অতঃপর প্রণয় পর্ব-০৪

0
86

#অতঃপর_প্রণয়
#পর্বঃ ৪
#জেসমিন_জেমি
শব্দসংখ্যা ১০৭৬

রাত ৮ টা,
ঝড় বৃষ্টি থেমে গেছে অনেক আগেই। রাতের মেঘলা আঁকাশে আবছা আলোয় মিটিমিটি জ্বলছে দু-একটা তারকারাজ। চাঁদটা বোধহয় মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলাতে ব্যস্ত। সাধারনত এসময়টাতে শহরটা কোলাহলপূর্ণ থাকলেও আজ তেমনটা নেই। ঝড় বৃষ্টির তান্ডবে চারপাশটা লোকালয় শূন্য হয়ে গেছে এমন বৃষ্টিময় দিনে বাসা হতে বের হতেই বা কে চায়। মানুষ নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে কতই না পজেসিভ। নিজেদের জান বাঁচাতে কত কিছুই না করে থাকে। অথচ এতো এতো কিছুর মধ্যে তারা ভূলেই যায় পৃথিবীতে তার অনন্তকালের জন্য আসেনি। একদিন না একদিন তাদের মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতেই হবে। বোকা মানব জাতি মৃত্যু থেকে বাঁচার জন্য কত চেষ্টাই না করে অথচ তারা জানে,এমনকি মানেও তাদের এই জীবনের সব থেকে চিরন্তন সত্য হচ্ছে মৃ’ত্যু। সেটা আজ হোক বা কাল মৃত্যু তাদের জন্য অপেক্ষারত রয়েছে। প্রতিটি প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতেই হবে। প্রতিদিনের তুলনায় আজ শহরটাতে নেই কোনো কোলাহল। চারপাঁশে শুনশান নীরবতা থেকে থেকে ঝিঁ ঝিঁ পোকারা গান গাইছে।

————

ইলমি নিস্তেজ হয়ে বিছানায় পরে আছে। জ্বরে সারা শরীর পুড়ে যাচ্ছে। আছমা বেগম নিজ হাতে খাবার খাইয়ে ওষুধ খাইয়েছেন। ইলমিকে নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই তার মেয়েটা তার চোখ ফাঁকি দিয়ে কখন বৃষ্টিতে ভিজতে চলে গেছে তিনি টেরই পেলেন না। ভাগ্যিস ছেলেটা দেখে নিয়েছিলো না হলে মেয়েটা নির্ঘাত ওখানেই পরে থাকতো। কি হতো তখন ভাবা যায়? জ্বরে পরে কি সব আবল তাবল বলছে মেয়েটা।

আছমা বেগমঃ আবিরা
আবিরাঃ হ্যাঁ মা বলো।
ইলমির পাঁশেই বসে ছিলো মেয়েটা। নিজের কাছেই খুব খারাপ লাগছে তখন যদি ইলমির ডাকে তার ঘুম ভাঙ্গতো মেয়েটা এভাবে ভিজতে পারতো না আর না এমন জ্বরে পরতো।

আছমা বেগমঃ ইলমির পাঁশে থাক কিছুক্ষণ আমি কিচেন থেকে আসি। আহারে আমার জান বাচ্চাটা কতটা অসুস্থ হয়ে গেছে।
বলেই ইলমির উত্তপ্ত কপালটায় ঠোঁট ছোঁয়ালো আছমা বেগম পরপর রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।

———–

ইলমি জ্বরের ঘোরে অস্পষ্টস্বরে তখন থেকে বলে যাচ্ছে।
আপনি একটা রাক্ষস। আপনি একটুও ভালো না।
আমি চলে যাবো। বাজে লোক একটা।
জ্বরের ঘোরে কি বলছে কিছুই বুঝতে পারছে না আবিরা। ইলমিকে কয়েকবার ডেকে জিজ্ঞেস করলেও ইলমি স্পষ্ট ভাবে বলছে না আবিরা দ্রুত মাকে ডাকার জন্য নিচে চলে যায়।

________

রুমেটা ড্রিমলাইটের আবছা আলোয় আলোকিত। আবরার ধীরপায়ে এসে ইলমির পাঁশটায় বসলো। কয়েকঘন্টার ব্যবধানে মেয়েটার কি হাল। অসুস্থতা পুরো কাবু করে নিয়েছে মেয়েটা । ড্রিমলাইটের হলদে আলোয় মেয়েটার শুকিয়ে একটুখানি হয়ে যাওয়া মুখটা দেখা যাচ্ছে। জ্বরের ঘোরে অস্পষ্টস্বরে কি কি যেনো বলছে মেয়েটা। আবরার ইলমির জ্বরে উত্তপ্ত হওয়া বাম হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় পুরে ঠোঁট ছোঁয়ালো। পরপর কিছুটা ঝুঁকে ইলমির কঁপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো তারপর সরে আসতে নিলেই ইলমি আবারো অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলো,,

-আপনি একটা রাক্ষস,

আবরার ধীরকন্ঠে বললো,
হু আর তুমি মিষ্টি রাজকন্যা।

আপনি একটুও ভালো না।
আবরারঃ হুম সবটুকুই খারাপ।

-আমি চলে যাবো।

আবরার ইলমির হাতটা শক্ত করে ধরে বলে উঠে,,
উহু জীবনেও না। তুমি আমার, তুমি এই আবরারের। শুনো মেয়ে তোমার ভবিতব্যই যে আমি, এই আবরার। সম্পূর্ণ তুমিটাকে আমার, এই আবরারের নামে দলিল করে নিয়েছি। যেতে চাইলেও যাওয়ার পথ যে নেই মেয়ে।

-বাজে লোক একটা।

আবরারঃ যদি বাজে হই তবে তোমার জন্যই।
সব দায়-ভার তোমার। এটুকুনি বাচ্চা একটা মেয়ে আবরারকে তোমার বিরহের অনলে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে অঙ্গার করে দিয়েছো। কত রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দিয়েছি জানো তুমি? উহু জানবে কিভাবে আবরারের মনের খোঁজ কি তুমি রাখো? কত শত বার মনকে বুঝিয়েছি নিজেকে কন্ট্রোল করেছি আমার সমস্ত চেষ্টায় জল ঢেলে দিয়েছো তুমি। আবরারকে জ্বালানোর শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে চড়ুই।

আবরার মুচকি হেসে কিছুক্ষণ ইলমির পাঁশে বসে থাকে। ইলমি নড়ে-চড়ে উঠতেই আবরার ইলমির কপালে হাত রাখে জ্বর নেমে গেছে অনেকটা ইলমির গায়ের কাঁথা টেনে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। এদিকে ইলমি গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে সে কিছুই জানলো না আর না শুনলো।

____________

সকাল ৯টা।
জ্বর কমে গেছে ইলমির। তবে মাথাটা ভীষণ ভার ভার লাগছে। পিটপিট চোখে চাইতেই নিজের মাথার পাঁশে ফুফু আরেক পাঁশে আবিরাকে দেখতে পায় দুজনেই ঘুমাচ্ছে। ইলমি মাথায় হাত দিয়ে উঠে বসতেই আছমা বেগমের ঘুম ছুটে যায়।

আছমা বেগম ইলমির কপালে হাত রাখেন জ্বর কমে গেছে তবে মেয়েটার চোখে মুখে অসুস্থতার ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। আছমা বেগম অসহায়স্বরে বলে,,

কেনো ভিঁজতে গেলি ইলমি? একটু ও কথা শুনিস না তুই। কতটা চিন্তায় পরে গেছি জানিস তুই?

ইলমি হাসার চেষ্টা করে ফুফুকে জড়িয়ে আহ্লাদিস্বরে বলে ,,,
উমমম ফুফু ঠিক আছি আমি চিন্তা করো না তো। দেখো দেখো জ্বর একদম নেমে গেছে একটুও জ্বর নেই।

আছমা বেগমঃ হুম হয়েছে এমন ছেলেমানুষী আর একদিন করলে হাত পা ভেঙে ঘরে বসিয়ে রাখবো বলে দিলাম। বাঁদর মেয়ে।

ইলমি শব্দ করে হেঁসে উঠতেই আবিরা তড়িঘড়ি করে উঠে বসে ইলমিকে এভাবে হাসতে দেখে ভ্রু কুচকে বলে,,
কি রে কলমি এভাবে পাগলের মতো হাসছিস কেনো পাগল টাগল হয়ে গেলি নাকি? আজব।

ইলমি কিছু বললো না বরং মুখ গোমরা করে ফুফুকে জিজ্ঞেস করলো,,
ভাইজান কোথায় ফুফু? কাল কি ভাইজান আসে নি?

আছমা বেগমঃ ইমির সারারাত এ রুমে জেগে ছিলো ইলমি। বোনের অসুখে যেনো নিজেই অসুস্থ হয়ে পরেছিলো। এই তো ভোর রাতে রুমে পাঠিয়েছি। ছেলেটা সারাদিন কতোটা ব্যস্ত ছিলো। ইলমির মনটা খারাপ হয়ে গেলো ওর জন্য ভাইজানের কত কষ্ট হলো ভাইজান যেমন ওর কষ্ট সহ্য করতে পারে না তেমন ইলমিও পারে না।

_________

ড্রয়িংরুমের সোফায় একহাতে চা আরেক হাতে খবরের কাগজ নিয়ে বসেছেন ইমরুল তালুকদার চোখে তার মোটা ফ্রেমের চশমা চোখ মুখ ভীষণ গম্ভীর। ইলমি তার ফুফাকে দেখে ভীষণ ভয় পায় একদম সিরিয়াস টাইপের লোক। বলে না বাপ গা গুনে বেটা। আবরার হয়েছে বাবার একদম জিরোস কপি বরঞ্চ বাবার থেকে এককাঠি উপরেই। এ বাড়ীতে ইমরুল তালুকদার আর আবরারকে দেখে সবাই ভয় পায়। এই দুজনের কথার উপর কেউই কথা বলতে পারে না এমনকি ইমামুল তালুকদার আবরারের ছোট চাচাও নয়।
আবরার ভোরবেলা বাড়ী থেকে বের হয়েছে এই মাত্রই ফিরলো ইলমি কেবলই ড্রয়িংরুমে এসে দাঁড়িয়েছে। আবরার সদর দরজায় হালকা ঝুকে জুতোর ফিতা খুলছে ইলমি আড়চোখে সেদিকে তাকায় শ্যামবর্ণ আবরারকে দেখে কিছু মুহুর্তের জন্য চোখ আটকে যায়। লম্বাটে দেহ ,লম্বা চওড়া সুঠাম পুরুষালী দেহের অধিকারী আবরার। শক্ত চোয়াদ্বয়ে খোঁচা খোঁচা দাঁড়িই যেনো আবরারের সৌন্দর্য শতগুনে বৃদ্ধি করেছে । আচ্ছা পুরুষ মানুষ এতো সুন্দর হবে কেনো? এই সুদর্শন পুরুষটা ইলমির শুধুই ইলমির। নিজের বলা কথায় নিজেই বেশ অবাক হলো ইলমি পরপর নিজ মনে আওড়ালো,
এই মানুষটা কি আসলেই ইলমির?

ইলমিকে এভাবে তাকাতে দেখে আবরার ভ্রু কুচকে ফেলে। আবরার চাইতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায় ইলমি থতমত খেয়ে যায় তারাহুরো করে চোখ নামিয়ে নেয়। বাজে একটা লোক। কালকের কিছুই ভূলে নি ইলমি খা’রা’প লোক। ইলমি যে কেনো বার বার এমন বাজে লোকের উপর চোখ আটকে যায় কে যানে। ইলমি কখনোই এই রাক্ষস কে ভালোবাসে না কখনোই না। এমন লোককে তো কখনোই না।

আবরার ইলমির পাঁশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই ইলমির ভাবনার মাঝেই ইমরুল তালুকদার গম্ভীরস্বরে ছেলেকে ডেকে উঠেন আবরার ব্যস্ত পায়ে সেদিকে যায়।

চলবে,,,,,,