অনুভবে তুমি পর্ব-৪৬+৪৭

0
713

#অনুভবে_তুমি
#পর্ব_৪৬
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

মুন্সিগঞ্জ থেকে ফেরার পর ইভান কে বেশ চুপচাপ দেখা গেলো।তার পরিকল্পনা কেউই বুঝতে পারলো না।তবে বোঝা যাচ্ছে সে মুহিব সাহেবকে ধরার জন্য বড়সড় কোনো পরিকল্পনা করছে।ইভান গালে হাত দিয়ে গম্ভীর ভাবে চিন্তা করছে।শুভ্র,দিশান আর নীলয় ইভানকে কিছু জিজ্ঞেস করতেও পারছে না।কারণ মুহিব সাহেব যত বড় সন্ত্রাসীই হোক না কেনো তিনি যে ইভানের বাবা।ইভান তার বাবার ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নেবে তাদেরকে সেটাই মানতে হবে।আর তাদের বিশ্বাস ইভান কখনোই অন্যায় কে সাপোর্ট করবে না।সে ঠিক উচিত শাস্তি দিবে তার বাবাকে।সেজন্য তারাও চুপচাপ থাকলো।
হঠাৎ ওদের কে অবাক করে দিয়ে ইভান বললো, বাবাকে ফাসানো হচ্ছে।তিনি কখনোই এতো বড় অন্যায় কাজে যুক্ত থাকতে পারেন না।তার বাবাকে সে ভালো করেই জানে। ওনার মতো সৎ আর ধার্মিক লোক আর একজনও নেই।সুতরাং তোমরা কিছুতেই বাবাকে সন্দেহ করো না।আর আমি নিজেও চাই না তোমরা আমার বাবাকে নিয়ে কথা বলো।আমরা এখন অন্যভাবে আমাদের নেক্সট পরিকল্পনা সাজাবো।অপরাধী অন্য কেউ হতে পারে।
শুভ্র সেই কথা শুনে বললো, স্যার সবাই তার বাবাকে অনেক বেশি শ্রদ্ধা আর বিশ্বাস করে।সবার চোখে বাবারা অনেক মহৎ হয়।তাই বলে সব বাবা কিন্তু এক নয়।আংকেলের ব্যাপার টা নিয়ে আমাদের কে ভালো করে তদন্ত করতে হবে।ইভান শুভ্রর কথা শুনে ভীষণ রেগে গেলো।সে রাগ দেখিয়ে বললো, আমি বলছি না বাবাকে নিয়ে আর কোনো কথা হবে না।আমার নেক্সট পরিকল্পনা শোনো সবাই।তখন দিশান বললো, স্যার আংকেলের বিরুদ্ধে এতোগুলো প্রমাণ পাওয়া সত্ত্বেও কি করে আপনি চুপ থাকতে বলছেন?এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না।আমাদের কাজ অপরাধীদের ধরিয়ে দেওয়া,তাদের প্রশ্রয় দেওয়া নয়।অপরাধী যেই হোক সে দিকে নজর দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
ইভান দিশানের কথা শুনে এতো রেগে গেলো যে ওদের কে রেখে একা একা চলে গেলো।ইভানকে হঠাৎ এভাবে চলে যাওয়া দেখে শুভ্র, দিশান আর নীলয় ইভানের পিছু পিছু যেতে ধরলো। ইভান ওদেরকে দেখে চিৎকার করে বললো,তোমরা কিছুতেই আর আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না।তোমাদের যেভাবে মন চায় সেভাবে পরিকল্পনা করো।যাকে মন চায় তাকে অপরাধী বানিয়ে দাও।কিন্তু ভুল করেও যেনো আমার বাবার দিকে আংগুল তুলতে না দেখি।আমি কখনোই আমার বাবার অপমান সহ্য করবো না কিন্তু।এই বলে ইভান আবার চলে যেতে ধরলো। শুভ্র আর দিশান কিছুই বুঝতে পারলো না।ইভান হঠাৎ বাস্তবতা বুঝতে চেষ্টা করছে না কেনো?কেনো এভাবে তার বাবার অপরাধ আড়াল করছে?
এবার নীলয় সবাইকে বোঝালো।তোমরা এভাবে কেনো স্যারকে রাগিয়ে দিচ্ছো?স্যার যখন চাইছে না ওনার বাবার বিরুদ্ধে আমরা কোনো একশন না নেই তাহলে সেটাই করি।নিশ্চয় এর পিছনে অন্য কোনো রহস্য আছে।আগে আমরা স্যারের নেক্সট পরিকল্পনা শুনি তারপর তো বুঝতে পারবো স্যারের মনে কি চলছে?নীলয়ের কথা শুনে শুভ্র আর দিশান ইভানের কাছে এগিয়ে গেলো।আর তার হাত ধরে বললো, স্যার আমরা বুঝতে পারছি আপনার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।আপনার জায়গায় আমরা থাকলেও এইভাবেই কষ্ট পেতাম।সেজন্য আমরা আর আংকেল কে নিয়ে কথা বলতে চাই না।আপনি এখন যে পরিকল্পনা করবেন আমরা সে অনুযায়ীই কাজ করবো।আমাদের বিশ্বাস আপনি কখনোই ভুলভাল ডিসিশন নিবেন না।
ইভান সেই কথা শুনে বললো, তাহলে নেক্সট টাইম আর কখনোই যেনো আমার বাবাকে নিয়ে কথা বলতে না শুনি।এখন শোনো আমার নেক্সট পরিকল্পনা।সবাই ভীষণ মনোযোগ দিয়ে শুনলো ইভানের কথা।ইভানের প্রথম টার্গেট হলো সন্ত্রাসীর সকল আস্তানা ধ্বংস করে দেওয়া।আস্তানাগুলো ধ্বংস করতে পারলেই ছোট বড় সকল ক্রিমিনালদের টনক নড়বে।আর সেই আস্তানার খোঁজ দিবে আহসান।আহসান এখনো অনেক খবর গোপন রেখেছে।
ইভান সেজন্য এবার আহসানের পুরো ফ্যামিলিকে ধরে নিয়ে গোপন জায়গায় বন্দি করে রাখলো।আর আহসানের সাথে পার্সোনাল ভাবে কথা বললো।প্রথমে আহসানের পুরো ফ্যামিলির ভিডিও দেখিয়ে বললো, যদি সে সকল আস্তানার কথা বলে দেয় তাহলে তার পরিবারের সকল সদস্য বেঁচে থাকবে।আর তার শাস্তিও কিছুটা কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।এটা ইভান কথা দিলো আহসান কে।আহসান প্রথমে বলতে চাইছিলো না।ইভান তখন বললো, তুই ভেবেছিস আমরা তোর লিডারের খবর কখনোই পাবো না।তিনি তোকে বাঁচাবেন।কিন্তু এবার আর তোর লিডারের রেহাই নাই।আমরা তার খোঁজ পেয়ে গেছি।যেকোন মুহুর্তে ধরবো তাকে।কিন্তু তার আগে তোদের ছোট ছোট গ্যাং গ্যাং গুলোকে চিরতরে শেষ করতে চাই।যাতে করে আর নতুন কোনো সন্ত্রাসীর জন্ম না হয়।তুই যদি আমাদের সাহায্য করিস বিনিময়ে তুইও সাহাস্য পাবি।ইভানের এমন প্রস্তাবে আহসান এবার আর কিছুই গোপন রাখলো না।যতগুলো আস্তানা ছিলো সকল আস্তানার খবর দিলো সে ইভানকে।ইভান সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করলো শুভ্রদের সাথে।আর সবাইকে বললো,এমনভাবে এবার মিশন কম্পিলিট করবো যাতে বাহিরের কেউ না জানতে পারে।আর শুভ্র কে বললো,তুমি আজই নেহার পরিবারের সাথে কথা বলো। কালকেই যেনো তোমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করে।
বিয়ের কথা শুনে শুভ্র একদম স্তব্ধ হয়ে গেলো।দিশান আর নীলয়ও ভীষণ অবাক হলো।এই রকম একটা পরিস্থিতিতে সে বিয়ের কথা কল্পনাতেও আনে নি।যেখানে এখন পর্যন্ত তার পরিবার নিরুদ্দেশ।কোথায় আছে কেমন আছে তারা কিছুই জানে না সে।ইভান তখন বললো আমি যা বলছি সেটাই করো তুমি।এটা আমার আরেকটা পরিকল্পনার মধ্যে পড়ে।শুভ্র কিছুই বুঝতে পারলো না।তার বিয়ে নিয়ে আবার কিসের পরিকল্পনা ইভানের?

ইভান বিশ্বাস করেছে তার বাবা আসলেই একজন সন্ত্রাসী।কারণ এতোগুলো প্রমাণ হাতে পাওয়ার পর সে কি করে অবিশ্বাস করতে পারে?কিন্তু সে এখনি সেটা প্রকাশ করতে চাইছে না।এমনকি শুভ্রদেরকেও বলতে চাইছে না।একবার এই কথা টা জানাজানি হলে অতশীর মারাত্নক বিপদ হতে পারে।কারণ ইভান বুঝতে পারছে অতশী তার বাবার কাছেই আছে।অতশী হয়তো তার বাবার ব্যাপারে জেনে গেছে সেজন্যই তার বাবা অতশীকে বন্দি করে রেখেছে।তার বাবা যদি একবার বুঝতে পারে ইভান সবকিছু জানে তাহলে অতশীকে সে খুন করতেও দ্বিধাবোধ করবে না।এজন্য সবার আগে জানতে হবে অতশী কই?অতশীকে উদ্ধার না করা পর্যন্ত তার বাবাকে সে কিছুতেই ধরতে পারবে না।

ইভান বাসায় গিয়ে তার বাবার সাথে নরমাল আচরণ করলো।সে প্রতিদিনের মতো তার বাবার সাথে বসে খাবার খেলো।বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করলো বাবার সাথে।সে এমন ভাবে সবার সাথে কথা বললো মনে হলো কিছুই হয় নি।ইভানকে এমন নরমাল আচরণ করা দেখে মুহিব সাহেব ভাবলো ইভান তাহলে এখনো কিছুই শোনে নি।সেজন্য তিনি নিশ্চিত হলেন।তিনি তো ভেবেছিলেন মুন্সিগঞ্জ গিয়ে ইভান তার ব্যাপারে জেনে এসেছে।মুহিব সাহেব সেজন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন।ইভান তাকে এট্যাক করার সাথে সাথে তিনি অতশীকে মেরে ফেলার হুমকি দিবেন।

গল্প করতে করতে ইভান হঠাৎ তার বাবাকে বললো,বাবা তুমি কি ফ্রি আছো কাল?
–হ্যাঁ।কেনো বাবা?
–কাল শুভ্রর বিয়ে।সে আমাদের ইনভাইট করেছে।কিন্তু তুমি তো জানো আমি ভীষণ ব্যস্ত।সেজন্য আমি যেতে পারবো না।তুমি আম্মু আর মৌরিকে নিয়ে গেলে খুব খুশি হতো শুভ্র।
মুহিব সাহেব ইভানের কথা শুনে বললো,এই রকম একটা পরিস্থিতির মধ্যে শুভ্র বিয়ে করছে?এটা কি বিয়ে করার সময়?ওর ফ্যামিলির লোকেরা সন্ত্রাসীর হাতে বন্দি।তাছাড়া তোদের হাতে তো সময় ও নাই।এখন পর্যন্ত আসল সন্ত্রাসীর কোনো ঠিকানা খুঁজে পাও নি।
ইভান সেই কথা শুনে বললো, শুভ্র বিয়ে করতে চাচ্ছে,সেখানে আমার কি বলার আছে বাবা।আমি ওকে বারণ করেছিলাম কিন্তু ও কিছুতেই শোনে নি।সে বললো ওর গার্লফ্রেন্ড এর বিয়ে ঠিক হয়েছে অন্য জায়গায়। সেজন্য তাকে এখনি করতে হচ্ছে বিয়েটা।সেজন্য আমি আর বারণ করি নি।যেহেতু ওর বাবা মা নেই এখন।সেজন্য তুমি যদি ওর বাবা আর আম্মু ওর মার দায়িত্ব পালন করতো খুব ভালো হতো।শুভ্র ভীষণ খুশি হতো।এই নাও শুভ্রর সাথে কথা বলো।এই বলে ইভান ফোনটা এগিয়ে দিলো।শুভ্র ইভানের বাবাকে দাওয়াত দিলো।সাথে তার পুরো পরিবারকে।

মুহিব সাহেবকে ভীষণ চিন্তিত দেখা গেলো।তিনি কিছুক্ষন ভাবলেন।তারপর বললেন আচ্ছা ঠিক আছে।এই বলে কল কেটে দিলেন।
হঠাৎ মুহিব সাহেব বললেন তুই থাকবি না বিয়েতে?
–হ্যাঁ আমিও থাকবো।আমি না থাকলে কি চলবে নাকি?মৌরি রেডি হয়ে থাকিস কাল।কাল সকাল বেলা রওনা দিবো আমরা।তিনদিন সব কাজকর্ম বন্ধ। এই তিনদিন একটু মজা করতে চাই।

ইভানের এরকম কথা শুনে মুহিব সাহেব ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলেন।কারণ তিনি ইভানকে ভালো করেই চেনেন।ইভান সবার আগে তার কাজকে সাপোর্ট করে।সে তার সব কাজকর্ম ফেলে তিনদিন বিয়ে বাড়িতে মজা করতে চাইছে।যেখানে সে এক সেকেন্ড সময় অপচয় করে না।
ইভান তার বাবাকে এরকম চিন্তিত থাকা দেখে বললো,বাবা আমি জানি তুমি কি নিয়ে ভাবছো?
মুহিব সাহেব সাথে সাথে বললো কি ভাবছি?
–তুমি হয় তো ভাবছো অতশী কে এখন পর্যন্ত পাওয়া যায় নি।আর আমিও আসল সন্ত্রাসীর এখন পর্যন্ত খোঁজ পাই নি।তারপরেও কি করে এতো আনন্দ করতে চাচ্ছি?
–হ্যাঁ।সেটাই তো।
–কি করবো বলো?টেনশন করতে করতে একদম শেষ হয়ে যাচ্ছি।আর পারছিনা এতো টেনশন করতে।অতশীর জন্য ভাবতে ভাবতে নিজেকে কি শেষ করে ফেলবো নাকি?আমার তো একটা লাইফ আছে তাই না?আমি তো ওকে খুঁজে পাওয়ার জন্য চেষ্টা করছিই।যেদিন আমার নসিবে থাকবে সেদিন সে আপনা আপনি চলে আসবে।
ইভানের কথা শুনে মৌরি বললো,ভাইয়া কি বলছিস এসব আবোলতাবোল। তোর মাথা কি ঠিক আছে?
–হ্যাঁ ঠিক আছে আমার মাথা।আমাকে প্লিজ আর কেউ কিছু জিজ্ঞেস করো না।আমি এখন সারারাত আরামে ঘুমাবো।কাল বিয়ে বাড়িতে গিয়ে আনন্দ করবো।তোরাও সবাই ঘুমিয়ে পড়।এই বলে ইভান তার রুমে চলে গেলো।

ইভান রুমে গিয়েই তার ল্যাপটপ নিয়ে বসলো।আর তার বাসার সিসি টিভির ফুটেজ গুলো দেখতে লাগলো।মুহিব সাহেব কখন বাসা থেকে বের হয়েছিলো আর কখন এসেছিলো।আর কে কে তার বাবার সাথে দেখা করতে এসেছিলো।ইভান বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগলো ভিডিও টা।তারপর একটা নোট তৈরি করলো।এই তিন দিনের মধ্যেই সব কাজ কম্পিলিট করতে হবে তাকে।মুহিব সাহেব কে যে করেই হোক এই তিনদিন নেটওয়ার্ক এর বাহিরে নিয়ে যেতে হবে।যাতে তিনি কারো সাথে যোগাযোগ করতে না পারেন।

পরের দিন সকালবেলা বেলা ইভান সবাইকে নিয়ে বের হলেন।মুহিব সাহেব কিছু একটা ভাবছেন।এই রকম একটা পরিস্থিতিতে তিনি কিছুতেই বাসার বাহিরে যেতে চাইছেন না।কিন্তু ইভানের সাথে জোরাজোরি ও করতে পারছেন না।এদিকে ইভান শুধু তাড়াহুড়ো করছে।

ইভান সবাইকে নিয়ে মমো ইন হোটেলে চলে গেলো।এই হোটেলেই শুভ্রর বিয়ে হবে।মৌরি আর তার মা ভীষণ খুশি বিয়ে তে আসতে পেরে।সবচেয়ে বেশি খুশি ইভানের ছোট ভাই দুটি।অনেকদিন ধরে তারা কোনো অনুষ্ঠানে যায় না।কিন্তু মুহিব সাহেব কিছুতেই খুশি হতে পারছেন না।ইভান সবাইকে বিয়ের অনুষ্ঠানে রেখে চলে গেলো।তবে মুহিব সাহেব জানে সে বিয়ের অনুষ্ঠানেই আছে।

ইভান ইচ্ছা করলে তার বাবাকে কোনো এক গোপন জায়গায় বন্দি করে সব সত্যি কথা শুনতে পারে।কিন্তু তার বাবার হাতে যে অতশী আছে এজন্য ইভান রিস্ক নিতে চাইলো না।এমনও হতে পারে তার বাবা অতশীর ঠিকানা বললো না।তখন সে আর কখনোই অতশীর দেখা পাবে না।
ইভান সেজন্য সবাইকে রেখে আবার তার বাসায় চলে গেলো।আর বাসায় গিয়েই কেয়ারটেকার লতিফকে ধরে ঘরের মধ্যে বন্দি করে রাখলো।তার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিলো।আর তার পুরো শরীর সার্চ করলো।লতিফ সাহেব নিজেকে বাঁচানোর জন্য চিৎকার চেঁচামেচি করলো।ইভান তখন বললো আংকেল কোনো লাভ নাই।বাসায় এখন শুধু আমি আর আপনি।এখন ভালোই ভালোই বলেন অতশী কই আছে?
–অতশী?আমি কি করে জানবো অতশী কই?
ইভান তখন লতিফকে বন্দুক দেখিয়ে বললো, আংকেল বাঁচতে চান না মরতে চান?যদি বাঁচতে চান তাহলে তাড়াতাড়ি বলেন।কারণ আমি আপনার সব গোপন তথ্য জেনে গেছি।আপনি আর বাবা দুইজন মিলে অতশীকে বন্দি করে রেখেছেন।
–বিশ্বাস করো বাবা আমি কিছু জানি না।হ্যাঁ এটা ঠিক যে উনিই বন্দি করেছেন অতশীকে।কিন্তু কোথায় রেখেছেন সেটা আমি জানি না।আমি সামান্য একজন কেয়ারটেকার।আমাকে কি তার গোপন জায়গার কথা বলবেন নাকি?
ইভান তখন চিৎকার করে বললো,আংকেল মিথ্যা বলবেন না।আন্টি আর আপনার মেয়ে কিন্তু আমার আস্তানায়। আর একটা মিথ্যা কথা বললে একদম গুলি করে দিবো।
–বাবা কি বলছো এসব?কোনো ক্ষতি করো না ওদের।আমি সত্যি জানি না অতশী কোথায়?
হঠাৎ মুহিব সাহেব ফোন করলো লতিফ কে।ইভান সাথে সাথে ফোনটা লতিফ কে দিলো।
ফোন রিসিভ করতেই মুহিব সাহেব বললো,ইভান কি বাসায় গিয়েছে?
ইভান মাথা নাড়িয়ে না বলতে বললো।কিন্তু লতিফ না বললো না।সে মুহিব সাহেব কে বাঁচানোর জন্য বললো,হ্যাঁ এসেছে। ইভান সব জেনে গেছে।এই কথাটা বলতেই ইভান লতিফের থেকে ফোন টা কেড়ে নিলো।মুহিব সাহেব শেষের কথাটা শুনতে পেলো না।সে বললো কি বললি? আরেকবার বল।ইভান সেই কথা শুনে কল কেটে দিলো।আর লতিফকে কানে কপালে চড় দিতে লাগলো।গুরুজন বলে এতোক্ষন সে সম্মান করে গেছে।কিন্তু এখন আর চুপ থাকতে পারলো না।লতিফ কে যখন একের পর এক আঘাত করতে লাগলো লতিফ তখন বললো,তোমার বাবার এক গোপন আস্তানা আছে।সেখানে আছে অতশী।ইভান এই কথাটা শোনামাত্র লতিফ কে নিয়ে সেই জায়গায় চলে গেলো।

#চলবে,

#অনুভবে_তুমি
#পর্ব_৪৭
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

মুহিব সাহেব ভীষণ চিন্তার মধ্যে পড়ে গেলেন।হঠাৎ করে লতিফের ফোন কেনো বন্ধ দেখাচ্ছে।মুহিব সাহেব সেজন্য লতিফের অন্য আরেকটা নাম্বারে কল করলেন।কিন্তু সে নাম্বার টাও বন্ধ দেখাচ্ছে।মুহিব সাহেব সেজন্য দুশ্চিন্তায় পায়চারি করতে লাগলেন।কিন্তু মেহমানদের জন্য শান্তিতে হাঁটতেও পারছেন না।বা নিরিবিলি কোনো জায়গায় গিয়ে কারো সাথে কোনো গোপন কথাও বলতে পারছেন না।এদিকে মুহিব সাহেব কে এমন ছটফট করা থেকে ইভানের আম্মু জিজ্ঞেস করলো,কি হয়েছে আপনার?এরকম করছেন কেনো?আপনার কি শরীর খারাপ?মুহিব সাহেব মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিলেন তিনি ঠিক আছেন।কিন্তু ইভানের আম্মু তবুও মুহিব সাহেবের হাত ধরে একটা চেয়ারে বসালেন।আর মৌরি কে বললেন এক গ্লাস পানি আনতে।মুহিব সাহেব সেই কথা শুনে হঠাৎ চিৎকার করে উঠলেন।তিনি রাগ দেখিয়ে বললেন আমি কি পানি চাইছি?সরে যাও এখান থেকে।এই বলে তিনি ইভানের আম্মুকে সরিয়ে দিয়ে চেয়ার থেকে উঠলেন।আর বাহিরে চলে গেলেন।ইভানের আম্মু আর মৌরি দুইজন দুইজনার দিকে তাকালো।হঠাৎ মুহিব সাহেব এমন আচরণ করলেন কেনো?
মুহিব সাহেব বাহিরে গিয়ে তার সকল আস্তানার লিডারকে ফোন করলেন আর জিজ্ঞেস করলেন সবকিছু ঠিক আছে কিনা?সবাই জানালো সবকিছু ঠিক আছে।কিন্তু তবুও মুহিব সাহেবের বুকটা ধড়ফড় করতে লাগলো।তিনি মারাত্মক কোনো বিপদের আভাস পাচ্ছেন।ওনার কেনো জানি মনে হচ্ছে তিনি বড় কোনো বিপদের সম্মুখীন হতে যাচ্ছেন।হঠাৎ পিছন দিক থেকে দিশান মুহিব সাহেবের ঘাড়ে হাত দিয়ে বললো,আংকেল এখানে একা একা কি করছেন?ভিতরে চলুন।কিছুক্ষন পরেই বিয়ের কাজ শুরু হবে।
–হ্যাঁ বাবা যাচ্ছি।আমার একটা গুরুত্বপূর্ণ কল এসেছে। কথা শেষ হলেই চলে যাবো।দিশান সেই কথা শুনে বললো, ঠিক আছে আংকেল।তাড়াতাড়ি আসেন।এই বলে দিশান হোটেলের ভিতর চলে যেতে ধরলো। হঠাৎ মুহিব সাহেব দিশান কে ডাকতে লাগলো। আর জিজ্ঞেস করলো ইভান কোথায়?ওকে দেখা যাচ্ছে না কেনো?দিশান তখন বললো,স্যার কে তো কিছুক্ষন আগেই দেখলাম।আশেপাশেই আছে কোথাও।এই বলে দিশান চলে গেলো।মুহিব সাহেব দিশানের কথা শুনে ইভানকে ফোন দিলো।ইভানের ফোন সাইলেন্ট করা ছিলো যার কারণে সে শুনতে পেলো না।এদিকে মুহিব সাহেব কল দিতেই আছেন।

এদিকে লতিফ ইভানকে অতশীর কাছে নিয়ে যাচ্ছে।লতিফ ইভান কে একটা ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।ইভান বুঝতে পারলো না লতিফের চক্রান্ত।সে ভেবেছে লতিফ তাকে সত্যি সত্যি অতশীর কাছে নিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু লতিফ হঠাৎ জঙ্গলের মধ্যে গিয়ে জোরে করে চিৎকার করে বললো, এট্যাক!এট্যাক!এট্যাক!
আর সাথে সাথে চারপাশ থেকে সন্ত্রাসীরা গুলি ছুঁড়তে লাগলো।গুলি ছোঁড়া দেখেও ইভান লতিফ কে ছেড়ে দিলো না।সে এক হাত দিয়ে লতিফ কে ধরে থাকলো।আর অন্য হাত দিয়ে নিজেও গুলি ছুঁড়তে লাগলো।ইভান ভাবতেও পারে নি লতিফ এইভাবে তাকে বিপদের মধ্যে ফেলে দিবে।ইভান যখন দেখলো এতোগুলো সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে তার একার মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না সে তৎক্ষনাৎ তার ফোন বের করে নিকটস্থ পুলিশের টিমকে লোকেশন পাঠিয়ে দিলো।যেহেতু চারপাশে অন্ধকার ছিলো সেজন্য ভালো করে কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না।শুধু বৃষ্টির মতো গুলি পড়তে লাগলো।ইভান কোনো উপাই না দেখে এবার লতিফের দুই পায়ে দুইটি গুলি করলো তারপর তাকে ধাক্কা দিয়ে জঙ্গলের মধ্যে ফেলে দিলো।তারপর দুই হাত দিয়ে অনবরত গুলি ছুঁড়তে লাগলো।ইভান একাই এতোগুলো সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে।প্রায় আধাঘন্টা পর পুলিশের টিম চলে আসলো।এতোক্ষন ইভান একাই সন্ত্রাসী দের মোকাবিলা করলো।পুলিশ বাহিনী আসলে তারা ইভানের সাথে নিজেরাও লড়াই করতে লাগলো সন্ত্রাসীদের সাথে।পুলিশ বাহিনী সন্ত্রাসীদের এমন ভাবে ঘেরাও করে রাখলো যে একজন সন্ত্রাসীও পালাতে পারলো না।মুহুর্তের মধ্যে গুলির শব্দ থেমে গেলো।পুলিশ এক এক করে সকল সন্ত্রাসীদের উঠিয়ে নিলো গাড়িতে।ইভান জংগল টা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলো কিছুদূর যেতেই সে একটা আস্তানা খুঁজে পেলো।তারপর আস্তানার ভিতর ঢুকে সকল যন্ত্রপাতি বের করলো।পুলিশ যন্ত্রপাতি সহ সন্ত্রাসীদের নিয়ে চলে গেলো।শুধুমাত্র লতিফ রয়ে গেলো এই জঙ্গলে।ইভান এখনি লতিফ কে পুলিশের হাতে দিতে চায় না।কারণ লতিফ তার বাবার ব্যাপারে অনেক তথ্য জানে।বিশেষ করে অতশী কে খুঁজে পাওয়াই এখন ইভানের প্রথম টার্গেট। এদিকে লতিফের দুই পায়ে গুলি লাগায় তিনি গোংরাতে লাগলেন।ইভান এই রকম অবস্থাতেই লতিফ কে টানতে টানতে আস্তানার ভিতর আনলো।আর চিৎকার করে জিজ্ঞেস করলো, শেষ বারের মতো বলছি অতশী কোথায়?এবার সত্যি কথা না বললে একদম শেষ করে ফেলবো।
লতিফ কোনো কথা বলতে পারলো না।সে একদম নিস্তেজ হয়ে গেলো।ইভান আবার লতিফকে টেনে তুললো আর ইচ্ছামতো মারতে লাগলো।লতিফের কোনো হুঁশ ছিলো না।ইভান তখন লতিফের ফোনটা বের করে চেক করতে লাগলো।যদি এতে কোনো তথ্য পাওয়া যায়।কিন্তু লতিফের ফোনে কোনো তথ্যই ছিলো না।ইভান পড়ে গেলো ভীষণ টেনশনের মধ্যে।কারণ অতশীকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত সে তার বাবাকে কিছুতেই ধরতে পারবে না।ইভান আর এক মুহুর্ত দেরী করলো না।তাড়াতাড়ি করে লতিফ কে হসপিটালে ভর্তি করলো।আর লতিফের দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে বললো।ইভান কিছুতেই স্থির হতে পারছিলো না।সে শুধু অপেক্ষা করছে কখন লতিফের জ্ঞান ফিরবে।আর কখন সে সত্য কথা টা বলে দেবে।প্রায় এক ঘন্টা পর লতিফের জ্ঞান ফিরে এলো।ইভান সাথে সাথে লতিফের কাছে চলে গেলো।আর তার হাত ধরে রিকুয়েষ্ট করলো,আংকেল এবার অন্তত সত্যি কথা টা বলুন।অতশী কোথায় আছে?লতিফ কথা বলতে পারছিলো না।সে হাত দিয়ে কি যেনো ইশারা করলো।ইভান তখন একটা খাতা আর কলম এনে বললো, আংকেল কি বলতে চান লিখে দিন।লতিফের হাত পাঁ কাঁপছিলো।সে লিখতেও পারছিলো না।ইভান তখন বললো, আমি বাবার সব আস্তানার খবর পেয়ে গেছি।এর মধ্যে কোনটাতে অতশী আছে?লতিফ মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিলো এর মধ্যে একটাতেও নেই।ইভানের এবার ভীষণ দুশ্চিন্তা হতে লাগলো।তাহলে অতশী আছে কোথায়?ইভান আর দেরি করতে পারলো না।কারণ বিয়ে বাড়িতে হয়তো সবাই তাকেই খুঁজছে।সেজন্য ইভান চলে গেলো।আর যাওয়ার সময় সকল ডাক্তার দের বলে গেলো সে না আসা পর্যন্ত যেনো রোগী বাহিরে না যেতে পারে।

এদিকে মুহিব সাহেবের কাছে খবর পৌঁছে গেছে।তার একটা আস্তানার উপর আজ পুলিশ এট্যাক করেছে।এবং সকল সন্ত্রাসী দের ধরে নিয়ে গেছে জেলে।ইভান তার নাম টা হাইড রাখতে বলেছে।কারণ ইভানের নাম শুনলেই তার বাবা সন্দেহ করবে।তার বাবা যেনো কিছুতেই বুঝতে না পারে যে ইভান মুহিব সাহেবের ব্যাপারে জেনে গেছে।যতদিন সে অতশীকে খুঁজে পায় নি ততোদিন সে মুহিব সাহেব কে কিছুতেই ধরবে না।

মুহিব সাহেব মৌরি আর তার স্ত্রীকে রেখে বাসায় চলে আসতে ধরলো।কিন্তু দিশান কিছুতেই যেতে দিলো না।মুহিব সাহেব তখন বললো,তার একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে কাল।সেজন্য আজকে রাতেই যেতে হবে তাকে।মুহিব সাহেব কে এমন জোরাজোরি করা দেখে শুভ্র এগিয়ে আসলো।আর বললো,আংকেল প্লিজ যান না আপনি।ইভান যে হঠাৎ কই গেলো?এদিকে আপনিও যদি চলে যান তাহলে কে সামলাবে এদিকে?প্লিজ আংকেল থেকে যান।
মুহিব সাহেব ভীষণ বিপদের মধ্যে পড়ে গেলেন।কারণ যে করেই হোক আজ তাকে যেতেই হবে।তার কত বড় ক্ষতি হয়ে গেলো এই অনুষ্ঠানে এসে।তিনি কিছুতেই আর থাকবেন না এখানে।

হঠাৎ ইভান আসলো বিয়ের অনুষ্ঠানে।সে এসে দেখে বিয়ের কাজ সব শেষ হয়েছে।মেহমানরা এক এক করে বিদায় নিয়েছে।শুধু শুভ্র আর নেহার কিছু নিকটতম আত্নীয়রা রয়ে গেছে।ইভানকে শুভ্র বললো,স্যার এটা কোনো কথা হলো?আপনি কই ছিলেন এতোক্ষন?ইভান কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি ইভানের হাতের ব্যান্ডেজ টা দেখে মুহিব সাহেব এগিয়ে আসলেন।তিনি জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে হাতে?কিভাবে হলো এটা?ইভান হাত টা লুকিয়ে রেখে বললো,এতোক্ষনে দেখলে বাবা?এই ব্যান্ডেজ তো আগে থেকেই ছিলো।এই বলে ইভান শুভ্রর কাছে এগিয়ে গেলো আর বললো, নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা রইলো।জীবনে অনেক বেশি সুখী হও।শুভ্র ইভান কে ওয়েলকাম জানালো।

মুহিব সাহেব আবার এগিয়ে আসলেন ইভানের কাছে।আর আবার তাকে জিজ্ঞেস করলেন ইভান তুমি কই ছিলে এতোক্ষণ?
–একটা কাজে গিয়েছিলাম বাবা।ফিরতে একটু লেট হয়ে গেলো।সরি বাবা।তোমরা রুমে গিয়ে এখন রেস্ট নাও।আম্মু আব্বুকে নিয়ে রুমে চলে যাও।মৌরি তুই ও যা রুমে।অনেক রাত হয়েছে।আমাকেও ভীষণ ক্লান্ত লাগছে।এই বলে ইভান তার রুমে চলে যেতে ধরলো। কিন্তু মুহিব সাহেব ইভানের পথ আটকালো।আর বললো,আমাকে এক্ষুনি যেতে হবে বাসায়।আমি আজ থাকতে পারবো না।কাল আমার একটা মিটিং আছে।
ইভান সেই কথা শুনে বললো, বাবা তুমি তো তিনদিনের ছুটি নিয়েছো।তাহলে কাল আবার কিসের মিটিং?
মুহিব সাহেব কোনো উত্তর দিলেন না।তিনি চলে যেতে ধরলেন।কিন্তু ইভান কিছুতেই যেতে দিলো না।মুহিব সাহেব বুঝতে পারছে না কিছু।ইভান কেনো এরকম জোরাজোরি করছে।তাহলে কি ইভান সবকিছু জেনে গেছে?মুহিব সাহেব সেজন্য স্বাভাবিক হলেন আর ইভানের কথা মেনে নিলেন।

সকাল বেলা সবাইকে হোটেলে রেখে ইভান আবার বের হলো।সে আবার হাসপাতালে চলে গেলো।লতিফ এখন কিছুটা সুস্থ হয়েছে।ইভান লতিফের কাছে গিয়ে আবার অতশীর কথা জিজ্ঞেস করলো।লতিফ এবার সত্য কথাটা বলে দিলো।কারণ সে বুঝতে পারলো মুহিব সাহেবের আর রেহাই নেই।ইভান যেহেতু সবকিছু জেনেই গেছে তাহলে আর কিসের এতো লুকোচুরি?ইভান এবার আর কোনো বোকামি করলো না।সে সাথে করে পুলিশের লোকদের নিয়ে গেলো।যদি এবারও লতিফ তার সাথে প্রতারণা করে।ইভান লতিফের দেওয়া ঠিকানা মতো গিয়ে দেখে কেউ নাই আস্তানায়।আস্তানা শূন্য পড়ে আছে।ইভান বুঝতে পারলো সন্ত্রাসীরা টের পেয়ে গেছে।সেজন্য তারা আসার আগেই পালিয়ে গেছে।

কিছুক্ষন পর ইভানের কাছে একটা কল আসলো।ইভান রিসিভ করতেই মুহিব সাহেব বললেন,বাবা ইভান!আমি তোর বাবা হই।আর তুই আমার সন্তান হস।নিশ্চয় তোর থেকে বুদ্ধি আমার বেশি। শুধু বুদ্ধি না আমার অভিজ্ঞতাও তোর থেকে বেশি।তুই ভেবেছিলি আমি বুঝতে পারবো না।তোকে আমি ভালো করেই চিনি আর জানি।
–বাবা কি বলছো এসব?
–এখনো কিছুই বলি নি।তবে এখন যা যা বলবো মন দিয়ে শুনবি।যদি না শুনিস তাহলে তুই তোর মা বোন আর বউকে হারাবি।আমি জানি আর আমার রেহাই নাই।যেকোন মুহুর্তে তুই আমাকে ধরবি।সেজন্য ভাবলাম আরো কিছুদিন যদি পালিয়ে বাঁচতে পারি।
–বাবা কি বলছো এসব?আম্মু,মৌরি আর অতশী কই?
–আছে সবাই আমার কাছে।সবাই অনেক ভালো আছে।তবে বেশিক্ষন ভালো রাখতে পারবো না।
–কি বলছো এসব?
–হ্যাঁ সত্যি বলছি।তুই যদি আমার পরিচয় গোপন রাখিস, আমাকে না ধরিস,আর আমার কোনো আস্তানার উপর হামলা না করিস তাহলে এদের সবাইকে ভালো রাখবো।কারো কোনো ক্ষতি করবো না।
–বাবা ফিরিয়ে দাও সবাইকে।তোমার সব কথা রাখবো।
–আমি বিশ্বাস করি না তোকে।সেজন্য আমি দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।আর আমাকে হেল্প করবি তুই।কেউ যেনো আমাকে বাধা না দেয়।যদি আমার কথা শুনিস তাহলে সবাইকে সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে পাবি। আর যদি মিথ্যা অভিনয় করিস তাহলে কিন্তু সব কয়টারে শেষ করে ফেলবো।এই বলে মুহিব সাহেব ফোন রেখে দিলেন।

মুহিব সাহেবের কথা শুনে ইভানের শরীরের রক্ত গরম হয়ে গেলো।সে এতোটাই রাগান্বিত হলো যে মুহিব সাহেব কে সামনে দেখলেই গুলি করে দিতো।ইভান ভাবতেও পারছে না মুহিব সাহেব এতোটা নিষ্ঠুর আর অমানুষ। যে তার নিজের স্ত্রী আর মেয়েকে খুন করতেও দ্বিধাবোধ করবে না।ইভানের সবচেয়ে বড় ভুল এটাই যে সে এখনো ধরে নি মুহিব সাহেব কে।সে ভেবেছিলো অতশীকে খুঁজে পাওয়ার পর মুহিব সাহেব কে ধরবে।কিন্তু তার আগেই মুহিব সাহেব ইভানের সকল পরিকল্পনা ধরে ফেললো।

#চলবে,