#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২২
খান বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নিহা আর আহিয়ান। ওদের সামনে অভ্র আর আনহা। নিহা’র পিছনে তাকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে মেহেরিন। সে একটু পর পরই উঁকি দিচ্ছে। বাকি সবাই বাড়ির ভিতরে। অতঃপর অভ্র বলে উঠে….
– আদুরী!
– হামম হামম।
– এসব কি হলো?
– কিসব আবার বিয়ে হলো।
– বিয়েটা কি করে হলে সব’ই টিভিতে দেখেছি আমি!
– তাহলে আবার জিজ্ঞেস কেন করছো?
– বিয়েটা জোর করে হয়েছে তাই!
– জোর করে! কে বললো জোর করে বিয়ে হয়েছে!
– তুমি এখানে আসো!
মেহেরিন সামনে গেলে অভ্র মেহেরিন’র কান ধরে বলে..
– আমার সাথে চালাকি, বলেছিলে বিয়ের দাওয়াত খেতে যাচ্ছি আর এখন তো দেখি তুমি বিয়ে পড়াতে গেছো।
– দা তুমি দেখছি এতোটুকুও জানো না। বিয়ে তো কাজী পরায় আমি না। এখন বিয়ে তো হয়েই গেছে এসব বলে আর লাভ কি! নাও তোমার বোনের আর বোনের বর কে ভিতরে আসতে বলে।
নিহা অভ্র’র দিকে তাকিয়ে আছে। অভ্র ভ্রু কুঁচকে দেখছে তাদের হঠাৎ করেই আনহা এসে বললো…
– দেখি সরুন সামনে থেকে।
– তুমি!
– হ্যাঁ আমি আরে আমার ননদিনী বিয়ে করে বর কে নিয়ে এসেছে তাকে বরণ করতে হবে না।
মেহেরিন বলে উঠে..
– এজন্য’ই তোমাকে মিষ্টি ভাবী বলে ডাকি আমি।
অভ্র বলে উঠে..
– মানে আমার কোনো দাম আছে নাকি।
– হ্যাঁ আছে তো। কে বললে নেই, যদি না থাকতো তাহলে দি এতোক্ষণে ঘরের মধ্যে থাকতো।
অভ্র মেহেরিন’র হাত ধরে বলে…
– তুমি আমার সাথে এসো।
বলেই মেহেরিন কে নিয়ে যায়। আনহা নিহা আর আহিয়ান কে বরণ করে ঘরে নিয়ে আসে। তবে এখানেও কাব্য আর ইহান বলে কোলে তুলে না নিলে ঘরে ঢুকতো দেওয়া হবে না। অতঃপর আহিয়ান অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নিহা কে কোলে তুলে। তবে সেটা দু’কদম অবদি। এদিকে অভ্র ডেভিল থেকেই সব শুনেছিল, এখন মেহেরিন কে জিজ্ঞেস করে..
– যা করলে এটা কি ঠিক করলে!
– দা ভুল কি করলাম!
– তোমার কি মনে হয় আদুরী, বিয়েটা কোনো খেলা না। দু’টো মানুষের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে দিলে কেউ সুখী হবে না।
– জিজু যা করেছে সেটা!
– জানি ঠিক করে নি তবে তাই বলে বিয়ে!
– দা তুমি’ই তো বলেছিলে Life is a game. আর এই গেম’এ জিতার জন্য অনেক কিছুই করতে হয় যদিও সেই পরিস্থিতিতে সেটা ঠিক বলে মনে না হয় তবুও।
– কিন্তু নিহা!
– নিহা দি খুব হ্যাপি থাকবে। তোমায় কথা দিচ্ছে আদুরী। আমাকে কি বিশ্বাস করো না তুমি!
– আমার বিশ্বাস তুমি!
– তাহলে চিল করো। তোমার বোনের বিয়ে হয়েছে। কালকে পার্টির আয়োজন করো ঠিক আছে আমি গেলাম।
বলেই মেহেরিন চলে গেলো। অতঃপর অভ্র নিজে নিজেই বলে…
– আদুরী বিয়ে, ভালোবাসা, প্রেম এসব সম্পর্কে তোমার কোনো জ্ঞান নেই। তুমি ভেবেছ এটাতে তোমার বোন সুখি হবে। কিন্তু ঘৃনা কে ভালোবাসায় পরিণত করতে অনেক সময় লাগবে আমি জানি না তুমি সেটা করতে পারবে কি না।
.
আনহা রোদ্দুর কে বলে আহিয়ান কে রুমে নিয়ে যেতে, অতঃপর আহিয়ান নিহা’র ঘরে চলে যায়। গিয়ে দেখে পুরো রুম ফুল আর মোমবাতি দিয়ে সাজানো কারন আজ তার বাসর। রোদ্দুর আহিয়ান কে দিয়েই চলে যায়। আহিয়ান রাগের কারনে পুরো ঘর উলোটপালোট করে দেয়। সব ফুল ছিঁড়ে ফেলে।
এদিকে আনহা আর নিশি মিলে নিহা’র সাথে মজা করতে থাকে। অতঃপর মেহেরিন আসলে সে নিহা কে নিয়ে ঘরের দিকে যায়। নিহা ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। অতঃপর তারা সবাই মিলে বাগানে যায় বাজি ফুটানোর জন্য।
নিহা ঘরে ঢুকে দেখে পুরো ঘরের অবস্থা বেহাল। আহিয়ান চেয়ারে বসে ছিল। সে নিহা কে দেখে তার সামনে এসে দাঁড়াল।
– এতোটা নিচে না নামলেও পারতে!
– আপনি নিজেই তো ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন তাহলে নিচে তো নামবই তাই না।
আহিয়ান নিহা’র বাহু ধরে বলে…
– এই বিয়ে আমি মানি না বুঝলে
– পুরো দুনিয়া মানে… আচ্ছা বাদ দিন এইসব কথা। ঘরের এই হাল কেন করলেন।
– তাহলে কি আশা করেছিলে আমার কাছে!
– আপনি নিহারিকা নিহা খান’র বর। এর চেয়েও ধামাকার কিছু আশা করেছিলাম আমি।
আহিয়ান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে নিহা’র দিকে। নিহা আহিয়ান’র দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে জলন্ত কয়েকটা মোমবাতি ছুঁড়ে মারে বিছানায়। দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠে পুরো বিছানায়। আহিয়ান অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে।
– এটা কি করলে!
– যেটা আপনার করার দরকার ছিলো!
আহিয়ান রেগে ঘর থেকে বের হতে নিলে দেখে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ। আহিয়ান নিহা’কে বলে..
– এটা কে করল!
– যা করার সে করেছে। এতো রাগছেন কেন
– থাকবো না তোমার সাথে আমি এক ঘরে।
– এখানেই থাকতে হবে আপনাকে।
বলেই আহিয়ান টেনে চেয়ারে বসাল।
– কি করছো।
– বাসর করছি!
বলেই আহিয়ান’র কোলে বসে পরল।
– এই এই নামো আমার কোল থেকে।
– কেন নামবো। আর নেমেই বা কি করবো। বিছানা আগুন জ্বলছে আমি ঘুমাবো কোথায়!
– তাই বলে আমার কোলে ঘুমাবে তুমি।
– হ্যাঁ!
– নিহা!
আহিয়ান’র গাল টেনে…
– রেগে লাভ নেই আমি তো এখানেই ঘুমাবো বর সাহেব।
– এসব ভালো হচ্ছে না কিন্তু নিহা।
– আপনার মুখে নিহা নামটা শুনতে আমার ভালো লাগছে না। ভূতনি নামে অভস্ত আমি।
আহিয়ান মুখ ফিরিয়ে নেই। নিহা আহিয়ান’র গাল ধরে একটা চুমু খেয়ে বলে…
– গুড নাইট!
অতঃপর জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে। আহিয়ান না পারছে কিছু বলতে আর না পারছে সহ্য করতে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বিছানার দিকে, দাউদাউ করে জ্বলছে! এই আগুনের মতোই তার মনে এখন আগুন জ্বলছে। রাগ ঘৃণা দুইটার সংমিশ্রণে তা আরো ভয়াবহ হচ্ছে।
মেহেরিন, নীল , রোদ্দুর সবাই বাইরে দাঁড়িয়ে দেখছে নিহা’র ঘরের জানালা দিয়ে আগুনের ধোঁয়া বেরুচ্ছে। কেউ বুঝতে পারছে না এই সম্পর্কের ইতি কি হবে। বেশি চিন্তা করছে অভ্র। এভাবে না তার বোনের জীবনটা নষ্ট হয়ে যায়! মেহেরিন দেখছে আগুনের ধোঁয়া আকাশে মিলিয়ে যাচ্ছে, সে আকাশের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে…
– তোমাদের মধ্যে’র দূরত্ব আমি মিটাবো দি!
.
সকাল সকাল মেহেরিন দাঁড়িয়ে আছে নিহা’র ঘরের সামনে। ঘরের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল সে। অবাক হয়ে দেখছে আহিয়ান চেয়ারে বসে আছে আর নিহা তার কোলে বসেই ঘুমিয়ে গেছে। মেহেরিন দুজনকে এভাবে দেখে বলে..
– আউউউ কি সুন্দর লাগছে এভাবে দেখতে। কিসি কি নজর না লাগে! কাল রাতে বিছানায় আগুন ধরিয়ে এভাবে ঘুমালো অবশেষে। একটা ছবি তুলে রাখি।
বলেই একটা ছবি তুলল। তখন হুট করে কেউ মেহেরিন কে টেনে বাইরে নিয়ে গেল। মেহেরিন তাকিয়ে দেখে নিশি। নিশি মেহেরিন’র মাথায় বাড়ি মেরে বলে..
– তুই কি জীবনে কিছু শিখবি না।
– আমি আবার কি করলাম।
– এভাবে দি এর রুমে নক না করে ঢুকি বলছিস কি করেছিস
– তো কি হয়েছে?
– কিছু না কিন্তু মনে রাখবি দি এখন বিবাহিত। তাই নক করেই ঢুকবি।
– ওকে ওকে এখন তো ঢুকেই গেছি চল ডাক দেই।
বলেই মেহেরিন আবারও রুমে ঢুকতে যায়। তখন নিশি ওকে ধরে বলে..
– কি বললাম তোকে এতোক্ষণ ধরে আমি। নক কর!
– করছি!
অতঃপর মেহেরিন দরজা নক করল। নিহা’র ঘুম ভেঙ্গে গেল। সে চট করে আহিয়ানের কোল থেকে নেমে গেল।
দরজা খুলে তাকিয়ে দেখে নিশি আর মেহেরিন দাঁড়ানো। মেহেরিন’র নিহাকে দেখে দাঁত বের করে হেসে বলল…
– গুড মর্নিং দি।
– মনিং!
– ঘুম ভেঙেছে না আরেকটু ঘুমাবে।
– না ঠিক আছে।
বলেই নিহা ঘর থেকে বের হয়ে বসার রুমে আসল। বাড়ির সবাই তখন সেখানেই ছিলো। নিহা এখনো বউ সাজেই আছে। সে বোতল টা নিয়ে পানি খেতে লাগলো। নীল বলে উঠে…
– কি রে দি তুই এখনো ফ্রেশ হয়ে আসিস নি।
– মাত্র’ই ঘুম ভাঙলো!
রোদ্দুর বলে উঠে..
– তা দি কাল কি আগুন জ্বালিয়েছিলে নাকি!
মেহেরিন বলে উঠে..
– হুম বিছানায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। আর সারারাত জিজু’র কোলেই ঘুমিয়েছে!
মেহেরিন’র কথায় সবাই অবাক। নিহা পানি খেতে গিয়েই বিষম লেগে যায়। অভ্র সব শুনেও না শোনার ভান করে চলে যায়। নিহা সবার দিকে একবার তাকিয়ে রুমে চলে যায়। নিশি আবারো মেহেরিন’র মাথায় বাড়ি মেরে বলে..
– তুই কি জীবনে শুধরাবি না। কোথায় কি বলতে হয় আজও শিখলি না।
এদিকে মেহেরিন বুঝতেই পারল না সে ভুল টা কি বলেছে।
.
আহিয়ানের সাথে বাড়ির সবাই খুব স্বাভাবিক আচরণ করে, এতে আহিয়ানের অনেক অবাক লাগে কিন্তু তবুও যেন মনে হয় তারা সব জেনেও তার সাথে এমন ব্যবহার করে। যদি তারা সব জানেই তাহলে তাদের কাছে এরকম আচরণ আশা করে না সে। রাতে নিহা আর আহিয়ান’র বিয়ে উপলক্ষে একটা পার্টির আয়োজন করা হয়। সেখানে সবাই থাকে। আহিয়ান’র মা বাবা আর নিতিও। নিতি আহিয়ান কে কিছু জিজ্ঞেস করে না। আর করেও লাভ নেই। সে সবকিছুই জেনেছে। আহিয়ান কে বিয়েটা জোর করেই দেওয়া হয়েছে।
পার্টিতে আহিয়ান ইচ্ছে করেই নিতি’র সাথে ডান্স করে। নিহা একপাশে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে। এদিকে মেহেরিন এসব দেখে সবাইকে নিয়ে এসে কাপল ডান্স করতে থাকে। অনেক কাপল ডান্স করে একসাথে। তারা সবাই গোল হয়ে নাচতে থাকে। একবার ডান্স করার পর সবাই তার পার্টনার চেঞ্জ করে। একপর্যায়ে আহিয়ান আর মেহেরিন নাচ করে। মেহেরিন আহিয়ান কে বলে..
– খুব ভালো ডান্স করেন আপনি জিজু, তবে আপনার পার্টনার শুধু আমার দি হবে!
আহিয়ান মেহেরিন’র কথায় কপাল কুঁচকে তাকায়। অতঃপর মেহেরিন কে ঘুরিয়ে দিয়ে আরেক পার্টনার’র হাত ধরে। মুহুর্তে সকল লাইট নিভে যায়। আহিয়ান এখনো হাত ধরে আছে আর এটা যে নিহা’র হাত এটা বুঝতে বেশিক্ষণ লাগে না তার। শুধুমাত্র একটা লাইট জ্বলে উঠে সেটা আহিয়ান আর নিহা’র ওপর। সবাই হাততালি দেওয়া শুরু করে তার সাথে চেয়ারআপ করতে থাকে। আহিয়ান এখন ইচ্ছে করেও হাত ছাড়াতে পারে না। মিউজিক অন হয়, আহিয়ান আর নিহা নাচতে থাকে। অনেক সুন্দর করেই নাচে তারা। নিতি এসব দেখে রেগে যায়। তখন পাশ থেকে নিশি বলে উঠে..
– সেই জিনিস তোমার না সেটা নিয়ে রেগে কিন্তু লাভ নেই।
– ভুলে যেও না তোমার বোন জোর করে বিয়েটা করেছে আর বিয়েটা আমার সাথেই হবার কথা ছিলো।
– হবার কথা ছিল কিন্তু হয় নি। জিজু’র স্ত্রী কিন্তু তুমি না। এটা মনে রেখো। আর হ্যাঁ নেক্সট টাইম যাতে আমার জিজু’র আশেপাশে তোমায় না দেখি কারন এখন ভালো ভাবে বুঝাচ্ছি তখন নাও বুঝাতে পারি।
বলেই চলে আসে নিশি। নিতি রেগে বের হয়ে যায় বাসা থেকে।
ডান্স শেষে আহিয়ান নিতি কে খুঁজতে থাকে। তাকে না পেয়ে কল করে। নিতি আহিয়ানের কল দেখে রিসিভ করে কাঁদতে থাকে..
– নিতি কাঁদছো কেন তুমি!
– আহি!
– কাঁদছো কেন? কোথায় তুমি!
– আমাকে অনেক অপমান করেছে তোমার ওয়াইফ এর বোন। বলেছে এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে আমি চলে এসেছে।
– কি? এখন কোথায় তুমি!
– অপেক্ষা করছি তোমার জন্য। আসবে তুমি!
– আছো কোথায় তুমি সেটা বলো।
– বেশি দূরে না কাছেই আছি। এখানে’ই একটা পার্কে। তোমার জন্য’ই বসে আছি। তুমি যদি না আসো আমি এখানেই থাকবো সারারাত!
– নিতি আমার কথা শোন নিতি..
কিছু বলার আগেই ফোন কেটে গেল। আহিয়ান আর বসে না থেকে বের হয়ে গেল গাড়ি নিয়ে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর দেখতে পেলো একটা বেঞ্চে একটা মেয়ে বসে আছে। পার্কে আর কেউ নেই। আহিয়ান ভাবল এটা হয়তো নিতি। সে এগিয়ে গিয়ে বেঞ্চে’র কোনায় বসলো।
#চলবে….
#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২৩
আহিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করে…
– নিতি! তোমাকে আমি মিথ্যের আশ্বাস দেবো না কিন্তু এখন আমার বিয়ে হয়ে গেছে। আমি যত’ই বলি না কেন নিহা’কে আমি স্ত্রী হিসেবে মানি না তবুও সেই আমার স্ত্রী। ওর ফ্যামিলি সম্পর্কে সবার ধারনা আছে। নিতি.. খুব খারাপ ভাবে ফেঁসে গেছে আমি বিশ্বাস করো খুব খারাপ ভাবে। আমি জানি তোমার মনের মধ্য দিয়ে কি যাচ্ছে। অনেক কষ্ট পেয়েছো তুমি। তোমাকে বোঝতে পারি আমি! কিন্তু আমার সত্যি কিছু করার নেই।
– নিতি কে বুঝতে পারেন কিন্তু আমাকে নাহ!
আহিয়ান চমকে উঠে কারন এটা নিহা’র গলা। সে চট করে উঠে নিহা’র সামনে দাঁড়িয়ে বলে…
– তুমি! তুমি এখানে! নিতি কোথায়?
– আমি কি বললাম আপনাকে!
– নিহা নিতি কোথায়?
– আপনি ওকে খুব ভালোবাসেন না!
আহিয়ান রেগে নিহা’র দুই বাহু চেপে ধরল। অতঃপর বলল..
– নিতি কোথায়? কি করেছে ওর সাথে। মেরে ফেলেছো ওকে।
নিহা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে..
– ওকে মেরে আমার লাভ কি! ও তো কিছুই করে নি যা করবার সব তো আপনি করলেন। চিন্তা করবেন না বাসায় আছে ও।
নিহা ছেড়ে দিয়ে..
– এতোক্ষণ লাগলো এইটা বলতে!
– খুব ভালোবাসেন না ওকে।
– হ্যাঁ বাসি তো!
– কিছু না আপনার ওপর অধিকার আছে কিন্তু আপনার মনের ওপর অধিকার করতে পারি না। তবে আমার জন্য শুধুই কি ঘৃনা আছে!
– হ্যাঁ শুধুই ঘৃনা আছে আমার তোমার জন্য। আর কিছু নেই!
– আপনি কেন বুঝতে পারেন না আহিয়ান।
– কারন তুমি বোঝার মতো কিছুই করো নি।
– সত্যি ভালোবাসি আপনাকে। সব করতে পারি আপনার জন্য.
– সব করতে পারবে।
– মরে যেতে বলছেন।
– পারবে মরতে!
– মরতে আমি ভয় পাই না আহিয়ান।
– তাহলে মরে যাও। তোমার জন্য আমার ভাই মারা গেছে, তাহলে তুমি বেঁচে থাকবে কেন?
– নিজের হাতে মারবেন আমায়!
আহিয়ান তাকিয়ে আছে নিহা’র দিকে। নিহা পিছন থেকে একটা গান বের করে আহিয়ান’র হাতে দিলো। বলল…
– নিন মেরে ফেলুন আমাকে।
-……
– কি হলো মারুন।
নিহা আহিয়ান’র হাত ধরে গান টা নিজের কপালে ঠেকাল। অতঃপর আহিয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। আহিয়ান গান ছুড়ে ফেলে বলল..
– তোমাকে এভাবে মেরে ফেললে তোমার আর আমার মাঝে পার্থক্য কি রইল। এভাবে মারবো না তোমাকে তিলে তিলে মারবো!
বলেই আহিয়ান চলে এলো। নিহা পেছন থেকে বলল …
– আমাকে কখনোই আপনি মারতে পারবেন না আহিয়ান। আপনি ভালোবাসেন আমাকে! আপনার পক্ষে আমাকে মারা সম্ভব না।
– তোমার যা ইচ্ছে হয় তাই ভাবো!
বলেই আহিয়ান চলে এলো।
.
কয়েকদিন কেটে গেল, তবে আহিয়ান আর নিহা’র মাঝে এখনো কিছু ঠিক নেই। মেহেরিন কলেজ থেকে রাস্তা দিয়ে আসার সময় ভাবছে কি করা যায়। কিভাবে তাদের সম্পর্ক ঠিক করবে। হঠাৎ করেই একটা বিড়ালের আওয়াজ পেলো সে। মেহেরিন আশেপাশে খুঁজতে লাগলো কোথায় বিড়াল ডাকছে। পাশেই কনস্ট্রাকশন এর জিনিসপত্র পড়ে ছিল। মেহেরিন হাঁটতে হাঁটতে সেখানে গেলো। দেখল কিছু মাটি’র মাঝে একটা বিড়ালের বাচ্চা পড়ে আছে। মেহেরিন সেটা দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে নিতে গেলো। কিন্তু মাটিতে অনেক পানি থাকায় সেও ধপাস করে পড়ে গেলো। পুরো মাটিতে মাখামাখি একটা অবস্থা। মেহেরিন এই অবস্থায় কোনমতে বিড়াল কে নিয়ে বের হলো। বলতে লাগল…
– দেখলে বিড়াল বাচ্চা তোমার জন্য আমার কি হলো! দা অনেক বকবে আমায় এই অবস্থায় দেখলে। তোমার অবস্থা ও ভালো না। এখানে আসলে কিভাবে তুমি!
বিড়াল মিয়াও মিয়াও করতে লাগলো। মেহেরিন আবার বলল..
– বিড়াল বাচ্চা দা তোমাকে রাখতে দেবে কি না জানি না। মনে হয় তোমার সাথে আমাকেও বের করে দেবে বাড়ি থেকে। তোমার কি মনে হয়।
বিড়াল আবারও মিয়াও মিয়াও করতে লাগলো। মেহেরিন এবার বলল..
– তুমি দেখি মিয়াও মিয়াও ছাড়া কিছুই জানো। সমস্যা নেই আমি শিখিয়ে দেবো।
এর মধ্যে ডেভিল চলে এলো। তার হাতে আইসক্রিম! সে মেহেরিন কে বলতে লাগল..
– ম্যাম আপনার এমন অবস্থা কেন? আমাকে আইসক্রিম আনতে বলে আপনি কোথায় চলে গেছিলেন। অভ্র স্যার জানলে খুব রাগ করবে।
– এটা তো এই বিড়ার বাচ্চা কে দেখলেও বলবে। আচ্ছা এখন বাসায় চলো!
– জ্বি ম্যাম!
মেহেরিন বিড়াল কে নিয়ে ভয়ে ভয়ে বাসায় ঢুকল। কোনোমতে অভ্র’র সামনে পড়া যাবে না। মেহেরিন দেখল অভ্র সোফায় বসে ল্যাপটব টিপছে। মেহেরিন অভ্র’র পেছন দিক দিয়ে যেতে লাগল। হুট করে অভ্র বলে উঠে…
– আদুরী দাঁড়াও!
মেহেরিন চোখ বন্ধ করে বলে..
– যা ধরা পড়ে গেলাম।
– তোমার এই অবস্থা কেন?
– আসলে দা এই বিড়াল বাচ্চা টার জন্য!
– বিড়ার বাচ্চা!
– হুম কিউটি কিউটি বিড়াল বাচ্চা!
তখন নিহা আর আহিয়ান আসলো। নিহা মেহেরিন কে বলে..
– তোমার এই হাল কেনো আদুরী!
আহিয়ান বলে উঠে..
– মাটি এতো পছন্দ করো নাকি!
– আরে আমি তো মাটির মানুষ জানেন না জিজু।
– কিন্তু তোমার এই হাল কেনো!
– আসলে দি এই বিড়াল টা পড়ে ছিল মাটিতে তাকে নিতে গিয়ে…
– তাকে নিতে গিয়ে তুমিও বিড়াল হয়ে এলে।
– দা!
– এই বিড়ার রাখা যাবে না এখানে। সব চেয়ে বড় বিড়াল বাচ্চা তো তুমি। তোমাকে সামলাতে সামলাতেই আমাদের নাজেহাল অবস্থা!
– দি….!
– আচ্ছা দা এটা নিয়ে পড়ে কথা হবে আদুরী আগে আমার সাথে এসো পরিষ্কার হয়ে নেবে!
– হুম হুম চলো চলো!
নিহা মেহেরিন’র হাত ধরে তাকে নিয়ে যেতে লাগল। তখন আহিয়ান বলে উঠে..
– বিড়াল টাকে আমাকে দাও!
– মেরে ফেলবেন নাকি!
– তোমার মাথায় এসব চিন্তা ভাবনা আসে কিভাবে?
– তাহলে এটা নিয়ে কি করবেন।
– পরিষ্কার করবো এটা দেখছো না এটার হাল।
– পারবেন!
– বেশি বক বক করো দাও এটা!
– আপনার বিড়াল পছন্দ আগে বললেই হতো। যাক ভালো হলো আপনি এটাকে পরিষ্কার করুন আর দি আমাকে বড়ুক।
– হ্যাঁ বড় বিড়াল বাচ্চা কে ও পরিষ্কার করুক আর ছোট বিড়াল বাচ্চা কে আমি!
বলেই আহিয়ান বিড়াল টাকে নিয়ে চলে গেলো। নিহা মেহেরিন কে নিয়ে গেল।
.
মেহেরিন শাওয়ার নিয়ে সোজা বসার ঘরে আসে। দেখে আহিয়ান বিড়াল বাচ্চা টাকে নিয়ে বসে আছে। মেহেরিন বলে উঠে..
– ইশ বিড়াল বাচ্চা টাকে এখন আমার মতো আরো কিউটি কিউটি লাগছে।
বলেই বিড়াল টাকে নিয়ে বসে পড়ল। নিহা তোয়ালে নিয়ে এসে মেহেরিন’র চুল মুছতে লাগলো। মেহেরিন বিড়াল টাকে আদর করতে করতে বলল..
– খুব ভালো ভাবে পরিষ্কার করেছেন দেখি বিড়ার বাচ্চা টাকে!
– হুম আমার ছিল এরকম একটা বিড়াল বাচ্চা!
– ওটা কোথায় আমাকে দিন না তাহলে আমি দুইটা বিড়াল বাচ্চা পালবো।
– সেটা এখন আর নেই মারা গেছে!
– ওহ সরি ! আচ্ছা সমস্যা নেই আপনি চাইলে আমার বিড়াল বাচ্চা থেকে ভাগ নিতে পারেন আমি মাইন্ড করবো না!
আহিয়ান মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো। মাঝে মাঝে মেহেরিন কে চিন্তে পারে না সে। এই অনেক ভালো ভাবে কথা বলে, মনে হয় একটা বাচ্চা। আবার এমন ভাবে কথা বলে যেন মেরে ফেলবে ওকে। ও আসলে কি বুঝতে পারে না আহিয়ান।
হঠাৎ ওর পাশে বসে নিহা বলে উঠে..
– এটা নিহা না মেহেরিন! ওকে বোঝতে বোঝতে আপনার জীবন পার হয়ে যাবে। আমাকে বোঝা সহজ হলেও তাকে আপনি বুঝতে পারবেন না।
আহিয়ান নিহা’র দিকে তাকিয়ে থাকে। ওর মনের কথা কিভাবে যে নিহা বুঝলো সেটা বুঝতে পারে না সে।
.
নীল আজ বেশ খুশি খুশি মুডে আছে। তার অবশ্য কারন হলো আজ প্রায় কয়েকদিন পর সে এসেছে ভার্সিটিতে! তবে ভার্সিটিতে এসেই সবার প্রথমে দেখল নীলাশা কে। তাকে দেখেই মাথা গরম হয়ে গেল তার। নীলাশা ওর পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। দু জনের চোখাচোখি হয়ে গেল। নীলাশা মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেল। নীল বিড় বিড় করে বলে..
– কি সমস্যা এই মেয়েটার, সবসময় আমার সামনেই আসতে হয় ওকে।
এদিকে নীলাশা বলে উঠে..
– এই ঝিল টা কেন যে আমার সামনেই আসে বুঝি না। এখন’ই দেখতে হলো এই ঝিল টাকে। আজ আমার দিন’টাই খারাপ যাবে বলে মনে হচ্ছে!
.
আহিয়ান বসার ঘরে বসে ছিল। নিহা বাসায় নেই কোথাও গেছে তবে এই বাড়ি থেকে তার বের হবার অনুমতি নেই। বের হতে গেলেই গার্ড এসে আটকে ধরে বলে “ম্যাম আপনাকে বাইরে যেতে মানা করেছে”।
তাই কিছু না করে শুধু শুধু বসার ঘরে বসে ফোন টিপছে সে। মেহেরিন বাকি ওরা বোধহয় ছাদে। হঠাৎ কেউ তার সামনে পাকড়া আর চা রাখল। আহিয়ান তাকিয়ে দেখল আনহা। আনহা হেসে বলল..
– নাও খাও তোমার জন্য বানিয়েছি। একা একা বসে থেকে খুব বোর ফিল করছো।
– ভাবী আপনি! আপনি এইসব কেন করতে গেলেন।
– আরে সমস্যা নেই খাও। আমাকে মিষ্টি ভাবী বলো সবাই সেই নামেই ডাকে।
আহিয়ান একটা পাকড়া মুখে দিয়ে বলে..
– এই বাড়িতে শুধু তোমাকেই ভালো লাগে আমার।
আনহা হেসে বলে..
– আমার শরীরে খান দের রক্ত নেই বলে!
আহিয়ান হেসে মাথা নাড়ায়। আনহা বলে..
– তবে আর যাই বলো তুমি আর আমি এক পথের যাত্রী! তোমার ও বাড়ী থেকে বের হওয়া বারন আর আমার তো অনেক আগে থেকেই!
– বাইরে যাবে তুমি মিষ্টি ভাবী!
– তোমার দা মানা করে গেছে!
– আমার সাথে যাবে।
– তোমার সাথে!
– হুম চলো আমার সাথে। দুজনে একসাথে ঘুরে আসবো।
– আমার না অনেক দোকানের তেলে গরম গরম ভাজা পুরি খেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু তোমার দা আমাকে খেতেই দেয় না।
– আচ্ছা চলো তাহলে আমার সাথে।
– বলছো!
– আরে চলো না তুমি!
অতঃপর আনহা আর আহিয়ান বের হলো। তবে আহিয়ান কে বের হতে দেয় নি। আনহা সাথে ছিল বলে যেতে দেওয়া হয়েছে। সারা সন্ধ্যা মিলে দুজন ঘুরল। আনহা অনেক খাবার দাবার গেলো। এখানে আহিয়ান এতো দিন পর বাইরে আসতে পেরে ভালো লাগছে। দুজনেই খুব মজা করলো।
এদিকে অভ্র বাসায় এসে আনহা না পেয়ে চিন্তায় পড়ে গেলো। নিহা দেখল আহিয়ান ও বাসায় নেই। মেহেরিন খোঁজ নিয়ে জানল দুজনে একসাথে গেছে। একথা শোনার পর সবাই একটু হলেও শান্তি পেলো কারন সবাই জানে এই বাড়িতে আহিয়ান আর আনহা’র খুব ভাব।
প্রায় অনেকক্ষণ পর আনহা হাতে আচারের প্যাকেট থেকে আচার খেতে ঢুকল। তার সাথে আহিয়ান ও। আনহা সোফায় অভ্র কে বসে থাকতে দেখে চট করে আচারের প্যাকেট টা লুকিয়ে ফেলল। অভ্র আনহা’র সামনে এসে কিছু বলতে যাবে তার আগে আহিয়ান বলল…
– দা আমি নিয়েগেছিলাম মিষ্টি ভাবী কে।এখানে ভাবী’র কোনো দোষ নেই।
অভ্র কিঞ্চিত হেসে আহিয়ান’র ঘাড়ে হাত রেখে বলল..
– তুমি সাথে ছিলে বলেই চিন্তা করছিলাম না। তবে তোমার ভাবী তোমাকে পটিয়ে খুব আজেবাজে জিনিস খেয়েছে তাই তো বকবোই!
– মোটেও না আমি কোনো আজেবাজে জিনিস খায়নি।
– আচারের প্যাকেট ফেলে দাও বলছি!
– আর একটু আছে!
অভ্র রেগে আনহা’র হাত থেকে আচারের প্যাকেট নিয়ে ফেলে দিলো।
– এইসব জিনিস তোমার জন্য ভালো না। ঔষধ খেতে হবে চলো।
বলেই তাকে ঘরে নিয়ে গেলো। এদিকে আহিয়ান এখনো অভ্র’র কথা ভাবছে। তাকে বিশ্বাস করে সে। কিভাবে হতে পারে এটা। আমাকে বিশ্বাস কেন করছে সবাই!
এসব কথা ঘুরতে থাকে ওর মাথায়। হঠাৎ নিহা এসে বলে..
– ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি খাবার বাড়ছি!
আহিয়ান কিছু না বলেই চলে গেলো, তবে নিহা এতে কিছু মনে করল না। কারন এতে তার অভ্যাস আছে।
.
১ মাস পর…
সেই লোকটা একটা গান নিয়ে একটা ছবি বরাবর বার বার শুট করছে। ছবিটা ছিল মেহেরিন’র হাসিমাখা একটা মুখ। আরেকটা লোক এসে তখন বলতে লাগল…
– আর কতোদিন এভাবে ছবি তেই মারবে ওকে।
– এছাড়া আর কি করবো বলো!
– তবে ওদের বন্ধুত্ব ভাঙার একটা প্ল্যান পেয়েছি!
– কি প্ল্যান!
– রোদ্দুর’র গার্লফ্রেন্ড!
– গার্লফ্রেন্ড!
– কি বলো তো ভালোবাসা আর বন্ধুত্ব এতে কোনো থার্ড পারসন একবার আসতে পারলে সেই বন্ধুত্ব হোক আর ভালোবাসা টিকে না!
– গুড প্ল্যান! তাহলে অপেক্ষা করছো কিসের?
– তোমার অনুমতি!
সে বাঁকা হাসি হেসে শেষবারের মতো মেহেরিন’র ছবিতে গুলি করে বলে…
– শুরু করো!
#চলবে….