অতঃপর প্রণয় পর্ব-২১

0
85

#অতঃপর_প্রণয়
#পর্বঃ ২১
#জেসমিন_জেমি

আবরার ফ্রেশ হয়ে তোয়ালে হাতে বের হলো। সদ্য ফ্রেশ হওয়া মানুষটাকে ইলমি আড়চোখে দেখলো। কিঞ্চিৎ লম্বা চুল গুলো কপালে লেপ্টে আছে, চোখে মুখে ছোট ছোট পানির কণা গুলো চিকচিক করছে যেনো। ব্লু রঙের পান্জাবিতে অসম্ভব সুদর্শন লাগছে লোকটাকে। ইলমি ভ্রু কুঁচকালো নিজের শাড়ীর দিকে তাকিয়ে যখন দেখলো তারা দুজন ম্যাচিং ম্যাচিং। ইলমি কিছু বললো না। বলবে কেনো? লোকটার সাথে সে রেগে আছে। দুপুরের কোনো কিছুই এই ইলমি ভূলেনি একদম। কথা বলবে না লোকটার সাথে এমন অসভ্য লোকের সাথে ইলমি কথা বলে নাহ। আবরার ইলমির দিকে তাকাতেই ইলমি তড়িঘড়ি করে চোখ সরিয়ে ফেললো আবরার মুচকি হাসলো। বেলকনিতে তোয়ালেটা রেখে ড্রেসিংয়ে ইলমির পাঁশে এসে দাড়ালো।

ইলমি চোখ মুখ কুঁচকালো কোমর সমান চুলগুলো হাত খোঁপা করে নিলো। এমন ভাব যেনো আবরার বলতে কোনো প্রাণীর এ ঘরে উপস্থিতি নেই। আবরার ভ্রু উচিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসলো। ইলমি আয়নায় তাকাতেই আবরার এক অদ্ভুত কায়দায় চোখ টিপে বাঁকা হাসলো। ইলমি রাগীকন্ঠে বললো,,
ছিহ্ অসভ্য!

আবরার চুলে চিরুনি চালাতে চালাতে বললো,,
– শুনলাম না জানু কিছু বললি?

ইলমি নিজ হাতে কপাল চাপড়ালো পরপর দাত চেঁপে বললো,
– কোনো অসভ্য, অভদ্র লোকের সাথে ইলমি কথা বলে না।

আবরার ভ্রু কুচকালো মুহুর্তেই চোখে মুখে গাম্ভীর্যতা এঁটে দাঁড়ালো। ইলমি বিরক্তিতে ‘চ’ কারান্ত শব্দ করে উঠলো তবে মুখে কিছু বললো না। আয়নাতে নিজেকে ভালো ভাবো পরখ করে ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক লাগালো পরপর দু ঠোঁট একসাথে করতে নিলেই আবরার একটানে ইলমিকে নিজের একদম কাছে টেনে নিলো পরপর ইলমির লিপস্টিক লাগানো অধরযোগলে নিজের ঠোঁট ডুবালো। অকস্মাৎ এমন ঘটনায় ইলমি ভয় পেয়ে গেলো । ভয়ে আবরারের পান্জাবির সামনের কিছু অংশ শক্ত করে নিজের মুঠোয় পুরে নিলো। বড় বড় চোখ করে চেয়ে রইলো। মিনিট কয়েক পরে দুহাতে আবরারকে হালকা ধাক্কা দিতেই আবরার সরে গেলো। ইলমি হাতের উলটো পাঁশে ঠোঁট মুছে দাঁতে দাঁত চিঁবিয়ে বললো,,
– এমপি মশাই আপনার লিপস্টিক খেতে মন চেয়েছে আমাকে বলতেন পুরো লিপস্টিকটাই দিয়ে দিতাম।

আবরার এবার ও বাঁকা হাসলো পরপর ইলমির একদম গা ঘেষে এসে দাড়ালো ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,,
– লিপস্টিক না লিপস্টিক ওয়ালা তোর ওই ঠোঁ….

কথা শেষে হওয়ার আগেই ইলমি তড়িঘড়ি আবরারের মুখ চেঁপে ধরে থামিয়ে দিলো। দু পা সরে গিয়ে চেঁচিয়ে বললো,,

চুপ একদম চুপ। আপনি এতো নির্লজ্জ ছিহ্।

এবার আবরার দু পা এগিয়ে গেলো। ইলমির উন্মুক্ত কোমর চেঁপে শক্ত করে নিজের বুকে জড়িয়ে নিলো। কোমরে ঠান্ডা হাতের স্পর্শে কেঁপে উঠলো ইলমি। কিছুক্ষণ আবরারের শক্ত বাহুবন্ধনী থেকে মুক্তির জন্য ধস্তাধস্তিও করলো তবে মিনিট কয়েক পর ইলমির ছোট দেহখানা শান্ত হয়ে সুঠামদেহি আবরারের বুকে লেপ্টে রইলো পরপর অস্ফুটস্বরে ফুপিয়ে উঠলো। আবরার ইলমির কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো ধীরকন্ঠে বললো,
-স্যরি।

ইলমি কিছু বললো না তবে ফোঁপানোর আওয়াজ ঠিক শোনা গেলো। আবরার আবারো বললো,,
স্যরি বললাম তো চড়ুই।
বারবার অবাধ্য কেনো হও? আমাকে রাগিয়ে কেনো দাও?

ইলমি আবরারের পান্জাবিতে নাক গষে আহ্লাদি সূরে বললো,
আপনি হুটহাট রেগে কেনো যান সবটা না শুনেই? তাসবীর ভাইয়া আমাদের কোচিং টিচার এছাড়াও দু বাচ্চার বাবা এখন একটা মেয়েও হয়েছে।

আবরার ধীরকন্ঠে বললো – হুম জানি।

ইলমি আবরারকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দিলো। আবরার ভ্যাঁবাচ্যাঁকা খেয়ে গেলো পুরো। হতভম্ব হয়ে ইলমির দিকে তাকিয়ে রইলো। ইলমি বললো,
– কচু জানেন আপনি এতোক্ষণ যা বলেছি সব মিথ্যে বলেছি তাসবির ভাইয়া আমার বয়ফ্রেন্ড আমি তাকেই ভালোবাসি। এখন সড়ুন এখান থেকে আমাকে যেতে দিন।

আবরার ইলমিকে ছাড়লো না আবারো নিজের কাছে টেনে ঠোঁট কামড়ে হেঁসে ইলমির কানে ফিসফিসিয়ে বললো,
– ওমন তিন তিনটা বাচ্চার বাবাকে তুই ভালোবাসিস? উমম তুই চাইলে আমিও কিন্তু তোর ছোট ছোট বিড়াল ছানার মতো কিউট বাচ্চার বাবা হতে পারি। কি বলিস?

লজ্জায় ইলমির গাল দুটো লাল হয়ে উঠলো। লোকটা পাক্কা একটা সয়তান। দুহাতে কান চেঁপে ধরতেই আবরার আবারো অদ্ভুত কায়দায় চোখ টিপে উঠলো। ইলমি সাথে সাথে চোখ বুঁজে নিলো। লম্বা শ্বাস টেনে বললো,

ছাড়ুন আমায়।

আবরার বললো,
-এক শর্তে!

ইলমি ভ্রু কুঁচকালো আবরার রহস্যময় হেঁসে গাল এগিয়ে বললো,
-আগে চুমু তারপর।

ইলমি চোখ মুখ কুচকে বললো,,
– দিন দিন আপনার বেশ অবনতি হচ্ছে এমপি মশাই ছিহ্।

আবরার ঠোঁট কামড়ে হেঁসে বললো,
আমি চাই দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর এমন অবনতি বরং আমার হতেই থাকুক।

ইলমি বিরক্তি ভরা চোখে পুরো আবরারকে অবলোকন করলো আবরার তাড়া দিয়ে বললো,
-কি হলো দিচ্ছো না কেনো?

ইলমি চোখ মুখ কুঁচকে বললো,
-ছেড়ে দিন তারপর।

আবরার ছেড়ে দিলো। ইলমি বললো,
-চোখ বন্ধ করুন।
আবরার চোখ বুঁজতেই ইলমি এক দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। দরজার কাছটায় গিয়ে বলে উঠলো,

-অসভ্য লোক একটা। আপনার ওই খেঁজুর কাঁটার মতো দাড়ি গুলো কেটে তারপর চুমু নিতে আসবেন তার আগে নয়।
বলেই দৌড়ে চলে গেলো আবরার সেদিকে তাকিয়ে ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলো ৷

———–
ড্রয়িংরুমে মিলন তাজওয়ার, জাহানারা বেগম আর মাহিদ বসে আছে। ইমরুল তালুকদার ইমামুল তালুকদার টুকটাক কথা বলছেন তাদের সাথে । আবির আসতেই ইমরুল তালুকদার তাকে বসতো বললো। আবির বাধ্য ছেলের মতো ইমামুল তালুকদারের পাশে বসলো। তূর্ণা তূর্ফা আবিরার রুমের পর্দার ফাঁকে লুকিয়ে সবটা দেখছে। এটা আবিরের চোখ এড়ালো না তূর্ণা মাথা বের করে উঁকি দিতেই দেখলো আবির কপাল কুঁচকে এদিকেই তাকিয়ে। আবিরকে এদিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে গেলো তূর্ণা চিবুক গিলে সেই যে রুমে ডুকলো আর উঁকি দিলো না। এমনকি তূর্ফাকেও উঁকি দিতে দিলো না। আবির তূর্ণার ভীত চেহারা দেখে ঠোঁট চেঁপে হাসলো। কিছুক্ষণ পরেই আবরার চলে আসলো সেখানে আবরারকে দেখেই মাহিদ উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দিয়ে উঠলো আবরার হেঁসে জবাব দিলো। আবরার মাহিদ ছেলেটার সম্পর্কে সবটা জানে।
মাহিদ ছেলে হিসেবে যতটা ভালো তার থেকে ভালো একজন মানুষ হিসেবে। ব্যবহার ভালো, বিনয়ের সাথে কথা বার্তা বলে। ছেলেটাকে দেখলেই যে কেউ বলবে ছেলেটা ভালো। সবটা জেনেই বাড়ীতে আসার জন্য এলাউ করেছে আবরার। ছেলে ভালো, বাড়ীর সকলের পছন্দ হলেও বিয়ের কথা আগাবে না সে। এক্ষেত্রে তার বোনের মতামত সবথেকে উপরে তার কাছে। বোনের অনুমতি ছাড়া কখনোই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিবে না।

———-

আবিরা একদম চুপচাপ বসে আছে। ইলমি সন্দিহান চোখে দুপুর থেকে পর্যবেক্ষণ করছে মেয়েটাকে। যখন থেকে শুনেছে তাকে দেখতে পাত্রপক্ষ আসবে তখন থেকে মেয়েটা মুখটাকে বাংলোপাচোর মতো করে রেখেছে। ইলমি বললো,,

-দুপুর থেকে দেখছি তোর মন খারাপ কিছু হয়েছে আবিরা ?

আবিরা সম্বিৎ ফিরে পেলো মুচকি হাসার চেষ্টা করে বললো,,
-কই কিছুু না তো। কি হবে?

তূর্ণা চট করে বললো – এই তুই কি কাউকে ভালোবাসিস আবিরা?

আবিরা কপাল কুঁচকে বললো,
ফালতু কথা বলবি না তূর্ণা।

তূর্ফা- যখন থেকে জানতে পেরেছিস তোকে দেখতে পাত্রপক্ষ আসবে তখন থেকে এভাবে মন খারাপ করে বসে আছিস।

আবিরা ধীরকন্ঠে দাঁতে দাঁত চিঁবিয়ে বললো

-তো কি করবো? পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে শুনে খুশিতে নাঁচবো?

ইলমি – আচ্চা আচ্ছা বাদ দে।
তূর্ণা তূর্ফা আবিরাকে তৈরি করতে হবে তো নাকি?

তারপর তিনজন মিলে খুব সুন্দর করে তৈরি করে দিলো৷

চলবে ,,,,,,,

[ভুলক্রটি মার্জনীয় ]