Ragging To Loving Part-41+42

0
665

😠 Ragging To Loving 😍
Part:: 41
Writer:: Ridhira Noor

আফরান মায়মুনা আরো বেশি অবাক হলো যখন তারা দেখল পুষ্প সিমা আমরিন মেহের আলিফা ওরা ফুচকার দোকানে বসে ফুচকা খাচ্ছে আর হাসছে। সিমা হাত তুলে হাই দিল।

সিমাঃঃ- হাই। এদিকে এসো। (আফরান নূর মায়মুনা ফুচকার দোকানে গিয়ে বসল।)

আফরানঃঃ- এই মাত্র কি হলো এসব? আর তোমরাও কিছু বলছ না নূরকে। বেচারার উপর কত টর্চার করল।

নূরঃঃ- বেচারা? (নাক কুচকে) বেচারা না খাচারা। (চট্টগ্রামের ভাষায় আবর্জনাকে খাচারা বলে) টর্চার না ওরে তো আমি থার্ড ডিগ্রি দিতাম। কিন্তু মাঝখানে আপনি এসে ঝামেলা করে দিলেন।

আফরানঃঃ- শুধু শুধু কেন….

আলিফাঃঃ- শুধু শুধু না। কারণ আছে। চলেন ফ্ল্যাশব্যাকে যায়।
.
.
মেয়েটিঃঃ- মামা এক প্লেট ফুচকা দেন। ঝাল বেশি করে দিবেন।

ছেলেটি তার বন্ধুকে নিয়ে পাশের চায়ের দোকানে বসে ছিল।

ছেলেটাঃঃ- হ্যাঁ মামা ভালো করে ঝাল দেন। যাতে পরে আমি ঝাল মেটাতে পারি। (বলে খিলখিল করে হেসে উঠল। তার বন্ধু তাকে অনেক বারণ করল এসব করতে। কিন্তু সেই শুনছেই না। মেয়েটি লাল ওড়না পরা ছিল।) ওই লাল দোপাট্টে ওয়ালি তেরা নাম তো বাতা। (আস্তে করে শিষ বাজালো।)

কথাগুলো মেয়েটি ছাড়া আশেপাশের কেউ খেয়াল করে নি। কথাগুলো শুনে মেয়েটির চোখে পানি চলে এলো।

নূর আর তার বান্ধবীরা ভার্সিটি যাচ্ছিল এই দৃশ্য দেখে নূরের মাথা খারাপ হয়ে গেল। অন্যকেউ খেয়াল না করলেও সে ঠিকই খেয়াল করেছে। নূর গেল ছেলেটার কাছে। তার সামনে গিয়ে দাঁড়াল।

নূরঃঃ- আরে ভাই তুই তো ইভটিজার নামে কলঙ্ক। ইভটিজিং করছিস অথচ ভালো করে শিষ বাজাতে পারিস না। তুই প্রথম ধাপেই ফুসস হয়ে গেলি। চল আগে তোকে শিষ বাজানো শেখায়।

নূরের কথা শুনে ছেলেটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল।

ছেলেটাঃঃ- মা…মানে? কি…কি বলছেন?

ওইদিকে আমরিন মেহের সবাই ফুচকার দোকানে গিয়ে বসল। ফুচকা খাচ্ছে আর এসব কান্ড দেখে মজা নিচ্ছে।

নূরঃঃ- ওলে অবুঝ বালক লে। বুঝছ না কি বলছি? শিষ বাজা। (ভয়ে ছেলেটা ঢোক গিলল) বাজা বলছি। (চেচিয়ে উঠল। মনে হচ্ছে যেন এক্ষুনি জ্বোয়ালামুখীর মতো ফেটে লাভা বের হবে।)

ছেলেটাঃঃ- (ভয়ে কেঁপে উঠল। ভয়ে শিষ বাজানোর চেষ্টা করছে।) ফুহহহহ। ফুসসসস। ফুহহহহ। (অনেকভাবে চেষ্টা করছে কিন্তু হচ্ছে না।)

নূরঃঃ- ঠিকভাবে কর।

ছেলেটাঃঃ- ফুহহহতততত।

নূরঃঃ- ছিঃ কি সব শব্দ বের করছিস।

ছেলেটাঃঃ- আমি পারি না শিষ বাজাতে।

নূরঃঃ- (দিল ছেলেটার পেটে ঘুসি) ঠিক মতো কর। (ছেলেটা মুখে আঙুল দিয়ে ফুহ্ দিচ্ছে) কি করছিস কি? ঠিক ভাবে কর। নয়লে তোর চাটনি বানামু আজ।

ছেলেটাঃঃ- হচ্ছে না তো। (কাঁদো কাঁদো গলায় বলল)

নূরঃঃ- এই দেখ এভাবে কর। (মুখে আঙুল জোরে শিষ বাজালো।
.
.
.
আলিফাঃঃ- নূরের ফ্লাইং জুতার কামাল তো দেখলেনই। (ফিক করে হেসে দিল। বাকিরাও হাসতে হাসতে কাহিল অবস্থা।)

মায়মুনাঃঃ- হায়রে আমি এত বছর ধরে কত কি মিস করছি। না হলে নূরির সব কান্ড কারখানা দেখতাম। আসছি যখন চল সবাই মিলে ফুচকা খায়। ট্রিট আমার পক্ষ থেকে। বিয়ে উপলক্ষে।

মেয়েরা ফুচকা খাচ্ছে। আফরান পাশের টেবিলে বসে বসে মোবাইল টিপছে। সবাই অনেক বলল ফুচকা খেতে কিন্তু সে বারণ করে দেয়। কেউ আর জোর করল না।

নূরঃঃ- মামা টক আর ঝাল বেশি করে দিবেন। (নূরের কথায় আফরান তার দিকে তাকাল।

আফরানঃঃ- (মেয়ের মাথা খারাপ নাকি? ঝালে চোখ দিয়ে পানি বেরুচ্ছে। তাও নাকি আরো বেশি ঝাল লাগবে।)

নূর একটা ফুচকা নিয়ে মুখে দিল। টক আর ঝালে চোখ খিছে বন্ধ করে ফেলল। আফরান অপলক নয়নে তাকিয়ে আছে তার দিকে। নূর আরেকটা ফুচকা মুখে দিল। ঠোঁট ছোট করে দিল চোখ টিপি। দেখতে ভীষণ কিউট লাগছে।

আফরানঃঃ- হায়…… (বুকের বাপাশে হাত দিয়ে। আশেপাশে তাকিয়ে হাত নামিয়ে নিল।) না জানি ফুচকার মধ্যে এমন কি আছে যে মেয়েরা ফুচকার জন্য এতো পাগল। (নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।)

ফুচকা খাওয়া শেষে নূর বলে উঠল।

নূরঃঃ- মায়মুনা বিয়ের আর মাত্র দশ দিন বাকি। বিয়ের শপিং করবি কবে?

মায়মুনাঃঃ- বিয়ের আর কি শপিং করব। ভাইয়ার টেক্সটাইল কোম্পানি আছে। বিভিন্ন ডিজাইনাররা ভাইয়ার আন্ডারে কাজ করে। ভাইয়া বিয়ের লেহেঙ্গা নিয়ে নিবে। সো শপিং লাগবে না।

নূরঃঃ- হেএএএ! এটা কেমন কথা। বিয়ে করবি অথচ বিয়ের শপিং করবি না। এটা তো এমন মনে হচ্ছে যেন মুলার জুস উইথ আউট মুলা।

মেহেরঃঃ- ইউউউ। হোয়াট এ এক্সাম্পল।

নূরঃঃ- থ্যাংক ইউ। থ্যাংক ইউ। আই নো আই এম ইশ্মার্ত।

মেহেরঃঃ- তোকে স্মার্ট বলল কেডা?

নূরঃঃ- এখানে বলার কি আছে। আমি তো জানি আমি কি।

আলিফাঃঃ- রানু মন্ডলের জমজ বোন।

নূরঃঃ- চুপ কর আলু। নয়লে তোর ভর্তা বানাবো। (আলিফা সাথে সাথে মুখে আঙুল দিল। কারণ একটু আগে ছেলেটার যা অবস্থা করল।) তো কোথায় ছিলাম? ওহ হ্যাঁ শপিং। আচ্ছা লেহেঙ্গা নাহয় লাগবে না। কিন্তু বাকি টুকটাক জিনিস তো লাগবে। আর কিছু না লাগলেও হুদাই শপিংয়ে যাব। আরে এগুলোই তো বিয়ের আসল মজা।

মায়মুনাঃঃ- আসলেই। তাহলে কালকেই শপিংয়ে যাব। তোরাও যাবি আর রিহান ভাই ওয়াসিম ভাই ওরা সহ একসাথে যাব।

পুষ্পঃঃ- ওই ব্রেক লাগা। শপিংয়ে যাবি পিকনিকে না। যে সবাইকে দল বেঁধে নিয়ে যাবি।

মায়মুনাঃঃ- কেন? কেউ বলছে নাকি যে সবাই একসাথে শপিংয়ে যেতে পারবে না। আর না জানি এই মূহুর্তগুলো আর পাবো কি না। তোদের সবাইকে একসাথে পাবো কি না। তাই যতটুকু সময় আছে সবাই একসাথে এনজয় করব।

আমরিনঃঃ- ওক্কে।

মায়মুনাঃঃ- তাহলে কাল সকাল ঠিক দশ টায় রওনা হব। একসাথে ঘুরাঘুরি আর শপিং। তারপর সন্ধ্যায় ফিরে আসব।

আফরানঃঃ- বাহ্ নিজেরাই সব প্লানিং করে নিলে। আমি যে এদিকে আছি একটু জিজ্ঞেস করলেই তো হয়।

নূরঃঃ- আপনাকে কেন জিজ্ঞেস করবে? বিয়ে কি আপনার? যার বিয়ে তার প্লানিং। আপনি চুপচাপ বসে থাকেন।

আফরান বলার মতো আর শব্দ খুঁজে পাচ্ছে না। নূরের কথায় একেবারে চুপ হয়ে গেল।

.
.

পরের দিন শপিংমলে__________________

তাদের সাথে নিহালও যোগ দিল। ছুটির দিন বলে আসতে পেরেছে। নাহলে কখনো আনা সম্ভব ছিল না। নিহাল তার শিক্ষকতা নিয়ে অনেক স্ট্রিক্ট। তার কাছে সবার আগে তার ফ্যামিলি। এরপর প্রোফেশন। তার পুরো পেশাগত জীবনে শুধু মাত্র আমেরিকা যাওয়ার জন্য ছুটি নিয়েছিল। নাহলে ঝড় তুফান রোদ বৃষ্টি যায় হোক না কেন একদিনও মিস দেয় নি। এমনকি বিয়ের জন্যও মাত্র পাঁচদিনের ছুটি নিয়েছে। যার কারণে মায়মুনা অনেক রেগে ছিল। কিন্তু পরে নিহাল হেনতেন বুঝিয়ে মানিয়ে নিল।

বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য সবাই নিজের মতো করে শপিং করছে। কাপলরা একে অপরের জামা সিলেক্ট করায় একে অপরকে সাহায্য করছে। নূর মায়মুনা আফরান নিহাল একটি কাপড়ের দোকানে প্রবেশ করল। দোকানে চারজন দোকানদার ছিল। তাদের মধ্যে একজন একটি লেহেঙ্গা নিয়ে বারবার মায়মুনাকে জোর করছে কিনে নিতে। “”আপনার উপর ভীষণ সুট করবে লেহেঙ্গাটা। একেবারে নায়িকার মতো লাগবে”” এমন নানান ধরনের চিপকু টাইপ কথা বলতে লাগলো। সবাই হাজারো বারণ করার পরও উনি মানছেন না। বেটাও আরেক নাছোড়বান্দা কোন কথা বার্তা ছাড়া প্যাকিং করে হাতে ধরিয়ে দিল। এখন তারা পড়ে গেল লজ্জায়। যদি এখন লেহেঙ্গাটা না নেই তাহলে লজ্জিত হবে। নিহাল ক্রেডিট কার্ড বের করার জন্য পকেটে হাত দেয় তার আগেই নূর মায়মুনার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। মায়মুনার এক হাতে লেহেঙ্গা অন্য হাত নূর ধরে আছে।

নূরঃঃ- শপিং শেষ এবার চলেন। (মায়মুনার হাত ধরে হাটা ধরল।)

দোকানদারঃঃ- আরে আরে লেহেঙ্গার দাম তো দিয়ে যান।

নূরঃঃ- দাম? কিসের দাম? কেমন দাম? আরে আপনিই তো আমাদের লেহেঙ্গাটা দিলেন। তাহলে আবার কিসের দাম দিব?

দোকানদারঃঃ- লেহেঙ্গা দিয়েছি ঠিক। কিন্তু ফ্রি তে তো দেয়নি। টাকা তো দিতে হবে।

নূরঃঃ- কেন? আমরা কি বলছিলাম দিতে। (লোকটা চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে) দেখুন মানুষ শপিংয়ে আসে নিজের ইচ্ছায় জিনিসপত্র কিনতে। আর তারা নিজস্ব বাজেট নিয়েই ঘর থেকে বের হয়। আপনাদের এমন জোরাজোরিতে অনেকে লজ্জায় পড়ে বাধ্য হয় নিতে। যেখানে সেটার তাদের কোন প্রয়োজন নেই। ফলে তারা নিজের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিতে পারে না। যার প্রয়োজন হবে সে নিজে থেকে নিবে। এভাবে জোর জবরদস্তির তো কোন মানে হয় না।

দোকানদারঃঃ- সরি আপু।

নূরঃঃ- আর হ্যাঁ ভাববেন না যে এই লেহেঙ্গা কেনার সামর্থ্য আমাদের নেই। এমন দশটা লেহেঙ্গা এখন কিনে নিতে পারব। কিন্তু কিনব না। কারণ এখন যদি আমরা কিনে নেয় তাহলে আপনি অন্যদের সাথে আবারও একই কাজ করবেন। তাই এই নিন আপনার লেহেঙ্গা। (মায়মুনার হাত থেকে প্যাকেটটা নিয়ে দোকানদারে হাতে ধরিয়ে দিল।)

মায়মুনাঃঃ- নূর ইউ আর গ্রেট।

নূরঃঃ- আই নো। হিহিহি। চল অন্য দোকানে যায়।

তারা সেই দোকান থেকে বেরিয়ে গেল। নূর ভাব নিয়ে আগে আগে হাটছে। এমন ভাব নিচ্ছে যেন অনেক বড় অসাধ্য সাধন করে ফেলেছে। আফরান মায়মুনাকে টেনে পিছনে নিয়ে নিল। কানে ফিসফিস করে কি যেন বলল। মায়মুনা মুখ চেপে হাসছে। আফরান চোখ টিপি দিল। মায়মুনা হেসে নূরের পাশে গেল।

মায়মুনাঃঃ- নূর?

নূরঃঃ- হুমম?

মায়মুনাঃঃ- তুই তো একটু আগে যা বললি না পুরো ফাটিয়ে দিলি। এমন লেহেঙ্গা দশটা কিনতে পারবি। আসলে আমার না ওই দোকানের তিনটা জামা পছন্দ হয়েছে। দশটা না আমাকে শুধু ওই তিনটা জামা কিনে দে ৷

নূরঃঃ- (থমকে দাঁড়িয়ে গেল) ওহ হ্যালো? তোর চিন্তার রেলগাড়ির ব্রেক লাগা। নাহলে স্টেশন পেরিয়ে যাবে। ওসব জাস্ট এমনি ডায়লগ মারছিলাম। এমন দশটা লেহেঙ্গা না লেহেঙ্গার ওড়না কেনার টাকা নেই। হুহ্।

মায়মুনা আফরানের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিল। আফরানও হেসে উঠল। তাদের সাথে তাল মিলিয়ে নিহালও হাসছে। নূর বেচারি অবুঝ বালিকা কিছু না বুঝে হতভম্ব হয়ে আছে।

মায়মুনাঃঃ- সত্যি ভাই নূরকে তুমি হারে হারে চেনো।

আফরানঃঃ- মিস খিটখিট শুধু খিটখিটই করতে পারে।

নূরঃঃ- এক্সকিউজ মি! মাঝে মাঝে একশনের চেয়ে রিয়েকশন বেশি কাজ করে। বুঝলেন? ওয়াও নূর হোয়াট এ ডায়লগ। একশনের চেয়ে রিয়েকশন বেশি কাজ করে। ইউ আর জাস্ট টু গুড। (নিজেই নিজের কাঁধে বারি দিয়ে সাবাসি দিল। ওদিকে আফরান মায়মুনা নিহাল হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ।)

নিহালঃঃ- আমি জানতাম তুমি দুষ্টু। কিন্তু এত দুষ্টু তা জানা ছিল না।

নূর লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল। বাকিদেরও শপিং শেষ হলো। সন্ধ্যায় সবাই নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
_______________________________

পাঁচ দিন পর সবাই রওনা দিল রিসোর্টের উদ্দেশ্যে। সব কিছুর আয়োজন আফরান আর রিহান আগে থেকে করে রেখেছে। শীতকালীন আবহাওয়া কুয়াশায় চারপাশ আবছা হয়ে আছে। দুপুর ২ টায় তারা রিসোর্টে পৌঁছালো। রিসোর্টটি বিশাল বড়। এক বড় খোলা জায়গার মাঝখানে রিসোর্টটা নির্মিত। শহরের এক কোণে রয়েছে রিসোর্টটা যার কারণে আশেপাশে খোলা জায়গা। দূর দূরান্তে জনবসতি নেই। জার্নি করে সবাই ভীষণ ক্লান্ত তাই দুপুরের খাবার খেয়ে সবাই বিশ্রাম নিল। সব বড়দের রুম রিসোর্টের ডানপাশে আর ছোটদের রুম বামপাশে।
.

চলবে

😠 Ragging To Loving 😍
Part:: 42
Writer:: Ridhira Noor

রাতে______________________________
মায়মুনা সব মেয়েদের নিয়ে নিচ তলায় একত্রিত হলো।

মায়মুনাঃঃ- শোন সবাই খাওয়া দাওয়ার পর বড়রা নিজ নিজ রুমে শুয়ে পড়বে। জার্নি করে সবাই বেশ ক্লান্ত। আর আমরা সবাই মিলে রিসোর্টের পিছনে বনফায়ারের আয়োজন করা হবে। সবাই মিলে হৈ-হুল্লোড় করব।

আলিফাঃঃ- গুড আইডিয়া। অনেক মজা হবে।

পান্নাঃঃ- এসব ফালতু কাজে আমি নেই। সরি বাট আমি আসব না।

মায়মুনাঃঃ- এখানে কাউকে আসতে বলা হয়নি। যার ইচ্ছা হবে আসবে যার ইচ্ছা হবে না আসবে না।

পান্না চলে গেল।

মায়মুনাঃঃ- এতপ পালতু কাদে আমি নেই। বিয়েতেই বা আসছে কেন? যত্তসব। বড় মামার বিজনেস পার্টনারের মেয়ে আর আফরান ভাইয়ার ফ্রেন্ড না হলে ওকে আমি জীবনেও আমার বিয়েতে দাওয়াত দিতাম না। আসছে তো আসছে নিজের চামচি দুইটারে নিয়ে আসছে।

তখনই আফরান এলো।

আফরানঃঃ- কি হলো? এভাবে রেগে আছিস কেন?

মায়মুনাঃঃ- এই পান্নাকে দাওয়াত দিলে কেন? সাথে ওই চামচি দুইটারেও বলছ।

আফরানঃঃ- দেখ পান্না বাবার বিজনেস পার্টনারের মেয়ে। সাথে আমার ফ্রেন্ডও। পান্নাকে দাওয়াত দেওয়ার সময় তার ফ্রেন্ডরাও ছিল। একজনকে দাওয়াত দিয়ে বাকি দুইজনকে না দেওয়া একটু খারাপ দেখায় না? তাই তাদেরও বললাম।

মায়মুনাঃঃ- বিয়েটা আমার। তাই আমার কথা মতোই চলবে। বিয়েতে যখন এসেছে প্রত্যেক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে হবে। এসব ফালতু কাজে আমি নেই। এসব ঢং করতে পারবে না।
.
.
রাতে খাবার খেয়ে সবাই একত্রিত হলো রিসোর্টের পিছনের এরিয়ায়। আজকে সবাই মিলে বনফায়ার এর আয়োজন করল। অনেক বড় খোলা জায়গায় বিস্তৃত রিসোর্টটি। চারপাশে খোলা জায়গা মাঝ বরাবর হোটেল। আফরান আর তার বন্ধুরা গেল সেদিকে। গিয়ে দেখে মেয়েরা মোবাইলের ফ্লাশ লাইট দিয়ে বসে আছে। তারা অবাক হয়ে গেল।

আহিলঃঃ- কি হলো? তোমার আগুন না জ্বালিয়ে বসে আছ কেন? আমরা আরো ভেবেছি সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু এখানে এসে দেখি সব উল্টো।

সবাই মিলে মাঝখানে লাইট দিল। ছেলেরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সেদিকে। কারণ আমাদের ডিনচেক নূর ম্যাডাম দুইটা শিলা পাথর দিয়ে আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করছে। আফরান হা হয়ে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। নূর পরনে লম্বা সোয়েটার, চুল গুলো খোলা। ঠোঁটের কোণে হালকা জিব বের করে আপ্রাণ চেষ্টা করছে আগুন জ্বালানোর। কিন্তু আগুন জ্বলছেই না। মাঝে একটু বিরক্ত হচ্ছে কিন্তু আবারও চেষ্টা করছে। তার কান্ড দেখে আফরান হেসে দিল।

নূরঃঃ- আহহহহহ। এই পাথরগুলো ম্যানেজারের টাকলু মাথায় মারমু। কি সব শিলা পাথর রাখছে আগুন জ্বলে না।

ইয়াশঃঃ- লাইটার নাও।

মেহেরঃঃ- বিগত এক ঘন্টা ধরে সবাই তাকে বলছে কিন্তু ম্যাডাম জি শুনছেন না। বলে কি….

নূরঃঃ- আরে বনফায়ারে যদি এভাবে শিলা পাথর দিয়ে আগুন না জ্বালায় তাহলে কি আর মজা থাকে? যতক্ষণ না আগুন জ্বলছে এভাবে চুপচাপ অন্ধকারে বসে থাক সবাই।

ইয়াশঃঃ- আমার মনে হয় না আজকে আর কোন আয়োজন হবে। আমি গেলাম ঘুমাইতে। গুড নাইট গাইজ। (পিছন ফিরে পা বাড়াতেই নূর দিল এক ধমক।)

নূরঃঃ- যারা যারা এখান থেকে যাবে এই বনফায়ার থেকে কাঠ নিয়ে হুধুম খেলানি দিব। বিয়ে খাওয়া তো দূরে থাক। এক্কেরে হসপিটালে গিয়ে পড়ে থাকবে।

ভয়ে সবাই একেবারে সোজা হয়ে গেল। কারণ এই তারছিড়া একবার রাগলে সামনের জনের কি হাল করবে কে জানে।

ইয়াশঃঃ- (আফরানের কানে কানে বলল) ভাই কিছু একটা কর। নইলে সারারাত এভাবে কাটাতে হবে।

আফরান নূরের পাশে গিয়ে বসল।

আফরানঃঃ- আমাকে দাও আমি করে দেয়। (হাত পেতে শিলা পাথর চাইল।)

নূরঃঃ- আপনাকে কেন দিব? (পাথর নিয়ে হাত অন্যপাশে সরিয়ে নিল) আমিই জ্বালাবো। (আবারও চেষ্টা করছে)

আফরান ইশারা করাই মায়মুনা এসে তার হাতে লাইটার ধরিয়ে দিল। নূর এদিকে শিলার সাথে শিলা ঘেষেই যাচ্ছে। নূরের চোখের আড়ালে লুকিয়ে আফরান আস্তে করে লাইটার দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দিল। নূর মনে করল সেই জ্বালিয়েছে। খুশিতে লাফিয়ে উঠল।

নূরঃঃ- ইয়াহু হয়ে গেল। ইয়ো ইয়ো ডিংকা চিকা। (ভাংড়া ডান্স করল। তার কান্ড দেখে সবাই হাসছে।) তো চল শুরু করা যাক।

সবাই গোল হয়ে বসল। আফরান বনফায়ারের কাঠ ঠিক করে দিল। সবাই একসাথে পাশাপাশি বসা। আফরানের বসার জন্য কোথাও জায়গা রাখেনি। নূরের পাশে স্পিকার রাখা আফরান গিয়ে সেটা সরিয়ে অন্যপাশে রাখল। যে না নূরের পাশে বসতে যাবে কোথা থেকে জানি উড়ে এসে জুড়ে বসল সবার প্রাণ প্রিয় আফা পান্না। ঝড়ের গতিতে দ্রুত এসে বসায় নূর কেঁপে উঠল। একবার আকাশের দিকে তাকাল একবার পান্নার দিকে তাকাল।

নূরঃঃ- আপনি আবার আকাশ থেকে টুগগুর কইরা পড়লেন নাকি?

পান্নাঃঃ- হোয়াট?

মায়মুনাঃঃ- তুমি না বলেছিলে এসব ফালতু কাজে আসবে না।

পান্নাঃঃ- রুমে একা একা বোরিং লাগছিল তাই চলে এলাম। (মায়মুনা ভেঙচি কেটে অন্যপাশে ফিরে গেল। এমনিতেই এসবে আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই। ভেবেছিলাম আসব না। কিন্তু নূর আর আফরানকে একা ছাড়া যাবে না। না জানি কখন তারা একে অপরের কাছে চলে আসে। আমি তা মোটেও হতে দিব না। পাশ ফিরে নূরের দিকে তাকাল। নূর দাঁত সব বের করে দিল এক ভেটকানি। পান্না কোন পাত্তা না দিয়ে ফিরে গেল।)

নূরঃঃ- (দাঁত ব্রাশ করে নাই নাকি? একটু হাসি দিলে কি হয়? যেমন খাচ্চোর আফরান তেমন খাচ্চোর তার ফ্রেন্ড। এই না না ফ্রেন্ডরা সবাই ভালো আছে। শুধু ইনি একটু….)

আফরান গিয়ে আরিফের পাশে বসল। নূর আর আফরান মুখোমুখি হয়ে বসল।

মায়মুনাঃঃ- তো শুরু করা যাক? মিউজিক্যাল পিলো। গেইম সম্পর্কে সবাই জানেনই। সো মিউজিক শেষে যার হাতে পিলো থাকবে সে আউট এবং তাকে যা বলবে তাই করতে হবে। লাইক ডেয়ার। কিন্তু মিউজিক অন অফ করবে কে?

আলিফাঃঃ- আমি। আমার ভালো লাগছে না খেলতে। তাই আমি মিউজিকের দায়িত্বে আছি। (আলিফাকে মিউজিক অন অফ করার দায়িত্ব দেওয়া হলো।)

মায়মুনাঃঃ- বাট নো চিটিং।

মিউজিক প্লে করা হলো। একে একে সবাই আউট হয়ে হচ্ছে। সবাইকে আজব আজব ডেয়ার দেওয়া হলো। কাউকে করলার জুস খেতে দিল, কাউকে কাঁচা মরিচ, একটাকে জঙ্গলি ডান্স, তো আরেকটাকে ভাংড়া ডান্স, ইয়াশকে তো মেহের ডেয়ার দিল হামাগুড়ি দিয়ে পুরো এক রাউন্ড ঘুরতে। ইয়াশও কম না। সে মেহেরকে মুরগির মতো খকখক করে পুরো এক রাউন্ড ঘুরতে। এখন বাকি আরিফ নূর আফরান পান্না। আলিফা মিউজিক অন করল।

♪♪♪
মানা কি হাম ইয়ার নেহি লো তেই হেকি পিয়ার নেহি

((( গান শুরু হতেই আলিফা করুণ দৃষ্টিতে আরিফের দিকে তাকাল। আরিফের ধ্যান গেইমে। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।)))

মানা কি হাম ইয়ার… নেহি… লো তেই হেকি পিয়ার নেহি….
ফিরভি নাজরে না তুম মিলানা দিল কা এতবার নেহি
(ঐ)
রাস্তে মে জো মিলে তো হাত মিলানে রুখ জানা
সাথ মে কই হো তুমহারে দূর সে হি তুম মুসকানা
লেকিন মুসকান হো এইসি কি জিসমে ইকরার নেহি…… (২)
নাজরো সে না কার না তুম বায়ান ও জিস সে ইনকার নেহি
(ঐ)

((( আরিফের চোখে চোখ পড়তেই আলিফা চোখ সরিয়ে নিল। কিন্তু আরিফ এখনো তাকিয়ে আছে আলিফার দিকে। তার চোখে পানির দিকে। আলিফা সাথে সাথে মিউজিক অফ করে দিল।)))

আরিফ আউট হয়ে গেল। ডেয়ার দিল গান গাইতে হবে।

♪♪♪
কুছ ইসতারা তেরি পালকে মেরে পালকোসে মিলালে
আসু তেরি সারে মেরে আখো মে সাজা দে
♪♪♪
((( আলিফার দিকে তাকিয়ে পুরো গান গাইল। কিন্তু আলিফা একটিবারও আরিফের দিকে তাকাল না।)))

এখন বাকি রইল নূর আফরান পান্না। আলিফা মিউজিক অন করল। নূর পিলো আফরানকে দিল। আফরান পান্নাকে দিল। পান্না নূরকে। এভাবে কয়েক রাউন্ড ঘুরলো।

পান্নাঃঃ- (খুব শখ না আফরানের সাথে চোখাচোখি করার। এবার নাও।)

পান্না পিলো নিয়ে সজোরে ছুড়ে মারল নূরের দিকে। পিলো গিয়ে পড়ল নূরের চোখে। ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠল। আফরান দৌড়ে নূরের কাছে গেল। হাটু গেড়ে তার সামনে বসে পড়ল। নূর হাত দিয়ে চোখ ঢেকে আছে। আফরান আস্তে করে হাত সরিয়ে চোখে ফুহ্ দিল। কিন্তু চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে।

পান্নাঃঃ- (নাটক করে গেল নূরের কাছে) ওহ নূর আর ইউ ওকে?

আফরানঃঃ- ওকে? তোমার নূরকে দেখে ওকে মনে হচ্ছে? দেখছ না কি হয়েছে। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। পিলো হাতে দিতে বলছে ছুড়ে মারতে নয়। দেখে শুনে কাজ করতে পারো না। দেখ চোখ লাল হয়ে গিয়েছে। (রেগে চিল্লিয়ে বলল)

নূরঃঃ- আরে আমি ঠিক আছি।

আফরানঃঃ- কি ঠিক আছ দেখছি।

পান্না হনহনিয়ে চলে গেল।

মায়মুনাঃঃ- এই চুন্নিটাকে আসতে কে বলেছিল? প্রথমেই তো বলেছিল আসবে না। আবার ঢং করতে এসেছে। কত কিছু প্ল্যান করছিলাম। সবাই মিলে আড্ডা দিব, গল্প করব। কিন্তু এই চুন্নি সব মাটি করে দিল।

নূরঃঃ- কিছু মাটি হবে না। আমি ঠিক আছি। চল আবার গেইম শুরু করি।

আফরানঃঃ- কোন গেইম টেইম খেলতে হবে না। (নূরের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল।)

আফরান নূরকে নিয়ে করিডরে সোফায় বসিয়ে দিয়ে বরফ নিয়ে এলো। নূরের পাশে বসে পকেট থেকে রুমাল বের পরম যত্নে তার চোখ মুছে দিল। রুমালের এক কোণায় বরফের টুকরো নিয়ে নূরের চোখে ভাব দিতে লাগলো। চোখে ফুহ্ দিতেই নূর শিউরে উঠল।

আফরানঃঃ- এখন ঠিক আছে? (নূর বেখেয়ালি হয়ে আফরানের দিকে তাকিয়ে আছে। এত যত্ন কেন নিচ্ছে এই ভাবনায় ডুবে আছে। কিন্তু এই যত্ন ভীষণ ভালো লাগছে নূরের কাছে।) কি হলো বল? ঠিক আছ তুমি?

নূরঃঃ- হুহ? হুমম…. হুমম…. ঠিক আছি।

আফরানঃঃ- চল তোমাকে তোমার রুম পর্যন্ত দিয়ে আসি।

নূরঃঃ- চোখে ব্যাথা পাইছি কানা হয়ে যায় নি। আমি যেতে পারবো। (উঠে যেতে নিলেই আফরান হাত ধরে ফেলে।)

আফরানঃঃ- ইদানিং দেখছি তুমি কিন্তু বেশি বাজে বকছ। আমি ভালো আছি ভালো থাকতে দাও। আমাকে রাগিও না কিন্তু বলে দিলাম। চুপচাপ চল আমার সাথে। (নূরের হাত ধরে রুম অবধি নিয়ে গেল। নূর যেতে পিছন থেকে ডাক দিল।) শোন? যদি প্রয়োজন হয় আমাকে ডেকে নিও।

নূরঃঃ- (আমার এতো টেকা পড়ে নাই) আচ্ছা। (আফরান কিছু বলতে যাবে তার আগেই তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে দৌড় দিল)

আফরানঃঃ- গুড…. (দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল) নাইট।

অন্যদিকে পান্না তার রুমে গিয়ে ভাঙচুর করা শুরু করল। টেবিলের উপর ফুলদানি ছিল সেটা নিয়ে মেঝেতে ছুড়ে মারল।

পান্নাঃঃ- নূঊঊঊররররর। আই জাস্ট হেইট ইউ। আই হেইট ইউ। হেইট ইউ। হেইট ইউ। আজ তোমার জন্য আফরান আমার সাথে এমন ব্যবহার করল। শুধু তোমার জন্য। আজ পর্যন্ত আমার বাবা মাও আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলে নি। সেখানে আফরান আমাকে এত কথা শুনালো। বিকজ অফ ইউ। ইউ হেভ টু পে ফর দিজ নূর।

পরের দিন______________________
গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান হবে। সকাল সকাল সবাই ফ্রেশ হয়ে চলে এলো আয়োজন করতে। কেউ কেউ ডেকোরেশন কাজে সাহায্য করছে, কেউ কেউ খাবারের মেনু দেখছে। বড়রা সব রীতিমতো হচ্ছে কি না দেখছে।

আফরানের মাঃঃ- আরে আজ গায়ে হলুদ। কিন্তু হলুদ কোথায়? কাঁচা হলুদ বাটতে হবে তো না কি। আমার তো অনেক কাজ পড়ে আছে। হলুদ বাটবে কে?

নূরঃঃ- আন্টি আমাকে দেন আমি বেটে নিচ্ছি। (হলুদ সুন্দরভাবে বেটে আফরানের মায়ের কাছে দিল। কিন্তু তার পুরো হাতে হলুদ মেখে গেল। সামনে তাকিয়ে দেখে মায়মুনা নিহালের সাথে বসে কথা বলছে। শয়তানি হাসি দিয়ে গেল তার কাছে।) মায়মুনা? আজকে তোর গায়ে হলুদ অথচ তোর গায়ে কোন হলুদ নেই।

মায়মুনাঃঃ- হলুদ সন্ধ্যায় লাগানো হবে।

নূরঃঃ- সন্ধ্যায় তো লাগানো হবেই। কিন্তু এখন তো সবাইকে জানাতে হবে যে আজ তোর গায়ে হলুদ। তাই….. এই নে…. (হাতে থাকা সব হলুদ মায়মুনার মুখে মেখে দিল।) এখন মনে হচ্ছে তোর গায়ে হলুদ। (দিল ভৌ দৌঁড়।)

মায়মুনাঃঃ- নূরিই কি বাচ্চি। বানামু তোর কাচ্চি। দাঁড়া তুই। (সেও দিল দৌড়)

পান্না সিড়ি দিয়ে নামছিল নূর দৌড়ে তার পাশ কেটে যাওয়ায় সে পিছলে পড়ে।

পান্নাঃঃ- হোয়াট দ্যা…. (সামনে তাকিয়ে দেখে আফরান আসছে তাই তাড়াতাড়ি শোকাহত চেহারা বানিয়ে নিল। পান্নাকে দেখে আফরান এগিয়ে এলো।)

আফরানঃঃ- আই এম সরি পান্না। কালকে রেগে তোমাকে কত কিছু বলে ফেললাম। আসলে নূরকে এভাবে কষ্টে দেখে নিজেকে সামলাতে পারিনি। আই এম রিয়েলি ভেরি সরি ফর দেট।

পান্নাঃঃ- (নূরের কষ্ট দেখে নিজেকে সামলাতে পারনি। তাই আমাকে কষ্ট দিলে। নূর এবার তুমি বুঝবে কষ্ট কি।) নো আফরান। আই এম সরি। আমারই ভুল ছিল। আমি খেয়াল করি নি তাই।

নূর দৌড়াচ্ছে তার পিছে পিছে মায়মুনাও দৌড়াচ্ছে। হঠাৎ নূর কারো সাথে ধাক্কা খেল। তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে সামনের জন ধরে ফেলে। নূর চোখ খুলে দেখে সোহেল।

পান্নাঃঃ- আফরান ওই দেখ। (নূর আর সোহেলের দিকে ইশারা করল। আফরান সেদিকে তাকিয়ে দেখে।)

সোহেল তড়িঘড়ি নূরকে দাঁড় করিয়ে দিল।

সোহেলঃঃ- ঘুরে ফিরে বারবার শুধু আমার সাথেই ধাক্কা খেতে আসো।

নূরঃঃ- বারবার কোথায়? আমি তো….. (ভাবনা নিয়ে হাতে গুনতে লাগলো) তিনবার। মাত্র তিনবার ধাক্কা খেয়েছি। একবার ভার্সিটির ফেয়ারওয়েল পার্টির দিন। একবার মায়মুনার এনগেজমেন্ট এর দিন। আরেকবার আজকে। মাত্র তিনবার।

সোহেলঃঃ- আরো ধাক্কা খাওয়ার ইচ্ছা আছে নাকি? (নূর চোখ বড় বড় করে তাকাল)

মায়মুনাঃঃ- অলওয়েজ লেট। কালকে আসার করা ছিল। (মায়মুনাকে দেখে নূর দিল এক দৌড়)

সোহেলঃঃ- (মায়মুনাকে দেখে হাসতে লাগলো) তোর এই অবস্থা কেন? কে করেছে এমন?

মায়মুনাঃঃ- এই আমাদের গুণধর নূর ম্যাডাম পালিয়ে গেল। দেখে বুঝতে পারনি কে করল? আগে তুমি বল কালকে আসার কথা ছিল আজকে এলে।

সোহেলঃঃ- ইম্পর্টেন্ট মিটিং ছিল তাই আসতে পারিনি। দেখ কোন ফাংশন মিস করিনি চলে এসেছি।
.
.
পান্নাঃঃ- (মনে মনে ভুতনি মার্কা হাসি দিল) আফরান তোমার কি মনে হয়না নূর আর সোহেলের মধ্যে কিছু চলছে। আই থিংক দেই লাইক ইচ আদার।

আফরানের না জানি কেন কিন্তু নূর আর সোহেলকে একসাথে দেখে যতটা না কষ্ট পেয়েছে তার চেয়ে বেশি পান্নার কথা শুনে কষ্ট পেল। সোহেলকে হারিয়েছে। কিন্তু মনে এখন নূরকে হারানোর ভয়ও কাজ করছে।

আফরানঃঃ- তুমি ভুল ভাবছ। ওদের মধ্যে এমন কিছু নেই। তা… আমি জা…জানি। প্লিজ উল্টা পাল্টা ভেবো না। (বুকের ভেতর চিনচিন ব্যাথা অনুভব করছে। মনে হচ্ছে যেন বুকের ভেতর কলিজাটা যেন কেউ নিয়ে যাচ্ছে। হাত পা কাঁপতে শুরু করল।)

পান্নাঃঃ- আমি ভুল ভাবছি? তুমি নিজেই দেখ ওরা একসাথে…..

আফরানঃঃ- একসাথে থাকলেই যে একে অপরকে পছন্দ করে এমন না। আর তাদের পরিচয় বা কয়দিনের। তাই প্লিজ নিজেও এসব চিন্তা কর না। আমার মাথায়ও এসব চিন্তা ঢুকিয়েও না। (এসব বলে চলে গেল)

পান্নাঃঃ- উফফ সোহেল থ্যাংকস ওয়ান্স এগেইন। নূর নূর নূর। হাহ্। (বাঁকা হাসি দিল)

.
.
.

চলবে