অতঃপর প্রণয় পর্ব-০৭

0
88

#অতঃপর_প্রণয়
#পর্বঃ ৭
#জেসমিন_জেমি
শব্দসংখ্যা- ৯৬৫

আবরারের বিয়ের খবরে পুরো তালুকদার বাড়ী যেনো উৎসবে মেতে উঠলো। আছমা বেগমের খুশির শেষ রইলো না যখন জানতে পারলো ইলমিই সেই মেয়ে যাকে আবরার বিয়ে করেছে। তার একমাত্র ছেলের বউ হিসেবে ইলমিকে পেয়ে তার আনন্দের শেষ নেই। ছোট থেকেই ইলমি তার খুব আদরের। মেয়েটা দেখতেই আদুরে আদুরে টাইপের। ইলমি ছিমছিমে পাতলা গড়নের , ফর্সা গায়ের রং, ডাগর আঁখি-দ্বয় জুড়ে ঘন কালো পাপড়ি। গোলাপের পাপড়ির ন্যায় পাতলা মসৃণ ঠোঁট। কোমর ছাড়ানো চোখ ধাঁধানোর মতো লম্বা ঘন কালো কেশ। মেয়েটা দেখতে একদম বার্বি ডলের মতো।

আছমা বেগম কয়েকবার মনে মনে ভেবেছিলেন ইলমিকে ছেলের বউ করার কিন্তু নিজের ভাইজানকে বলার সাহস হয়ে উঠেনি। মেয়েটা যে বড্ড ছোট্ট। এখন যখন ছেলে-মেয়ে নিজেদের ইচ্ছায় বিয়ে করে নিয়েছে সে ভীষণ খুশি হয়েছে।

—————–

আবিরা তূর্ণা তূর্ফা সহ বাড়ীর সবাই বেশ খুশি। সবাই খুশি হলেও হিমি বেগম খুশি হতে পারেন নি। খুশি না হওয়ার কারন অবশ্য রয়েছে। হিমি বেগম চেয়েছিলেন তার একমাত্র ভাইয়ের মেয়ে মিলিকে এ বাড়ীর বউ করে পুরো বাড়ীতে রাজত্ব করার মাঝখান থেকে ইলমি এসে তার সব প্লানিং লন্ড-ভন্ড করে দিলো। কত কাঠ-খড় পুড়িয়ে ইমরুল তালুকদারকে এই সম্বন্ধতে রাজি করিয়ে ছিলো। সব শেষ করে দিলো এই ইলমি। রাগে তার শরীর রি রি করছে। ইলমিকে চোখের সামনে দেখলেই তার রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তবে এই মূহুর্তে সে চুপচাপ কারো সাথেই কোনো কথা বলছে না। স্বভাব অনুযায়ী যতোটা সম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রাখছে। হিমি বেগম বরাবরই বাহিরে শান্তশিষ্ট, নরম স্বভাবের একজন মানুষ। তবে এই শান্তশিষ্ট, নরম স্বভাবের মানুষটার মনের ভিতর কতোটা নিচ চিন্তা-ভাবনা, কতোটা হিংস্রতা দিনের পর দিন জমিয়ে রেখেছে সেটা বরাবরই তার শান্ত স্বভাবের কারণে সবার অজানা রয়ে যায়। কেউ ঘুনাক্ষরেও আন্দাজ করতে পারে না এই শান্ত মুখশ্রীর আড়ালে কতোটা কুৎসিত বিকৃত চেহারা ঢাকা পরে আছে।
আমরা মানুষরা কত নিঁখুত ভাবে অভিনয় করতে পারি। কান্না চেঁপে হাসির , নিজেকে ভালো প্রমান করার জন্য আমাদের সে কি অভিনয়। একজন প্রফেশনাল অভিনেতা পর্দার আড়ালে অভিনয় করে বেড়ায় আর আমরা বাস্তব জীবনে। এই দুনিয়ায় মুখ আর মুখোশ চেনা খুব, খুব, খুবই কঠিন। কখনোই কারো বাহিরটা দেখে ভিতরের মানুষটাকে চেনা যায় না। কখনো কখনো নিষ্পাপ, মিষ্টি চেহারার পিছনে লুকিয়ে থাকে নর্দমার কীট, বিকৃত মস্তিষ্কের মতো মানুষ।

——————

সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা।
আবরার সেই সকালে বাড়ী থেকে বের হয়েছে ফিরে নি। ফিরবেই বা কিভাবে এমনিতেই তাকে বেশির ভাগ সময়ই বাসার বাহিরে থাকতে হয়। সব সময় কাজের উপর থাকতে হয়। একজন এমপির কি বাড়ীতে বসে থাকার সময় আছে? সে তো জনসেবা করতে ব্যস্ত। আবরার বাড়ীতে না আসায় ইলমি যেনো হাফ ছেঁড়ে বাঁচলো।এ বাড়ীতে প্রান ভরে শ্বাস নিতে পারছে। এই মানুষটার সামনে ইলমি কিভাবে যাবে। লজ্জায় তার মাথা কাটা যাচ্ছে। ইলমি, তূর্ণা, তূর্ফা আবিরার রুমে বসে আছে। চারজন মিলে এটা সেটা গল্প করছিলো। গল্পটা মূলত ইলমি আর আবরারকে নিয়েই ঠাট্টায় মেতে আছে। তিনজন একেক সময় একেক প্রশ্ন করে ইলমিকে অপস্তুত করে তুলছে। কথার মাঝে হঠাৎ তূর্ফা প্রশ্ন করে বসে,,,

তূর্ফাঃ আরে ইলমি সকালের কথা বল না। ভাইজান তোকে কি বললো?

তূর্ফার সাথে তাল মিলিয়ে ওরা দুজনও তাল মিলিয়ে বলে উঠলো,,

হ্যাঁ হ্যাঁ বল বল।
ইলমির সকালের কথা মনে পড়তেই লজ্জায় কুঁকড়িয়ে উঠলো। লজ্জায় তার মাথা কাটা যাচ্ছে। কি বলবে এখন এদের? মনে মনে কয়েক বার আওড়ায়,
সব আপনার জন্য, আপনার জন্য এতো লজ্জা পেতে হচ্ছে আমার। আপনি ভীষন রকমের খারাপ, সয়তান, নির্লজ্জ এমপি সাহেব।

হঠাৎ নিচ থেকে কারো কন্ঠ-স্বর শুনে চমকে উঠলো ইলমি। কন্ঠটা তার অচেনা নয় বরং ভীষন ভীষন চেনা । হ্যাঁ কন্ঠ-স্বরটা তার আব্বাজানের, মেয়ের বিয়ের খবর আছমা বেগম ঘটা করে দুপুরে ভাইজানকে টেলিফোনে জানিয়েছেন আর সন্ধ্যে হতে না হতেই এতোটা পথ জার্নি করে এসে গেছেন জহির মির্জা। ইলমি তার আব্বাজানের আগমনে চমকালো পরপর ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে শক্ত হয়ে বসে রইলো।

———–

ড্রয়িংরুমে থমথমে পরিবেশ । বাড়ীর সবাই এখানে উপস্থিত। নেই শুধু আবরার। আছমা বেগম কাচু-মাচু মুখ করে বসে আছে আড়-চোখে ভাইজানের মুখে চাইতেই দেখলেন ভাইজান থমথমে মুখ করে বসে। আছমা বেগম কন্ঠ খাদে নামিয়ে সবটা পুনরায় বললেন। জহির মির্জা সবটা খুব মনোযোগ দিয়েই শুনলেন।

ইমরুল তালুকদার গম্ভীরস্বরে বললেন,,
দেখুন ভাইজান ছেলে মেয়ে যখন বিয়েটা করেই নিয়েছে আমাদের মেনে নেয়া উচিত।

( ইমরুল তালুকদার ছেলের উপর রেগে থাকলেও আপাদত বিয়েটা মেনে নিয়েছেন। বিয়েটা যখন হয়েই গেছে সেখানে মেনে না নেওয়া মানে মূর্খতার পরিচয়। )

সবটা শোনার পর জহির মির্জা বেশ গম্ভির-স্বরে ইমরুল তালুকদারকে বলে উঠলেন,,

সবটা আমি ভেবে তার পর জানাবো। আজ আমি ইলমিকে নিয়ে যেতে চাই।

ইমরুল তালুকদারঃ হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই, অবশ্যই নিয়ে যাবেন ।

ততক্ষনে ইলমিও নিচে এসে দাঁড়িয়েছে । মেয়েকে দেখে জহির মির্জা উঠে দাঁড়ালেন। গম্ভির-স্বরে বলে উঠলেন,,
ইলমি যাও ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নাও।

ইলমি বাবার শান্ত-স্বরের ধমকে মাথা নেড়ে তড়িঘড়ি করে রুমে চলে যায়।

আছমা বেগম মিনমিনে গলায় বললো,,

আছমা বেগমঃ আবরার আসুক তারপর না হয়,,,
কথা শেষ করতে না দিয়ে জহির মির্জা থমথমে-স্বরে বলে উঠলেন,,,
আমি কিছু শুনতে চাইছি না আছমা।
আছমা বেগম থেমে গেলেন।

ইমরুল তালুকদার স্ত্রীর উপর কপাট রাগ দেখিয়ে বলে উঠলেন,,,
এখানে তোমার অসভ্য গুনধর ছেলেকে কি দরকার?

আছমা বেগম আর কথা বাড়ালেন না।

প্রায় আধ-ঘন্টা পর ইলমি ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নিচে নেমে এলো। ইলমি নামতেই জহির মির্জা সময় নষ্ট না করে সবার থেকে বিদায় নিয়ে মেয়েকে নিয়ে তালুকদার বাড়ী থেকে বের হয়ে গেলেন।

_____

ঘড়িতে রাত ১১.৪৫।
তূর্ণা তূর্ফা আবিরা ড্রয়িংরুমে টিভিতে সিরিয়াল দেখছে। সদর দরজায় ভাইজানকে দেখে আবিরা তড়িঘড়ি করে টিভি অফ করে দিলো। আবরার ভ্রু কুচকে তাকালো তিন পাঁজি যখন এখানেই আছে তাহলে তার বাচ্চা বউটার ও এখানে থাকার কথা ছিলো কিন্তু সে এখানে নেই। ব্যস্ত চোখে পুরো বাড়ীতে চোখ বোলালো উহু কোথাও তার দেখা পাওয়া গেলো না। সকালে বলে যাওয়া কথা কি তার মনে নেই? ড্রয়িংরুমের সোফায় ক্লান্ত শরীর এলিয়ে এক গ্লাস পানি চাইতেই আবিরা ছুটে গেলো রান্নাঘরে।
আবরার আজ তারাতারিই বাড়ীতে ফিরেছে কিন্তু যার জন্য বাড়ী ফেরা তাকেই কোথাও দেখছে না। আবিরা গ্লাস এগিয়ে দিতেই আবরার পানি টুকু খেয়ে গম্ভির-স্বরে জিজ্ঞেস করে উঠলো,,
আবরারঃ ইলমি কোথায়?
প্রশ্নটা শোনার সাথে সাথেই তূর্ণা তূর্ফা ঠোঁট চেঁপে হেসে উঠলো। আবিরা পড়লো মহা ঝাঁমেলায়। ভাইজানকে কি বলবে ভেবে পায় না। আমতা আমতা করে ধীরকন্ঠে বলে,,

আবিরাঃ ইলমিকে মামা এসে নিয়ে গেছে।
আবরার যেনো শুনতে পেলো না, না শোনার ভান করে বললো,,

আবরারঃ কি?

আবিরাঃ বিকেলে মামা এসেছিলো ইলমিকে নিতে।
কথাটা শোনা মাত্রই মস্তিষ্কে ধপ করে আগুন জ্বলে উঠলো । মুহূর্তেই চোখ মুখ র*ক্ত লাল বর্ণ ধারন করেছে রাগে শরীর জ্বলে উঠলো যেনো তবে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে থমথমে মুখে গটগট পায়ে উপরে চলে গেলো।

চলবে,,,

(ভুলত্রুটি মার্জনীয়)