Game Part-25+26

0
613

#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২৫

মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে ইহানের দিকে। ইহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেহেরিন’র দিকে তাকালো।

– কথাটা রোদ্দুর’র গফ কে নিয়ে!

– রোদ্দুর’র গফ!

– হুম!

– হয়েছে টা কি ইহান!

– আসলে একটা কাজে আমি সেদিন হোটেলে গিয়েছিলাম। দি পাঠিয়েছিল আমাকে। একটা মিটিং এডেন্ট করার ছিল। মিটিং শেষ করে আমি বের হতে দেখি রোদ্দুর এর গফ মানে লিসা একটা ছেলে’র সাথে।

– তো! এরকম একটা ছোট ব্যাপার নিয়ে তুই এরকম টা কিভাবে ভাবতে পারিস।

– শুধু এতো টুকু না জান। এর পর আমি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ছেলের সাথে লিসা কে দেখছি আর তাও অনেক ঘনিষ্ঠ। তাই ফাইনালি আমি ভাবলাম আসল খবর টা কি। তাই গতকাল ডেভিল কে দিয়ে লিসা’র ব্যাকগ্রাইড চ্যাক করালাম। আর ডেভিল আজ এসে আমাকে জানালো…

– কি জানালো!

– লিসা ভালো মেয়ে না! সি ইজ অ্যা গোল্ড ডিজ্ঞার!

– What!

– প্রথমে আমার ও বিশ্বাস হয় নি, অন্য কেউ বললেও আমি বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু তুই ও জানিস ডেভিল কখনো ভুল খবর দেয় না!

– এখন কি করবি! রোদ্দুর কে বলবি!

– ও অনেক ভালোবাসে, বিশ্বাস করবে না আমার কথা। ভুল বুঝবে আমায়!

– কিন্তু যখন ওই ঠকায় তখন!

– বুঝতেই পারছি না কি করবো। তুই কিছু কর!

– আমি যাই করি এর ফল ভালো খারাপ দুইটাই হতে পারে।

– আর কোনো চয়েজ নেই। যা করার তুই কর!

– আচ্ছা তুই বললে কেন বিশ্বাস করবে না।

– ভুলে গেলি, সেদিন নিশি বলেছিল আমি ওর গফ কে পছন্দ করতাম।

– ওহ্ হ্যাঁ তাই তো। তো এখনো কি করিস!

– তুই ও এইটা ভাবলি। তাহলে রোদ্দুর কি ভাববে..

মেহেরিন হেসে ইহান’র ঘাড়ে হাত রেখে বলে..
– ফ্রেন্ডশিপ বুঝি তবে ভালোবাসা আমার মাথায় ঢুকে না। কিন্তু এতো টুকু জানি কোনো সম্পর্কের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি আসা মানে সে সম্পর্কের ইতি টানা। আচ্ছা টেনশন করিস না আমি দেখছি ব্যাপারটা!

বলেই মেহেরিন নিচে নেমে যায়। ইহান সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। ব্যাপারটা এতো সহজে শেষ হবে না। কিছু না কিছু তো হবেই! কিন্তু সেটার জন্য না তাদের বন্ধুত্বে ফাটল ধরে!
.
বেশ কয়েকদিন পর…
রোদ্দুর খুব জোরে গাড়ি চালিয়ে মাত্র ঢুকল খান বাড়িতে। সবাই বসার ঘরেই ছিল। রোদ্দুর খুব রেগে আছে। মেহেরিন রোদ্দুর কে দেখে সোফা থেকে উঠে রান্না ঘরের দিকে গেল। রোদ্দুর সোজা মেহেরিন’র পিছনে পিছনে গেল! মেহেরিন ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম বার করছে।

– তুই এটা কেন করলি!

– আমি আবার কি করলাম, কার সাথে করলাম, কখন করলাম!

– গতকাল করেছিস বিকাল ৫ টার দিকে রেস্টুরেন্টে লিসা’র সাথে। তুই তাকে শাসিয়ে এসেছিস যেন আমার সাথে আর সম্পর্ক না রাখে!

মেহেরিন আইসক্রিম’র বাটি টা নিয়ে সোফায় গিয়ে বসল। রোদ্দুর ও ওর সামনে বসল। সবাই শুধু ওদের কথাই শুনছে!

– কি হলো বল!

– এখন কি হয়েছে সেটা বল!

– কি আর হবে! ব্রেকআপ করেছে ও আমার সাথে! কেন করলি এমন!

– পার্টি দিবি কবে এটা বল!

– আদুরী… তুই খুশি হলি!

– খুশি না হলে কি আর ওকে শাসিয়ে আসতাম!

– তার মানে তুই সত্যি!

– হুম করেছি!

– তুই এমনটা কিভাবে করতে পারিস!

ইহান বলে উঠে..
– রোদ্দুর তুই আগে শান্ত হ একটু। আমি বলছি তোকে সব গুছিয়ে!

– ওহ্ আচ্ছা তাহলে এর মধ্যে তুই ও আছিস!

– রোদ্দুর শোন তো একবার!

মেহেরিন কিছু বলে না শুধু আইসক্রিম খেতে থাকে। রোদ্দুর বলে উঠে..

– তাহলে আমার সাথে লিসা’র ব্রেকআপ করানোর শুধু একটাই কারন আর সেটা ইহান তাই তো আদুরী!

– ….

ইহান বলে উঠে..
– রোদ্দুর তুই এটা কি বলছিস!

– ইহান প্লিজ আমি শুধু জান’র সাথেই কথা বলবো! কি হলো বল!

-…

– তুই আমার সাথে এটা কিভাবে করতে পারিস, তুই তো জানিস আমি কতোটা ভালোবাসতাম ওকে!

– …

– তুই শুধু ইহানের জন্য আমার সাথে এমন করলি!

– তোর কাছে প্রথমে কি ভালোবাসা না বন্ধুত্ব!

– তুই এখন আমার বন্ধুত্বে আঙ্গুল তুলছিস আদুরী!

– জিজ্ঞেস করলাম প্রথমে কি?

– তুই!

– তাহলে বাদ দে এই টপিক!

– কেন বাদ দেবো।

– কারন আমাকে বলা হয়েছে মেয়েটা ভালো না তাই!

– কে বলেছে, ইহান!

– হ্যাঁ তো!

– আর তুই বিশ্বাস করে নিলি, যদি ও মিথ্যে বলে থাকে তো! তুই তো জানিস ও লিসা কে পছন্দ করে। এটা যে ও ইচ্ছে করে বলেনি এটার প্রমাণ কি!

সবাই অবাক রোদ্দুর’র এমন কথাবার্তায়। ইহান এটা আশা করলেও তবুও নিজের মন কে বুঝিয়েছিল এটা নাও হতে পারে। এদিকে মেহেরিন আইসক্রিম খাওয়া বন্ধ করে রোদ্দুর’র দিকে তাকাল। অতঃপর বললো..

– তোর কি এটা মনে হয়!

– অবশ্যই এটাই মনে হয়। এটা না মনে হবার কারন কি বল!

মেহেরিন চোখ টা খানিকক্ষণ’র বুঝে, আবার চোখ মেলে মুচকি হাসি দিয়ে রোদ্দুর এর দিকে তাকিয়ে বলে..

– তাহলে ছেড়ে দে এই বন্ধুত্ব! রাখিস না। এমন বন্ধু রেখে কি করবি বল যে তোর ভালোবাসা কেড়ে নেয়!

– আদুরী!

– এভাবে কেন চমকে যাচ্ছিস, এটাই তো সত্যি নাহ। যেসব ফ্রেন্ড এভাবে তোকে ঠকায় তাদের সাথে তুই কেন থাকবি।

– আমাদের বন্ধুত্ব কি এতোটাই ঠুকনো! আমাদের বন্ধুত্ব এই ১০ ১২ দিনের নয়। ছোট থেকে আমরা একসাথে। সবাই সবাইকে বুঝি, ছোট থেকে একসাথে বড় হয়ে এসেছি।

– তাহলে এই বন্ধুত্বে কেন আঙ্গুল তুলছিস! কেন বলছিস তোর ভালোবাসা তোর বন্ধু কেড়ে নিয়েছে!

– আদুরী আমি তো…

– ব্যস এখানেই অফ যা। আমাদের বন্ধুত্বে আর আসিস না।

– তুই এভাবে বলতে পারলি।

– হ্যাঁ পারলাম। ভুল টা কি বললাম আমি!

– ওকে!
বলেই রোদ্দুর চলে গেল। সবাই চুপ, কেউ কিছু বলছে না। এরকম ঝগড়া কখনো হয় নি ওদের মাঝে। নীল আর কাব্য গেলো রোদ্দুর’র পিছু পিছু। মেহেরিন সোফা থেকে উঠে খুব জোরে টি – টেবিলে একটা লাথি মারল। অতঃপর সোজা রুমে গেল। রুমে যাবার আগে সামনে ‌কয়েকটা ফুলদানি ফেলে দিও।

বিকালে আহিয়ান আসল মেহেরিন’র ঘরে। মেহেরিন তখন দোলানায় বসে ছিল।‌ আহিয়ান প্রথমে নক করলে মেহেরিন তাকে আসতে বলল। আহিয়ান বেলকনিতে একটা চেয়ার পেতে বসল।

– এভাবে বন্ধুত্ব শেষ করে দিলে!

– যে থাকতে চায় না তাকে জোর কেন করবো।

– তাহলে তো তুমি আমাকেও জোর করেছিলে বিয়ের জন্য নাহ!

– আপনি আর ও এক না। আপনি আমায় বুঝেন না কিন্তু ওরা বুঝে। ওর বোঝা উচিত ছিল আমি ওর ভালোর জন্যই এটা করেছি!

– সব পরিস্থিতি মনমতো চলে না মেহেরিন!

– এই কথা আপনি বিশ্বাস করেন জিজু!

– অবশ্যই করি!

– তাহলে এটাও বিশ্বাস করুন আমার ভাইয়ের সুইসাইড টাও এরকম একটা পরিস্থিতি’র স্বীকার ছিল!

– …

– পারলেন না তো!

– তোমাদের বন্ধুত্ব নাকি অনেক পুরোনো!

– আমরা ছোটবেলা থেকেই একসাথে থাকি!

– আসল কারন কি ছিল।

– মেয়েটা ভালো না শুধু টাকার লোভে রোদ্দুর’র সাথে ছিল। ইনফেক্ট অন্য ছেলেদের সাথেও।

– একথা ইহান বলেছে!

– ইহান আর রোদ্দুর দুইজনকেই আমি চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারি। তবুও এরকম একটা পরিস্থিতিতে আমি বিশ্বস্ত কারো’র সাহায্য নিয়েছি!

– তাহলে ডেভিল ভুল বলে নি। তবে তুমি এটা শান্ত ভাবে বলতে পারতে রোদ্দুর কে!

– এরকম কথা শুনলে ও কষ্ট পেতে পারতো তাই নয় কি! জিজু কেউ ধোঁকা দিলে সেটা মেনে নেওয়া যায় না আর সে যদি আপনার কাছের কেউ হয় তাহলে তো কথাই নেই। এরকম একটা কথা রোদ্দুর কে বলার ইচ্ছা আমার ছিলো না।

– তাহলে এভাবেই কি শেষ হয়ে যাবে!

– জানি না!

অতঃপর আহিয়ান সেখান থেকে চলে যায়!
.
এদিকে সেই দুই ব্যক্তি তাদের বিজয়ের উল্লাসে হেসে বেড়াচ্ছে। কারন অবশেষে তাদের বন্ধুত্বে ফাটল ধরাতে পেয়েছে। এই ফাটল যে ভবিষ্যতে তাদের সুবিধা করবে এই সম্পর্কে তাদের খুব ভালো করেই জানা আছে!

#চলবে….

#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২৬

আজ ২ দিন হলো মেহেরিন আর রোদ্দুর’র মাঝে কোনো কথা হয় নি। রোদ্দুর’র খবর কেউ জানে না। এদিকে আহিয়ান বেশ চিন্তায় পড়লো। সবার থেকে যা জেনেছে সেখানে রোদ্দুর খুব রাগী। যদি কিছু একটা করে ফেলে তখন। আহিয়ানের সামনে তার ছোট ভাইয়ের ছবি ভেসে উঠছে। তার মনে হচ্ছে রোদ্দুর না তার ছোট ভাইয়ের মতোই কিছু একটা করে ফেলে। এখানে বাকি সবাই তন্ন তন্ন করে রোদ্দুর কে খুঁজছে তবে কারো কাছেই তার কোনো হদিস নেই। রোদ্দুর’র মা বাবা চিন্তা করবে বলে অভ্র তাদের জানায় নি। তবুও পাগলের মতো খুঁজে বেড়াচ্ছে।

আহিয়ান আর বসে থাকে না খুঁজতে বের হয় রোদ্দুর কে। কিন্তু এখানে কেউ একজন ফলো করতে শুরু করে আহিয়ান কে। আহিয়ান প্রথমে রোদ্দুর’র ফ্লাটে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তারা জানায় ২ দিন আগে এসেছিল রোদ্দুর! আহিয়ান এবার শহরে খুঁজতে থাকে। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও খুঁজে পায় না তাকে। অতঃপর আহিয়ান একটু গ্রামের দিকে যায়। হয়তো বা সেখানে রোদ্দুর থাকতে পারে তবে সেখানেও পায় না। অতঃপর কল করে ডেভিল কে। ডেভিল জানায় তাকে নাকি শেষবার শহরের শেষে একটা রিসোর্টে দেখা গেছে। ডেভিল আসছে তবে তার আসতে দেরি হবে। এদিকে আহিয়ান ও শহরের শেষ প্রান্তে চলে আসে। তাই ডেভিল’র আগে রিসোর্টে চলে যায়। রিসোর্ট টা খুব বড় আর সুন্দর করে সাজানো। আহিয়ান গাড়ি পার্ক করতে গিয়ে রোদ্দুর’র গাড়ি দেখে। সে সিউর হয়ে যায় রোদ্দুর এখানেই আছে।

আহিয়ান রিসেপশন থেকে রোদ্দুর’র রুম নাম্বার নেয় কিন্তু সেখানে তাকে পায় না। একটা সার্ভেন্ট কে জিজ্ঞেস করলে সে বলে রোদ্দুর কে ছাদে দেখা গিয়েছে। আহিয়ান দ্রুত ছাদে যায় সেখানে গিয়ে হতবাক হয়ে যায় সে। দূরে রোদ্দুর দাঁড়িয়ে আছে, তার হাতে একটা গান যেটা সে তার কপালে ঠেকিয়ে রেখেছে। আহিয়ান দৌড়ে রোদ্দুর’র কাছে যায়। তাকে ডাকতে থাকে তবে রোদ্দুর কোনো সাড়া দেয় না। রোদ্দুর গুলি করতে যাবে এর আগেই আহিয়ান তার থেকে গান টা কেড়ে নেয়।

– জিজু!

– পাগল হয়ে গেছো, কি করতে যাচ্ছিলে‌ তুমি।

রোদ্দুর মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আহিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মাথা ঠান্ডা করে রোদ্দুর’র ঘাড়ে হাত রাখে। দুজনে একসাথে নিচে বসে। দুজনের মাঝেই নিরবতা। আহিয়ান’ই প্রথমে বলে…

– কেন করতে যাচ্ছিলে এমন!

– আমার পাশে কেউ নেই জিজু, সবাই ছেড়ে দিয়েছে।

– সবাই তোমাকে পাগলের মতো এ দুদিন খুঁজেছে জানো।

– জান খুঁজেছে!

– না মানে ও নিজে বের হয়নি কিন্তু ডেভিল কে দিয়ে পাঠিয়েছি। আর ডেভিল আমায় বলেছে তুমি এখানে।

রোদ্দুর আহিয়ান’র কথা শুনে হতাশা প্রকাশ করল। আহিয়ান আবারও বলে উঠে..

– আচ্ছা রোদ্দুর তোমার কি মনে হয়, এভাবে মরে গেলে তোমার সমস্যার সমাধান হতো।

– আমি তো বেঁচে যেতাম সমস্যা থেকে।

– কিন্তু তোমার মা বাবা তারা!

– দা আছে তাদের দেখার জন্য।

আহিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে…
– মেয়েটা সত্যি’ই ভালো না রোদ্দুর!

– এখন তুমি ও বলবে একথা। কেউ বুঝলো না আমায়!

– রোদ্দুর এক মিনিটের জন্য এটা ভাবো যে তোমার সবাইকে বুঝতে হবে তখন। তোমাদের বন্ধুত্ব অনেক পুরোনো আর শক্ত। একটা মেয়ের জন্য এভাবে ভেঙে যাবে সেটা। হুম আমি জানি তুমি বন্ধুত্ব নিয়ে কোনো কথা বলো নি মেহেরিন নিজেই তোমাকে বলেছে ছেড়ে দিতে এখন তুমি কি জানো না ও ঠিক কতোটা রাগি। যখন রাগ ওর মাথায় চাপে তখন যা খুশি তাই করে। তুমি তো চিনো ওকে বোঝ তাহলে আবার কি!

– আজকাল খুব অচেনা লাগছে।

– এটা তোমার ভ্রম রোদ্দুর আর কিছু না। তুমি জানো মেহেরিন তোমার জন্য যা করবে ভালোই করবে।

– ……

– রোদ্দুর এটা কি হচ্ছে, আমরা সবাই যখন বলছি মেয়েটা ভালো না তাই মেহেরিন মেয়েটাকে তোমার জীবন থেকে সরে যেতে বলেছে, তোমার এটা কেন বিশ্বাস হয় না। যেখানে আমি নিজেও বলছি তোমায় একথা। এতো গুলো মানুষ কি তোমায় মিথ্যে বলবে।

– তাহলে আমিও তো বলতে পারি জিজু, তুমি কেন সবার কথা বিশ্বাস করো না। কেন মানতে চাও না নিহা দি নির্দোষ! সবাই কি মিথ্যে বলছে তোমায়। আচ্ছা আমাকেই বলো তোমার মা বাবা কি তোমাকে কখনো মিথ্যে বলতে পারে।‌ তারা কি একবার ও আমার দি’র দোষ দিয়েছিল। কোথায় তারা তো দেয় নি। কারন তারা সেই শক থেকে বের হতে পেরেছে কিন্তু তুমি পারো নি। তুমি ভেবেই নিলে সব দোষ দি’র। এখানে তুমি তাকে বোঝার চেষ্টাই করলে না। আমি আত্নহত্যা করতে এসেছি, তবে সত্যি বলতে এখানে কারো দোষ নেই। সবাই আমার ভালো করতেই চায় কিন্তু আমি সেটা বুঝতে পারছি না। তোমার ভাইয়ের সাথেও কি এমন না হয়েছে বলো। জিজু আমার দি কে আমি চিনি। তোমার ভাই আত্নহত্যা করার পর আমার দি অনেক খারাপ লেগেছিল। হ্যাঁ এটা ঠিক মানুষ মারতে আমার দি’র হাত কাঁপে না তবে সেটা নির্দোষ ব্যক্তিদের না। সেরকমই তোমার ভাই ও ছিল!

আহিয়ান উঠে দাঁড়ালো, অতঃপর রোদ্দুর কে বলে..
– চলো!

রোদ্দুর হেঁসে বলে..
– দেখলে তুমিও মানতে চাইলে না। আসলে জিজু কি বলোতো, তোমার আমার পরিস্থিতি ভিন্ন, কষ্ট টাও ভিন্ন তবে মানসিকতা এক। আমরা দুজনেই দুজনকে বোঝানোর চেষ্টা করছি তবে নিজে বুঝতে রাজী না। জীবনে এমন কিছু কিছু ঘটনা ঘটে যার জন্য কোনো মানুষ দায়ী থাকে না তবে আমরা শুধু আমাদের রাগের বসে একজন কে দোষী মেনে নেই আর তাকে শেষ করার চিন্তাভাবনা করতে থাকি।

– হুম চলো এখন!

অতঃপর আহিয়ান রোদ্দুর কে নিয়ে গাড়িতে বসাল। দুজনেই বাড়িতে আসল। সবাইকে রোদ্দুর কে দেখে অনেক খুশি। কিন্তু মেহেরিন এখনো ঘর থেকেই বের হয় নি। আহিয়ান নিজের ঘরে চলে গেল। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো কি হলো তার সাথে! সত্যি কি সে ভুল বাকি সবাই ঠিক। তার মা ও বলছিল নিহা ঠিক তাহলে তার মা ও কি মিথ্যে বলছে। আহিয়ান অস্থির হয়ে গেল। খান বাড়ি থেকে বের হয়ে নিজ বাড়িতে গেল। সোজা গেল তার মায়ের কাছে। মা বসে বই পড়ছিলেন। আহিয়ান মেঝেতে বসে মায়ের কোলে মাথা রাখল।

– কি হয়েছে আমার ছেলেটার!

– মা আমি বুঝতে পারছি না আমি কি করবো!

– কি হয়েছে বলো।

– নিহা কি সত্যি’ই ঠিক মা, আমি কি ভুল ছিলাম।

– সেটা তুমি তোমার মন কে জিজ্ঞেস করো।

– তুমি বলো!

– আমার কাছে মনে হয় নিহা ঠিক কারন এতে ওর কোনো দোষ নেই। সবার যে সবাইকে ভালো লাগবে তা না, কিন্তু এই সত্য টা যারা স্বীকার করতে না চায় তারাই ভুল!

– তুমি ও একথা বলছো।

– এটাই যে সত্যি বাবা, তুমি তোমার মন কে জিজ্ঞেস করো দেখবে তোমার মন ঠিক কথা বলবে!

আহিয়ান চলে আসে মায়ের ঘর থেকে। তার ছোট ভাইয়ের ঘর টায় যায় সে, সবকিছু এখনো আগের মতোই আছে। তার গিটার, তার ব্যাট সবকিছু। আহিয়ান আহনাফ এর একটা হাসিমাখা ছবির দিকে তাকায়। কতোটা শান্ত লাগছে দেখতে। তবে এতোটা শান্ত সে না। অনেক চঞ্চল আর অনেক দুষ্ট। ওর জেদের কাছে সবসময় সব কিছু হার মানে। আহিয়ান তার ভাইয়ের লেখা শেষ চিঠি টা পড়তে লাগলো। চিঠির শুধু একটাই লেখা তার মাথার মধ্যে ঢুকে আছে। তা হলো “আমি নিহা কে ভালোবাসতাম ভাইয়া”!

কিন্তু সত্যি বলতে কি? শুধু কি সেই ভালোবাসতো নিহা কে! নিহা ভালোবাসতো না তাকে! এটাই কি ছিল তার মৃত্যুর কারন তবে এখানে নিহা”র দোষ কোথায়? আপনজনের মৃত্যু হলে কেউ সেটা মেনে নিতে পারে না। মনের কোথায় একটা গভীর ক্ষত থেকেই যায় কিন্তু তাই বলে কি মানুষ ভুল করবে। আহিয়ান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু ভাবতে লাগল। আজ কেন জানি তার মনে হচ্ছে সত্যি’ই সেই দোষী! মৃত্যুর শোক তাতে প্রতিশোধের আগুনে পুড়িয়ে ফেলেছিল তাই আজ এতো কিছু হলো!

নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে তার কাছে। নিহা সবাই তো বার বার বলেছিলো সে কিছুই করে নি। কেন তাদের কথা শুনলো না সে। যদি তখন তাদের কথা শুনতো তাহলে আজ এরকম কিছুই হতো না। নিহা’র জন্য তার মনে যে সুপ্ত ভালোবাসা ছিল তা এভাবে নষ্ট হতো না! আহিয়ান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু তার খারাপ ব্যবহারের কথা মনে করতে লাগলো যা সে নিহা’র সাথে করেছে। বার বার নিহা এসেছে আহিয়ান’র কাছে। কিন্তু আহিয়ান তাকে মেনে নেয়নি। শুধু বলেছে “সে ভালোবাসে আমাকে”! কিন্তু তার এই ভালোবাসা আমি বুঝতে পারি নি।
.
অনেক রাত হয়ে গেছে, বাইরে খুব জোরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। নিহা বারবার কল করছে আহিয়ান কে কিন্তু কল বেজেই যাচ্ছে কেউ রিসিভ করছে না। নিহা এবার তার শাশুড়ি কে ‌কল করল। সে জানাল আহিয়ান সন্ধ্যায় বের হয়ে গেছে তাহলে এখনো বাসাঢ় আসলো না কেন? চিন্তায় অস্থির হয়ে যাচ্ছে নিহা। না আর বসে থাকা যাবে না এভাবে। নিহা গাড়ি নিয়ে বের হলো, বৃষ্টির গতিও বাড়তে লাগলো। যে রাস্তা দিয়ে আহিয়ানের আসার কথা ছিল নিহা ও সেদিক দিয়ে যেতে লাগল। অনেকক্ষন পর আহিয়ান’র গাড়ি চোখে পড়ল তার। রোডের এক সাইডে গাড়ি পার্ক করা তবে আহিয়ান কে দেখা যাচ্ছে না। নিহা গাড়ি থেকে বের হয়ে ছাতা নিয়ে আহিয়ানের গাড়ি’র কাছে গেল। দেখল আহিয়ান দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে।

নিহা পিছন থেকে আহিয়ানের ঘাড়ে হাত রেখে বলল..

– আহিয়ান!

– …

নিহা আহিয়ানের সামনে দাঁড়িয়ে…
– এভাবে বৃষ্টিতে কেন ভিজছেন, জ্বর আসবে। চলুন!

আহিয়ান একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিহা’র দিকে। নিহা আহিয়ানের হাত ধরে টেনে নিতে যেতে নিলে আহিয়ান বলে উঠল…

– ভূতনি!

নিহা খানিকক্ষণ’র জন্য থমকে যায়। নিহা পিছনে ঘুরে আহিয়ান’র দিকে তাকায়। আহিয়ান নিহা কে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। নিহা’র হাত থেকে ছাতা টা পড়ে যায়। দুজনেই ভিজতে থাকে বৃষ্টিতে। আহিয়ান তাকিয়ে আছে নিহা’র দিকে, নিহা তাকিয়ে আছে আহিয়ানের চোখের দিকে। কেমন জানি আজ লাগছে দেখতে। আহিয়ান নিহা’র গালে হাত রেখে বলে….

– ভালোবাসি ভূতনি! আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি!

আহিয়ানের মুখে ভালোবাসি শুনে নিহা হেসে আহিয়ান কে জরিয়ে ধরে। অতঃপর আহিয়ান তাকে জরিয়ে ধরে। নিহা বলে উঠে..

– আমিও ভালোবাসি! অনেক অনেক ভালোবাসি

– সত্যি!

– হুম!

আহিয়ান হেসে উঠে, নিহা’র গালে দু’হাত রেখে বলে..
– সরি!

– কি বললেন!

– সরি।

– আচ্ছা আপনি তাহলে এবার সরি বলতে শিখে গেছেন।

– ভূতনি ভালো হচ্ছে না কিন্তু!

নিহা হেসে উঠে। অতঃপর বলে..

– সরি বলা লাগবে না। আমি বুঝতে পারি আপনার কষ্ট!

বলেই নিহা আহিয়ানের কপালে আলতো করে একটা চুমু খেয়ে বলে…
– বাসায় চলুন অনেক ভিজেছেন বৃষ্টিতে!

অতঃপর দুজনে এক গাড়িতে করে বাসায় আসে। নিহা আজ খুব খুশি। অবশেষে তাদের এই দূরত্ব মিটল। তবে আজ আরেকজন ও অনেক খুশি। সে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে নিহা’র মুখে থাকা হাসির রেখা টা দেখতে পাচ্ছিল। তবে সকাল হতেই সবাই বুঝতে পারল আহিয়ান আর নিহা’র মাঝে সব ঠিক। এসব দেখে অভ্র কিঞ্চিত হেসে মেহেরিন’র দিকে তাকাল। মেহেরিন অভ্র’র সামনে হাত বাড়ালো। অভ্র হেসে মেহেরিন’র হাতে চকলেট দিলো!
.
মেহেরিন, কাব্য, ইহান, নিশি বসে আছে একসাথে। সেখানে রোদ্দুর এসে উপস্থিত হয়। মেহেরিন উঠে রোদ্দুর’র সামনে যায়। দুজন দুজনকে তাকিয়ে দেখছে। অতঃপর দুজনেই জোরে হেসে ‌ হাইফাই দেয়। রোদ্দুর মেহেরিন’কে বলে উঠে..

– প্ল্যান মোতাবেক কাজ হয়েছে। সত্যি বলতে হবে প্ল্যান টা দারুন ছিলো!

#চলবে….