#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৩৫ [ শেষ_পর্বের_ দ্বিতীয়াংশ ]
আজ ক্যাট’র এনগেজমেন্ট, বিয়ের অ্যানাউসমেন্ট আজ হবে। সকাল থেকেই পুরো বাড়িতে হৈ চৈ লেগে আছে। শান্ত আর অরনি মিলে পুরো ঘর ছোটাছুটি করছে আর আনহা তাদের পিছনে ঘুরছে। তাদের সামনে হুট করেই নিহা এসে দাঁড়াল। দুজনেই দাঁড়িয়ে গেল।
– দুজনে মিলে এভাবে দৌড়াচ্ছো কেন? পরে গেল ব্যাথা কে পাবে শুনি!
দুজনেই বলে উঠে..
– আমরা!
– তাহলে..
অরনি বলে উঠে..
– কি করবো দৌড়াতে বেশ লাগে আমাদের!
– তোমার মতো দুষ্টু মেয়ে তো এই কথাই বলবে কি শান্ত’র মতো শান্ত বাচ্চা টা আজ এতো দুষ্টুমি কেন করছে।
শান্ত নিহা’র কথায় মাথা নিচু করে ফেলে! নিহা হেঁসে একটু বসে শান্ত’র দিকে তাকিয়ে বলে..
– আমার ফুফুজান দেখি রাগ করতেও শিখে গেছে।
– ফুপি!
– আজ দুষ্টামি করো না ফুফুজান, বাড়িতে আজ অনুষ্ঠান তোমার মা হয়রান হয়ে যাবে বুঝলে।
– হামম!
অরনি কে উদ্দেশ্য করে বলে..
– তোমাকে আলাদা করে বলতে হবে!
অরনিও মাথা নিচু করে ফেলে। আনহা এসে দুজনকে নিয়ে বলে..
– হয়েছে ননদিনী দুজনকে আর বকা লাগবে না। আমার দুই চোখের মনি অনেক ভালো বুঝলে!
– তুলছো তো মাথায়!
– আছেই তো এই দুজন! ওদের মাথায় তুলবো না তো কাকে তুলবো।
এইসময় নিশি নীলাশা কে নিয়ে এসে বলে..
– আরেকজন আসছে টেনশন নিয়ো নিও না।
নীলাশা বলে উঠে..
– টেনশন নিবে না গো টেনশন দিবে!
সবাই হেসে উঠে!
.
বিকালের দিকে ক্যাট কে সাজাতে থাকে নিশি, আনহা আর নিহা! মেহেরিন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে তাদের। ক্যাট কে সাদা রঙের একটা লেহেঙ্গা পড়ানো হয়। তাতে গোল্ডেন রঙের কারুকাজ! ওদের সাজানো দেখে মেহেরিন বলে উঠে..
– ইশ আমি যদি সাজতে পারতাম!
নিশি বলে উঠে..
– আমি না বল আমরা, নিহা দি আর মিষ্টি ভাবী দুজনেই সেজেছে!
মেহেরিন বলে উঠে..
– বিয়ের আগে তো এতো সেজে গুজে থাকতে না দি এখন কেন এতো সাজো!
– কারন এখন সাজলে দা কিছু বলে না।
নিশি বলে উঠে..
– সাজো সাজো এখন তোমাদের’ই সময়!
– আপনা টাইম ভি আইয়ে গা। তব দেখনা হাম কেয়া করতে হে!
– আচ্ছা দেখবো। এখন আপাতত ক্যাট এর সাজ দেখ!
অতঃপর সবাই সাজগোজ এ মন দেয়। হঠাৎ সেখানে নীল এসে বাড়ি সাজানো হয়েছে সেটা দেখাবে বলে সবাইকে নিয়ে যায়। মেহেরিন তো নাচতে নাচতে বের হয়ে যায়। ক্যাট একাই ঘরে থাকে। হঠাৎ করে দরজা বন্ধ করার আওয়াজ আসলে ক্যাট চমকে উঠে। তাকিয়ে দেখে কাব্য তার সামনে দাঁড়ানো। কালো রঙের কুর্তায় চমৎকার লাগছে তাকে। ক্যাট কাব্য’র সামনে দাঁড়িয়ে বলে..
– তুমি এখানে..!
– তো আর কার আশা করবে?
– আমার কেন জানি মনে হচ্ছে নীল ভাইয়া কে তুমি পাঠিয়েছো।
কাব্য হেসে মাথায় হাত দিয়ে বলে..
– বুদ্ধিমান তুমি!
অতঃপর হুট করেই ক্যাট কে এক টানে নিজের কাছে এনে বলে..
– খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো তোমাকে!
ক্যাট হেসে কাব্য’র ঘাড়ে হাত রেখে বলে..
– কেন আমি কি বিশ্ব সুন্দরী!
– আমার হৃদয় তুমি!
– আচ্ছা একটা কথা বলো তো!
– কি?
– কাকে বেশি ভালোবাসো আমায় নাকি মেহেরিন কে।
– হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন?
– কারন সব প্রেমিক তার প্রেমিকা কে জান বলে ডাকে কিন্তু তুমি মেহেরিন কে জান বলো বিধায় আমাকে জান বলো নি।
– তুমি আসলেই মারাত্মক!
– সিরিয়াল কিলার আমি!
কাব্য হেসে ক্যাটের কোমরে হাত রেখে বলে..
– আর সাইলেন্ট কিলার আমি!
– উওরটা পেলাম না।
– নিজেই তো বললে আমার জান হলো মেহেরিন। নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসি ওকে।
– আর আমায়!
– আমার জীবন তুমি!
– এমন উওর দিলে যে আমি দ্বিধায় পড়ে গেলাম। অনেক ভাবতে হবে এখন!
– তুমি ভাবতে থাকো আর আমি আমার কাজ করি!
বলেই ক্যাট’র ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেলো। ক্যাট একটা ধাক্কা মেরে বলল..
– আমার সাজগোজ নষ্ট করার ধান্দা!
– আরে আমি তো রোমান্স করতে এসেছিলাম!
– মেহেরিন! মেহেরিন কোথায় তুমি!
– আরে যাচ্ছি যাচ্ছি! সোজাসুজি বললেই পারতে বের হও। জান কে কেন ডাকছো
– বের হবে তুমি!
– যাচ্ছি বাবা!
.
জাঁকজমক ভাবেই ক্যাট আর কাব্য’র এনগেজমেন্ট সম্পূর্ন হয়। বিয়ের তারিখ ১০ দিন পর ঠিক হয়। এদিকে পরেরদিন’ই নিহা চলে যায় ব্যাংকক।
প্রায় ৩ ঘন্টা হয়ে গেল আহিয়ান নিহা কে কল করছে কিন্তু ফোন বন্ধ। আহিয়ান এবার অস্থির হয়ে উঠল। সে দেরি না করে মেহেরিন’র কাছে গেল। মেহেরিন শান্ত আর অরনি’র সাথে খেলছিল। আহিয়ান সেখানে এসে উপস্থিত হয়!
– জিজু কি হয়েছে?
– নিহা’র সাথে কথা হয়েছিল তোমার মেহেরিন!
– দি’র সাথে, হ্যাঁ তো। দি পৌঁছে আমাকে কল করেছিলো তোমাকে করে নি।
– হ্যাঁ মেসেজ করেছিল আমি মিটিং এ ছিলাম তাই কথা বলতে পারি নি। কিন্তু এখন প্রায় ৩ ঘন্টা ধরে কল করছি বাট ফোন বন্ধ!
– কিহহ আচ্ছা আমি দেখছি! মিষ্টি ভাবী, মিষ্টি ভাবী!
আনহা বলে উঠে..
– হ্যাঁ গো ননদিনী!
– শান্ত আর অরনি কে একটু নিয়ে যাও।
– আসছি!
অরনি যাবার সময় বলে উঠে..
– আম্মু’র কি হয়েছে খালামনি!
– কিছু হয় নি আম্মুজান। তুমি যাও তোমার দা’র সাথে খেলো।
অতঃপর আনহা’র সাথে চলে যায় শান্ত আর অরনি। তারা যেতেই মেহেরিন ডেভিল কে ডাকে।
– ম্যাম।
– দি’র ফোন কি বন্ধ!
– আমি চেক করছি ম্যাম!
অতঃপর ডেভিল ফোন কে বন্ধ পায়। মেহেরিন বলে উঠে..
– গার্ড দের কল করো!
ডেভিল এক গার্ড কে কল করে তার ও ফোন বন্ধ পায়। একে একে সব গার্ডদের ফোন করতে থাকে। মেহেরিন আর আহিয়ান দুজনই চিন্তা করছে। অবশেষে একজন গার্ড ফোন ধরে। তখন সে বলে তাদের ওপর অ্যাটাক হয়েছিল। সবাই আহত হয়েছে এমনকি নিহা ও। তবে এখন ভালো আছে।
মেহেরিন বলে দি’র সাথে কথা বলবে। অতঃপর নিহাকে ফোন দেওয়া হয়।
– আদুরী!
– দি ঠিক আছো তুমি?
– হ্যাঁ ঠিক আছি, বেশি কিছু হয় নি হাতে একটু ব্যাথা পেয়েছি। রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবো।
– কিন্তু এসব হলো কি করে?
– জানি না হঠাৎ করেই অ্যাটাক করল। তবে বেঁচে গেছি, একজন আমাকে বাঁচিয়েছে!
– কে সে!
– সে আমাদের কোম্পানির নতুন ইনভেস্টর!
– ওহ্ আচ্ছা। আমি আসবো।
– না আমি ঠিক আছি। তোমার আসার দরকার নেই।
– জিজু’র সাথে কথা বলো!
– হুম!
.
– নিহা!
– হ্যাঁ ঠিক আছি আমি, চিন্তা করিয়েন না।
– আমি আসবো!
– না আপনি থাকেন অরনি’র কাছে।
– যত্ন নিও নিজের, একটু সাবধানে থেকো।
– আপনিও আর অরনি’র কে দেখে রাখেন। কোথায় সে?
– শান্ত’র সাথে খেলছে।
– আচ্ছা ঠিক আছে পরে কথা বলবো।
– হুম। আমি আবার কল করবো।
– আচ্ছা!
.
রাতে মেহেরিন বিছানায় ঘুমিয়ে ছিল। হঠাৎ কেউ বেলকনি দিয়ে তার রুমে আসল। তার মুখে মুখোস আর হাতে গ্লাফস। সে একটা ছুড়ি নিয়ে মেহেরিন’র দিকে আগাচ্ছে। মেহেরিন’র বুকে ছুরি টা বসিয়ে দিতে যাবে এর আগেই মেহেরিন ছুরি’টা ধরে ফেলল। সে অবাক হয়ে মেহেরিন’র দিকে তাকাল। মেহেরিন বলে উঠে..
– ওয়েলকাম! আমি জানি তুমি আসবে!
সে আরেকটা হাত দিয়ে ছুরি গাধঁতে গেলে মেহেরিন তাকে একটা ধাক্কা মারল। অতঃপর দুজনেই মারামারি করল। এক পর্যায়ে মেহেরিন তার হাতে ছুরির আঘাত বসিয়ে দিল। অতঃপর তার মুখোস খোলার আগেই সে পালিয়ে গেল। মেহেরিন আর তাকে ধরতে পারল না।
.
সকালে কাব্য এক কাপ কফি নিয়ে ক্যাট’র ঘরে আসলো। সে এখনো ঘুমে কাতর। কাব্য তার সামনে দাঁড়িয়ে ক্যাট কে দেখতে লাগলো। খুব ভালোবাসে সে ক্যাট কে। কফির মগ টা টি টেবিলে রেখে ক্যাট’র কপালে একটা চুমু খেল। ক্যাট’র ঘুম ভেঙ্গে গেল। কাব্য বলে উঠে…
– গুড মর্নিং বেবী!
– গুড মর্নিং!
– সকাল হয়েছে।
– তো কি আমার ঘুম এখনো শেষ হয় নি।
কাব্য হেসে বিছানার কোনে বসল। ক্যাট উঠে কাব্য’র কোলে মাথা রাখল। ক্যাট বলে উঠে..
– তোমার ঘুম এতো তাড়াতাড়ি ভেঙে গেল!
– আমি তো সকাল সকাল’ই উঠো
– ভালো বিয়ের পর সকালের নাস্তা টা তুমি’ই করবে ওকে। লাঞ্চ বাইরে করবো আর ডিনার দুজনে একসাথে বাইরে থেকে করে আসবো।
– অনেক সুন্দর প্ল্যান।
– হুম জানি ধন্যবাদ। আমি এখন একটু ঘুমাই ঠিক আছে।
বলেই কাব্য’র কোলে ঘুমিয়ে গেল। কাব্য তার মাথায় হাত বোলাতে লাগলো!
.
কয়েকদিন পর…
আজ প্রেস কনফারেন্স এ খান পরিবারের সবাইকে থাকতে হবে। তাই সবাই তাদের নতুন কোম্পানি তে গেল। প্রেস কনফারেন্স শুরু হবে তার আগে মেহেরিন’র কাছে এলো। মেহেরিন বললো তাকে এখন যেতে, বলেই নিচে আসল। নিচের ফ্লোরে সব মিডিয়া উপস্থিত ছিল। ডেভিল এসে গাড়ি বের করল। অভ্র বলল…
– আদুরী আমিও যাই তোমার সাথে!
– না দা আমি আধ ঘন্টা’র মধেই এসে পড়বো।
– তবে!
– গার্ডদের নিয়ে যাচ্ছি দা চিন্তা করো না।
বলেই মেহেরিন গাড়িতে বসল। অভ্র নিজের হাতে গাড়ির দরজা বন্ধ করে বলল..
– সাবধানে যেও।
বাকি সবাই একটু দূরেই ছিল। গাড়ি স্টার্ট হবার পর’ই অভ্র পা বাড়ালো। একদিকে সবাই ভেতরে ঢোকার জন্য পা বাড়ালো। মেহেরিন গাড়ির ড্রাইভিং সিটের পাশে বসা ছিল। হঠাৎ তার চোখে একটা চিরকুট পরল। মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে চিরকুট টা খুলল। তাতে লেখা ছিল..
– game over aduri!
হুট করেই গাড়িটা ব্লাস্ট হয়ে গেল। মাত্র ৫ সেকেন্ড হলো অভ্র তার পা বাড়িয়েছিল আর তখন’ই এই ব্লাস্ট হলো। সবাই অবাক হয়ে পিছনের দিকে গেল। দেখল পুরো গাড়িটা আগুনে জ্বলছে, এভাবেই মেহেরিন’র গল্প এখানেই শেষ হলো। তার এই গেম এখানেই অভার হলো।
#সমাপ্ত.