অদৃষ্টের মৃগতৃষ্ণা পর্ব-১৪+১৫+১৬

0
301

#অদৃষ্টের_মৃগতৃষ্ণা (১৪)
#লেখনীতে_প্রোপীতা_নিউমী
পর্ব: ১৪

১৩ ডিসেম্বর ২০১৯
(অতীত)

কাশফিদের দোতলার বসার ঘরটায় সে, অন্তু, তরী আর মাহিন বসে একাডেমিক ওয়ার্কে ব্যাস্ত, তাদের সবার কেন্দ্রমনী পড়ুয়া অন্তু যে এটা ওটা খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে পড়া চোর ফারাবী চুলে কলম প্যাঁচিয়ে আটকে ফেলেছে এখন আপাদত সে চুল থেকে কলম উদ্ধার করতে ক্রিয়ারত। ঈশান বইয়ের দিকে তাঁকিয়ে কলম দিয়ে একবার আঁকিবুকি করছে আরেকবার পড়ছে। মোটামুটি দুইজন শান্ত কারণ কাশফির কঠিন নির্দেশ জারি করেছে — ‘ যে পড়া ব্যতীত টু শব্দ করবে তাকে বিনা বাক্যে বের করে দিবে।’
আতিকুল রহমান ছেলে মেয়ে গুলোকে একবার দেখে আসলেন এরপর কিচেনে গিয়ে তিনকাপ চা করে নিলেন। বাসায় কিছুক্ষণ পর তার এক পরিচিত এস্টেট এজেন্ট আসছেন, তিনি অবশ্যই এস্টেট এজেন্সি (Estate Agency) গুলোতে এতদিন খবর দিয়ে রেখেছিলেন। তাছাড়া ডেভেলপারদের কাছে গেলে হাতে মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হবে, সেই সামর্থ্য তার এখন নেই।

মিনিট খানেক বাদেই বেল বাজলে তিনি দরজা খুলে দাঁড়ান। সুট পরিহিতা দুইজন ত্রিশ ঊর্ধ্ব লোক ভিতরে প্রবেশ করে। তাঁদের মধ্যে দ্বিতীয় জন তাকে সালাম দিতেই তিনি পিছনে ফিরে চমকে দাঁড়ান। পরপর চিনতে পেরে মুখে হাঁসির রেখা ফুটে উঠলো,
“একি দিগন্ত যে!”

তাদের এলাকার নামকরা চৌধুরী বাড়ীর ছেলে, দিগন্তের বাবা সিনিয়র শিক্ষক হিসাবে আতিকুর রহমানকে ভীষন শ্রদ্ধা করেন এবং তার মা নীলা চৌধুরী, তিনিও বেশ আন্তরিক।

“আমি তো নাম জিজ্ঞেস করলাম না ক্লায়েন্টের নাম। তুমি অন্তত জানিয়ে দিতে। এখন তো কিছু আয়োজন করতেই পারব না।”

“তার প্রয়োজন নেই আঙ্কেল, আপনি চিন্তিত হবেন না প্লিজ, আপনার সাথে দেখা হয়েছে এই অনেক।”

তিনি দিগন্তের ভদ্রতায় মোহিত না হয়ে পারলেন না, ছেলেটাকে কিনা তার ভীষন পছন্দের। তিনি মেহমানদের বসতে বলে হালকা চা, নাস্তা নিয়ে এলেন। এরপর বসে আলাপ আলোচনা শুরু করলেন।

এক ঘণ্টা পার হতে না হতেই ফারাবীর হাত পা নিশপিশ করছে, এদের পড়ার চোটে কিছু করতেও পারছেনা। বাহানাবাজি করে বের হতেই তার মুখে হাঁসি ফুটে ওঠে, গুনগুন সুরে নামতে গিয়ে চোখ যায় নিচে দাড়িয়ে থাকা দিগন্তের পানে। অতঃপর সে আটকে গেলো যেন, দিগন্ত তার আসেপাশে থাকা মানে নিয়ম করে সে প্রতি বেলায় প্রতি পদে বকা খাবে। হুট করে দিগন্ত মাথা একপাশে করে তাকাতেই ফারাবীর থমকে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখতে পেলো তারপর ফারাবীকে আর কে পায় এক ছুট দিয়ে সে আবার রূমে এসে পড়ায় মনোনিবেশ করে। এই ঝামেলা দিগন্ত থেকে তার অপছন্দের পড়ালেখা ঢের ভালো।
হবু জামাই না ছাই!

***

অন্তুর মনের সাদা পাতার কালো কালো কালিতে এখন রংধনুর রঙ খেলা করে। আজকাল সব ঋতু বসন্তময় মনে হয়। এই যে কাশফি তার কাছ থেকে পড়া বুঝে নিতে চায় সেটা তার ভালো লাগে। সে বুঝিয়ে দেয় আর কাশফি শান্তশিষ্ট হয়ে বুঝে নেয় সেটাও তার ভালো লাগে। এখন সে পড়া বুঝানোর পর কাশফি একটা মিঠা হাঁসি দিয়েছে সেটাও ভীষন ভালো লাগছে। খাতাটা বন্ধ করে কাশফি তার নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে পরক্ষণে টেবলের দিকে চেয়ে কিছুটা আফসোস নিয়ে বলল,

“আমার মতো বেয়াক্কেল কে বোঝাতে বোঝাতে তোমার তো পড়াই হলো না।”

“কি যে বলো! কাউকে বুঝিয়ে দিলে নিজের পড়াটা আরো ভালো মনে থাকে?!”

কাশফির চোঁখে খুশির ঝলক,
“সত্যি?”
কাশফিকে কনভিন্স করার জন্য সে হেসে মাথা নেড়ে জানালো। তৎক্ষনাৎ কাশফি ছোট টেবিল থেকে আরো কিছু বই অন্তু আর তার মাঝ বরাবর এনে রাখে। এরপর উদ্যমী চোঁখে অন্তুর উদ্দ্যেশ্যে বলে,

“তাহলে প্লিজ এগুলোও বুঝিয়ে দেবে?”

“এক দিনে তো সম্ভব না।”

“তাহলে অন্যকোন দিন?”

“ইনশা’আল্লাহ!”

পড়া শেষ করতে করতে আরো ঘন্টাখানেক লাগলো, অন্তু কাশফিকে কয়েকটা বইয়ের নাম বলছে, তারা দুইজন এখনো পড়ার টপিক নিয়ে বলাবলি করছে। তরী ব্যাগ বই গুছিয়ে সবার আগেই নেমে পরেছে তাই বসার ঘরে দিগন্তকে দেখে প্রথমে চমকে গেলেও পরে ফারাবীর চুপচাপ থাকার কাহিনী সহজেই উদঘাটন করতে পেরেছে। কাশফি বন্ধুবান্ধবদের বিদায় দিতে নেমে এসেছে, এসেই দিগন্তকে দেখে তার চোখ ছানাবড়া এরপর কাছে গিয়ে সুন্দর করে টেনে সালাম দিয়ে দাড়ায়। তার চোখে মুখে দুষ্টুমির আভাস, কাশফি ভ্রুদয় নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে,

“দিগন্ত ভাইয়া, ফারাবীকে নিতে এসেছেন বুঝি?”

এজেন্টের সাথে দিগন্তের কাজ শেষ হয়েছে অনেক আগে সে আসলেই ফারাবীর অপেক্ষা করছিল।

“না কাজে এসেছি তবে আপনার বান্ধবীকে একবার দেখেছিলাম বটে। তো কোথায় রানী ভিক্টোরিয়া?”

তরীর হিসাব মিলে গেছে দেখে, কিছুটা বিরক্ত প্রকাশে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পরক্ষণে চোখ উল্টে বলে,
“তাই তো ভাবছি কিভাবে আপনার বউ এতক্ষন শান্ত হয়ে আছে? How?!”

মাথায় শয়তানি বুদ্ধি চেপে ঈশান আর দেরী করল না। বেশ জোর গলায় স্বর খানিকটা উচুঁ করে বলে —
“দিগন্ত ভাইয়া আপনি বরং বসার ঘরটায় যান, সেখানটা ফাঁকা কেউ নেই আপনি সেখানেই রেস্ট করুন।”

দিগন্তের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এতক্ষন অন্তুর দিকে ছিল, ছেলেটা কাশফির সাথে গা ঘেষার স্বভাব। এই নিয়ে ঝামেলা কম হবে না। সে তৎক্ষণাৎ সিঁড়ি দিয়ে চিরচেনা নুপুরের ধ্বনি পেতেই সেদিকে দৃষ্টি ফেলে। বুকে ব্যাগ জড়িয়ে নাক ফুলিয়ে ফারাবী নামছে। ভাবখানা এমন যে আজ দিগন্তের দিকে তাকাবেই না। কিন্তু যেই দিগন্ত গম্ভির স্বরে ‘ফারাবী’ বলে ডাক দিয়েছে সে ভদ্র মেয়ের মতো গিয়ে দিগন্তের সামনে দাঁড়ায়। দিগন্তকে অমান্য করার সাধ্য ভীতু ফারাবীর নেই।
বিনা বাক্যে তার শক্ত পেশল হাতে ফারাবীর ছোট নরম হাত খানা ঢেকে ফেলে, আর এদিক ওদিক না ফিরে ফারাবীকে নিয়ে হাঁটা ধরল। যাওয়ায় পথে অবশ্য কাশফি লাঞ্চ করার কথা বলেছিল কিন্তু দিগন্ত তাড়া দেখিয়ে চলে যায়।

হাঁসফাঁস করতে থাকা অন্তু বার বার পিছনে ফিরে কাশফির দিকে চায়। কাশফি তরীর সাথে কি কি নিয়ে কথা বলছে আর দুইজন মুখে হাত চেপে হাসছে। সে কাশফিকে নরম স্বরে ডাকলো। কাশফি মাথা তুলে চাইতেই সে ঘাড়ে হাত রেখে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বলে,

“কাল লাইব্রেরীতে কিছু কাজ ছিল তুমিও সাথে যাবে? মানে…”

অন্তুর কথা শেষ হওয়ার আগেই তরী কাশফির উদ্দেশ্যে বলে— “হ্যা রে কাল আমারও কিছু বই কিনার আছে বের হবি?”

“বের হওয়া যাবে তবে কায়েসকে একা রেখে যেতে হবে।”

“কায়সের জন্য ঈশান আছে। কিরে রাখতে পারবি না?”
তরীর ভ্রু নাচানোর দিকে ঈশান কটমট করে তাকায়। রাগে ফুলেফেঁপে উঠলেও এখন কিছু করার নাই। গত সপ্তাহে সে ফারাবীর পাঁচশত টাকা মেরে খেয়েছিল এসব ভুলোমনা ফারাবী মানেই রাখেনি ভেবে ঈশান মনে মনে বেজায় খুশী কিন্তু বিপত্তি ঘটেই গেলো, এই গুপ্ত বিষয় নিয়ে তরী জেনে যাওয়ার পর থেকেই যথারীতি ব্ল্যাকমেইল করে আসছে।

তাঁদের হতে কিছুটা দূরে দিগন্তের গাড়ী পার্ক করা। হনহন করে এসে দিগন্ত গাড়ির দরজা খুলে ফারাবী গাড়ীতে ওঠার অপেক্ষা করছে। ফারাবীকে অনড় দেখে তার অঙ্গবিন্যাস অনমনীয় রেখে তার একেবারে গা ঘেঁষে দাঁড়ায়। পরপর নতমস্তক ফারাবীর দিকে দৃষ্টি ফেলে, তার শক্ত কন্ঠ খানিকটা নামিয়ে বলে— “কোন কথা না বলে সোজা গাড়ীতে উঠ!”

“যাব না!”
কালো ছায়ায় আচ্ছাদিত মুখ খানা আড়াল করে ফারাবী ছোট্ট স্বরে প্রতিবাদ করলো। দিগন্ত কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে চায়, ফারাবীর হাবভাব লক্ষ্য করে ভ্রূ জোড়া কুঁচকে বলল — “কী?!”
তৎক্ষণাৎ ফারাবীর সম্পূর্ন উওর পাল্টে গেলো,

“এই জামায় আমি বেরোবো না।”

“প্রয়োজন পড়লে এক আলমারি লেহেঙ্গা কিনে দিবো এখন কথা বাড়াবি তো নির্ঘাত কপালে শনি আছে।”

ফারাবী মুখ দিয়ে বিরক্ত সূচক শব্দ বের করে বলল,
“আমি লেহেঙ্গার কথা বলেছি নাকি?”

“তো কি নাইটি লাগবে?”

“ছিঃ!!!”

“সেটাও কিনে দিবো প্রয়োজনে। বেশি কথা কম, চল!”

***

কাশফির পিঠ ছেয়ে যাওয়া মোটামুটি লম্বা চুল উচুঁ ঝুটিতে বেঁধেছে, স্কুল ড্রেস ছাড়া আজ সে প্রথম কাশফিকে দেখছে। হাঁটু সমান ঢিলাঢালা টপস আর জিন্স পরে কায়েস সহ বেরিয়েছে প্রথমে খুশী হলেও আসেপাশে চোখ পড়ায় তার মুখের কোমল হাসি উবে গিয়েছে। অন্তু আগে এসেই এতক্ষন তার জন্য দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল, সে ভেবেছিল তার আর কাশফির কিছুক্ষণ না হয় একা থাকা হবে। তা আর হলো কই? ঈশান আর তরীকে কাশফির সাথে বের হতে হতে দেখে সে বেজায় বিরক্ত হলো।
লাইব্রেরীতে আসার পর অন্তু এটা ওটা দেখিয়ে বুঝিয়ে কাশফির ধ্যান নিজ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রেখেছে। অবশ্যই অত বেগ পোহাতে হয়নি তার। তরী একটা বই খুলে যে পড়তে বসেছে তার হেলদোল নেই আর ঈশান আর কায়েস এক পাশে নিরীহর মতো আছে। তারা আদো জানে না তাদের কেন এখানে আনা হয়েছে।

কাশফি আর অন্তু কয়েকটা বই বাছাই করে নিয়ে টেবিলে রেখে বসেছে মাত্র। তরীকে বাইরের দিকে তাকিয়ে দাঁত কড়মড় করতে দেখে সে সেদিকে দৃষ্টি ফেলে। তৎক্ষনাৎ তার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। পুরাতন শার্ট গায়ে, ছিপছিপে গড়নের একটা লোক লাল লাল চোখে তাদের চেয়ে অনবরত বাজে ইশারা ছুঁড়ছে। তার দৃষ্টিতে নোংরামি, নারী দেহের প্রতি ক্ষুদা আর কামুকতা। দেখে বুঝাই যাচ্ছে দিনে দুপুরে গাঁজা খেয়ে মাতাল হয়ে ফিরছে, তার দেখাদেখি তার দলবলের ছেলে পেলেরাও লাই পেয়েছে তারা বাজে মন্তব্য ছুঁড়ছে। এই লাইব্রেরীতে তারা আগেও এসেছে তবে আসেপাশে এমন বিশ্রী কিছুর স্বীকার কখনোই হয়নি।

কাশফির সম্পূর্ন চেহারা পাল্টে যেতে দেখা গেলো। মনে হচ্ছে তার সারা দেহে ময়লা এসে ভিড়েছে। ঘর্মাক্ত হাত পা এখন ধোঁয়ার জন্য নিশপিশ করছে। এমন সবসময় হয় তা না, মাঝের মধ্যেই হয়। তার অস্বস্থি আরো বেড়ে যাওয়ায় পূর্বেই সে হাত মুষ্টিমেয় করে সবাই কে শক্ত কন্ঠে জানায়,
“আমরা এক্ষুনি বের হচ্ছি।”

এতক্ষণে অন্তুরও চোখে পড়ে গিয়েছে তাই সে আর কথা বাড়ালো না।
কাশফি বই গুলো নিয়ে উঠতে যাবে তার আগেই চি’ল্লা’চি’ল্লি শোনা যায়। তাকাতেই বখাটে ছেলেগুলোর মুখে স্পষ্ট আতঙ্ক দেখতে পেলো। এক এক জন ছুটে চলেছে পালানোর উদ্দ্যেশ্যে। সবকটা পালানোর পরপরই একটা কলো গাড়ী এসে থামে তাদের দাঁড়ানো জায়গাটায়, গাড়ীর গ্লাস রোল ডাউন হতেই একজন পুরুষের শক্ত মুখশ্রী দেখা গেলো, বাম গাল জুড়ে বাকা একটা কাটা দাগ, দাগটা পুরনো মনে হচ্ছে। গায়ের বর্ণটা চকচকে তামাটে। তীক্ষ্ণ শিকারী চোঁখের নিচে তার বাঁকা নাকের পাটাতন রাগে লাল হয়ে আছে। সুঠাম দেহের বডিবিল্ডারের ন্যায় পেশল শক্ত হাত বের করে আঙুল দিয়ে একজন কে ইশারা দেয়। একজন মধ্যবয়স্ক লোক গুটিশুটি মেরে বসে ছিল সে এক ঈশারায় বের হয়ে আসে।

“কিরে মিজান, কু’ত্তা’র বা’চ্চা গুলো কোথায় পালিয়েছে রে?”
সম্পূর্ন জায়গাটা যেন কেপে উঠলো তার ভয়ংকর রাগী কন্ঠে। তার কথাগুলোর মধ্যে সিলেটের ভাষার টান আসছিল যেন। মিজান ভয়ার্ত চোঁখে একটা ঢোক গিলে আঙ্গুলের ঈশারায় ছেলে পেলে গুলোর প্রস্থানকৃত রাস্তার পানে দেখায়,

“স্যার হেরা কইসে আপনি ব্রিজের ঐদিকে যাইবেন না হেই ধারেই গেছে লাগের।”

লোকটা ততক্ষনে ফোনে কল করে নেয়, ইয়ারপডস কানে গুঁজে হাতে ঈশারায় মিজানকে চলে যেতে বলে সে। অপর লাইনের লোকটা হয়ত কল রিসিভ করা মাত্রই সে নিজের পুরুষালী শক্ত কর্কশ শব্দে বলে উঠলো—
“ইরহাম হকি স্টিক আর তায়েফকে নিয়ে ব্রিজের সামনে পৌঁছা, আমি আসছি!”

আশেপাশের ধুলোবালি উড়িয়ে গাড়ী তীব্র গতিতে সামনে চলে গেলো। লোকটা যাওয়ার পর ঈশান বলে ঊঠে —
“ আজ নির্ঘাত এইগুলো মরেছে!”

“উনাকে তুই চিনিস?!”
কাশফির প্রশ্নে ঈশান যেনো আকাশ থেকে টপকে পড়ল।

“তাকে চিনেনা কে? তার নাম লেভিন আফসার, কৌশিক মির্জার রাইট হ্যান্ড। মানুষ তাকে কৌশিক মির্জার Cold Embody বলে কারণ কৌশিক মির্জার করা অন্যায়, সকল অনৈতিকতা সব কিছুর প্রমাণ লেভিন খুবই সূক্ষভাবে মুছে কিনা।”

ঈশান বলার পর পর তরী নীরবতা ভাঙ্গলো, কণ্ঠে চিন্তা আর গম্ভিরয্য টেনে বলল,
“আমি শুনেছি লেভিন আফসার একসময় দুর্দান্ত আন্ডারগ্রাউন্ড ফাইটার ছিলেন, একবছর জেল খাটানোর পরপরই কৌশিক হায়ার করে নিয়েছে।”

তরীর কথায় ঈশান সায় দিল,
“কৌশিক মির্জা চালাক আর তুখোড় ব্যক্তিত্বের, ব্যাটা ঠিকই কয়লার ময়লা ভেদ করে হীরা দেখতে পেয়েছিল।”

“গুজব এমনও আছে যে, কৌশিকের সব রকমের ইলিগ্যাল ধান্ধা লেভিনের নিয়ন্ত্রণে।”

“এসব গুজব বলতে নেই।”

#চলবে…

#অদৃষ্টের_মৃগতৃষ্ণা (১৫)
#লেখনীতে_প্রোপীতা_নিউমী
পর্ব: ১৫
অতীত: হাইড এন্ড সিক (বড় পর্ব দিয়েছি)

কনকনে শীতের রাত্রি, কাশফি আর তরী ব্যাডমিন্টন খেলছে, তাদের সাথে পেরে না ঊঠে ফারাবী মুখ ফুলিয়ে বসে আছে কয়েসের সাথে। কুয়াশায় লাইটের হলদেটে আলোয় কাশফির মুখশ্রী জ্বলজ্বল করছে। মেয়েটা এতক্ষন খেলে হাঁপিয়ে উঠেছে তবুও খেলেই যাচ্ছে। এই শীতে তার মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। অন্তু হট চকলেট হাতে তাদের দোতলা বাড়ির ছাদ থেকে কুয়াশায় ঢাকা কাশফির আবছা মুখশ্রী দেখতে ব্যাস্ত। সাথেই বসা অন্তুর বন্ধু ফিরোজ গানের সুরে গলা ছেড়ে গান গাইছে, সে অন্তুর হাবভাব ইদানিং লক্ষ্য করছে, এই এক সপ্তাহে বেশ কিছুটা পরিবর্তন ঘটেছে তার মাঝে।

“পছন্দ করিস?”
ফিরোজের কথায় কিছুটা বিচলিত হয়েছিল অন্তু তবে অস্বীকার করল না। ফিরোজের ফোনে সফট টোনে গান বাজছে। বন্ধুর কাছে উত্তর না পেয়ে ফিরোজ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

“তুই তোর ফিলিংসের ব্যাপারে সওর(sure) না?”

অন্তু কিয়ৎক্ষণ নিরব থেকে সম্মতি জানালো। মাথা কিছুটা নত করে বলল,
“ঈশিতা বেশ ইন্টারেস্টিং একটা মেয়ে।”

“তা তো বটেই।”

“নতুন কিছু জানার প্রতি বেশ আগ্রহী।”

“বুঝলাম তবে শুনেছি এই মেয়ের দিকে কারো তাকানো নিষেধ, জানিস তো!”

অন্তু জানে তবে কেনো তা জানে না। কোন এক অজানা কারণে যথেষ্ঠ সুন্দরী কাশফির কাছে আজ পর্যন্ত কোন লাভ লেটার পৌঁছায় নি। কেউ সেই দুঃসাহস করে দেখায়নি। হয়ত তার শিক্ষক বাবার কঠোর ব্যক্তিত্বের কারণে, কম বেশী সকলে জানে একসময় তিনি সেনাবাহিনীতে ছিলেন।
যদিও অন্তুর ব্যবহার বন্ধুত্বপূর্ন কাশফির কাছে কিন্তু তারা তো বন্ধু নয়। তাই না?
সে কাশফিকে পছন্দ করে তবে তা অতটা প্রকট নয়। সে দ্বিধায় ভুগছে তবে কাশফিকে নিয়ে ভাবতে তার ভালো লাগে আবার মাঝে মাঝে ভয় হয়।

***

আতিকুর রহমান ইদানিং মেয়ে নিয়ে বেশ চিন্তিত। চারুলতা ছিল অভিলাষী আর বিত্তশালী পরিবারের মেয়ে, তার নিজের উপার্জনই আতিকুর রহমানের চেয়ে চারগুণ বেশি ছিল। সে মারা যাওয়ার পূর্বে তার দুটো গ্যালারি আর তার বিশাল আয়তনের জায়গাটা কাশফির নামে উইল করে দিয়েছিলেন। তার আর্ট গ্যালারির পাশের সুবিশাল জায়গাটার বর্তমান মূল্য প্রায় পঁচিশ কোটির মতো।
কাশফির বয়স আঠারো হওয়ার পর থেকেই চারুলতার সৎ ভাই তার পিছনে পড়ে আছেন কাশফির বিয়ে তার ছেলে নিহালের সাথে দেওয়ার জন্য। এই নিয়ে তাকে কম হেনস্থা করেননি। এছাড়া অনেক পরিবার লোভে পরেই কাশফির সমন্ধের জন্য আসছেন। তাই তিনি কাশফির সাথে কথা বলতে চেয়েছিলেন তবে মেয়ে চারুলতার বিষয়ে কিছু শুনতে নারাজ। তাই সাফ সাফ জানিয়েছে যে — ‘বাবা আপনি যা ভালো মনে হয় তাই করবেন।’

শনিবার ছুটির দিন হওয়ার সুবাদে আজ কাশফি আর তার বাবা বাসায়, কায়েস টিভিতে কার্টুন দেখছে। বাবা, মেয়ে বাসায় না থাকলে কায়েসকে টুটুলের বাসায় রেখে যান। কাশফি আজ সকালের নাস্তায় খিচুড়ি রেধেছে, তার বাবা খিচুড়ি দিয়ে রান্না করা দেশী মুরগি খুবই পছন্দ করেন। খাবার শেষে আতিকুর রহমান বাসার রূমে বসে ফোনে কথা বলে নেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় বেল বাজতে দেখে কাশফি হাতের কাজটুকু শেষে করে আসার আগে দেখে তার বাবা বসার রূমে একজন অল্পবয়স লোকসহ বসে আছেন। তাদের সামনে কিছু কাগজপত্র তার সামনের টি-টেবিলে কিছু ফাইল। তিনি কাশফিকে দেখে বসতে বলেন।

কনফিউজড কাশফি সিঙ্গেল সোফায় বসে টেবিলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা কাগজ আর ফাইলগুলোর দিকে প্রশ্নাত্বক দৃষ্টিতে পরখ করল কিছুক্ষণ। আতিকুর রহমান মেয়ের দিকে ফিরে লোকটার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।

“কাল আমার যে একজন এজেন্টের সাথে কথা হয়েছিল সে, ফাহিম মোর্শেদ আমার পরিচিত। ফাহিম, আমার মেয়ে ঈশিতা। উনি তোমাকে সবটা বুঝিয়ে বলবেন।”

কাশফি হেসে ফাহিমকে সুন্দর করে সালাম দেয়। সালামের জবাব নিয়ে ফাহিম বলে,

“আংকেলের কাছে আপনার কথা শুনেছি, আপনি এইচএসসি ক্যান্ডিডেট না?”

“জ্বি, আপনি তুমি করে বলতে পারেন সমস্যা নাই।”

ফাহিম এবার ফাইল খুলে কাশফির দিকে ঠেলে দেয়, কাশফি একবার তার বাবার দিকে চায়। তার বাবা মাথা নেড়ে সম্মতি দিলে সে আরেঙ্গমেন্ট পেপারে চোখ বুলিয়ে দেখে। ফাহিম নিজের হাতে থাকা কিছু লিগ্যাল ডকুমেন্ট চেক করার পর কাশফিকে জানায়,

“আচ্ছা, স্বনামধন্য আর্কিটেক্ট ফার্ম MRCX Inc. তো চিনোই, সেটার Co-Owner দিগন্ত স্যার রেসিডেনসিয়াল এরিয়া থেকে কিছুটা দূরের জায়গার খোঁজে ছিলেন। প্রতিষ্ঠানের কো-ওনার, সিইও আর ম্যানেজিং ডিরেক্টরের আমাদের এজেন্সির কাছে হিউজ ডিমান্ড ছিল ২০০০ থেকে ৩০০০ ফিটের মধ্যে তার জেট বিমানের জন্য প্রাইভেট ল্যান্ড স্ট্রিপিং এর।”

ফাইলের এমআরসিএক্স ইনকর্পোরেশনের এগ্রিমেন্ট গুলোতে আঙুল দিয়ে দিয়ে পয়েন্ট করল ফাহিম। কাশফি কিছুক্ষণ সেগুলো পরখ করে তার এস্টেটের ডকুমেন্ট গুলোর দিকে একদফা নজর দিয়ে বলে,

“মানে তারা জায়গাটায় তাদের বিমানের জন্য রানওয়ে তৈরি করতে চাইছেন এই তো?”

“ঠিক তেমনটাই।”

“কিন্তু লেন্থ হিসাবে জায়গাটার পরিমাণ ৯০০ মিটার, যা উনার ডিমান্ড থেকে কম।”

ফাহিম কাশফির কথায় মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়ে তার ব্রিফকেস থেকে আইপ্যাড আর ওয়্যারলেস পেন বের করে একটা ম্যাপ দেখিয়ে তার জায়গাটা দেখায় এর থেকে কিছুটা সামনে গিয়ে সে আরেকটা জায়গা জুম করে দেখিয়ে বলল,
“উনারা অনেক আগেই পাশের এস্টেট নিয়ে কথা বলে রেখেছেন, তোমার জায়গাটা কিনা হলেই সেটার দিকে আগাবেন।”

“বুঝেছি তবে আর্ট গ্যালারী গুলো..”

ফাহিম কাশফিকে আশ্বস্থ আরেক দফা হেসে বলে,
“এজেন্সী আর্ট গ্যালারি দুটো সমস্যার কারণ হবে না বলে জানিয়েছে। যেহেতু সেগুলোর মালিকানাধীন তুমি তাই তারা সেগুলো সহ জায়গাটা চাইলে প্রফিট তো পাবেই সাথে নাহয় তোমাদের ডিমান্ড তুলে ধরতে পারবে। তবুও দেখা যাক কোম্পানীর বোর্ড কর্তৃক কি সিদ্ধান্তে উপনীত হয় তারা।”

এবার কাশফির বাবা নাকের চশমা আঙুল দিয়ে উপরে তুলে গলা পরিষ্কার করে বলেন,
“কাশফি আমি আগাতে চাইছি কারণ কোম্পানিটার Co-Owner আমার স্টুডেন্ট নীলা চৌধুরীর ছেলে দিগন্ত চৌধুরী, হার্ডওয়ার্কিং, যথেষ্ঠ ভদ্র আর মার্জিত একজন সে। তোমার বান্ধবী ফারাবীর উড বি, তুমি চিনেছো?”

কাশফি মাথা নেড়ে বলল,
“হ্যাঁ, কেন চিনব না ভাইয়াকে। তাহলে আপনি বরং দিগন্ত ভাইয়ার সাথে সিভিল ঠক (civil talk) সেরে ডিসিশন ফাইনালাইজ করুন বাবা।”

আতিকুর রহমান কাশফির প্রতি কঠোর হয়ে বেশ শক্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
“তোমার কোন মতামত নেই?”

“আমার মনে হয় এসব আপনারা ভালো বুঝবেন।”

“একজন অ্যাডাল্টের মতো সিদ্ধান্ত নাও কাশফি।”

“বাবা…”

“তুমি বুঝে বলছ? তারা অনেকটুকু মতামত দিয়ে ফেলেছেন তোমার তাদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করা মাত্রই তারা তোমার সিগনেচার নিয়ে এস্টেট কিনে ফেলবেন।”

কাশফি শ্রাগ করে নিরুদ্বেগ হয়ে বলে,
“আমার সাক্ষাতের কি প্রয়োজন? ডকুমেন্ট তো আছেই সিগনেচার আমি বাসায় থেকেই দিতে পারি।”

বাবা মেয়ের কথাবার্তার মাঝে ফাহিম গলা খাঁকারি শোনা যায়। কাশফির মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেই সে কাশফির উদ্দেশ্যে বলে,
“Sorry to say but তাদের নেগোশিয়েটে (negotiate) উপস্থিত থেকেই স্বাক্ষর করতে হবে, এটাই নিয়ম ঈশিতা।”

কাশফি তপ্ত নিশ্বাস ফেলে তার হাতের আঙ্গুল গুলো গুটিয়ে নেয়। বড়দের মাঝে নিজের বসে থাকাটা তার কাছে বোধগম্য হচ্ছিল না এক্ষেত্রে গণমান্য লোকদের সামনে গিয়ে আহাম্মকের মতো দাড়িয়ে থাকার কোন মানে হয়? ভেবে কোন উপায়ন্তর না পেয়ে কাশফি জবাব দিলো,

“টাইমটেবিল জানিয়ে দিবেন আমরা উপস্থিত থাকবো ইনশ’আল্লাহ।”

***

শীতের দিনে ঝলমলে মিঠা রোদ্দুর এসে ভিড়েছে ক্লাসের বড়টা জানালা দিয়ে, দ্বিতীয় পিরিয়ড শেষ হওয়া মাত্রই নিজের অস্থিরতার সামাল দিতে বহুল কাঙ্ক্ষিত সেই মেয়ের সামনে এসে দাঁড়ায়। চোখে মুখে আনমনা ভাব দেখে ছেলেটি নরম স্বরে ডাকলো,

“ঈশিতা!”

“হু?”

“তুমি কখনো নিজের স্বভাবসিদ্ধির বাইরে গিয়েছো?”

অন্যমনস্ক হয়ে থাকা কাশফির এবার ভ্রুদ্বয় কুচকে কপালের মাঝ বরাবর দুটি ভাঁজ দেখা গেলো।
“তোমার কথা ঠিক ধরতে পারলাম না…”

“লাইক তোমার ইউজুয়ার সেলফ থেকে বিচ্যুত হয়েছো?”

“মনে হয় না।”

“আমি হয়েছি!”

“সেটা কি করে হয়?”
ঠিক তখনই থার্ড পিরিয়ডের স্যার ক্লাসে এসে পড়ে, তাই বাধ্য হয়ে না বলা কথাটুকু অন্তু সন্তপর্নে গিলে নেয়। অথচ যে ছেলে ক্লাসে বসে কখনো টু শব্দ করেনি সেই ছেলে ক্লাসের ফাঁকে নিজ থেকে কাশফির সাথে কথা বলছে এটা কি কাশফির চোঁখে পড়ে না? মেয়েটা কেমন বেপরোয়া, অচল ধরনের। নিজের একান্ত জিনিস কিংবা কোন গুরুতর বিষয় ছাড়া অন্য কিছুতেই সে মাথা ঘামায় না। মাঝে মাঝে তাকে মেশিন মনে হয়।
অন্তু নিজের চিন্তায় নিজেকে হেসে আবার ভাবলো — ‘মেয়েটা বড্ড স্বার্থপর বটে, তাকে মুগ্ধ করে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।’

বাসায় পৌঁছেই কাশফি গোসল সেরে নেয়। আড়চোখে বার বার কায়েসকে দেখে নেয়। সে কিসব উল্টাপাল্টা আজগুবি ছড়া পড়ছে যা কাশফির জন্য বিরক্তিকর আর হতাশাজনক। কিছুক্ষণ পরপর শোনাচ্ছে কায়সের চিৎকার করে করে সারা ঘর পায়চারি করে ছড়া আবৃত্তি—

“হাট্টিমাটিম টিম
তোতা বুবুর মাথায় পারে ডিম
পঁচা বক খায় শিম
ও তোতা তুই খাস কি?
চিকেন ফ্রাই!
মাছ আমি খাই না
বুবু চিকেন ফ্রাই বানায় না।
একটা যদি বানায়
ঝাল বেশি দেয়।”

মুলত ছোট্ট কায়েসের অপছন্দনীয় খাবার শিম আর মাছ, কাশফি জোর করে খাওয়ায়। চিকেন ফ্রাই তার অতি পছন্দের খাবার। ভাই বোন গুলো মির জাফর, বানিয়ে অজস্রবার খাওয়ালেও সুনাম তো হবে না, বরং দুর্নাম রটাবেই।
দুপুরের খাবার শেষে কাশফি তার ওভারসাইজড হুডি পাল্টে একটা হাটু সমান ফতুয়া আর জিন্স প্যান্ট পরে গায়ে জ্যাকেট জড়িয়ে নেয়। ফিরতে ফিরতে হয়ত রাত হবে। রাতে পড়ায় মনোযোগের জন্য বিকেলে ঘুমানোর অভ্যাস আছে তার, আজ না ঘুমাতে পারায় তার এখন ঘুমে ঢুলুঢালু অবস্হা। মুখে কয়েকবার ঠাণ্ডা পানি ছিটিয়ে সে দাঁতে দাঁত চেপে মুখখানা টাওয়েলে মুছে নিলো।
কিছুক্ষণ ফারাবী এসে কায়েসকে নিয়ে গিয়েছে, এদিকে সে রেডী হয়ে মেইন দরজা লক করে বের হতেই দেখে তার বাবা আর ফাহিম একটা গাড়ির সামনে দাড়িয়ে আলাপ আলোচনা করছে। ফাহিম কাশফিকে দেখা মাত্রই ভদ্রতা বজায় রেখে এক গাল হাসে, আর দেরী না করে তারা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।

***

“I, I knew you
Your heartbeat on the High Line
Once in twenty lifetimes, I

And when I felt like I was an old cardigan under someone’s bed
You put me on and said I was your favorite

To kiss in cars and downtown bars
Was all we needed
You drew stars around my scars
But now I’m bleeding…”

সামনের নিয়ন লাইটে সজ্জিত ক্যাফেটায় এই গান বাজতে দেখে মনে মনে সুর তুলে আওড়ালো কাশফি। গাড়ীতে ঘনঘন হাই তুলছে সে। সুবিশাল জায়গাটার থেকে কিছুটা দূরে ফাহিমের টয়োটা ক্যাফের পাশেই থামল। আতিকুল রহমান নেমেই এজেন্সির দুটো লোকের সাথে টুকটাক কথা বলতে বলতে ক্যাফের উপরের রুফটপ রেস্টুরেন্টে দিকে এগোচ্ছেন। তার বাবার পিছনে পিছনে কাশফি চলছে, এখানে তার বাবাসহ সবাই ফরমাল গেটআপে এসেছে তাই নিজের দিকে চেয়ে তার এই জায়গার বেমানান মনে হচ্ছে। ড্রেসিং সেন্সটা তার বরাবরই সূক্ষ্ম।
রেস্টুরেন্টের ভিতরটা ফাঁকা কেননা আজ সন্ধ্যার জন্য বুকড। রেষ্টুরেন্টের ভিতরের দিকটা দারুন, সফট গ্লো টাইপের থিমে সাজানো। তাদের দেখামাত্র একজন ওয়েটার এসে সৌজন্যতা মূলক হাঁসি হেসে দাঁড়ায়,

“Observation under the name of Digonto Chowdhury. This way please!”

তরুণ ওয়েটার তাদের টেবিলে দেখিয়ে বসতে বলে চলে যায়। কাশফি বসেনা, আসেপাশে হেঁটে হেঁটে দেখতে লাগলো কিছুক্ষণ পর ফাহিম দুটো ক্যাপাচিনো হাতে তার সামনে এসে দাঁড়ায়। একটা তার দিকে বাড়িয়ে দেয়,

“সুগার কম, খেয়ে দেখো ভালো লাগবে।”

কাশফি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে হেসে এক চুমুক দেয়, রিচ একটা টেষ্ট। কফির ক্রিম তার ঠোঁটের উপরে লেগেছে বুঝতে পেরে আনমনে জিভ দিয়ে মুছে ফেললো। পরক্ষনে এই কাজের জন্য কিছুটা লজ্জাও পেলো। ফাহিম পকেট থেকে রুমাল বের করে কাশফির দিকে এগিয়ে দিলো। সে আরেকবার হেসে মুছতে যাবে তখনই বাইরে গ্লাসে দেওয়াল ভেদ করে বাইরে চোখ পড়ল।
রাস্তার পরপর তিনটা কালো গাড়ী এসে থেমেছে। প্রথমটা থেকে থেকে চারকোল ব্ল্যাক সুট পরিহিতা একজন সুঠাম দেহী বের হয়ে এলো। তার মুখে আর কানে মাউথ এন্ড ইয়ার পিস লাগানো। কাশফি মনের অজান্তেই তাকে বেশ গাঢ় করে পরখ করতে লাগলো, লোকটাকে তার চেনা জানা ঠেকছে।
কোথাও দেখেছিল কি? প্রথম গাড়ি থেকে অফ হোয়াইট সুটে আরো একজন অপরিচিত পুরুষ বেরিয়ে এলো। এতক্ষন চারকোল ব্ল্যাক সুট পরিহিতা লোকটার একপাশ দৃশ্যমান সে গাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়া লোকটার সাথে কথা বলার জন্য অন্যপাশে ফিরতেই কাশফির চোখ ছানাবড়া।
লোকটার গালের কাটা দাগ দেখে তার ভাষা ভাষা কিছু মনে আসছে। লোকটার নাম মুখে আসছেনা কেন? কোথায় আর কবে দেখেছে সে?

দ্বিতীয় গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলো কিছু দেহরক্ষী তারপর আলগোছে দিগন্ত নেমে গেলো। পরপর দিগন্তের বিপরীতের দরজা খুলে বেরিয়ে এলো আরেকজন, তার পিঠ দেখা যাচ্ছে কেবল। পড়নে শার্ট আর ডার্ক ব্লু ওয়েস্ট কোট। ডার্ক ব্লু ওয়েস্ট কোট নিচে টেনে ঠিক করে গলার টাই ফিক্স করে নেয়।

ততক্ষণে কাশফির মাথায় চট করে গালের কাটা দাগযুক্ত লোকটার নাম মনে পড়ে, কিছুদিন আগেই তো দেখেছিল। তার নাম লেভিন — লেভিন আফসার, কৌশিক মির্জার রাইট হ্যান্ড, তার মানে?

কাশফির শ্বাস আটকে আসে, ডার্ক ব্লু ওয়েস্ট কোট পরা লোকটা তার বলিষ্ঠ বাহুতে থাকা সুটটা গায়ে জড়িয়ে কান থেকে ইয়ারপডস বের করে সামনে ফিরতেই যেনো কাশফি আতকে উঠে। কৌশিক মির্জা তার শান্ত দৃষ্টি বেশ ধীরে সুস্থে উপরে তুলে যেন সে কাশফির ভাবমূর্তি দেখার অপেক্ষায় ছিল। কাশফির কাছে এই হাসি বড্ড চেনা, ফিউনারেলের সেইদিন পোডিয়ামে ইউলোজি পাঠকালীন যে ক্রুর হাসি হেসেছিল ঠিক তেমন হাঁসি ফুটে তার ঠোঁটের কোণে তবে এই হাসিতে বিজয়ের প্রবল উত্তেজনা।

“দিগন্ত স্যার, সিইও কৌশিক মির্জা আর ডিরেক্টর কাব্য মির্জা এসে পড়েছেন।”
ফাহিম সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো, কথাটা কাশফির কানে সূচের ন্যায় তীক্ষ্ণ হয়ে পৌঁছালো তবে সে হতবিহ্বল, হতচকিত, বাহ্যিক কোন রকম হেলদোল দেখা না গেলেও তার ভিতরে শীতল ঝড় বয়ে গেলো।

ভুল করে ফেলেছে সে, অনেক বড় ভূল। কৌশিক মির্জাকে হালকা ভাবে নিয়ে সে নিজের বিপদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। কেন সে সিইওর নাম জানতে গেলো না, কেনো?
কিভাবে এত বড় ভুল করে বসলো।

শিট, শিট, শিট!!!

তার মনোযোগ এখন সম্পূর্ন কৌশিক ঘিরে, যে আপাদত তার দিকে বাঁকা চোখে চেয়ে আছে। কৌশিক তার বাহুদ্বয় ফ্লেক্স করে হেন্ড ওয়াচে সময় দেখে নেয়। ঠোঁটের কোণে হাঁসি বজায় রেখে সে কাশফির দিকে আবার চেয়ে ঠোঁট নেড়ে কিছু একটা উচ্চারণ করল, কাশফির বুঝতে বেশিক্ষণ লাগলো না,

❝ You lost, Darling.❞

শব্দগুলো তার মস্তিষ্কে সাজানোর সাথে সাথেই সে শিউরে উঠলো। সে আবার মুখ নেড়ে কাশফির উদ্দেশ্যে কিছু বলে হাটা শুরু করল। উচ্চারিত শব্দ গুচ্ছ মনের অজান্তে আওড়াতেই তার গলা ধরে এলো, শরীরের রক্তস্রোতে যেন হিম ধরে গেলো—

❝ Game over!!! ❞
দুটো শব্দ কিন্তু আধিপত্য বিস্তর।

#চলবে…

#অদৃষ্টের_মৃগতৃষ্ণা (১৬)
#লেখনীতে_প্রোপীতা_নিউমী
পর্ব: ১৬

“What a coincidence!!!”
কৌশিকের চোঁখে মুখে একরাশ বিস্ময় দেখে কাশফি থতমত খেয়ে গেলো। স্বভাবত চতুর কৌশিক বেশ পটু অভিনয়ের মাধ্যমে সকলের সামনে আশ্চর্য্য হয়ে থাকলেও কাশফির দৃষ্টিতে এসব সাজানো গোছানো একটা নাটক হয়েই ঠেকলো। ফাহিম কুশল বিনিময় করে নেয়। কৌশিক মির্জা আতিকুর রহমানকে সালাম দিলেন বিনিময়ে আতিকুর রহমান সৌজন্যমূলক হেসে সালামের জবাব দেয় কেবল, তিনি কৌশিক মির্জার ব্যাপারে অবগত ছিলেন তবে দিগন্তর উপর অগাধ বিশ্বাস ছিল বলেই এই পর্যন্ত এগিয়েছেন।

কৌশিকের পুরু গলার হাস্কি কন্ঠে পাথর হয়ে থাকা কাশফির হঠাৎ টনক নড়ে উঠলো, ইতিমধ্যে ঘাম ছুটে গিয়েছে তার। কৌশিকের এতসবকিছু করার কারণ কি হতে পারে? শুধুই কি কাশফির জীবনে দখলদারী করা? তবে আবার প্রশ্ন জাগে মনে, কৌশিক মির্জার বিত্তশালী জগতে কাশফি অতি নগণ্য একজন। অন্য কোন মতলব সে খুঁজেই পাচ্ছে না, কোন রকমেই কাশফির হিসাব মিললো না। অগত্য ভোঁতা মুখে দৃষ্টি নত করে কেবল তাদের কথা শুনতে লাগলো।

কথাবার্তা বেশ খানিকক্ষণ চললো। কথার ধাঁচ দেখে কাশফি তাদের উভয়পক্ষের সম্মতি আঁচ করে নিলো। নিজের প্রতি ক্ষোভ জমেছে এখন চাইলেও বাবার সিদ্ধান্তে সে হস্তক্ষেপ করতে পারবেনা। হঠাৎ তার ভাবনা চিন্তা ভেদ করে কৌশিকের রাখা একটা প্রস্তাব কানে এলো—

“শুনেছি আর্ট গ্যালারি দুটো প্রায় সাত আট বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে।”

আতিকুর রহমান মাথা হ্যাঁ সূচক নাড়েন,
“জ্বি, আমি একা মানুষ দায়িত্বটা নিতে পারিনি। পরিকল্পনা আছে মেয়ের জিনিস গুছিয়ে বুঝিয়ে দিলে মেয়েই বুঝে নেবে।”

“রহমান সাহেব, আমি আর্টিস্টিক জিনিস ভীষন পছন্দ করি তাই ভাবছি গ্যালারি দুটোয় আমি ইনভেস্ট করব।”

কাশফি আতকে উঠে, তড়িঘড়ি করে না করার পূর্বেই দিগন্ত সায় দেয়। সময় নিয়ে গম্ভির কন্ঠে বলল,

“আমিও ভাবছিলাম, ঈশিতা পুনরায় গ্যালারি খোলার ব্যাপারে মত দিলেই আমারা ইনভেস্ট করব।”

তাদের কথা শোনা মাত্রই এতক্ষন হাঁসফাঁস করতে থাকা কাশফির ভয় জেঁকে ধরলো। সে কৌশিক কে পরখ করলো কিছুক্ষণ, বিতৃষ্ণা চেয়ে গেলো তার কায়ায়।
সে এত নিখুঁত অভিনয় জানে! তার বাবার সামনে এমন ভাব দেখাচ্ছে যেনো সে কাশফির অস্তিত্বের ব্যাপারে অবগত, কাশফি নামের কাউকেই চিনে না এমন।
অতিষ্ঠ কাশফি কথাবার্তার ফাঁকে সুযোগ পাওয়া মাত্রই সে তার বাবাকে আলাদা করে ডেকে নেয়।

“ক্যান আই হ্যাভ আ মোমেন্ট প্লিজ?”
প্রথমে সরু চোঁখে তাকালেও পরে তার বাবা ক্লায়েন্ট আর এজেন্টদের ছোট্ট করে ‘এক্সকিউজ মী’ বলে কাশফির সঙ্গে কিছুটা দুরে এসে পড়ে।

“বাবা এস্টেটের চুক্তিটা আমি তাদের সাথে করতে চাই না।”

“এটা কেমন কথা?”

“বাবা প্লিজ।”

কাশফির খামখেয়ালী কথাবার্তায় আতিকুর রহমান চরম বিরক্ত, তিনি কড়া গলায় জানিয়ে দেয়,
“না কাশফি তোমাকে আমি এডাল্টের মতো একটা সিদ্ধান্ত নিতে বলেছি আর তুমি কিনা বচ্চামো করছো। তোমার থেকে এসব কিছু আশা করি না আমি।”

“বাবা আমার সমস্যা কৌশিক মির্জা নিয়ে।”

“কেনো?”

“এসবের সে ফায়দা লুটবে, সে মানুষটাই এমন!”

“সেটা আমি সুনিশ্চিত করব। তাছাড়া তোমাকে আমি অনেক বার বলেছি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে। আপাদত এখন সিদ্ধান্ত ফিরানোর কোন পথ নেই।”

বাকিটুকু বোঝাপড়া চলল অনেকক্ষন, দম খিচে বসে থাকা বসে থাকা কাশফির আর কোন কথায় খেয়াল রইল না। কৌশিক নামক আতঙ্কে জর্জরিত তার কিশোরী মন বার বার কৌশিকের জন্য বিষিয়ে ঊঠছে।
একটা মানুষকে ঠিক কত রকমে ঘৃ’ণা করা যায়?
অগণিত

আলোচনার ইতি ঘটতেই সে গটগট পায়ে বেরিয়ে পড়ল যেনো সে শেষ হওয়ার প্রহর গুনছিল এতক্ষন। কৌশিকের সাথে এক রূমে থেকেই তার দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম সেক্ষেত্রে মানুষটাকে সহ্য করা বিলাসিতা কেবল।

একজন ক্লায়েন্টের কল আসায় ফাহিম কথা বলতে কিছুটা দুরে এসেছিল, যতক্ষণে ফিরে এসেছে তার পূর্বেই দেখলো কাশফি উধাও। সে আশার পাঁচ মিনিট আগেই কাশফি আর তার বাবা গাড়ি পাওয়া মাত্র বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন। ফোন হাতে ফোঁস করে শ্বাস ফেলে সে পাশ ফিরে। চোখ জোড়া ফোনের স্ক্রিনে রেখে তার গাড়ির দিকে এগোতে পা বাড়ায় তৎক্ষণাৎ ভূতের ন্যায় একজোড়া চকচকে জুতো পায়ে দাঁড়ানো একজন তার পথ রুখে দাড়ায়। মুখ দিয়ে বিরক্ত সূচক শব্দ বের করে মাথা উপরে তুলতেই তার মুখ হা হয়ে গেলো, পরক্ষণে নিজেকে সামলে একটা হাঁসি দিয়ে বলল,

“কোন কাজ ছিল স্যার?”

“তোমার নাম।”

“ফাহিম।”

“এক্সপেরিয়েন্স?”

“চার বছরের স্যার।”

“এই শহরে নতুন?”

“জ্বি স্যার চার মাস আগেই ট্রান্সফার হয়েছে।”

কৌশিক মির্জা মুখে গম্ভিরতা বজায় রেখে নিশ্বাসের শব্দের ন্যায় ‘হুম’ শব্দ করল। অতঃপর তার শক্ত পেশল হাত ফাহিমের কাঁধে রেখে বলল—

“তোমার ভুলের মাসুল ঠিক কয় জনকে গুনতে হবে?”

ফাহিম ভরকে গেলো, কাঁধে রাখা কৌশিকের হাতটা মুহূর্তেই যেনো ভারী হয়ে গেলো। সে নিজেকে গুছিয়ে গলা পরিষ্কার করে বলল— “জ্বি?!”

“ফ্যামিলি তে কয়জন আছে?”

“স্যার যদি অজান্তে কোন ভূল হয়ে থাকে তবে ক্ষমা করবেন কিন্তু আমার দোষটা?…”

“আমার ট্যারিটোরি(Territory) কোনটা জানো?”

“কি বলছেন স্যার এটা না জানার কি আছে?!”

“তাহলে অবশ্যই এটাও জানার কথা যে তুমি যার দিকে দৃষ্টি ফেলেছো সে আমি ব্যতীত সকল পুরুষের জন্য নি’ষিদ্ধ।”

***

পায়ের উপর পা তুলে লুজ টাই আর সুট খুলে কৌশিক মির্জা পায়ের উপর পা তুলে বসেছে, তার সামনে তিরিক্ষ মেজাজে বসে আছে রায়হান তালুকদার। Las Vegas এর বহুল আলোচিত কুখ্যাত ড্রাগ লর্ড রোয়ান লুকাসের একজন রেগুলার ক্লায়েন্ট সে। আর রোয়ান লুকাস?
সে ভেগাসের একজন ক্লাব ওনার, আর ডিলার। এশিয়ায় ড্রা’গ সাপ্লাই সহ নির্দিষ্ট ক্লায়েন্টের ডিমান্ড অনুযায়ী মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে প্রো স্টি টিউ ট পেশায় থাকা নারীদের ভিআইপি ক্লায়েন্টদের সপে দেয়। ক্ষমতাবান কিছু মানুষের হাত ধরে এই দেশেও তার একটা জেন্টলম্যান ক্লাব খুলেছে। অদ্ভুত হলেও ইংরেজি নামে জেন্টলম্যান ক্লাব বলা হয় তবে কোন ভদ্র, শালীন আর মার্জিত ঘরের ছেলে মেয়েদের সেখানে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।

কৌশিক হাত বাড়াতেই লেভিন একটা ফোন কৌশিকের হাতে ধরিয়ে দেয়, কৌশিক ফোনের ডিসপ্লে রায়হানের দিকে ফিরিয়ে ভিডিও অন করতেই দেখতে পায় তার আর সুমনার অ’ন্ত’রঙ্গ মুহূর্ত। সুমনা রেলমন্ত্রীর স্ত্রী, রেলমন্ত্রীই মুলত সুপারিশ করে তাকে এই পর্যন্ত এনেছেন।
এসব দেখা মাত্রই তার চোখ মুখ শুকিয়ে এইটুকু হয়ে যায়, ভয়ের চোটে তার সাংঘা তি ক কাঁপুনি ঊঠে গেলো। সে এবার ভাব ছাড়িয়ে কৌশিকের চরণতলে এসে তার পা জোড়া আকড়ে ধরে। মধ্যবয়স্ক রায়হান চোখে পানি নিয়ে আকুতির স্বরে বলল,

“আমি তোমাকে ক্ষমতায় বসবো কত টাকা লাগবে তুমি আমায় বলো!”

এসব ভন্ডামীর ধার ঘেষলো না কৌশিক মির্জা। সে কিছুটা ভাবুক হওয়ার অভিনয় করলো, এই অভিনয় সকলকে কনভিন্স করতে পারলেও একরেখা মেয়েটা বিশ্বাস করতেই চায় না।
ঘাড় এপাশ ওপাশ করে ফ্লেক্স করে নিলো সে। বেশ আয়েশি ভঙ্গিতেই বসা অবস্থায় বলল,
“আমার এসব কিছুই চাইনা।”

“তাহলে কি চাই?”

কৌশিকের শান্ত রূপ ভ য়ংক র, সে নিজেকে কাম আর কালেক্টেড রেখেই সময় নিয়ে বলে,
“রোয়ানের জেন্টেলম্যান ক্লাবের দুটো ভিআইপি মেম্বারশিপ।”

রায়াহান কপাল কুঁচকে ফেলে, ভি আই পি মেম্বারশিপ এমনি এমনি বিষয় না। সে মনে করল পরুষ মানুষ, কৌশিক মির্জা না রী দে হে সু খ খোঁজার লক্ষ্যেই হয়ত ভি আই পি মেম্বারশিপ চাইছে। তবে কে জানে এটা রোয়ান লুকাসের সাথে যুক্ত দেশের ক্ষমতাশীল লোকদের জন্য ঠাণ্ডা মাথায় তৈরি করা একটা ফাঁদ।
“কিন্তু এটা তো লম্বা সময় নিবে আর রোয়ান সন্দেহ করবে!”

“তুমি আমার ডিমান্ড জানতে চেয়েছে, আমি বলেছি। তুমি অবশ্যই চাইবে না যে সে তোমার এসব কুকীর্তি জানুক।”

“দুই দুটো— সে যদি কিছু আঁচ করে ফেলে !”

কৌশিক শ্রাগ করে সোফায় মাথা এলিয়ে দেয়, মুখে নির্বিকার ভাবে জানালো,
“ইটস আপ টু ইউ। ছয় মাসের মধ্যে আমি অন্তত একটা ভিআইপি মেম্বারশিপ চাই, মনে থাকে যেন!”

কৌশিক তার কথা বলে শেষ হওয়া মাত্র আর অপেক্ষা করল না। যেতে যেতে ছোট্ট একটা মেসেজে তাদের ইনফরমার কার্ডানকে জানিয়ে দেয়।
রায়হান তালুকদার হয়ত ন রা ধ ম, কি ট সমতুল্য। তবে কে বলেছে পুরুষ মানুষ অপেক্ষা করতে জানে না?
সবাই তো আর অধম হয়না।
কেউ কেউ দৃষ্টান্ত প্রমাণ ফেলে যায়। তারাই তো ভলোবাসাকে টিকিয়ে রাখতে লড়াই করে, করছে।

***

কৌশিকের কালো মার্সিডিজ থামে একটা কবরস্থানের সামনে। চারিপাশ শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশ, আসেপাশে সুন্দর করে ফুলগাছ লাগানো। কৌশিক বুঝে পায়না তার বাবা মানুষটা এমন কেন? কিসের এত মায়া। তিনি প্রশয় দিয়েছেন বলেই তার সম্পূর্ন জীবন উল্টে পাল্টে গিয়েছে, প্রতিনিয়ত তাকে লড়তে হচ্ছে।

চোখ বুলিয়ে দেখে নিলো সিমেন্টের তৈরি সমাধিতে খোদাই করে বড়বড় অক্ষরে লেখা নাম —

‘মুশফিকুর রহমান কিনান মির্জা’

কায়েফের কবরে প্রাপ্য শাস্তি দেখার তার ভীষন ইচ্ছা। একসময় নিজের এই ভাই জান প্রাণ ছিল তাই বলে তার জান নিয়ে খেলা করবে ভাবলে সে এই বি’শ্বা’স ঘা’ত’ক কে জ্যান্ত রাখতো না।

“একই ঔরসের ভাই তুই আমার। অথচ বেঁচে থাকতে আমার সুখ কে ড়ে নিয়ে ছিলি আর ম রা র পরও তোর করা পাপের বোঝা আমাকেই টানতে হচ্ছে!”

কৌশিক শক্ত তবে ধরা গলায় তী’ব্র’বা’ন ছুড়ে। চোখ বন্ধ করে সে নিশ্বাস নেয়। একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে তার বাবার বোকামির উপর।

“জানিস বাবা এখনো মানতে পারেন না, তার অতি আদরের সন্তান নারী ধা’ন্ধা’য় জড়িয়ে তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিল।”

রাগ আর বিতৃষ্ণা নিয়ে কবরস্থান ছেড়ে চলে আসার আগে সে একবার কবরস্থানের মাটির দিকে তাকায়,
“ম রে গিয়ে তুই আমার থেকে বেঁচে গিয়েছিস, না হয় তোকে আমি নিজ হাতেই মে রে ফেলতাম।”

***

গভীর রাত, বেশ জোরে সোরে মেসেজের টুং টং শব্দ হলো। বিরক্তিতে নাক কুঁচকে ফেললো কাশফি, এই সময় তাকে মেসেজ কে দিলো? হাতিয়ে নাইট স্ট্যান্ডে রাখা ফোনটা খুঁজে নিয়ে কাশফি ফোনের স্ক্রিন অন করে নিভু নিভু চোখে দেখতেই আলোর কারণে কুঁচকে চোখ বন্ধ করে নেয়।
কোন রকম চোখ বড়বড় করে তাকাতেই সে চোঁখ ডলে নেয়, চোখ পিট পিট করে আবার চাইতেই তার ঘুম পুরোপুরি ছুটে গেলো। কাঁচা ঘুম ভেঙেছে তাই চক্ষু লালাভ দেখাচ্ছে, বেশ কিছুক্ষণ অপলক মেসেজটার দিকে চেয়ে রইল, চোখজোড়া লাল হয়ে আছে তার।

“আপনাকে দুরে থাকার সুযোগ দিয়েছিলাম কাশফি, আপনি আমার কথা হেলাফেলা করলেন?! ভেরি ব্যাড সানশাইন। বলুন তো কি শাস্তি দিই আপনাকে?”

হঠাৎ করে বেশ জোরে ফোন বেজে উঠলো, তৎক্ষণাৎ কাশফি ধড়ফড়িয়ে শোয়া থেকে উঠে পড়লো। বুকে জামার অংশ খাঁমচে ধরে নাম্বারের দিকে দ্বিধান্বিত চোখে তাঁকিয়ে রইল। লাস্ট রিং বাজছে ঠিক সেই মুহূর্তেই কাশফি ফোন রিসিভ করে কানে ধরলো,

“তিনটা নাম্বার ব্লক করেছেন আপনি আমার, হিসাব রেখেছেন ম্যাডাম।”

“আপনি আমার পিছু ছেড়ে দিলেই পারেন।”

“এত্ত সহজ?!”

“চাইলে সব সহজ, প্লিজ আপনি আপনার পথে চলুন আর হুটহাট সামনে এসে আমাকে বিচলিত করবেন না, ইটস আ হাম্ভল রিকুয়েস্ট(It’s a humble request)!”

“কেন? আমাকে কি দেখে অস্থির অস্থির মনে হয়?”

“You speak highly of yourself, যা মাত্রাতিরিক্ত বিরক্তির কর।”

অপর লাইনে কোন জবাব এলো না তাই কাশফি সুযোগ পেয়ে আবার শায়েস্তা করার ভঙ্গিমায় বলল,
“একটা ফ্রী এডভাইস দিলাম, নিজেকে বড় ভাবা বন্ধ করুন!”

“আর আপনাকে আমি একটা অর্ডার দিলাম, আপনি এক্ষুনি আপনার ফোন নিয়ে নিচে নামবেন।”

কাশফি ভরকে গিয়ে দুরুদুরু বুকে ছুট লাগলো জানলার কাছে, তাদের বাড়ীর আঙিনায় কৌশিকের কুচকুচে কালো গাড়ি পার্ক করা, আর গাড়ীর হুডের উপর বসে আছে কৌশিকের পুরুষালী অবয়ব, কৌশিক তার থেকে ছয় সাত বছরের বড় হয়ত কিন্তু তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই। একজন সুঠামদেহী পাকাপোক্ত পুরুষ, যে এখন সরাসরি কাশফির দিকে চেয়ে আছে।
ভ’য়ংক’র সেই চাহনী, কাশফি পুরোপুরি থমকে যায়, তাকে এভাবে দেখে অপ্রস্তুত এবং বিব্রত হয়ে পড়ে। সে অস্ফুট স্বরে জিজ্ঞেস করল—

“কেন?… কি?!”

“আপনাকে দেখার ভীষন ইচ্ছে হয়েছে।”

“আর আমি আপনার কথা মান্য করব?!”

“Of course.”

“বাধ্য নই!”

“আপনি কি আমার অবাধ্য হচ্ছেন তবে?”

“যা ইচ্ছে মনে করুন, আই ডোন্ট গিভ আ ড্যাম!”

কাশফি নিজেকে শক্ত আর নির্ভীক প্রমাণ করতে কথাটা বলেছে কিন্তু কৌশিকের পরবর্তী বাক্য শোনা মাত্রই তার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো,

“আপনি এক্ষুণি নিচে নামবেন নাহয় আমি উপরে উঠে আপনার রূমের আসছি।”

“দরজা ভিতর থেকে আটকানো!”

“তাহলে চাইছেন আমি চিৎকার করে আপনাকে ডেকে পুরো এলাকা সজাগ করে দিই।”

“আপনি এমন কিছুই করবেন না!”

“Try me.”

“আপনি…”

কাশফির দুর্বল কন্ঠের বাক্য পূর্ন হওয়ার আগে কৌশিক কাঠ কাঠ কন্ঠে বলে,
“আপনি নিচে নামবেন রাইট ফা’কিং নাও কাশফি!”

“কিভাবে কি? আমি পাগল হলেন নাকি?!”

“আমি কাউন্ট ডাউন করছি, থ্রী, টু…”

কৌশিকের ভরসা নেই তাই কাশফি তড়িঘড়ি করে বলে,
“আমি আসছি, আমি আসছি!!!”

“জাস্ট টু মিনিটস।”
আদেশের সুরে বিড়বিড় করে বলে লাইন বিচ্ছিন্ন করে দিলো।

কাশফি ফোন হাতে কোন রকম ওড়নাটা গলার দুই পাশে ঝুলিয়ে রূম থেকে বের হয়। বের হতে হতে নিজের কপাল চাপড়ালো সে।
কত বড় গণ্ডমূর্খ সে! বিড়াল হয়ে বাঘের সাথে পাল্লা দিতে গিয়েছিল।
নিঃশব্দে পা টিপে টিপে মেইন দরজা খুলে বের হয়ে এসে দেখে কৌশিক এখনো নির্বিঘ্নে গাড়ির হুডের উপর বসে আছে। তার টাইটা লুস হয়ে গলায় ঝুলছে, ওয়েস্ট কোট আর সুট গায়েব। শার্টের হাতা ফোল্ডেড, গুটিয়ে উপরে তোলা। ইন করা শার্টের নিচের দিকের ভাঁজ কিছুটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। হাতের দামী ঘড়ি এখনো আগের অবস্থানেই আছে।

কৌশিক ছো মেরে কাশফির হাত থেকে ফোন নিয়ে তার নাম্বার গুলো ব্লকলিস্ট থেকে বের করে নিলো। তার চোখে মুখে তৃপ্তির হাসি। কাজ শেষে কাশফির দিকে ফোন বাড়িয়ে দিলো।

দুই হাত দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে থাকা কাশফি কৌশিকের পানে অসহায় চোঁখে চায়। এরপর হতাশামিশ্রীত কন্ঠে বলল,

“আপনি এমন কেন করেছেন?”

কৌশিক গম্ভির স্বরে বলল,
“আপনি বুঝতে পারছেন না নাকি বুঝতে চাইছেন না?!”

“আপনাকে বোঝার সাধ্য আমার নেই জনাব।”

“আমি আপনার আশায় থাকা চাতক পুরুষ আর আপনি আমার একান্ত নারী।”

“অসম্ভব! আপনি এত মেয়ে থাকতে আমি আমার কাছে আসবেন এমন আজাইরা কথা বিশ্বাস আমি, ঈশিতা কখনো করব না। মতলব ছাড়া আগানোর মানুষ আপনি না!”

“তিন চামচ বেশি বুঝেন, আমি তো অন্য কাউকে নয় আমার জ্বলন্ত শিখা কাশফি কে চেয়েছি।”

“আমি আপনাকে চাই না।”

কাশফির সোজা সাপটা জবাবে কৌশিক কিঞ্চিৎ হাসে তবে এই হাসি ক্ষণিকের মধ্যে উধাও হয়ে গেলো। সে কাশফিকে নরম স্বরে বলল,

“তাহলে আপনি আমাকে কি ভাবেন সেটাই বলুন।”

“আপাদত মনে হচ্ছে আপনি নতুন শিকার পেয়েছেন, একটা খেলা খেলবেন। আমাকে প্রেমের বেড়াজালে ফাঁসিয়ে শরীর উ প ভো গ করার খেলা।”

বেফাঁস কথা বলা মাত্রাই কাশফি ভয়ে জমে গেলো যেন। কৌশিকের নির্জীব তবে তির্যক চাহনি উপেক্ষা করতে পারলো না। কৌশিক তার চোয়াল শক্ত করে নেয়, হাতের মুষ্ঠি একবার খুলে বন্ধ করে নিলো অতঃপর একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে নেয়। মিনিট খানেক পর সে গুরুগম্ভীর হয়ে রুক্ষ কন্ঠে বলে,

“আজ দ্বিতীয়বারের মতো যা করলাম না, তারই অপবাদ আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিলেন আপনি। অন্যকেউ হলে এতক্ষণে এক চ ড়ে হসপিটাল এডমিট হয়ে যেতো কিন্তু আপনার উপর রাগ উঠলেও হাত উঠতে বুক কাপে। তাও আপনি বুঝছেন না?”

কাশফি পিলে চমকে উঠলো, চোঁখ জোড়া ছোট ছোট করে বলল,
“দ্বিতীয়বার? আশ্চর্য, আমি পার্সোনালি আপনাকে কবে থেকে চিনি?! আর এসব বুঝাবুঝির দরকার আমার নেই।”

“আলবাত আছে, আমায় পার্সোনালি চিনতে ইচ্ছুক?”

“মোটেই না। আপনার ফালতু সব কথাবার্তা অনেক সহ্য করেছি, সুতরাং যেই পথ দিয়ে এসেছেন সেই পথেই ফিরে যান আমাকেও যেতে দিন!”

“যাবোই তো এত তাড়া কিসের? আগে একটা বিষয় ক্লিয়ার করে নিই।”

কাশফি ভ্রূ কুঁচকে ফেলে, কৌশিক এসব কিছুর পরোয়া না করে তাদের দূরত্ব ঘুচিয়ে নেয়। তারা ঠিক ততখানি দুরত্বে অবস্থান করছে যতখানি অবস্থানে থাকলে একে অপরের নিশ্বাসের মিলিয়ে পড়া শব্দ শুনতে পায়। কৌশিকের গরম নিশ্বাস কাশফিকে ছেয়ে গেলো।

“আপনি সর্বদা আমার নিকট পবিত্র কাশফি। কথা দিলাম আমি, কৌশিক মির্জা, কোন অধিকার বোধ ছাড়া আপনাকে ছুঁয়ে দেখবো না। আর আপনি কৌশিক মির্জার এই পবিত্র আমানত খিয়ানত করতে দিবেন না।”

কাশফি হতবিহ্বল তাকে আবার কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সে বলে ঊঠে,

“মনে থাকবে তো?”
কাশফি ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকলো কেবল। কথাগুলো বোধহয় মাথার উপর দিয়ে গেলো। প্রত্যুত্তরে কৌশিক মির্জা একটা আময়িক হাসি হাসে। এই হাসি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম হাসি মনে হলো তার। পুরুষের হাসি এত মন্ত্রমুগ্ধ হতে নেই। গোটা নিষ্ঠুর, নির্মম একজন মানুষ অথচ এই হাসিটা এতটা স্নিগ্ধ এত বিশুদ্ধ, আদো কি সম্ভব?!

কৌশিক সোজা হয়ে দাড়িয়ে যায়, কাশফির আরো কাছে দাড়িয়ে ঠিক তার চোখে চোখ রাখে, যেনো সে কতশত আলাপ বসিয়েছে সেথায়। তবে মুখে কেবল মিনমিনে স্বরে আওড়ালো —

“নিজের খেয়াল রেখো, সানশাইন।”

কাশফি কিছু একটা বলতে নিলেও আর বলা হয় না, তার গলা ধরে আসলো যেনো। এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো কৌশিক মির্জা কাশফির জীবনে শৈত্য প্রবাহ হয়ে এসেছিল যা বসন্তের আগমনে হারিয়ে যাবে। ততক্ষণে কৌশিকের ব্ল্যাক মার্সিডিজ গাড়ি চলতে শুরু করেছে, যেতে যেতে এক সময় দৃষ্টির অগোচরে হয়ে যায়। আমানত? সে কারো আমানত নয়? মেয়েরা স্বামীর আমানত শুনেছে সে কিন্তু…
আকাশ কুসুম ভাবনার অন্তরে তার নাকে সুরসুর করে পুরুষালী কোলনের ঘ্রাণ এলো, এবার নিজের দিকে খেয়াল দিতেই দেখলো কৌশিক তার হাতের কোট খানা বেখেয়ালি কাশফির দুই কাঁধে জড়িয়ে আছে। কবে পরিয়েছে? কখন?

দূর থেকে শোনা যাচ্ছে ফজরের আযানের ধ্বনি, নতুন ভোরের ডাক। তবে এটাই কি বিদায়? অবসান ঘটবে তার দুশ্চিন্তার?!

কক্ষনো না! বোকামির চরম পর্যায়ের চিন্তাভাবনা রাখা কাশফি হয়ত বুঝলোই না যে আলো ছাড়া আধার অস্তিত্বহীন।

#চলবে…