#My_First_Crush
#পর্ব-২১
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি
(হৃদি)
পিকনিক শেষে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ঘনিয়ে এলো। জাগতিক সব বিষয় ঘটার ক্ষেত্রেই একটি ভালো দিক থাকে। এই পিকনিকের ভালো দিকটি যা পেলাম তা হলো রাইয়ানের মুড অবশেষে ঠিক হয়েছে।
এই মুহুর্তে নিজের স্টাডি রুমে বসে অফিসের কাজ করছে সে। আজ ঠান্ডাটাও যেন একটু বেশি বেশি লাগছে। সাদা রঙের একটা পাতলা সোয়েটার আর কান টুপি পরে কফি মগ হাতে রাইয়ানের স্টাডি রুমে গেলাম আমি। রাইয়ানের পূর্ণ মনোযোগ তার হাতে ধরে রাখা ফাইলের দিকে। আমি নিঃশব্দে তার সামনের চেয়ারটি টেনে বসলাম। কফি মগটি রাখলাম সামনে। রাইয়ান অন্যমনষ্ক ভাবে আমার কফি মগটি তার জন্য ভেবে হাত বাড়িয়ে নিতে গেলো। আমি কফি মগটি হালকা একটু পাশে সরিয়ে দিলাম। রাইয়ানের হাত আবারও কফি মগের কাছে গেলে সরিয়ে দিলাম অন্যপাশে। রাইয়ানের এবার ধ্যান ভাঙলো। আমার দিকে তাকাতেই আমি ভাব নিয়ে বললাম,
‘এটা আমার কফি।’
রাইয়ান জানতে চাইলো,
‘আমারটা?’
‘আমার পেটে।’
রাইয়ান ভ্রু কুঁচকালো। আমি বললাম,
‘পরপর দু মগ কফি খেয়ে ফেলেছি আমি।’
‘আজকে ঘুমানোর ইচ্ছে নেই?’
‘ঘুম যখন আসার তখন আসবেই।’ এরপর একটু সিনেমার ডায়লগের ন্যায় বললাম,
‘দু মগ কফি কখনো আমার ঘুমের পথে বাঁধা হতে পারবে না।’
রাইয়ান হেসে ফেললো। আমি বললাম,
‘হাসার কথা তোমার মনেও আছে? আমি তো ভাবলাম এই দুই দিনে বোধহয় হাসতে কিভাবে হয় তুমি সেটাই ভুলে গেছো।’
আমি এবার আরেকটু খোলাখুলি হলাম। বললাম,
‘আমি কিন্তু সেদিন আমার কথাটা পুরোপুরি শেষ করতে পারিনি।’
ফাইল থেকে আড়চোখে একবার আমার দিকে তাকালো রাইয়ান। আমি বলতে লাগলাম,
‘যদিও অ্যালেনের বর্ণনা করতে গেলে ওর সেসব দিকের কথাও বলতে হয়। তবুও ওকে দেখতে যতোই ভালো লাগুক না কেন, মেরুন রঙ সহ পৃথিবীর সকল রঙের শার্টেই আমার কাছে সবথেকে বেশি ভালো লাগে তো তোমাকেই।’
আমি লক্ষ করলাম রাইয়ানের চোখে মুখে একধরণের সুক্ষ্ম লাজুক ভাব ফুটে উঠেছে। তা দেখে আমি বললাম,
‘যাক! আজকে একটা নতুন জিনিস জানলাম। প্রশংসা শুনলে মেয়েদের মতো ছেলেরাও আসলে লজ্জা পায়।’
চেয়ার ছেড়ে উঠে আমার মাথার টুপিটা টেনে চোখ ঢেকে দিয়ে চলে গেলো রাইয়ান। আমি টুপি ঠিক করে হাসিমুখে পেছনে ঘুরে রাইয়ানের দিকে তাকালাম। রাইয়ান লাপাত্তা।
ঘুমানোর আয়োজনে রুমে ঢুকতেই খেয়াল হলো আমার ফোনটা এখনো ব্যাগ থেকে বের করাই হয়নি। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে পাওয়ার বাটন চাপতেই স্ক্রিনে আমার ছবি ভেসে উঠলো। আমি কিঞ্চিৎ অবাক হলাম। কারণ আমার ফোনের ওয়ালপেপারে তো আমি আমার ছবি দেইনি। তখনই ফোনটা এপিঠ ওপিঠ ঘোরাতেই খেয়াল হলো এটা তো আমার ফোনই না। অ্যালেনের। হয়তো আজ পিকনিকে পাশাপাশি ফোন রাখায় ভুলে তারটা নিয়ে চলে এসেছি আমি। কিন্তু অ্যালেন আমার ছবি তার ফোনের ওয়ালপেপারে লাগিয়েছে কেন? তবে কি…..
কি মনে করে যেন আমি আমার বার্থডে ডেট ফোনের লক পাসওয়ার্ডে ট্রাই করলাম। সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা আনলক হয়ে গেলো। আমি স্তব্ধ।
___________________________________________________
হুট করে রাইয়ানের ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ খুলতেই একটা চাপা আওয়াজ শুনতে পেলো সে। শব্দের অনুসরণে দৌড়ে বারান্দায় গেলো রাইয়ান। নিচে তাকিয়ে দেখলো হৃদি বিল্ডিংয়ের উপরে তাকিয়ে আতঙ্কিত হয়ে ‘মিঁয়ো, মিঁয়ো’ বলে ডেকে যাচ্ছে। রাইয়ান তাড়াতাড়ি নিচে নেমে এলো। হৃদির পাশে এসে দাঁড়াতেই দেখলো মিঁয়ো বিল্ডিংয়ের ছাদের বাইরের সরু একটা অংশে গুটিশুটি মেরে বসে করুণ স্বরে ডেকে যাচ্ছে। রাইয়ান জিজ্ঞেস করলো,
‘মিঁয়ো ওখানে গেলো কিভাবে?’
হৃদি ছল ছল চোখে মাথা নাড়িয়ে বলল,
‘আমি জানি না।’
রাইয়ান সেখান থেকে সরে তাড়াতাড়ি ছাদে গেলো। রেলিংয়ের বাইরে সাবধানে নামলো। সরু জায়গা ধরে এগোতে লাগলো ধীরে ধীরে। শেষ প্রান্তে গিয়ে থামতে হলো। পা ফেলার আর জায়গা নেই। রাইয়ান সেখান থেকেই হাত বাড়িয়ে দিলো মিঁয়োর দিকে। নাগাল পাচ্ছে না। এদিকে মিঁয়ো বোধহয় একটু নড়লেই মনে হচ্ছে পড়ে যাবে। একেবারে শ্বাসরুদ্ধকর মুহুর্ত। হৃদির দম আটকে আসার মতো অবস্থা হলো। অবশেষে মিঁয়ো পড়ে পড়ে যায় এমন অবস্থায় মিঁয়োকে ধরতে সক্ষম হলো রাইয়ান। টলমল চোখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো হৃদি। রাইয়ান মিঁয়োকে কোলে নিয়ে নিচে চলে এলো। হৃদির সামনে এসে হৃদির কোলে তুলে দিলো মিঁয়োকে। হৃদি মিঁয়োকে কোলে নিয়ে নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলতে লাগলো। রাইয়ান একবার সেদিকে তাকিয়ে হৃদির মাথায় হাত রেখে চলে গেলো।
এরপর ওরা দুজনেই চলে এলো বাসায়। হৃদি মিঁয়োকে কোলে নিয়ে সোফায় বসে রইলো। রাইয়ান একটা পানির গ্লাস নিয়ে হৃদির হাতে দিলো। এক চুমুকে সবটুকু পানি শেষ করে ফেললো হৃদি। রাইয়ান জিজ্ঞেস করলো,
‘আরো খাবে?’
হৃদি মাথা নাড়িয়ে না বলল। অনেকটা ভয় পেয়ে গিয়েছিল সে। এই ঘটনা অনেকটাই নাড়িয়ে দিয়েছে তাকে। হৃদির বাবা মা মারা যাবার পর থেকেই মিঁয়ো হৃদির সাথে আছে। তার একাকীত্বের জীবনে মিঁয়োই ছিল তার একমাত্র সঙ্গী। মিঁয়োর দুষ্টমি, ছোটাছুটি, আদুরে স্বভাব এসবের জন্যই হৃদি ঐ বাড়িতে একা একা থাকতে সক্ষম হয়েছিল। তাই হৃদির কাছে মিঁয়োর গুরুত্ব অনেক বেশি৷ কখনো কখনো একটি ক্ষুদ্র প্রানীও আমাদের ভালোবাসার জগতে অনেকটা জায়গা দখল করে নেয়। হৃদির কাছে মিঁয়ো তার বাস্তব উদাহরণ।
কফিশপে গিয়ে নিজেকে খানিকটা হালকা করার চেষ্টা করলো হৃদি। আজকে ক্যাট ব্যাগপ্যাকে করে মিঁয়োকে সাথে করে নিয়ে এসেছে সে। একা বাসায় মিঁয়োকে রাখতে আজ ভরসা হচ্ছিল না তার। মিঁয়ো ব্যাগপ্যাক থেকে উঁকিঝুকি দিয়ে চারপাশটা দেখছিল। জেরিন আদুরে আদুরে কথা বলে মিঁয়োর নজর কাড়তে চেষ্টা করছে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে স্মিত হেসে সেসব দেখছিল হৃদি। এমন সময় জেরিন বাইরে গিয়েই আবার ফিরে এসে বলল অ্যালেন এসেছে। অ্যালেনের নাম শুনতেই হৃদির চোখেমুখে একধরনের অস্বস্তি ভেসে উঠলো।
___________________________________________________
(রাইয়ান)
একটি সবুজ রঙের ব্রেসলেট, মাঝখানে বসানো ছোট্ট আয়না। সূর্যের আলোকরশ্মি প্রতিফলিত হয়ে আমার চোখে গিয়ে বিধলো। তারপর, স্ট্রিট শপ থেকে সেটির মালিকানা নিজের নামে করে নিয়ে সেটি এখন আমার হাতে। আমি ভাবতে লাগলাম এই ব্রেসলেটটা যদি হৃদি দেখে তাহলে সে ঠিক কিরকম প্রতিক্রিয়া করবে? কারণ এটি ঠিক সেই রকমই যেটা তিন বছর ব্যবহার করার পরও ছিঁড়ে যাওয়ায় হৃদি বাচ্চাদের মতো বিলাপ করেছিল। মেয়েরা আসলেই তাদের ছোট ছোট জিনিসগুলো নিয়ে খুবই পসেসিভ। হোক না সে নগন্য।
গতকালের মিঁয়োর ইন্সিডেন্টটা নিয়ে হৃদি খুব মনমরা হয়ে আছে। আগের মতো প্রফুল্লিত ভাবটা দেখা যাচ্ছে না। কাল যখন রাত করে হৃদি বাড়ি ফিরলো তখনও দেখলাম তার মধ্যে একধরনের অন্যমনষ্কতা বিরাজমান। এমনিতে তো আমি আগে বাড়ি ফিরে গেলে কফিশপ থেকে ফিরেই কত বকবক করে হৃদি। কিন্তু কাল বাড়ি ফিরে আমাকে দেখেও হৃদি কোন কথা বলল না। আমি বলতে গেলেও খেয়াল না করে চুপচাপ পাশ কাটিয়ে চলে গেলো বেডরুমে। কাঁধ থেকে ব্যাগটা রেখেই ঢুকে গেলো ওয়াশরুমে। হৃদিকে একটু চিয়ার আপ করার জন্য আমি তাকে বিকেলে একটা দামী রেস্টুরেন্টে আসতে বললাম। আমি আগে থেকেই উপস্থিত ছিলাম সেখানে। হৃদি যথাসময়ে এলো। তার পরণে হলুদ রঙের স্কার্ট। মাথার ঝলমলে রেশমি চুলগুলো খোলা। হৃদি এসে আমার সামনের চেয়ারে বসলো নিঃশব্দে। আমি আমাদের দুজনের জন্য স্টেক অর্ডার করলাম। সাথে পাইন অ্যাপল জুস। আমি হৃদিকে জিজ্ঞেস করলাম, এখানে আসতে কোন অসুবিধা হয়েছে কিনা। হৃদি স্মিত হেসে মাথা নেড়ে না জানাল। খাবার এসে পড়লে আমরা খাওয়া শুরু করলাম। কথা খুব একটা জমলো না। হৃদিকে আজ অনেক ম্যাচিয়ুরড লাগছে। অন্যদিনের তুলনায় অনেকটা চুপচাপ। বুঝলাম মিঁয়োর ব্যাপারটা এখনো প্রভাব ফেলে রেখেছে হৃদির মধ্যে। কাটা চামচ আর ছুরির টুকটাক শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ হলো না আমাদের টেবিলে।
রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আমরা হেঁটে হেঁটেই রাস্তায় এগোতে লাগলাম। এই রাস্তাটা অনেকটা সুনসান। মাঝে মাঝে কিছু বাই সাইকেল চলে যাচ্ছে পাশ কেটে। শীতের আগমনে বইছে হিমায়িত বাতাস। রাস্তার দু পাশে দাঁড়ানো সারি সারি গাছের থেকে একটা দুটো খসছে পাতা। আমরা দুজনেই হাঁটছি চুপচাপ। পরিবেশের এই নিস্তব্ধতা অনেকটা ভারী ঠেকতে লাগলো আমার কাছে। পকেটের গায়ে হাত রাখতেই খসখস শব্দ হলো। আমি থেমে হৃদির দিকে ঘুরে দাঁড়ালাম। উৎসুক গলায় বললাম,
‘হৃদি, দেখেছো শীত এসে পড়েছে।’
হৃদি ঠোঁটের রেখা প্রশস্ত করে বলল, ‘হুম।’
‘এবার উইন্টারে কি প্লান?’
‘এখনো কিছু ভাবিনি।’
‘এখনো ভাবো নি। আমি তো ভেবেছিলাম তুমি ঠিক করে রেখেছো। কি? মুড নেই? একটু অনুমান করে দেখো তো এমন কিছু কি আছে যেটা দিয়ে আমি তোমার মন ভালো করে দিতে পারি?’
হৃদি স্মিত হেসে বলল, ‘যা পেলে আমার মন ভালো হতে পারে তাই কি তুমি আমাকে দিতে পারবে রাইয়ান?’
আমি সকৌতুকে বললাম, ‘হুম।’
হৃদি ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে মোলায়েম স্বরে বলল, ‘লেট’স গেট এ ডিভোর্স।’
আমার মুখের চাঞ্চল্যকর ভাব আস্তে আস্তে নিভে গেলো। হাতের মুঠোয় বন্দি থেকে গেলো সেই সবুজ রঙের ব্রেসলেটটি।
চলবে,
#My_First_Crush
#পর্ব-২২
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি
(রাইয়ান)
‘ডিভোর্স’ বিয়ের সময় যেটা ছিল আমার একমাত্র কাঙ্ক্ষিত বিষয়। সময়ে অসময়ে বিভিন্ন অবসরে এই একটি বিষয়ের ভাবনাতেই আমি কত বিভোর ছিলাম। কিভাবে আমি এই পথে আগাবো? কিভাবে এই বিষয় উত্থাপন করবো? এমনকি বিয়ের পরও যেই শঙ্কা মাঝেমধ্যে আমার মাথায় এসেছিল সেটি হলো, হৃদি যদি আমাকে ডিভোর্স দিতে না চায়! কিন্তু আজ যখন বিনা বাক্য ব্যয়ে, বিনা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েই অতি সহজে হৃদি নিজ থেকে আমাকে ডিভোর্সের কথা বলল আমি থমকে গেলাম। দমে গেলাম ভেতরে ভেতরে কিছুটা। কেমন যেন একটা শিরশিরে অনুভূতি চোয়ালে এসে জমা হতে লাগলো। আমাকে ডিভোর্সের কথাটা বলেই হৃদি আর থামলো না। তার মুখের সেই হাসি, যেটি সামনের মানুষকে বিষন্ন করে দেয় সেটি বজায় রেখেই হৃদি আস্তে আস্তে হেঁটে চলে যেতে লাগলো। আমি তখনও সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম। অদ্ভুত লাগছিল সবকিছু। বাসায় চলে এলাম আমি। ওয়াশরুমে ঢুকে খুলে ফেললাম শার্ট। শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে ভিজতে দিলাম নিজেকে। বর্ষনের মতো ঠান্ডা জল পড়তে লাগলো আমার উত্তপ্ত শরীরে। আমি দু হাত দিয়ে ভেজা চুলগুলো পেছনে ঠেলে দিলাম। বেসিনের উপর দু হাতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আয়নায় দেখতে লাগলাম নিজেকে। অনুভূতিপ্রবণ মানুষ আমি নই। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘটনাকে কেন্দ্র করে হৃদয়ের কুঠুরিতে কড়া নাড়া কোন ঠুনকো অনুভূতিকে আমি কখনো গুরুত্ব দেই না। আমি প্রাকটিক্যাল মানুষ। প্রাকটিক্যালি ভাবি। আমি যেমনটা চেয়েছিলাম ঠিক তেমনটাই হয়েছে। খুব সহজেই হয়েছে। আমার উচিত সন্তুষ্ট হওয়া৷ কিন্তু মনের মধ্যে সেই খচখচ অনুভূতিটা……!
___________________________________________________
(হৃদি)
বাসের চাকা ছুটছে দ্রুত গতিতে। জানালার ধারে ঝুঁকে আছে আমার মাথা। ফোকর দিয়ে গলিয়ে আসা বাতাসের ধাক্কায় চুলগুলো এলোমেলো উড়ছে। আমার দৃষ্টি অন্যমনষ্ক। চোখে ভাসছে শুধু সেদিনের মুহুর্ত। সমস্ত ইন্দ্রিয়জগৎ জাগ্রত হয়ে বাজিয়ে চলেছে সেই অপ্রিয় সুর। আমি আস্তে করে চোখ বন্ধ করলাম। একফোঁটা নোনাজল গড়িয়ে পড়লো চোখ থেকে। ঝাঁপ দিলো গতকালের সেই দুর্ভাগা সময়ে।
আমি মিঁয়োকে নিয়ে কফিশপে বসে ছিলাম। এমন সময় জেরিন এসে আমাকে জানালো অ্যালেন এসেছে।
আমি অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম। সত্যি বলতে খুব অস্বস্তি লাগছিল। কারণ দু দিন আগে যা জেনেছি তা আমার কাছে স্বস্তিজনক কোন বিষয় ছিল না। আমি জেরিনকে মিথ্যে কিছু বলে অ্যালেনকে পাঠিয়ে দেবার কথা বলতেই যাবো তার আগেই অ্যালেন চলে এলো আমার সামনে। আমি দৃষ্টি ঘুরিয়ে ফেললাম। অ্যালেন জানালো সে আমার সাথে কিছু কথা বলতে চায়। জেরিনের কিছু কাজ থাকায় ওঁ তখন চলে গেলো। পুরো কফিশপে আমি আর অ্যালেন রয়ে গেলাম একা। জেরিন যেতেই অ্যালেন আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
‘হৃদি, তুমি আমাকে ব্লক করেছো কেন?’
আমি বললাম, ‘অ্যালেন, আমার মনে হয় আমাদের আর কখনো কথাবার্তা না বলাই ভালো।’
‘কেন হৃদি?’
‘তুমি কি বুঝতে পারছো না কেন? আমি তোমাকে আমার একটা ভালো বন্ধু ভেবেছিলাম কিন্তু তুমি….!’
আমি থেমে গেলাম। অ্যালেন বলতে লাগলো,
‘তুমি যখন গতকাল ডেলিভারি বয় দিয়ে আমার ফোনটা পাঠিয়েছিলে তখনই আমি বুঝেছিলাম তুমি সবটা বুঝতে পেরে গেছো। কিন্তু তুমি এমনভাবে রিয়্যাক্ট করবে সেটা আমি আশা করিনি। আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। এটাই কি আমার ভুল?’
‘তুমি এখনও বুঝতে পারছো না তোমার ভুলটা কোথায়! আমি একজন বিবাহিত মেয়ে। তোমার বন্ধুর স্ত্রী। তুমি আমাকে নিয়ে এসব কিভাবে ভাবতে পারো?’
অ্যালেন ব্যাকুল হয়ে বলল, ‘সমস্যা কি হৃদি? তোমরা তো দু দিন পর ডিভোর্স নিয়েই ফেলবে।’
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, ‘তুমি এসব কি উল্টাপাল্টা কথা বলছো? আমাদের দুজনের মধ্যে সব ঠিক আছে, ভালো আছে। আমরা ডিভোর্স কেন নিবো?
অ্যালেন ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘কেন রাইয়ান তোমাকে এখনও কিছু বলেনি? রাইয়ান তো তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেবে চিন্তা করেই বিয়ে করেছিল। এই বিয়েটা ওর পছন্দে হয়নি। রাইয়ান ওর দাদীমার চাপে পড়ে বিয়ে করেছে।’
আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। হুট করে মনে হলো আমি কোন দুঃস্বপ্নের মধ্যে আছি। মাথার মধ্যে শূন্যতা অনুভূত হতে লাগলো। আরো অনেক কথা বলতে লাগলো অ্যালেন। আমি মনোযোগ রাখতে পারলাম না। পৃথিবীটা আস্তে আস্তে শব্দশূন্য হতে লাগলো আমার। আমি শুধু নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম সামনে।
বাসায় কিভাবে ফিরলাম মনে নেই। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই দেখলাম রাইয়ান লিভিং রুমে সোফায় বসে টিভি দেখছে। আমাকে দেখে হাসিমুখে কি যেন বলল, মনে নেই। রুমে গিয়ে কাঁধ থেকে ব্যাগটা নামিয়ে আমি ওয়াশরুমে ঢুকলাম। দরজা বন্ধ করেই আস্তে আস্তে বসে পড়লাম নিচে। আটকে থাকা পৃথিবীটা হুট করে যেন সচল হয়ে গেলো। বিকট চুরমার শব্দ বাজতে লাগলো মাথায়। চোখ ফেটে বেরিয়ে এলো অশ্রুর জোয়ার। মুখ থেকে বের হতে চাইলো কান্নার শব্দ। আমি দু হাত মুখের কাছে নিয়ে বাঁধা দিলাম। ঠোঁট কামড়ে ধরে অসহায় মাথাটা ঠেকিয়ে দিলাম দরজার সাথে। কতো বোকা ছিলাম আমি! রাইয়ান আমার সাথে দূরত্ব বজায় রাখতে চাইছিল আর আমি ভেবেছিলাম তার সময় প্রয়োজন। রাইয়ান আমাকে নিয়ে আগ্রহ দেখাতো না। আর আমি ভাবতাম সে একটু চুপচাপ স্বভাবেরই। সবাই আমাকে বোঝাতে চাইতো রাইয়ান আমার কোন কেয়ার করে না, আর আমি সেগুলো কোন ব্যাপারই মনে করতাম না। তার ছোট ছোট কাজগুলোই বিশাল ভাবে নিতাম। যেখানে সত্যটা ছিল অন্যকিছু। আর আমি নির্বোধের মতো ধোঁয়াশার মধ্যে ছিলাম এতকাল। বুকের ক্ষত বিক্ষত আঘাতের যন্ত্রণায় চুরমার হয়ে কাঁদতে লাগলাম আমি। আমার হাজবেন্ড আমাকে পছন্দ করে না, কখনো করেওনি। ছেড়ে দিতে চায়, কিন্তু পারছে না। শুধুমাত্র কিছু অর্থজনিত পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়ে আমাকে সহ্য করে যাচ্ছেন এই সত্য গলাধঃকরণের পর এর থেকে যন্ত্রণার একটি মেয়ের কাছে আর কি হতে পারে? কি হতে পারে! কিছুই না……
___________________________________________________
(রাইয়ান)
সেই ঘটনার দু দিন পরই কাজের সূত্রে ওয়াশিংটন যেতে হয় আমাকে। দুই রাত এক দিনের সফর। সেখানে পৌঁছে একটা হোটেলে উঠি আমি। বারবার শুধু নজর যাচ্ছিল ফোনের দিকে। কেন যাচ্ছিল জানি না। এমনিতেও তার পর থেকে হৃদি আর আমার মধ্যে তেমন একটা কথা হয় না। একই ছাদের নিচে দুটি মানুষ অথচ দুজনের মধ্যে যোজন যোজন দূরত্ব। হৃদিও আর আগের মতো নেই। সেই প্রাণোচ্ছল, প্রফুল্লতা, হাস্যজ্জ্বল ভাব মিশে গেছে দূরে কোথাও। মুখে হাসি এখনও যদিও থাকে সেই হাসিতে নেই আগের নির্মলতা। তার পরিবর্তে জায়গা করে নিয়েছে সুস্পষ্ট পরিপক্বতার ছাপ। যেটা শুধুই সৌজন্যতাবোধ। এতদিন যে নমনীয় হাসিমুখ মনে স্বস্তি ছড়াতো আজ সেই নমনীয় হাসিমুখই দেখলে বুকের মধ্যে খচখচ করে। পীড়া দেয়। এই দুইয়ের মধ্যে যে আছে এক অদৃশ্য তফাৎ। যেটা বাস্তব চোখে আলাদা করা যায় না। শুধু অনুভূত হয়। সবথেকে বড় অস্বস্তিকর বিষয়টি হয়ে দাঁড়িয়েছে যখন বুঝতে পারি হৃদি আসলে সবটা জানে। অবশ্য জানবে যে একদিন সেটাই তো স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু স্বাভাবিক যে হৃদির প্রতিক্রিয়া নয়। ডিভোর্স নিয়ে হৃদির স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াই সবথেকে বড় অস্বাভাবিক পরিস্থিতি করে দিয়েছে। যেখানে রাগ থাকতে পারতো, কটাক্ষ থাকতে পারতো, প্রশ্নের পর প্রশ্ন থাকতে পারতো কিন্তু তার পরিবর্তে যখন হাসিমুখ দেখানো হয় তার থেকে বড় অস্বস্তি আর কি হতে পারে? এতোটা নমনীয় হয়ে স্বাভাবিকভাবে হাসিমুখে কেউ ডিভোর্সের কথা কিভাবে বলতে পারে?
‘আমি বিয়ে করবো, কিছুদিন পর ডিভোর্স নেবো।’ আমার এরূপ পরিকল্পনার জন্য আমার মধ্যে কখনো কোন অনুতপ্ত বোধ ছিল না। এটি যদি ভুলও হয় তবে তার দায়ভার আমার নয়। আমিও পরিস্থিতিতে বাধ্য। এই সমস্ত দোষের কারণ দাদীমাকে বানিয়ে আমি এতদিন খুব নিশ্চিন্তেই ছিলাম। কিন্তু সেই আমিই আজ হৃদির সাথে চোখ মেলাতে অস্বস্তিতে ভুগি। নিজেকে মনে হয় অপরাধী। হৃদির এই আমূল পরিবর্তন মানতে পারি না। ডিভোর্স আমি চাই। সেই প্রথম থেকেই আমার মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষে কোষে এটি সেট করা৷ কিন্তু আজ সেই চাওয়া যখন নিজ থেকেই ধরা দিচ্ছে আমি পুরোপুরি খুশি হতে পারছি না। কেন পারছি না সেটাও বুঝতে পারছি না। আমি নিজেকে শাসাতে লাগলাম। বোঝাতে লাগলাম। এখন এভাবে আবেগি হবার সময় নয়। প্রাকটিক্যাল হতে হবে। ততদিনে এতটুকু তো বুঝেছিলাম যে আমি হৃদির উপর দূর্বল হয়ে পড়েছি। একসাথে দীর্ঘদিন থাকলে এটা স্বাভাবিক। মায়া মনে বড্ড তাড়াতাড়ি জায়গা করে নেয়। একজন আরেকজনের অভ্যেস হয়ে যায়। তারপর আবার আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়। এই বলেই মানিয়ে নিলাম নিজেকে। আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলাম এই দূর্বলতা যেন আর না বাড়ে। নিজের সাথে নিজের শুরু হলো আমার অনির্দিষ্টকালের সংঘর্ষ। এই অপরিচিত অনুভূতিটি আমার জীবনে এসেছিল অনেকটা আকস্মিক ধারালো আঘাতের মতো। যেই ক্ষতের সংকেত সঙ্গে সঙ্গেই মস্তিষ্কে পৌঁছায় না। সময় নেয়। যতক্ষণে ব্যাথা অনুভূত হয়, ততক্ষণে রক্ত অনেকটা গড়িয়ে যায়!
সকালে ঘুম ভাঙতেই যখন ফোন অন করি তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় আপডেট পাই গতরাতে ফ্লোরিডায় আঘাত হানা হারিকেন ঝড়ের। এই বিষয়ে কোন জ্ঞানই ছিল না আমার। কাজের চাপে এই দুইদিন এতটাই ডুবে ছিলাম যে ফোন ধরার সময় পায়নি। বিচ্ছিন্ন ছিলাম পুরোপুরিই। এখন জানতে পারি বিপদ সংকেত আগেই জারি করা হয়েছিল। ঝড়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে অনেক। ফ্লোরিডার হারিকেন ঝড় কতোটা বিপদজনক সেই সম্পর্কে অবগত আমি অনেক আগে থেকেই।
আমার মাথায় সবার প্রথমেই যেই চিন্তাটা এলো সেটা হলো হৃদি। হৃদির ফোনে ট্রাই করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু ওর ফোন বন্ধ পেলাম। চিন্তার রেখা আরো গাঢ় হয়ে গেলো আমার। আমার ফেরার কথা ছিল আজ দুপুরের ফ্লাইটে। কিন্তু আমি ইমার্জেন্সি টিকিট বুক করে সকালের ফ্লাইটেই রওনা দিলাম। ফিরতে ফিরতে আমার দুপুরই হয়ে গেলো। এয়ারপোর্ট থেকে সোজা চলে গেলাম অ্যাপার্টমেন্টে। পথিমধ্যে দাদীমার খবরও নিয়ে নিয়েছি আমি। তিনি সম্পূর্ণ ঠিক আছেন। ডি’সোজা থাকায় এই নিশ্চিন্তটাতেই ছিলাম আমি। কিন্তু হৃদি তো পুরো একা। আমার চিন্তা হতে লাগলো। অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে দেখলাম হৃদি সেখানেও নেই। উদ্বিগ্ন মুখে দরজা দিয়ে বের হতেই মি. ডেভিড আমাকে জানালো হৃদি হসপিটালে অ্যাডমিট। গতরাতে ঝড় শুরু হবার পর বাড়িতে ফেরার পথে বাতাসে ভেঙে পড়া গাছের একটা ডাল থেকে বাঁচতে গিয়ে পড়ে যায় হৃদি। সেখান থেকেই আহত হয়। সংবাদটা শুনতেই এক মুহুর্ত সময় নষ্ট না করে আমি চলে গেলাম কাছের হসপিটালটিতে। হৃদির কেবিনের দরজা ঠেলে ঢুকতেই দেখলাম আস্তে আস্তে বেড থেকে নামছে হৃদি। আমি ছুটে গেলাম তার কাছে। দু হাত দিয়ে হৃদিকে ধরে উদ্বিগ্ন মুখে জিজ্ঞেস করতে লাগলাম,
‘তুমি ঠিক আছো তো? বেশি লেগেছে? ডাক্তার কি বলেছে?’
হৃদি আস্তে করে তার বাহু ধরা আমার হাতটা ছাড়িয়ে দিলো। ঠোঁট প্রশস্ত করে ধীরে ধীরে বলল,
‘হাতে একটু আঘাত লেগেছে। ডাক্তার নড়াচড়া করতে বেশি বারণ করেছে। কিন্তু তুমি চিন্তা করো না, আমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করতে পারবো।’
আমি আস্তে করে হৃদির থেকে দৃষ্টি সরিয়ে পেছনে ঘুরে গেলাম। চোখগুলো জ্বালা করতে লাগলো আমার। লাল হয়ে গেলো। মুখ দিয়ে দম ছাড়তে হলো। হৃদি পুনরায় বলল,
‘ডিভোর্সের প্রস্তুতি কতদূর হয়েছে? ঠিক কতদিন লাগবে?’
হুট করে আমার খুব রাগ লাগতে লাগলো। আমি ভারী গলায় বললাম,
‘তুমি হঠাৎ এমন ডিভোর্স নিয়ে পাগল হয়ে গেছো কেন? আমি এখনই ডিভোর্সে যেতে পারবো না। আমার লোন এখনও বাকি আছে।’
হৃদি আস্তে করে বলল, ‘ও।’
পরক্ষণেই বলল, ‘আচ্ছা, যখন হয়ে যাবে আমাকে জানিয়ো।’
ডিভোর্স নিয়ে এই কথাটা আমি কেন বললাম আমি জানি না। যতটুকও সময় বাড়লো ততটুকুতেও যেই স্বস্তিটা লাগলো তার কারণটাও আমার অজানা। এমন অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন এর আগেও আমি হয়েছি। কেন সেদিন ওমন ঘোর বর্ষনের রাতে আমি হৃদির ছেলেমানুষীকে প্রশ্রয় দিয়ে আংটি খোঁজার জন্য তার সাথে ছিলাম? কেন আমার পছন্দ না হওয়া সত্ত্বেও নিজের ভাবনার বিপরীতে গিয়ে আমি হৃদির কথা রাখতে সেই আহত বিড়ালটা নিজের বাড়িতে নিয়ে এলাম? কেন যখন অ্যালেন হৃদির কথা বলে আমার ভালো লাগে না? আমি এগুলো কেন করছি? কি কারণে করছি? আমি তো এমন মানুষ না। আমি অসহায় হয়ে শুধু নিজের বিধ্বস্ত অবস্থা দেখতে লাগলাম। কি করে একটা মানুষের খুশি হওয়া অন্য আরেকটা মানুষের ভালো থাকায় নির্ভর হতে পারে? কি করে একটা মানুষ ধীরে ধীরে অন্য আরেকজনের সবকিছু হয়ে যেতে পারে? প্রথমে যে মানুষটিকে ভালো লাগেনি সে মানুষটিকেই হুট করে এতোটা আত্মিক কি করে লাগতে পারে? এও কি সম্ভব! আমার একার ভেতর আরেকজনের সম্পূর্ণ দখল কি করে হয়ে গেলো! আর আমি কিছুই করতে পারলাম না। আমি হাস ফাঁস করতে লাগলাম। নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করতে লাগলাম। সেই মুহুর্তে পৃথিবীর সবথেকে বড় অসহায় মানুষ বোধ হতে লাগলো নিজেকে। যার নিজের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেই।
ছোট থেকেই আমি খুব আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। কোন কিছু নিয়ে বিভ্রান্তি, অস্পষ্টতা আমার মধ্যে কখনো ছিল না। আমি সবসময় জানতাম, আমি নিজেকে নিয়ে খুব ক্লিয়ার। আমি জানি আমি কি চাই। এবং সেই ব্যাপারে আমার কোন কনফিউশান নেই। কিন্তু সেই প্রথম আমি উপলব্ধি করলাম আমি আসলে নিজেকে ঠিকমতো চিনিই না। নিজের কাছেই আপাদমস্তক সম্পূর্ণ অপরিচিত আমি। আমি জানি না আমি কি চাই। সত্যি বলতে, এক জীবনে মানুষ সবথেকে বেশি ধোঁকা দেয় নিজেকেই। ভুলভাল বুঝিয়ে ভুলিয়ে রাখে নিজেকে। সত্য স্বীকার করতে চায় না। পাশ কাটিয়ে যায়। আর আমার সত্যটা এটাই ছিল, আমি হৃদিকে ভালোবাসতে চাইছি না। কিন্তু আমি তাকে ভালোবেসে ফেলছি। যদি সময় থাকতে তখন নিজেকে স্বীকার করাতে পারতাম তাহলে আজ আমাকে এভাবে পস্তাতে হতো না।
চলবে,