😠 Ragging To Loving 😍
Part:: 46 (Last Part)
Writer:: Ridhira Noor
পান্না দরজা বন্ধ করে রুমে মেঝেতে বসে আছে। পুরো রুম ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। চেহারায় রাগান্বিত ভাব।
পান্নাঃঃ- কীভাবে? কীভাবে হলো এসব? আমি তো সোহেলকে পাঠিয়ে ছিলাম। তাহলে আফরান কীভাবে আগে পৌঁছালো। (বেডশিট টান দিয়ে ফেলে দিল।) নূঊঊরররর। আই হেইট ইউ। আই জাস্ট হেইট ইউউউউউ। ইউ হেভ টু পে ফর দিজ। ইউ হেভ টু।
আপনারাও হয়তো চিন্তা করছেন? কীভাবে হলো এসব? তাহলে চলুন ফ্ল্যাশব্যাকে________________
সোহেল ফোনে কথা বলতে বলতে ছাদের দিকে যাচ্ছিল। ফোনে কথা বলার কারণে সামনের দিকে খেয়াল করে নি। সামনের জনের সাথে ধাক্কা খেল। সে আর কেউ না মায়মুনা।
সোহেলঃঃ- সরি খেয়াল করি নি। তো বল কেন ডেকেছিলি আমাকে?
মায়মুনাঃঃ- আমি? কবে? না তো। আমি তো ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম। তোমাকে কখন ডাকলাম?
সোহেলঃঃ- আশ্চর্য! তুই তো নাকি বললি আমাকে ছাদে যেতে। একটা পিচ্ছি এসে বলল।
মায়মুনাঃঃ- হয়তো কেউ এমনি মজা করেছে। আচ্ছা চল সবাই অপেক্ষা করছে।
সোহেলঃঃ- তুই যা। আমি ফোনে কথা বলে আসছি।
মায়মুনা চলে গেল। বেশ কিছুক্ষণ পর সোহেল এলো। পান্না মনে মনে চিন্তা করছিল সোহেল আর নূরকে একসাথে দেখে আফরানের কি অবস্থা। এসব ভেবেই মুখ টিপে টিপে হাসছিল। হঠাৎই দেখে সোহেল ফোন হাতে নিয়ে এগিয়ে আসছে। তার চেহারায় কোন প্রতিক্রিয়া নেই। তার মানে কি? পান্না তড়িঘড়ি করে উপরে ছাদে গেল। সেখানে গিয়ে নূর আর আফরানকে একসাথে দেখে।
এই ছিল ফ্ল্যাশব্যাক। এবার গল্পে ফেরা যাক।
পরের দিন সকালে নূরের ঘুম ভাঙে। শোয়া থেকে উঠতে মাথাটা ঝিরঝির করে উঠল। যন্ত্রণায় মাথা চেপে ধরল। চোখ মেলে দেখে গতরাতের জামা পরেই ঘুমিয়ে গিয়েছে।
নূরঃঃ- আমি এখানে কীভাবে? কাল রাতে ছাদের দিকে যাচ্ছিলাম এরপর কি হলো? আহহহ আমার কিচ্ছু মনে পড়ছে না। মাথাটাও ভার হয়ে আছে।
আলিফাঃঃ- তো ম্যাডাম জি উঠেছেন ঘুম থেকে? (ওয়াশরুম থেকে চুল মুছতে মুছতে বের হয়ে)
নূরঃঃ- (আলিফাকে দেখে অবাক হয়ে গেল) তুই এখানে কেন? আর আমি এখানে কীভাবে এলাম? কাল রাতে কি হয়েছে? আমার কিছু মনে পড়ছে না। প্লিজ বল কি হয়েছিল? (অস্থির হয়ে)
আলিফাঃঃ- (নূর এখন টেনশনে আছে। এখন কিছু বলা যাবে না।) আসলে কাল তুই ক্লান্ত হয়ে সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলি। তাই আমি তোর সাথে তোর রুমে থেকে গেলাম। আচ্ছা আমি নিচে যাচ্ছি। তুই ফ্রেশ হয়ে আয়।
আলিফা চলে গেল। নূর স্বস্তির নিশ্বাস নিয়ে ওয়াশরুমে গেল। আলিফা নিচে নামতেই দেখে আরিফ মাথা ধরে বসে আছে। আলিফা মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল আরিফকে সে শায়েস্তা করেই ছাড়বে। চারটা বছর কম নাকি। এই চার বছরে আলিফা কত কষ্ট সহ্য করেছে তার এক বিন্দুও কি আরিফ সহ্য করবে না? সিড়ি দিয়ে নামছিল। কালকের সেই ছেলেটা দেখল যে আলিফার সাথে কথা বলছিল। আলিফা আরিফের দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিল।
আলিফাঃঃ- হাই মি. তেলাপোকা। (হাত তুলে হাই দিল। আলিফার আওয়াজে আরিফ তার দিকে তাকায়। কিন্তু আলিফা তাকে না দেখার ভান করে চলে গেল ছেলেটার কাছে।)
ছেলেটাঃঃ- মি. তেলাপোকা? সিরিয়াসলি!
আলিফাঃঃ- ওহ সরি। কালকে তেলাপোকার জন্য আপনার নাম জানা হলো না। তাই এটাই ডাকলাম। কিছু মনে করিয়েন না। (আহ্লাদের সুরে।)
ছেলেটাঃঃ- ওহ ইটস ওকে। আমি রাফি।
আলিফা হেসে হেসে ছেলেটার সাথে কথা বলছে। এসব দেখে আরিফ রাগে জ্বলছে। হাত মুষ্টি বদ্ধ করে গেল আলিফার কাছে।
আরিফঃঃ- আলিফা? (আলিফা শুনেও না শোনার ভান করে আছে) আলিফায়ায়া (চিল্লিয়ে)
আলিফাঃঃ- কে রে ষাড়ের মতো চিল্লাচ্ছে? ওহ আপনি? কিছু বলবেন? (আরিফ বলার জন্য মুখ খুলতেই আলিফা থামিয়ে দেয়) ওহ এখন বিজি আছি। পরে বলিয়েন। রাফি কি যেন বলছিলেন।
আরিফ কিছু না বলে আলিফার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল। আলিফা মনে মনে হাসলেও চেহারায় রাগী ভাব নিয়ে আছে। ভ্রু কুচকে ইশারায় জিজ্ঞেস করল “কি?”।
আরিফঃঃ- খুব বিজি না ছেলেটার সাথে। কিসের এত বিজি তুমি?
আলিফাঃঃ- তা আপনাকে বলব কেন? দেখি সরেন রাফি আমার জন্য…..
আরিফঃঃ- আরেক বার ওর নাম নিলে ভালো হবে না কিন্তু।
আলিফাঃঃ- কেন নিলে কি সমস্যা? আপনার এত জ্বলে কেন আমি ওর নাম নিলে। ওর সাথে কথা বললে।
আরিফঃঃ- বিকজ আই লাভ ইউ ডেম ইট। সহ্য হয়না যখন অন্য ছেলের সাথে কথা বল। আর কাছ থেকে দূরে থাক। (চোখ ছলছল করছে)
আলিফাঃঃ- আমাকে যে এত বছর ধরে দূরে রেখেছেন আমি কীভাবে সহ্য করেছি বুঝেছেন কখনো? আমি যে আপনাকে ভালবাসি তা জানার পরও আপনি কিছু বলেন নি। অন্তত বলে দিতেন আমাকে তাহলে আমি চলে যেতাম আপনার জীবন থেকে।
আরিফঃঃ- চলে যাবে তাই বলিনি। কাছে রাখতে না পারলেও দূর করে দিতে পারব না। কাছে থাকলে তুমি কষ্ট পাবে।
আলিফাঃঃ- কেন বলল আপনাকে? দূর থেকে এর চেয়ে হাজার গুণ বেশি কষ্ট পেয়েছি। প্লিজ আমি আর এই কষ্ট পেতে চাই না। কাছ থেকে যতই কষ্ট হোক দুইজন মিলে একসাথে ভাগ করে নিব। কিন্তু দূরে থেকে একা একা তিলে তিলে কষ্ট পেতে পারব না।
আরিফঃঃ- আই এম সরি। এন্ড আই লাভ ইউ। (আলিফাকে জড়িয়ে ধরল।)
আলিফাঃঃ- আই লাভ ইউ টু। (সেও আলতো করে জড়িয়ে ধরল।)
.
.
আফরান সেই ওয়েটারকে খুঁজছে যে কালকে তাদের জুস দিয়েছিল। পুরো রিসোর্টে দেখল। তারপর ম্যানেজারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে জানতে পারল একটু আগেই সে চলে বেরিয়েছে। আফরান মূহুর্ত ব্যয় না করে দৌড়ে বাইরে গেল। আশেপাশে কেউ নেই। দৌড়ে রাস্তার দিকে গেল। আশেপাশে তাকিয়ে খুঁজতে লাগলো।
.
.
নূর তার পুরো রুমে তন্নতন্ন করে খুঁজতে লাগলো। কিছু একটা খুঁজছে। নূরের আসতে দেরি হওয়ায় আলিফা গেল নূরের রুমে। গিয়ে দেখে পুরো রুম ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। অবাক হয়ে নূরকে জিজ্ঞেস করল।
আলিফাঃঃ- কি হয়েছে? কি খুঁজছিস এমন করে?
নূরঃঃ- আমার কানের ঝুমকা। কাল রাতে অনুষ্ঠানে পরেছিলাম। রূপার ঝুমকা আব্বু বার্থডেতে গিফট করেছিল। আমার ভীষণ পছন্দের ঝুমকাগুলো। একটা আছে আরেকটা পাচ্ছি না।
আলিফাঃঃ- হয়তো ছাদে পড়েছে। কালকে অজ্ঞান হওয়ার সময় হয়তো সেখানেই পড়েছে। (মিথ্যা বলল। কারণ সত্যিটা বললে আরেক ঝামেলা হবে।)
আলিফা রুম গুছিয়ে নিচ্ছে। নূর গেল ছাদে। পুরো ছাদ ঘুরে ঝুমকা খুঁজছে। ফুলের টবের পাশে দেখতে লাগলো।
পান্নাঃঃ- লজ্জা করে না তোমার? (চিল্লিয়ে)
পান্নার আওয়াজে নূর কেঁপে উঠল। পিছন ফিরে দেখে পান্না রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। নূরের চোখে প্রশ্নের ছাপ। পান্নার কথায় কিছুটা আঁতকে উঠল। পান্না তেড়ে নূরের দিকে আসায় নূর দুই পা পিছিয়ে যায়।
পান্নাঃঃ- লজ্জা শরম বলতে কিছু আছে তোমার মধ্যে? সামান্য মিডল ক্লাস ফ্যামিলির হয়ে টাকার লোভে আফরানকে ফাঁসাতে চাইছ?
নূরঃঃ- মানে? কি বলছেন আপনি?
পান্নাঃঃ- ওহ প্লিজ এসব নাটক আমার সাথে করবে না। তোমাকে আমি অনেক আগে বলিনি আফরান আর আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে। আমাদের বাবারা আমাদের সম্বন্ধ পাকা করে নিয়েছেন। তারপরও কেন তুমি আফরানের পিছু ছাড়ছ না। না আছে ক্লাস না আছে শ্রী। এমন না যে রূপের জালে আফরানকে ফাঁসাবে। তাহলে কি এমন করেছ তুমি? কি আছে তোমার মধ্যে? যে আফরান বারবার তোমার কাছে ছুটে চলে।
নূর অবাক হয়ে এসব শুনছে। পান্নার কথায় নিজেকে ছোট মনে হচ্ছে। নূরের মনে আফরানকে যে অনুভূতি মনে ছিল তা সে সেদিনই সামলে নিয়েছে যেদিন পান্না বলল তাদের বিয়ে পাকা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পান্না যা বলছে তা শুনে অপমানিত হচ্ছে। গাল বেয়ে চোখের পানি গড়িয়ে পড়ল।
পান্নাঃঃ- এসব ঢং আমার সামনে করতে এসো না। খুব ভালো করে জানি তোমার মতো মেয়েরা কেমন হয়। টাকার লোভে নিজেদের বিক….
নূরঃঃ- চুপ। আর একটা কথা নয়। আমার কাছে আমার আত্মসম্মানই সব। এতক্ষণ ধরে আপনি যা বলেছেন, যে অপবাদ দিয়েছেন মুখ বুজে সহ্য করলাম। কিন্তু আমার চরিত্রে আঙুল তোলার আগে একবার নয় হাজার বার চিন্তা করবেন। (রেগে বলল। নূর যেতে নিলেই পান্না তার কুনুই ঝাপটে ধরে পিছন দিকে টেনে নিল।)
পান্নাঃঃ- কি ভেবেছ তুমি? আমি এত সহজেই তোমাকে ছেড়ে দিব? তুমি আফরানকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিবে আর আমি চুপচাপ দেখতে থাকব? যখন আমি সোহেলকে আমাদের মাঝে আসতে দেয়নি তাহলে তুমি কি? সোহেলের সাথে আফরানের এত বছরের বন্ধুত্ব ভেঙেছি আর তুমি তো ওর জীবনে এসেছ মাত্র কয়েক বছর। তোমাকে বুঝি আসতে দিব আমাদের মাঝে? নো নূর।
নূরঃঃ- তার মানে আফরান আর সোহেলের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি আপনি সৃষ্টি করেছেন?
পান্নাঃঃ- ভেরি স্মার্ট। অফকোর্স।
নূরঃঃ- আপনি জানেন আপনার জন্য আফরান কতটা কষ্ট পেয়েছে। তার ছোট বেলার বন্ধু। তার বেস্ট ফ্রেন্ডকে হারিয়ে কতটা নিঃস্ব হয়েছে। কিন্তু আর না৷ আমি এক্ষুনি আফরানকে আপনার আসল রূপ দেখিয়ে দিব। (দুই এক পা এগিয়ে আসতেই পান্না আবারও কুনুই ধরে ফেলে।)
পান্নাঃঃ- তোমাকে বলতে দিলেই তো?
কুনুই ধরে পিছন দিকে হেচকা টান দিতেই নূর ফুলের টবের সাথে লেগে ছাদ থেকে পড়ে যেতেই সাথে সাথে এক হাত শক্ত করে নূরের হাত নিজের হাতের মধ্যে আবদ্ধ করে নেই। ভয়ে নূর উপরে তাকিয়ে দেখে আফরান। আফরান হাত ধরে টান দিয়ে নূরকে টেনে নিজের বুকের মাঝে আবদ্ধ করে নেই। শক্ত করে নূরের মাথা নিজের বুকে চেপে ধরে। মনে হচ্ছিল যেন বুক থেকে তার কলিজাটা বেরিয়ে আসছিল যা সে এখন নিজের মধ্যে আবদ্ধ করে নিয়েছে। অন্যদিকে ভয়ে নূর কাঁপছে। ভয়ের চোটে সেও আফরানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আফরানের হৃদয়ের স্পন্দন অতিরিক্ত মাত্রায় দ্রুত চলছে। প্রতিটি স্পন্দনে নূর কেঁপে উঠছে। নূরকে ছেড়ে তার দুই গাল আলতো করে চেপে ধরল।
আফরানঃঃ- তু…তুমি ঠি…ঠিক আছো। (নূর মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। আফরান আবারও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল) আমার তো জান বেরিয়ে এসেছিল। এক মূহুর্তের জন্য মনে হলো যেন নিজের মরে যাচ্ছিলাম। তোমার কিছু হয়ে গেলে কীভাবে বাঁচতাম আমি। আমি তো মরেই….
নূরঃঃ- আফরান….। (জোরে আফরানের শার্ট আঁকড়ে ধরল।)
দুজনেই একে অপরকে ছেড়ে দিল। এতক্ষণে সিমা পুষ্প আমরিন ওয়াসিম আরিফ ইয়াশ সবাই এসে উপস্থিত হলো। আফরান রাগী দৃষ্টিতে পান্নার দিকে তাকাল। সাথে সাথে পান্না কেঁপে উঠল।
পান্নাঃঃ- আফরান আমার কথাটা শুনো……
আফরানঃঃ- জাস্ট শাট আপ। (চিল্লিয়ে উঠল। পান্নার সাথে সাথে নূরও কেঁপে উঠল। আফরানের এই রূপ দেখে উপস্থিত সবাই ভীতু হয়ে আছে।) হাউ ডেয়ার ইউ। তোমার সাহস কি করে হয় পান্না।
তখনই সোহেলকে ওয়েটারের কলার ধরে নিয়ে এলো। ওয়েটারকে দেখে পান্না ভয়ে আঁতকে উঠল। ভয়ে ঢোক গিলতে লাগলো। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে।
ওয়েটারঃঃ- এ…এই ম্যাডামই টাকা দিয়েছিল স্যার। আপনাকে আর ওই ম্যাডামকে জুসটা দিতে। (পান্নার দিকে ইশারা করে বলল)
পান্নাঃঃ- মিথ্যা বলছে ও। আ… আমি এমন কিছু ক… করিনি।
রিতাঃঃ- সব তুই করেছিস পান্না। (রিতার কথায় সবাই তার দিকে তাকাল।) এসব খেলা পান্নাই খেলছে গত পাঁচ বছর ধরে। আফরান আর সোহেলের বন্ধুত্ব ভাঙা থেকে শুরু করে এই অবধি।
সোহেল-আফরানঃঃ- কি??? (দুজনে একে অপরের দিকে তাকাল।)
পান্নাঃঃ- রিতা তুই…..
রিতাঃঃ- তুই আজ আর আমাকে থামাতে পারবি না। আফরানের জন্য আমি আমার ভালবাসা পেয়েছি। আমি কি করে তার ভালবাসা হারিয়ে যেতে দেয়। সোহেল? ওই দিন তুমি পান্নার ফোনে যা যা শুনেছ সব মিথ্যা ছিল। সব পান্নার সাজানো নাটক ছিল। তুমি পান্নাকে পছন্দ করতে। আর পান্না আফরানকে। ওহ সরি পছন্দও করত না। ইনফেক্ট আফরান শুধু ওর চাওয়া ছিল। সে আফরানকে নয় তার স্ট্যাটাসকে পছন্দ করত। আফরান যদি জানত তুমি পান্নাকে পছন্দ কর তাহলে পান্না কখনো আফরানকে পেত না। তাই সে ষড়যন্ত্র করে তোমাদের বন্ধুত্ব ভেঙে দেয়। তোমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করে। আর সে নূরকে এটা বলেছিল যে তার আর আফরানের বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে। যাতে নূর আফরানের সাথে না মিশে।
আফরানঃঃ- হোয়াট? নেভার! পান্না আর আমার বিয়ে? কখনো না।
সোহেলঃঃ- (গিয়ে আফরানকে জড়িয়ে ধরে) সরি ইয়ার। আমি তোকে ভুল বুঝেছি। আমি কীভাবে তোকে অবিশ্বাস করলাম? এখন তো আমার নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে। আমি তোর ফ্রেন্ড হওয়ার যোগ্য না রে। এত বছরের বন্ধুত্ব কীভাবে ভেঙে ফেললাম আমি? অন্তত তোর সাথে কথা বলতাম। কিন্তু আমার রাগ আর জেদের কারণে সব শেষ করে দিলাম। আই এম সরি ইয়ার। আই এম রিয়েলি ভেরি সরি। পারলে ক্ষমা করে দিস আমাকে। (আফরানকে ছেড়ে যেতে নিলে আফরান শক্ত করে ধরে ফেলে।)
আফরানঃঃ- কোথায় যাচ্ছিস? এত বছর পর এলি আবার চলে যাবি? পারবি না আবার আমাদের বন্ধুত্ব ফিরিয়ে দিতে? আবারও আমরা সাত বন্ধু মিলে সাত রং ছড়াবো। (সোহেলও আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল)
দুই বন্ধুর মিলে সবাই ভীষণ খুশি। এখন আমাদের পান্না করবে কান্না। যে মেয়ে কান্না করবে কখনো?
পান্নাঃঃ- নূর এসব তোমার জন্য হয়েছে। তোমাকে তো আমি….
পান্না তেড়ে আসতেই আফরান নূরের সামনে দাঁড়িয়ে যায়। রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পান্নার দিকে।
আফরানঃঃ- ডোন্ট ইউ ডেয়ার। আমার ভদ্রতাকে আমার দূর্বলতা ভেবো না। এটা আমার শিক্ষা যে আমি মেয়েদের গায়ে হাত তুলি না। নাহলে নূরের দিকে যে আঙুল উঠছে ওই আঙুলই আমি ভেঙে ফেলতাম। এর পর যদি তোমাকে আর আশেপাশেও দেখি আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না। সোহেল আর আমাকে আলাদা করে যে দোষ করেছ তার জন্য আমি কি করতে পারি তুমি ভাবতেও পারবে না। মেয়ে বলে বেঁচে গেলে। কিন্তু কতক্ষণ বাঁচবে তার গ্যারান্টি দিতে পারব না। সো গেট আউট অফ মাই সাইট।
আফরানের প্রতিটি কথায় পান্না ভয় পেল। কারণ আফরানের এই রূপ দেখে তার আর সাহস নেই কিছু বলার। দ্রুত সেখান থেকে চলে গেল।
আফরান পিছন ফিরে নূরের দিকে তাকাল। নূরের চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। সবারই মুড খারাপ হয়ে গেল। বিস্ময় নিয়ে পুষ্প জিজ্ঞেস করল।
পুষ্পঃঃ- এসব তো ঠিক আছে কিন্তু এই ওয়েটারের কাহিনি কি তা তো জানি না।
রিতা তাদের সম্পূর্ণ ঘটনা বলল। আরিফও কীভাবে সোহেলের জুস খেল তা বলল। এদিকে এসব শুনে নূরের কাইত হয়ে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। কারণ সে জানে না কাল রাতে কি কি কান্ড পাকিয়েছে। আফরানও কিছু বলল না। কোন রকমে বিষয়টা চাপা দিল। আফরান ওয়েটারকে খুঁজতে গিয়ে দেখে সে গাড়ি উঠছে। দৌড়ে গিয়ে তাকে ধরে ফেলে। কাল রাতের কথা জিজ্ঞেস করায় বলল একজন ম্যাডাম বলেছে এমন করতে। আফরান তাকে নিয়ে রিসোর্টে আসে। এসে দেখতে পায় ছাদে নূর আর পান্নার মধ্যে কথা কাটাকাটি হচ্ছে। পরিস্থিতি ভালো মনে হলো না। তাই সে দৌড়ে ছাদের দিকে গেল। এই সুযোগে ওয়েটার পালিয়ে যেতে নিলে সোহেল ধরে ফেলে। তারপর আফরানকে অনুসরণ করে ছাদে নিয়ে আসে। ওই ওয়েটারকে ওয়ার্নিং দিয়ে ছেড়ে দিল।
রাতে___________________________
কাজী মায়মুনা আর নিহালের নিকাহ পড়িয়ে দিল। বিবাহ অনুষ্ঠান যথাযথ ভাবে সম্পন্ন হলো। কাল সকালেই সবাই বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিবে। অনুষ্ঠান শেষে সবাই যে যার রুমে চলে গেল। নূর তার রুমের দিকে যেতেই পিছন থেকে কেউ একজন তার চোখ বেঁধে দিল। ভয়ে নূর ছটফট করছে। ব্যক্তিটা তার হাত বেঁধে মুখ চেপে ধরে গাড়ির পিছনের সিটে বসালো।
নূরঃঃ- কে? কে? ছাড় বলছি। তোর সাহস কি করে হয় আমাকে ধরে আনার। কে তুই? ছাড় বলছি। আমার আফরান যদি একবার জানতে পারে তোর কি হাল হবে বুঝতে পারছিস না। (মৃদু হাসির আওয়াজ আসছে।) আব্বে হালা তোর সাহস তো কম না। তোরে আমি উষ্টা মেরে উগান্ডায় পাঠামু। ছাড় আমাকে।
প্রায় আধ ঘন্টা ধরে পুরো রাস্তায় চিল্লাতে থাকলো। কেউ একজন তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে কুনুই ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। নূর চিল্লাচিল্লি করে তার কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে। কিন্তু ব্যক্তিটা কোন শব্দ করছে না। পথে কিছু একটার সাথে উষ্টা খেয়ে পড়ে যেতে নিলে ব্যক্তিটি নূরকে কোলে তুলে নেই।
নূরঃঃ- আব্বেএএএ ছাড়। তোরে তো আমি…. (হঠাৎ নূর থেমে যায়। কোলে নেওয়ার কারণে তার মাথা ব্যক্তিটির বুকে পড়ে। তার হৃদয়ের স্পন্দন স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। খুব চির চেনা মনে হচ্ছে তার।)
কিছু সময় হাটার পর ব্যক্তিটি তাকে নামিয়ে দেয়। হাতের বাঁধন খুলে দিতেই নূর তড়িঘড়ি চোখের বাঁধন খুলে সামনে তাকিয়ে হতভাগ। তার বিস্ময়ের সীমা পেরিয়ে গেল। নিজের চোখে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না।
ছোট একটা নদী। দুই তীর ঘিরে অসংখ্য গাছ। একপাশে কাশবন। পুরো জায়গা ঘিরে হাজারো জোনাকি পোকা মিটমিট করছে। নূর যেন স্বপ্ন দেখছে। নিজের চোখে বিশ্বাস করতে পারছে না। হাত বাড়িয়ে দিতেই অনেকগুলো জোনাকি পোকা এসে তার হাতে বসল। নূর আশেপাশের কথা ভুলেই গিয়েছে। হুট করে মনে পড়তে পিছনে তাকিয়ে দেখে বটে হাত ভাজ করে মুখে এক রাশ হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আফরান। নূরের মুখ দিয়ে কোন শব্দ বেরুচ্ছে না। শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আফরানের দিকে। আফরান নূরের দিকে এগিয়ে এলো।
আফরানঃঃ- তো বল নিজের স্বপ্ন পূরণ করে কেমন লাগছে? শুধু কি সবসময় অন্যের আনন্দের কথা চিন্তা করবে। নিজের মনের আনন্দের কথা তো একটিবার চিন্তা কর। #আনন্দিতা। (নূরের হাত নিজের হাতের মধ্যে আবদ্ধ করে। সাথে সাথে নূর কেঁপে উঠে।) জানি না কখন কীভাবে তোমাকে ভালবেসে ফেললাম। আসলে ভাল তো অনেক আগেই বেসে ছিলাম। কিন্তু সেটা ভালবাসা নাকি অন্য কিছু তা বুঝতে পারিনি। যখন তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয় মনে এলো তখন বুঝতে পারলাম তোমাকে কতটা ভালবাসি। তোমাকে ছাড়া আমি কতটা নিঃস্ব। তোমাকে ছাড়া এক মূহুর্তও থাকতে পারব না। আমার জীবনে আনন্দের অন্যতম কারণ তুমি। তুমি কি আজীবন আমার আনন্দের কারণ হয়ে থাকবে? থাকবে আজীবন আমার আনন্দিতা হয়ে?
নূর মুচকি হেসে আফরানের হাত শক্ত করে আঁকড়ে ধরল। আফরান হয়তো তার জবাব পেয়ে গিয়েছে। টেনে নূরকে নিজের বুকে আঁকড়ে ধরল। তাদের ঘিরে হাজারো জোনাকি পোকা ভালবাসার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে।
.
.
দুই বছর পর _________________________
.
.
এই দুই বছরের অনেক কিছু বদলে গেল। আহিল আমরিন আর ওয়াসিম সিমার বিয়ে হয়ে গেল। আরিফ আর তার বাবার মধ্যকার সম্পর্ক আলিফা ঠিক করে দিল। ইয়াশ মেহের এবং রিহান পুষ্প তাদের ভালবাসা তো আছেই।
আজ নূর আর আফরানের গায়ে হলুদ।
তাদের বিয়ের সব আয়োজন আফরানের বাড়িতেই হচ্ছে। সকাল সকাল তন্বি, পুষ্প, মায়মুনা, সিমা, আমরিন, আলিফা, মেহের ফেসপ্যাক লাগিয়ে আরামসে চিল করছে। নূর রুমে এসে এসব দেখে অবাক। বিয়ে কি তার হচ্ছে নাকি এদের। বিরক্তি প্রকাশ করে চলে গেল। যাওয়ার পথে হুট করে আফরান তাকে টেনে নিজের রুমে নিয়ে গেল।
আফরানঃঃ- হাই মিষ্টি গুড়। আজ তো আমাদের গায়ে হলুদ। আর তোমাকে হলুদ সবার প্রথমে আমিই লাগাবো। (হাতে হলুদ নিয়ে যেই না লাগাতে যাবে নূর থামিয়ে দিল।)
নূরঃঃ- আ-আ ধুরর আমি ভেবেছিলাম আপনি অনেক সাহসী। কিন্তু আপনি তো একটা ভীতুর ডিম। এভাবে সবার আড়ালে লুকিয়ে হলুদ লাগাচ্ছেন। হাহ্।
আফরানঃঃ- (হাত পিছিয়ে নিল) তাই? ওকে দেন। সন্ধ্যায় সবার সামনে থেকে তোমাকে আমি হলুদ লাগাবো। ইটস এ চ্যালেঞ্জ।
নূরঃঃ- ওহ রিয়েলি! দেন চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্টেড। (আহাহা কত শখ। এত মানুষের ভীড়ে আমাকে হলুদ লাগাবে? নো চান্স। তারপর দেখ বাচ্চু বিয়ের পর এই নিয়ে আজীবন খোটা দিব। হিহিহিহি।)
আফরান পিছিয়ে গেল। নূরও ভেঙচি কেটে চলে গেল।
সন্ধ্যায় সবাই রেডি হয়ে আসল। নূর হালকা হলদে রঙের লেহেঙ্গা পরল। তার সাথে কাঁচা ফুলের গহনা। জুঁই আর হলুদ গোলাপের মিশ্রণে তৈরি পুরো শরীর ভরতি গহনা। চুল রিবন্ডিং করে ছেড়ে দেওয়া। ঠোঁটে গোলাপি লিপস্টিক। হালকা সাজ। আফরান দূর থেকে নূর দেখে ফিদা হয়ে গেল। বুকের বাপাশে হাত রেখে “হায়…..” বলে পড়ে যেতে নিলে তার বন্ধুরা পিছন থেকে ধরে ফেলে। এসব দেখে নূর লজ্জায় লাল হয়ে আছে। লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে মাথা নিচু করে আছে। এরই মাঝে হুট করে লাইট চলে যায়। কয়েক সেকেন্ড পর আবার চলে আসে। কিন্তু নূর তার স্থানে নেই। নূরের মা আর আফরানের মা তাকে খুঁজতে লাগলো।
পুষ্পঃঃ- খুঁজে লাভ নেই। যার আমানত সেই নিয়ে গেল। আবারও ফিরে আসবে। চিন্তার কিছু নেই। (সবাই বিষয়টা বুঝতে পেরে মুখ চেপে হাসছে।)
.
.
নূরকে দেয়ালে চেপে ধরে আফরান মুচকি হাসছে।
আফরানঃঃ- তো এবার বল। কি যেন বলছিলে আমার সাহস নিয়ে। আমি ভীতুর ডিম তাই না? এবার তো সবার সামনে থেকে উঠিয়ে নিয়ে এসেছি। এবার হলুদ লাগানোর পালা। (হাতে একটি বাটিতে হলুদ নিল। আফরান হলুদ নেওয়ার আগে নূর সব হলুদ তার মুখে মাখিয়ে দিল।) এটা তো চিটিং।
নূরঃঃ- আহা। চিটিং না চ্যালেঞ্জ। আপনি আমাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন সবার সামনে থেকে আমাকে হলুদ লাগাবেন। এখন আমি চ্যালেঞ্জ করছি আপনাকে আমাকে হলুদ লাগাবেন ঠিক আছে। কিন্তু নিজের হাত ইউজ করতে পারবেন না। (আপনার চ্যালেঞ্জ জিতা ভেসতে যাবে। উফফ নূর আর জাস্ট টু গুড।)
আফরানঃঃ- ওহ হো। আমি তো জানতাম না আমার বউটা এত্তো রোমেন্টিক। চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্টেড।
নূর কিছুই বুঝতে পারল না। সে ভেবেছিল আফরান চ্যালেঞ্জ হেরে যাবে। কিন্তু এই দেখি উল্টো। আফরান ধীরে ধীরে নূরের দিকে এগিয়ে আসছে। কাছাকাছি আসতেই নূর চোখ খিছে বন্ধ করে ফেলে। আফরান আলতো করে নূরের গালের সাথে নিজের গাল স্লাইড করে গালে থাকা হলুদ লাগিয়ে দিল। অন্যপাশেও একইভাবে হলুদ লাগিয়ে দিল। নূর চোখ খুলে দেখে আফরান তেড়ি স্মাইল দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। লজ্জায় আফরানকে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে চলে গেল।
নূর মুচকি হেসে এসে দেখে সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই মুখ চেপে হাসছে। নূর লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।
আমরিনঃঃ- অঅঅঅ হাউ কিউত।
সিমাঃঃ- কিউত না লুচু একটা।
নূর তো সেদিকে লজ্জায় শেষ। তার উপর সবার সামনে এসব। আফরানের মা এসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মুচকি হাসলো। হলুদ অনুষ্ঠান শেষ হলো।
পরের দিন বিয়ে______________________
নূর লাল লেহেঙ্গা পরল। তাকেই দেখেই আফরান যেন হুশ হারিয়ে ফেলল। গর্জিয়াছ সাজ। তার উপর ভারী গহনা। অসম্ভব সুন্দর লাগছে। বিয়ের সাজে প্রত্যেক মেয়েকেই সুন্দর লাগে। তার রং রূপ যেমনই হোক না কেন।
মেয়েরা মিলে প্লানিং করছে কীভাবে আফরানের জুতা চুরি করা যায়। আর ছেলেরা প্লানিং করছে কীভাবে আফরানের জুতা চুরি হওয়া থেকে বাঁচানো যায়।
তন্বিঃঃ- হ্যালো আপুস। তোমরা সবাই গিয়ে নিজেদের আমানত সামলাও। মানে হলো নিজেদের স্বামী এবং বফদের সামলাও। আফরান জিজু যখন একা হয়ে যাবে তখন পা থেকে জুতা নিয়ে দৌড় দিব।
মেহেরঃঃ- আমরা তো আমাদের আমানত সামলাবো। কিন্তু সোহেলকে কে সামলাবে?
তন্বিঃঃ- ওই বিড়ালের গলায় ঘন্টা আমি বাঁধব। মানে আপনাদের ইয়ো ইয়ো তন্বি সোহেলকে সামলাবে।
সিমাঃঃ- যেমন নূর তেমন তার বোন। দুইটাই পাগল। একটা তো আফরান ভাইয়ার গলায় বাঁধল। এটা কার গলায় বাঁধবে কে জানে। (সবাই হেসে দিল)
তারা গিয়ে যে যার আমানত সামলে নিল। এখন বাকি সোহেল। তন্বি তার বান্ধবীকে বলল সোহেলের সাথে ফ্লার্ট করে তাকে বিজি রাখতে। সেই সুযোগে তন্বি নিচে ঝুকে আফরানের জুতা নিয়ে যেই না উঠবে সোহেল তার হাত ধরে ফেলে।
সোহেলঃঃ- এত সহজ নাকি জুতো চুরি করা।
তন্বিঃঃ- এত কঠিনও নয়।
তন্বি ধীরে ধীরে সোহেলের দিকে এগুতে লাগলো। আচমকা ঘটনায় সোহেল পিছাতে লাগলো। সেই সুযোগে তন্বি জুতা কেড়ে নিয়ে চোখ টিপি দৌড় দিল। চোখ টিপি দেওয়ার সাথে সাথে সোহেল পড়ে যায়। তন্বি পিছন ফিরে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিল। সোহেল অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তম্বির সেই হাসির দিকে। মেয়েটার হাসি অসম্ভব সুন্দর। সোহেলের হৃদয়ের স্পন্দন আকস্মিক ভাবে বেড়ে গেল।
অবশেষে ছেলেরা হার মানলো। আফরান তাদের নেক দিল। সোহেল তন্বির দিকে তাকাতেই তন্বি ভেঙচি কেটে মুখ ফিরিয়ে নিল। সোহেল মুচকি হাসলো। তন্বিও সোহেলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। শুরু হলো নতুন প্রেমের গল্প। (সবাই মিঙ্গেল সোহেল বেচারা কেন সিঙ্গেল থাকবে। তাই তাকেও তন্বির সাথে সেট করে দিলাম। তাদের লাভ স্টোরি নিজেদের মতো করে ভেবে নিয়েন।)
নূর আর আফরানের বন্ধু বান্ধবরা মিলে তাদের সারপ্রাইজ দিল। প্রজেক্টরে কত গুলো ছবি স্লাইড হচ্ছে। সর্বপ্রথম এলো তাদের ভার্সিটির ছবি। যেখানে তাদের সবার গল্প শুরু হয়েছিল। একে একে সবার ছবি ভেসে উঠেছে পর্দায়।
ওয়াসিম-সিমা ভাবছে তাদের কাহিনি। প্রথম দিনের কাহিনি। একে অপরের নাম পিংকি পিংপং দেওয়া। শপিংমলে শোপিস নিয়ে ঝগড়া করা। ওয়াসিমের প্রোপজ করা। সিমার মেনে নেওয়া।
আহিল-আমরিন ভাবছে আহিলের আমরিনকে মাই লাভ বলে সম্বোধন করা। তার লজ্জা মাখা চেহারায় হারিয়ে যাওয়া। ভালবাসা প্রকাশ করা।
রিহান-পুষ্প তাদের কাহিনি ব্যতিক্রম। ফেসবুকে প্রথম আলাপ। মিরাসরাই এ প্রথম দেখা। ভুল বোঝাবুঝি। আবার সব মিটমাট হওয়া।
মেহের-ইয়াশ তাদের প্রথম খুনসুটি। ফয়েজ লেকে ইয়াশের রাগ হওয়া। মেহেরকে সরি বলা। তারপর বন্ধুত্ব। এরপর ভালবাসা।
আলিফা-আরিফ তাদেরও প্রথম ঝগড়া। আরিফের প্রতি আলিফার অনুভূতি। দূরে থাকা। এরপর ভালবাসা ফিরে পাওয়া।
নূর-আফরান প্রথম দিনে তাদের ধাক্কা খেয়ে তুমুল ঝগড়া করা। ফ্রেশার পার্টিতে তাদের ডান্স পারফর্মেন্স। একে অপরকে প্রতিযোগিতায় চ্যালেঞ্জ করা। শর্ত পূরণ করা। ফার্ম হাউসে তাদের আলাপ। হসপিটালে নূরকে স্বান্তনা দেওয়া। তাদের দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া খুনসুটি। একে অপরকে আজব আজব নাম দেওয়া। একে অপরের দুঃখ ভাগ করে নেওয়া। দীর্ঘ সময় পর তাদের ভালবাসা প্রকাশ। আর আজ বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া।
প্রজেক্টের অফ হতেই তাদের চোখে জল চলে এলো। খুশির জল। কত স্মৃতি জুড়ে আছে সবার।
কাজী এসে তাদের নিকাহ নামাহ পড়িয়ে দিল। নূর আফরান দুজনেই এক নতুন সম্পর্কে আবদ্ধ হলো। তাদের ভালবাসা পূর্ণতা পেল। হাজারো দুঃখ কষ্টপেরিয়ে অবশেষে তারা এক হলো।
নূরঃঃ- Main ta jind meri Tere piche haari aan,
Main tan tere utton Jaan baithi vaari aa,…. (2)
আফরানঃঃ- Main taan tere nal sachi layi yaari ve,
Mainu chadi teri ishq khumari ve,
Mere dil da ikko supna, Tainu apni banake Main ta lai jana.
Chan vi gawah, taare gawah Main apna tainu manneya .
গান শেষে আফরান নূরকে কোলে তুলে নিল। দুজনেই একে অপরের মাথা ঠেকালো। দুজনের চোখে একে অপরের জন্য রয়েছে অফুরন্ত ভালবাসা। মুখে আনন্দের হাসি। তার ভালবাসার এই মূহুর্ত বন্দী হলো ক্যামেরায়।
.
.
.
.
.
সমাপ্ত.