অতঃপর প্রণয় পর্ব-১৯

0
84

#অতঃপর_প্রণয়
#পর্বঃ ১৯
#জেসমিন_জেমি

কেটে গেছে কয়েকমাস ।
ইলমি অনার্স ১ম বর্ষে এডমিশন নিয়েছে কিছুদিন হলো। সময়ের সাথে সাথে কিছু সম্পর্ক বিভিন্ন বিভিন্ন রুপ ধারন করে ৷ কিছু সম্পর্ক গিয়ে ঠেকে তিক্ততায় আর কিছু সম্পর্কে ছড়ায় মধুরতা। কিছু সম্পর্কে বিচ্ছেদ আর কিছু সম্পর্ক নতুন সূচনায় । সময়ের সাথে সাথে সব পরিবর্তন হয়ে যায় মানুষের মন,সম্পর্ক। সব, সব, সব, পৃথিবীর সমস্ত কিছুই পরিবর্তনশীল।

এইতো ইলমি এই কয়েকদিনে আবরারের মাঝে নিজেকে পুরোপুরি হারিয়ে বসে আছে। আবরারের অপ্রকাশিত ভালোবাসা, ইলমির প্রতি যত্ন সব কিছ ইলমিকে আবরারকে ভালোবাসতে বাধ্য করেছে। নিজেকে বলতে এখন তার আবরারকেই মনে হয় । একটা মানুষ কি করে কয়েদিনের মাঝে এভাবে মায়ায় জড়িয়ে পরতে পারে? এভাবে হুটহাট ভালোবাসতে পারে? হাউ স্ট্রেন্জ ?
আসলে কাউকে ভালোবাসতে, মানুষের মায়ায় জড়াতে হাজার খানেক কারন লাগে বলে মনে হয় না বরং কোনো মানুষকে ঘৃণা করতেই হাজার খানেক কারন লাগে, হুটাহাট কাউকে ভালোবাসা গেলোও হুটহাট কাউকে ঘৃণা করা যায় না।

ইলমি ভীষণ করে মায়ায় জড়িয়েছে, ভালোবেসে ফেলেছে তার শ্যামবর্ণ কিউট এমপি মশাইকে ।কে জানতো হুটহাট বিয়ে করা তার বরকে সে এতোটা ভালোবেসে ফেলবে। তবে ইলমি ভেবে পায় না হঠাৎ কি এমন মিরাক্কেল ঘটলো আবরারের মতো রাক্ষস রাজা দুষ্টু ইলমির মিষ্টি রাজা মশাই হয়ে গেলো। তবে করল্লার বাগান নামটা সে চেন্জ করতে চায় না লোকটা হুটহাট তার উপর রেগে যায়, রেগে গিয়ে কথাও শোনায়। এইতো রাতেও কত গুলো কথা শুনালো লোকটা ইলমি কি ইচ্ছে করে তার পান্জাবিতে লিপস্টিক লাগিয়েছিলো নাকি? সে তো নিজেই কাছে আসলো যেই সাদা পান্জাবিতে লাল লিপস্টিক লাগলো ওমনিই সব দোষ ইলমির ভাবা যায়? লোকটা আস্ত একটা অসভ্য হুহ।

——–
অলস দুপুর।
বাড়ীর বড়রা হয়তো নিজেদের রুমে। ইলমি, আবিরা, তূর্ণা, তূর্ফা ড্রয়িংরুমে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। আড্ডার টপিক কতজনকে গাঁধা বানিয়েছ। কতজনকে নিজের পেছনে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়েছে।

তূর্ফা- ইলমি লাবিব গাঁধার কি খবর?

আবিরা অতি আগ্রহ হেঁসে বললো,
কি খবর আবার ইলমির বিরহে দেবদাস।

ইলমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে সোফায় উঠে বসে বললো,
– ওসব গাঁধাদের খোঁজ খবর আমি রাখি না হুহ।

তূর্ণা- হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি তো দ্য গ্রেট এমপি সাহেব আবরার ফাহাদের খোঁজ রাখো। মাঝে মাঝে গভীরভাবেও খোঁজ রাখো তাই না ভাবিজি?

ইলমির গাল দুটো লাল হয়ে উঠলো। এই বজ্জাত মেয়েগুলো কারনে অকারনে তাকে লজ্জায় ফেলার ফুরসৎ খুঁজে বেড়ায় ।

তূর্ণা ইলমির লজ্জা বাঁড়িয়ে দিতে বললো,
-ওরে ওরে লজ্জাবতী কি লজ্জা কি লজ্জা!

আবিরা তূর্ফা হো হো করে হেসে উঠলো। ইলমি চোখ পাঁকালো । ধমকে বললো,

তূর্ণা কি বাচ্চি চুপ করবি?

তূর্ফা – আচ্ছা শোন না তাসবির ভাই কিন্তু যথেষ্ট স্মার্ট, ড্যাশিং, সুদর্শন ছিলো আর অনেক কিউট ও।

তূর্ণা তাল মিলিয়ে বললো,
– হুম হুম । তাসবির ভাইয়া অনেক কিউট।
এক কথায় কিউটের ডিব্বা তাই না রে? গুলুমুলু তাসবির ভাই।

আবিরা, ইলমি মুখ চাওয়াচাওয়ি করে ঝংকার তুলে হেঁসে উঠলো।

এদিক আবরার ক্লান্ত হয়ে বাড়ীর সদর দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে সাথেই আবির। আবরারের চোখে মুখে গাম্ভীর্যতা। আবরার দরজা থেকে ভ্রু কুঁচকালো। আবির হতবাক হয়ে চার তরুনীর কথাগুলো শুনে যাচ্ছে আর পাঁশের মানুষটার ভাব মূর্তি পর্যবেক্ষন করছে। হঠাৎ তূর্ফা দরজায় তাকাতেই ভাইজানকে দেখে চুপসে হয়ে গেলো। পুরো ড্রয়িংরুমে শুধু ইলমির হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে। আবরার নিঃশব্দে ড্রয়িংরুমে এসে দাড়াতেই তূর্ফা তড়িঘড়ি করে বসা থেকে উঠে পড়লো। তূর্ফা তুতলিয়ে বললো,,

ভা, ভাইজান!

চারজন চকিতে পাঁশ ফিরলো। আবরার চোখ মুখ কঠিন রুপ ধারণ করেছে। আবির চিবুক গিলে নিলো । আবরার একপলক ইলমির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর-স্বরে ধমকে ইলমিকে রুমে আসতে বলে গটাগট পা ফেলে রুমে চলে গেলো। ইলমি কাচুমাচু মুখ করে সবার মুখের দিকে চাইলো পরপর রুমের দিকে পা বাড়ালো। ইলমি চলে যেতেই তিনজন হু হা করে হেসে উঠলো৷ তূর্ণা নিজের চশমাটা ঠিক করে আড়চোখে আবিরের দিকে তাকাতেই দেখলো আবির ভ্রু উচিয়ে তূর্ণার দিকেই তাকিয়ে তূর্ণার হাসি মিলিয়ে গেলো। আবির থমথমে মুখে বললো,
– সুফিয়া আপা এক গ্লাস পানি দিবেন তো।

আবিরা – ভাইয়া বসুন।

সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালো আবির মাথা নেড়ে সোফায় বসতেই তূর্ণা পানি হাতে এসে দাঁড়ালো। আবিরা, তূর্ফা মিটিমিটি হেঁসে চলেছে। আবির সেদিকে তাকিয়ে কপাল খানেকটা কুচকে তূর্ণাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– আপনি কেনো? সুফিয়া আপা?

তূর্ণা চট করে বললো,
পানি চাই নাকি সুফিয়া আপাকে?

বলেই জিব কামড়ালো। আবির থতমত খেয়ে গেলো। এই মেয়ে বলে কি? আবিরা তূর্ফা এবার শব্দ করে হেসে উঠলো। আবির ধমকে উঠতেই দুজন মুখে আঙুল চেপে চুপ করে যায়। তূর্ণার থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেয়ে গটাগট পা ফেলে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো আবির।

——–

পুরো রুম জুড়ে পিনপিন নিরবতা। আবরার পুরো রুম জুড়ে পায়চারি করছে। ইলমি মাথা নিচু করে দরজায় পাঁশে এসে দাঁড়ালো হাতে পানির গ্লাস । গায়ের উড়নাটা একহাতে পেঁচিয়ে মুচড়াচ্ছে। আবরারকে দেখে মনে হচ্ছে সে ভীষণ রেগে আছে। ইলমির বুঝতে বাকি নেই সে আজকেও এই লোকটার কথা শুনতে যাচ্ছে। ইলমি ভয়ে ভয়ে কাচুমাচু মুখ করে সবটা দেখে রুমে গিয়ে কাঁপাকাঁপা হাতে পানির গ্লাস আবরারে সামনে ধরতেই আবরার রাগী চোখে ইলমির দিকে তাকায়। পানির গ্লাস এক ঝটকায় সরিয়ে দিতেই গ্লাসের পানি ফ্লোরে পড়ে যায়। ইলমি ভয়ে দু-কদম পিছিয়ে যেতেই আবরার ইলমির ছোট্ট দেহখানা নিজের একদম কাছে টেনে গম্ভিরস্বরে বলে উঠে,

ছেলেটা কে? তোর সাথে ছেলেটার কি?

ইলমি রাগের কারণ বুঝতে পেরে হাঁসবে নাকি কাঁদবে বুঝে উঠতে পারলো না। সামান্য একটা কারনে এভাবে রেগে যাওয়ার কি আছে? ইলমি মনে মনে বাঁকা হাসলো, ভাবলো, হুটহাট এই ইলমির সাথে রাগারাগি তাই না দেখাচ্ছি মজা।
মুখভার করে চেঁচিয়ে বললো,

– বয়ফ্রেন্ড ছিলো ভালোবাসতাম উনাকে। চার বছরের রিলেশন ছিলো আমাদের। দুজন দুজনকে কত ভালোবাসতাম। শুধু আপনার জন্য শুধু মাত্র আপনার জন্য আমি তাসবির ভাইকে পেলাম না।

আবরারের এবার যেনো রাগে মাথা ফেঁটে যাচ্ছে। ইলমির কথা শেষ হতেই ইলমির অধর যোগল নিজের আয়ত্বে নিয়ে নিলো। নিজের রাগ পুরো দমে মিটিয়ে ইলমিকে একঝটকায় নিজের থেকে সরিয়ে দিলো৷ ইলমি টাল সামলাতে না পেরে সোভার কাছটায় গিয়ে পড়লো। হালকা ব্যথাও পেলো তবে শব্দ করলো না৷ পরপর আবরার গটাগট পা ফেলে ইলমিকে রেখে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

চলবে,,,

ভুলক্রুটি মার্জনীয়।