😠 Ragging To Loving 😍
Part:: 27
Writer:: Ridhira Noor
মেহের পুষ্প লাইব্রেরি যাচ্ছিল পুষ্প দেখে নূর কাঁদতে কাঁদতে যাচ্ছে।
পুষ্পঃঃ- মেহের তুই লাইব্রেরি গিয়ে বইটা দিয়ে আয় আমি আসছি।
মেহের গেল লাইব্রেরি। বই বুকশেলফে রাখতে গিয়ে দেখে অপরপাশে ইয়াশ। ইয়াশ কিছু বলতে যাবে তার আগেই বই বুকশেলফে রেখে চলে আসতেই ইয়াশ তার সামনে এসে দাঁড়ায়। মেহের পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই হাত ধরে ফেলে।
ইয়াশঃঃ- আমাকে দেখে এড়িয়ে যাচ্ছ কেন?
মেহেরঃঃ- (হাত ছাড়িয়ে নিল) আমি যদি আবার ইচ্ছে করে আপনার কোন কিছুর ক্ষতি করি? আমার তো কমন সেন্স বলতে কিছু নেই? তাই চাই না আমার জন্য আপনার কোন ক্ষতি হোক।
ইয়াশঃঃ- মেহের আই এম সরি। কালকে রাগের মাথায় ওইসব বলেছিলাম। রাগে কি বলি নিজেও জানি না।
মেহেরঃঃ- লাগবে না আপনার সরি। আমি তো ইচ্ছে করেই এমন করেছিলাম তাই না? তো আপনি কেন সরি বলছেন। সরি তো আমার বলা উচিৎ। আই এম সরি। (হাত জোর করে। রেগে বললেও ইয়াশের কথায় অনেক কষ্ট পেয়েছে। চোখের পানি টলমল করছে।)
ইয়াশঃঃ- (মেহের চোখের পানি তার কাছে এড়ায় নি) আই এম রিয়েলি ভেরি সরি। আচ্ছা বল কি করব? ওকে কান ধরে উঠবস করি। এক দুই তিন চার…….
ইয়াশ সত্যি সত্যি কান ধরে উঠবস করছে। মেহেরের অবাক হওয়ার সীমানা পেরিয়ে গেল। সে ভেবেছিল ইয়াশ হয়তো এমনি বলছে। কিন্তু ইয়াশ তাকে ভুল প্রমাণ করে উঠবস করছে। ইয়াশকে এভাবে দেখে ফিক করে হেসে দিল। আবার বসতে যাবে মেহের হাত ধরে থামিয়ে দেয়।
মেহেরঃঃ- থাক অনেক হয়েছে। ইটস ওকে।
ইয়াশঃঃ- ফ্রেন্ডস? (মুচকি হাসি দিয়ে হাত বাড়ালো)
মেহেরঃঃ- (কিছুক্ষণ চিন্তার অভিনয় করে হাত মিলালো) ফ্রেন্ডস। আচ্ছা এখন চলি বাকিরা ক্লাসে অপেক্ষা করছে। বাই।
.
.
পুষ্প দৌড়ে এসে নূরের সামনে দাঁড়ায় কিছু বলার আগেই নূর ঝাপিয়ে পড়ে তার উপর। ডুকরে কেঁদে উঠলো। পুষ্প অবাক হয়ে জড়িয়ে ধরল। নূর কোনভাবে নিজেকে শান্ত করল।
নূরঃঃ- আমার ভালো লাগছে না তাই ক্লাস করব না। আর হ্যাঁ কাউকে কিছু বলিস না। বলবি শরীর খারাপ তাই বাসায় ফিরে গেলাম। চলি। (আর এক মুহূর্ত না থেকে চলে গেল।)
পুষ্পঃঃ- (কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নূর চলে গেল। পুষ্প নূরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে) কি হলো ওর। সে তো আফরানের সাথে ছিল। নিশ্চয় সে কিছু বলছে। (আশেপাশে তাকিয়ে আফরানকে খুঁজতে লাগলো। খুঁজতে খুঁজতে পার্কিং এরিয়ায় এসে দেখে গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে আছে।)
আফরানঃঃ- (নূর যতই বলুক সে ছেলেগুলোর সাথে যা করেছে তা অন্যায়। ছেলেগুলোর যা অবস্থা করেছে মোটেও উচিৎ হয়নি। প্রচুর রাগ হচ্ছে। রাগ কি ছেলেগুলোর সাথে এমন করাই হচ্ছে না কি অন্যকিছুর জন্য তা জানা নেই। হয়তো ভাবছে নূর তাকেও অপছন্দ করে। এসব ভাবতে লাগলো।)
পুষ্পঃঃ- আপনি নূরকে কি বলেছেন? (রেগে চিল্লিয়ে বলল)
আফরানঃঃ- (একে তো মন খারাপ এসব চিন্তা করে তার উপর পুষ্পর চিল্লানোতে বিরক্ত হচ্ছে) সেটা তোমাকে বলতে বাধ্য নয়।
পুষ্পঃঃ- অবশ্যই বাধ্য। আমার ফ্রেন্ডকে কি এমন বলেছেন যে সে….
আফরানঃঃ- (বিরক্ত হয়ে রাগী সুরে বলল) সেটা তাকে জিজ্ঞেস কর। জানো কি করেছে? একটা মানুষ কতটা নিষ্ঠুর হলে অন্যকে এভাবে টর্চার করে।
পুষ্পঃঃ- মানে?
আফরানঃঃ- তোমার ওই ফ্রেন্ড কালরাতে দুইটা ছেলের সাথে যা নিষ্ঠুরতা করেছে বলতে পার? আজ সকালে তাদের সাথে দেখা হয়েছিল। তাদের অবস্থা কতটা করুণ ছিল আমি দেখেছি। সব তোমার ওই নিষ্ঠুর ফ্রেন্ড করেছে।
পুষ্পঃঃ- জানেন কি আপনি নূরের ব্যাপারে? আর যেই ছেলেদের কথা বলছেন তাদের ব্যাপারেই বা কি জানেন? আমার ফ্রেন্ডকে নিষ্ঠুর বলছেন নিষ্ঠুর তো ছেলেগুলো। কাল যে তন্বির জন্য আপনার এত দরদ হচ্ছিল তার জন্য ওই ছেলেরাই দায়ী ছিল।
আফরানঃঃ- (চরম অবাক। কিছু বলার মতো ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।)
পুষ্পঃঃ- নূর যা কিছু করেছে একদম ঠিক করেছে। কারণ সে চাই না আবারও কাউকে হারাতে।
আফরানঃঃ- মানে? (হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায়।)
পুষ্পঃঃ- কিছু না। (ঘুরে চলে যেতেই আফরান সামনে এসে দাঁড়ায়)
আফরানঃঃ- প্লিজ বল। নাহলে আমি শান্তিতে থাকতে পারব না। হাজারো চিন্তা ঘুরবে মাথায়। প্লিজ বল আমায়। প্লিজ।
পুষ্পঃঃ- (আফরানের আকুতি মিনতি শুনে মন গলে গেল) ঠিক আছে বলছি।
সেই চার বছর আগের কথা। নূর ও তার দুই বোন তন্বি আর অর্থি। তারা বোন কম বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। অর্থি নূরের বড় বোন। আমাদেরও বোনের মতো করে আদর করতো। তখন নূর নবম শ্রেণিতে পড়ে আর অর্থি সবে মাত্র ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। সব কিছু ভালো চলছিল। হঠাৎ এক তুফান এসে তাদের সব খুশি উড়িয়ে নিয়ে গেল। ভার্সিটি লাইফে প্রথম দিনগুলো ভালোই কেটেছে। কিন্তু তাদের ভার্সিটির সিনিয়ররা তাদের র্যাগিং করতে শুরু করে। অর্থি ছিল ভীষণ রাগী। আর অন্যায় মোটেও সহ্য করতে পারে না। একদিন ভার্সিটির একজন সিনিয়র তাকে বলে স্যারকে…. কিস করতে। অর্থি রেগে গিয়ে সবার সামনে তার গালে থাপ্পড় দিল। অপমানে সে অর্থির পিছে লেগে পড়ে। বেশ কিছু দিন কেটে গেল। ভার্সিটির বার্ষিক প্রতিযোগিতা শুরু হয়। অনেকে সুইমিং কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ করে। কম্পিটিশন শেষে সবাই চলে যেতে লাগলো। অর্থি আর বান্ধবীরা সেখানে গল্প করছিল। সেই সিনিয়র গুলো এলো। সে বলতে লাগলো “খুব দেমাগ না তোর। আয় একটু ঠান্ডা করে দেই” অর্থিকে ধাক্কা দিয়ে সুইমিংপুলে ফেলে দেই। সে আবারও বলতে লাগলো “কিছুক্ষণ পানিতে থাক একটু ঠান্ডা হউক। আর হ্যাঁ বাকিরা যাও এখান থেকে। কেউ যদি হেল্প কর তাহলে আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না। অর্থির বান্ধবীরা চলে গেল। সিনিয়ররাও চলে গেল। বেশ কিছুক্ষণ পর। তারা অর্থির অবস্থা দেখতে আসে। এসে দেখে অর্থি…. অর্থি না তার শরীর পানিতে ভাসছে। তারা কেউ জানত না সে সাঁতার জানে না। সাঁতার না জানার কারণে প্রাণ হারায়। অর্থি আর তন্বি ছিল নূরের জান। র্যাগিং এর কারণে অর্থি তার জীবন হারায়। অর্থির শোকে নূর মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে। প্রায় এক সপ্তাহ হসপিটালে অজ্ঞান অবস্থায় ছিল। সেই থেকে নূর র্যাগিং করা ঘৃণা করে। যারা র্যাগিং করে তাদেরও ঘৃণা করে। কারণ সে চাই না অর্থির মতো অবস্থা আর কারো হউক।
আফরান নিরব হয়ে শুনছে। নিজেকে এখন অপরাধী মনে হচ্ছে তার কাছে। অজান্তে হলেও সে অনেক বড় অন্যায় করেছে। এর জন্য হয়তো নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবে না।
(র্যাগিং শুধু একটা শব্দ। কিন্তু এই র্যাগিং এর কারণে হাজারো ছাত্রছাত্রীর জীবন তচনচ হয়ে যায়। তারা জীবনকে শিক্ষার আলোতে আলোকিত করতে বিভিন্ন স্কুল কলেজ ভার্সিটি যায়। অনেকে নিজের আপনজন ঘরবাড়ি থেকে দূরে গিয়ে হোস্টেলে থাকে। কিন্তু এই র্যাগিং এর জন্য তাদের সুন্দর একটি জীবন অন্ধকারে ছেয়ে যায়। অনেকে তো এসব থেকে অতিষ্ঠ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এমন হাজারো শোনা না শোনায় প্রতিনিয়ত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র্যাগিং হয়। কতজন লড়াই করে তাদের পড়ালেখা চালিয়ে যায়। কতজন সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করে যায়। কতজন হার মেনে পড়াশোনা শেষ করে দেয়। বাবা মা আজীবন পরিশ্রম করে তাদের সন্তানদের লালন পালন করে শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চায়। যাতে জীবনের পথে সব বাঁধা উপেক্ষা করে চলতে পারে। কিন্তু এই শিক্ষার পথেই তো অনেকের জীবন থেমে যায়। এমন অনেকে আছে র্যাগিং এর ভয়ে পড়াশোনা আর আগাতে চায় না।)
পুষ্পঃঃ- নূর অনেক কষ্টে নিজেকে সামলেছে। সে সবাইকে নিয়ে হাসিতে মেতে উঠে। নিজের কষ্ট কাউকে বুঝতে দেয় না। নূর অনেক স্ট্রোং। খুব বেশি কষ্ট না পেলে কাঁদে না। সেই কালকে তন্বির জন্য কাঁদতে দেখেছি। কারণ অর্থির মতো যাতে তন্বি হারিয়ে না যায় সেই ভয়ে। আর আজ কাঁদতে দেখেছি। আপনা….. (বলতে গিয়ে থেমে গেল)
আফরানঃঃ- (কিছু বলার ভাষায় হারিয়ে ফেলেছে। ঠাই হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শরীরটা যেন অবশ হয়ে গেল। তাও নিজেকে শক্ত করে বলল) কো….কোথায় নূর? আমি নিজের অজান্তে ওকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। আপনজনকে হারানোর কষ্ট আমি বুঝি। আমি…. প্লিজ বল সে কোথায়?
পুষ্পঃঃ- চলে গিয়েছে।
আফরানঃঃ- ওর বাসার ঠিকানা দাও। যতক্ষণ না ওর সাথে কথা হবে আমি কিছুতে শান্ত হতে পারব না। প্লিজ।
পুষ্পঃঃ- এই অবস্থায় সে বাসায় যাবে না। নিশ্চয় তার সেই মনে খারাপের সাথীর কাছে গিয়েছে।
আফরান গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল নূরের খোঁজে। অপরাধ ও কষ্ট উভয় কাজ করছে। আফরানের চোখে যেমন অপরাধবোধ রয়েছে তেমন বুকেও কষ্টও রয়েছে। অপরাবোধ হয়তো নূরকে কথা শুনানোর জন্য। আর কষ্ট হয়তো নূরের কষ্টের জন্য। অনুভূতিগুলোও আজব। নিজের অনুভূতি তবুও নিজেই বুঝতে পারে না আসলেই সে কি অনুভব করছে? কেন অনুভব করছে? কিন্তু সময় সেই বড়ই বিদ্রোহী। কারো জন্য থেমে থাকে না। সময়ের সাথে হয়তো অনুভূতি বেড়ে যায় নাহয় কমে যায়। আবার এই সময় থাকতে অনুভূতি প্রকাশ না করায় হারিয়ে যায় কোন এক অজানা প্রান্তে।
.
.
.
চলবে
😠 Ragging To Loving 😍
Part:: 28
Writer:: Ridhira Noor
আলিফা টেবিলের উপর কুনুই রেখে গালে হাত দিয়ে আনমনে চিন্তা করছে আর মুচকি হাসছে। অনুভূতিগুলো সত্যি অদ্ভুত কখন কার প্রতি অনুভবে আসক্ত হয়ে যায় জানেই না। আলিফাও হয়তো এই অনুভবে আসক্ত হয়ে পড়ছে। মেহের অনেক খুশি ইয়াশের সাথে বন্ধুত্ব করে। ইয়াশ অতটা খারাপ না। শুধু শুধুই এতদিন ঝগড়া করেছে চিন্তা করছে মেহের। আমার সেই কান ধরে উঠবস করা নিয়ে হাসছে। সিমা আমরিন তাদের লাভ বার্ডসের কথা চিন্তা করছে। পুষ্প নূরের কথা চিন্তা করছে না জানি এখন কি অবস্থা তার।
স্যারঃঃ- এই যে কল্পনা জগতের রাজকন্যারা। আপনাদের কল্পনা করা শেষ হলো? (খোঁচা মেরে বলল কথাটা)
সবাই তড়িঘড়ি অপ্রস্তুত হয়ে বসল। অমনোযোগী হওয়ায় তারা কিছুটা লজ্জা পেল। সবাই একসাথে বলল “সরি স্যার।”
স্যারঃঃ- ক্লাসে অমনোযোগী হলে বেরিয়ে যাও ক্লাস থেকে। কল্পনা করা শেষ হলে তারপর এসো। (তারা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তখনই ক্লাস শেষের ঘন্টা পড়ল। দাঁত যতগুলো আছে সব বের করে দিল হাসি। স্যার বিরক্ত হয়ে চলে গেল। তারা বেরিয়ে এলো।)
আলিফাঃঃ- এক মিনিট। সবাই আছে কিন্তু নূর ফকিন্নিটা কই?
পুষ্পঃঃ- ও…ওর শরীর খারাপ তাই চলে গেল।
ওয়াসিমঃঃ- হাই গার্লস। কি মিটিং করছ? মিস খুরাফাতি কুইন কোথায়?
সিমাঃঃ- খুরাফাতি কুইন? জোস নাম। (হাসতে হাসতে বলল) আসলে ওর শরীর খারাপ তাই বাসায় চলে গেল। আপনাদের খুরাফাতি কিং মানে আফরান ভাইয়া কোথায়?
ওয়াসিমঃঃ- আশ্চর্য বিষয় আফরানও আজ ক্লাস না করে চলে গেল। এই খুরাফাতি কিং কুইন মিলে কোন নতুন খুরাফাতি কাহিনি করছে না তো?
আমরিনঃঃ- ডোন্ট নো।
পুষ্পঃঃ- (চুপচাপ তাদের কথা শুনছে। তাদের কি বলব নূর আর আফরানের কথা? আফরানের যাওয়াতে নূর যদি কোন রকম ঝামেলা করে। এই মেয়ে না জানি কি করে। টেনশনে আমার যায় যায় অবস্থা।)
আলিফা আরিফকে খুঁজছে। সবাই আছে কিন্তু সেই নেই। আশেপাশে উঁকি মেরে দেখছে। ভালবাসার মানুষটিকে দূর থেকে খোঁজার অনুভূতিটা অন্যরকম হয়। হঠাৎ দেখল আরিফের হাতে ক্যামেরা। তার সাথে কোন এক মেয়ে চিপকে আছে আর ক্যামেরায় কি যেন দেখছে। রেগে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। নিজের আঙুল নিয়ে মুচড়া মুচড়ি করছে। ধারালো দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু ইয়াশের চোখে তা এড়ালো না। একবার আলিফাকে একবার আরিফকে দেখছে।
ইয়াশঃঃ- (ইয়ে কোনছি খিচড়ি পাক রাহি হে। আলিফার মনে আরিফকে নিয়ে কি সামথিং সামথিং চলছে না কি?)
আলিফাঃঃ- (লুচ্চা কোথাকার। কেমন চিপকে আছে। ইচ্ছে তো করছে…. এই ক্যামেরায় দিয়েই দুইটার মাথা ফাটিয়ে দেয়।)
ইয়াশঃঃ- আরিফ এদিকে আয়। (হাত দিয়ে ইশারা করে ডাকল। আরিফ দ্রুত গতিতে চলে এলো। ইয়াশ একবার আড়চোখে আলিফার দিকে তাকাল। রাগ তার চেহারায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।) তুই কি করছিলি ওইখানে?
আরিফঃঃ- আরে পান্না তো একজন মডেল। ওর কিছু ছবি তুলেছিলাম। ওর না কি একটা কনটেস্ট আছে। সেগুলোই দেখছিল।
আলিফাঃঃ- (জিহ্বে হালকা কামড় দিল। ধুরর আমি কি না কি ভাবছিলাম। নিজেই মাথায় হালকা থাপ্পড় দিয়ে মুচকি হাসলো।)
ইয়াশঃঃ- (আলিফাকে দেখে সেও হেসে দিল। তার মানে আমি ঠিক ছিলাম। আলিফার মনে কিছু আছে। এবার আমার এই নাছোড়বান্দা ভাইকে দেখতে হবে।)
_______________________________
আফরান ড্রাইভ করছে আর চিন্তা করছে। নিজেই নিজেকে দোষারোপ করছে নূরকে কষ্ট দেওয়ার জন্য। নূরের সেই অশ্রু মাখা ছলছল দৃষ্টি তার বুকে তীরের মতো ছুবছে। রাগে এক হাত দিয়ে নিজের চুল টানছে অন্য হাত দিয়ে ড্রাইভ করছে। অবশেষে পৌঁছে গেল গন্তব্যে। গাড়ি থেকে নেমে দেখে গেইটে লিখা শান্তি অনাথ আশ্রম। আফরান ভাবছে নূর হয়তো আপসেট হয়ে কোন এক কোণায় বসে আছে। সেও মর্মাহত হয়ে ভেতরে গেল। উরিম্মা গিয়ে তো সে চরম অবাক। মুখ খুলে হা হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। নূর হেসে হেসে তাদের সাথে কানামাছি খেলছে। তার চোখ বাঁধা আশেপাশে অনেকগুলো ছোট বাচ্চারা ঘুরছে। নূর তাদের ধরার চেষ্টা করছে। ধরতে না পেরে ঠোঁট উল্টিয়ে কোমরে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে আবারও ধরার চেষ্টা করছে।
আফরানঃঃ- আসলেই এই মেয়েকে বোঝা মুশকিল। কখন কি করে হয়তো সে নিজেও জানে না। (আনমনে তার দিকে তাকিয়ে নিজেই মুচকি হাসছে। নূরকে দেখে ভীষণ হাসি খুশি লাগছে।) কে বলবে এই মেয়ে একটু আগে নাক টেনে কাঁদছিল।
আফরান নূরের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। নূর পা মচকে পড়ে যেতে আফরান ধরে ফেলে। নূর কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে পড়ল। চোখ বাঁধা অবস্থায় হাত দিয়ে তার পুরো শরীর পর্যবেক্ষণ করছে। কে ধরেছে তাকে।
নূরঃঃ- কোন ধামড়া রে এটা? (চোখ থেকে রুমাল খুলে দেখে আফরান তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মধ্যে দূরত্ব একেবারে নেই বললেই চলে। অনেকটা কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে। রাগে দুঃখে আফরানকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিল। রেগে কটমট করে বলল) আপনি এখানে কি করছেন? আপনাকে তো আগে কখনো এখানে দেখিনি। এখানে শুধু আমরাই আসি। কে বলল আপনাকে? (কিছুক্ষণ চিন্তা করল) ওয়েট আমার সাথে শুধু পুষ্পর দেখা হয়েছে। তার মানে সে বলল। কেন এসেছেন এখানে? আমাকে আরো কথা শোনাতে? আমার তো বিবেক নেই। বিবেক দান করতে এসেছেন বুঝি?
আফরানঃঃ- (এক হাত দিয়ে কাছে টেনে অন্য হাত মুখ চেপে ধরল) উফফ ননস্টপ খালি খিটখিট করে যাও। ভালোই নাম দিয়েছি মিস খিটখিট।
নূর যথা রীতি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। আফরান কোন ভাবে ছাড়ছেই না। নূর এবার একটু শান্ত হলো। চোখ দিয়ে ইশারা করে মুখ থেকে হাত সরাতে বলল। আফরান আলতো করে ছেড়ে দিল। মনে মনে তার চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করছে।
নূরঃঃ- (খাচ্চোর বিলাতি বক কোথাকার। কুং ফু পান্ডা কাহি কে। অসভ্য অভদ্র বেয়াদব নির্লজ্জ বেহায়া। লজ্জা শরম বলতে কি কিছু নেই। এই ছোট ছোট বাচ্চাদের সামনে লুচ্চামি করছে।)
আফরানঃঃ- মন্ত্র পড়া শেষ হলে জানিও।
তাদের কান্ড দেখে বাচ্চারা হাসছে। নূর এক ধমক দিয়ে তাদের চুপ করালো। পরক্ষণেই তারা আবার হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। তাদের মধ্যে এক পিচ্ছি বলে উঠল।
পিচ্ছিঃঃ- নূরাপু তুমি আল ভাইয়া কি বেস্ত ফেরেন? আমাল আল নিরুল মতো?
নূরঃঃ- (অবাক হয়ে আফরানের দিকে তাকাল) নো নেভার কাবি নেহি। আমি কেন উনার বেস্ট ফ্রেন্ড হতে যাব। হুহ্।
নিরুঃঃ- তোমরা তো আমার আর রনির মতো ঝগড়া কর। দেখেছ না একটু আগে কেমন ঝগড়া করল।
রনিঃঃ- ওই মিথ্যুত। আমি তখুন ঝগলা কললাম। তুই ঝগলা করছত আমাল সাতে।
নূরঃঃ- ওই পিচ্ছি পিচ্ছু একটু আগে না তোদের ঝগড়া মিটমাট করলাম। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে সব ঠিক করলি না? বলেছি না বেস্ট ফ্রেন্ডরা হাজার ঝগড়া করুক কিন্তু কখনো একে অপরকে ছেড়ে যায় না। দিন শেষে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আবার সব ঠিক করে নেই।
আফরান মুচকি হেসে তাদের কার্যকলাপ দেখছে। বাচ্চাদের সাথে নূরও যেন বাচ্চা হয়ে গেল। পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে এসব কাহিনি শুনছে।
নিরুঃঃ- তাহলে তুমিও ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে সব ঝগড়া ঠিক করে নাও। তুমি তো বল ঝগড়া করতে নেই। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ঝগড়া শেষ করে নিতে হয়। এবার তুমিও ভাইয়াকে জড়িয়ে ধর।
আফরান আর নূর দুজনেই হকচকিয়ে গেল। অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকাল। লজ্জায় নূরের গাল দুটোও লাল হয়ে গেল। শ্যাম বর্ণ হলেও লজ্জার লাল আভা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে তার চেহারায়।
রনিঃঃ- কি হলো ধল ভাইয়াকে।
নূরঃঃ- ওই পিচ্ছি চুপ কর তো।
রনি আফরানের পিছে গিয়ে তাকে ধাক্কা দিল। নিরু নূরের পিছে গিয়ে তাকে ধাক্কা দিল। তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে।
সেখানে উপস্থিত বাচ্চারা খুশিতে চিল্লিয়ে জোরে জোরে হাত তালি দিল। তাদের আওয়াজে তারা একে অপরকে ছেড়ে দিল।
রনিঃঃ- ইয়েএএ নূলাপু আল ভাইয়া আবালো বেস্ত ফেরেন হয়ে গেল।
নিরুঃঃ- এবার আর ঝগড়া কর না। কেমন? (আহ্লাদী সুরে বলল।) একসাথে তোমাদের অনেক ভালো লাগে। ভাইয়া নূরাপু তো অনেক আসে এখানে। আমাদের জন্য চকোলেট আনে আর আমাদের সাথে খেলা করে। এখন থেকে তুমিও আসবে তো?
আফরানঃঃ- (হাটু গেড়ে তার সামনে বসল। তার গাল দুটো টেনে দিল) যদি তোমার নূরাপু নিয়ে আসে তবে আসব। জিজ্ঞেস কর তোমার নূরাপুকে আমাকে আনবে কি না?
সব বাচ্চারা নূরকে ঘিরে ধরল। দুপাশ থেকে তার হাত ধরে টানছে আর বলতে লাগলো
— ও নূরাপু ভাইয়াকে আনবে তো। বল না আনবে তো। বল না নূরাপু আনবে তো।
নূর এক ঝাড়া দিয়ে বলল__
নূরঃঃ- হ্যাঁ আনব। (তারপর বাচ্চারা শান্ত হলো) (হুহ্ যত্তসব ঢং। এত আসার হলে নিজে আসতে পারে না। আমাকে কেন আনতে হবে। হুহ্।)
অনেক্ষণ তারা একসাথে খেলা করল। দুপুরের খাবার খেতে বাচ্চারা ভেতরে গেল। নূর আর আফরান তাদের খাবার বেরে দিয়ে একপাশে দাঁড়াল। বাচ্চারা খাবার খাচ্ছে নূর পরম আনন্দে তাদের দেখছে। আফরান মুচকি হেসে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। হায়… তার সেই উৎফুল্ল হাসি। যেন সব খুশি আনন্দ তার কাছে রয়েছে। আফরান আনমনে বলে উঠল।
আফরানঃঃ- জানো তোমাকে না একটা নাম দিয়েছি।
নূরঃঃ- (ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকাল) জানি মিস চাশমিশ (আফরান মাথা নেড়ে না বলল। নূর কিছুটা চিন্তা করে রাগী সুরে বলল) মিস খিটখিট। (আফরান এবারও না বলল। নূর এবার কৌতুহল হয়ে জিজ্ঞেস করল) তাহলে?
আফরানঃঃ- (মুচকি হেসে বলল) ” আনন্দিতা” ।
নূরঃঃ- (নামটা শুনে নূরের বুকের ভেতর কেমন যেন করে উঠল। হার্টবিট বেড়ে ধুকপুক করছে) কেন? আমি চশমা পড়ি তাই মিস চাশমিশ। আর… ঝগড়া করি বলে মিস খিটখিট। আনন্দিতা কেন?
আফরানঃঃ- এসবের উপরে তোমার একটা বিশেষ গুণ আছে। সেই হলো সবাইকে আনন্দ দেওয়া। যখনই যে কেউ তোমার সাথে থাকে কিংবা তোমার আশেপাশে থাকে তাদের মনে সবসময় আনন্দ থাকে। তার কারণ হলো তুমি। তুমি যখন কারো সাথে থাক তখন সে আনন্দে না হেসে পারেই না। এই বাচ্চাদের দেখ তুমি যখন তাদের সাথে ছিলে তখন তারা কতটা আনন্দে ছিল। ইনফেক্ট আমাকে দেখ। না জানি কতদিন পর সেদিন মন খুলে হেসেছিলাম। (নূরের হঠাৎ সেই অনুষ্ঠানের দিনের কথা মনে পড়ল। সেদিন প্রথম আফরানকে হাসতে দেখেছিল। আর সেদিনই তাকে এই নাম দিয়েছিল।) আর আজ দেখ কতটা আনন্দে আছি আমি। এতটা খুশি আমি কবে ছিলাম মনে নেই। আমার আনন্দের কারণ শুধু তুমি। আর তুমিও সবসময় হাসি খুশি থাক আনন্দে থাক। তাই এই নাম দিলাম। ” আনন্দিতা “।
যেভাবে বর্ণনা দিল নূরের মনের মধ্যে কেমন যেন করে উঠলো। এসব হয়তো নূর কখনো ভেবে দেখেনি কিন্তু এই কয়দিনে আফরান ঠিকই খেয়াল করেছে। আফরানের এই কথাগুলো এই চাহনি নূরের কাছে আজ অন্যরকম লাগছে। তাকে কাছে টানছে। তার কথায় হারিয়ে গেল।
.
.
.
চলবে