#অনুভবে_তুই
#লেখনীতে-ইসরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-২৫
এনগেজমেন্টের পরের দেড়মাসে রিজভী এবং নেহার সম্পর্কে খুব উন্নতি হয়েছে। দু’বার দেখাও করেছিলো। তখনই রোজার সঙ্গে হবুর পরিচয় করিয়ে দিয়েছে নেহা। প্রায়ই দু’জনের ফোনে কথা হতো। কথা বলতে বলতে অবশ্য রিজভী-নেহা দু’জন দু’জনকে কখন যে মন বিনিময় করে বসে আছে টেরই পায় নি। নেহা কিছুটা শান্ত স্বভাবের হলেও রিজভী ঠিক তার উল্টো। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, লেবু বেশি চিপলে তিতা হয়ে যায়? নেহার ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটেছে। যে মেয়ে গলা উঁচু করে কোনোদিন ‘টু’ শব্দটা পর্যন্ত করে না, সেই মেয়ে বিয়ের মাত্র ক’টা দিন আগে সামান্য কারণ নিয়ে এত রাগ দেখাবে ভাবেনি রিজভী। ব্যাপারটা অতি তুচ্ছ! কাল সারাদিন অফিসের কাজের অনেক চাপ ছিল, সেজন্য লাঞ্চ খাওয়ার সুযোগ হয়ে ওঠেনি ওর। রাত দশটায় বাড়িতে ফিরতেই পেটে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয় রিজভীর। তবে সময়মতো ঔষধ খাওয়ার পরই তা দ্রুত ঠিক হয়ে যায়। আর এই ব্যাপারটায় নানাপ্রকার ঝাঁঝালো মশলা মাখিয়ে, ঘুরিয়ে-প্যাঁচিয়ে একটা গল্প বানিয়ে হবু ভাবীর কাছে উপস্থাপন করেছে ইমতি। ফোনের মধ্যে রিজভীর অসুস্থতার খবর শুনে নেহা বেজায় চটে গেল। সারাদিন না খেয়ে চাকরি করতে রিজভীকে কে বলেছে? এত এত টাকা দিয়ে কী করবে সে? নেহা কি টাকার পাগল? নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যার খেয়াল নেই, সে আবার বউয়ের খেয়াল রাখবে কীভাবে? কেয়ারলেস লোক কোথাকার! তৎক্ষনাৎ রিজভীকে ফোন দিয়ে রাগারাগি করলো অনেকক্ষণ। ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন কেটে সোজা সুইচড অফ করে রাখলো। ওদিকে, রিজভী বেচারা তো বউয়ের রাগ দেখে হতভম্ব! নেহার কান্ডে রিজভী যখন বারবার ওকে ফোনে ট্রাই করেও পাচ্ছে না তখন ওর মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। ব্যাপারটা কে নেহাকে জানিয়েছে খোঁজ করতেই ইমতি ভয়ে ভয়ে ভাইয়ের কাছে সবটা স্বীকার করলো। ওকে আচ্ছামত কানমলা দিয়ে রিজভী ফিহাকে ফোন করে নেহাকে চাইলো। কিন্তু নেহা বেজায় রেগে ওর সাথে কথা বলবে না বলে ফিহার সাথেও অনেকক্ষণ চেঁচামেচি করলো। অগত্যা পুরো ব্যাপার ফিহাকেই খুলে বললো রিজভী। নিজের বোনের কান্ডে অবাক হলো ফিহা। বিমূঢ় চেহারা নিয়ে বসে থাকা নেহাকে দেখে নিয়ে রিজভীকে বললো তাঁর হবু বউ বেশ রেগে আছে। কিছু বলতে গেলে নেহাৎ কামড়ে দেয় তাই ওকে আর ঘাঁটালো না ফিহা।
এ রাগকে হাতিয়ার করে রিজভীর কাছ থেকে শালিদের ট্রিট আদায় করার শর্ত জারি করলো ফিহা-ইশা। বিপাকে পড়ে রিজভীও রাজি হলো শালিদের ট্রিট দিতে। আপাতত প্রেয়সীর রাগ ভাঙানোটাই ওর কাছে মুখ্য বিষয়। এজন্য সামনাসামনি দেখা করে কথা বলে নেওয়াটাই বেশ সুবিধের। ঠিক হলো, কাল হাফ অফিস করে শালিদের নিয়ে বেরুবে রিজভী৷ যেহেতু, বিয়ের বাকি তিনদিন, তাই পরদিন দুপুরের খাওয়াদাওয়া শেষে সবাই যখন একটু আড্ডায় মশগুল হবে বলে ঠিক করলো তখনি আদ্রিশদের বাড়ির ল্যান্ডলাইনে ফোন এলো। মিতালি ফোন ধরে বুঝতে পারলেন নেহার হবু শ্বশুরবাড়ি থেকে ফোন এসেছে। রিজভীর মা জানালেন, শালিদের নিয়ে একটু বাইরে বেরোতে চায় তার ছেলে, সঙ্গে অবশ্য নেহা থাকলে ভালো হয়। ইশা-ফিহার জোরাজুরিতে সবার অগোচরে তিনি অনুমতি দিলেন ওদেরকে যাওয়ার জন্য! রিজভীর কথাটা গোপন করেই মেলায় যাওয়ার বায়না ধরলো ফিহা। অনেকক্ষণ জোর করার পরে নেহা যেতে রাজি হলো, সঙ্গে রোজাকেও তৈরি হতে বললো।
আদ্রিশ সারাদিন বাড়িতেই ছিলো৷ ঘুম থেকে ওঠে লিভিংরুমে আসতেই বাড়ির মেয়েদেরকে একা একা সেজেগুজে বেরুতে দেখে আপনাআপনি ভ্রু’কুঁচকে এলো তাঁর। চোয়ালজোড়া শক্ত করে পেছন থেকে ডেকে ওঠলো সে, ‘পরীটরী সেজে কোথায় যাওয়া হচ্ছে তোদের?’
চৌকাঠ পেরুতে গিয়েই আদ্রিশের প্রশ্ন শুনে থেমে গেলো ফিহা। হতাশ হয়ে পেছনে ফিরে মিথ্যে বলার চেষ্টা করলো, ‘আ আসলে মেলায় যাচ্ছিলাম। নেহা আপুর বিয়ে হয়ে গেলে সবাই একসাথে তো আর যেতে পারবো না। তাই আরকি…’
আদ্রিশ কুটিল চোখে তাকালো, ‘তোরা চারজন? আর কে যাবে?’
ইশা বিরস কন্ঠে বলল, ‘আমরা আমরাই।’
নেহা এবার বলে ওঠল, ‘উৎস ভাইয়াকে বলেছিলাম, কিন্তু ও বাবার সাথে বাজার করতে গেছে। এই ভিড়ভাট্টায় এতগুলো মেয়ে নিয়ে যাওয়াটা রিস্ক। আমি বলিকি, তুমি চলো না আমাদের সাথে….’
সম্পূর্ণ কথাটা শেষ করার আগেই পাশ থেকে নেহার হাত চেপে ধরলো রোজা। আদ্রিশ কেন যাবে? ও গেলে সারাক্ষণ পিঞ্চ করে কথা বলবে, ওর তীক্ষ্ণ দৃষ্টির সামনেই থাকতে চায় না রোজা। নিজের স্বভাববিরুদ্ধ হয়ে এতবার ‘স্যরি’ বলার পরেও যখন লোকটার রাগ কমলো না, তাহলে আর কিছুই করবে না সে৷ আগের মতোই থাকার চেষ্টা করবে রোজা। নেহার কথাটা বিবেচনায় এনেই আদ্রিশ গম্ভীর গলায় বলল, ‘ওয়েট, চেঞ্জ করে আসছি।’
বাহ! এত অল্পতেই রাজি হয়ে গেলো লোকটা? বেশিক্ষণ সাধতেও হলো না। বোনেদের নিয়ে যেন তার কত চিন্তা! চিন্তা করতে করতে শুকিয়ে যেন কাঠ হয়ে যাচ্ছে, আহারে! বিভৎস কিছু কথাবার্তা মনে মনে আওড়িয়ে রোজা মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে রইলো। মনে হচ্ছে ও না গেলেই ভালো, মেলায় গিয়ে কোনো রুপ আনন্দই করা যাবে না শুধু আদ্রিশের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আর গুরুগম্ভীর ভাবসাবের জন্য!
পড়ন্ত বিকেলের রক্তিম আকাশ। লালচে আকাশের বুকে ওড়ে বেড়াচ্ছে নীড়ে ফেরা পাখির দল। ক্লান্ত-শ্রান্ত শহরের বুকজুড়ে ব্যস্ত ভাব। পথে ধুলোর ওড়াওড়ি, মানুষে গিজগিজ করছে। ভিড়ভাট্টায় পা ফেলাও যেন দায়। টিকিট নিয়ে মেলার গেইটে ঢুকতেই রিজভীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো সবাই। অফিস থেকে এসেছে যে, ওর ক্লান্ত মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। নেহা ভীষণ অবাক। রিজভী ওদেরকে দেখতে পেয়েই এগিয়ে এলো। কিন্তু আদ্রিশকে দেখেই চুপসে গেল সঙ্গে সঙ্গে। বোকা বোকা গলায় বলল, ‘আসলে একজনের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম, আপনারা এখানে?’
আদ্রিশ ফুরফুরে মেজাজে বলল, ‘এই এলাম আরকি! ভালোই হলো, নেহার সাথে কিছুটা সময় থেকে যাও।’
‘জি!’
নেহা রোজার হাত চেপে ধরে রাগে কিড়মিড় করছিলো। ফিহাকে চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছিলো যেন। ফিহা বিশ্বজয়ীর হাসি দিয়ে বলল, ‘নিয়ে যান ভাইয়া, আপনার হবুকে নিয়ে এদিকওদিক ঘুরে আসুন।’
আদ্রিশের সামনে কিছু বলার সুযোগই পেল না নেহা। রিজভী অসহায়ের মতো ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। অগত্যা ওর সঙ্গে নেহাকে যেতেই হলো। ওরা যেতেই ফিহা ইশাকে নিয়ে মেলার ভিড়ে ঢুকে গেল। রোজাকে সঙ্গে যেতে বললোই না। এটা করার আরেকটা কারণ আছে, ফিহা জানে আদ্রিশ রোজাকে এখনও কতটা চায়। রাগ-বিভেদ যতই করুক না কেন অভিমানের পাহাড় ভেঙে গেলে আদ্রিশ ঠিকই রোজাকে চাইবে। তাছাড়া রোজাও যে ইতোমধ্যে আদ্রিশকে পছন্দ করে সেটা তো ও স্বীকারই করবছে। মেলায় এসে দুজনকে স্পেস দেওয়ার এই সুযোগটা ও কাজে লাগাতে চাইলো। সেজন্য ইশাকে নিয়ে একপ্রকার কেটে পড়লো ওখান থেকে। ওরা চলে যাওয়ার পর রোজা অবাক হয়ে দেখলো আদ্রিশ ছাড়া ওর পাশে আর কেউ নেই। বুক ঢিপঢিপ করতে লাগলো ওর। লোকটা আবার ওকে ফেলে চলে যাবে নাকি? তাহলে মেলার ভিড়ে ও তো হারিয়েই যাবে। ওহ গড! কেন যে এসেছিলো? জানতোই তো, যতটা উৎফুল্ল হয়ে মেলায় এসেছে, আদ্রিশ নামক ব্যাটা থাকলে সব আনন্দ মাটি হয়ে যাবে। আদ্রিশ অপলক দৃষ্টি বিনিময়ে দেখলো ওকে। রোজার ইতস্তত ভাবটা মুহূর্তেই বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেলো। ঠোঁটের কোণে ফিচেল হাসি এঁটে আদ্রিশ রোজাকে বলল, ‘রোবটের মতো দাঁড়িয়ে না থেকে আমার সাথে এসো।’
বুকের ভেতর দখিনা হাওয়া বয়ে গেলো যেন।
মৃদুমন্দ হাওয়ায় একগাছি চুল ওড়ে বারবার ওর মুখের সামনে পড়ছে। রোজা কাঁপতে থাকার দরুণ ঠিক করে না পারছে চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিতে আর না পারছে ক্লিপে আটকাতে। বিরক্তিতে ওর মুখ তেঁতো হয়ে আছে। কোন দুঃখে ও হিজাব ছাড়া এখানে এলো? মেজাজ বিগড়ে নাইনটি সিক্স হয়ে যাচ্ছে গেলো ওর। তার ওপর আদ্রিশের ‘তুমি’ করে বলা দেখে গায়ের কাঁপুনিটা যেন থামতেই চাইছে না।
‘আশ্চর্য! এভাবে কাঁপছো কেন?’
রোজা কাঁপতে কাঁপতেই বলল, ‘আমি বাসায় যেতে চাই। এখানে আর এক মুহূর্ত থাকলে আমি মরে যাব।’
আদ্রিশ কপালে ভাঁজ ফেলে ওর ডানহাত ধরে ভিড় ঠেলে সামনে এগুতে এগুতেই জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি’ করে বলছি, কারণ তুমি আমার বয়সে ছোট। অন্য কোনো কারণ ভেবে নেওয়ার প্রয়োজন নেই মিস.রো-জা-নু। আদ্রিশ আগের মতো নেই, পালটে গেছে।’
আচানক রোজার কাঁপুনি থেমে গেল। হতভম্ব দৃষ্টিতে আদ্রিশের মুখের দিকে চেয়ে রইল। তারপর শক্ত কন্ঠে বলল, ‘প্রথম অনুভূতি বিনিময় করেছেন, আপনি। প্রথম ভালোবাসার কথাটা ব্যক্ত করেছেন, আপনি। হুট করে এত ভালোবাসা দেখিয়ে যখন সামান্য ভুল বোঝাবুঝিতে সম্পর্কে তিক্ততা চলে আসে বা মন পরিবর্তন হয়, তখন সেটা আর যাইহোক, আমার মতে ভালোবাসা নয়। আপনি কোনোদিন রোজানুকে ভালোই বাসেননি মিস্টার.আদ্রিশ। আপনি আগের আদ্রিশ নেই, পালটে গেছেন অনেকটাই। তবে রোজানু ঠিক আগের মতোই আছে, ভালোবাসার সংজ্ঞাটা ওর কাছে বেশ পরিষ্কার। রোজানু কখনো পাল্টাবে না। রোজানু হুটহাট কারো প্রেমে পড়তেও জানে না। এ বিষয়টা যদি মাথায় রাখেন তাহলে খুবই ভালো হবে, ভা-ই-য়া।’
প্রেয়সীর মুখ থেকে ‘ভাইয়া’ শব্দটা যে পাথরের চেয়েও ভারী মনে হয়, আদৌ সেটা কোনো প্রেয়সী জানে? আদ্রিশ রোজার হাত ছেড়ে বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাশেই একটা মাটির তৈরি জিনিসপত্র, ফুলদানি, আর কাচের শো-পিসের দোকান ছিল। রগরগে রাগটা মাথায় চড়ে বসতেই আদ্রিশ আছাড় দিয়ে দুটো বড় ফুলদানি, আর কাচের আয়না ভেঙে তছনছ করে ফেললো। দোকানি কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে চিৎকার করে ওঠলো। আদ্রিশের অদ্ভুত কান্ড দেখে রোজা মিটিমিটি হেসে সেখান থেকে চলে এলো। এসেছিলো না, রোজাকে কথা শোনাতে? পারলো কই? আদ্রিশ পাল্টাতে পারে, রোজানু কখনোই নয়।
——————————————
চলবে…
#অনুভবে_তুই
#লেখনীতে-ইসরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-২৬
আজ নেহার গায়ে হলুদ। বাড়িভর্তি নিমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বিয়ের আমেজ ভাবটা বেশ ভালোভাবেই ফুটে ওঠেছে। হৈ-হুল্লোড়ের মধ্যে দিয়েই বাড়ির সামনের লনে প্যান্ডেলের মধ্যে আয়োজন করা হয়েছে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের। রিজভীদের বাড়ি থেকে হলুদের তত্ত্ব এসেছে। সেইসাথে এসেছে নানাপ্রকারের মিষ্টান্ন এবং উপহার। এসব নিয়ে সবাই হুড়োহুড়ি করছে। দোতলায় নেহার ঘরে ওকে সাজানো হচ্ছে। হলুদ শাড়ি আর সতেজ ফুল দিয়ে হালকা সাজে বেশ সুন্দর দেখাচ্ছিলো ওকে। অন্যান্য মেয়েরা এবং ইশা-ফিহাও শাড়ি পরেছে। রোজা সাজগোজ তেমন পছন্দ করে না বলে শাড়ি পরতে চায় নি। এসবে ওর অনীহা দেখে ফিহা একটু রেগেই বকাঝকা শুরু করে দেয়, অগত্যা মনমরা হয়ে বসে থাকে রোজা। সুহানা শেখ এসে নতুন একটা শাড়ি ধরিয়ে দিলেন রোজার হাতে। ও খানিকটা অবাক হয়েই সুহানা শেখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘এটা কী আন্টি?’
সুহানা শেখ হেসে বললেন, ‘শাড়ি, তোমার জন্য নিয়ে এসেছি।’
রোজা হাসার চেষ্টা করে বলল, ‘কিন্তু আমি তো শাড়ি পরিনা আন্টি। আপনি ওটা নিয়ে যান।’
‘পরোনা তো কী হয়েছে? আজ পরবে। শাড়ি আমি নিয়ে যাবো মানে? এটা তো তোমার জন্য আনা হয়েছে; তোমার শাড়ি।’
রোজা খানিকটা অবাক হলো। ওর শাড়ি? কে এনেছে? নিশ্চয়ই নেহা বা নিশিতা এনেছেন। ওরা ছাড়া আর কে-ই বা আনবে? প্রশ্নটা মনে চেপে রেখেই ও বলল, ‘না আন্টি, আমি শাড়ি পরবোনা।’
সুহানা শেখ হালকা কেশে তারপর বললেন, ‘সবাই তো পরছে। তুমি কেন পরবে না?’
রোজা নিচু স্বরে বলল, ‘শাড়ি পরলেও সামলাতে পারবোনা৷ এর চেয়ে এই চুড়িদারটাই ভালো।’
‘চুড়িদার তো সবসময়ই পরো। বিশেষ কোনো উপলক্ষ ছাড়া শাড়িটাড়ি তো বাড়ির মেয়েদের পরা হয় না। দেখো আজ সবাই শাড়িই পরবে, তুমি যদি একা চুড়িদার পরো তাহলে অনেক বেমানান লাগবে। আজকের জন্য, অন্তত কয়েক ঘন্টার জন্য তো পরো। নেহা কতটা আপসেট হবে ভেবে দেখেছো?’
সুহানা শেখের যুক্তিযুক্ত কথাবার্তা শুনে রোজা হতাশ হলো। মা টাইপ মহিলারা বেশ ভালোই ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে পারে। এখন যদি সে সুহানার মুখের ওপর না করে দেয় তাহলে রোজাকে তিনি বেশ ‘বেয়াদব’ ভাববেন। মুখে না বললেও তার অভিব্যক্তিতেই সেটা ফুটে ওঠবে বলে বোধ হচ্ছে রোজার। অগত্যা শাড়ি পরতে রাজি হলো রোজা। সুহানা শেখ ওর গালে হাত রেখে মিষ্টি করে হেসে তারপর নিচতলায় চলে গেলেন। ওদিকে রোজা শাড়িটার ভাঁজ খুলে দেখলো এটা একদম নতুন শাড়ি আর ফিহা-ইশার শাড়ি থেকে বেশ আলাদা। সুন্দর করে সুতোরন কারুকাজ তোলা আর বেশ দামী। মুগ্ধ দৃষ্টিতে হলদে-লাল শাড়িটা অবলোকন করলো অনেকক্ষণ। এত সুন্দর শাড়ি দেখে ওর মনে বেশ ইচ্ছে জাগলো এটা পরার। কিন্তু শাড়িটা ওকে কে পরিয়ে দেবে? নেহা পারবে না, ফিহা? ততদিনে অবশ্য রোজার ওপর থেকে ফিহার রাগটা একটু কমেছে। কিন্তু যদি বকা দেয়? বিরক্তিসূচক ‘চ’ একটা শব্দ করে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো রোজা৷ ড্রেসিং টেবিলের সামনে ইশার চোখে লাইনার লাগানোতে ব্যস্ত ফিহার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। হাতের কাজটা শেষ করে ইশাকে চোখ খুলতে বারণ করে ফিহা কোমড়ে হাত দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। ডানপাশে ঘাড় ঘুরাতেই রোজাকে চুপ করে থাকতে দেখে ভ্রু’দুটো উঁচু করে জিজ্ঞেস করল, ‘কি ব্যাপার? মুখ বরাবর এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?’
রোজা বিরস মুখে বলে, ‘শাড়িটা পরিয়ে দাও না আপু!’
ফিহা খানিকটা হতবাক কন্ঠেই বলল, ‘এক্ষুণি তো বলছিলি পরবি না। দু’সেকেন্ডেই মন পালটে গেল? বাহ! সেদিন তো ফোনে বললি ভাইয়াকে মিস করিস, বাড়ি আসার পর তো দেখলাম তুই ভাইয়াকে ইগনোর করিস। তোর তো একটা মন, এটাকে কয়বার পাল্টাস?’
রোজা শান্ত স্বরে বলে, ‘আমার মন আগের মতোই আছে, শুধু নতুন কিছু যোগ হয়েছে সেখানে। আর সত্যি বলতে তোমার ভাইকে আমি আগে ইগনোর করতাম, কিন্তু এবার যথেষ্ট পরিমাণে ভালো ব্যবহার করার চেষ্টা করেছি। তোমার ভাই যদি আমার সাথে সারাক্ষণ হম্বিতম্বি করতে থাকে, মেজাজ দেখায়; সেটা ওনার সমস্যা, আমার না।’
আদ্রিশের বিরুদ্ধে কোনো নেতিবাচক কথা শোনার অভ্যাস নেই ফিহার। রোজা এসব বলতেই ওর মুখটা পাংশুটে বর্ণ ধারণ করলো। অতিরিক্ত বাক্যব্যয় না করে চুপচাপ রোজাকে শাড়িটা পরিয়ে হালকা সাজিয়েও দিলো। অজানা কারণেই বারবার লজ্জা লাগছিলো রোজার। সবাইকে সাজগোজ করানো শেষে ফিহাও তৈরি হয়ে নিলো। নেহা বিরক্তি নিয়ে বসে আছে, ঘুমে ওর দু-চোখ বুজে আসছে। রাত নয়টায় এতটা ঘুম ওর কখনো পায়নি। বিয়ের কনে বলেই ঘুম ওকে এভাবে গ্রাস করছে কি-না কে জানে।
এরপর সুহানা শেখ, মিতালি, নিশিতা আর রোজার মা ঘরে এলেন। বাড়ির মেয়েদের একেকজনকে মিষ্টি দেখাচ্ছিলো বলে সবাই খুব প্রশংসাও করলো। সেই প্রশংসা শুনে রোজার গা-হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যেতে লাগলো। সাজগোজ করে জীবনের প্রথম ও এমন লজ্জা পাচ্ছে। সবাই যখন নেহাকে নিয়ে প্যান্ডেলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল, রোজা থম মেরে ওখানেই বসেছিলো। কিছুতেই ও বেরুতে পারছে না ঘর থেকে!
ওদিকে প্যান্ডেলে সবাইকে দেখতে পেলেও আদ্রিশের চঞ্চল দৃষ্টিজোড়া একটা মানুষকেই খুঁজে চলেছে, সে হলো রোজা। কিন্তু কোথাও ওকে না দেখে রাগটা তড়তড় করে বেড়ে গেল ওর। সুহানা শেখের দিকে এগিয়ে গিয়ে অনেকটা নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করল, ‘আমার হ্যাপিনেস কোথায় ফুপি?’
সুহানা শেখ ঠোঁট টিপে হাসলেন। এই ছেলে সরাসরি যেভাবে কথাবার্তা বলে লাজ-লজ্জা কিছু আছে বলে মনে হয় না তাঁর। তারপর হাসি থামিয়ে ব্যগ্র কন্ঠে বললেন, ‘হ্যাপিনেসটা আবার কে রে?’
আদ্রিশের কপাল কুঁচকে এলো৷ রুক্ষ স্বরে বলল, ‘একদম মজা করবে না ফুপি। তুমি কিন্তু নিজে সকালে এসে আমাকে বলে গেছো, আমি যাতে অহংকারী রোজার ওপর রাগটাগ না রাখি৷ এটাও বলেছো আমি যাতে আগের মতোই ওর সাথে ব্যবহার করি, ভালোবাসি। তুমি এটাও বলেছো, আমি একমাত্র রোজাকে পেলেই হ্যাপি হবো, ও আমার হ্যাপিনেসের একমাত্র কারণ। আর শেষে বলেছো, ওকে ইম্প্রেস করানোর জন্য আমাকে একটু পরিবর্তন হতে হবে, নয়তো…’
সুহানা শেখ মুখে কাঠিন্য ভাব এনে ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘নয়তো কি রে বাপ?’
আদ্রিশ গম্ভীর কন্ঠে বলল, ‘নয়তো আমার হ্যাপিনেসকে অন্য কেউ নিজের করে নেবে। আর বিয়ে বাড়ির মহিলারা নাকি একটু ছোঁকছোঁক ধরণের হয়। তাঁদের বিয়ের বয়সী ছেলেপেলে থাকলে তারা নাকি মেয়ে পছন্দ করে নিয়ে যায়। আর অহংকারী রোজাটার মনটা কঠিন হলে কি হবে, রুপে-গুণে একশোতে একশো৷ শেষে না কোনো ছোঁকছোঁকানি মহিলা তাকে পুত্রবধূ হিসেবে পছন্দ করে ফেলে, এটা কিছুতেই হতে দেওয়া যায় না।’
সুহানা শেখ হাসবেন না কাঁদবেন কিছুই বুঝতে পারলেন না। গতদিনও যে ছেলে রোজাকে দেখলেই নাক সিঁটকানো ভাব করতো, মুখ কালো করে ইগো দেখানোর চেষ্টা করতো; সে তার একটু পরামর্শ শুনেই রোজার জন্য এতোটা উদগ্রীব হয়ে পড়বে ভাবে নি। যাক, সকালের বুঝানোটা তাহলে কাজে লেগেছে। সুহানা শেখ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। তার জন্য যেসব ঝগড়াঝাঁটি-ঝামেলা-ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল, সবটাই ঠিকঠাক হয়ে যাওয়ার বুকে চাপা দিয়ে রাখা পাথরটা যেন আপনাআপনিই সরে গেল। তিনি আদ্রিশের গালে হাত রেখে বললেন, ‘তোর হ্যাপিনেস লজ্জায় লাল-নীল-সবুজ হয়ে ঘরে বসে আছে।’
আদ্রিশ একটু হতাশ গলায় জিজ্ঞেস করল, ‘সে কী আমার দেওয়া শাড়িটা পরেনি?’
সুহানা শেখ মৃদু হেসে বললেন, ‘কি জানি, আমি অতোটা খেয়াল করিনি। তুই দেখে নিস।’
আদ্রিশ ফুফুর হাত ধরে কপালে ভাঁজ ফেলে বলল, ‘আমাকে দেখতে কেমন লাগছে? রোজা ইম্প্রেস হবে তো?’
সুহানা শেখ মজা নেওয়ার জন্য বললেন, ‘আঠাশ বছরের বুড়ো প্রেমিক জানতে চাইছে তাকে দেখে, তার বাইশ বছরের প্রেমিকা ইম্প্রেস হবে কি-না? আচ্ছা, তুই বলতো রোজা কি বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখে কাউকে পছন্দ করে? আমার কিন্তু সেটা মনে হয় না। নয়তো তোর মতো সুদর্শন যুবকের প্রেমে অনেক আগেই সাড়া দিতো মেয়েটা। তোর উচিৎ নিজের মনের সৌন্দর্য দিয়ে ওকে ইম্প্রেস করা, এটাই ভালোবাসার প্রধান উপাদান।’
এইসব বলে সুহানা শেখ চলে গেলেন। আদ্রিশ আনমনা হয়ে ফুফুর কথাগুলোর মানে ভাবতে ভাবতে সামনে তাকাতেই রোজাকে দেখতে পায়। ওর পা সেখানেই আটকে যায়। একদৃষ্টিতে ‘হা’ করে তাকিয়ে থাকে। রোজা ওকে এই অবস্থায় দেখতে পেয়েও ভ্রুক্ষেপ করলো না। পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় বলে ওঠল, ‘নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে না থেকে পাঞ্জাবির বোতাম দুটো লাগান। দেখতে জোকারের মতো লাগছে।’
আদ্রিশ ঘোর থেকে বেরিয়ে আসে। চোয়াল শক্ত করে বোতাম লাগিয়ে ফোঁসফোঁস করতে থাকে। রোজাকে ইম্প্রেস করানোর জন্যই আজ একটু স্পেশাল করে সেজেছে, আর সেই রোজাই কিনা বললো ওকে জোকারের মতো লাগছে? এসব কি মানা যায়? এত তিক্ত কথা এই মেয়ের মুখ থেকে বেরুয় কীভাবে? জন্মের পর কেউ ওকে মধু দেয়নি? মধু? মধুর কথা মনে পড়তেই আদ্রিশের মুখ থেকে মেদুর ছায়াটা সরে গেল। ঠোঁটে এক টুকরো মুচকি হাসি ফুটিয়ে আনমনে বলল, ‘মধু তো আছে, অহংকারী মেয়েটার ঠোঁটে আছে, মুখের বুলিতেই আছে।’
———————————————————–
ইতোমধ্যে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু করা হয়েছে।
বোনের হলুদের অনুষ্ঠানে উৎস তার গ্যাংয়ের সকলকে নিমন্ত্রণ করেছে৷ এই চার-পাঁচদিন সব কাজেই ওরা সাহায্য করেছে। প্রায় সব কাজেই ওরা যেমন পারদর্শীতার প্রমাণ রাখে, তেমনি মেয়েদের বিষয়েও ওরা যথেষ্ট সহনশীল। ইমাদ, আশফি, রেনন, উৎস সবাই তদারকি করছিলো মেহমানদের। তখনি রোজাকে একপাশে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে ইমাদ হাতের ডিএসএলআর’টা নিয়ে রোজাকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠল, ‘তোমাকে তো বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে রোজা, চলো তোমার কয়েকটা ছবি নিয়ে নিই। পরে আর সময় পাবো না। নাও ফার্স্ট ফার্স্ট…’
রোজা বলল,’না ইমাদ ভাইয়া। এখন ছবি তুলবো না।’
ইমাদ ব্যগ্র কন্ঠে বলল, ‘বোনের বিয়েতে ছবি তুলবে না, এ কেমন কথা৷ তোমাকে কত সুন্দর দেখাচ্ছে জানো?এটা স্মৃতি হিসেবে রাখতে, একটা হলেও ছবি তোমাকে তুলতেই হবে।’
ওর জোরাজুরিতে রোজা রাজি হলো ছবি তুলতে। উৎসের বন্ধুদের সবাইকেই রোজা চেনে, সেই রেস্টুরেন্টের ঘটনার পর থেকে। এই কয়দিনে ওদের সাথে বেশ ভালোই আলাপচারিতা হয়েছে রোজার। ইমাদ রোজাকে কয়েকটা ছবি তুলে দিলো। রোজা হাসিমুখে ‘ধন্যবাদ ভাইয়া, আমার মেইলে ছবিগুলো সেন্ড করে দেবেন।’ কথাটা বলেই আবার আগের জায়গায় বসে পড়লো। পাশের একটা চেয়ারে বসে ইমাদ ক্যামেরার ছবিগুলো রোজাকে দেখাতে লাগলো। আর পুরো ব্যাপারটার চাক্ষুষ প্রত্যক্ষদর্শী ছিল আদ্রিশ। চোখের সামনে ইমাদের সাথে রোজাকে দেখে রাগে ওর মাথায় গন্ডগোল লেগে গেল। প্রায় মিনিটখানিক পরে ইমাদ যখন ওঠে গেল তখন আদ্রিশ ওর পিছু নিলো। ফাঁকা একটা জায়গা দেখে ইমাদকে ডেকে নিয়ে বলল, ‘তুই রোজার থেকে দূরে থাকবি, একদম একশো হাত দূরে থাকবি।’
উৎসের কাছ থেকে আদ্রিশের ব্যাপারটা জেনেছে ইমাদ। কিন্তু সরাসরি এরকম হুমকিপূর্ণ বার্তা শুনে সে একটা হাসি দিয়ে বলল, ‘আরে ভাই, এতো রাগো কেন! কয়টা ছবিই তো তুলে দিলাম।’
আদ্রিশ রাগী স্বরে বলল, ‘তোর বউয়ের ছবি যদি অন্য কেউ তুলে দেয়, তোর কেমন লাগবে?’
ইমাদ ঠোঁট উলটে গাল ফুলিয়ে বলল, ‘জ্বলে যাব, জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যাব। যদিও আমি এখনো বিয়েই করিনি, তবুও তোমার মুখ থেকে আমার ভবিষ্যৎ বউ সম্পর্কে এসব শুনে এখনি অন্য-কেউ-টাকে জবাই করতে ইচ্ছে করছে।’
আদ্রিশ বলল, ‘তাহলে ভাব, আমার কেমন লাগছে।’
‘ভাই, তুমি তো এখনো রোজাকে বিয়ে করো নাই। তাহলে কেমনে কি?’
আদ্রিশ জ্বলন্ত গলায় বলল, ‘তোকে ‘কেমনে কি’ বুঝানোর জন্য এখন কি আমায় বিয়ে করতে হবে?’
ইমাদ জিভ কেটে বলল, ‘ধুর, সেটা বলি নাই। আচ্ছা, স্যরি ভাই। রোজার থেকে সবসময় দশহাত দূরে থাকবো।’
আদ্রিশ ধমকে ওঠল, ‘রোজা? কি রোজা? ভাবি ডাকবি ওকে। আর কি ছবি তুলেছিস আমাকে এক্ষুণি পাঠাবি।’
ইমাদ মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে বলল, ‘তুমি তো ওর ওপর রেগে ছিলে। তাহলে?’
আদ্রিশ বিরক্তি নিয়ে বলল, ‘এখন এটাও তোকে বুঝাতে হবে ডা-ফা-র?’
ইমাদ তড়িঘড়ি করে বলল, ‘না ভাই। আমি যাই।’
আদ্রিশ ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠল, ‘শোন ইমাদ, তুই ওর দিকে চোখ তুলেও তাকাবি না।’
——————————————————————–
এত এত লোকজনের মধ্যে থেকে আদ্রিশ বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। মিমিকে সাথে নিয়ে রোজার ঠিক পেছনের চেয়ারে বসেছিলো সে। হঠাৎ করে রোজা একটু নড়ে বসলো। ফলে পিঠের ওপর থেকে শাড়িটা কিছু সরে যায়। আচমকাই রোজার ফর্সা কোমড়ে ওর চোখ পড়ে যায়। নিষিদ্ধস্থানে দৃষ্টি নিবদ্ধ হতেই ওর শ্বাস আটকে যায়। পাশে বসা একটা ছোট্ট মিমি মিটমিট করে হেসে ওঠতেই আদ্রিশের হুঁশ ফিরলো। মিমি আদ্রিশের গাল ধরে বলল, ‘তুমি লোজাপ্পির পিঠে তাকিয়ে আছ তাইনা আদ্রি ভাইয়া?’
আদ্রিশ বোকাবোকা দৃষ্টিতে মিমির দিকে তাকাতেই মিমি ফিক করে হেসে ওঠল, ‘লোজাপ্পির পিঠ খুব সুন্দর তাইনা?’
মিমি কথাটা একটু জোরেই বলেছিলো। ফলে সম্পূর্ণ কথাটাই রোজার কানে গেল। সঙ্গে সঙ্গে ও ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে আদ্রিশ-মিমিকে দেখে জিজ্ঞাসা করল, ‘কি বললে তুমি মিমি?’
মিমি বলল, ‘আদ্রি ভাইয়া অঅনেকক্ষণ তোমার সুন্দর পিঠের দিকে তাকিয়ে দেখছিল লোজাপ্পি।’
কথাটা শুনেই রোজার কান গরম হয়ে গেলো। শাড়িটা ভালোভাবে ঠিকঠাক করে রোষপূর্ণ দৃষ্টিতে আদ্রিশের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘এত অধঃপতন হয়েছে আপনার? এজন্যই আমার পেছনে এসে বসেছেন তাইনা? যেন লুকিয়ে লুকিয়ে ছিহ্…’
আদ্রিশ ভাবেনি মিমি অকপটে কথাটা রোজাকে বলে দেবে। সে হতভম্ব হয়ে রোজাকে বোঝানোর চেষ্টা করলো সে কিছুই দেখেনি, ‘দেখো, আমি কিছুই দেখিনি। শুধু… ‘
রোজা ওকে থামিয়ে দিয়ে কড়া গলায় বলল, ‘বাচ্চারা কখনো মিথ্যা বলে না, আর মিমি তো না-ই। এত বয়স হয়েছে তাও আবার মিথ্যা বলছেন? জঘন্য লোক!’
আদ্রিশ রেগে গেল, ‘একবার বললাম তো আমি কিছু দেখি নি। তোমার পিঠে তিল আছে সেটাও দেখি নি। কোত্থাও তাকাইনি, কিচ্ছু দেখিনি।’
বলেই চুপ করে গেলো। এটা কি বলে ফেললো সে? ততক্ষণে রোজা বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে ওকে গিলে ফেলবে এমন ভাব করে রাগে কটমট করতে লাগলো। কোন অশুভ সময়ে সে শাড়ি পরতে গিয়েছিল? যে এই লোকটা ছিহ্….! রাগে রোজার প্রায় কান্না পেয়ে গেল। একে মনে মনে ভালোবাসে সে? একে?
——————————————
চলবে…