#অতঃপর_প্রণয়
#পর্বঃ ১৩
#জেসমিন_জেমি
কেটে গেছে ১ মাস।
অতঃপর বিয়ের সময় ঘনিয়ে এসেছে। আজ ইলমির গায়ে হলুদ কাল বিয়ে ৷ পুরো শহরে আবরারের বিয়ের কথা ছড়িয়ে গেছে। একজন এমপির বিয়ে বলে কথা সাংবাদিকরাও ঘটা করে নিউজ করতে ব্যস্ত৷ মির্জা বাড়ী আজ সেজে উঠেছে। পুরো বাড়ীটা আজ লাল, নীল, সবুজ আলোয় আলোকিত। একমাত্র মেয়ের বিয়েতে কোনো কিছুর কমতি রাখেন নি জহির মির্জা। ইমির ব্যস্ত হাতে বাবার সাথে তাল মিলিয়ে সবকিছুর তদারকি করছে একমাত্র বোনের বিয়েতে কোনো রুম কমতি সে রাখবে না।
—————
ইলমিকে সুন্দর করে হলুদের সাজে সাজানো হয়েছে। হলুদ সবুজ কম্বিনেশনের শাড়ী। আর্টিফিশিয়াল ফুলের গহনা, ভারী মেকাপ এ ইলমিকে একদম পুতুল পুতুল লাগছে যেনো। সেই সাজে কেউ একজন দূর থেকে মুগ্ধ হচ্ছে, কেউ একজন চোখ-জোড়া সরাতেই পারছে না যেনো।
ও বাড়ী থেকে আবিরা তূর্ণা, তূর্ফা, আবির, এমনকি মিলিসহ অনেকেই ইলমিকে হলুদ দিতে এসেছে। বেশ জাঁক-জমক ভাবেই গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। একে একে সবাই ইলমিকে হলুদ ছোঁয়ালো, নাঁচ গান হলো।
আবিরা হলুদ শাড়ী পড়েছে সাথে হালকা সাজ। যাকে দেখানোর জন্য যত্ন করে সাঁজলো তাকেই বিয়ে বাড়ীর কোথাও দেখতে পেলো না। মনটা খারাপ হয়ে গেলো তার। বিরস মুখে স্টেজে ইলমির পাঁশে বসা ছিলো দূর থেকে চোখ পড়লো ব্যস্ত ইমিরের দিকে। লম্বা চওড়া, ধবধবে ফর্সা, কুঁচকানো চুল , হলুদ পান্জাবি পরিহিত ইমিরকে দেখে চোখ আটকে গেলো তার হৃদ পিন্ড জোরে জোরে লাফাতে লাগলো। হঠাৎ ইমির স্টেজের দিকে তাকাতেই দূর থেকে চোখা-চোখি হয়ে গেলো। আবিরা থতমত খেয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। ইমির ভ্রু কুচকে একবার আবিরার দিকে চাইলো তো আরেকবার নিজের পাঁশে দাঁড়ানো আবিরের দিকে পরপর থমথমে মুখ করে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
তূর্ফা চুপচাপ বসে আছে। তার সুন্দর করে ভাঁজ করা শাড়ীর কুচিগুলোর পিনটা খুলে গেছে। এই নিয়ে তার দুঃখের শেষ নেই তার উপর এক উটকো ঝামেলা , একটা সাদা বিলাই এসে তার ঘাড়ে পরেছে। ইলমির থেকে শুনেছে ছেলেটা আমেনার বেগমের বান্ধবীর ছেলে নাম তন্ময়। ছেলেটা সেই কখন থেকে বকবক করে যাচ্ছে এ নিয়ে তূর্ফার বিরক্তির শেষ নেই, তূর্ফা পারছে না এখান থেকে উঠে যেতে। কি মুশকিল।
তন্ময়ঃ কিছু লাগবে, এ্যনি প্রবলেম? এভাবে অন্ধকারে বসে আছেন কেনো? কি ব্যপার ম্যাডাম কথা বলছেন না কেনো?
তূর্ফা বিরক্ত হয়ে এবার বলে উঠলো,,
এতো বকবক কেনো করছেন? একা একটা মেয়ে দেখেছেন আর এসে গেছেন বকবক করতে? আপনাদের মতো ছেলেদের জন্যই বিয়ে বাড়ী থেকে শুরু করে কোনো অনুষ্ঠানে মেয়েরা শান্তিতে এটেন্ড করতে পারে না। অসহ্যকর পুরুষ জাতি ।
তন্ময় বেশ অবাক হলো, কপাল কুচকে বলে উঠলো,,
আরে আরে সেঁধে সেঁধে ভালো মানুষী দেখাতে এসে দেখি খারাপ হয়ে গেলাম।
তূর্ফা বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে ফুসে উঠলো,,
কে বলেছিলো ভালো মানুষী দেখাতে?
তন্ময় – অলরাইট দেখালাম না। ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো, তবে এমন অন্ধকারে ঝোপ ঝারের কাছা কাছি থাকবেন জানেন তো সাপের উপদ্রব বেড়েছে সো কেয়াফুল।
বিরবির করে বললো,,
অবশ্য রাসেল ভাইপারস ও আপনাকে দেখে ভয় পাবে নাগিনী। তুূর্ফা শুনলো না, সাপের কথা মনে পড়তে লাফিয়ে উঠলো সাথে সাথে ধপ করে শাড়ীর কুচি গুলো খুলে পড়লো।
তূর্ফার এমন ভয়,পাওয়া দেখে তন্ময় হো হো করে হেঁসে উঠতেই তূর্ফা প্রচন্ড রেগে গেলো। সাথে সাথে নিজের শাড়ীর কুঁচি গুলোর দিকে চেয়ে ফুপিয়ে কেঁদেও উঠলো।
তূর্ফার ফুপিয়ে কান্নার আওয়াজ পেতেই তন্ময় ফোনের ফ্লাশ অন করতেই তূর্ফা ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো বেশ লজ্জাও পেলো । তন্ময় সবটা বুঝে তড়িঘড়ি করে ফ্লাশ অফ করে বললো।
তন্ময়ঃ ওহ শীট। আম স্যরি, আম রিয়েলী স্যরি।
আমি আসলে বুঝতে পারে নি।
তূর্ফা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,,
ই,ই ইটস ওকে একটু স্টেজে বসা মেয়েটাকে ডেকে দিন প্লিজ। (আবিরাকে উদ্দেশ্য করে।)
তন্ময় মাথা নেড়ে স্টেজের দিকে এগুলো কিছু একটা ভেবে আবারো ফিরে এলো।
তন্ময়ঃ আপাদত ফোনটা রাখুন।
তূর্ফাঃ লাগবে না আপনি ডেকে দেন তাই হবে।
তন্ময় কিছু না বলে জোড় করে ফোনটা তূর্ফার হাতে গুজে দিয়ে স্টেজের দিকে পা বাড়ালো। তূর্ফা ফোনের ফ্লাশ অন করে চারপাশে দেখতে লাগলো। বেশ কিছুক্ষণ পর একটা অচেনা মেয়ে আসলো। তূর্ফার থেকে বয়সে একটু বড়। মেয়েটা এসেই হাসি হাসি মুখ করে বলে উঠলো,,
এই মেয়ে এভাবে কেউ এখানে বসে থাকবে?
তূর্ফা কিছু বললো না মেয়েটা হেঁসে তূর্ফাকে দাঁড় করিয়ে কুঁচি গুলো ঠিক করে দিতে দিতে বললো তন্ময় পাঠালো। তূর্ফা বেশ লজ্জা পেলো তবে কিছু বললো না। মেয়েটা হাসি মুখে বললো,,
আমি তন্নি তন্ময়ের বড় বোন।
তূর্ফা হেসে বললো,,
আমি তূর্ফা। ধন্যবাদ আপু।
তন্নী হাসলো আড়-চোখে দূরে ভাইয়ের দিকে চাইলো তন্ময় বোনের চাহনী লক্ষ করতেই গটাগট পা ফেলে সরে গেলো।
—————–
একে একে সবাই ইলমিকে হলুদ ছোঁয়ালো, মিলিও ও যত্ন করে ইলমির গালে হলুদ ছোঁয়ালো। ইলমি ভীষণ অবাক হলো, মিলিকে যতই দেখছে ততই মুগ্ধ হচ্ছে। হলুদ দেওয়া শেষে ব্যস্ততার সাথে ভীষন সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললো,,
তোমার সাথে জরুরী কথা আছে ইলমি। একটু আসবে? খুব প্রয়োজন।
ইলমি বুঝে উঠতে পারলো না কি বলবে, কি এমন দরকার? মুহুর্তের মিলির চোখ মুখের রং পাল্টে গেলো। ইলমি পরপর মাথা নেড়ে হ্যাঁ বোঝাতেই মিলি সরে গেলো। শেষমেশ চোখ মুখ কুচকে হিমি বেগম ইলমিকে হলুদ ছোঁয়ালো। সবাই যখন নাচ গানে ব্যস্ত হয়ে গেলো মিলি চোখ ইশারায় ইলমিকে ডাকলো ইলমি স্টেজ থেকে নেমে আসতেই । সবার অগোচরে মিলি তড়িৎগতিতে ইলমির হাত টেনে অন্ধকারের দিকে যেতে লাগলো ইলমি চমকালো, ভীষণ ভয় ও পেলো। অন্ধকারে দিকবিদিক ভূলে মিলি তাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। তবে কোথায় যাচ্ছে ইলমি বুঝলো না কয়েকবার জিজ্ঞেস করার পরও মিলি জবাব দিলো না। এদিকে সবার অগোচরে হলেও চোখ এড়ালো না হিমি বেগমের ওদের যাওয়ার পানে চেয়ে বাঁকা হাসলো সে মনে মনে ভীষণ শান্তি ও পেলো। ভীষণ শান্তি গত একমাসের অশান্তি এক নিমিষেই কমে গেলো যেনো। সে আঁয়েশ করে চেয়ারে বসলো।
চলবে,,,,,,
(ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)