অনুরাগে সখি নিভৃতে যতনে পর্ব-০২

0
2

#অনুরাগে_সখি_নিভৃতে_যতনে
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_০২
___________________________
আশহির নিচে নেমে দেখলো সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আছে।আশহিরকে দেখে অহিদা বেগম বললেন,

-“তোমার নতুন বউ তো চাকরি করতে গেল।”

আশহির বিরক্তি নিয়ে বললো,

-“চাকরি আছে চাকরি করতে তো যাবেই।এটা আমাকে বলার কি আছে!”

তারিনি গিয়ে আশহিরের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

-“মৌরিন সেল্ফ ডিফেন্ডেড বলেই ও-কে তোমার পছন্দ হয়েছে তাই না?এর জন্যই ও-কে একেবারে বিয়ে করে নিয়ে এসেছো!তুমি তো আমাকে অনেক বার চাকরি করতে বলেছিলে কিন্তু আমি সংসারের কথা ভেবে করিনি।তারই বদলা নিলে?”

-“কি সব বলছো তুমি তারিনি?”

-“যা মনে হলো তাই বললাম।আচ্ছা সরি আমার এইসব বলার কোনো মানে হয় না এখন।সব কিছুর অধিকার তো এখন অন্য কারো হয়ে গেছে।”

আশহির রাগে ফুসছে,সে আর কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে গেল।

______________
মৌরিন আনমনে রাস্তা দিয়ে হাঁটতেছে।তার সাথে যা ঘটে গেল সে তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।নিজের শত্রুকে কিনা তার বিয়ে করতে হলো!

পিছন থেকে একটা গাড়ি মৌরিনকে ধাক্কা মারতে যাবে হঠাৎ করে কেউ এসে তাকে টান দিয়ে রাস্তার পাশে নিয়ে গেল।হঠাৎ করে সবটা ঘটায় মৌরিন কিছুটা চমকে গেল।সে সামনে তাকিয়ে দেখলো আশহির তাকে ধরে আছে।আশহির মৌরিনকে ছেড়ে দিয়ে কিছুটা দূরে সরে দাঁড়িয়ে বললো,

-“এভাবে কেউ রাস্তার মাঝখান থেকে হাঁটে?”

-“আপনি আমাকে বাঁচালেন?আপনার তো আমাকে ম*রতে দেওয়া উচিত ছিল।”

-“আপনাকে আমি কয়েক ঘন্টা আগেই বলেছি আপনাকে মৃত্যুর স্বাদটা না হয় আমিই দিব!”

মৌরিন মৃদু হেসে বললো,

-“আমার বলা বাক্যটাও মনে রাখবেন।”

আশহিরকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মৌরিন আবার হাঁটা শুরু করলো।আশহির পিছন থেকে বললো,

-“আপনি চাইলে আমি আপনাকে ড্রাইভ করে পৌঁছে দিতে পারি।”

মৌরিন হাঁটতে হাঁটতে বললো,

-“কোনো প্রয়োজন নেই।”

আশহির আর কিছু না বলে গাড়ি চালিয়ে তার অফিসের দিকে চলে গেল।
_
_
_
-“আপনি শেষে কিনা আশহির মির্জাকে বিয়ে করলেন মিস না মিসেস.মৌরিন?”

মৌরিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

-“আমার হাতে আর কিছু ছিল না।আমার যদি ওই রাফিন হাওলাদারের সাথে বিয়ে হয়ে যেতো তাহলে আমার জীবনটা জাহান্নামে পরিণত হতো।ওই লোক যে কতটা ঘৃণিত আপনি তো তা জানেনই স্যার।”

মৌরিনের কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেললো ফরহাদ।তার মনের ভিতরে কি হচ্ছে তা সে নিজেই জানে!সে নিজেকে সামলে বললো,

-“আশহির মির্জা তো আপনার আরো বড় শত্রু!বিয়ে হয়েছে বলে উনার কুকর্মের কথা ভুলে যাবেন না যেন মিসেস.মৌরিন।”

-“তা আমি কখনোই ভুলবো না স্যার।আমার পেশা আমার কাছে সবকিছুর উর্ধ্বে!আমি উনার বাড়িতে থেকেই উনার বিরুদ্ধে সব প্রমাণ জোগাড় করবো আপনি কোনো চিন্তা করবেন না।”

ফরহাদ মনে মনে বললো,

-“আমার চিন্তার কথা আপনি কখনোই জানবেন না মৌরিন।আমার বুকের ভিতরে কি যন্ত্রণা হচ্ছে তা শুধুমাত্র আমি জানি!”

ফরহাদকে চুপ থাকতে দেখে মৌরিন বললো,

-“স্যার আজকে কোথায় যেতে হবে?”

মৌরিনের কথায় ফরহাদের ধ্যান ভাঙ্গলো।সে নিজেকে সামলে বললো,

-“আপনি বরং আজকে বাড়িতে চলে যান।নতুন বউ বলে কথা!আজকে নাহয় কাজ নাই করলেন।”

-“এই বিয়েটা আমি মানি না স্যার।আরেকজনের স্বামীর বউ হওয়ার কোনো শখ নেই।আর নিজেকে উনার মতো লোকের বউ ভাবা ইম্পসিবল!”

ফরহাদ ভ্রু কুঁচকে বললো,

-“মানে?আশহির মির্জা বিবাহিত?”

-“জ্বি হ্যাঁ!”

-“তারপরেও উনি আপনাকে বিয়ে কিভাবে করলেন?”

-“উনি আমাকে বিয়েটা করেছেন যেন উনি নিজেই আমাকে মা*রতে পারেন।রাফিন হাওলাদারের সাথে বিয়ে হলে উনি সেটা করতে পারতেন না!আর হ্যাঁ উনি আমাকে নিজ ইচ্ছাতে বিয়েটা করলেও এই বিয়েটা উনি মানেন না।আর আমিও মানি না!”

ফরহাদ আর কিছু না বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

-“আচ্ছা আপনি আজকে চলে যান।আজকে আর কোথাও যেতে হবে না!”

-“কিন্তু স্যার…..”

মৌরিনকে বাঁধা দিয়ে ফরহাদ বললো,

-“কোনো কিন্তু না মিস….ধ্যাত বার বার ভুল হয়ে যাচ্ছে!মিসেস.মৌরিন!আমি যখন যেতে বললাম যান।”

-“স্যার আপনি চাইলে আমাকে শুধু মৌরিন বলতে পারেন ওমন একজন লোকের বউ হিসেবে নিজের নামের আগে মিসেস শোনাটা আমার ঠিক ভালো লাগছে না!”

-“কিন্তু মিসেস তো আপনার নামের আগে যোগ হয়েই গিয়েছে!”

মৌরিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

-“আচ্ছা স্যার যখন কোনো কাজ নেই আমি তাহলে আসি!”

ফরহাদ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল।মৌরিন চলে গেল।মৌরিন চলে যেতে ফরহাদ স্বজোরে তার সামনে থাকা টেবিলের উপর নিজের হাত মুঠো করে ঘু*ষি মারলো।

-“আপনি আমাকে কখনো বুঝতেই পারলেন না মৌরিন।এতো ভালোবাসার পরেও কেনো আপনি আমার হলেন না?আমার এই আকাশ সমান ভালোবাসা যে পাতালে ঝরে গেল!”

কথাগুলো বলতেই ফরহাদের চোখ লাল বর্ণ ধারণ করলো।অন্য কেউ হলে হয়তো কেঁদে দিতো।কিন্তু ফরহাদের চোখ দিয়ে তো সে পানি পড়তে দিবে না।কারণ সে তো পাষাণ হৃদয়ের পুরুষ!কিন্তু এই পাষাণ হৃদয়ও ভালোবাসার রঙে রঙিন হয়েছিল।আর সেই ভালোবাসার রং হলো মৌরিন!

__________________
আশহির একটা ব্রিজের উপর গাড়ি দাঁড়া করিয়ে তার উপরে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।

-“সব কিছু এভাবে শেষ হয়ে গেল কেনো তারিনি?আমাদের সুখের সংসার আজ কেনো এমন দুঃখে পরিণত হলো?আমি তোমাকে ছাড়া কিভাবে বাঁচবো তারিনি?আমি তোমাকে হারাতে চাই না তারিনি!তোমাকে ছাড়া যে আমার জীবন অর্থহীন!”

আশহিরের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো।সে নিজেকে সামলে হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো বেশ রাত হয়ে গিয়েছে।তাই সে গাড়িতে উঠে ড্রাইভ করা শুরু করলো।

বাড়িতে পৌঁছে আশহির তার রুমে গিয়ে দেখলো তারিনি ঘুমিয়ে আছে।আশহির গিয়ে তারিনির মাথার পাশে বসলো।সে এক দৃষ্টিতে তারিনির ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।তারিনির মুখের উপর চুল পড়ে আছে।আশহির খুব যত্নের সাথে তা সরিয়ে কানের পাশে গুঁজে দিল।তারিনি কিছুটা নড়ে উঠতে আশহির উঠে দাঁড়ালো।তারিনির বলা কথাগুলো সে মনে রেখেছে।কারণ সে চায় না তারিনি কোনো ভাবে উত্তেজিত হোক।তারিনির শরীরের জন্য তা ঠিক না।

আশহির কিছুক্ষণ তারিনির দিকে তাকিয়ে থেকে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেল।

________________
মৌরিন তার রুমে কিছু কেসের ফাইল চেক করতে ছিল।ফাইলগুলো রেখে সে বললো,

-“কতোগুলো কেসের সমাপ্তি ঘটিয়েছি শুধুমাত্র আশহির মির্জার ক্ষেত্রেই কিছু করতে পারছি না।মানতে হবে এই লোকের বুদ্ধি আছে।”

-“এই কারণেই তো পা*প গুলো ভালো কাজের মাধ্যমে আড়াল করতে পারি!”

মৌরিন তার রুমের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো আশহির দাঁড়িয়ে আছে।

-“আপনি এখানে কি করছেন?”

-“আপনার খবর নিতেই এলাম কারণ আমার বাড়ির কেউ তো আপনাকে পছন্দ করেনি!”

মৌরিন গিয়ে আশহিরের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

-“তো কি হয়েছে?”

-“খেতে দিল নাকি না খাইয়ে রাখলো সেটা জানা প্রয়োজন কারণ যতই হোক আমিই আপনাকে এই বাড়িতে নিয়ে এসেছি!”

-“আপনার বাড়ির লোক এতোও খাবার না যে আমাকে না খাইয়ে রাখবে!আপনার বোন এসে আমাকে খাবার দিয়ে গিয়েছে।”

-“যাক তাহলে তো আপনি ভালোই আপ্যায়ন পেয়েছেন।”

মৌরিন কিছু বলতে যাবে তখন সে খেয়াল করলো আশহিরের পিছনে তারিনি দাঁড়িয়ে আছে।মৌরিন তার পিছনে কারোর দিকে তাকিয়ে আছে দেখে আশহির পিছনে ঘুরে তাকালো।তারিনিকে দেখে সে কিছু বলতে যাবে তাকে থামিয়ে তারিনি বললো,

-“কিছু বলার দরকার নেই আশহির।আজকে তো তোমাদের বাসর রাত!তোমার তো এই রুমেই থাকা উচিত।তবে ঘুমানোর আগে রাতের খাবার খেয়ে নিও!”

তারিনি চলে যেতে যাবে এমন সময় আশহির বললো,

-“তারিনি আমি রুমের ভিতরেও যাইনি আর তুমি কি সব বলতেছো!আমি শুধু জানতে এসেছিলাম উনাকে খাবার দেওয়া হয়েছে নাকি!”

তারিনি পিছনে ঘুরে বললো,

-“আশহির আমার জানা মতে আমি খারাপ কিছু বলিনি।আর তোমার আমাকে এইসব বলার কোনো দরকার নেই।মৌরিন তোমার বিয়ে করা নতুন বউ!তুমি তার সাথে থাকবে এটা স্বাভাবিক।”

-“দেখুন আমি আপনাদের মাঝে কথা বলতে চাচ্ছি না কিন্তু আমার বলা উচিত বলে মনে হচ্ছে।”

মৌরিনের কথা শুনে তারিনি বললো,

-“আরে তোমার কোনো চিন্তা নেই।আমি তোমার বরকে নিতে আসিনি।”

মৌরিন কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললেন,

-“উনাকে নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই।আমাদের বিয়েটা একটা এক্সিডেন্ট হিসেবে ধরে নিন।এই বিয়েটা আমিও মানি না আর উনিও মানেন না।তাই এই রুমে থাকার উনার প্রশ্নই আসে না!”

মৌরিন কথাগুলো বলে রুমের দরজা লক করে দিল।তারিনি আর কিছু না বলে রুমের দিকে চলে গেল।আশহির তার পিছু পিছু গিয়ে বললো,

-“উনিও বলে দিলেন যে এই বিয়েটার কোনো মানে নেই।এবার তো অন্তত মেনে নেও তারিনি!”

#চলবে……………………

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]