Ragging To Loving Part-19+20

0
751

😠 Ragging To Loving 😍
Part:: 19
Writer:: Ridhira Noor

ইয়াশঃঃ- একদম পারফেক্ট টাইমিং। আজ আমাদের ফটোশুট হবে। তার জন্য আমাদের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রয়োজন ছিল। এখন তো ফ্রি পেয়ে গেলাম। সো লেটস গো অ্যাসিস্ট্যান্টস্।

মেহেরঃঃ- আমরা আপনাদের অ্যাসিস্ট্যান্ট না। হেরে গিয়েছি বিধায় শর্ত পূরণ করছি। গট ইট?

ইয়াশঃঃ- হোয়াট এভার। আমাদের কাজ হলেই হলো।

মেহের রাগী দৃষ্টিতে তাকাল। ইয়াশ কোন ভ্রুক্ষেপ না করেই তার হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিল। যেখানে তার ফটোশুটের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম রয়েছে। ব্যাগটা এত ভারি ছিল যে মেহের তুলতে না পেরে হেচড়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আরিফ আলিফাকে ইশারা করল যাতে সেও তার ব্যাগ নেই। আলিফা অনেক চেষ্টা করল ব্যাগ তুলার পরে না পেরে ক্লান্ত হয়ে সেও টেনে নিয়ে গেল। পুষ্প নূর হা হয়ে তাকিয়ে আছে। এবার তাদের পালা। নূর আফরানের দিকে তাকিয়ে জোর পূর্বক হাসার চেষ্টা করল। আফরান ভাব নিয়ে অন্য দিকে মুখ করে আছে। নূর বিড়বিড় করে ইচ্ছে মতো গালি দিল।

আফরানঃঃ- মন্ত্র পড়া হলে এবার চল। (নূর চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকাল। আর ভাবতে লাগলো সে তো অন্য দিকে তাকিয়ে ছিল তাহলে জানল কি করে?) আমি জানি আমি হ্যান্ডসাম। তাই বলে এভাবে তাকাতে হবে না।

নূরঃঃ- (বমির ভাব নিল) হ্যান্ডসাম। আমাকে কেউ পিংক কালারের বিষ দে। খাইয়া মরে যায়। এই পান্ডা নাকি হ্যান্ডসাম। বিলাতি বকের মতো সাদা চামড়া ওরে আমার হ্যান্ডসাম রে। এটার শোনার আগে আমি বয়রা হয়ে গেলাম না কেন? (দুই হাত দিয়ে কান চেপে ধরে চোখ বন্ধ আছে।)

আফরানঃঃ- জাস্ট শাট আপ। স্টপ দেস মেলোড্রামা। কাম উইথ মি। (গাড়ির দিকে হাটা ধরল)

নূরঃঃ- কাম উইথ মি। যত্তসব ঢং। (ভেঙচিয়ে) (আফরানের পিছে গেল। গিয়ে দেখে কারের দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।)

আফরানঃঃ- কার চালাতে পার? (মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। চাবি ছুড়ে দিল।) তাহলে ড্রাইভ কর।

নূরঃঃ- (চাবি ক্যাচ নিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকাল) আমি আপনার ড্রাইভার নাকি? পারব না আমি। (চাবি আফরানের দিকে ছুড়ে দিল।)

আফরানঃঃ- (চাবি নিয়ে) ভুলে গেলে আজ আমি যা বলব তাই করতে হবে। (চাবি আবার নূরকে দিল)

নূরঃঃ- আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। পুলিশ ধরলে হুধুম খেলানি দিবে। (চাবি আবার ফিরিয়ে দিল)

আফরানঃঃ- আসলেই তোমার দ্বারা কিছু হবে না। শুধু পার খিটখিট করতে আর ঝগড়া করতে। (ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ল। জানালার কাচ নামাল) এক্সকিউজ মি মিস খিটখিট আপনাকে কি এখন নিমন্ত্রণ দিতে হবে। যে আসেন। (নূর পিছনের সিটে বসতে গেলে আফরান থামিয়ে দেয়) ও হ্যালো আমি তোমার ড্রাইভার না। সামনে এসে বস।

নূরঃঃ- (খাচ্চর বিলাতি বক। কুং ফু পান্ডা কোথাকার।)
_______________________________

পুষ্প একা দাঁড়িয়ে আঙুল নিয়ে খেলছে। রিহান তার মনের অবস্থা বুঝতে পারছে।

রিহানঃঃ- ইটস ওকে। তুমি যেতে পার। (যখন পাশে চেয়ে ছিলাম তখন তো ছিলে না।)

পুষ্পঃঃ- হুমম…. (এখন আর কেন থাকবে আমার সাথে। চোখের পানি গড়িয়ে পড়তেই মুছে নিল। বেরিয়ে পড়ল পার্কিং এরিয়া থেকে।)

রিহান শুধু পুষ্পর যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ পুষ্পর চিৎকার শুনে তার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠল। তৎক্ষনাৎ দৌড়ে গেল। গিয়ে থমকে গেল। পুষ্প একটা খালি রিকশার উপর দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে কুকুরের ছোট ছোট চার বাচ্চা ঘেউ ঘেউ করছে।

পুষ্পঃঃ- আআআ শুহ্ শুহ্। সর কুত্তা। এএএ আম্মু রে। (ওড়না দিয়ে বাচ্চাগুলোকে তাড়াতে লাগলো) যাহ্ তোর মার কাছে যা আমার পিছে কেন লাগছস। সর কুত্তা সর। (জুতা খুলে ছুড়ে মারল।)

রিহান এসব কান্ড দেখে পেটে হাত দিয়ে হাসতে লাগলো। পুষ্প সামনে গিয়ে দাঁড়াল। রিহানকে হাসতে দেখে তার প্রচুর রাগ হচ্ছে। এক দিকে কুকুর অন্যদিকে রিহান। হলো আরেক মহা বিপদ। কুকুরের মা এলো। ঘেউ করে উঠতে পুষ্প এক লাফ দিয়ে রিহানের উপর ঝাপিয়ে পড়ল। রিহান জানে পুষ্প কুকুর কত ভয় পায়। তাই হেসে তাকে কোলে নিয়ে সেই দিক থেকে চলে এলো। পুষ্প রিহানের বুকে মুখ গুজে ফেলল।

রিহানঃঃ- তোমার মনে আছে ক্যাপ্সি(রিহানের পালিত কুকুর) ওকে প্রথমবার দেখে তুমি কতটা ভয় পেয়েছিলে। তখনও ঠিক এভাবে কোলে নিয়েছিলাম।

পুষ্পঃঃ- (মুখ তুলে বলতে লাগলো) মনে থাকবে না। তারপর তুমি কি করেছিলে ভুলে গিয়েছ? আমাকে কোলে নিয়ে ক্যাপ্সির সামনে বসে ছিলে যাতে তোমার থেকে দূরে যেতে না পারি।

দুইজনে হাসতে লাগলো। হাসতে হাসতে হঠাৎ হাসি উধাও হয়ে গেল। পুষ্পর চোখ ছলছল করছে। রিহানের চেহারায় রাগ। পুষ্পকে কোল থেকে নামিয়ে দিল। পুষ্প দৌড়ে চলে গেল। কিছু দূর এসে থেমে গেল দম যেন বন্ধ হয়ে আসছে।

পুষ্পঃঃ- দুই বছর আগে সব যেন একটি সুন্দর স্বপ্ন ছিল। স্বপ্ন… যা ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।
.
.
.
আহিল ওয়াসিম আমরিন সিমাকে নিয়ে গেল রেস্টুরেন্টে। সেখানে পৌঁছে ভার্সিটির সেই দুইটা মেয়ে এসে আহিল ওয়াসিমকে জড়িয়ে ধরল। আমরিন সিমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। ওয়াসিম আহিল তারাও খুব হেসে হেসে কথা বলছে।

আমরিনঃঃ- এই দুই শাকচুন্নির সাথে আসলে আমাদের আনল কেন?

সিমাঃঃ- ইচ্ছে তো করছে চারজনকে একসাথে বেঁধে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দিয়ে আসি।

ওয়াসিম আহিল তাদের ইগনোর করে মেয়ে দুটির সাথে চলে গেল। আমরিন সিমা ঠায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আহিলঃঃ- কি হলো চল তোমরা। আর আমাদের জন্য জুস নিয়ে আস। উফফ কি যে গরম পড়ছে। গো ফাস্ট।

আমরিন সিমা হনহনিয়ে গেল জুস আনতে। ওয়াসিম আহিল হাই ফাইভ দিল। মেয়ে দুটিও তাদের সাথে হাসছে।

সিমাঃঃ- জুস খাবে তাই না জুস। ইচ্ছে তো করছে তাদেরকেই ব্লেন্ডারে দিয়ে ব্লেন্ড করে জুস বানাই।

আমরিনঃঃ- উফফ কি যে গরম পড়ছে। এত গরম হলে আসছস কেন? ফ্রিজে ঢুকে বসে থাক। এদের ভালো করে জুস খাওয়াব।

চারটা অরেঞ্জ জুস নিল। এক প্যাকেট মরিচের গুঁড়ো নিল। জুসে মিশিয়ে তাদের দিল। জুস মুখে দিতেই একেকটার অবস্থা খারাপ হয়ে গেল। মেয়েগুলো ঝালে লাফাতে লাগলো। ঝাল সহ্য করতে না পেরে মেয়ে দুটি পানি খেতে চলে গেল। তাদের অবস্থা দেখে আমরিন সিমা হাসছে।

ওয়াসিমঃঃ- এসব কি? জুসে এত ঝাল কেন?

সিমাঃঃ- মরিচ যেহেতু দিয়েছি ঝাল তো হবেই। ওই শাকচুন্নি গুলোকে যখন এনেছেন তাদের সাথে থাকেন। আমাদের কেন এনেছেন।

ওয়াসিমঃঃ- ওদের এনেছি বলে কি তোমাদের জেলাসি হচ্ছে?

সিমাঃঃ- আমাদের কেন জেলাসি হবে? জেলাস হওয়ার কি আছে এখানে?

আহিল ওয়াসিমকে টেনে অন্য দিকে নিয়ে গেল। প্রায় অনেক্ষণ সময় নিয়ে এলো।

আহিলঃঃ- চল তোমাদের বাসায় পৌঁছে দেই।

সিমা আমরিন অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ কি হলো। মন খারাপ করে আছে দুইজন। আহিল ওয়াসিম বেরিয়ে গেল তারা পিছে পিছে গেল। পার্কিং এরিয়া এসে আহিল বলতে লাগলো।

আহিলঃঃ- সরি।

সিমা-আমরিনঃঃ- সরি কেন?

আহিলঃঃ- এতদিন তোমাদের কষ্ট দেওয়ার জন্য। ভেবেছিলাম হয়তো তোমাদের মনেও আমাদের জন্য ফিলিংস আছে। কিন্তু তোমরা বুঝতে পারছ না। তাই আমরা প্ল্যান করলাম যদি ভালবাসার মানুষকে অন্য কারো সাথে দেখ তাহলে জেলাস ফিল করে মনের কথা বলে দিবে।

ওয়াসিমঃঃ- কিন্তু আমরা ভুল ছিলাম। চেয়েছিলাম তোমাদের ভালবাসা পেতে। কিন্তু… থাক সেসব কথা। চল।

আমরিনঃঃ- ভালবাসলে এভাবে ছেড়ে চলে যায় না। বুকের মাঝে আগলে রাখতে হয়। (বলে আহিলকে জড়িয়ে ধরল। আহিল প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরক্ষণে মুচকি হেসে আমরিনকে আঁকড়ে ধরল।)

ওয়াসিম করুণ দৃষ্টিতে সিমার দিকে তাকিয়ে আছে।

সিমাঃঃ- কি? আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরলে হবে না। হুহ্। (ওয়াসিম মাথা নিচু দীর্ঘ শ্বাস ফেলল) আমি তো আম্মু আব্বুর ছোট মেয়ে তাই আমাকে কোলে নিতে হবে। (বলে হেসে দিল। ওয়াসিম মাথা উঠিয়ে হেসে দিল। সেও সিমাকে কোলে তুলে নিল। সিমা তার গলা আঁকড়ে ধরল।)
.

চলবে

😠 Ragging To Loving 😍
Part:: 20
Writer:: Ridhira Noor

পুষ্প বাসায় গিয়ে শাওয়ার অন করে হাটু ভাজ করে বসে পড়ল। পানি শুধু সারা শরীরে পড়ছে না। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। চোখ বন্ধ করে সেই দিন মনে করতে লাগলো।
.
.
.
পরিক্ষা শেষে ছুটির সময়ে পুষ্প তার আম্মু আব্বুর সাথে নানার বাড়ি মিরাসরাই যাচ্ছিল বাসে করে। পুষ্পর মা জানালার পাশে ছাড়া বসতে পারে না তাই তার আম্মু আব্বু এক সিটে বসল। আশেপাশে কোন সিট খালি নেই একদম পিছনে সিটে জানালার পাশে খালি ছিল পুষ্প সেই দিকে গিয়ে বসল। জানালার দিকে মুখ করে বাইরের দৃশ্য দেখছে। রিহানও ওই একই বাসে করে দুইজন বন্ধুর সাথে মিরাসরাই যাচ্ছিল। পিছনের সিট ছাড়া আর কোন সিট খালি ছিল না। তাই তারা সেখানে বসল। রিহান পুষ্পর পাশেই বসল। পুষ্প চুল খুলে জানালার পাশে বসায় চুল সব উড়ে রিহানের মুখে পড়ছে। রিহান বিরক্ত হয়ে চুল সরাতে টান পড়ে।

পুষ্পঃঃ- আহ্ কি করছেন? ব্যাথা পাচ্ছি আমি।

রিহানঃঃ- চুলগুলো সামলিয়ে রাখুন দয়া করে। আমার ডিস্টার্ব হচ্ছে।

পুষ্প কিছু না বলে বিরক্তিকর ভাব নিয়ে চুল গুছিয়ে নিল। গাড়ি আপন গতিতে চলছে। পুষ্প জানালা দিয়ে বাইরে প্রকৃতি উপভোগ করছে। বাইরে হাত দিয়ে বাতাস ছোঁয়ার চেষ্টা করছে। মুখে এক রাশ হাসি। জানালার বাইরে পুষ্পর হাত দেখে রিহান চেচিয়ে উঠলো।

রিহানঃঃ- হোয়াট আর ইউ ডুইং। এটা কত রিস্কি জানেন। আপনি কোন ছোট বাচ্চা না যে বুঝেন না।

পুষ্পঃঃ- (আরেক জ্ঞানী ব্যক্তি বসছে আমার পাশে মনে মনে বলল। কিছু না বলে আবারও বিরক্ত হয়ে চুপচাপ বসে বাইরে তাকিয়ে আছে)

পরিবেশ আস্তে আস্তে ঠান্ডা হতে শুরু করল। জানালা দিয়ে ঠান্ডা বাতাস ঢুকছে।

রিহানঃঃ- আপনি প্লিজ জানালা বন্ধ করুন আমার ঠান্ডা….. (তাকে থামিয়ে পুষ্প বলল)

পুষ্পঃঃ- আরেকটা কথা বললে এই জানালা দিয়ে আপনাকে ফিক্কা মাইরা বাইরে ফেলে দিব। (প্রচন্ড রেগে বলল।)

রিহান একদম রোবটের মতো শক্ত হয়ে চুপচাপ বসে আছে। পুষ্প আবারও বাইরে প্রকৃতি দেখায় মনোযোগ দিল। পুষ্প মোবাইল বের করে দেখতে লাগলো। মেসেজ পড়ে মুচকি হাসছে। অপর পাশে পুষ্পর বফ। ফেসবুকে পরিচয় ফেসবুকে তাদের প্রেম শুরু হয়। দুই মাস চলছে তাদের রিলেশনের। বন্ধুত্ব থেকেই অল্প সময়ে ভালবাসার সম্পর্কে জড়ায়। পুষ্প তাকে ভীষণ ভালবাসে। প্রায় তিন ঘন্টা পর তাদের গন্তব্যে পৌঁছাল। রিহান ব্যাগ নিয়ে ঘুরতে পুষ্পর গায়ে লাগে। যার ফলে সে বাসের সিটের উপর পড়ে যায়।

পুষ্পঃঃ- হ্যালো মিস্টার! একটু দেখে শুনে কাজ করুন। আমার মতো এক বাচ্চা মেয়ে আপনার মতো ধামড়ার চিপায় পইরা মরে যাবে।

রিহানঃঃ- (পুষ্পর মাথা থেকে পা অবধি দেখতে লাগলো) ঠিকই বলেছেন। কিন্তু আপনি বাচ্চা মেয়ে না। শুটকি মেয়ে। বাতাসের গতিতেই পড়ে যান আবার আসছে আমাকে বলতে। (ব্যাগ নিয়ে চলে গেল।)

পুষ্পরা বাস থেকে নেমে পড়ল। পুষ্পর মামা তাদের জন্য বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছিল। তাদের সাথে কুশল বিনিময় করে রওনা দিল।

সাদিকঃঃ- দেখ রিহান এখন আমাদের সাথে এসেছিস যেহেতু একটু হাসি মুখে এনজয় কর। মুখটা পঁচা টমেটোর মতো করে রেখেছিস কেন?

রিহানঃঃ- আমি আসতেই চাইনি। তোরা জোর করে আমাকে এনেছিস। আফরান ওয়াসিম আহিল আরিফ ইয়াশ ওরা কেউ আসেনি। আমাকে একাই আসতে হলো।

ফাহাদঃঃ- ওহ্ আমরা তো তোর কেউ না। শুধু ওরাই তোর বন্ধু। তাই না? ঠিক আছে। সরি আর কখনো বলব আমাদের সাথে আসতে।

রিহানঃঃ- দেখ ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করবি না। তোরা আমার বন্ধু না হলে কি আসতাম নাকি? তোদের জন্যই এই ট্যুরে আসা।

সাদিকঃঃ- তাহলে হাসি মুখে চল আর মিরাসরাই এর সৌন্দর্য উপভোগ কর। আজ হোটেলে চল। কাল একদম সকাল বেলায় মহামায়ার ঝর্ণা দেখতে যাব।
.
.
.
পুষ্প নানার বাড়ি পৌঁছাতেই তার দুই খালাতো বোন আইরিন তাসমি হাজির। তারা দৌড়ে এসে পুষ্পকে জড়িয়ে ধরল। পিছন থেকে কেউ পুষ্পর মাথায় টোকা দিল।

পুষ্পঃঃ- মুহিন….. (পিছন ফিরে দেখে দাঁত দেখিয়ে হাসি দিল মুহিন। মুহিন পুষ্পর মামা কিন্তু বয়সে পুষ্প থেকে কয়েক মাসের ছোট। তাই তাদের সম্পর্ক বন্ধুর মতো।)

পুরা দিন মামা মামি খালা নানা নানির সাথে কাটালো। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল কালকে সবাই মহামায়ার ঝর্ণা দেখতে যাবে। ফ্যামিলি ট্যুরে। তাই রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ল।
সকাল হতেই শুরু চেচামেচি। নিজেদের গাড়ি থাকায় যেতে কোন অসুবিধা হয়নি। মহামায়া পৌঁছে আইরিন তাসমি দুইজন দুই দিক থেকে পুষ্পকে টানছে। পুষ্প অতিষ্ঠ হয়ে তাদের ঝাড়া দিয়ে মুহিনের সাথে গেল। পুষ্পকে আর পায় কে? গিয়ে সেলফি তোলা শুরু। আশেপাশে কি হচ্ছে কোন খেয়াল নেই নিজের মতো করে ছবি তুলেই যাচ্ছে। পিছনে ফিরে খেল ধাক্কা। কপাল ঢলতে ঢ্লতে সামনে তাকিয়ে দেখে রিহান।

পুষ্পঃঃ- কপালটা সত্যিই ফাঁটা। এখানেও আপনি হাজির। এখানে এসে যদি আবার বাসের মতো করে শাসন করেন তাহলে দেখবেন কি করি। হুহ্। (রিহানকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজেই বকবক করে চলে গেল।)

ফাহাদ এসে রিহানকে টেনে নিয়ে গেল ঝর্ণা দেখতে। মহামায়ার সেই ঝর্ণা চোখ জুড়ানো। পাহাড় বেয়ে পানি মহামায়া হ্রদে পড়ছে। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলায় পর্যটক এলাকা চোখ জুড়ানো। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, মিরাসরাই মহামায়া আরো অন্যান্য পর্যটক এলাকা রয়েছে। অর্থনীতির প্রাণ কেন্দ্র আমাদের চট্টগ্রাম। তেমনি সৌন্দর্যও অপরূপ। রিহান ঝর্ণা সৌন্দর্য ক্যামেরায় বন্ধি করে নিল। পিছনে চেনা এক মেয়েলি কন্ঠ। সেই আর কেউ না পুষ্প। লাফালাফি করছে। ঝর্ণার কাছে যেতে বায়না করছে আর বাকিরা তাকে বারণ করছে। পুষ্প মুখ গোমড়া করে আছে। রিহান তাকে দেখে বিরক্ত হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিল। পুষ্প সে নাছোড়বান্দা। ঝর্ণার কাছে যাবে মানে যাবে। তাই ধীরে ধীরে সবার আড়াল হয়ে ঝর্ণার পাশে গেল। ঝর্ণার পানি ছুঁয়ে দেখছে। শীতল ঠান্ডা পানি কাঁচের ন্যায় স্বচ্ছ। সেই মহা আনন্দে খেলছে পানি নিয়ে। আরেকটু কাছে যেতেই পিছলে যায়। রিহান হেচকা টান দিয়ে বুকের মাঝে আঁকড়ে ধরে। পুষ্প চোখ খিছে বন্ধ করে রিহানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। ভয়ে কেঁদে দিল। রিহান থরথর কাঁপছে। পুষ্পকে টেনে সেদিক থেকে নিয়ে আসে।

রিহানঃঃ- আর ইউ আউট অফ ইউর মাইন্ড। (চিল্লিয়ে বলায় পুষ্প কেঁপে উঠে আর সমানে কেঁদে যাচ্ছে।) আমাকে বলেছিলে শাসন না করতে। তুমি কি ছোট বাচ্চা? বুঝ না? এটা কতটা ডেঞ্জারাস। এখান থেকে পড়লে তুমি বাঁঁচবে মনে হয়? তোমার বডিও পাবে কি না সন্দেহ। ইচ্ছে তো করছে কানের নিচে কয়েকটা লাগিয়ে দেই।

মুহিনঃঃ- দেন। ইচ্ছামতো দেন কয়েকটা। এত বারণ করার পরও ওইদিকে কেন গেলি?

পুষ্পঃঃ- আ…. আমি…. স…. স..রি…. (কান্নার জন্য কথা বলতে পারছে না। এভাবে কাঁদতে দেখে রিহানের ভীষণ মায়া হলো। আবার রাগও হলো প্রচুর। তাই সেদিক থেকে সরে গেল।)

মুহিনঃঃ- কান্না থামিয়ে চল এবার। ভাগ্য ভালো যে আপুরা অন্য দিকে গিয়েছে। তোকে খুঁজতেই আমি এদিকে এসেছি। আজ যদি ছেলেটা না থাকত তাহলে কি হতো বুঝতে পারছিস। ওকে ধন্যবাদ পর্যন্ত দিলি না। চল।

পুষ্প মাথা নিচু করে চুপচাপ হাঁটতে শুরু করল।

পুষ্পঃঃ- (একবার উনাকে ধন্যবাদ জানানো উচিৎ) মুহিন তুই যা আমি আসছি।

মুহিনঃঃ- আবার তুই…

পুষ্পঃঃ- আরে টেনশন নিস না আমি আর যাব না। একটু কাজ আছে তাই।

মুহিন চলে গেল। পুষ্প রিহানের ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ ফোন বেজে উঠল। পুষ্পর বফ ফোন করছে সামনে রিহান দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে ফোন রিসিভ করবে নাকি রিহানকে ধন্যবাদ জানাবে এসব চিন্তা করতে করতে ফোন কেটে গেল। রিহানকে ডাকতে যাবে আবার ফোন বেজে উঠল। একবার ফোনের দিকে তাকাল একবার রিহানের দিকে। হঠাৎ তার চোখ পড়ল রিহানের কানে ফোন। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। রিহান যতবার ফোন করছে তার ফোন রিং হচ্ছে। রিহান ফোন কেটে দিলে রিং অফ হয়ে যাচ্ছে। রিহান বিরক্ত হয়ে ফোন পকেটে রেখে দিল। ফোন আর রিং হচ্ছে না। এবার পুষ্প নিজে ফোন দিল। তাকে অবাক করে ফোন রিসিভ করল। অপর পাশে রিহান।

রিহানঃঃ- কোথায় ছিলে তুমি? সে কখন থেকে ফোন করছি। হ্যালো? হ্যালো? হ্যা… (কাঁধে কারো স্পর্শ অনুভব করল। পিছনে ফিরে দেখে পুষ্প) কি?

পুষ্পঃঃ- রিহান?

রিহানঃঃ- জ্বি! তুমি জানলে কি করে? (পুষ্প তার ফোন দেখাল। রিহান চোখ বড় বড় করে তাকাল) পুষ্প? (পুষ্প লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল) ওহ মাই গড। তুমি? (জড়িয়ে ধরতে যাবে কি থেমে গেল। মাথা চুলকাতে লাগলো) হাই… কে.. কেমন আছ? (কি বলবে বুঝতে পারছে না)

পুষ্প লজ্জায় পানি পানি হয়ে যাচ্ছে। এত দিনের রিলেশন। কখনও কারো দেখা হয়নি। না ছবি দেখেছে। সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পুষ্পর নানা বাড়ি থেকে ফিরেই প্রথম দেখা করবে। কিন্তু ভাগ্যের জোরে এভাবে দেখা হয়ে গেল। সেদিন তাদের অনেক্ষণ কথা হলো। সবার আড়ালে একে অপরের সাথে অনেক সময় কাটালো।

.
.
.

চলবে