#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_১৮
মেহেরিন গালে হাত দিয়ে বসে বসে ভাবছে। হুট করে নীল এসে তার মাথাম টোকা দিয়ে বলে..
– কি এতো ভাবছিস? এরপর তো মাথা ফেটে যাবে!
– ইম্পর্ট্যান্টে বিষয় নিয়ে ভাবছি!
নিশি বলে উঠল..
– কিহ?
– দা’র বিয়ে হলো আজ কয়দিন?
– দিন না বল মাস! এই ধর ৩ মাস তো হবেই!
– তাহলে তারা এখনো কেন হানিমুনে গেলো না!
মেহেরিন’র কথা শুনে রোদ্দুর ধপাস করে সোফা থেকে পড়ে গেল। কাব্য বলে উঠে..
– সারাদিন কি এসব ভাবিস?
– আরে না কি হয়েছে জানিস!
– কিহ?
– আমার ক্লাসমেট মানে বেঞ্চ মেট ও বলা যায় আর কি সে আজ আমাকে জিজ্ঞেস করছিলো?
ইহান বলে উঠে..
– কি জিজ্ঞেস করল!
– মানে জিজ্ঞেস করল একটা ভালো জায়গার নাম বলতে যেখানে ঘুরতে যাওয়া যাবে!
– তুই কি বললি?
– আমি জিজ্ঞেস করলাম কে ঘুরতে যাবে আর কেন?
– অতঃপর!
– অতঃপর সে বললো ওর নাকি এক কাজিন এর বিয়ে হবে কয়দিন পর তো ও গিফট হিসাবে ও হানিমুন প্যাকেজ দেবে তাদের। মানে তার পক্ষ থেকে তাদের কোথাও ঘুরতে যাবার ট্রিট!
– তুই কি বললি?
– আমি জিজ্ঞেস করলাম হানিমুন আবার কখন যায়, ও বললো বিয়ের পর’ই তো যায় আমি বললাম কোথায় আমি দা তো গেলো না!
মেহেরিন’র কথায় হাসির বন্যা বয়ে গেল। এর মধ্যেই অভ্র আর আনহা অফিস থেকে বাসায় আসলো। সবাইকে এভাবে হাসতে দেখে তারা দুজনেই অবাক হলো। অভ্র বলে উঠে…
– এতো হাসাহাসির কিসের?
– তোমার বোনের কথা শুনে!
– কেন কি বললো?
– তোমরা হানিমুনে কেন যাওয়নি!
অভ্র কি বলবে বুঝতে পারলো না। আনহা মুখ ভেংচি দিয়ে বলে উঠে…
– সে ভাগ্য আমার নেই তাই!
মেহেরিন বলে উঠে..
– কেন নেই, বিয়ে তো তোমরাও করেছো নাহ!
– আমার তো মনে হয় না!
– কিহহ?
– না কিছু না। তোমার দা এর কাজের চাপ আছে তাই আমরা যায় নি।
– সেটা আর নতুন কি এটা তো সারাজীবন’ই থাকবে।
– তা ঠিক বলেছো!
– তো প্ল্যান করা হয়ে গেল তোমরা কাল রওনা দিচ্ছো!
– কোথায়?
– বান্দরবান!
– কি কোথায় কিভাবে?
– গাড়ি করে যাবে,কাল সকালে! আমি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি, মানে নিহা দি করে দিয়েছে আর কি!
অভ্র মেহেরিন’র গাল টেনে বলে..
– এসব কথা তোর মাথায় কে ঢোকায় বল তো!
– আরে মাথায় কেন ঢোকাবে, এটা তো সত্যি নাহ। তা ব্যাগ ট্যাগ গুছিয়ে নাও।
– সরি আমি কোথায় যাচ্ছি না।
– আরে দা কি বলছো কি আমি অনেক কষ্ট করে সব প্ল্যান করলাম।
– আমার বোন কষ্ট করেছে সবাই শুনছো!
মেহেরিন ঠোঁট উল্টে বলে..
– তুমি যাবে কি না বলো নাহলে খুব খারাপ হবে।
অভ্র কি বলবে বুঝতে পারে না। একবার আনহা’র দিকে তাকায় দেখে সে মুচকি মুচকি হাসছে। অভ্র বলে উঠে..
– আচ্ছা যাবো। কিন্তু তোমার খেয়াল কে রাখবে।
নীল বলে উঠে..
– ঘরে কি মানুষজনের কমতি আছে নাকি!
– মনে তো হয় তাই!
– দা!
– আচ্ছা ঠিক আছে, কিন্তু ওর খেয়াল সবসময় রাখবে। আর ডেভিল আমি না আসা অবদি ওর কলেজে যাওয়া বন্ধ আমি আসলে ও যাবে।
– ওকে ওকে!
.
পরদিন সকালে অভ্র আর আনহা রওনা দিলো বান্দরবান যাবার জন্য। সবাই মিলে ওদের বিদায় দিলো।
নিশি, ইহান, কাব্য আর রোদ্দুর সবাই ভার্সিটি গেছে আর এদিকে মেহেরিন আবারও ঘুমাতে গেছে। নীল আর নিহা ও ভার্সিটির জন্য চলে গেছে।
নিশি ভার্সিটিতে ঢুকে দেখে নিশান ওর বন্ধুদের সাথে ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিছে। নিশান নিশি কে দেখে একনজর ভাবে তাকিয়ে রইল কিন্তু নিশি তাকালো না। নিশানের একটু খারাপ লাগলো কারন কাল অনেকক্ষণ বসে দুজনে কথা বলেছিল কিন্তু আজ নিশি তার দিকে ফিরেও তাকাল না। নিশান সেখান থেকে উঠে নিশি’র পিছন পিছন যেতে লাগলো। হঠাৎ নিশি কে হারিয়ে ফেলল। নিশান নিশি কে খুঁজতে খুঁজতে লাইব্রেরি দিকে গেল। হঠাৎ দেখল রোদ্দুর ওর দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল..
– কাকে খুজছো এভাবে?
– আমি কই না তো কাউকে খুঁজছি না।
– আচ্ছা আমি তো এতোক্ষণ দেখলাম তোমাকে কারো পিছনে পিছনে আসতে।
– না আমি কারো পিছনে আসি নি।
– ওহ আচ্ছা ভালো! কিরে নিশি বই নেওয়া হলো তোর নাকি আজ পুরো লাইব্রেরি নিয়ে বাসায় যাবি!
লাইব্রেরী ভেতর থেকে নিশি বললো…
– আর দু’মিনিট আসছি!
রোদ্দুর বাঁকা হেসে নিশানের দিকে তাকিয়ে বলল..
– আচ্ছা আমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছি তাড়াতাড়ি আয়!
– ওকে ওকে!
নিশান কিছু না বলে চলে যায় সেখান থেকে। এদিকে নিশি বের হয়ে দেখে রোদ্দুর মুচকি মুচকি হাসছে। নিশি বলে উঠে…
– এতো হাসি কিসের তোর!
– আরে তোমার সেই সরি মিস্টেক আসছিলো তোমার পিছনে পিছনে এখানে!
– তারপর!
– তারপর আর কি আমাকে দেখে চলে গেলো। বেচারার মুখটা দেখার মতো ছিলো।
– হি হি হি হয়েছে এখন চল বাসায় যাবো।
– ক্লাস করবি না!
– না আদুরী বাসায় একা, বাসায় চলে যাবো চল।
– ওকে!
.
নীল ভার্সিটিতে ঢুকতে গেলে তার মুখোমুখি হয় নীলাশা’র। নীলাশা নীল কে দেখেই একটা মুখ ভেংচি দিয়ে চলে যায়। নীল রেগে ওর বন্ধুদের কাছে যায়। সবাই খেয়াল করে নীল বেশ রেগে আছে তাই কেউ কিছু বলে না। হুট করেই ইশা এসে নীলের পাশে বসে পড়ে। নীলের হাত ধরে বলতে শুরু করে..
– বেবী তুমি এখানে আমি পুরো ভার্সিটিতে তোমাকে খুঁজছিলাম!
– কেন কি হয়েছে?
– জানো ওই মেয়ে টা আবারও আমার সাথে ঝগড়া করেছে!
– কি?
– হুম বিশ্বাস করো আমি কিছুই বলি নি ওকে তবুও আমাকে অনেক কথা শুনিয়েছে। দেখো আমার হাত জোরে চেপে ধরার কারনে লাল হয়ে গেছে।
নীল ইশা’র হাতের দিকে একবার তাকায়,সে জানে ইশা ইচ্ছে করেই ঝগড়া করছে কিন্তু নীলাশা’র ওপর কিছু রাগ জমা আছে ওর। তাই ইশা কে বললো..
– আচ্ছা আমি দেখছি!
– সত্যি বেবী!
– হুম, চলো এখন ক্লাসে।
– হুম চলো!
.
নিহা আজ ভার্সিটিতে যায় নি, ওর মনে হচ্ছে কেউ ওকে ফলো করছে। তাই সে রাস্তায় ঘুরছে কে সে সেটা জানার জন্য। হঠাৎ তার সামনে হাজির হলো আহিয়ানের। নিহা আহিয়ান কে এড়িয়ে চলে যেতে চাইলে আহিয়ান তার পিছনে পড়ে যায়। এদিকে নিহা’র কাছে সব কিছু জানি কেমন লাগছে, মনে হচ্ছে কিছু না কিছু একটা এখন হবেই হবে। কিন্তু আহিয়ান ও তার পথ ছাড়তে চাইছে না। নিহা ফোনে মেসেজ করে গার্ডদের এখানে চলে আসতে বলল। রাস্তায় ফুটপাতে দাঁড়িয়ে কথা বলছে আহিয়ান আর নিহা। আহিয়ান অনেক বক বক করছে আর নিহা শুধু মাথা নাড়ছে। হঠাৎ নিহা আহিয়ান’র পিছনে থাকা গাড়ির কাঁচে একটা মুখ দেখতে পেল। এই সেই লোক সেদিন রাতে যে নিহা’র পিছু নিয়েছিল। নিহা বুঝতে পারল এরাই ওকে এখন মারতে এসেছে। কিন্তু যদি ওরা আহিয়ান’র কিছু করে ফেলে তখন। নিহা ভাবতে লাগল কিভাবে আহিয়ান কে এখান থেকে সরানো যায়।
নিহা হঠাৎ করে চেঁচিয়ে বলতে বলল..
– আপনার সমস্যা টা কি বলুন তো! এভাবে কেন আমার পিছনে পড়ে আছেন। কি চান টা কি আপনি। এভাবে আমার পিছনে পড়ে থাকার মানে কি? বুঝতে পারছেন না আমি বিরক্ত হচ্ছি। মান সম্মান কি নেই আপনার। দেখে তো মনে হয় অনেক ভদ্র ফ্যামিলির ছেলে তো এতো টুকু আপনার মা বাবা শিখাইনি একটা মেয়েকে এভাবে বিরক্ত করা ঠিক কোন পর্যায়ে পড়ে।
আহিয়ান যেন থতমত খেয়ে গেল। সে এরকম কোনো কথাই বলছিল না যে নিহা এতো রেগে যাবে। আহিয়ান রাস্তায় চারদিক তাকাতেই দেখল সব লোক তার দিকে তাকিয়ে আছে। আহিয়ান’র খুব খারাপ লাগলো নিহা’র এমন কথায়। সে শান্ত গলায় মুচকি হেসে বলল…
– সরি বুঝতে পারি নি তোমার এতোটা বিরক্ত লাগবে। আমি আর কখনো আসবো না!
বলেই চলে গেলো আহিয়ান। নিহা রেগে চোখ বন্ধ করে হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। সে এসব বলতে চায় নি আহিয়ান কে। কিন্তু না বললে আহিয়ান যেতো না এখান থেকে। তাই…..
হঠাৎ করেই নিহা’কে কেউ তার বাহুতে জড়িয়ে ধরল। নিহা চোখ খুলে দেখে আহিয়ান! কিন্তু আহিয়ান এখানে আর এরকম করল কেন। নিহা পাশে দাঁড়িয়ে দেখল সেই লোকটা’র হাতে গান। হয়তো গুলি করেছিলো আর আহিয়ান তাকে বাঁচিয়েছে। নিহা তাড়াতাড়ি করে আহিয়ান কে সরিয়ে দিয়ে গান বের করে তাকে গুলি করল। সে লুটিয়ে পড়ে গেল, আরো কিছু লোকজন তাদের দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। আহিয়ান বলে উঠল…
– ভূতনি…!
নিহা আহিয়ান’র দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে পেছনে তাকায়। আহিয়ান ও তার সাথে সাথে পিছনে তাকায়। দেখে চার টা গাড়ি খুব দ্রুত গতিতে আসছে। আহিয়ান কপাল কুঁচকে তাকায়। গাড়ি গুলো থামলে কিছু লোক বের হয় গাড়ি থেকে। দেখে মনে হচ্ছে এরা গার্ড! এর মাঝে ওই লোক গুলো’র পিছনেও কিছু লোক এসে তাদের ঘিরে ধরে। একটা গার্ড এসে নিহা’র সামনে দাঁড়ায়! নিহা বলে উঠে…
– ডেভিল!
– ম্যাম আপনি যান আমি দেখছি এদের।
– মরে ফেলবে না বাঁচিয়ে রাখবে, জানতে হবে ওদের কে পাঠিয়েছে!
– জ্বি ম্যাম!
নিহা আহিয়ান’কে একটা গাড়িতে উঠে। অতঃপর তারা চলে যায়, আহিয়ান পিছন থেকে অনেক গুলাগুলির শব্দ পায়। কিছুদূর যেতেই নিহা গাড়ি থামিয়ে দেয়। আহিয়ান গাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। নিহা’ও গাড়ি থেকে বের হয়ে আহিয়ান’র কাছে গিয়ে ওকে চেক করতে থাকে! আহিয়ান কপাল কুঁচকে বলে…
– কি করছো তুমি!
নিহা আহিয়ান’কে পিছনে ঘুরিয়ে তাকে দেখে বলে…
– দেখছি গুলি লাগলো কি না।
– আরে না কিছু লাগে নি ঠিক আছি আমি!
নিহা কোমরে হাত রেখে বলে..
– কে বলেছিলো আপনাকে আসতে যদি কিছু হয়ে যেত তখন!
– যা করার সব তো তুমিই করলে!
– মানে!
– এই আমার মন চুরি করে নিয়ে গেল!
– আপনি না বললেন আর কখনো আসবেন না।
আহিয়ান নিহা’র বাহু ধরে নিজের কাছে টেনে বলল..
– আমি জানতাম তুমি কোনো না কোনো কারনে আমাকে এসব বলেছিল তাই তখন কথা না বাড়িয়ে বলেছিলাম তো কি হয়েছে! বলে দিয়েছি মানেই কি ছেড়ে দিয়েছি নাকি।
নিহা ছোটাছুটি করতে করতে বলল..
– এই এই ছাড়ুন আমায়, একদম ছোঁবেন না আমায়!
– ভুলে যেও না খানিকক্ষণ আগেই আমার দুই বাহু তে ছিলে তুমি!
– ছাড়ুন বলছি আমায়!
– না ছাড়লে কি করবে শুনি!
– ওই গুলি টা তখন আপনার বুকে মারা উচিত ছিল!
– তোমার প্রেমের আগুনে কবেই তো পুড়ে ছাই হয়ে আছি! তুমি আমাকে আবার নতুন করে মারতে চাও!
– আপনার সাথে কথা বলাই বেকার।
– বলো না।
– ছাড়ুন না আমায়!
– আজ ছাড়ার মুডে নেই।
– মানে..
– বলো ভালোবাসি!
– কিহহ?
– হুম জলদি জলদি বলো আমি জানি তুমি ইমপ্রেস!
– কখনো না।
– তুমি বললেই হলো নাকি আমি জানি তুমি ইমপ্রেস অনেক আগে থেকেই। এখন শুধু বলো ভালোবাসি!
– বলবো না কি করবেন
– তুমি ভাবতেও পারছো না কি করবো!
– ছাড়ুন বলছি উল্টাপাল্টা কিছু করলে না এখানেই মেরে কবর দিয়ে দেবো।
– সেটা তো আমি ছাড়লে তখন!
– আহিয়…..
কিছু বলার আগেই আহিয়ান নিহার ঠোঁট দুটো আঁকড়ে ধরল। নিহা এমন কিছু হবে ভাবতে পারিনি। সে চোখ বন্ধ করে ছোটাছুটি করতে লাগলো। আহিয়ান দ্রুত নিহা কে ছেড়ে দিলো। নিহা রেগে আহিয়ান’র দিকে তাকিয়ে আছে। আহিয়ান নিহা’র দিকে তাকিয়ে আছে। নিহা কিছু না রেগে গাড়ি নিয়ে চলে গেল। আহিয়ান বুঝতে পারলো না কি হলো!
.
অভ্র আর আনহা পৌঁছে গেছে অনেকক্ষণ আগে। তাদের রিসোর্টে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। অভ্র পৌঁছে মেহেরিন কে কল করল। কিন্তু মেহেরিন তখন ঘুমাচ্ছিল তাই কথা হয় নি। অতঃপর তারা দু’জন ফ্রেশ হয়ে খেতে গেল। খাওয়া দাওয়া করে অভ্র এসে আবারও কল করল। অতঃপর মেহেরিন এবার কল ধরল। অভ্র মেহেরিন’র সাথে কথা শেষ করে তাকিয়ে দেখল আনহা বিছানায় ঘুমিয়ে আছে। অভ্র ফোনটা রেখে আনহা’র শরীরে চাদর’টা টেনে দিয়ে তার কপালে আলতো করে একটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে দিলো। অতঃপর সে বাইরে চলে গেল!
#চলবে….