Ragging To Loving Part-33+34

0
683

😠 Ragging To Loving 😍
Part:: 33
Writer:: Ridhira Noor

ওয়াসিমঃঃ- সেই আমি পাঁচ কি ছয় বছর হব। ঈদে নানি বাড়ি গিয়েছি বেড়াতে। তো নাশতা দিল। আর পাকা পেঁপে খেতে দিল। অনেক্ষণ ধরে তাকিয়ে ছিলাম। তারপর বলি। আয় হায় মিষ্টি কুমড়া দিছে খেতে। তাও কাঁচা। একটু রান্না করে দিলে কি হতো। সবাই এক মিনিট অসহায়ের মতো আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। তারপর সেই কি খিলখিলানি। পেঁপে দেখলে আজও মনে পড়ে সেই ঘটনা।

রিহানঃঃ- মিষ্টি কুমড়া…… (জোরে জোরে হাসতে লাগলো)

আহিলঃঃ- প্রাইমারি স্কুলে আমাদের একজন শিক্ষিকা ছিল। স্বর্ণা ম্যাডাম। ভীষণ সুন্দরী ছিল। তো সবাই জাতীয় সংগীত গাইছিল। “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি”। আমি গাইছিলাম ” আমার স্বর্ণা ম্যাডাম আমি তোমায় ভালবাসি “।সবাই গাইছিল “চিরদিন তোমার আকাশ তোমার বাতাস আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি “। আমি গাইছিলাম ” চিরদিন তোমার লম্বা চুল আকাশে উড়ে বাতাসে উড়ে আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি। স্বর্ণা ম্যাডাম আমি তোমায় ভালবাসি”। সবার আড়ালে আমি চোখ বন্ধ করে চিল্লিয়ে গাইছিলাম। গাইতেই আছি। আশেপাশে কি হচ্ছে কোন খেয়াল নেই। হঠাৎ দেখলাম সবাই চুপ। আমি চোখ খুলে দেখি আশেপাশে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সামনে স্বর্ণা ম্যাডাম কোমরে হাত দিয়ে রাগি লুকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কান ধরে আমাকে নিয়ে গেল। আব্বু আম্মুকে বিচার দিল। আব্বু রেগে আমাকে বাসায় নিয়ে এলো। ভেবেছিলাম খুব মারবে। কিন্তু এই কি বাসায় এসেই আব্বুর সেই কি হাসি। তারপর আব্বু বলল “হ্যাঁ তোর ম্যাডাম অনেক সুন্দরী ” আম্মু গেল ক্ষেপে। সেই দিন আর আব্বুর কপালে খাবার জুটেনি।

আফরানঃঃ- ওরেএএএএ তখন স্বর্ণা ম্যাডামের তোর বয়সের ছেলে ছিল। (বলে হাসতে লাগলো। হাসির ঠেলায় সবাই কাইত হয়ে পড়ে আছে।)

রিহানঃঃ- হাই স্কুলে আমাদের প্রিন্সিপাল ছিল টাকলা। তো আমরা সবাই তাকে স্টেডিয়াম ডাকতাম। আমি যাচ্ছিলাম ওয়াশরুমে। তখন দেখি স্টেডিয়াম স্কুলে টহল দিচ্ছে। ফিরে আসার সময় দৌড়ে আসি যাতে সবাইকে বলতে পারি স্টেডিয়াম টহল দিতে আসছে। তো আমি রীতিমতো দৌড়ে আসলাম। আশেপাশে না থাকিয়ে চিল্লিয়ে বললাম স্টেডিয়াম…. ও মা সামনে তাকিয়ে দেখি স্যার অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তারপর আমি বললাম “স্যার আ… আমার বাবা বলেছে এবার বিপিএল দেখতে স্টেডিয়ামে নিয়ে যাবে। ” স্যারের রাগ কমে নি। কিন্তু আমার জানে জিগার দোস্তরা বাঁচিয়ে দিল। তারা বলল। রিহান আমাকেও নিয়ে যাস। আমাদের ফেলে যাস না। স্যার একটু গম্ভীর হয়ে চলে গেল। স্যার যাওয়ার পর পুরো ক্লাস হাসিতে মেতে উঠল।

আফরানঃঃ- আমার এখনো মনে আছে। তারপর থেকে স্টেডিয়াম শব্দটা তুই আর মুখেও আনিস নি।

নূরঃঃ- এবার আপনার পালা। (আফরানকে)

আফরানঃঃ- বর্ষার দিনে ফুটবল খেলা আহা হা অন্য রকম মজা। আমরা ফুটবল খেলছিলাম। বল ছিল আমার কাছে। আর আমি গোলের কাছাকাছি। যেই না বল গোল করতে যাব কাঁদায় পা পিছলে বলের আগে আমিই গড়িয়ে গোল নেটে ঢুকে পড়লাম। শুধু ঢুকেই পড়িনি। পড়েছি গোল কিপারের কোলে। বল মহাশয় গিয়ে পড়ল মাঠের বাইরে।

হাসতে হাসতে সবার করুণ অবস্থা।

পুষ্পঃঃ- আমরা সব বান্ধবী একসাথে স্কুল থেকে ফিরছিলাম। রাস্তায় ইটের সাথে পা লেগে আমি পড়ে যায়। আমাকে ধরতে গিয়ে আমার সাথে নূরও পড়ে যায়। রাস্তায় উপস্থিত সবাই অনেকটা ঘাবড়ে গেল আমাদের পড়ে যেতে দেখে। কিন্তু আমি আর নূর একে অপরের দিকে তাকিয়ে দিলাম এক ভেটকানি। আমাদের ভেটকানি দেখে উপস্থিত সবাইও ভেটকাই দিল। সেদিন ভীষণ লজ্জা পেয়েছিলাম। কিন্তু নূরের ভেটকানিতে আমার লজ্জা তো দূরে থাক উল্টো নির্লজ্জের মতো হেসেছিলাম।

ওয়াসিমঃঃ- এসব তোমাদের দ্বারাই সম্ভব।

সবাই হাসতে লাগলো। এবার সিমার পালা।

নূরঃঃ- দাঁড়াও দাঁড়াও। সিমারটা আমি বলি। (বলার আগেই পাগলের মতো হাসতে লাগলো। তার হাসিতে সবাই উৎসুক হয়ে জানতে চাইলো) আমরা কলেজে যাচ্ছিলাম। তখন ছিল কোরবানি ঈদের সময়। চারদিকে গরু ছাগল মহিষ এসব। আমরা হাটছিলাম পিছন থেকে চিল্লানোর আওয়াজ হচ্ছে। পিছন ফিরে দেখি একটা ইয়ায়ায়া বড় মহিষ পাগল হয়ে ছুটছে। সবাই সে কি ভৌ দৌঁড়। কেউ দৌড়াচ্ছে, কেউবা আশেপাশে দোকানে বা বাড়িতে ঢুকে পড়ছে। আমাদের সিমা আফা পথ খুঁজে না পেয়ে গেল ড্রেনে ঝাপ দিতে। মহিষটা তাকে অতিক্রম করে চলে যাওয়ায় আর ঝাপ দিল না।

পুষ্পঃঃ- বোইন থাম। সেদিন কি অবস্থা হয়েছিল সবার। আমার এখনো হাসি পাচ্ছে।

হাসতে হাসতে সবাই গড়াগড়ি খাচ্ছে। ইয়াশ ওয়াসিম তো শুয়েই পড়েছে। পেটে ধরে এপাশ ওপাশ হতে লাগলো।

সিমাঃঃ- আমারটা বললি তোর খুরাফাতি কাহিনি আমি বলি।

ওয়াসিমঃঃ- বল বল। ওরটা শুনতে এতক্ষণ অপেক্ষা করছিলাম।

সিমাঃঃ- কলেজের তৃতীয় দিন নূরকে একটা ছেলে প্রোপজ করে। (প্রোপজ কথাটা শুনে না জানি কেন আফরানের রাগ হলো) কিন্তু নূর না করে দেয়। কিন্তু তাও ছেলেটার বন্ধুগুলো নূরকে দেখলে ভাবি ভাবি করত। জানা নেই শোনা নেই সোজা ভাবি? এবার নূর গেল ক্ষেপে। বলতে লাগলো “তোদের কোন জন্মের ভাবি লাগি রে”। তারা বলল “কেন শাহেদ আমাদের বন্ধু সেই হিসেবে তুমি আমাদের ভাবি”। নূর শাহেদের চুল মুটি ধরে সামনে এনে বলল ” কত মোহর দিয়ে বিয়ে করছস যে তোর বন্ধু আমাকে ভাবি ডাকছে। মোহর তো দেস নাই। এবার মোহর দে নইলে তোর হাড্ডি ভেঙে গুড়া করে ফেলব”। শাহেদ বলতে লাগলো “আরে বোন কি বল। তুমি তো আমার বোন লাগো। মায়ের পেটের আপন বোন” নূর আরও ক্ষেপে গেল “ওই হারামি এক্কেরে থাপরাইয়া মুতাই দিমু” শাহেদ সহ ওর সব বন্ধুকে একশ বার কান ধরে উঠবস করিয়েছে পুরো কলেজের সামনে। সেই থেকে শুরু হয় কলেজে আমাদের ধাপট।

আহিলঃঃ- বোন তুমি আসলেই একটা চিজ।

নূরঃঃ- হিহিহি।

আরিফঃঃ- সত্যি বলছি আমার মনে হয় না আমি সারাজীবনেও এতটা হেসেছি। হাসতে হাসতে পেট থেকে শুরু করে সারা শরীর ব্যাথা হয়ে গিয়েছে। তোমার এই আইডিয়ার জন্য জীবনের সেই কিছু স্মৃতি আবারও তর তাজা হয়ে উঠল। থ্যাংক ইউ। থ্যাংক ইউ সো মাচ।

নূরঃঃ- মোস্ট ওয়েলকাম।

সবাই মিলে গল্প করছে। আকাশে মেঘ জমাট বাঁধছে। সূর্য মেঘে ঢেকে যাচ্ছে সেই মেঘের আড়ালে । তারা যেই রুমে বসে ছিল তার বাইরের দেয়াল ছিল কাঁচের। যার ফলে বাইরের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। গার্ডেনে গাছের পাতা আর ফুলগুলো বাতাসে হেলছে। নূর এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে সেদিকে।

আলিফাঃঃ- আফরান ভাইয়া আপনি তো খুব ভালো গান গাইতে পারেন। আমাদের একটা গান শোনান।

রিহানঃঃ- বুদ্ধিটা খারাপ না। ওয়েট আমি গিটার নিয়ে আসছি।

রিহান গিটার এনে আফরানের হাতে দিল। গিটারের স্বরে নূরের ধ্যান কাটলো।


মন বলেছে তোর সাথে যাবো
তোকে নিয়ে চল আজকে হারাবো
মন বলেছে তোর সাথে যাবো
তোকে নিয়ে চল আজকে হারাবো
সোহাগের হাওয়ায় মেঘদের ডানায়
এই মন বেখেয়ালে অন্তরালে
স্বপ্ন রেখে যায়
জোনাকির গানে আদরের টানে
এই রং ছুয়ে থাকে ইচ্ছে আঁকে
ওই সুখী তারায়
মন বলেছে তোর সাথে যাবো
তোকে নিয়ে চল আজকে হারাবো হুমম…
ও ও ও ও ও……


গান শেষে সবাই আফরানের তারিফ করল।গান শেষ হতে না হতে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। হঠাৎ মনে হলো স্পিকারে গান বাজছে। সিমা পাশে তাকিয়ে দেখে নূর নেই।

সিমাঃঃ- নূর আবার শুরু করল।

আফরানঃঃ- কি শুরু করল?

আমরিনঃঃ- নাচ। বৃষ্টি পড়লেই ওকে আর থামানো যায় না। গান ছেড়ে নাচতে শুরু করে।

আফরানঃঃ- নাচ? আর নূর? হাউ ফানি। (বলে হাসতে লাগলো) দেখেছি ওর নাচ। খালি ব্যাঙের মতো লাফায়।

পুষ্পঃঃ- কি বলেন ভাইয়া। স্কুল থেকে শুরু করে কলেজ পর্যন্ত প্রত্যেক নাচ প্রতিযোগিতায় নূর ফার্স্ট হয়েছে। আপনি হয়তো সেদিন প্রোগ্রামের নাচ দেখেই মন্তব্য করেছেন। সেদিন সে একটু নার্ভাস ছিল। কারণ সে কোন প্রস্তুতি নেই নি। সব হঠাৎ করেই হলো তাই।

আফরান সহ সবাই অবাক।

ওয়াসিমঃঃ- রিয়েলি! নূর নাচতে পারে?

আলিফাঃঃ- বাইরে গিয়ে দেখুন।

সবাই গেল গার্ডেনে। খুব জোরে লাউড স্পিকারে গান চলছে। নূরের কোন দিকে খেয়াল নেই। হাত দুপাশে ছড়িয়ে মুখ উপরের দিকে চোখ বন্ধ করে আছে। বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটা তার মুখে পড়ছে। সেও পরম আনন্দে উপভোগ করছে বৃষ্টির বিলাস৷
.
.
.
“””””saawan mein morni ban ke main to cham cham nachun
o main to cham cham nachun””””…… (2)
(((গানের তালে তালে নাচতে শুরু করল)))
“””””sanwariya teri yaad mein”””””…..(2)
teri chiththiyan bachun…..
ho ooo……. (((চিঠি তো নাই তাই গাছের পাতাই উড়িয়ে দিল)))

“”””saawan_________chiththiya bachun””””

গানের তালে এতই হারিয়ে গিয়েছে আশেপাশে কোন খেয়াল নেই।
<.............................................................>
Teeron si chubhti hain
saawan ki sab ye boondein
chithi ka har akshar
meri udata hai neendein
ik to yeh tanhayi dhaye hai sitam
uspe yun saawan mein jalte hain hum
((((পাশে দেখে সিমারা দাঁড়িয়ে দেখতে। দুই হাতে সিমা আর পুষ্পকে টেনে নিল। তারাও বৃষ্টিতে ভিজছে। তাদের দেখে বাকিরা লোভ সামলাতে পারল না তারাও গেল। সব মেয়েরা বৃষ্টিতে ভিজে নাচছে। ছেলেরা তাদের দেখছে।))))

“”””saawan_________chiththiya bachun””””

নূর দেখল তার বান্ধবীরা সবাই ভিজছে। কিন্তু আফরান আর সব ছেলেরা দূর থেকে দেখছে। নূর গেল আফরানের সামনে।

aao aao jaanam pyar ka hai yeh mousam
matwali baarish mein aao jara bheege hum
(((( আফরানকে ইশারায় আসতে বলল। কিন্তু সে বারণ করে দেয়। তাই পিছনে গিয়ে কোমর দিয়ে ধাক্কা দেয়। আফরান ছিটকে বাইরে পড়ে। আর বৃষ্টির পানিতে প্রায় ভিজে যায়।))))

ek sapna lagta hai aana tera,
aaoge kehta hai yeh dil mera

((((জ্বিব বের করে ভেঙচি কাটলো। আফরান রাগী দৃষ্টিতে তাকাল। নূর এক চোখ টিপি দিল। আফরান ফিক করে হেসে দেয়। নূর সব ছেলেদেরও ধাক্কা দিয়ে বের করে))))

saawan mein morni ban ke main to cham cham nachun
o main to cham cham nachun
sanwariya teri yaad mein
sanwariya teri yaad mein
teri chiththiyan bachun…..ho ooo…….
saawan mein morni ban ke main to cham cham nachun
o main to cham cham nachun…….!!!
.
.
.
মেয়েরা নাচছে আর ছেলেরা শুধু তাদের দেখছে। আফরান দূর থেকে অপলক নয়নে নূরকে নাচতে দেখছিল। কিন্তু এক কাছ থেকে দেখে চোখ ফিরাতেই পারছে না। বৃষ্টির বিন্দু বিন্দু জল তার চেহারায় হীরার মতো চকচক করছে। মুখে সে তৃপ্তময় হাসি। যেন বৃষ্টির জল নয় সুখ তাকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। নূর হাত ছড়িয়ে ঘুরছে। গান শেষ হওয়ায় সেও থেমে যায়। মেঘ গর্জে উঠাই নূর কেঁপে উঠল। নূরের সামনে মেহের দাঁড়িয়ে ছিল। মেহেরের ঠিক পিছে আফরান দাঁড়িয়ে ছিল। আবারও মেঘ গর্জে উঠাই নূর দৌড়ে যায় মেহেরকে জড়িয়ে ধরতে। ইয়াশ ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মেহেরকে হেচকা টান দেয়। নূর চোখ বুজে আফরানকে জড়িয়ে ধরে। আফরান তাল সামলাতে না পেরে সেও নূরকে আচমকা জড়িয়ে ধরল।

নূরঃঃ- মেহের আমাকে বাঁচা। (চোখ বন্ধ থাকায় কিছু না দেখেই বলল।) আহহহহ।

ইয়াশঃঃ- আরে মেহের কিভাবে বাঁচাবে? যাকে জড়িয়ে ধরেছ তাকে বল বাঁচাতে। (হেসে মেহের দিকে তাকিয়ে দেখে মেহের তার বুকের উপর। হেচকা টান দেওয়ায় মেহের ইয়াশের বুকে এসে পড়ে। মেহের অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। ইয়াশের চোখে চোখ পড়তেই দুজনে একটু সরে দাঁড়াল। এত কাছাকাছি হওয়ায় দুজনের খুব লজ্জা পাচ্ছে।)

ইয়াশের কথায় নূরের ধ্যান ভাঙল। একইভাবে জড়িয়ে ধরে শুধু মাথা উঠিয়ে দেখল। যাকে জড়িয়ে ধরেছে সে আফরান। তড়িঘড়ি পিছনে সরে আসতে কাঁদায় পিছলে যায়। আফরান নূরের হাত ধরে টান দিল। ফলে নূর আবারও আফরানের বুকের ঠিক বাপাশে গিয়ে পড়ল। যার কারণে আফরানের হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দন স্পষ্টভাবে শুনতে পাচ্ছে। মেঘ আবারও গর্জে উঠল। নূর শক্তভাবে আফরানের শার্ট আঁকড়ে ধরল। সে বুঝতে পারল নূর ভয় পাচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সে বলল।

আফরানঃঃ- সবাই ভেতরে চল। নাহয় ঠান্ডা লাগবে।

আফরানের কথায় নূরের হুশ ফিরল। লজ্জা পেয়ে সে আফরানকে ছেড়ে এক দৌড়ে ভেতরে চলে গেল। সবাই খুব কষ্টে তাদের হাসি চেপে রেখে মুখ টিপে টিপে হাসছে। আফরানও ভেতরে গেল। সে যাওয়ার সাথে সাথে সবাই হেসে দিল। তারাও ভেতরে গেল। ভিজে চুপসে আছে সবাই।

রিহানঃঃ- আরে আমরা তো ম্যানেজ করে নিব। কারণ এখানে আমার আর আফরানের এক্সট্রা জামা আছে। সব ছেলেরা পরে নিব। কিন্তু তোমরা কি পরবে। মেয়েদের জামা তো নেই।

নূরঃঃ- আরে আছে তো। ওই দিন না আপনি এত্তগুলা জামা এনেছেন। (আফরানকে বলল)

সবাই অবাক হয়ে নূরের দিকে তাকাল। নূর একপাশে জ্বিব বের করে কামড় দিল।

নূরঃঃ- ও আসলে ওই দিন যখন আফরানকে অ্যাসিস্ট করছিলাম তখন সুইমিংপুলে পড়ে ভিজে যায়। তখন আফরান এক গাদা জামা নিয়ে আসে। সেগুলো আছে…… হয়তো। (লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল)

আফরানঃঃ- (এই মেয়ে বারবার আমাকে লজ্জায় ফেলে।) আমার রুমেই আছে। ওয়ার্ড্রবে।

নূর তার সব বান্ধবীদের নিয়ে গেল। এদিকে ছেলেরা মনে হয় আকাশ থেকে পড়লো। হা হয়ে তাকিয়ে আছে আফরানের দিকে। আহিল গিয়ে আফরানের কপালে হাত দিয়ে চেক করতে লাগলো।

আহিলঃঃ- ভাই বৃষ্টিতে ভিজে তোর জ্বর টর হয়নি তো? তুই ঠিক আছিস? (আফরান বিরক্ত হয়ে তাকাল) না মানে ইদানিং দেখছি তোর মধ্যে অনেক পরিবর্তন হচ্ছে। না মানে তুই আমাদের আজ পর্যন্ত তোর ওয়ার্ড্রবে হাত দিতে দিস নাই। সেখানে নূর? কুচ তো গাড়বাড় হে দায়া।

আফরানঃঃ- (আসলেই তো!) প্লিজ মাথা খাস না। সর সামনে থেকে।

আফরান চলে গেল অন্য রুমে।

আরিফঃঃ- পরিবর্তনটা কিন্তুই ভালোই হচ্ছে। হয়তো আবারও আফরান সেই আগের মতো হয়ে যাবে।

সবাই সেদিন অনেক্ষণ আড্ডা দিল। তারপর বিকেলে যে যার বাড়ি পৌঁছে গেল।

.
.
.

চলবে

😠 Ragging To Loving 😍
Part:: 34
Writer:: Ridhira Noor

আফরানঃঃ- সত্যিই সময় আর স্রোত থেমে থাকে না। ছুটে চলে নিজ গতিতে। মনে হচ্ছে যেন কালই তো ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিলাম। এখন দেখ কিছু দিন পরেই নাকি আমাদের ফেয়ারওয়েল। হাজারো স্মৃতি জুড়ে আছে আমাদের।

আরিফঃঃ- সত্যি ইয়ার। কিভাবে সময় পেরিয়ে গেল বুঝতেই পারিনি। ভার্সিটি লাইফ শেষে সবাই আলাদা হয়ে যাব। নিজ নিজ ক্যারিয়ার নিয়ে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ব।

রিহানঃঃ- কিন্তু আমাদের বন্ধুত্ব কখনো শেষ হবে না। প্রত্যেক মাসেই অন্তত একদিন সব বন্ধুরা একত্রিত হব। যে যতই ব্যস্ত হোক না কেন আসতে হবেই। যে আসবে না তাকে তুলে আনব।

আহিলঃঃ- তুই আফরান আর আরিফ ইয়াশ তো একসাথে থাকবি। আলাদা হয়ে যাব আমি আর ওয়াসিম।

আফরানঃঃ- কিসের আলাদা? থাপ্পড় দিব ধরে। আমরা বন্ধুরা ছোট বেলা থেকেই একসাথে। কখনো কি আলাদা হয়েছি? হ্যাঁ হয়তো আগের মতো আড্ডা দেওয়া হবে না। কিন্তু মাঝে মধ্যে তো সবাই মিলিত হতে পারি। স্মৃতি জুড়ে থাকবে একসাথে কাটানো দিনগুলো।

সবাই একসাথে হাগ করল।

ইয়াশঃঃ- খুব মিস করব সবাইকে।

পলক ফেলতেই সময় কেটে গেল। সময়ের পরিবর্তন হলেও পরিবর্তন হয়নি তাদের সম্পর্কের। আগামী সপ্তাহে আফরানদের ফেয়ারওয়েল পার্টি। ভার্সিটির বিশেষত্ব হলো প্রতি বছর ভিন্ন ভিন্ন থীম পার্টি আয়োজন করা হয়। হেলোয়িন থীম (ভূতের সাজ), ফ্যান্টাসি থীম, মাস্ক থীম। প্রতি বছর ভিন্ন ভিন্ন থীম পার্টি হয়। আর এবার হবে বলিউড কাপল থীম। অর্থাৎ বলিউডের আইকনিক কাপল সাজে পার্টিতে অংশগ্রহণ করতে হবে। (সেটা সামনে বুঝতে পারবেন)

পার্টির থীম বুঝিয়ে দিতে সবাইকে একত্রিত করা হলো। এনাউন্সমেন্ট করার জন্য নিহাল স্যার এগিয়ে এলো।

স্যারঃঃ- সবাই জানেন এবার আমাদের ফেয়ারওয়েল পার্টির থীম হলো বলিউড। কিন্তু এটা হবে কাপল থীম। আমি বুঝতে পারছি আপনাদের মনে অনেক প্রশ্ন ঘুরছে। নিয়মটা আমি বলছি। (তিনটা বড় কাঁচের বাক্স। একটার মধ্যে অনেক গুলো গোলাপি রঙের চিটস। আরেকটার মধ্যে আকাশি রঙের চিটস। অন্যটার মধ্যে হলুদ রঙের চিটস) আমার কাছে এই তিনটা বাক্স আছে। হলুদ বাক্সের মধ্যে কিছু বলিউড ফিল্মের নাম আছে। আর বাকি দুই বাক্সে সেই ফিল্মের কাপলের নাম। গোলাপিটাতে অভিনেত্রীর আর আকাশিটাতে অভিনেতার নাম। (হলুদ একটা চিটস নিল) আমি এই একটা ফিল্মের নামের চিটস নিলাম। ফিল্ম “দেবদাস” গোলাপি বাক্সে সেই ফিল্মের অভিনেত্রী “পারো” অর্থাৎ “ঐশ্বর্য রায়” আর আকাশি বাক্সে অভিনেতা “দেব” অর্থাৎ “শাহ রুক খান” এর নাম আছে। মেয়েরা গোলাপি বাক্সের মধ্য থেকে একটি করে চিটস নিবে আর ছেলেরা আকাশি বাক্সের মধ্য থেকে একটি করে চিটস নিবে। কিন্তু কার চিটসে কোন অভিনেতা অভিনেত্রীর নাম আছে তা বলা যাবে না। এটা একটা সারপ্রাইজ থীম। বলে দিলে কিন্তু পার্টির মজা থাকবে না। পার্টির মেইন পার্ট হলো হলুদ চিটস থেকে এক এক করে প্রত্যেক ফিল্মের নাম বলা হবে। আর সেই ফিল্মের অভিনেতা অভিনেত্রীর নাম যাদের কাছে থাকবে তাদের সেই ফিল্মের গানে পারফর্ম করতে হবে। কোন গানে পারফর্ম করবে তার চিটসের নিচে লেখা থাকবে। তাই যারা সেই অভিনেতা অভিনেত্রীর নাম পাবে সেই অনুযায়ী সেজে আসতে হবে। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

সবাই অনেক কৌতুহল এই পার্টি নিয়ে। একে একে সব মেয়েরা গোলাপি চিটস নিল আর ছেলেরা আকাশি চিটস নিল। হলুদ চিটস স্যার নিয়ে গেল।

মেহেরঃঃ- আয়ায়া (খুশিতে লাফিয়ে উঠল) বলিউড থীম। ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে থীমটা।

আমরিনঃঃ- আমার তো আর তর সইছে না। ইচ্ছে করছে আজকেই পার্টিটা করে ফেলি। তোরটা কোন অভিনেত্রী রে?

নূরঃঃ- ওই মজা সব মাটি করবি নাকি? বলে দিলে আর মজা হবে না। সিক্রেট রাখ।

আমরিনঃঃ- ওকে। আই এম রিয়েলি এক্সাইটেড ফর দ্যা পার্টি।

আহিলঃঃ- হাই গাইজ। আই হেভ এন আইডিয়া।

আমরিনঃঃ- কি আইডিয়া?

আহিলঃঃ- কেননা আমরা মিলে একে অপরের চিটস দেখি আর নিজেদের কাপল অনুযায়ী চিটস এক্সচেঞ্জ করে নেই।

নূরঃঃ- নো নেভার কাবি নেহি। রুলস যা আছে তাই হবে। কেউ যদি চিটিং কর আমি কিন্তু পার্টিসিপ্যাট করব না।

আহিলঃঃ- ওকে মেরি বেহনা। নো চিটিং।

নূরঃঃ- ভেরি গুড। এবার সবাই যে যার থীম অনুযায়ী কস্টিউম যোগাড় কর। আমার…. এই না না বলব না। জিপ লক। (মুখে চেইন লাগানোর ভাব নিল)

তার কান্ড দেখে সবাই হেসে দিল।

পার্টির আগের দিন______________________

সিমাঃঃ- ওই ফকিন্নিস। সবার কস্টিউম তো রেডি। বাট আই হেভ এ ভেরি ভেরি গভীর প্রশ্ন।

নূরঃঃ- ওই গভীরে ডুবে মরে যা।

সিমাঃঃ- চুপ কর। আমার প্রশ্ন হলো থীম তো সিক্রেট। কিন্তু আমি ভাবছি আমাদের পার্টনার যদি অন্য কারো সাথে এক্সচেঞ্জ হয়ে যায় আর তাদের ফিল্মের গান যদি রোমান্টিক হয়? ওয়াসিম যদি অন্য কারো সাথে রোমেন্স করে ওর ভর্তা বানাবো।

আমরিনঃঃ- আমি আহিলের চাটনি বানানো।

পুষ্পঃঃ- আমি রিহানের জুস বানাবো।

আলিফাঃঃ- আমরা সেগুলো চেটে চেটে খাব।

মেহের নূর হেসে দিল।

_______________________________

অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। চলে এলো ফেয়ারওয়েল পার্টির দিন। সবাই নিজ নিজ চিটস অনুযায়ী গেটআপ নিয়ে এলো। পার্টি ভার্সিটির হল রুমে আয়োজন করা হলো। হলটি বিশাল বড়। সব দিকে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। পুরো হল আবছা অন্ধকার। শুধু বিভিন্ন রঙের ডিস্কো লাইট জ্বালানো হয়েছে। সবাইকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। একেকটাকে দেখে বলিউড নায়ক নায়িকার মতো লাগছে। সবাই নিজ নিজ চরিত্র অনুযায়ী সেজে এলো।

আহিল রাজকুমারের মতো শেরওয়ানি পরল। মাথায় পাগড়ি পরল। গলায় পুতির মালা। ওয়াসিম ধূসর নীল রঙের ঢিলা শার্ট আর প্যান্ট পরল। রিহান ধূসর সবুজ রঙের কোট আর কালো প্যান্ট পরল। আরিফ সাদা শার্ট, কালো কোট আর কালো প্যান্ট পরল। মাথায় কালো টুপি, মুখে একটুখানি মুছ । হাতে কালো ছাতা। ইয়াশ সাদা শার্ট, সাদা কোট আর সাদা প্যান্ট পরল। আফরান কালো প্যান্ট, কালো শার্টের সাথে হাত কাটা কোট পরা। তার উপর কালো লাল সাদা রঙ মিশ্রিত চেক কোট পরল।

আহিলঃঃ- এটা কি রে ইয়ার। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। সবারটা কত সুন্দর। আমারটা এমন কেন?

ওয়াসিমঃঃ- ওরে আমার রাজকুমার রে। জোস লাগছে তোকে।

আহিলঃঃ- চুপ কর। আমার অস্বস্তি লাগছে। উফফ এই….. (চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে প্রবেশ দুয়ারে। চোখ তো নয় যেন রসগোল্লা। দেখে মনে হচ্ছে এক্ষুণি গড়িয়ে পড়বে)

আহিলকে এমন দেখে বাকিরাও সেই দিকে তাকাল। তারাও হা হয়ে তাকিয়ে আছে। কারণ এন্ট্রি নিল আমাদের ডিনচেক গার্লস।

আমরিন পাহাড়ি মেয়েদের মতো সেজেছে। সিমা গোল আনারকলি পরল মাথায় আনারকলির টুপির মতো পরেছে। মেহের নীল শাড়ি পরেছে। দেখতে একদম মাধুরির মতো লাগছে। আলিফা কালো পাড়ের সাদা শাড়ি পরল। একপাশে লম্বা বেনি করা। পুষ্প বিভিন্ন রঙের সুতার কাজ করা লং স্কার্ট পরল। একপাশে কোপা করে চুল ছাড়া।

আহিল ওয়াসিম রিহান আরিফ ইয়াশ হা হয়ে তাকিয়ে আছে। তারা যেন অন্য রূপ দেখছে ওদের। সবাইকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। একেকটা যেন বলিউড হিরোইন। কিন্তু আফরানের চোখ খুঁজছে অন্য কাউকে। জ্বি নূরকেই খুঁজছে।

রিহানঃঃ- পুষ্পকে “শোলে” ফিল্মের বসন্তির মতো লাগছে। (একবার নিজের দিকে তাকাল। তারপর ওয়াসিমের দিকে তাকাল। কারণ ওয়াসিমের সাজ বীরুর।)

ওয়াসিমঃঃ- সিমাকে আনারকলির মতো লাগছে। (আহিলের দিকে তাকাল। কারণ তার সাজ সেলিমের)

আহিলঃঃ- আমরিনকে দেখ শর্মিলা ঠাকুরের মতো লাগছে না। “কাশ্মীর কি কালি” মুভির। (ওয়াসিমের দিকে তাকিয়ে দেখে তার সাজ শাম্মি কপুরের মতো)

তিনজন একে অপরের দিকে তাকাল। তিনজনই এক দৌড়ে ওয়াশরুমের দিকে গেল। আরিফ ইয়াশ আফরান শুধু অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। পাঁচ মিনিট পর এলো তারা। কিন্তু এই কি সবার গেটআপ চেঞ্জ হয়ে গেল। ওয়াসিম হলো সেলিম, আহিল হলো শাম্মি কপুর, রিহান হলো ধর্মেন্দ্র।

আহিলঃঃ- ভাগ্যিস তারা দেখার আগেই চেঞ্জ করে ফেললাম। নূর যদি জানতে পারত তাহলে আমাদের মজাই মাটি হয়ে যেত।

রিহানঃঃ- হ্যাঁ! আর আমাদের একে অন্যের গার্লফ্রেন্ডের সাথে পারফর্ম করতে হতো।

মেহেরঃঃ- ও এম জি। হোয়াট কোইন্সিডেন্ড। সব কাপলদের দেখি একই আসলো। পুষ্প বাসান্তি আর রিহান বীরু। সিমা আনারকলি আর ওয়াসিম সেলিম। আমরিন শর্মিলা ঠাকুর আর আহিল শাম্মি কপুর।

পুষ্পঃঃ- তুই মাধুরি আর ইয়াশ সালমান খান। আলিফা নার্গিস আর আরিফ রাজ কপুর।

সবাই আসলেই অবাক। আলিফা তো সেই লেভের খুশি। কারণ সে আরিফের সাথে পারফর্ম করবে। সবাই নিজেদের মধ্যেই এতই হারিয়ে গিয়েছে যে নূরের খেয়াল নেই। আফরান বারবার নূরকেই খুঁজছে কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারছে না যে নূর কোথায়? তখনই স্টেজে এনাউন্সমেন্ট করার জন্য নিহাল স্যার এলো। তাকে দেখে “মোহাব্বাতে” মুভির অমিতাভ বচ্চনের মতো লাগছে।

স্যারঃঃ- সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আমাদের ফাইনাল ইয়ার স্টুডেন্টদের আজ বিদায় অনুষ্ঠান। সে উপলক্ষে আজ এই ফেয়ারওয়েল পার্টির আয়োজন। সবাই নিজ নিজ চরিত্র অনুযায়ী সেজে এনেছেন। সবাইকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। এবার হয়তো বুঝতে পেরেছেন কার চরিত্র কি? তো শুরু করা যাক আজকের আয়োজন। (স্যার হলুদ চিটসের বাক্সটা হাতে নিল) এবার আমি একটা একটা করে মুভির নাম বলব। সেই মুভির চরিত্র যারা পেয়েছেন তারা স্টেজে এসে পারফর্ম করবেন। (একটা হলুদ চিটস নিল) আমাদের প্রথম মুভি হলো “Mr. India”. এই মুভির চরিত্র শ্রীদেবী আর অনিল কপুর।

স্টেজে এলো পান্না। শ্রীদেবীর হাওয়া হাওয়াই সাজে। তার সাথে একজন ছেলে মি. ইন্ডিয়া সাজে এলো।

♪♪♪ ওই ওই ওই ওই
লাকি চিকি লাকি চিকি চিকি লাকি চুম…(২)
হো মে খোয়াবো কি শেহজাদী
মে হু হার দিলপে চায়ি
বাদাল হে মেরি ঝুলফে
বিজলী মেরি আংড়ায়ি
বিজলী গিরানে মে হু আয়ি…. (২)
কেহতে মুঝকো হাওয়া হাওয়াই ♪♪♪

সবাই হাত তালি দিল। পান্না অনেক সুন্দরী। তার এই পারফর্মেন্স দেখে অনেকে ফিদা হয়ে গেল। একে একে সবার পারফর্ম হতে লাগলো। সবাই বেশ ভালো পারফর্ম করেছে।

স্যারঃঃ- “Shree 420” ফিল্মের চরিত্র রাজ কপুর এবং নার্গিস।

আরিফ একটা গোলাপ নিয়ে আলিফার সামনে হাটু গেড়ে বসল। আলিফা গোলাপটা নিতে গিয়েও থেমে যায়। অন্য পাশ ফিরে যেতে নিলে আরিফ উঠে সামনে এসে দাঁড়ায়। তখন উপর থেকে আইস ফোম পড়তে লাগলো। আরিফ ছাতা খুলে আলিফা মাথার উপর ধরল।

♪♪♪ আরিফ—- পিয়ার হুয়া ইখরার হুয়া হে
পিয়ার সে ফির কিয়ু ডারতা হে দিল….(২)

আলিফা—- কেহতা হে দিল রাস্তা মুশকিল
মালুম নেহি হে কাহা মাঞ্জিল…… (২) ♪♪♪

(((বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিয়েন)))
গানের মাঝে আমাদের ক্রাশখোর আলু দ্যা আলিফা তার মনের কথা বলল। কিন্তু আমাদের আবুইল্লা আরিফ ভাই বুঝল না।

স্যারঃঃ- “Kashmir ki kali” চরিত্র শাম্মি কপুর এবং শর্মিলা ঠাকুর।

স্টেজে উঠে আমরিন হেটে যাচ্ছিল অপর পাশ থেকে আহিল আসছিল। দুজনেই ধাক্কা খায়। আমরিম পড়ে যেতে আহিল ধরে ফেলে। তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। আমরিন সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। আহিল তার চারপাশে ঘুরে দেখল।

♪♪♪ ইয়ে চান্দ সা রোশান চেহরা
জুলফো কা রাং সুনেহরা
ইয়ে ঝিল সি নীলি আঁখে
কই রাজ হে ইনমে গেহরা
তারিফ কারু কিয়া উসকি জিসনে তুমহে বানায়া ♪♪♪

দুজনে মিলে নাচ শেষ করল। আহিল গানটা আমরিনকে উৎসর্গ করে গাইলো। আমরিন তো লজ্জায় পুরো লাল গোলাপি হয়ে গেল।

স্যারঃঃ- “Hum apke hai kon” মাধুরি এবং সালমান খান।

ইয়াশ পার্টির সব মূহুর্ত ক্যামেরায় তুলছিল। যার কারণে এনাউন্সমেন্ট শুনে নি। সেখানে সব মেয়েরা তার কাছে এলো ছবি তুলতে।

স্টেজে উঠে মেহের গুলতি দিয়ে একটা গাঁদাফুল মারল। সেটা গিয়ে পড়ল ইয়াশের মুখে। ইয়াশ তাকিয়ে দেখে মেহের স্টেজ থেকে হাসছে। ইয়াশ দৌড়ে এসে এক লাফে স্টেজে উঠে গেল। কোমরে হাত দিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মেহের ইয়াশের পাশে গিয়ে কোমরে ধাক্কা দিতে ইয়াশ পড়ে যায়।

♪♪♪ দিদি তেরা দেভার দিওয়ানা …….
………. হায় রাম কুড়িও কো ডালে দানা ♪♪♪

নাচের মাধ্যমে দুজনেই একটু আধটু দুষ্টুমি খুনসুটি করল। একে অপরের অনেক ভালো বন্ধু হওয়ায় অনায়াসে দুষ্টুমি করল।

স্যারঃঃ- “Sholay” হেমা মালিনী এবং ধর্মেন্দ্র।

রিহানের হাত স্টেজের সাথে বাঁধা। যেমনটা বীরুর বাঁধা ছিল ফিল্মে যখন গাব্বার বীরুকে কিডন্যাপ করে৷ পুষ্প অভার এক্টিং করে দৌড়ে স্টেজে উঠল।

রিহানঃঃ- বাসান্তি ইন কুত্তো কে সামনে মাত নাচ না। (স্টেজে পাশে নিচে দাঁড়িয়ে থাকা তার বন্ধুদের ইয়াশারা করে বলল।)

ওয়াসিমঃঃ- হারামি আমাদের কুত্তা বলছে। দাঁড়া তুই আয় নিচে। এই কুত্তা গুলো যদি কামড়িয়ে তোরে ১৪ টা ইঞ্জেকশন না লাগায় দেখবি।

পুষ্প তার জামা ধরে মুচড়া মুচড়ি করছে। আর সেখানে উপস্থিত সবাই চিল্লাচ্ছে। “নাচ বাসান্তি নাচ,,, নাচ বাসান্তি নাচ ”

রিহানঃঃ- বাসান্তি মাত নাচ না…..

পুষ্পঃঃ- (দৌড়ে রিহানের কাছে গেল) ওওওও জাব থাক হে জান জানে জাহা……..
মে ওয়েছে ভি নেহি নাচনে ওয়ালি। স্টেজে উঠতে গিয়ে উস্টা খাইছি। পায়ে ব্যাথা হুহ্। (ভেঙচি কেটে চলে গেল)

রিহানঃঃ- (তেমন বাঁধা অবস্থায় চিল্লাচ্ছে) বাসান্তিইই ও মেরি বাসান্তি আরে নেচে যা। নইলে গাব্বার আমাকে ছাড়বে না।

সবার হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ।

আহিলঃঃ- ভাগ্যিস শোলে ফিল্মে বাসান্তি পুষ্প ছিল না। নইলে বীরুকে বাঁচানো যেত না।

স্যারঃঃ- “Mughal E Azam” চরিত্র দিলিপ কুমার এবং মধুবালা।

স্টেজে ওয়াসিম একটি সিংহাসনে বসে আছে। সিমা মাঝ বরাবর দাঁড়াল। মিউজিক শুরু করল। ♪♪♪ পিয়ার কিয়া তো ডারনা কিয়া…..

সিমাঃঃ- স্টটটপপপপ। ও ডিজে ওয়ালে বাবু কি গান দিচ্ছেন। আরে এটা সেই মোঘল আমলের যুগ না। যে আনারকলি সেলিমকে না পেলে লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদবে। এটা আধুনিক যুগ। এখানে আনারকলি সেলিমকে না পেলে তার গলি ছেড়ে ডিস্কো যায়। আর ব্রেকআপ সং এ নাচে। তাই আধুনিক যুগের গান দেন।

তার কথা শুনে সবাই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। ডিজে গান দিল।

♪♪♪ আরে ছোড় ছাড়কে আপনে সেলিম কি গালি………..
ওই হই আরে ছোড় ছাড়কে আপনে সেলিম কি গালি
আনারকলি ডিস্কো চালি…….
(((সিমা স্টেজে থেকে নামতে গেলে ওয়াসিম দৌড়ে গিয়ে পিছন থেকে হাত ধরে টেনে নিয়ে এলো)))
ওয়াসিম—– দেখকে তুজকো দিল মে মাচি হে খালবালি আনারকলি ডিস্কো চালি….
সিমা—- চালি রে চালি ডিস্কো চালি আনারকলি ডিস্কো চালি চালি রে চালি…..
(((সিমা বারবার নেমে যেতে চাইছে ওয়াসিম টেনে ধরে রাখছে। গান শেষে ওয়াসিম সিমাকে টেনে কোলে নিয়ে নিল।)))

ওয়াসিমঃঃ- আমার এই আনারকলি ডিস্কো না যাবে তার শ্বশুর বাড়ি। তার ওয়াসিমের বাড়ি। (কানে কানে বলল)

সিমা লজ্জায় শেষ। তারা স্টেজ থেকে নেমে এলো। সবাই তো হাসছে। ওইদিকে আফরানরাও হাসছে।

আহিলঃঃ- সব বান্ধবী দেখি একই ঘাটের মাঝি। (পাশে তাকিয়ে দেখে আমরিন ধারালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে) বাট অনেক কিউট।

অনুষ্ঠান অর্ধেকের বেশি শেষ। কিন্তু নূরের কোন খুবর নেই। আফরান আর না পেরে জিজ্ঞেস করেই নিল।

আফরানঃঃ- নূর কোথায়?

পুষ্পঃঃ- এই রে আমরা আমাদের মধ্যেই হারিয়ে গেলাম। নূর যে গেল এখনো এলো না।

আফরানঃঃ- কোথায় গেল?

আমরিনঃঃ- নূর………

স্যারঃঃ- “Om Shanti Om” চরিত্র দীপিকা এবং শাহ রুখ খান।

পুরো হল রুমে আবছা অন্ধকার। বিভিন্ন রঙের ডিস্কো লাইট জ্বলছে। আর শুধু স্টেজে লাইট জ্বলছে। প্রবেশ পথের দিকে ধুম করে আওয়াজ হলো।

নূরঃঃ- ও মা গো। কোন খাচ্চোর আবুইল্লা প্রবেশ পথে এগুলো রাখলো রে। আমার কোমর তো গেল। আম্মুরেএএএ।

নূরের আওয়াজে সাথে সাথে সেইদিকে লাইম লাইট দিল। নূর কোমর ধরে নিচে বসে আছে। লাইট অন হওয়ায় উঠে হাত ঝাড়ছে আর জামা ঠিক করছে। নূর পরনে দীপিকার সেই ম্যাজেন্টা রঙের জামা। চুল কোপা করা। একদম হালকা সাজ। সাজ বলতে চোখে টানা আইলাইনার, ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক। হালকা সাজেই অসাধারণ লাগছে তাকে। আফরান বুকের বাপাশে হাত দিয়ে রোমান্টিক হাসি দিল। আনমনে মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল “হায়…….”। নূর জামা ঠিক করে মাথা উঠিয়ে দেখে সবাই হা হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ বুলিয়ে চারপাশে তাকাল। সবাই তার দিকে একইভাবে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। একবার নিজেকে ভালো করে যাচাই করে দেখল। মনে মনে বলতে লাগলো।

নূরঃঃ- (আমাকে কি দেখতে বেশি খারাপ লাগছে? সবাই কিভাবে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে যেন ভুত দেখেছে। আমি তন্বিকে আগেই বলেছিলাম আমাকে না সাজাতে তাও জোর করে সাজালো। নূর নিজের ইজ্জতের ফালুদা করতে না চাইলে পালায়ায়ায়া…..)

উল্টো ফিরে দৌড় দিল। একটু এগিয়ে যেতে ওড়নায় টান অনুভব করে। থেমে পিছনে তাকিয়ে দেখে আফরান।
(পাঠকগণ একটু ব্রেক লাগান। কি ভেবেছেন দীপিকার ওড়না যেমন শাহ রুখ খানের ঘড়িতে আটকে ছিল নূরের ওড়নাও সেভাবে আফরানের ঘড়িতে আটকালো। জ্বি না। নূর যখন চলে যাচ্ছিল আফরান দৌড়ে এসে পিছন থেকে তার ওড়না টেনে ধরে। এবার গল্প পড়া কন্টিনিউ করেন।)
মিউজিক শুরু হলো।

♪♪♪আঁখো মে তেরি আজাব সি আজাব সি আদায়ে হে……(২)
দিল কো বানাদে যো পাতাং সান্সে ইয়ে তেরি ও হাওয়ায়ে হে…….. ♪♪♪

(((নূর আফরান মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালো। নূর খুব একটা মেকআপ করেনি। শুধু টানা আইলার দিল। যার কারণে চোখ দুটো অসম্ভব সুন্দর লাগছে। তার চোখের ডান পাশের তিলটাও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। যার ফলে চোখ দুটো আরো আকর্ষণীয় লাগছে আফরানের কাছে। আশেপাশে কোন খেয়ালই নেই। শুধু একে অপরের চোখে তাকিয়ে আছে।)))

♪♪♪ আয়ে কেছি রাত হে যো বহুত খুশনাসিব হে
চাহে জিসে দূর সে দুনিয়া ও মেরে কারীব হে
কিতনা কুচ কেহনা হে ফির ভি হে দিল মে সাওয়াল কাহিন
সাপ্নো মে যো রোজ কাহা হে ভো ফির সে কাহু ইয়া নাহি♪♪♪

(((গানের লিরিক্সটা যেন আফরানের মনের না বলা কথা গুলোই বলছে।)))

নূরঃঃ- থায়ায়ামমমমোওওওওও। (সাথে সাথে মিউজিক অফ হয়ে গেল।) আরে আমার ফেভারিট সিন চলে যাবে। যেখানে দীপিকা চুইংগাম দিয়ে বাবল ফুলাই। হায়…… আমার ফেভারিট সিন। এই সিনটা করার জন্য কত কাঠ পুড়িয়েছি। হুহ্। সব কিছু রেডি করে আসছি। মিউজিক প্লিজ। (আবারও গান শুরু হলো। সবার নজর এখন নূরের উপর।)

♪♪♪♪♪♪♪♪♪ আঁখো মে তেরি……..

(((নূর একটা লাল রঙের বার্থডে বেলুন বের করে মুখে দিয়ে ফুহহহ দিচ্ছে। আফরান ড্যাবড্যাব করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। শুধু আফরান না উপস্থিত সবাই তাকিয়ে আছে ড্যাবড্যাব করে। যতই ফুহ্ দিচ্ছে বেলুনটা ততই বড় হচ্ছে। বেলুন ফুলতে ফুলতে এত বড় হয়েছে যে অপর পাশে নূরের চেহারা দেখা যাচ্ছে না। অবশেষে ফুড়ুৎ করে বেলুন উড়ে গেল। বেলুন যে দিকে যাচ্ছে সবাই সেদিকে তাকিয়ে আছে। বেলুনের হাওয়া ফুস হয়ে পড়ল। পড়ল তো পড়ল একেবারে পান্নার মাথার উপর। মেয়েরা মাথায় টিকলি দিলে যেমন হয় বেলুনটা পান্নার মাথায় ঠিক সেভাবে পড়ল। অনেক্ষণ নিরব ছিল পরিবেশ। নিরবতা ভেঙে হাসির রোল পড়ে গেল পুরো হল রুমে। পান্না তো আফরান আর নূরকে এত কাছে দেখে আগে থেকেই রাগে ফুঁসছিল। এখন এমন হওয়ায় আরো রেগে গেল। মাথা থেকে বেলুনটা নিয়ে মেঝেতে ছুড়ে মেরে বাইরে চলে গেল।

সবাই খুব জোরে জোরে হাসছে। নূরও এক ভেটকানি মার্কা হাসি দিল।

নূরঃঃ- কি করব বলেন? এটা আমার ফেভারিট সিন। এই পুরো এক সপ্তাহ ধরে মনে হয় হাজারটা চুইংগাম খেয়ে বাবল ফুলানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু হয়ই না। তাই খুরাফাতি দিমাগে এই তুফানি আইডিয়া বের করি। আর এখন আসার সময় সব দোকানে খুঁজে অবশেষে একটা দোকানে এই বেলুন পেলাম। তা নিয়ে আসি।

ঘটনার আচমকাই আফরান যেন এক অজানা ঘোরে চলে গেল। পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এইমাত্র কি হলো সব তার মাথার উপর দিয়ে গেল। যখন বুঝতে পারল হাসতে হাসতে পেট ধরে মেঝেতে বসে পড়ল। বসে পড়ল বললে ভুল হবে শুয়েই পড়ল। এপাশ ওপাশ হয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। নূর আড়চোখে ধারালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। যেন তার হাসিতে নূরের কিছু যায় আসে না। আফরানের হাসি যেন থামছেই না। নূর রেগে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল তার হাসি দেখে। মন খুলে হাসছে সে। খুব কমই আফরানকে মন খুলে হাসতে দেখা যায়। আর তার হাসির কারণ সবসময় নূরই হয়ে থাকে। তাই তো তার নাম দিল #আনন্দিতা।

.
.
.

চলবে