#অতঃপর_প্রণয়
#পর্ব ২৪
#জেসমিন_জেমি
কেটে গেছে ১ সপ্তাহ।
সময় চলছে সময়ের গতিতে, তবে মানুষের জীবন নদীর ধারা কি আর এতো সহজেই চলে? উহু, কখনোই না। কখনো দুঃখ-কষ্ট, কখনো হাসি, কখনো কান্না, ভালো লাগা, খারাপ লাগা সব মিলিয়েই চলছে জীবন নামক স্রোতহীন নদী। ঘড়ীতে রাত ১২ টা নিজের রুমের বেলকনিতে বসে আছে ইলমি। চারপাঁশে শুধুই নিস্তব্ধতা মনে হচ্ছে প্রকৃতিও যেনো ইলমির মন খারাপের দলে নাম লেখিয়েছে। অন্ধকার , নিস্তব্ধতায় ছেঁয়ে যাওয়া রাতের আঁকাশ পানে মলিন চোখে তাকিয়ে আছে ইলমি। আজ আঁকাশে চাঁদ নেই, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তারকাজি আবছা আলোয় জ্বলছে। হয়তো দূর আঁকাশের তারা গুলোও ইলমির সাথে দুঃখবিলাস করছে। ইলমির মন খারাপের, নিসঙ্গতার সঙ্গী হচ্ছে।আবিরার থেকে শুনেছে লোকটা এখন শুদূর আমেরিকায় । লোকটা কিভাবে পারলো তাকে না জানিয়ে চলে যেতে? দিন দিন লোকটাকে দেখার তৃষ্ণা যেনো বেড়েই চলেছে। নিজেকে পাগল পাগল লাগছে তার। ঠিক মতো খেতে পারছে না, ঘুমাতে পারছে না। অসুস্থতা কাবু করে নিয়েছে একদম । চোখের নিচে কালো দাগ জমে গেছে। চোখ মুখ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে আছমা বেগম মেয়ের এমন অধঃপতনে রেগে মেগে শেষ। ইলমি মাকে কিভাবে বোঝাবে তার মাঝে কি চলছে? পাষান লোকটা তাকে দূরে থেকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে অঙ্গার করে দিচ্ছে।
ইলমি আঁকাশের পানে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো কিছু মুহুর্তে পরে কর্কশ আওয়াজে ফোন বেঁজে উঠলো। এক সপ্তাহ লোকটা তাকে ১টা কল পর্যন্ত করে নি কতটা পাষান, কতোটা নির্দয় লোক। ইলমি স্ক্রিনে তাকিয়ে হু হু করে কেঁদে উঠলো। হ্যাঁ আবরার কল করেছে তড়িৎ গতিতে কল রিসিভ করে চুপ রইলো। অপাঁশ থেকে আবরার গম্ভির কন্ঠস্বরে ধমকে বললো,
কি শুরু করেছিস? ঠিক মতো খাচ্ছিস না কেনো? কার জন্য কান্নাকাটি করছিস?
ইলমি ফুঁপিয়ে উঠলো। বললো,
কবে ফিরবেন এমপি সাহেব?
আবরার খ্যাঁক করে বলে উঠলো,
ফিরবো না।
ইলমি এবার শব্দ করে কেঁদে উঠলো। বললো,
কেনো এমন করছেন? কেনো কষ্ট দিচ্ছেন আমায়?
আবরার গম্ভিরস্বরে বললো,
– তুই তো চেয়েছিলি তোর থেকে দূরে থাকি এখন দূরে এসেছি মরা কান্না কাঁদছিস কেনো?
ইলমি কান্না গিলে বললো,
– চাই না, কখনো চাই না আপনি আমার থেকে দূরে থাকুন। চলে আসুন প্লিজ।
আবরার ঠোঁট কামড়ে হাসলো। হাসি চেঁপে গম্ভির কন্ঠে বললো,
ফিরবো না।
ইলমি রাগে দুঃখে ফুঁসে ওঠলো। বললো,
ওকে ফিরবেন না তো? একদিন আমিও আপনাকে রেখে হারিয়ে যাবো আর কখনো ফিরবো না কখনো না।
বলেই ফোনটা কেটে দিয়ে কেঁদে উঠলো মিনিটের মধ্যেই ফোনটা আবারো বেঁজে উঠলো ইলমি সাথে সাথে মোবাইল ডাটা অফ করে দিলো পরপর ফোনটাই সুইচ অফ করে দিলো।
———–
আবিরা রাত জেগে আছে। ঘুম কাতুরে মেয়েটার দু চোখের পাতায় ঘুমের ছিটেফোঁটাও নেই। দু রাজ্যে দুটো বিষাদিনী রাতের পর রাত জেগে কাটাচ্ছে। বিরহের অনলে জ্বলে পুড়ে মরছে। হঠাৎ করে ওই পাষান লোকটাকে শুনতে ভীষণ ইচ্ছে করছে৷ আবিরা কি মনে করতে নিজের ফোনের ডায়াল প্যাডে ইমিরের নাম্বার ডায়াল করলো সাথে সাথেই কলটা কেটে দিলো। কল করবে কি, করবে দ্বিধাদ্বন্দে ভুগলো। শেষমেশ মন ও মস্তিষ্কের অদৃশ্য যুদ্ধে মস্তিষ্কের পরাজয় হলো। কাঁপাকাঁপা হাতে আবারো ডায়াল করলো কাঙ্ক্ষিত নাম্বারটাতে। দ্বিতীয়বার রিং হতেই ইমির কলটা রিসিভ করলো। অপাঁশ থেকে হ্যালো বলতেই আবিরা ফোন সরিয়ে নিলো জোড়ে শ্বাস নিয়ে ফোনটা বুকে চেঁপে ধরলো। অপাঁশ থেকে আবারো বললো,
হ্যালো।
আবিরা চাঁপা গলায় বললো,
হু।
ইমির বিরক্তি মাখা কন্ঠে বললো,
– হ্যাঁ কিছু বলবে? এতো রাতে কল করেছো কেনো?
কথাটা বিষের মতো লাগলো আবিরার। এতোক্ষণ লোকটার কথা শোনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলো আর এখন লোকটার তার প্রতি বিরক্তি মাখা কথাগুলো ভিতরটাকে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে। আবিরা চাঁপা গলায় শুধু বললো,
আসলে ভূলে চলে গেছে।
বলেই কল কেটে দিলো। সাথে সাথেই হু হু করে কেঁদে উঠলো৷ একপাক্ষিক ভালোবাসায় এতো, এতো বেশি যন্ত্রণা! আবিরা এই যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছে না। আবিরার মনে হচ্ছে এই যন্ত্রণা সহ্য করার থেকে মৃত্যু ঢের ভালো। মানুষ হয়তো ভাবে মরে গেলেই মানুষ বেঁচে যায়। আসলেই কি তাই? উহু! মরে গেলে মানুষ বেঁচে যায় না বরং হেরে যায়, ভীষণভাবে হেরে যায়।
———
পরের দিন বিকেল বেলায় পদ্মপুকুরের ঘাটটায় পুকুরে দু পা ভিঁজিয়ে বসে আছে ইলমি। পড়নে লাল রঙা শাড়ী। কোমড় সমান চুল গুলো খুলে রাখা। এ যেনো এক জীবন্ত পদ্মফুল।
আঁকাশে মেঘ জমেছে। ক্ষণে ক্ষণে আঁকাশ থেকে ভেসে আসছে গুড় গুড় আওয়াজ। ইলমির সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। তার দৃষ্টি একটু দূরের ফোঁটা লাল টুকটুকে পদ্মফুলের দিকে।
– কারো মায়াবি চোখ জোড়া সদ্য ফোঁটা পদ্মফুল দেখতে ব্যস্ত আর কারো তৃষ্ণার্ত চোখ তার ব্যক্তিগত পদ্মফুলকে দেখতে ব্যস্ত।
অতি পরিচিতি কন্ঠস্বর শুনতেই ইলমি চমকালো থমকালো। চকিতে পেছনে ফিরতেই দেখলো, উশখো খুশখো চুলে, এলোমেলো ক্লান্ত আবরার দাঁড়িয়ে। পড়নে সাদা শার্ট, ব্লাক জিন্স। ইলমি নিজের চোখকে যেনো বিশ্বাস করতে পারছে না। আবরার দু পা এগিয়ে ইলমির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ইলমিকে এভাবে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবরার বাঁকা হাসলো। ইলমি তৎক্ষনাৎ ঝাঁপিয়ে পড়লো আবরারের শক্তপোক্ত বুকে আবরারও পরম আবেশে জড়িয়ে নিলো। এই একটা সপ্তাহ তার কিভাবে কেটেছে তা একমাত্র সে জানে প্রতিটা রাত নির্ঘুম কাটিয়েছে। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার জন্য এই মায়াবিনীর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলো৷ এই মেয়ের কন্ঠস্বরেও অদ্ভুত নেশা যা আবরারকে উন্মাদ করে তুলে, পাগল করে তুলে মুহুর্তেই৷ ইলমি শব্দ করে কেঁদে উঠলো। আবরার শক্ত করে জড়িয়ে বললো,
এখনো কাঁদছিস কেনো চলে এসেছি তো!
ভ্রু কুচকে বললো,
নাকি চলে এসেছি দেখে কাঁদছিস? আমি কি চলে যাবো ইলমি?
ইলমি আবরারের বুকে কিল বসালো। আবরা ব্যথা পাওয়ার ভান করে ‘আউচ’ শব্দ করে উঠলো পরপর ঠোট কামড়ে হাসলো। ইলমি শক্ত করে জড়িয়ে বললো,
আপনি একটা বাঁজে লোক।
– হু।
ইলমি – ভীষন বাঁজে লোক।
-হু
ইলমি- ভীষণ অসভ্য।
আবরার হো হো করে হেসে উঠলো, সেদিনের মতো বলে উঠলো,
অসভ্য হয়েছি আমি তোমারি কারণে,,,,,
ইলমিও হেঁসে উঠলো। কিছু মুহূর্ত যেতেই ঝুপঝাপ আওয়াজ করে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি শুরু হলো। পুকুরের পানিতে টুপ টুপ আওয়াজ করে বৃষ্টি কণা গুলো মিশে গেলো। এই ঝুম বৃষ্টি মাঝে দুজন কপত-কপতি পদ্মপুকুর ঘাটে আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়ে রইলো। ইলমি আবরারের পায়ের উপর ভর করে দাঁড়িয়ে আবরারের ভেঁজা কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো।
চলবে,,,,,,,
(ভূলক্রুটি মার্জনীয়)