অতঃপর প্রণয় পর্ব-০২

0
91

#অতঃপর_প্রণয়
#পর্বঃ ২
#জেসমিন_জেমি
শব্দসংখ্যা – ৮৭০

তালুকদার বাড়ীর সামনে গাড়ী থামতেই ইলমি চমকায় পরপর বলে উঠে,,,
ইলমিঃ এখানে কেনো নিয়ে এলেন আমি আমার বাসায় যাবো। ভাইজান? আমার ভাইজান কোথায়?

আবরার ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ইলমির কথা না শোনার ভান করে নেমে যেতে নিলেই ইলমি আবরারের পাঞ্জাবি খামচে ধরে প্রচন্ড রাগীকন্ঠে বলে উঠে,,,

ইলমিঃ কথা বলছেন না কেনো ? ভাইজান কোথায়? ভাইজান কোথায় বলুন ?

আবরার বাঁকা হাসে। পান্জাবি হতে ইলমির হাত ছাঁড়িয়ে নিজের হাতের মুঠোয় পুরে বলে উঠে,,

আবরারঃ আরে আরে রেগে যাচ্ছিস কেনো? আর নিজের সদ্য বিয়ে করা বরের উপরে কেউ এভাবে রাগ দেখায়? তার চেয়ে বরং চল আমার সাথে। বলে হাত টেনে নিতেই ইলমি হাত ছাঁড়িয়ে বলে উঠে,,

ইলমিঃ কোথায় যাবো? কোথাও যাবো না আপনার সাথে। আপনার মতো খারাপ লোকের সাথে কোথাও যাবো না আমি।

আবরারঃ কোথাও যাবি না মানে? কোথাও না গেলে বাসর কিভাবে হবে? আর বাসর না হলে বিড়াল ছানার মতো কিউট ছানা আসবে কোথা থেকে? বাই এনি চান্স তুই কি গাড়িতেই বাসর করতে চাইছিস ইলমি? দেখ আমি একজন সম্মানিত লোক আমার একটা সম্মান আছে আমি কিন্তু গাড়িতে বাসর করতে পারবো না।

ইলমিঃ ছিহ্।
আবরারের এমন লাগামহীন কথা বার্তায় ইলমির কানজোড়া ঝাঝা করে উঠলো। দুহাতে কান চেঁপে বলে উঠে, নির্লজ্জ মানুষ কোথাকার। ইলমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না এ যেনো তার সামনে আবরার নয় আবরারের মতো অন্য কেউ। এই লোক কি পাগল টাগল হয়ে গেছে নাকি?

ইলমিঃ লজ্জা করছে না আপনার? নির্লজ্জ মানুষ কোথাকার।

আবরার আয়েশ করে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বুঁজে বলে।
আবরারঃ উহু একদমই না।
ইলমি কিছু বলতে উদ্ধত হতেই আবরার চোয়ালদ্বয় শক্ত করে গম্ভিরস্বরে ধমকে বলে উঠে,,
চল এখন গাড়ী থেকে নাম আর একটাও কথা না।

ইলমি কিছু না বলে রাগে গটগট করতে করতে ঝটপট গাড়ী থেকে নেমে যায় এ লোককে বিশ্বাস নেই আজকের পর তো একদমই নেই।
অসভ্য লোক একটা। ইলমি গটাগট পা ফেলে বাড়ীর ভিতর চলে যায়। এ বাড়ীর আনাচে কানাচে সবটাই তার চেনা। চেনা থাকবেই না কেনো এটা তো তার একমাত্র ফুফুর বাড়ী আর এই রাক্ষস, এই করল্লার বাগান তারই ফুফাতো ভাই।

ইলমি মুখ গোমরা করে সদর দড়জায় পা রাখতেই কোথা থেকে তিন বাঁদর ইলমির উপর ঝাঁপিয়ে পরে। তিন বাঁদর বলতে ইলমির ফুফাতো বোন আবিরা ও তুর্ণা, তুর্ফা। (আবিরার ছোট চাচার জমজ মেয়ে)

তূর্ণা নিজের চশমা ঠিক করে ইলমিকে চার পাঁশে ঘুরে ফিরে দেখে বলে উঠে,,

তূর্ণাঃ আবিরা আমরা তো হেঁড়ে গেলাম ইলমি জিতে গেলো। সত্যিই ইলমি খুব সাহসী। আচ্ছা ইলমি তোর এতো সাহস কোথা থেকে হলো? তুই তো ভীতু ইলমি ছিলি।

ইলমি নিজের সাথে ঘটে যাওয়া সব কিছু গোপন রেখে এই মূহুর্তে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে নিজের কাঁধে নিজে ঝাড়া দিয়ে ভেংচি কেটে দু পা এগিয়ে বলে উঠে,,
আমি ভীতু কবে ছিলাম তূর্ণা? আমি কি তোদের মতো ভীতু নাকি? যে মানুষের ভয়ে গাছে চিপায় দাঁড়িয়ে থাকবো হুহ।

তুর্ফাঃ ইলমি সত্যি করে বলতো ভাইজান কি তোকে মেরেছে? কোথায় মেরেছে দেখি?

ইলমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে উঠে,
কি শুরু করলি তোরা? আমাকে মারবে? এই ইলমিকে মারবে এতো সাহস উনার আছে? আজব কথা বলছিস আর তোরা এমনি এমনি ওই করল্লাকে ভয় পাস উনাকে এতো ভয় পাওয়ার কি আছে? উনি কি বাঘ নাকি ভাল্লুক যে ভয় পেতে হবে হুহ।

আবিরা এক হাতে ইলমির মুখ চেঁপে ধরতে নিলে ইলমি হাত সরিয়ে বলে উঠে,,
সর তো এখান থেকে। ডং করবি না বলতে দে আমায় উনি কি বাঘ নাকি ভাল্লুক আবিরা? এতো ভয় কেনো পেতে হবে? কথা শেষ করে পিছু ফিরতেই দেখে বুকে হাত গুঁজে সদর দরজায় হেলান দিয়ে চোখ মুখ কুচকে আবরার দাঁড়িয়ে আছে। ইলমি চমকে উঠে জিব দিয়ে ঠোঁট ভিঁজিয়ে আমতা আমতা করে আবিরাদের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় তিন বাঁদরের কেউ নেই নিশ্চিত তখনকার মতো এখনো একা রেখে পালিয়ে গেছে ইলমি আর এক মূহুর্ত না দাঁড়িয়ে আবিরার রুমের দিকে ছুঁটে।
ছুটতে গিয়ে বাঁধে আরেক বিপত্তি দিকবিদিক না দেখে ছুটতে গিয়ে ফুফু আছমা বেগমের সামনে গিয়ে মুখ থুবড়ে পরতে পরতে বেঁচে যায়।

আছমা বেগমঃ আরে এই মেয়ে আস্তে যাবি তো নাকি? এভাবে পাগলের মতো দৌড়াচ্ছিস কেনো? কি হয়েছে? কখন এলি তুই?

ইলমি হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠে,,
ফুপি যেকোনো একটা প্রশ্ন করবে তো নাকি? এক সাথে হাজারখানেক প্রশ্নের জবার কিভাবে দিবো? আর কখন এসেছি তোমার গুনধর ছেলেকে জিজ্ঞেস করে নিও আমাকে যেতে দাও। (বলেই দৌড়ে রুমে চলে যায়)

__________

সারাদিন ইলমি রুমে ছিলো রুম থেকে বের হয়নি আবরারের ভয়ে তবে তূর্ণাদের কাছে বলেছে তার ঘুম পেয়েছে সে এই বেলা ঘুমাবে। আবিরা ইলমির হাবভাব বুঝতে পেরে কয়েকবার রুমে এসে বলে গেছে আবরার বাড়ীতে নেই তবুও ইলমি রুম থেকে বের হয়নি। ইলমি বাসায় চলে যাবে ইমির কল করেছিলো। ইলমি ইমিরকে আসতে বলে দিয়েছে। ইমির কোনো এক গুরুত্বপূর্ণ কাজে আছে কাজ শেষে ইলমিকে সাথে নিয়ে তারপর ফিরবে আর ইমিরের যতক্ষন না আসছে ততক্ষণ সে রুম ছেড়ে বের হবে না। কেননা আবরার বাসা থেকে বের হওয়ার আগে ইলমিকে টেক্সট করে গেছে।

বাইরে যাচ্ছি বউ, তুই চিন্তা করিস না ফিরে এসে বাসর করবো।

ইলমি নিজের মনে বিরবির করে আওড়ালো,
ছিহ, কি খারাপ,বেহায়া, বেশরম, নির্লজ্জ একটা লোক। অসভ্য পুরুষ মানুষ আপনি যে এতেটা অসভ্য ঘুনাক্ষরেও টের পাইনি এমপি সাহেব।
ইলমি পরেছে এক ঝামেলায় ফাঁসাতে গিয়ে নিজে ফেঁসে গেছে। জিততে গিয়ে নিজেই হেঁড়ে বসে আছে এই রাক্ষসটার কাছে। কি থেকে কি হয়ে গেলো ইলমি ভেবেই পাচ্ছে না। এ বজ্জাত লোক এভাবে হুট করে বিয়ে করে নিলো কেনো? ভরা মজলিশে ওভাবে বলায় কি শাস্তি হিসেবে এই বিয়ে? শাস্তি? শাস্তি তো অন্যভাবেও দেওয়া যেতো,বিয়ে কেনো? এ কেমন শাস্তি?
সে যাই হোক, মিলি আপু? মিলি আপুর কি হবে?

চলবে,,,