#অনিমন্ত্রিত_প্রেমনদী
#দ্বিতীয়_অধ্যায়
#পর্ব_২০
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
(কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ)
ঝলমল করা গোধূলি। শেষ দিগন্তে সূর্যের লুকোচুরি খেলা। রক্তিম আভা ছড়িয়েছে অন্তরিক্ষে।
বাইকের পেছনে অরুকে নিয়ে রামির প্রেমিক মন চনমনে হয়ে উঠেছে। ঠোঁটের কোনে এক চিলতে প্রশান্তির হাসি। ফুরফুরে মনে পেছনে বসা অরুর হাত পেছন থেকে রামির শার্ট আঁকড়ে আছে। নিজেকে যতই গভীরে লুকিয়ে রাখতে চায়, ততই যেন অনুভূতি গুলো বেসামাল হয়ে পড়ে। এই যে রামির এত কাছে সে, নিজেকে শক্ত দেখায়। অথচ ভেতরে ভেতরে ঢলে পড়ে সে, প্রতিনিয়ত ব্যাকুল হয়ে উঠে মন। প্রকাশ করতে কীসের যেন এক জড়তা! কাছাকাছি এলেই মনে হয়, এই মানুষটার সঙ্গে আমার মা*রা*মা*রি, ঝ*গ*ড়া*ঝা*টি সম্পর্ক। চোখে চোখ রাখতেও ভীষণ লজ্জা হয়। এমনিতে যতটা চটপটে স্বভাবের, একটু প্রেম নিয়ে তাকালেই সব হাওয়া শেষ হয়ে যায়। বুকের ভেতর দুরুদুরু কম্পন সৃষ্টি হয়। হাত-পা অসাড় হয়ে আসতে চায়। জড়তা কাটিয়ে উঠতে না পারায় সম্পর্কের ভীত্ মজবুত হয়না।
অরুর ঘোর কাটলো রামির ডাকে।
“অরু।”
“হুঁ?”
“শক্ত করে ধরে বস। পড়ে যাবি।”
অরু মনে মনে হাসে। সে ঠিকঠাকই বসেছে। পড়ে যাওয়ার কোন রিস্ক নেই। রামি চায় সে আরেকটু কাছাকাছি থাকুক। অরু নির্দ্বিধায় হাতের বাঁধন শক্ত করলো।
বাইক পার্ক করে দুজন রাস্তায় নামলো। ফুটপাত ধরে হেঁটে যাওয়া রামি অনুভব করলো অরুর অপ্রত্যাশিত স্পর্শ। মেয়েটা তার বাঁ হাত দু-হাতে জড়িয়ে হাঁটছে। স্থির হলো চোখজোড়া। পা থামলো না। অধর কোন বিস্তৃত হলো। তাদের আশেপাশে কপোত-কপোতীর ভীড়। অরু হাওয়াইমিঠাই দেখে বায়না ধরলো।
“আমি হাওয়াইমিঠাই খাবো।”
রামি বিনাবাক্য ব্যয়ে কিনে দিল। অরু একটুখানি মুখে দিয়ে বলল,
“এত সহজে কিনে দিলে, তুমি তো সহজ কথার মানুষ না।”
রামি সামনে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে আনমনে বলল,
“এত মিষ্টি করে আবদার করলে, তা ফেরানোর সাধ্যি আছে কার?”
অরু লজ্জা পেয়ে হাসলো। রামি এক পলক তাকালো। দৃষ্টি অনড় রেখে ধীর গলায় বলল,
“আমি যদি কখনো হারিয়ে যাই, তোর খা*রা*প লাগবে?”
অরুর ভুরু কুঁচকে গেল। ঝটপট জিজ্ঞেস করলো,
“কোথায় হারাবে?”
রামির স্বর নিস্তেজ হয়ে এলো। মলিন হেসে বলল,
“আমি ফ্লাইং এ আছি। টিবিতে বড়োসড়ো হেডলাইন দিয়ে বিমান ক্র্যাশ হওয়ার সংবাদ পাঠ করা হচ্ছে। যদি সেখানে আমার মৃ*ত্যু সংবাদ আসে?”
অরুর খাওয়া থেমে গেল। ধ্বক করে উঠলো বুকের ভেতর। চোখের কোনে বিন্দু বিন্দু পানি জমেছে। রামি শান্ত চোখে অরুকে পর্যবেক্ষণ করে নিঃশব্দে হাসলো। আজ অরুর চোখে নিজের জন্য কিছু একটা দেখেছে। রামির হাসি দেখে চোখের পানি আর বাঁধা মানলোনা। ফ্যালফ্যাল করে কেঁদে ফেললো অরু। মায়ের পর থেকেই সে কারো মৃ*ত্যু সংবাদ নিতে পারেনা। সহজেই দুর্বল হয়ে পড়ে। সেখানে প্রিয়দের হারানো তাকে ভেতর থেকে ভেঙে গুড়িয়ে দিতে সক্ষম। অরু আচমকা এক অভাবনীয় কাজ করে বসলো। লোকজনে ভরা জায়গায় রামির বুকে ঝাপিয়ে পড়লো। দুহাতে পেছন দিকে শার্ট আঁকড়ে ধরে হেঁচকি তুলে কাঁদছে। রামি বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। সমস্ত বোধবুদ্ধি হারিয়ে বসলো। মিনিট দুয়েক এভাবেই অতিবাহিত হওয়ার পর এবার আস্তে আস্তে তার একটা হাত অরুর পিঠের উপর পড়লো। আলগোছে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ফিসফিস শব্দে বলল,
“আশেপাশে সবাই দেখছে অরু।”
অরুর মাঝে কোন হেলদোল নেই। এখানে যারা আছে, তারা প্রায় সকলেই প্রেমিক-প্রেমিকা যুগল। রামিও আর নিজ থেকে অরুকে সরালো না। আপনা-আপনি অরুর কান্না থামতেই সে ঝটপট সরে এলো। এবার তার ভীষণ লজ্জা হচ্ছে। কী দরকার ছিল এতটা আবেগি হয়ে যাওয়ার! রামির চোখে চোখ রাখতেই লজ্জা পাচ্ছে। দূরে দূরে হাঁটছে অরু।
রামি জোর করেই তার হাত মুঠোয় নিয়ে পাশাপাশি দাঁড়ালো। একটু পর মিটিমিটি হেসে শুধালো,
“কেঁদেছিলি কেন, অরু?”
অরু দৃষ্টি লুকানোর চেষ্টা করছে। রামি ইচ্ছে করেই তাকে বেকায়দা ফেলছে। লজ্জা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে হুট করেই রেগে গেল। রামির হাত ছাড়িয়ে একা একাই সামনে এগিয়ে গেল। ধুপধাপ পা ফেলে হাঁটছে। রামি হেসে ফেললো। পেছন থেকে গলা উঁচিয়ে বলল,
“আস্তে হাঁট, পড়ে পায়ে ব্যথা পাবি।”
পাশ থেকে একজন জিজ্ঞেস করলো,
“কে হয় আপনার?”
অরুকে রাগানোর জন্য এবারেও গলার স্বর বাড়িয়ে রামি লোকটিকে জবাব দিলো,
“কিছুই হয় না। ছোটোবেলায় এ-কে আমরা ড্রেনে পেয়েছিলাম। এখন বড়ো হয়ে আমাদের উপরই কর্তৃত্ব ফলাচ্ছে, জেদ দেখাচ্ছে।”
অরু ফোঁস করে উঠলো। সামনে থেকেই অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে। রামি এগিয়ে গিয়ে হাত ধরতেই ঝাড়ি দিয়ে আগের মতোই আগে আগে হাঁটা ধরলো।
সন্ধ্যা নামলো আয়োজন করে। দিনের সমাপ্তি ঘটিয়ে রাতের শুরুভাগ। রামি পেছন পেছন হাঁটছে। অরু রাগে ফেটে পড়ছে। সে না-হয় হাত ছাড়িয়ে এসেছে, রাগ দেখাবে, তাই বলে রামি তাকে জোর করবে না? ভেতরে ভেতরে রাগ হজম করলেও মুখে কিছু বলছে না। ভর সন্ধ্যায় হঠাৎ ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হলো, সেই সাথে মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। রামি দ্রুত পা চালিয়ে অরুর হাত ধরে টে*নে নিয়ে গেল। বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য একটা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে গিয়েও ব্যর্থ হলো। বৃষ্টি শুরু হওয়ায় বৃদ্ধ, যুবক অনেকেই ছাউনির নিচে দাঁড়িয়েছে। রামি একপাশে অরুকে দাঁড় করিয়ে হাত দিয়ে আগলে রেখেছে। অরু গমগমে স্বরে বলল,
“আমি বাড়ি যাব।”
“বৃষ্টি কমুক।”
“আমি এখনই যাবো।”
রামি মৃদু ধমক দিয়ে বলল,
“বৃষ্টি হচ্ছে অরু। এখন ভিজে যাবি।”
অরু গাল ফুলিয়ে আছে। আর কথা বললো না রামির সাথে। বৃষ্টির তোড়জোড় কমে গেল। একে একে সকলেই ভেজা রাস্তায় কদম ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে। রামি অরুকে নিয়ে বেরিয়ে এলো। বারকয়েক ডাকলেও অরু সাড়া দিলো না। রামি তপ্ত শ্বাস ছাড়লো। অরুকে আর ঘাটালো না। কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর নিজ থেকেই অরুর রাগ পড়ে গেল। গুটিগুটি পায়ে রামির নিকট এগিয়ে গিয়ে তার কনিষ্ঠ আঙ্গুল মুঠোবন্দী করে নিলো। রামি আড় চোখে তাকিয়ে বলল,
“রা*গ পড়ে গিয়েছে?”
অরু একপলক মাথা তুলে তাকালেও কিছুই বললো না। দুজন আরও কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে বাইকে চেপে বসলো। অরুকে বাসার সামনে নামিয়ে দিল রামি। অরু দাঁড়িয়ে রইলো। হাতে ওড়না পেঁচিয়ে যাচ্ছে। রামি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুধালো,
“কিছু বলবি?”
অরু ব্যস্ত ভঙ্গিতে দু-দিকে মাথা নাড়িয়ে রামিকে স্তব্ধ করে দেওয়ার মতো কাজ করলো। রামির গালে দু-ঠোঁটের ছোঁয়া দিয়ে দৌড়ে বাসার ভেতর চলে গেল। রামি যেন বিদ্যুতের শক পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে রইলো। এখনো তার ঘোর কাটেনি। অবাক হয়ে অরুর যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলো। পরক্ষণে গালে হাত ছুঁইয়ে কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া আকস্মিক ঘটনা রোমন্থন করলো। তার ঠোঁটে ফোটে উঠলো প্রাপ্তির হাসি। প্রাপ্তির খাতা এক কানা পূর্ণ হলো আজ। প্রফুল্লচিত্তে বাসার ভেতর প্রবেশ করতেই সাদাদের তীক্ষ্ণ চোখের মুখে পড়লো। কেমন জহুরী নজরে তাকে পর্যবেক্ষণ করছে। রামি দাঁত কেলিয়ে বলল,
“এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই। সরো, বউয়ের মিষ্টি মিষ্টি ভালোবাসা নিয়ে এসেছি।”
সাদাদ দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
“নির্লজ্জ ব্যাটালোক। আমার মতো হতে শেখ।”
রামি হো হো করে হেসে বলল,
“এত লজ্জা তোমার! বউ থাকতেও ছোটো ভাইয়ের বউয়ের দিকে নজর দাও। ছিহ্!”
“নজর তো তুই দিয়েছিস আমার অরুর উপর।”
“খবরদার! আমার বউয়ের নাম মুখে নিবে না।”
মুখ ঝামটা মে*রে ঘরে ঢুকে পড়লো রামি। পেছন থেকে সাদাদ হাসলো। ছোটোদের সাথে এমন ঝগড়াঝাটি সে বেশ উপভোগ করে। দরজা আটকে ইরার কাছে চলে গেল। সেদিন তার রা*গ ভাঙাতে গিয়ে প্রচুর নাকানিচুবানি খেতে হয়েছে।
★★★
বাবা তরী আর মাহমুদকে ডাকলেন রাতের খাবারের আগে। তরী ঘরের বড়ো মেয়ে আর মাহমুদও এতদিন জামাই কম বড়ো ছেলের দায়িত্ব পালন করেছে বেশি। তাই কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাদের মতামত জরুরী। তরী মাহমুদ আসলো। মিঠুও বাসাতেই রইলো। অরুও আছে। বাবা ভাবলেন রামি বাদ থাকবে কেন! সে-ও তো মেয়ের জামাই। তাকেও ডেকে পাঠানো হলো। রামি অমিকে ঘাড়ে চড়িয়ে নিয়ে এলো। গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় অমি ব্যাঘাত ঘটাবে। তাই মাহমুদ রামিকে ধমকে বলল,
“অমিকে মায়ের কাছ থেকে নিয়ে এসেছিস কেন? এখানে গুরুত্বপূর্ণ কথা হবে। দিয়ে আয় ওঁকে।”
অমি ত্যাড়ামো করে বলল,
“আমি যাবো না।”
তার নানাভাই বলল,
“থাক না। আমার নানাভাই চুপচাপ বসে থাকবে। কাউকে বিরক্ত করবে না।”
অমিও বাধ্য ছেলের মতো চুপটি করে বসে আছে।
মাহমুদ নম্র গলায় বলল,
“বাবা আপনি বলুন।”
তরীর বাবা গম্ভীর মুখে বললেন,
“মিঠুর বিয়ের ব্যাপারে ভাবছি। এতদিন ওঁকে বললেও সে গা দেয়নি। অরুর ও বিয়ে হয়ে গেল।”
মাহমুদ বলল,
“এটা তো ভালো সিদ্ধান্ত। ঘরে এমনিতেই একজন মেয়েমানুষের প্রয়োজন। মেয়েরা যেভাবে সংসার আগলে রাখতে পারে, পুরুষ সেভাবে পারে না।”
তরী বলল,
“এখন ওঁর পছন্দ আছে কি-না সেটা জেনে নেওয়া দরকার।”
রামির সাথে অনেক আগেই এই ব্যাপারটা শেয়ার করা শেষ। মাঝখানে অরুর সাথেও সুহার পরিচয় করিয়ে দিল মিঠু। বাকি বাবা, মাহমুদ আর তরী তিনজনই সুহার ব্যাপারে অজ্ঞাত। মিঠু তরী আর মাহমুদের উদ্দেশ্য বলল,
“তোমাদের দুজনের সাথে আমার একান্ত কিছু কথা আছে।”
তরী আর মাহমুদ উঠে গেল মিঠুর সাথে। ছাদের দরজা খোলা। মিঠু গলা ঝেড়ে বলল,
“আমার পছন্দের মেয়ে আছে। কিন্তু একটা সমস্যা হয়ে যাবে।”
মাহমুদ ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“কী সমস্যা?”
তরীও জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
মিঠু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“নাম সুহা। পরিবার থেকে আলাদা থাকে। মামা বাড়িতেই ছিল। এখন বলতে গেলে সম্পূর্ণ একা। অতীতের কোন একটা ঘটনার জের ধরে ভবিষ্যতে এগোতে চাইছে না মেয়েটা। কিন্তু এভাবে কতদিন একটা মেয়ে একা একা বাঁচবে?”
মাহমুদ প্রশ্ন করলো,
“তুমি আমায় ক্লিয়ার করে বলো। মেয়েটাকে তুমি পছন্দ করো নাকি তার পরিস্থিতি দেখে সাহায্য করতে চাইছো?”
মিঠু সময় নিলো না। ঝটপট উত্তর দিলো,
“পছন্দের চেয়ে বেশি কিছু। আমি বিয়ে করলে সুহাকেই করবো। পরিস্থিতি দেখে কোন সিদ্ধান্ত নেই নি আমি।”
তরী বলল,“সবই বুঝলাম। কিন্তু এখানে সমস্যার কী আছে? আমরা আগে প্রস্তাব দিয়ে দেখি।”
“উনার অভিভাবক হিসেবে উনার বান্ধবীর পরিবার আছে। তাদের ধরলে ব্যাপারটা সহজ হবে। অন্যথায় সুহাকে রাজি করানো কষ্ট সাধ্য ব্যাপার।”
মিঠুর কথার প্রত্যুত্তরে মাহমুদ শুধালো,
“এখন তুমি কী চাইছো?”
“আমি কী চাই, সেটা তো বললামই। তোমাদের সবটা জানানোর উদ্দেশ্য হলো বাবাকে ম্যানেজ করা। কোন সমস্যা হলে যেন সামলে ওঠা যায়। আমি সুহাকে-ও চাই আবার বাবাকে-ও অবহেলা করতে পারবো না।”
মাহমুদ বলল,
“আচ্ছা, বাকিটা আমরা সামলে নেব।”
অতঃপর তিনজনই নিচে নেমে এলো। অবশেষে সিদ্ধান্ত হলো মিঠুর পছন্দ করা মেয়েকে দেখতে যাওয়া হবে। মাহমুদ শশুরকে সামলে নিলো। সবাই রাতের খাবার এখানেই শেষ করলো। যাওয়ার আগে অমি মিঠুর উদ্দেশ্য বলল,
“বাবা তোমাকে পুতুল বউ এনে দেব, ঠিক আছে? কান্না করো না।”
মিঠু সহ সকলেই হাসলো অমির কথায়। মাহমুদ আর তরী অমিকে নিয়ে চলে গেলেও রামি আজ এ বাসায় থেকে গেল। আগামীকাল সে চলে যাবে। আজকের রাতটুকু মিঠুর সাথে আড্ডা দেওয়া যাবে। সকাল হতেই আর ওঁর নাগাল পাওয়া যাবে না। অর্ধরাত্রি দুজনে আড্ডা দিয়ে একসাথে শুয়ে পড়লো।
অরু ভালোভাবে দরজা আটকে শুতে গেল। সন্ধ্যার পরের ঘটনা মনে পড়লেই লজ্জা লাগে। মিঠুর বিয়ে নিয়ে আলোচনার সময় রামির থেকে পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেছে। রামির সাথে চোখাচোখি হলেই অদ্ভুতভাবে হাসে, যা অরুর লজ্জা বাড়িয়ে দিতে যথেষ্ট। ঘন্টাখানেক এপাশ-ওপাশ করলো রামি। মনটা পড়ে আছে অরুর কাছে। মিঠু চোখ বন্ধ রেখেই বলল,
“অনুমতি দেওয়া হলো। ছটপট না করে ও ঘরে চলে যা।”
রামি আর কিছু শোনার অপেক্ষা না করেই বিছানা ছেড়ে অরুর দরজায় সামনে দাঁড়ালো। ঠকঠক করে দু-বার করাঘাত করে ডাকলো,
“অরু!”
অরু গভীর ঘুমে মগ্ন। সামান্য ডাকে তার ঘুম ভাঙলো না। রামি পকেট থেকে ফোন হাতড়ে অরুর নাম্বারে কল দিল। প্রথমবার রিং হতে হতেই কে*টে গেল। দরজার বাইরে থেকেই অরুর ফোনের শব্দ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে রামি। অথচ মেয়েটা এখনো ঘুমে আচ্ছন্ন। দ্বিতীয়বারে রেসপন্স করলো অরু। কল রিসিভ করে ঘুম জড়ানো গলায় বলল,
“কল দিচ্ছো কেন?”
“দরজা খোল্ অরু। আমার জান বেরিয়ে যাচ্ছে।”
#চলবে…….
#অনিমন্ত্রিত_প্রেমনদী
#দ্বিতীয়_অধ্যায়
#পর্ব_২১
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
(কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ)
অরু হকচকিয়ে উঠলো। মস্তিষ্ক সচল হয়নি। চোখের ঘুম উবে গেল। কেন জান বেরিয়ে যাচ্ছে! সাং*ঘা*তি*ক কিছু ঘটলো না-কি? বুক ধড়ফড় করে উঠছে। দ্রুত বিছানা ছেড়ে দরজা খুলে দিল অরু। রামি কোন কথা না বলেই রুমে ঢুকে দরজা লক করে দিল। অরু ব্যতিব্যস্ত হয়ে রামির পিছু ছুটলো। বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“কী হয়েছে?”
রামি জবাব না দিয়ে অরুকে ঝট করে বুকে চেপে ধরে চোখ বুজলো। প্রলম্বিত শ্বাস ছেড়ে বলল,
“জান ফিরে এসেছে।”
অরুর কিছুই বোধগম্য হলো না। ভুরু কুঁচকে সবটা বোঝার চেষ্টা করছে। কিন্তু রামির কাছ থেকে আশানুরূপ কোন সাড়া না পেয়ে ওঁর বুক থেকে মাথা তুলে জিজ্ঞেস করলো,
“কী হয়েছে বলবে? জান বেরিয়ে যাচ্ছে মানে?”
রামি মাথা নিচু করে অরুর দিকে তাকিয়ে বলল,
“বউ ছেড়ে দূরে থাকতে আমার জান বেরিয়ে যাচ্ছিলো। এখন ঠিক আছে।”
রামির হাতে চাপড় মে*রে অরু কপট রা*গ দেখিয়ে বলল,
“ফাজলামো হচ্ছে? আমি কী না কী ভেবে চিন্তায় পড়ে গেলাম!”
রামি হাসলো।
“বরের জন্য চিন্তা করবি না তো কার জন্য করবি?”
এবার অরু দম নিয়ে বলল,
“এতরাতে এখানে কী?”
“এটা কার বাড়ি? আমার শশুর বাড়ি। তো আমি কোথায় থাকবো? নিশ্চয়ই আমার বউয়ের ঘরে!”
অরু সূঁচালো চোখে তাকিয়ে থেকে বলল,
“অর্ধরাত যেখানে ছিলে, সেখানে কী সমস্যা? ”
রামি ভাবলেশহীন গলায় বলল,
“সমস্যা আছে, বিরাট বড়ো সমস্যা। আমার এখন বউ ছাড়া ভালোলাগে না। লাগবে কী করে? দিনে-দুপুরে, সন্ধ্যায় বউ যদি হঠাৎ হঠাৎ আমাকে চমকে দেয়, তখন আমি কী করে দূরে থাকি?”
অরু অস্বস্তিতে পড়ে গেল। দৃষ্টি এলোমেলো। তাকে এদিক-ওদিক তাকাতে দেখে রামি বলল,
“এখন এত দূরে কেন?”
মিছেমিছি রাগ দেখালো অরু।
“যাও তো এখান থেকে। অযথা আমার ঘুম ভাঙিয়ে রঙ্গ করা হচ্ছে।”
রামি মিটিমিটি হেসে অরুর সান্নিধ্যে এলো। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতেই জমে গেল অরু। তার অস্বস্তির মাত্রা দ্বিগুণ হলো। হাত-পা শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। রামি পরপর অরুর দু-গালে দুটো চুম্বন করে ছেড়ে দিয়ে বলল,
“শোধবোধ করে দিলাম। আমি আবার ঋণ রাখি না। বরং বাড়তি দিতে পছন্দ করি।”
অরু এদিক-ওদিক না তাকিয়ে বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো। কাঁথা দিয়ে আপাদমস্তক ঢেকে নিয়েছে। একপাশে রামির জন্য জায়গা রেখেই শুয়েছে। রামি কোন কথা না বলেই খালি জায়গায় শুয়ে অরুকে কাঁথার উপর দিয়েই আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে নিলো।
রামি একটু পরই বাসা ছেড়ে যাচ্ছে। অথচ তার ব্যাগপত্র কিছুই গোছানো হয়নি। অরু ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরতেই তার ডাক পড়লো শশুরের ঘরে। ফ্রেশ হয়ে ওখানে যেতেই তরী বলল,
“তোর বরের ব্যাগ গুছিয়ে দে। দেখে তো মনে হচ্ছে যাওয়ার ইচ্ছেই নেই।”
এই বলে তরী ঠোঁট টিপে হাসলো। অরু আড়চোখে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বসে থাকা রামিকে পর্যবেক্ষণ করে নিলো। তরী সরে যেতেই রামির পাশে বসলো। দ্বিধাদ্বন্দ কাটিয়ে রামির হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে হাতের দিকেই তাকিয়ে রইলো। রামি ও চোখ সরিয়ে হাতের দিকেই তাকালো। অতঃপর অরুর দিকে চোখ রাখতেই অরু নরম স্বরে বলল,
“মন খা*রা*প? আবার তো আসবেই। আমাদের দেখা হবে, ঝ*গ*ড়া হবে।”
রামি অরুর চোখে চোখ রেখে কন্ঠ খাদে নামিয়ে শুধালো,
“আর? আর কিছু না?”
অরু থমকে গেলেও কিছু সময়ের ব্যবধানে নিজেকে ধাতস্থ করে নিলো। মুখ কঠিন করে কিছু বলার চেষ্টা করেও হেসে ফেলে। রামি ও আলতো হাসে। গভীর স্বরে বলে,
“আমায় বাঁধা কেন দিচ্ছিস? দূরে কেন সরিয়ে রাখছিস অরু? সত্যি বলছি, সামনের ছুটিতে আমি বাড়ি আসবো না, যদি না তুই ফোন করে আমায় আসতে বলিস।”
অরু বি*দ্রু*প হেসে বলল,
“সে দেখা যাবে। ছুটি পেয়ে কে বাড়ি না এসে নিজেকে আটকাতে পারে।”
রামি সিরিয়াস হয়ে বলল,
“আমি হেয়ালি করছি না অরু। এবার সত্যিই আসবো না।”
অরু সরল চোখে তাকিয়ে হাসে। সে জানে রামি আসবে। ছুটে তার কাছে আসবে৷
রামির চোখে আজ সূক্ষ্ম অভিমান। সে জানে সে আগামী ছুটিতে বাড়ি আসবে না। কারণ অরু তাকে ডাকবে না। তবুও কীসের যেন অপেক্ষা! পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা!
নিজ হাতে রামির ব্যাগ গুছিয়ে দিল অরু। দুজনের মাঝে আর কথা হলো না। একেবারে নিজেকে তৈরি করে মা থেকে শুরু করে একে একে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেল রামি। বাদ পড়লো অরু। তার কাছ থেকে আর আলাদা করে বিদায় নিলো না। যাওয়ার পূর্বে আর পেছনে তাকিয়ে পিছুটান বাড়াতে চাইলো না রামি। অরুর কেন যেন বুকের খাঁচায় চিনচিনে ব্যথা অনুভব হলো। সে চাইলেই রামিকে হাসিমুখে বিদায় দিতে পারতো। আজ আর নিজের ঘরে গেল না। রাতের খাবার শেষে রামির ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দিল। অরুর মন খা*রা*পি টের পেয়ে কেউ আর কিছু বললো না।
রামির ঘরের সবটাই গোছানো। বিকেলেই নিজ হাতে অরু গুছিয়েছে। এখন আবার অকারণেই সবকিছু ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে। আলমারি খুলে রামির টি-শার্ট বের করলো। বেছে বেছে কালো টি-শার্ট নিয়ে পরে ফেললো। বাকিগুলো বিছানার উপর ছড়িয়ে রেখেই শুয়ে পড়লো। ফোন হাতে নিয়ে দেখলো রামির একটাও কল মেসেজ নেই। অথচ রামি পৌঁছে গিয়ে মায়ের ফোনে কল দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে। অরুর রাগ হলো। এভাবে রাগ চেপে রাখলে নি*র্ঘা*ত সে মা*রা যাবে। রাগ ঝাড়া প্রয়োজন। যার রাগ তার উপরই ঝাড়বে বলে ঠিক করলো। রামির নাম্বারে লাগাতার কল দিয়ে গেল। কোন রেসপন্স নেই। ফোঁস করে বিছানায় উঠে বসলো অরু। রুমের আলো জ্বালিয়ে ভিডিও অপশন অন করলো।
নিজের গায়ের টি-শার্ট, বিছানায় ছড়িয়ে রাখা সব জামাকাপড় দেখিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“এই রামি দেখ্। তোর বউ আমি, তোর টি-শার্ট পরেছি। বাকি যেগুলো দেখা যাচ্ছে? সবগুলো দিয়ে আমি ঘর মুছবো, কে*টে কুচি কুচি করবো। এত বড়ো সাহস কেন তোর! আমাকে কল না দিয়ে আরাম করা হচ্ছে? আবার আমার কল ইনগোর করা হচ্ছে? গতকাল তো খুব বলা হচ্ছিলো, আমার জান বেরিয়ে যাচ্ছে। আজ কোন জানকে পেয়ে আমার কথা ভুলে বসে আছিস?”
একেবারে সব রাগ ঝেড়ে রামির হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও সেন্ড করে শান্ত হলো অরু। এবার ভালো ঘুম হবে। ফোন রেখে শুয়ে পড়লো।
অরুর উপর অভিমান করেই তাকে কল করা হয়নি। তার কল পেয়েও পুরোদমে ইগনোর করে গিয়েছে রামি। কিন্তু একটু আগে অরুর পাঠানো ভিডিও দেখে নিজের হাসি ধরে রাখতে পারে নি। শরীর দুলিয়ে শব্দ করে হাসছে। অভিমান হাওয়া হয়ে গেলেও অরুকে রাগানোর জন্যই অভিনয়ের পথ বেছে নিলো। ফিরতি কোন বার্তা পাঠালো না।
আধাঘন্টা না যেতেই অরু ফোন হাতে নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকলো। রামি ভিডিওটা দেখেছে। এখন নিজের কাজে নিজেরই কেমন লজ্জা লাগছে। কী দরকার ছিল এতটা ছেলেমানুষী করার! এমন তুইতোকারি না করলেও পারতো! সাথে সাথে ভিডিও রিমুভ করে দিলো। তবুও শান্তি পাচ্ছে না। রামি কি ভিডিওটা ওপেন করে দেখেছে? দেখলে কী ভাবছে? একটু বেশিই বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না। এসব ভেবেই ছটফট করে উঠলো সে।
ওদিকে রামি ভিডিওটি বারবার দেখছে আর হাসছে।
★★★
কয়েকদিনের লুকোচুরি খেলায় একেবারে হাঁপিয়ে উঠেছে সুহা। এখন আর ইবতেসামকেও এ রাস্তায় দেখা যায় না। আজ অবনির সাথে একসাথেই অফিস থেকে বের হলো। গাড়িতে চড়ার আগে রাস্তার এপাশ-ওপাশ ভালোভাবে দেখে নিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। কিছুদিন না দেখেই ইবতেসামের মোহ কে*টে গিয়েছে, এটাই ধরে নিলো সুহা। দু’জন বাসায় আসতেই কিছুটা চমকালো। বাসায় অনেকগুলো অপরিচিত মুখ। অবনির মা হাসিমুখে তাঁদের সাথে কথা বলছেন। সুহা কাউকে না চিনতে পারলেও অরুকে চিনতে তার ভুল হলো না। অরু বরাবরের মতোই মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে বলল,
“তোমার অপেক্ষাতেই ছিলাম।”
সুহার মনে আ*ত*ঙ্ক। শিওর হয়ে কিছু বলতেও পারছে না। তবে ইবতেসাম মিঠু যে তার বর্তমান ঠিকানা জেনে গিয়েছে সেটা আর বোঝার বাকি রইলো না। অবনির মা বললেন,
“দুজনই ক্লান্ত। যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।”
সুহা আর অবনি নিজেদের রুমে ঢুকে পড়লো। অবনি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে সুহাকে বলল,
“উনাদের তুই চিনিস? মেয়েটা তোর সাথে যেমনভাবে কথা বললো, মনে হচ্ছে তোরা পূর্ব পরিচিত!”
সুহা করুণ চোখে তাকিয়ে বলল,
“মেয়েটা ইবতেসামের ছোটো বোন।”
“মানে? ওঁ এখানে কেন? আর তুই এখানে আছিস, সেটাই বা জানলো কী করে?”
“জানিনা।”
অবনি বলল,
“আচ্ছা টেনশন করার কিছু নেই। চল ফ্রেশ হয়ে বাইরে যাই। উনারা কীজন্য এসেছেন, সেটা অন্তত জানা যাবে।”
“হুম” বলে সুহা ফ্রেশ হয়ে এলো। পরপরই অবনি গেল। দুজন একসাথে বসার ঘরে আসতেই অরু উঠে সুহার হাত টে*নে বসিয়ে দিল তার আর তরীর মাঝখানে। তরী সামান্য ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো। সুহার মনে হলো সে চমৎকার কোন দৃশ্য দেখছে। সাধারণ একটা হাসিতেও কতটা স্নিগ্ধতা। অপলক নাম জানা মানুষটার হাসি দেখে গেল। তরী হাস্যজ্জ্বল গলায় বলল,
“মাশাআল্লাহ! ভারি মিষ্টি দেখতে তুমি। মিঠুর পছন্দ কোনকালেই ভালো ছিলো না। কিন্তু আজ তার পছন্দ বেশ বলতে হয়।”
অতঃপর বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,
“দেখতো বাবা, পুত্রবধূ পছন্দ হয়েছে?”
বাবা কিছু বলার পূর্বেই অরু বলে উঠলো,
“পছন্দ না হয়ে যাবে কোথায়? বাবা যা-ই বলুক না কেন, বাবার ছেলে এই নদীতেই ম*রে*ছে।”
সকলেই অরুর কথায় হাসলো। সুহা অপরিচিতদের মাঝে লজ্জায় পড়লো। লজ্জার চেয়েও অস্বস্তি বেশি হচ্ছে। আয়েশা সুলতানা বললেন,
“আমার কাছে এসে বসো।”
সুহা অবনির মায়ের দিকে তাকাতেই তিনি ইশারা দিলেন যেতে। সুহা উঠে আয়েশা সুলতানার পাশে বসলো। তিনি নিচু গলায় সুহাকে বুঝালেন,
“আমরা তোমার সম্পর্কে সব জেনেই এসেছি। তোমার বান্ধবীর মায়ের সাথেও কথা হয়েছে। অতীতে কী হয়েছে সেটা আমরা জানতে চাই না। তবে তুমি কেন ঠু*ন*কো অতীত আঁকড়ে ধরে পুরো জীবন নষ্ট করবে? এর কোন মানে হয়?”
অরু আর তরীকে দেখিয়ে বললেন,
“ওদের দুজনের দিকে তাকাও। দুজনকেই আমি ছেলের বউ না মেয়ে হিসেবে মানি। আমার এক মেয়ে আমার কাছে থাকে না তো কী হয়েছে? বাকি তিনজনতো আমার কাছেই থাকে। মিঠুর বউ হয়ে গেলে তুমিও আমার আরেকটা মেয়ে হয়ে যাবে।”
সুহা এদের সবার মধ্যাকার সম্পর্কের সূতা ধরতে পারলো না। তার তাকিয়ে থাকা দেখে অরু ফিক করে হেসে ফেললো। বাবাকে দেখিয়ে বলল,
“ইনি আমার বাবা। আমার পাশে যাকে দেখছো, সে আমার আপু। আবার আমরা দুজনই জা। আর তুমি যার পাশে আছো, তিনি আমাদের শাশুড়ী মা।”
সুহার মাথার উপর দিয়ে গেল সবটা। তবে কোন প্রশ্ন করলো না। টুকটাক কথা সেরে সবাই চলে গেল। যাওয়ার আগে আয়েশা সুলতানা বলে গেলেন,
“নিজেকে নিয়ে আরেকবার ভেবে দেখ। আমরা তোমার মতামতের অপেক্ষায় আছি।”
মেহমান বিদায় নিতেই অবনি মাকে চেপে ধরলো।
“কী হয়েছে বলোতো? উনারা তোমাকে কী কী বললো, কেন আসলো?”
“এতক্ষণেও তুই বুঝিসনি? উনারা সুহার জন্য প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন। ছেলেকে না-কি তোরা আগে থেকেই চিনিস? সুহার সম্পর্কে সব খুটিনাটি তথ্যই তো উনারা জানেন দেখছি।”
অবনি বলল,
“এখন তুমি উনাদের কী বলেছো?”
অবনির মা সুহার দিকে ফিরে তার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“ আমি আগাম কিছুই বলিনি। এভাবে আর কত মা? এবার তো নিজের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করো। এই জগতে একা চলা খুব কঠিন। তুমি সামান্য বাসা ম্যানেজ করতে গিয়েই বুঝেছো, আমার আর বলার প্রয়োজন নেই। আমরা তোমার উপর কিছুই চাপিয়ে দিচ্ছি না। ভালোমন্দ খোঁজখবর নিয়ে তবেই এগোবো। শুধু তোমার একটা হ্যাঁ বাকি।”
সুহা চুপ করে রইলো। অবনির মা দুজনকে একা ছেড়ে নিজের কাজে চলে গেলেন। অবনি সুহার পাশে ধপ করে বসে বলল,
“সুহা, এবার আমারও মনে হচ্ছে তোর একবার ভেবে দেখা উচিত। ইবতেসাম যদি তোকে পছন্দই না করতো, তাহলে পরিবার পাঠাতো না। তোকে এভাবে খুঁজে বের করার প্রয়োজন মনে করতো না।”
সুহা অবনির কথারও কোন প্রত্যুত্তর করলো না। রাতে সেই পুরোনো নাম্বার থেকে কল আসতে দেখে সুহা বিস্মিত হলো। বাসা ছাড়ার পরই সে পুরোনো সিম বাদ দিয়ে নতুন সিম নিয়েছে। তাহলে এই নাম্বার কোথায় পেল ইবতেসাম? এই মুহূর্তে কথা বলার ইচ্ছে করছে না তার। তাই বারবার কল কে*টে দিচ্ছে। মিঠুর নাম্বার থেকে মেসেজ এলো,
“কল কে*টে দিচ্ছেন? পালিয়ে বেড়াচ্ছেন? যা ইচ্ছে করুন। আমার তাতে সমস্যা নেই। তবে আমার কাজেও যেন আপনার কোন সমস্যা না থাকে।”
সুহা মেসেজ পড়ে রেগে গেল। পরপরই কল ব্যাক করলো। ঝাঁঝালো স্বরে বলল,
“এ্যাই আপনি কী করবেন? সমস্যা কী আপনার? আপনি আমাকে থ্রে*ট দিচ্ছেন?”
মিঠুর ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি লেপ্টে আছে। অ*ভ*দ্র গলায় বলল,
“দারুণ তো। এমন দু-একটা ঝাঁঝালো ধমক শোনার জন্য হলেও আমার আপনাকে চাই।”
সুহা অতিরিক্ত রাগে ফোন কে*টে দিল।
#চলবে……….
(রি-চেইক করা হয়নি। বানান ভুল থাকতে পারে।)