য ও সরে নি নিহা’র থেকে। দু চোখ ভরে দেখছিলো সে নিহা কে। আর নিহা দেখছিলো তাকে। অতঃপর আহিয়ান নিহা’র কোমর থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে সরে গেল। আর বলল..
– চলো বাসায় যাওয়া যাক!
– হুম।
অতঃপর আহিয়ান নৌকা চালিয়ে আবারও ঘাটে চলে এলো। আহিয়ান নিহা কে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে চলে গেল। নিহা গাড়ি চালিয়ে বাসায় আসলো। মেহেরিন’র সাথে দেখা করে রুমে আসল। ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। চোখ বন্ধ করে নিলো। ঠিক তখনই আহিয়ান’র মুখ টা ভেসে উঠলো তার সামনে। সাথে সাথে চোখ খুলে নিলো সে। নিজের এমন পরিবর্তন দেখে অবাক সে। কারন কি? তবে কি সে ভালোবেসে ফেলল আহি কে!
#চলবে….