Game Part-31

0
624

#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৩১

– “আপনার কি কোনো ধারনা আছে নীল যদি সত্যি টা জানে তখন কি হতে পারে, তখন যদি এই বিয়েটা অস্বীকার করে সে। তখন…
একদমে কথা গুলো বলল আনহা!

– তুমি এতো চিন্তা কেন করছো এসব ওরা কখনো জানতে পারবে না।

– কিন্তু এভাবে ঠকিয়ে, আপনি তো জানেন নীল একদম সহ্য করতে পারে না নীলাশা কে! এভাবে জোর করে বিয়ে দেবার পরিনতি কি হতে পারে!

– নিহা আর আহিয়ান’র পরিনতি যা হয়েছে ওদের ও তাই হবে।

– মানে!

– ভুলে গেলে তোমার আমার বিয়ের কথা আমরা তো জানতাম’ই না আর নিহা আর আহিয়ান’র বিয়ের কথা! আহিয়ান তো বিয়ে করতেই চাইতো না কিন্তু এখন.. এখন কি খুশি নেই তারা।

– তাহলে আপনি বলছেন।

– নিশ্চিতে থাকো দেখবে সব ঠিক থাকবে।

আনহা জবাবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম ফেলল।
.
সকালে নীলাশা ঘুম থেকে উঠে দেখে নীল সোফায় ঘুমিয়ে আছে। সে ফ্রেশ হয়ে আসে বিছানায় বসে। তখন দরজায় কেউ নক করে। নীলাশা উঠে দরজা খুলে দেখে নিশি! সে কয়েকটা শাড়ি নীলাশা’র‌ হাতে দিয়ে যায় বলে এখান থেকে একটা পড়ে নিচে আসতে ব্রেকফাস্ট করতে। আর নীল ও নিয়ে আসতে।

নীলাশা হেসে বলে..
– ঠিক আছে।

অতঃপর শাওয়ার নিয়ে একটা নীল রঙের শাড়ি পড়ে নেয়। নীলাশা এসে নীল’র সামনে দাঁড়ায়। এখন তাকে ডাকবে কিভাবে এটাই ভাবছে। নীলাশা ডাকতে থাকে নীল কে। কিন্তু নীল উঠে না। অতঃপর নীলাশা এক গ্লাস পানি নীলের মুখে ঢালে। নীল লাফিয়ে উঠে ঘুম থেকে।

– এটা কি করলে তুমি!

– যা করেছি ঠিক করেছি। কতোক্ষণ ধরে ডাকছিলাম আপনাকে আপনি উঠেন নি আমি কি করতাম।

– তাই বলে তুমি এরকম করলে।

– হ্যাঁ করলাম এখন উঠুন আর নিচে আসুন!
বলেই নীলাশা চলে গেল।

নীল ফ্রেশ হয়ে নীচে গেল। সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করছে। সারারাত সোফায় সোবার কারনে নীলের পুরো শরীর ব্যাথা করছে। ইহান বলে উঠে..

– ভাইয়া তোমার অবস্থা এমন কেন।

– আর বলিস না সারারাত সোফাম ঘুমিয়েছি আর এখন পুরো শরীর ব্যাথা করছে।

– কি বললে সোফায়!

– না কিছু না চুপচাপ খাবার খা। এতো কথা বলিস কেন খাবার সময়।

নীলের কথায় ইহান মুখ টিপে হাসল। এদিকে নীলাশা কে বাড়ির সবাই অনেক আদর করতে লাগল। সবার এতো ভালো ব্যবহারে নীলাশা’র ও কিছুটা স্বাভাবিক হতে লাগলো।

এদিকে নীল‌ খুব রেগে আছে নীলাশা’র ওপর। নীল কে সারারাত সোফায় ঘুমাতে হয়েছে নীলাশা’র জন্য। নীলাশা কেও শান্তি তে ঘুমাতে দেবে না সে। বিকালে নীলাশা যখন সবার সাথে বসে গল্প করছিল নীল তখন ঘরে এসে খাটের কিছু পার্ট খুলে দিলো যাতে নীলাশা খাটে বসলেই খাট ধপাস করে ভেঙে পড়ে।

রাতের খাবারের পর নীলাশা রুমে আসল। সবার সাথে কথা বলে এখন তার মুড অনেক ভালো। খুব ঘুম পাচ্ছে তার। তাই ভাবল ফ্রেশ হয়ে এসে ঘুমাবে। এদিকে নীল রুমে এসে দেখে নীলাশা নেই। নীলাশা তখন বের হলো ওয়াসরুম থেকে। নীল নীলাশা’র সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল। নীল ইচ্ছে করেই নীলাশা কে ল্যাং মারল। কিন্তু তার প্ল্যান ফ্লপ করলো যখন নীলাশা নীল কে একসাথে ধপাস করে খাটে পড়ল। সাথে সাথেই খাট ভেঙে গেল। খাট ভাঙ্গার আওয়াজ নিচ অবদি গেলো। সবাই ভয় পেয়ে ছুটে এলো। এদিকে নীলাশা নীলের ওপর পড়ে আছে। নীল দ্রুত উঠে নীলাশা কে তুলল। নীলাশা রেগে বলে..

– এটা আপনার কাজ নাহ!

– কিহ আমার কাজ?

– আপনার কারনেই খাট ভেঙে গেল।

– কি আমি কি করলাম সব দোষ তোমার, তোমার ওজন আমার খাট নিতে পারে নি তাই ভেঙ্গে গেছে।

– কি বললেন তাহলে গতকালকে কেনো ভাঙলো না।

– কাল আহত ছিল আজ নিহত হয়েছে।

– ওহ্ আচ্ছা!
বলেই নীলাশা শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুজল।

– এ কি করছো তুমি!

– আজ আপনাকে আমি আহত করবো।

– কিহ?

– ওয়েট দেখাচ্ছি! ঝাড়ু টা কোথায়?

– ঝা..ঝাড়ু ‌, ঝাড়ু দিয়ে কি করবে।

নীলাশা ঝাড়ু হাতে নিয়ে…
– ইচ্ছে করে আমাকে ল্যাং মেরে খাটে ফেললেন, খাট আগে থেকেই নিজেই ভাঙচুর আর এখন খাট ভাঙল তো দোষ আমার! কালকের প্রতিশোধ নিলেন ঘুমাতে দেয় নি বলে নাহ।

– আরে আরে কি করছো তুমি ঝাড়ু নিয়ে!
বলেই নীল দূরে সরে গেল।

– আজ তো আমার ঘাড় থেকে ভূত আমি ছাড়াবোই।
বলেই নীলাশা ঝাড়ু নিয়ে নীলের পিছু ছুটল। নীল ও ভাঙা খাটের চারদিক ছুটতে লাগলো। এরমধ্যে বাড়ির সবাই এসে দেখে নীলাশা‌ নীলের পিছনে ঝাড়ু নিয়ে দৌড়াচ্ছে। মেহেরিন বলে উঠে..

– খাট ভাঙল কিন্তু নীল ভাবী ঝাড়ু নিয়ে দৌড়াচ্ছে কেন?
মেহেরিন’র কথায় দুজনেই থেমে গেল। নীলাশা ঝাড়ু পিছনে নিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়াল। আনহা বলে উঠে…

– খাট ভাঙল কি করে!

নীল বলে উঠে..
– নীলাশ’র ওজন নিতে পারে নি তাই ভেঙে গেছে।

নীলের চোখ বড় বড় তাকাল। সবাই মুখ টিপে হাসতে লাগলো। আহিয়ান বলে উঠে..
– তাহলে তুমি কোলে নিলে কিভাবে?

নীল চুপ হয়ে গেল। নীলাশা হেসে বলে উঠে..
– বেশ হয়েছে আরো বলেন মিথ্যে কথা। জিজু উনি ইচ্ছে করে খাটের এই অবস্থা করেছে।

মেহেরিন বলে উঠে..
– কেন?

ইহান বলে উঠে..
– খাট নিশ্চিত পুরান হয়ে গেছিল তাই! যেন নতুন খাট পায়!

মেহেরিন অভ্র’র দিকে তাকিয়ে বলে..
– দা আমার খাট ও পুরান হয়ে গেছে আমার নতুন খাট চাই!

মেহেরিন’র কথা শুনে সবাই হেসে দেয়। অভ্র মেহেরিন কে নিয়ে চলে যায়। কারন এখানে ওর না থাকাই ভালো। এদিকে আহিয়ান বলে উঠে..
– নীল এমন কেন করল নীলাশা!

– কাল সোফায় ঘুমিয়েছিলেন বলে!
নীলাশা’র মুখ থেকে চট করে কথাটা বের হয়ে গেল। অতঃপর সে নিজেই জিহ্বা কামড় দিলো। আনহা বলে উঠে..

– তাহলে আজ দুজনেই সোফায় ঘুমান কারন খাট কাল ছাড়া আসবে না এটাই দুজনের শাস্তি।

নীলাশা বলে উঠে..
– মিষ্টি ভাবী!

নীল হেসে বলে..
– বেশ হয়েছে এখন তুমিও বুঝবে কাল আমি কি কষ্ট করে ঘুমিয়ে ছিলাম!

নীলাশা ঝাড়ু নীলের দিকে করে..
– আপনাকে তো আমি!

– মিষ্টি ভাবী দয়া করে ভাঙা খাটের সাথে এই ঝাড়ু নিয়ে যাও প্লিজ!

আনহা মুচকি হেসে ঝাড়ু টা নিয়ে বাকি সবাইকে নিয়ে চলে গেল। সেদিন রাতে দুজনেই সোফায় ঘুমাল। ওদের কান্ড কারখানা দেখে বাড়ির সবাই হাসতে লাগলো। কিন্তু ওদের ঝগড়া কমে না। দিন দিন দুজনের ঝগড়া যেন বাড়তেই থাকে।

নিহা জন্ম দেয় একটা কন্যা সন্তানের, তার নাম রাখা হয় অরনি। অরনি যেন আহিয়ানের চোখের মনি। খান বাড়িতে আবারও খুশির খবর আসে। এই অরনি কে নিয়েও ঝগড়া লাগে নীল আর নীলাশা’র। তাদের ঝগড়া এখন মারামারি তে ঠেকেছে। দুজনে চুল টানাটানি অবদি করে। তাদের মধ্যে ভালোবাসার কমতি থাকলেও ঝগড়ার কমতি নেই!
.
কেটে যায় আরো কয়েকমাস। শান্ত এখন ভালোই কথা বলতে পারে। সে সারাদিন থাকে অরনি’র সাথে। এদিকে আহিয়ান অরনি কে মা ডাকার আগে ভূতনি ডাক শিখায়। এই নিয়ে বাড়ির সবার হাসাহাসির কমতি নেই। নীলের মনে এখন কিছুটা হলেও নীলাশা’র জন্য অনুভতি হচ্ছে। নীলাশা কে এখন ভালো লাগতে শুরু করে তার। ইচ্ছে করেই যখন তখন নীলাশা’র সাথে ঝগড়া করে সে। তাকে ছাড়া একটা দিন ও চলে না তার।
মেহেরিন এবার ভার্সিটিতে উঠে, নিহা এখন পুরোপুরি লইয়ার। তার প্রথম কেস খুব সাফল্য ভাবে জিতে সে। নীল এবার নিজের কোম্পানি স্টার্ট করে।

আজ ভালোবাসা দিবস! নিশান ভেবেই নিয়েছে আজ সে নিশি কে প্রপোজ করবেই করবে। ইহান, কাব্য আর রোদ্দুর খুব ভালো ভাবে সার্পোট করছে তাকে। অবশেষে আজ সে তার ভালোবাসার কথা বলতে যাচ্ছে।
এদিকে নীল ও আজ নীলাশা কে প্রপোজ করবে বলে ভেবেছে। খুব সুন্দর করে পুরো ঘর লাল রঙের বেলুন দিয়ে সাজায় সে। নীলাশা’র মনে কি আছে তা জানার জন্য অনেক আগ্রহ সে।

সন্ধ্যার সময় ইহান , কাব্য আর রোদ্দুর কে সাথে নিয়ে বাইরে বের হয়েছে নিশি। তবে সত্যি বলতে নিশি আজ বের হতে চায় নি। কিন্তু ওদের জোরাজোরিতে না করতে পারে না নিশি। অবশেষে একটা জায়গায় এসে গাড়ি থামায় তারা। নিশি জায়গাটা চিনে না। সবাই বের হয় গাড়ি থেকে।

– কোথায় এলাম আমরা।

– দেখলেই বুঝবি চল!

নিশি খানিকটা অবাক হয় তবুও যায় তাদের সাথে। নিশি ফোন টিপছে আর সবার সাথে কথা বলতে বলতে সামনে আগায়। হঠাৎ করেই পিছনে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। নিশি অবাক হয়ে সামনে তাকাতেই চমকে উঠে। কারন সামনে খুব সুন্দর করে ডেকোরেট করা। এই ভর সন্ধ্যায় কিছু বেলুন আর ভিন্ন ধরনের হ্যারিকেন নিয়ে সাজানো চারদিক। নিশি মুগ্ধ চোখে দেখছিল আশপাশ। হঠাৎ করেই পেছনে কারো উপস্থিত টের পায় নিশি। চট করেই পেছনে ঘুরতেই দেখে নিশান হাঁটু গেড়ে বসে আছে তার সামনে। তার হাতে টকটকে এক লাল গোলাপ। নিশি এসব দেখে চমকে উঠে। অতঃপর নিশান নিশি’র চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করে…

– আমার কাছে প্রথম ভালোবাসা মানেই যে সব কিছু তা না। কিন্তু সেই ভালোবাসা যদি জীবনের শেষ নিঃশ্বাস অবদি সাথে থাকে তাতেই সেটার সার্থকতা। আমি ও চাই সেই সার্থক প্রেমিক হতে। জান পাখি! আমি তোমাকে ভালোবাসি! তুমি কি ভালোবাসো আমায়!

নিশি অবাক চোখে দেখছে ‌নিশান কে। সে তার মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। দৃষ্টিহীন ভাবে শুধু দেখতে নিশান কে। নিশানের ডাকে নিশি’র হুশ ফিরে আবার..

– জান পাখি!

– হুম!

– হ্যাঁ বা না কিছু বলো।

– যদি কিছু না বলি তখন।

– আমার হাত থেকে ফুল নেওয়ার অর্থ আমাকে বুঝিয়ে দেবে তুমি হ্যাঁ কি না বলেছো!

– আচ্ছা তাহলে সেটাই বুঝে নাও!
বলেই নিশি হাত থেকে ফুল টা নিয়ে চলে গেলো। নিশান এর অর্থ বুঝতে গিয়ে দ্বিধায় পড়ে গেল!

#চলবে….