😠 Ragging To Loving 😍
Part:: 25
Writer:: Ridhira Noor
তন্বি সুস্থ হওয়ায় বাসায় নিয়ে এলো। পুষ্প বিকালেই বাড়ি ফিরে গিয়েছিল। নূর তন্বি রুমে বসে আছে। আম্মু মাত্রই স্যুপ দিয়ে গেল ত্তন্বিকে খাওয়াতে। নূর চামচ কেটে খাইয়ে দিল।
নূরঃঃ- তন্বি কি হয়েছিল তোর? হঠাৎ শরীর এতটা খারাপ হলো কিভাবে? তুই তো সব কিছু আমার সাথে শেয়ার করিস। এটাও শেয়ার কর।
তন্বিঃঃ- সকালে কলেজে গিয়েছিলাম। তোমার মনে আছে সেই চারজন ছেলে যারা র্যাগিং করেছিল।
নূরঃঃ- ওরা কিছু করেছে?
তন্বিঃঃ- না ওরা না। ওরা তো অনেক পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ওদের বন্ধু শাহেদ রাফি। একটা আমাদের কলেজের প্রিন্সিপালের ছেলে আর অন্যটা অধ্যাপকের ছেলে কিছুদিন আগেই ট্রান্সফার হয়েছে কলেজে। প্রতি তিন মাসে কলেজ বদলি করতে হয় তাদের কান্ড কীর্তির জন্য। ওরাই কিছু মেয়েদের উতক্ত করছিল আমি গিয়ে বাঁধা দেয় তাই সে….. (ভয়ে কেঁপে উঠল) তুমি তো জানো তেলাপোকা আমি কতটা ভয় পায়। ওরা জীবন্ত তেলাপোকা আমার গায়ে ঢেলে দেয়। ভয়ে আমি সেন্সলেস হয়ে পড়ি।
নূরঃঃ- তুই চিন্তা করিস না। (তন্বির গালে হাত দিয়ে) এখন শুয়ে পড়। (চাদর উড়িয়ে দিল)
.
.
.
আমরিনঃঃ- কিরে নূর আজ কোচিং এ এলো না কেন?
পুষ্পঃঃ- এইরে সরি তোদের বলতে ভুলে গেছি। তন্বি অসুস্থ তাই আসেনি। আর জানিসই তো তন্বিকে নিয়ে ও কতটা প্রোটেক্টভ। যখন ওই ঘটনা হয়েছে তার পর থেকে তন্বির প্রতি সে একটু বেশি প্রোসেসিভ হয়ে গেল।
সিমাঃঃ- এটা কি ভুলে যাওয়ার কথা। চল আমরা এক্ষুনি তন্বিকে দেখতে যাব। তন্বি শুধু নূরের না আমাদেরও বোনের মতো।
আলিফাঃঃ- চল।
_______________________________
রহিম চাচার সেই চায়ের দোকানে শাফি সুমন সাব্বির মারুফ বসে চা খাচ্ছিল। হঠাৎ একটা বাইক এসে তাদের সামনে থামলো। হেলমেট খুলে মুখে রুমাল বাঁধা। তারা চিনে ফেলল এই তো সেই মেয়ে যে ওদের শায়েস্তা করেছিল। তারা পালিয়ে যেতে নিলে মেয়েটি থামিয়ে দেয়।
মেয়েটিঃঃ- দাঁড়াও (চিল্লিয়ে বলায় তারা থেমে যায়)
সাব্বিরঃঃ- আমাদের কোন দোষ নেই। আমরা বারবার তাদের বারণ করেছি। প্রিন্সিপালের ছেলে হওয়ায় আমরা তাদের আটকাতে পারিনি।
মেয়েটিঃঃ- ওই দুইজনকে কোথায় পাব শুধু এইটুকু বল।
শাফিঃঃ- ওরা একটু পর এখানেই আসবে আড্ডা দিতে।
মেয়েটিঃঃ- ঠিক আছে। এক মিনিটের মধ্যে চলে যাও এখান থেকে। আমার কাজে কোন বাঁধা হোক আমি চাই না। চাচা আপনিও দয়া করে আজকের জন্য দোকান বন্ধ করে দেন।
রহিম চাচা দোকান বন্ধ করে দিল। সাব্বিররা চলে যেতে নিয়ে আবার ফিরে তাকাল।
সাব্বিরঃঃ- ধন্যবাদ আপু। ওইদিন যদি আপনি আমাদের শিক্ষা না দিতেন তাহলে আমাদের মধ্যে পরিবর্তন হতো না। আমরা আমাদের ভুল বুঝতে পারতাম না। হয়তো আমরাও ওদের মতো অন্যায় করেই যেতাম। থ্যাংক ইউ। (তারা চলে গেল।)
রাস্তাটা এখন সম্পূর্ণ নির্জন। কিছুক্ষণ পরই জীপে করে দুইজন ছেলে এলো। তাদের মধ্যে একজন বলে উঠল।
রাফিঃঃ- শাহেদ ইয়ার আজকে মেয়েটার অবস্থা দেখার মতো ছিল। তেলাপোকা দেখে যেভাবে নাচানাচি করল। আরেকটু নাচলে ভালো বিনোদন হত। কিন্তু ভীতু বেহুশ হয়ে পড়ে গেল।
শাহেদঃঃ- তুই যে তেলাপোকা নিয়ে ঘুরিস জানতাম না। হাহাহা।
রাফিঃঃ- আরে মামা সবাইকে জানাতে হবে না কোন ভূমিকম্প আসছে কলেজে।
তাদের কথা শুনে বুঝতে বাকি রইল না এরাই শাহেদ আর রাফি। আপনাদেরও বুঝতে বাকি রইল না এটা কে? তাদের কথা শুনে মুহূর্তেই রাগ উঠে গেল। হাতে থাকা হকি স্টিক জোরে চেপে ধরল। গিয়ে জীপের সামনের গ্লাসে সজোরে আঘাত করল। মুহূর্তে গ্লাস ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। ঘটনার তড়িতে শাহেদ রাফি কিছু বুঝে উঠার আগেই আরেকটা বারি দিল। তারা গাড়ি থেকে নেমে পড়ল।
রাফিঃঃ- হেই ইউ হোয়াট আর ইউ ডুয়িং? আর ইউ আউট অফ ইউর মাইন্ড?
একটু আগে সেই তন্বির কথা বলছিল। রেগে স্টিক দিয়ে তার মাথায় আঘাত করল। মাথায় ফেটে রক্তাক্ত হয়ে গেল। রাফি মাথা ধরে নিচে বসে পড়ল। এটা দেখে শাহেদ এগিয়ে আসতেই তার উপরও হামলা করে। ইচ্ছে মতো মারতে লাগলো।
আফরান কার ড্রাইভ করছে। তার মাথায় শুধু নূর ঘুরপাক খাচ্ছে। তার সেই কান্না মাখা চেহারা। ছলছল চোখ দুটো। নিজেরই অস্বস্তি হতে লাগলো। না চাওয়া সত্ত্বেও বারবার কেন তার কথায় চিন্তা করছে। হঠাৎ চোখ পড়ল সামনে গন্ডগোল চলছে। গাড়ি ব্রেক করে সেদিকে এগিয়ে গেল।
শাহেদকে মারার সময় পিছন থেকে রাফি উঠে এসে তাকে চেপে ধরে। তার হাত থেকে ছুটার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। শাহেদ তার হাত থেকে হকি স্টিক ছিনিয়ে নিল। রাফি সজোরে ধাক্কা দেই। পড়ে যাওয়ার আগেই আফরান ধরে ফেলে। মাথা উঠিয়ে দেখে। রুমাল বাঁধা থাকায় চেহারা দেখতে পায়নি। আফরানের চোখ পড়ল তার চোখে। খুব চেনা পরিচিত লাগছে চোখ দুটো। কিছু বুঝে উঠার আগেই শাহেদ পিছন থেকে স্টিক দিয়ে আঘাত করতেই আফরান তাকে বুকের মাঝে আঁকড়ে ধরে উল্টো হয়ে ফিরে দাঁড়ায়। ফলে আঘাত গিয়ে লাগে তার মাথায়। জোরে আঘাত লাগাই আফরানের সামনে ধীরে ধীরে সব ঘোলাটে হতে লাগলো।দেহ নিথর হয়ে পড়ে যেতেই চিৎকার দিয়ে উঠল। আফরায়ায়ায়ানননননন। পড়ে যেতে মুখের রুমাল আঁকড়ে ধরে ফলে মুখ থেকে রুমাল খুলে যায়। চেহারা দেখার আগে আফরান সেন্স হারিয়ে ফেলে। শাহেদ আবার আঘাত করার আগে তৎক্ষনাৎ তিনজন মেয়ে এসে তাদের আটকে দেয়। তাদের দুইজনকে একসাথে বেঁধে দিল।
আমরিনঃঃ- নূর… এদের আমি আর সিমা সামলে নিব। পুষ্প তুই নূরের সাথে আফরানকে নিয়ে হসপিটালে নিয়ে যাহ। প্রচুর রক্ত ঝরছে।
নূর নিথর হয়ে আফরানের পাশে বসে আছে। নড়ছেই না। পুষ্প তাকে ঝাকিয়ে দিল।
পুষ্পঃঃ- নূর ধর ওকে। হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে প্রব্লেম বাড়তে পারে। (তারা আফরান ধরে উঠাল) বাইকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। আমি বাইক নিচ্ছি তুই তাকে কারেই নিয়ে যাহ তাড়াতাড়ি কর।
সিমাঃঃ- মেহের তোরা পৌঁছে গিয়েছিস তো? হ্যাঁ আমরা আসছি। ওকে বাই। আমরিন চল।
আফরানকে পাশের সিটে বসিয়ে নূর ড্রাইভিং সিটে বসল। ক্ষতস্থান থেকে রক্ত ঝরতে দেখে অনেকটা ভয় পেয়েছে। রুমালটা আফরান মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে আছে। তারা কিছুক্ষণের মধ্যে পাশ্ববর্তী একটি হসপিটালে নিয়ে এলো। ডক্টর আর নার্স এসে আফরানকে নিয়ে গেল। নূর বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। নূর এদিক থেকে ওদিক পায়চারি করছে। পুষ্প এসে নূরকে এভাবে দেখে কিছুটা আশ্চর্য হলো।
পুষ্পঃঃ- ভালবাসিস?
নূরঃঃ- তোর কি মাথা খারাপ? এমন অবস্থায় জিজ্ঞেস করছিস আমি আফরানকে ভালবাসি কি না?
পুষ্পঃঃ- (আমি তো আফরানের নামই নিই নাই। তুই তো চাইলে নাও বলতে পারতি। কিন্তু এড়িয়ে গেলি। বিনিময়ে শুধু মুচকি হাসলো) না মানে তুই যেভাবে টেনশন নিচ্ছিস এমন তো তন্বির সময়ও করিস নি।
নূরঃঃ- (অবাক হয়ে তাকাল) না…মানে… আমার জন্যই উনার এমন অবস্থা তাই কিছুটা চিন্তিত।
পুষ্পঃঃ- চিন্তা করতে হবে না। রিহান আসছে। রিসেপশনিস্ট তাকে জানিয়ে দিয়েছে।
নূরঃঃ- রিহানের নাম্বার পেল কোথায়?
পুষ্পঃঃ- তোর এত কিছু ভাবতে হবে না। তুই ভাব ওদের কি করবি?
নূরঃঃ- তা ভেবে নিয়ে….. (পুষ্প নূরকে টেনে সাইডে নিয়ে এলো)
পুষ্পঃঃ- শশশশ। রিহান। আমাদের দেখলে সমস্যা হবে।
কিছুক্ষণ পর ডক্টর এসে জানিয়ে দিল সিরিয়াস কিছু হয়নি। মাথার পিছনে আঘাত লাগায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। একটু পরই জ্ঞান ফিরবে। নূরের জানে যেন জান এলো। রিহান আফরানের কেবিনে গেল আর পুষ্প নূর রওনা দিল পুষ্পদের গোডাউনের উদ্দেশ্যে। আলিফা আর বাকিরা সেখানে। সবার মুখ রুমাল দিয়ে ঢাকা। একটা বড় কাঁচের বাক্সে শাহেদ রাফি বাঁধা। নিজেদের ছাড়ানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। কিন্তু ব্যর্থ হলো।
আমরিনঃঃ- তোরা জানিস না তোরা কত বড় অপরাধ করে ফেললি। কার ক্ষতি করতে গিয়েছিলি।
আলিফাঃঃ- তোদের এখন কি হবে আমরা নিজেরাও জানি না।
সিমাঃঃ- ওর কলিজায় আঘাত করতে গিয়েছিলি এবার বুঝ ঠেলা। (তখনই পুষ্প এলো) নূর কোথায়?
নূরঃঃ- এই যে আমি। (হাতে দুইটা বড় বাক্স নিয়ে শাহেদ ও রাফির কাছে গেল।) খুব শখ না র্যাগিং করার। নাও পেই ফর ইট।
বাক্স খুলে ঢেলে দিল বড় বড় জঙ্গলি ইঁদুর। ইঁদুরগুলো তাদের কামড়াতে লাগলো। বাঁধা থাকায় তারা অসহায়ের মতো কামড় খাওয়া ছাড়া কিছু করতে পারছে না।
নূরঃঃ- (চোখের পানি ছলছল করছে) একজনকে হারিয়েছি তোদের মতো অমানুষের জন্য। আরেকজনকে হারাতে দিব না। তোদের র্যাগিং ছুটাচ্ছি। সারারাত ইঁদুরের কামড় খা কাল সকালে মুক্তি পাবি। এরপরও যদি না শুধরাস তাহলে পরবর্তীতে কি হবে নিজেও জানি না। থাকুক ওরা চল আমরা যায়।
বাইরে এসে সবাই নূরের উপর ক্ষেপে গেল।
আলিফাঃঃ- আমাদের না বলে একা গেলি কেন? যদি তোর বাসায় গিয়ে তন্বির কাছ থেকে কাহিনি না জানতাম তাহলে কি হতো বুঝতে পারছিস।
মেহেরঃঃ- এভাবে একা যাওয়ার কোন মানে হয় না। আমরা একসাথে সব কাজ করি। তুই আমাদের না জানিয়ে….
নূরঃঃ- সরি। একটু সেন্টি হয়ে গিয়েছিলাম তাই। আর হবে না। এখন চল। অনেক দেরি হয়ে গেল।
.
.
.
চলবে
😠 Ragging To Loving 😍
Part:: 26
Writer:: Ridhira Noor
হসপিটালে__________________________
আফরান আধশোয়া হয়ে বসে আছে। রিহান তার পাশে বসা। মাথায় ব্যান্ডেজ করা।
রিহানঃঃ- কিভাবে হলো এসব? তোর এমন অবস্থা। হসপিটাল থেকে ফেরার পর তুই কার নিয়ে বেরিয়ে গেলি। তারপর এসব হলো। কে নিয়ে এলো তোকে?
আফরানঃঃ- আমি কিছু জানি না। ড্রাইভ করছিলাম তখন দেখলাম রাস্তায় কিছু সমস্যা হয়েছে। একজন মেয়ে দুইজন ছেলের মধ্যে ফাইট হচ্ছিল। মেয়েটি নির্মমভাবে ছেলেগুলোকে মারছিল। তারা নিজের ডিফেন্সে মেয়েটিকে আঘাত করে আর তাকে বাঁচাতে গিয়ে আমি আহত হয়।
রিহানঃঃ- কোন মেয়ে? চিনিস তাকে?
আফরানঃঃ- না। মুখে রু…(হাত উঠিয়ে দেখে তার হাতে রুমালটা) আরে এটা তো তারই রুমাল। মুখে বাঁধা ছিল বল চেহারা দেখতে পায়নি। কিন্তু আমার খুব চেনা চেনা লাগছিল। আর কি জানিস মেয়েটিও হয়তো আমাকে চিনে। কারণ যখন আমি পড়ে যাচ্ছিলাম তখন সে আমার নাম ডেকেছিল। পড়ে যাওয়ার সময় হাতে রুমাল চলে আসে। চেহারা দেখার আগেই অজ্ঞান হয়ে পড়ি।
রিহানঃঃ- একটা কথা আমি বুঝতে পারছি না। হসপিটালের রিসেপশনিস্ট আমার নাম্বার পেল কি করে? আমাকে কিভাবে তোর ব্যাপারে খবর দিল? এখন তো আমারও মনে হচ্ছে নিশ্চয় আমাদের চেনা পরিচিত কেউ ছিল।
আফরান রুমালটা মুষ্টিবদ্ধ করে পকেটে নিয়ে নিল। রিহান আফরানকে নিয়ে বাড়ি ফিরে গেল।
.
.
.
নূর আস্তে করে দরজা খুলে পা টিপে টিপে ঘরে ঢুকছে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখল আম্মু আছে কি না? নেই তাই স্বস্তির নিশ্বাস নিয়ে সিড়ি দিয়ে পা বাড়াতেই….
আম্মুঃঃ- আজকেও কি কুত্তা দৌড়ানি দিছিল? ১০ টা বাজে এখন আসার সময় হলো তোর? পুষ্পরা এসে চলে গেল।
নূরঃঃ- (জ্বিবে কামড় দিয়ে পিছন ফিরল) না আসলে একটু কাজে ছিলাম ওই আর কি। আর তাদের সাথে দেখা হয়েছে।
আম্মুঃঃ- তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে খেতে আয়।
রাতে খাবার খেয়ে নূর শুয়ে পড়ল। বিছানার এপাশ ওপাশ হচ্ছে কিন্তু কোন ভাবে ঘুম আসছে না। তাই উঠে বারান্দায় গেল।
নূরঃঃ- আফরানের চিন্তা হচ্ছে। শেষবারের মতো একটু দেখেও এলাম। না জানি কেমন আছে? আমার জন্যই উনার এই অবস্থা হলো। কাল যদি ভার্সিটি না আসে তাহলে কিভাবে জানব উনার খবর। ধুরর কাল দেখা যাবে।
.
.
আলিফা মেহের দুইজন দুই দিকে মুখ করে শুয়ে আছে। আলিফা আরিফের কথা চিন্তা করছে। মিলার বিয়েতে আরিফের সাথে ঝগড়া, ভার্সিটিতে পায়ে ব্যাথা ঠিক করাই জড়িয়ে ধরা, আর আজ। আজ যেন তার উপর থেকে নজর সরছেই না। এসব চিন্তা করে নিজেই বেহায়ার মতো মুচকি হাসছে। আর অন্যদিকে মেহের নীরবে চোখের জল ফেলছে। আজ ইয়াশ ওর সাথে যেমন ব্যবহার করল ভীষণ খারাপ লাগলো। সেটা চিন্তা করেই কান্না পাচ্ছে। কিভাবে পারল এভাবে কটুকথা বলতে।
.
.
সিমা আমরিন দুইজনের কাছে আজকের দিনটি ছিল চিরস্মরণীয়। প্রথম ভালবাসার অনুভূতি বুঝতে পারল।
.
.
পুষ্পর চোখের ঘুম সে তো অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছে। মোবাইলের স্ক্রিনে রিহানের নাম্বার উঠে আছে। গত দুই বছর ধরে প্রতিটি দিন মোবাইল হাতে নিয়ে একবার ফোন করার চিন্তা করে পরক্ষণে মনে পড়ে যায় তার সব মিথ্যা। মোবাইল আবার রেখে দিয়ে চোখের জল ফেলে।
.
.
আফরান রুমালটা হাতে নিয়ে বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। রুমালটার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। মেয়েটি যখন পড়ে যাচ্ছিল তখন তার চোখ দেখেছিল।
আফরানঃঃ- চোখজোড়া দুটি আমার খুব চেনা চেনা মনে হলো। মনে হলো যেন আগেও খুব কাছে থেকে দেখেছি। কিন্তু কোথায়? (রেলিং এ জোরে ঘুসি মারল) আমাকে জানতে হবে কে ছিল সে?
.
.
রিহান কল লিস্টে পুষ্পর নাম্বার দেখতে লাগলো। দুপুরে যখন ফোন করেছিল তখনই সেভ করেছে নাম্বার। একবার ভাবলো ফোন দিবে আবার দিল না।
পরের দিন নূররা গিয়ে শাহেদ রাফিকে মুক্ত করল। তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। ইঁদুরের কামড়ে শরীরে অনেক ক্ষত হয়েছে। কিন্তু এতে কারো বিন্দু পরিমাণ খারাপ লাগছে না। তাদের কর্মের ফলই পেয়েছে তারা। কলেজের সামনে এনে ছেড়ে দিল। সবাই তাদের দেখে অবাক। আফরান ভার্সিটিতে যাচ্ছিল হঠাৎ চোখ পড়ল রাস্তায় থাকা ছেলেগুলোর উপর। তাদের অবস্থা দেখে অবাক হলো।
আফরানঃঃ- এরা তো কালকের সেই ছেলেরা। (গাড়ি একপাশে রেখে তাদের কাছে গেল) তোমাদের এই অবস্থা হলো কি করে? কাল কি হয়েছিল?
রাফিঃঃ- (আফরানকে চিনতে পেল। কাল তাদের সাথে যে টর্চার করেছে তা সব বলল।)
আফরানঃঃ- দেট সো রিডিকুলাস। কিভাবে একজন মানুষের সাথে এমন করতে পারে।
ভার্সিটিতে __________________
নূর ও বাকিরা গেইট দিয়ে প্রবেশ করতেই তাদের সামনে আহিল ওয়াসিম হাজির। সিমা আমরিনের দিকে তাকিয়ে হাসছে। বিনিময়ে তারাও হাসি দিল। নূর একবার তাদের দিকে তাকাল একবার ওয়াসিম আহিলের দিকে। ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল।
নূরঃঃ- কি হচ্ছে এখানে। আজ ক্লোজ আপ ডে নাকি। যে ফ্যালফ্যালাইয়া দাঁত খেলিয়ে হাসি দিয়ে বলবে কাছে এসো কাছে এসো কাছে এসো না ওওওওওও।
আহিলঃঃ- কাছে তো অনেক আগেই চলে এসেছি।
আমরিনঃঃ- নূর আমরা আমাদের মনের অনুভূতি বুঝতে পেরেছি। আমি আহিল আর সিমা ওয়াসিম। উই আর ইন রিলেশনশিপ।
আলিফাঃঃ- তার মানে ডাবল ট্রিট। ইয়াহু। আগে ক্লাসে চল তারপর সব উসুল করব।
আহিল ওয়াসিম তাদের কান্ড দেখে হেসে দিল। তাদের সাথে আফরান আর বাকিরাও এসে যোগ দিল। আহিল তাদের আমরিন আর সিমার সম্বন্ধে বলল। সবাই যে যার ক্লাসের দিকে অগ্রসর হলো। নূর এগিয়ে যেতেই ইটের সাথে লেগে পড়ে যায়। আফরান এগিয়ে গেল তার দিকে চশমা তুলে হাতে দিতেই চোখে চোখ পড়ল। নূর চশমা পড়ে উঠে যেতেই আফরান তার হাত চেপে ধরে। নূর অবাক হয়ে তাকাল। কেন জানি আফরানের চেহারায় ক্ষোভ দেখা দিল।
আফরানঃঃ- তোমরা যাও। নূরের সাথে আমার কিছু কথা আছে। (টেনে নিয়ে গেল একপাশে। তাকে সামনে দাঁড় করিয়ে চশমা খুলতে নিলে নূর বাঁধা দেয়)
নূরঃঃ- কি করছেন এসব?
আফরানঃঃ- জাস্ট শাট আপ। (নূর চুপ হয়ে গেল। চশমা খুলে পকেট থেকে রুমাল বের করে। রুমালটা দেখে নূর অবাক হয়। ভয়ে ঢোক গিলল। আফরান তার মুখে রুমাল বেঁধে দিল। চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রুমাল খুলে ফেলল) এটা(রুমাল) চিনতে পারছ?
নূরঃঃ- (আমার এই সিক্রেট কাউকে জানতে দেওয়া যাবে না) আ…আমি কি করে চিনব।
আফরানঃঃ- মিথ্যা বলবা না। এটা তোমারই। কাল ওই ছেলেদের সাথে এমন কেন করেছ? ওই ছেলেদের সাথে কিভাবে পারলে এমন করতে? তোমার বিবেকে বাঁধল না?
নূরঃঃ- (রাগ মাথায় ছড়ে বসল) না বাঁধল না। তাদের কর্মের ফলই তাদের দিয়েছি। তারা যা করল তাতে তাদের বিবেকে বাঁধল না আর আমার তাদের শাস্তি দিতে বিবেকে বাঁধবে? ব্যাপারটা হাস্যকর। (তাচ্ছিল্য হাসি দিল)
আফরানঃঃ- কি এমন করেছে?
নূরঃঃ- র্যাগিং করেছে। ঘৃণা হয় আমার তাদের প্রতি যারা র্যাগিং করে। ঘৃণা করি র্যাগারসদের। আই হেইট দেম। (চিল্লিয়ে বলল)
আফরানঃঃ- (নূরের কথায় অবাক হলো। কথাটা সোজা তার বুকে গিয়ে লাগল) আমার প্রতিও কি ঘৃণা হয়? (করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল। নূর অবাক হয়ে তার দিকে তাকাল) আমিও তো তোমার র্যাগিং করেছি। আমাকেও কি ঘৃণা কর?
চোখ জলে ছলছল করছে। নূর কিছু না বলেই চলে গেল। আফরান সেই ঠাই হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মনে তার কেমন যেন ভয় করছে। মনে যেন খুব আপন কিছু হারিয়ে যাচ্ছে। গলায় খিচ ধরে যাচ্ছে। ধম আটকে আসছে।
.
.
.
চলবে