#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২৭
প্ল্যানের কথা বলতেই মেহেরিন আর বাকি সবাই হেসে উঠে। নিশি বলে উঠে..
– প্ল্যান টা দারুন সেটা বলতেই হবে কিন্তু তোর অভিনয়! বাহ কি অভিনয় করলি রে ভাই!
কাব্য বলে উঠে…
– তোদের তো এ্যাওয়ার্ড দেওয়া উচিত!
ইহান বলে উঠে..
– আমি তো ভেবেছিলাম তোরা না হেসেই দিস ঝগড়া করতে করতে তাহলে আমাদের পুরো প্ল্যানের বারোটা বেজে যেত!
রোদ্দুর বলে উঠে..
– কাভি নেহি। আমি এরকম কিছুই হতে দিতাম না।
নিশি বলে উঠে..
– মেহেরিন যে সেই লেভেলের অভিনেতা সেটা আমরা জানতাম তবে ভাই কামাল তুই দেখালি। সিরিয়াসলি দা, দি ভাইয়া কেউ বুঝতে পারে নি তোরা অভিনয় করছিস তাহলে আর জিজু কিভাবে বুঝবে।
– তা যা বলেছিস কিন্তু জান এমন একটা প্ল্যান তোর মাথায় আসলো কিভাবে?
মেহেরিন বাঁকা হেসে চেয়ারে বসে বলে…
– এর ক্যাডিট ইহান কে দেওয়া উচিত!
– আমি!
– হ্যাঁ তুই! সেদিন রাতে ওর কথা শুনে আমি একটু অবাক হয়েছিলাম কারন এটা হতেই পারে না রোদ্দুর একটা মেয়েরঠ কারনে আমাদের ভুল বুঝবে। কিন্তু বাস্তবতা আসলেই খারাপ বলা যেতে পারে না। যাই হোক আমি জানতাম রোদ্দুর আমাদের কথা বিশ্বাস করবে। সত্যি বলতে কি ইহান সেদিন রাতে রোদ্দুর ওখানেই ছিল
ইহান হা হয়ে তাকিয়ে আছে মেহেরিন’র দিকে। রোদ্দুর মুখ টিপে হাসতে হাসতে ইহান কে বলে..
– তুই আমাকে নিয়ে এতো সিরিয়াস আমি আসলেই জানতাম না ইয়ার!
– মানে!
মেহেরিন বলে উঠে..
– মানে টা আমি বলছি রোদ্দুর আমার সাথেই ছাদে এসেছিল। কিছু হঠাৎ ওর ফোন আসায় আমি একাই তোর কাছে এলাম। সব শোনার পর আমি ইশারা করে রোদ্দুর কে আসতে বারন করলাম। কিন্তু রোদ্দুর আড়াল থেকে সব’ই শুনছিল। যাই হোক এটা নিয়ে কোনো ঝামেলা হয় নি। রোদ্দুর আমাকে সোজা বলেছে সে আর লিসা’র সাথে সম্পর্ক রাখবে না। অতঃপর ঘরে আসার পর আমি রাত ৩ টা পর্যন্ত শুধু ভাবলাম যে যদি নেগেটিভ কিছু হতো। মানে রোদ্দুর না বুঝতে চাইতো তখন। এইসব ভাবার পর’ই হঠাৎ প্ল্যান টা মাথায় আসলো কিন্তু প্ল্যান টা যে সাকসেসফুল হবে সেটা ভাবে নি।
সবাই মেহেরিন’র কথা শুনে হাত তালি দিয়ে উঠে! নিশি বলে উঠে…
– কিন্তু রোদ্দুর তুই কি সত্যি সত্যি গুলি করতে যাচ্ছিল নাকি!
– কি বলিস এসব আমার গানে এ তো গুলিই ছিলো না। ওটা তো শুধু জিজু কে দেখানোর জন্য!
কাব্য বলে উঠে…
– ওকে গাইস এই ঘটনার সমাপ্তি এখানেই! এরপর আর কখনো এই নিয়ে কথা হবে!
– জো হুকুম! তবে একটা কথা, আমাদের বন্ধুত্ব এতো ঠুকনো না যে এতো তাড়াতাড়ি ফাটল ধরে যাবে!
মেহেরিন’র কথা শুনে সবাই হেসে উঠে। এদিকে আবার ও হেরে গিয়ে সেই লোকটা’র মাথা পুরো গরম হয়ে আছে। রাগে শরীর কাঁপছে তার। হাতে থাকা ওয়াইনের বোতলটা কে জোরে আছাড় মেরে বলে…
– কিভাবে কিভাবে কিভাবে? কিভাবে বার বার জিতে যায় আদুরী। কিভাবে? এতো বড় একটা প্ল্যান কে কিভাবে নষ্ট করে দিলো সে। কিভাবে?
– এখানে তো মানে…
সে চিৎকার করে বলে…
– আমি কিছু শুনতে চাই না, আমার একটা ফুলফিল প্ল্যান চাই। আমি শুধু মেহেরিন বর্ষা খানের লাশ দেখতে এট এনি কস্ট। শুধু ওর রক্তাক্ত লাশ দেখবো আমি এজন্য যা করার হয় তাই করো। কিন্তু আমি আদুরীর শেষ দেখতে চাই বুঝলে তুমি!
– হুম!
.
আহিয়ান আর নিহা’র সম্পর্ক এখন অনেকটা স্বাভাবিক! আহিয়ান এখন নিহা কে তার বাড়িতে’ই থাকে। তবে মেহেরিন তাকে মোটেও যেতে দিতে চায় না কিন্তু কিছু বলার ও থাকে না তার। কেটে যায় করো কয়েকটা মাস। অবশেষে আনহা’র ডেলিভারি সময় হয়ে যায়। আনহা একটা পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। পুরো খান বাড়িতে যেন আনন্দের উৎসব লেগে যায়। খান বাড়ির প্রথম পুত্র সন্তান সেদিন বাড়িতে আসে। মেহেরিন সারাদিন তাকে কোলে নিয়েই বসে থাকে। ছেলেটার নাম রাখা হয় শান্ত! অবশ্য নামটা মেহেরিন’ই রাখে। শাহরিয়ার অভ্র খান এর ছেলে শাহরিয়ার শান্ত খান!
মেহেরিন সারাদিন শান্ত’র সাথেই থাকে। তবে তার দায়িত্ব যেন নিশি আর নিহা পালন করে। এসব সে করতে পারে না। শুধু পারে শান্ত কে কোলে নিয়ে বসে বসে খেলতে। নিহা আবার ও খান বাড়িতে চলে আসে কারন তখন আনহা পুরোপুরি সুস্থ না। তাই শান্ত’র খেয়াল তাকেই রাখতে হয়। এদিকে শুভ্র খান অনেক খুশি তার প্রথম নাতির জন্য। এই পর্যন্ত শুধুই ভিডিও কলে’ই দেখেছে তাকে। সামনাসামনি দেখার সৌভাগ্য হয় নি তার।
আনহা সবসময় বলে শান্ত দেখতে নাকি পুরো অভ্র’র মতোই হয়েছে। ওর মতোই শান্তশিষ্ট! নিহা মাত্র’ই শান্ত কে ঘুম পারিয়ে ঘরে ঢুকল। মেহেরিন শান্ত কে নিয়ে একসাথে ঘুমায়! নিহা ঘরে আসা মাত্রই আহিয়ান হেঁচকা টান দিয়ে তাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়!
– এটা কি হলো?
– কিছুই না আমার ভূতনি কে ধরতে ইচ্ছে করল তাই ধরলাম!
– ধরা শেষ হলে এখন ছাড়ুন।
– ছাড়বো তো কিন্তু একটা কথা ছিল!
– কি কথা।
– ভূতনি আমার একটা..
– কি একটা!
আহিয়ান নিহা’র কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলল…
– আমাদের অরনি চাই!
– এই অরনি টা কে?
– নিহা!
– কি হলো?
– তুমি এটা কিভাবে ভুলে গেলে।
– কিভাবে ভুললাম আর কি ভুললাম!
– অরনি! আমাদের বেবি আমরা যে নাম ঠিক করলাম।
– আপনি কিভাবে এতো নিশ্চিত হচ্ছেন আমাদের প্রথম সন্তান মেয়েই হবে।
– দেখো এটাই হবে।
– যখন হবে তখন দেখা যাবে এখন সরুন তো।
– হুহ আমার খুব তাড়াতাড়ি চাই। আজ আমি ছাড়ছি না তোমায়!
– আহিয়া….
অতঃপর আহিয়ান নিহা কে কোলে তুলে নেয়!..
❤️
❤️
.
শান্ত’র এখন ছয়মাস চলে, সে এখন মেঝেতে হামাগুড়ি খায় তার সাথে সাথে মেহেরিন ও হামাগুড়ি খায়। মেহেরিন অবশ্য শান্ত কে ফুপিজান বলে ডাকে। সবার চোখের মনি এখন শান্ত। বিশেষ করে মেহেরিন তবে এ কি”দিন মেহেরিন’র ওপর কোনো হামলা হয় নি। সবকিছু তাই এখনো শান্ত!
এদিকে নীল আজ ভার্সিটিতে এসেছে দু’মিনিট ও হয় নি তার আগেই ঝগড়া লেগে গেছে নীলাশা’র সাথে। দুজনেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তুমুল ঝগড়া। তাদের ঝগড়ার কারনে ক্যাম্পাসে ভিড় জমে গেছে! ঝগড়ার কারন হলো নীল কেনো নীলাশা কে ধাক্কা মারল। এখানে নীল বলছে সে ধাক্কা মারে নি তো নীলাশা বলছে নীল ইচ্ছে করেই তাকে ধাক্কা মেরেছে। এক পর্যায়ে নীল অতিষ্ঠ হয়ে। রাগের কারনে কিছু না বলেই নীলাশা’র পাশ কাটিয়ে চলে যায়। এটা নীলাশা’র মান সম্মানে লাগে। সে নীলের ওপর মারাত্মক রেগে থাকে। তাই বাইরে এসে নীলের পার্ক করা গাড়ির টায়ার পাংচার করে দেয়।
অতঃপর ভার্সিটি শেষে নীল এসে দেখে গাড়ি’র টায়ার পাংচার করা। কিন্তু এটা যে নীলাশার কান্ড প্রথমে সে ধরতে পারে না। কিন্তু দূর থেকে নীলাশা কে হাসতে দেখে নীলের বুঝতে বাকি থাকে না এটা যে নীলাশা’র কান্ড তাই সে তার বন্ধুর গাড়ি করেই বাসায় যায়। এখানে নীলাশা নীলের এই অবস্থা দেখে জোরে জোরে হাসতে থাকে। সে তার প্রতিশোধের বদলা নিয়েছে! এভাবেই সাপ বেজীর মতো লেগে থাকে দুজনে।
নীল রেগে বাসায় আসে, তার মেজাজ খুব বিগড়ে আছে নীলাশা’র কারনে। বাড়িতে ঢুকতেই আহিয়ান এসে নীলের মুখে একটা মিষ্টি ঢুকিয়ে দেয়। নীল কোনোমতে মিষ্টি খেয়ে বলে..
– কিসের খুশিতে মিষ্টি জিজু!
– আরে আগে খাও তারপর বলছি!
এখানে মেহেরিন এসে বলে…
– তুমি ভাইয়া কেই মিষ্টি দিলে আমাকে না!
আহিয়ান হেসে মেহেরিন কে পুরো এক হাড়ি রসগোল্লা দিয়ে বলে…
– নাও এসব তোমার!
মেহেরিন এক হাড়ি রসগোল্লা পেয়ে টুপ টুপ করে ৩, ৪ অলরেডি খেয়ে ফেলে। অভ্র এসব দেখে বলে উঠে…
– কি হয়েছে আহিয়ান!
– আপনি মামা হতে যাচ্ছেন দা!
– ওহ আচ্ছা কিহহহহহ?
মেহেরিন বলে উঠে…
– আরে চিৎকার করছো কেন আমার খাওয়াই তুমি ডিস্টার্ব করছো। মামা’ই তো হতে যাচ্ছো এতে এতো চিৎকার করার কি আছে।
কাব্য মেহেরিন’র মাথায় একটা বাড়ি মেরে বলে…
– তুই বুঝতে পারিস মামা হচ্ছে এর মানে টা কি?
রসগোল্লা খেতে খেতে…
– কি?
ইহান বলে উঠে..
– তুই খালামনি হবি!
– হ্যাঁ তো এটার মানে কি!
রোদ্দুর বলে উঠে…
– আরে গাধী জিজু বাবা হবে!
– ওহ আচ্ছা!
হঠাৎ তার হাত থেকে রসগোল্লা টা পড়ে যায়। মেহেরিন চোখ বড় বড় করে আহিয়ান’র দিকে তাকিয়ে বলে…
– সত্যি!
– জ্বি শালিকা!
#চলবে….
#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২৮
মেহেরিন চট করে উঠে এক লাফ দিয়ে আহিয়ান’র সামনে এসে দাঁড়ালো। অতঃপর বলল…
– দি কোথায়?
– বাসায়।
– আমি যাবো দি’র কাছে।
– হুম চলো!
অতঃপর আহিয়ান সবাইকে নিয়ে বাসায় গেল। নিহা বিছানায় শুয়ে ছিল, তার পাশে মা বসে ছিলেন। মেহেরিন নিহা কে দেখে একগাল হেসে বলল..
– আমি খালামনি হতে যাচ্ছি, কনগ্রেচুলেশন করো!
– প্রথমে আমাকে কর পাগলি!
– ওহ হ্যাঁ হ্যাঁ কনগ্রেচুলেশন! সুইট আন্টি তুমি ও দাদি হতে যাচ্ছো কনগ্রেচুলেশন!
– ধন্যবাদ মেহেরিন বসো এখানে!
– আমি বসতে না সুইট আন্টি, তোমাদের নিতে এসেছি।
– নিতে এসেছি মানে!
– হুম তোমাকে আর দি কে নিতে এসেছি, তোমরা এখন আমাদের বাসায় থাকবে।
আহিয়ান বলে উঠে…
– এই ডিসেশন কখন নেওয়া হলো।
– মাত্র জিজু! তবে যাই হোক দি এখন আমাদের সাথেই যাচ্ছে হুম!
– হুম এটা ভালো হবে, তুমি নিয়ে যাও ভূতনি কে। ভূতনি আমার কথা শুনে না তোমাদের ওখানে থাকলে সবাই জোর করবে তখন ভালো হবে।
সবাই হেসে উঠে। নিহা চোখ ঘুরিয়ে তাকায় আহিয়ানের দিকে। আহিয়ান তার বদলে নিহা কে একটা চোখ টিপ দেয়। অতঃপর নিহা কে আবার খান বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। কেটে যায় আরো ৬ মাস। আজ সকালে ইশা’র বাবা নীলের সাথে ইশা’র বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে। সাথে ইশা ও আসে। তবে ইশা কে এতোটা ভালো লাগে না মেহেরিন’র। নীল ইশা’র বাবা কে জানিয়ে দেয় সে কিছুদিন সময় চায় তারপর তার সিদ্ধান্ত জানাবে। ইশা’র বাবা এতেও রাজী হয়ে যায়।
.
নিশান আর নিশি বন্ধুত্ব এখন ভালোই চলছে তবে নিশান আজ পর্যন্ত তার মনের কথা নিশি কে জানায় নি। সত্যি বলতে সে সাহস পায় নি। অজানা এক ভয় কাজ করে তার মধ্যে। এদিকে নিশি’র মনেও নিশানের জন্য অনুভূতি আছে তবে সে চায় নিশান তাকে আগে বলুক এভাবেই দুজনের দ্বিধা’র কারনে তাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হয় না।
নীল আর ইশা সামনাসামনি দাঁড়ানো। ইশা বলে উঠে…
– কি ভাবলি আমাদের বিয়ে নিয়ে!
– ইশা আমি বলছিলাম…
– নীল, তুই যদি না বলিস আমি কিন্তু তাহলে সুইসাইড করবো!
– পুরো কথাটা শোন আগে…
– …..
– দেখ আমার লাইফে অন্য কোন মেয়ে নেই, আছিস তো এক তুই। তোকে বিয়ে করতে আমার কোন সমস্যা নেই তবে আমার বোনের যদি তোকে পছন্দ না হয় তাহলে আমি তোকে বিয়ে করতে পারবো না এখন তুই যাই করিস না কেন!
– তুই কি মেহেরিন’র কথা বলছিস নীল!
– হ্যাঁ, ওকে খুশি কর। তাহলেই আমি রাজী এই বিয়েতে।
– দেখ আমার এটা মনে হয় না ও আমার সাথে তোর বিয়েতে অখুশি এমন হলে তো তখনই বলতো।
– তাও ঠিক, তবুও আমি সময় দিতে চাই।
– তুই নে না সময়, যত দিন ইচ্ছা নে। আচ্ছা আমি বলছি ৩ মাস পর আমাদের বিয়ে হবে। এখন তোর কোনো অভিযোগ নেই তো।
– না নেই মানে!
ইশা নীলের কাছে এসে জরিয়ে ধরে বলে..
– আমি জানতাম তুই শুধু আমাকেই ভালোবাসিস
নীল আর কিছু বলে না। শেষ পর্যন্ত ৩ মাস পর বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়। এখানে মেহেরিন’র ইশা কে একদম পছন্দ না কিন্তু সে এ কথা কিছুতেই নীল কে বলতে পারছে না। কারন তার কাছে এখন এমন মেয়ে নেই যার সাথে নিজের ভাইয়ের বিয়ে দিবে সে।
কয়েকদিন পর….
নীলের এক ফ্রেন্ড একটা পার্টি থ্রু করে। সেখানে ভার্সিটির সবাই ইনভাইটেড থাকে এমনকি নীলাশাও। এদিকে পার্টির কথা শুনে মেহেরিন এখন শুধু নীলের পিছন পিছন ঘুরছে। কারন সে ও যাবে এই পার্টিতে। প্রায় অনেকক্ষণ ধরেই নীল খেয়াল করছে মেহেরিন তার পিছু পিছু ঘুরছে কিন্তু এর কারণটা কি? নীল গ্লাসে পানি ঢেলে খেতে থাকে তখন পেছন থেকে মেহেরিন নীলের শার্ট ধরে টানতে থাকে। নীল বলে উঠে…
– কি হয়েছে?
– ভাইয়া আমিও তোমার সাথে পার্টিতে যাবো।
– কিহ?
– হুম! প্লিজ ভাইয়া আমিও যাবো! প্লিজ প্লিজ প্লিজ!
– কিন্তু তুই গিয়ে বোর হয়ে যাবি।
– আরে যাবো না।
– সত্যি তো!
– হুমমমম!
– আচ্ছা ঠিক আছে নিয়ে যাবো!
.
নীল আর মেহেরিন একসাথে যায় পার্টিতে। নীল একটা সাদা রঙের হুডি আর কালো জিন্স পড়ে। মেহেরিন ও স্যাম। দুজনকে এমন একই রঙের ড্রেস দেখে সবাই তাকিয়ে থাকে বিশেষ করে মেহেরিন কে। মেহেরিন কে অনেক কিউট লাগছে দেখতে। মেহেরিন কে দেখে ইশা এসে তাকে জড়িয়ে ধরে। নীল সবার সাথে পরিচয় করায়। অতঃপর নাচতে শুরু করে। খুব জোরে মিউজিক বাজছে আর সব লাইট ডিম করে রাখা হয়েছে।
মেহেরিন একসময় আসলেই বোর হয়ে যায়। নীল ওকে নিয়ে একটা টেবিলে বসে। হঠাৎ ইশা এসে জোর করে নীল কে নিয়ে যায় ডান্স ফ্লোরে। মেহেরিন একা একা বসে থাকতে থাকতে বোর হয়ে যায় তাই হাঁটতে থাকে। তখন হুট করে একজনের সাথে ধাক্কা খায়।
– সরি!
– সরি আমিও খেয়াল করি নি।
– ইট’স ওকে।
– তুমি মেহেরিন বর্ষা খান নাহ!
– হুমম তুমি!
– আমি নীলাশা।
মেহেরিন তাকিয়ে আছে নীলাশা’র দিকে। দেখতে খুব মিষ্টি মেয়েটা। মেহেরিন বলে উঠে…
– তোমার নাম টা খুব বড় আমি ছোট করে ডাকি!
– কি বলে ডাকবে তুমি আমায়!
– আমি তোমাকে শুধু নীল আপু বলে ডাকবো।
– নীল!
– কেনো? নামটা সুন্দর নাহ!
– হুম সুন্দর! কিন্তু তুমি এখানে কি করছো, পার্টি তো ওখানে হচ্ছে।
– খুব বোর লাগছে তাই এখানে আসলাম।
– আমার ও খুব বোর লাগছে এই পার্টিতে এসে। আচ্ছা শোন!
– বলো!
– আমি এখানে আসার আগে পাশে দেখেছি মেলা বসেছে তুমি যাবে আমার সাথে!
– মেলায় হ্যাঁ হ্যাঁ আমি যাবো চলো চলো!
– আচ্ছা চলো!
.
নীলাশা আর মেহেরিন দুজন মিলে মেলায় গেলো। দুজনে মিলে খুব গল্প করল। মেহেরিন নীলাশা কে ভালো লাগলো। এদিকে নীল পুরো পার্টিতে মেহেরিন কে খুঁজছে কিন্তু কোথায় পাচ্ছে না তাকে। চিন্তায় নীল অস্থির হয়ে গেছে। ফোনের উপর ফোন করে যাচ্ছে কিন্তু কেউ ধরছে না। একে তো ফোন সাইলেন্ট ছিলো আর এতো ভিড়ের মাঝে তা টের পেলো না মেহেরিন। নীল এবার প্রায় পাগল হয়ে গেল। অতঃপর ডেভিল কে কল করে মেহেরিন’র ফোনের লোকেশন জানল নীল। লোকেশন অনুযায়ী নীল সেই মেলায় চলে এলো। এদিকে নীলাশা আর মেহেরিন মাত্র আইসক্রিম কিনল। নীল আর ইশা দুজনেই খুঁজতে লাগলো মেহেরিন কে। অবশেষে নীল দেখল মেহেরিন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আইসক্রিম খাচ্ছে। তাকে দেখে নীল কিছুক্ষণ’র জন্য শান্ত হলো। এবার নীলের চোখে পড়ল মেহেরিন’র এর পাশে নীলাশা দাঁড়িয়ে আছে। নীলের মাথা আবার গরম হয়ে গেল। নীল রেগে ওখানে নীলাশা’র হাত জোরে চেপে ধরে বলল…
– তোমার সাহস হলো কিভাবে আমার বোন কে নিয়ে এখানে আসার, না বলে ওকে তুমি নিয়ে আসলে কিভাবে? এতো সাহস তোমায় কে দিয়েছে বলো!
নীলের চিৎকারে লোকজন জড়ো হয়ে গেল। মেহেরিন অবাক হয়ে নীলের দিকে তাকিয়ে আছে। নীল এতোটা রেগে যাবে সে ভাবে নি। এদিকে লোকজন সব নীলাশা’র দিকে তাকিয়ে আছে। নীলাশা লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মেহেরিন শান্ত ভাবে নীলের হাত ধরে বলে…
– ভাইয়া আপু’র কোনো দোষ নেই আমি তাকে জোর করে এখানে নিয়ে এসেছি, তুমি আপু কে কিছু বলো না।
নীল শান্ত গলায় মেহেরিন’কে বলে…
– ঠিক আছে আদুরী তবে না বলে কেন আসলে তুমি!
– তুমি আমার সাথে ছিলে যে তোমায় আমি বলবো। আমি তো একা একাই ছিলাম তাই।
নীল এবার নীলাশা’র হাত ছেড়ে মেহেরিন’র মাথায় হাত রেখে বলল..
– তুমি জানো কতোটা চিন্তা করেছিলাম আমি!
এরমধ্যে ইশা বলে উঠে..
– এতোটা বাচ্চামি তোমাকে মানায় না মেহেরিন, তোমার ধারনা থাকা উচিত তুমি কার বোন। এভাবে হুটহাট করে তুমি এখানে আসলে কিভাবে তাও এই মেয়েটার সাথে। এতোটা দায়িত্ব হীন কিভাবে হও তুমি!
ইশা’র কথা শুনে মেহেরিন রেগে তাকিয়ে আছে ইশা’র দিকে। নীল বলে উঠে..
– ইশা, আমার বোন কে এভাবে বলার তুমি কে?
– নীল আমি তো শুধু ওকে বোঝাচ্ছিলাম।
– সুন্দর ভাবেও বোঝানো যায় আর আমার বোন কে বোঝানোর জন্য আমি আছি, শেষবারের মতো বলছি আমার বোনের সাথে এভাবে কথা বলবে না তুমি!
– সরি নীল, সরি মেহেরিন!
নীল মেহেরিন’র হাত ধরে বলে..
– বাসায় চলো অনেক হয়েছে!
বলেই মেহেরিন নিয়ে গেল। মেহেরিন কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারল না। মেহেরিন কে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নীল ও বসল গাড়িতে। মেহেরিন গাড়ি থেকে নীলাশা কে দেখল। তাকে দেখে খুব খারাপ লাগলো তার। হাত টা ধরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে নীলাশা।
নীল গাড়ি চালাচ্ছে আর মেহেরিন মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।
– এভাবে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকার মানে কি আদুরী।
– তুমি জানো না নাকি!
– ইশা কে তো বকলাম আমি!
– আমি ইশা আপু’র কথা বলছি না।
– তাহলে…
– নীল আপুর কথা বলছি!
নীল সাথে সাথে গাড়ি ব্রেক করে। মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে বলে..
– নীল আপু! কি বলছো!
– নীলাশা আপুর কথা বলছি।
– সে কবে থেকে নীল হলো।
– আমি শর্ট ফ্রম করেছি কেন?
– না কিছু না তবে এটা আমার নাম।
– হ্যাঁ এটা নাম আর এক নাম সবার হয়। বাই দ্যা ওয়ে তুমি তার সাথে অনেক খারাপ ভাবে কথা বলেছো।
– ও যা করেছে তা কি ঠিক করেছে!
– দোষ আমার ছিলো!
– ও যেরকম কাজ করেছে সেকরম’ই কথা শুনেছে।
– বাসায় গিয়ে আমি দা কে বলবো তুমি এভাবে একটা মেয়ের সাথে কথা বলেছো দেখো!
নীল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে…
– কি করতে হবে আমায়!
– সরি বলবে কালকে নীল আপু কে!
– কিহ সরি আমি তাও ওই ঝগড়াটে মেয়েকে।
– হ্যাঁ বলবে কারন দোষ তোমার।
নীল কোনোমতে নিজেকে সংযত করে..
– ওকে!
– অনেক সুন্দর করে বলবে!
– হ্যাঁ বাবা বলবো।
– প্রমিস করো!
– হুম হুম করলাম।
– লাভ ইউ ভাইয়া!
বাসায় এসে মেহেরিন’র সামনে অভ্র আর আহিয়ান দাঁড়ানো। সবার প্রশ্ন এক পার্টি ছেড়ে কোথায় গিয়েছিলে তুমি! মেহেরিন খুব সহজে বলে দিল..
– আমি মেলায় গিয়েছিলাম একটা আপুর সাথে, জানো আপুটা কি কিউট ছিলো। অনেক ভালো ছিল আমায় আইসক্রিম খাওয়ালো….
আরো অনেক প্রশংসা কলতে লাগলো মেহেরিন, পেছন থেকে নিহা আর আনহা তাকিয়ে আছে নীলের দিকে, ভ্রু নাচিয়ে বলছে কে এই মেয়ে? নীল নিজের কপাল চাপড়ালো। এ দেখে নিহা আর আনহা হেসে উঠলো। অতঃপর আনহা মেহেরিন কে জিজ্ঞেস করল…
– আপুটার নাম কি আদুরী!
– এই যা নাম’ই তো বললাম না। নাম হলো…
বলার আগেই নীল মেহেরিন’র মুখ চেপে ধরল,আর সে বলল…
– নীলাশা! মেয়েটার নাম নীলাশা! আদুরী তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে নাও ঠিক আছে। মেহেরিন নাচতে নাচতে রুমে চলে গেল। সবাই নীলের দিকে তাকাল। নীল কাউকে কিছু না বলে নিজেও রুমে চলে গেল!
.
মেহেরিন বিড়াল কে আদর করতে করতে ভাবছে যদি ইশা’র জায়গায় নীলাশা তার ভাবী হতো তাহলে খুব ভালো হতো। তখন অভ্র আসল মেহেরিন’র রুমে..
– কি ভাবছো এতো মনোযোগ দিয়ে?
– দা! জানো আমি কি ভাবছিলাম!
– কিহ?
– নীল আপু’র কথা।
– নীল নাহ তোমার ভাইয়া হয় আদুরী!
– আরে আমি নীল আপু মানে নীলাশা আপু’র কথা বলছি!
– একদিনেই নাম দিয়ে দিলে।
– তুমি জানো আপু টা কতো সুইট ছিলো। ইশা আপু’র থেকেও সুইট আর কিউট ও।
– তুমি কি ভাবছো যে তোমার নীল আপু’কে ভাবী বানাবা।
– এজন্য তোমায় আমি এত্তো ভালবাসি কি সুন্দর বুঝে গেলে।
– ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন আপনার ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে আদুরী।
– ভেঙে দাও!
– তাহলে ওই মেয়ে মরে ভূত হয়ে এসে তোমার ভাইয়ের ঘাড় মটকাবে!
অতঃপর অভ্র আর মেহেরিন এক সাথে হেসে উঠে। পরদিন নীল ভার্সিটিতে এসে খুঁজতে থাকে নীলাশা কে। কিন্তু নীলাশা এখনো আসে নি ভার্সিটিতে! নীল অপেক্ষা করছে কখন সে আসবে। নীলের অপেক্ষার অবশন ঘটল। নীলাশা আসল কলেজে। নীল নীলাশা কে দেখে তার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। কিন্তু নীলাশা নীল কে ইগনোর করে চলে আসল। নীল কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারল না।
নীল বারবার’ই নীলাশা’র সাথে কথা বলতে চাইলে নীলাশা প্রতিবার’ই নীল কে এড়িয়ে চলে। নীল এবার অনেক রেগে যায়। নীলাশা ক্লাসরুমে যাচ্ছিল হুট করেই কেউ তাকে টান দিয়ে ক্লাসরুমে নিয়ে গেল। নীলাশা তাকিয়ে দেখে নীল। সে ইচ্ছে মতো ব্যাগ দিয়ে তাকে মারতে লাগলো। এদিকে নীল কথা বলতে চাইছে কিন্তু নীলাশা তার কোনো কথা শুনতে রাজী না। নীল রেগে নীলাশা’র দুই বাহু ধরে দেওয়ালে ঠেকায়। নীলাশা রেগে তাকিয়ে আছে নীলের দিকে। বলতে শুরু করে..
– সমস্যা টা কি আপনার, এমন করছেন কেন ছাড়ুন আমায়! দেখুন ভালোই ভালোই বলছি আমায় ছাড়ুন নাহলে কিন্তু আমি চিৎকার করবো।
– দু মিনিটের জন্য একটু চুপ করবে, কখন থেকে চেষ্টা করছি তোমার সাথে কথা বলার আর তুমি কি না।
– কি আমি হুম কি আমি, কাল এতো অপমান করে মন ভরে নি কিন্তু আপনার, এখন আবার এসেছেন কথা শুনাতে ।
– নীলাশা!
নীলের ধমকানিতে নীলাশা চুপ হয়ে গেল, নীল শান্ত গলায় বলল…
– সরি!
নীলাশা চমকে উঠল নীলের সরি বলায়!
#চলবে….