#অনুভবের_প্রহর
#অজান্তা_অহি (ছদ্মনাম)
#পর্ব____১৪
‘কি করছো? মাথা খারাপ তোমার প্রহর?’
অনুভবের ধমকানো সুর শুনে কপাল কুঁচকে তাকালো প্রহর। হুট করে ধমক দেওয়ার মতো কি করেছে? মুখটা ইংরেজদের মতো কঠিন করার মতো কিছু তো সে করেনি! প্রচন্ড বিরক্ত হলো সে। অনুভবের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিজের পেটের উপর নিবদ্ধ করলো। চামড়া ছেঁড়ার জায়গাটা কালো হয়ে গেছে। সে দুঃখ নিয়ে বলল,
‘কতখানি কেটে গেছে। আপনি একটা অমানুষ অনুভব। অ-তে অনুভব, অ-তে অমানুষ। অনুভব অমানুষ।’
অনুভব অস্বস্তি নিয়ে প্রহরের পেটের দিকে এক নজর তাকালো। প্রহরের থেকে মনোযোগ সরানোর জন্য সে বই খুলে বসেছিল। কিন্তু প্রহর ঠিক তার চোখের সামনে এসে…..। দ্রুত দৃষ্টি সরিয়ে নিল সে। ঝপাৎ করে বই বন্ধ করে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
‘আমার সামনে পেট বের করে ঘুরে বেড়ানোর মানে কি?’
‘কে পেট বের করে ঘুরে বেড়াচ্ছে? আমি এখানে বসে আছি দেখতে পাচ্ছেন না? বসে আছি আমি। আপনার দৃষ্টি তো দূষিত। ভালো জিনিস চোখে পড়বে না। কিন্তু….. ‘
‘একদম চুপ! তোমায় বলেছি না আমার চোখের সামনে ঘুরঘুর করবে না? কথা কানে যায় না?’
‘আপনি আস্তো একটা ঝগরুটে মানুষ। সবসময় ঝগড়া করার জন্য মুখে থাকেন। মাত্র কিছুদিন হলো আমাদের বিয়ে হয়েছে। এর মধ্যে আমি অসহ্য হয়ে পড়েছি?’
‘তোমাকে আমি সহ্য করেছি কখন? কবে?’
অনুভবের উত্তরে প্রহরের ভেতর কোনো ভাবান্তর হলো না। তীক্ষ্ণ চোখে অনুভবের দিকে চেয়ে রইলো শুধু।
‘এমন নির্লজ্জ মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে থাকবে না।’
অনুভব কড়া গলায় বলে উঠলো। এবারে প্রহরের মুখে বেদনার ছাপ ফুটে উঠলো। জামা দিয়ে পেট ঢেকে সে বালিশ ঠিক করলো। মাথার চুলগুলো উঁচু করে ক্লিপ দিয়ে আটকে নিল। তারপর গায়ে কাঁথা দিয়ে নিঃশব্দে শুয়ে পড়লো। অনুভবের দিকে পিঠ দিয়ে দেয়াল ঘেঁষে সরে গেল সে। দাঁতে দাঁত চেপে চোখ বন্ধ করে ফেলল।
প্রহরের পিঠের দিকে চেয়ে অনুভব লুকিয়ে শ্বাস ফেলল। বুকের ভেতর এক আকাশ আকুলতা নিয়ে সে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো। শরীরের ভেতর কেমন একটা ক্লান্তিকর ভাব চলে এসেছে। মাথাটা টেবিলের উপর রেখে সে চোখ বন্ধ করলো। জীবন তাকে এমন একটা পর্যায়ে এনে দাঁড় করিয়েছে যে না পারছে শ্বাস নিতে, না পারছে শ্বাস ফেলতে। অথই সমুদ্রের মধ্যে ভাসমান এক টুকরো দ্বীপের উপর অবস্থান করছে সে।চারপাশে হায়েনার মতো উত্তাল ঢেউ। যখন তখন সে দ্বীপটা সমুদ্রের ঢেউয়ে হারিয়ে যাবে। নিষ্পতিত হবে সমুদ্রের অতল গহ্বরে। অথচ প্রহর কোমড় বেঁধে নেমে পড়েছে তার ক্ষণিক সময়ের দ্বীপটা পরিভ্রমণ করার জন্য। আর কত কঠোর হবে সে? নিজেকে ভীষণ ক্লান্ত মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে সবকিছুর কাছে হেরে গেছে সে৷ জীবনের কাছে, ভালোবাসার কাছে, প্রকৃতির কাছে। সব জায়গা শুধু হার আর হার!
ঢাকায় পাড়ি জমানোর পর থেকে চেহারায় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণতা আর কঠিনতা আনার পরো কিভাবে যেন প্রহরের নজরে পড়ে গেল সে। প্রহরের সাথে প্রথম সাক্ষাৎ ভার্সিটির এডমিশন টেস্টের দিন। প্রহরের ভর্তি পরীক্ষার সময় সে সিনিয়র হওয়ার কারণে স্যারদের সাহায্য করছিল। ৬০৭ নাম্বার রুমে সবাইকে খাতা দিয়ে নিয়ম-কানুন বুঝিয়ে দিচ্ছিল। বুঝানো শেষ হওয়ার পর পেছনের সিট থেকে প্রহর দাঁড়িয়ে পড়েছিল। বলেছিল সে বুঝতে পারেনি। এটা সত্যি যে এক সেকেন্ডের জন্য প্রহরকে দেখে সে থমকে গিয়েছিল। প্রহরকে তখন প্রকৃতির মতো ঝলমলে লাগছিল। পরমুহূর্তে এগিয়ে গিয়ে কাছে থেকে প্রফেশনালি সব বুঝিয়ে দিয়েছিল। পরে সেদিনই তার কাল হয়ে দাঁড়ালো। সেদিনের পর থেকে প্রহর আজ পর্যন্ত তার পিছু ছাড়েনি।
ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল সে। তার সাধ্য থাকলে অতীতে গিয়ে সেই দিনটা চিরতরে মুছে ফেলতো। অথবা প্রহরের মস্তিষ্ক থেকে মুছে ফেলতো অনুভব নামক ক্ষণিকের সহযাত্রীর সব স্মৃতি। মাথা তুলে প্রহরের দিকে তাকালো সে। একটুপর নিজের গাল স্পর্শ করলো। মাঝে মাঝে তার নিজের চেহারা আগুনে ঝলসে ফেলতে ইচ্ছে করে। তার এই কিংবদন্তিসম চেহারার জন্যই প্রহরের ভেতর বিপজ্জনক উচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে। তার এই চেহারার জন্যই প্রহর তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। কি দরকার ছিল এই চেহারার? কালো, পৃথিবীর সবচেয়ে কুৎসিত চেহারা হলে তার কি হতো? জীবন আরেকটু সুন্দর হতো হয়তো! বেঁচে থাকা আরো একটু সহজ মনে হতো। এই মুহুর্তে তার বেঁচে থাকা সবচেয়ে কঠিন মনে হচ্ছে।
প্রহরের নড়চড় বিহীন শরীরের দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থেকে উঠে দাঁড়ালো অনুভব। টেবিলের ড্রয়ার থেকে অয়েন্টমেন্ট টা বের করলো। বিছানার দিকে এগিয়ে গিয়ে প্রহরের দিকে একটু ঝুঁকে দাঁড়াল। ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতে পেরে তবেই বিছানায় বসে পড়লো। সাবধানে প্রহরের গায়ের উপর থেকে কাঁথা টেনে নিচে নামাল। অস্বস্তি নিয়ে একবার প্রহরের জামা সরাতে চাইলো। হাতটা কাছে নিয়েও আবার সরিয়ে আনলো। প্রহরের কাটা জায়গায় একটু অয়েন্টমেন্ট লাগানো দুঃসাধ্য মনে হচ্ছে। কিন্তু অনেকখানি কেটে গেছে। ইনফেকশন হতে পারে। হেলাফেলা করা যাবে না। এক পলক প্রহরের মুখের দিকে তাকালো। মেয়েটার কাঁদার মতো ঘুম তার মনে সাহস সঞ্চার করলো। লম্বা করে শ্বাস নিল। বাম হাতটা বাড়িয়ে আস্তে আস্তে প্রহরের পেটের কাটা জায়গাটা উন্মুক্ত করলো।
ফর্সা উদরের মাঝে কালো গভীর ছাপ দেখে অনুভবের ভেতর পূর্বের মতো উত্তেজনাপূর্ন কোনো দ্বৈরথের সৃষ্টি হলো না। সৃষ্টি হলো না কামনা-বাসনার! উল্টো প্রবল দুঃখ বোধে ছেয়ে গেল ভেতরটা! চোখ দুটো নরম হয়ে এলো। বুকের ভেতর তীব্র জ্বলুনি অনুভব করলো। বুকের ভেতরের শোচনীয় জ্বালা যন্ত্রণায় মাটি চাপা দিয়ে দিল সে। ডান হাতের আঙুলের ডগায় অল্প একটু অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে নিল। এক সমুদ্র মায়া নিয়ে প্রহরের কাটাছেঁড়ার জায়গায় আলতো স্পর্শ করলো। সুনিপুণ ভাবে অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিতে লাগলো। তার হাতের স্পর্শ পেয়ে প্রহর ঘুমের মধ্যে হালকা কেঁপে উঠলো। ক্ষণিকের জন্য অনুভবের হাত থেমে গেল। প্রহরের ঘুমন্ত মুখের দিকে এক নজর তাকালো। পরক্ষণে অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে পরণের কাপড় ঠিক করে দিল। পায়ের নিচ থেকে কাঁথা টেনে আবার গায়ে জড়িয়ে দিল। তারপর চুপচাপ বাতি নিভিয়ে ফ্লোরে গিয়ে শুয়ে পড়লো সে।
___________________
স্টেশনে তেমন ভীড় নেই। অল্প বিস্তর মানুষের আনাগোনা চোখে পড়ছে। পাটাতনে শুয়ে থাকা উদ্বাস্তুদের ঘুম ভাঙেনি এখনো। যাত্রীদের একটা অংশ বসে বসে এখনো ঝিমাচ্ছে। অনুভব এক হাতে কাপড়ের ব্যাগ, আরেক হাতে মায়ের হাত ধরে স্টেশনে প্রবেশ করলো৷ যাত্রীছাউনিতে মাকে বসিয়ে রেখে সে টিকেট কাটতে গেল।
টিকেল কেটে ফিরতে ফিরতে কিছুটা সময় লাগলো। ততক্ষণে স্টেশন যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে। অনুভব আশপাশে নজর বুলিয়ে মায়ের পাশে এসে দাঁড়ালো। ট্রেন আসতে কিছুক্ষণ সময় লাগবে। কিছুক্ষণ পর সে মায়ের পাশে বসে পড়লো। চারপাশে মানুষের শোরগোল বেড়ে যাচ্ছে। টুকাই গুলোর ঘুম ভেঙে গেছে। সবাই আলস্য পায়ে হাঁটাহাঁটি করছে। এক সাইডে মধ্য বয়স্ক এক লোক চা বিক্রি করছে। অনুভব মাকে বলল,
‘মা, চা খাবে?’
ফাতেমা বেগম এক পলক চায়ের দোকানের দিকে তাকালেন। প্রচুর ভিড় দেখা যাচ্ছে। বাচ্চা একটা ছেলে চায়ের কাপ আনা-নেওয়া করছে। তিনি মাথা নেড়ে বললেন,
‘না। খাব না। ট্রেন আসতে আর কতক্ষণ দেরি?’
‘আধ ঘন্টার মতো। তুমি এখানে অপেক্ষা করো। আমি চা নিয়ে আসছি মা।’
অনুভব উঠে দাঁড়ালো। তার কেন জানি মায়ের সাথে একত্রে চা খেতে মন চাইছে। দোকানের দিকে এগিয়ে গেল। কিছুক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে সে দু হাতে দুই কাপ দুধ চা নিয়ে ফিরলো৷ এক কাপ মায়ের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বসে পড়লো। চায়ে ফু দিয়ে পরম আয়েশে সে চুমুক দিল। এক চুমুক খেতে ভেতরে প্রশান্তি অনুভব করলো। চায়ের কাপে দ্বিতীয় চুমুক দিয়ে মায়ের দিকে তাকালো। মাকে তৃপ্তি নিয়ে খেতে দেখে বলল,
‘চা টা ভালো হয়েছে না মা?’
‘হ্যাঁ, অনেক ভালো হয়েছে।’
মিনিট দশেক পরেই এনাউন্সমেন্ট বেজে উঠলো। ট্রেন কিছুক্ষণের মধ্যে এসে পড়বে। যাত্রীদের মতো ছুটোছুটি লেগে গেল। অনুভব শূন্য চায়ের কাপ নিয়ে দোকানের দিকে পা বাড়ালো। বিল মিটিয়ে দ্রুত মায়ের পাশে এসে দাঁড়ালো। ব্যাগটা হাতে নিয়ে মায়ের হাত ধরলো। স্টেশনের সবার মাঝে অস্থিরতা বিরাজমান। সবাই ব্যাগপত্র হাতে নিয়ে এপার থেকে ওপার যাচ্ছে। অনুভব মাকে নিয়ে ট্রেন থামার শেষ মাথায় গিয়ে দাঁড়ালো। ট্রেন থামলে আনুমানিক এখানে ট্রেনের একটা দরজা থাকার কথা।
অস্থিরতা নিয়ে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করতে ট্রেনের হুইসেলের শব্দ কানে এলো। বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠলো অনুভবের। ট্রেনের চিরপরিচিত শব্দটা তার কাছে বড্ড অচেনা মনে হলো৷ মনে হলো, এই অদ্ভুত করুণ শব্দ সে জীবনে প্রথমবারের মতো শুনছে। মাথার ভেতর কেমন যেন করে উঠলো। হাতের ব্যাগটা ফেলে দিয়ে সে মাকে জড়িয়ে ধরলো। ফাতেমা বেগম চমকে উঠলেন। অনুভবের মাথায় মহব্বতের হাত ছুঁইয়ে দিলেন। মমতা মিশ্রিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
‘কি হয়েছে বাবা আমার?’
অনুভবের কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে এলো। বন্ধ চোখে কোনো রকমে বলল,
‘আমার জীবনটা এত সাদা কালো কেন মা?’
‘তোর জীবনের সবটুকু রঙ কেউ স্বযত্নে আগলে রেখেছে হয়তো। সেজন্য এখন জীবন সাদা কালো মনে হচ্ছে। উপযুক্ত সময় এলে সেই মানুষটা আগলে রাখা সবটুকু রঙ দিয়ে তোর জীবন রাঙিয়ে দিবে৷ তখন দেখিস জীবন কত রঙের। জীবন কত সুন্দর!’
‘মা, তুমি সাবধানে থেকো। প্রচন্ড অভাববোধ করবো তোমার।’
বিকট শব্দ করে ট্রেন থেমে গেল। যাত্রীদের মধ্যে হূল্লোড় লেগে গেল কার আগে কে ট্রেনে উঠবে। মায়ের গালে হাত ছুঁইয়ে অনুভব মাকে ছেড়ে দিল। ব্যাগটা হাতে নিয়ে একহাতে ভিড় ঠেলে মাকে নির্দিষ্ট আসনে বসিয়ে দিল। ট্রেন থেকে নেমে মায়ের জানালার পাশে এসে দাঁড়ালো। স্নেহময়ী জননীর ভাঁজ পড়া মুখের দিকে অপলক চেয়ে রইলো সে। বুকের ভেতর হু হু করে উঠলো। চারদিকের এত শোরগোলের কিছুই তার কর্ণকূহরে প্রবেশ করলো না। মায়ের মুখের দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এলো তার। জীবনে প্রথমবারের মতো মনে পড়লো, মায়ের জন্য কিছুই করতে পারেনি সে। সে ছেলে হিসেবে ব্যর্থ। ঝাপসা চোখে বিড়বিড় করে বলল,
‘আমায় ক্ষমা কোরো মা। ক্ষমা করে দিও তোমার অকর্মণ্য নিষ্ঠুর ছেলেকে!’
ফাতেমা বেগম হাত নেড়ে ছেলেকে বিদায় জানাতে ট্রেন গতিপ্রাপ্ত হলো। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সেটা অদৃশ্য হতে চলল। যতক্ষণ ট্রেন দেখা গেল ততক্ষণ অনুভব ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। ট্রেনের শেষ বগি দৃষ্টির অগোচর হতে অনুভব ঘুরে দাঁড়াল। এলোমেলো পা ফেলে এগিয়ে চলল।
পরবর্তী ট্রেনের জন্য উদগ্রীব হয়ে বসে থাকা কেউ-ই লক্ষ্য করলো না কান্নারত এক সুদর্শন যুবককে। ট্রেনে উঠার দূর্বোধ্য প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত থাকা মানুষদেরও এত সুন্দর অথচ করুণ একটা দৃশ্য চোখে পড়লো না।
________________
সারা সকাল রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে দুপুরের পর অনুভব বাড়ির সামনে এলো। সদর দরজার সামনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো সে। দরজা ভেতর থেকে আটকানো। তার মানে ভেতরে কেউ আছে। কেউ থাকলে সেটা প্রহর ছাড়া আর কে হবে! প্রহর আজ ভার্সিটি যায় নি হয়তো। নাকি গিয়ে অলরেডি চলে এসেছে? সে বুঝতে পারলো না।
শার্টের উপরের দুটো বোতাম খুলে সে দরজায় নক করলো।
(চলবে)