অন্য বসন্ত পর্ব-০৩

0
44

#অন্য_বসন্ত ( তৃতীয় পর্ব )
#ঈপ্সিতা_মিত্র
প্রশ্ন আর বাস্তবটা যে এতো তাড়াতাড়ি মিলে যাবে জীবনে এটা দীপ্তি ভাবেনি সেই রাতে ! ওর চেনা চারিদিকটা যেন চোখের পলকেই হঠাৎ কেমন বদলে গেলো | তিন মাসের মধ্যেই অচেনা হয়ে গেলো সব কিছু | তৃষা এই কোম্পানিতে আসার পর থেকেই এই ‘সেন টেক্সটাইল’ বদলে যেতে থাকলো ধীরে ধীরে | প্রথমে ওদের অফিসের দেয়ালের রং আর ইন্টেরিয়র চেঞ্জ করেছিল তৃষা | আসলে এই অফিসটা কৃষ্ণেন্দুর বাবার আমলের | কিন্তু ওই পুরোনো ফার্নিচার , পুরোনো ইন্টেরিয়র এখন আর চলে না কি ! প্রথম দিন এই অফিসে এসে তৃষা কথাটা বলেছিলো কৃষ্ণেন্দুকে | তারপর নিজেই একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের সঙ্গে কথা বলে নতুন ভাবে সাজিয়েছিল অফিসটাকে | তবে কৃষ্ণেন্দু এই নতুন অফিসে ভীষণ খুশি | ও তো সেই সময় বেশ খুশি খুশি হয়েই একদিন দীপ্তিকে বলেছিলো , ————- ” তৃষা একদম আমার মনের মতন কাজ করছে | আমিও অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম যে অফিসটা কেমন পুরোনো আমলের ! তবে টাকা ছিল না তো ! তাই আর এইসব কাজে হাত দিইনি তখন | যাইহোক , তৃষার টেস্টটা খুব ভালো | আর ও তো বেস্ট ইন্টেরিয়র ডিজাইনারকে দিয়ে সাজাচ্ছে | তাই আমার আর কোনো টেনশন নেই |”

সেইদিন দীপ্তি এর উত্তরে আর কিছু বলেনি কৃষ্ণেন্দুকে | তবে ভেতরে ভেতরে অবাক হয়েছিল খুব | এতো সহজে কৃষ্ণেন্দু পুরোনোকে ভুলে যেতে পারে ! এই অফিসটা ওর বাবা নিজের হাতে সাজিয়েছিল এক সময় | ওই কাঠের চেয়ার টেবিল থেকে জানলার ফ্রেম , সব কিছুই ওই মানুষটার নিজের পছন্দের কেনা | হ্যাঁ , তার চাকচিক্য হয়তো কম , কিন্তু সেগুলো স্টোররুমে ফেলে দেয়ার মতন, এটা ভাবেনি কখনো দীপ্তি | আর ও নিজের ভাবনার সঙ্গে কৃষ্ণেন্দুকেও মিলিয়ে দিয়েছিলো প্রথম থেকে | ভেবেছিলো ওর বাবার জায়গা , বাবার পছন্দের জিনিসগুলো কৃষ্ণেন্দুর কাছেও দামিই হবে | কিন্তু সেটা যে খুব একটা ‘না’ , এটা আজ বুঝলো | তবে এরপর একটা ছোট্ট ধাক্কা লাগলো সেইদিন , যখন অফিসটা পুরোপুরি রেডি হয়ে এলো | কৃষ্ণেন্দুর আলাদা কেবিন , তৃষার আলাদা কেবিন , আরো কিছু নতুন এমপ্লয়ি যারা এসেছে , তাদেরও আলাদা কেবিন নতুনভাবে তৈরী করা হয়েছে | আর সেখানে দীপ্তির জন্য রাখা হয়েছে একটা ছোট্ট ডেস্ক | অফিসের সব এমপ্লয়রা যেখানে একসঙ্গে বসে , সেই ঘরের কোণায় রাখা একটা ছোট্ট ডেস্ক | আগে দীপ্তি কৃষ্ণেন্দুর ঘরে বসেই কাজ করতো | কিন্তু এরপর আর সেটা হবে না | অফিসের তো একটা ম্যানারিজম , প্রটোকল থাকে | একজন সাধারণ এসিস্টেন্ট কি করে সারাক্ষণ বসের ঘরে বসে কাজ করতে পারে ! কথাটা তৃষা দীপ্তিকে নিজের ডেস্ক দেখিয়ে দিতে দিতে বলেছিলো সোজাসুজি | কৃষ্ণেন্দু তখন দূরে দাঁড়িয়ে | এই নতুন অফিস ইনোগ্রেসনের পর অনেক লোককে এটেন্ড করতে হচ্ছে ভিড়ে | তবে দীপ্তিও এর উত্তরে কোনো কথা বাড়ায়নি আর | কি হবে কথা বাড়িয়ে , জোর করে ! এই অফিসে ও সেই শুরুর দিনগুলোতে ছিল , যখন মাত্র কয়েকজন লোকের একটা ছোট্ট টিম কাজ করতো এখানে ! এই ইতিহাস শুনিয়ে কি হবে তৃষাকে ! আর সত্যিই কি দাম পাওয়ার জন্য কিছু করেছিল ও ! শুধু পাশে থাকতে চেয়েছিলো , তাই থেকেছিল | সেই জন্য এতো কথা তৃষাকে বলে লাভ নেই | তবে খারাপ লেগেছিলো একটা অন্য ব্যাপারে | এই ছোট ডেস্কটা দেখে কৃষ্ণেন্দুও কিছু বললো না আজ ! না , এখানে বসা নিয়ে দীপ্তির আলাদা করে কোনো প্রব্লেম নেই, খারাপ লাগা নেই , কিন্তু কৃষ্ণেন্দুর কাছে দিপ্তিও যে অন্য সব এমপ্লয়িদের মতন খুব সাধারণ , এটা ভেবে ভেতর থেকে কষ্ট হলো আজ প্রথম | কিন্তু এরপরে আরো অনেক খারাপ লাগা অপেক্ষা করছিল দীপ্তির জন্য! সেগুলোকে ও আস্তে আস্তে বুঝতে পারলো |

তৃষা এসে যেন সবটাই বদলে দিলো কৃষ্ণেন্দুর | সমস্ত প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা , ডিসিশন নেয়া , কারখানায় নতুন ইকুইপমেন্ট আনা , লেবারদের জন্য নতুন মান্থলি স্যালারি ঠিক , সব কিছুই এখন কৃষ্ণেন্দু তৃষার সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করে| রাত জেগে প্রেজেন্টেশন তৈরী , টার্গেট ফুলফিল , এইসবে এখন একজনই কৃষ্ণেন্দুর সঙ্গে থাকে রোজ , তৃষা | দীপ্তি আস্তে আস্তে যেন সত্যি একজন এসিস্টেন্ট এ পরিণত হয়েছে এই অফিসে , এটা আজকাল ভীষণ ভালোভাবে বুঝতে পারে ও | ওর কাজ এখন ডিকটেশন নেয়া , কফি করে কৃষ্ণেন্দুর ঘরে পৌঁছে দেয়া , এই ফাইলটা ওর টেবিলে নিয়ে যাওয়া , মিটিং এরেঞ্জ করা এইসব | আগে কৃষ্ণেন্দুর ফিন্যান্স বাঁচানোর জন্য দীপ্তি নিজে বাঁকুড়া যেত প্রত্যেক মাসে | ও ডিরেক্ট তাঁতিদের সাথে কথা বলে সুতো আনতো কোম্পানির জন্য | কোনো মিডিল ম্যান কাজ করতো না এই সুতোর সাপ্লাইয়ের জন্য | তাই অনেক কমে কাজটা হতো | কিন্তু এই মাস থেকে তো সেই নিয়মটাও বদলে গেলো ‘সেন টেক্সটাইলে’ | কৃষ্ণেন্দু নিজে দীপ্তিকে ডেকে বললো সেইদিন ,

————- ” তোকে আর এই মাস থেকে বাঁকুড়া যেতে হবে না বুঝলি | আমরা আর ডিরেক্ট বাঁকুড়া থেকে সুতো নেবো না | অয়ন কাঞ্জিলাল বলে একজন ডিলার আছে কলকাতায় | তৃষা আলাপ করিয়ে দিয়েছে কদিন আগে | ও ই এরপর থেকে আমাদের কোম্পানিকে সুতোর সাপ্লাই করবে | ”

কথাটা শুনে এই প্রথম দীপ্তি একটা না বলে থাকতে পারলো না | ও একটু জোর দিয়েই বললো , ——— ” কিন্তু বাঁকুড়াতে প্রায় আশিটা ফ্যামিলির কাছ থেকে আমরা এতদিন ধরে সুতো নিয়ে যাচ্ছি কৃষ্ণেন্দু ! ওদের আয়ের একটা বড়ো সোর্স ছিল এটা | বাকি ডিলাররা তো বেশিরভাগ সময় ওদের ঠকিয়ে কম দামে সুতো কিনে কলকাতার কোম্পানিগুলোকে সাপ্লাই করে ! আমাদের কোম্পানির রুলটা তো বরং ভালো ছিল এতদিন ! এতে আমাদেরও যেমন বেশি দিতে হতো না , তাঁতিরাও সেরকম ঠগতো না !”

কথাটা শেষ হতে কৃষ্ণেন্দু এবার বেশ দৃঢ় গলায়ই বলে উঠলো , ———— ” দীপ্তি আমি কস্টিং করেছি | অয়ন কাঞ্জিলাল আমাদের আরো কম দামে সুতো সাপ্লাই করবে | কলকাতার সব টপ টেক্সটাইল কোম্পানিগুলোই ওর কাছ থেকে সুতো নেয় | আমাদের এটাতেই লাভ বেশি | আর আফটার অল আমি এখানে ব্যবসা করতে এসেছি | সমাজ সেবা না | যাইহোক , তোর আর এই মাস থেকে বাঁকুড়া যাওয়ার দরকার নেই , এটাই বলার ছিল |”

কথাগুলো বলেই এবার কৃষ্ণেন্দু চোখটা নামিয়ে নিলো ল্যাপটপের দিকে | তবে দীপ্তি আরো বেশ কয়েক সেকেন্ড থমকে দাঁড়িয়েছিল সেদিন ওর সামনে | চিনতে পারছিলো না ঠিক এই হিসাবি মানুষটাকে ! কৃষ্ণেন্দু আগে নিজে ওই বাঁকুড়ার তাঁতিগুলোর ডেভলপমেন্টের কথা ভাবতো ! ওদের কোম্পানি আরো বড়ো হলে ও বাঁকুড়ার ওই তাঁতি গ্রামটায় একটা স্কুল করবে , এটা অব্দি বলেছিলো একটা সময়ে! আর আজ সেই ছেলেটাই ব্যবসা দেখাচ্ছে ! এতো বড়ো একটা ডিসিশন এতো সহজে নিয়ে নিলো ও ! একবারও ওই গরিব , আধপেটা মানুষগুলোর মুখ মনে পড়লো না কৃষ্ণেন্দুর ! কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই যেন ভেতরটা থমকে গেলো হঠাৎ | দীপ্তি এরপর আর কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে এলো কৃষ্ণেন্দুর কেবিন থেকে | সত্যি জানে না আজকের পর আর কতদিন ও নিজে এই কোম্পানিতে কাজ করতে পারবে ! এতো বদল ও কতদিন আর মানতে পারবে কিছু না বলে !

এরপর দীপ্তি নিজেও আর কোম্পানির কোনো ব্যাপারে বিশেষ কথা বলতে আসতো না নিজে থেকে | আর আজকাল কৃষ্ণেন্দুর সাথে দেখাও হতো অফিস ছাড়া খুব কম | কৃষ্ণেন্দু এখন প্রায়ই রাত করে বাড়ি ফেরে | বেশিরভাগ সময়েই বাইরে থেকে ডিনার করে আসে | তাই আর ডাইনিং টেবিলেও দেখা হয় না ওদের | এইভাবেই দিনগুলো এগোচ্ছিল ধীরে ধীরে | তবে আজকে আরেকবার সময়টা থমকে গেলো দীপ্তির | আজ ক্যালেন্ডারের পাতায় দিনটা খুব স্পেশ্যাল | 4th মার্চ | দীপ্তির জন্মদিন আজকে | ভেবেছিলো হয়তো কাল রাত বারোটায়ই ওর ঘরের দরজায় উপস্থিত হবে কৃষ্ণেন্দু , প্রত্যেকবারের মতন এইবারওউইশ করবে সবার প্রথমে ! তাই চুপচাপ জেগে অপেক্ষা করছিলো ছেলেটার জন্য | কিন্তু ভাবনাটা আজও মিললো না ঠিক। বারোটার পর দরজায় এসে আজ আর কেউ দাঁড়ালো না ওর সামনে ! একটা , দুটো , তিনটে অব্দি জেগে দীপ্তি অপেক্ষা করেছিল | কিন্তু তা ও কেউ এলো না ওর কাছে ! তবে এই সময় আনমনেই চোখটা ভিজে এলো হঠাৎ | তাহলে কি সত্যি সময়ের ভিড়ে হারিয়ে গেলো কৃষ্ণেন্দু ! কথাটা মনে নিয়েই ঘুমিয়ে পড়লো সেইদিন |
তবে পরের দিন সকালে অন্য একটা কথা মাথায় এলো কেমন | হয়তো দীপ্তি ভুল ভাবছে | কৃষ্ণেন্দু ভোলেনি কিছুই | হয়তো কোনো সারপ্রাইজ প্ল্যান করছে ওর জন্মদিনের জন্য | এইসব ভাবনার ভিড়েই সেইদিন ব্রেকফাস্ট টেবিলে এসেছিলো | তবে সেখানেও মা ছাড়া আর কাউকে দেখতে পায়নি আজ | কৃষ্ণেন্দু সকাল সকালই অফিসে বেরিয়ে গেছে | কিন্তু এখন এটা জেনে মন খারাপ হলো না একটুও | হয়তো ওকে একেবারে সন্ধ্যেবেলা সারপ্রাইজ দেবে ! তাই এরকম দেখা না করে চলে গেছে | এইসব ভেবেই মা কে নমস্কার করলো | মা আবার পুজো দিয়েছে সকালবেলা মন্দিরে গিয়ে | ওকে তাই আদর করে খাইয়ে দিলো প্রসাদটা | এরপর দীপ্তি বেশ খুশি মনেই অফিসে গেছিলো আজ | সারাদিন একটা অচেনা আনন্দে কেটেছিল দিনটা | যতবার কৃষ্ণেন্দুকে দেখেছে আজ সারাদিন , ততবার তাই আলতো হাসি এসে জমা হয়েছে ঠোঁটে | এই ছেলেটা নিশ্চয়ই মনে মনে কিছু একটা প্ল্যানিং করছে আজ ওর জন্মদিনের জন্য | ভাবছে দীপ্তি কিছু বুঝতেই পারবে না ! কিন্তু কৃষ্ণেন্দু জানে না , দীপ্তি চেনে ওকে ভীষণভাবে , হয়তো ওর নিজের থেকেও বেশি করে | তাই আজ সন্ধ্যে ছটার পরই বেরিয়ে এসেছিলো ও তাড়াতাড়ি অফিস থেকে | আর দীপ্তি লক্ষ্য করেছে , কৃষ্ণেন্দু ওই সাড়ে পাঁচটার পরই অফিস থেকে বেরিয়ে গেছিলো হঠাৎ | এই দৃশ্য দেখে তো দীপ্তি কনফার্মড , নিশ্চই বাড়ি গেছে ও , দীপ্তির জন্য হয়তো কেক সাজিয়ে বন্ধুবান্ধবকে ডেকে ওয়েট করছে এখন | এইসব ভেবেই ভিড় রাস্তা কাটিয়ে কলকাতার আলো আঁধারি বিকেল পেরিয়ে হাজির হয়েছিল নিজের বাড়ির সামনে | কলিং বেল বাজিয়ে অপেক্ষা করছিলো অধীর আগ্রহে , হয়তো দরজার ওপারেই অনেক চেনা মুখের ভিড় এখন ! তার মাঝেই কৃষ্ণেন্দু হাসি মুখে দাঁড়িয়ে | ওর দিনটাকে স্পেশ্যাল করার জন্য হয়তো অনেক কিছু করেছে আজ ও ! কেকটা নিশ্চয়ই চকলেটই এনেছে ! কৃষ্ণেন্দু তো জানে দীপ্তির চকলেট কেক কতটা পছন্দের ! এইসবই ভাবছিলো , তখনই মা এসে দরজা খুললো | কিন্তু এই মুহূর্তেই দীপ্তি আরেকবার থমকে গেলো হঠাৎ ! নিঃশব্দ খালি বাড়িটাকে দেখে | যেখানে ওর জন্য সত্যি মা ছাড়া আর কেউ অপেক্ষা করছে না আজ |
তার মানে কৃষ্ণেন্দু এই দিনটাকে ভুলেই গেছে ! আর কোনো সন্দেহ নেই | আর কোনো মন ভোলানো স্বান্তনা নেই | দীপ্তি এই মুহূর্তে চুপ করে গেলো যেন ! জোর করেও মায়ের সামনে হাসতে পারলো না কিছুতেই | ভেতর থেকে একটা অদ্ভুত কষ্ট এসে জমা হলো মনে | একজন খুব কাছের মানুষের অনেক দূরে চলে যাওয়ার কষ্ট | যদিও মা আজ পায়েস করেছিল প্রত্যেকবারের মতোই | দীপ্তি যখন একা নিজের ঘরে চুপচাপ বসেছিল তখন মা এসেছিলো ওর কাছে , এক বাটি পায়েস নিয়ে | তারপর ওকে হাসি হাসি মুখেই বলেছিলো , ————– ” তোর জন্য রাতেও সব পছন্দের রান্না করেছি | তুই যা যা ভালোবাসিস | ধোঁকার ডালনা আছে , পনির আছে | চিকেন আর পোলাও ও রেঁধেছি | ”

কথাটা শুনেই দীপ্তি আর নিজেকে আটকে রাখতে পারেনি | মা কে জড়িয়ে হঠাৎ কেঁদে উঠেছিল খুব | জমা কষ্টগুলো যেন ভেতর থেকে আজ বেরিয়ে আসছিলো মায়ের সামনে | আর কষ্টের ভিড়ে দীপ্তি আরোও বেশি করে আঁকড়ে ধরছিল মা কে | মনে হচ্ছিলো এই পুরো পৃথিবীতে শুধু এই একটা মানুষই আছে , যে মন থেকে দীপ্তির জন্য ভাবে | ভালোবাসে ওকে | দীপ্তির ভালো খারাপ লাগাগুলোকে নিয়ে চিন্তা করে সব সময় ! এই একজনের কাছেই দীপ্তি হয়তো ভীষণ দামি | মা হয়তো বুঝেছিলো ওর কষ্টটা আজ | কেন হঠাৎ মেয়ে এরকম কেঁদে উঠলো , কারণটা জানতো আলো সকাল থেকেই | আসলে আলো নিজেও খেয়াল করেছিল , কৃষ্ণেন্দু অন্যবার হাজার কাজ থাকলেও দীপ্তির এই জন্মদিনে সকাল থেকেই বাড়িতে থাকে | নিজের দীপ্তির সব বন্ধুবান্ধবকে ডেকে একটা গেট টু গেদার এরেঞ্জ করে | কিন্তু এইবার যে ও ভুলে গেছে দিনটা , সেটা সকালে ও যখন অফিসের জন্য রেডি হয়ে এসেছিলো ব্রেকফাস্ট করতে , তখনই বুঝেছিলো আলো | তবে কিছু বলেনি আর নিজে থেকে | কিন্তু এই মুহূর্তে দীপ্তিকে কিছু না বলে তো থাকা সম্ভব না | তাই একটু ভেবে ওর মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলেছিলো ,

———- ” আমি বুঝতে পারছি তোর কেন খারাপ লাগছে ! আসলে হয়তো খুব কাজের চাপ ছেলেটার | তাই ভুলে গেছে কৃষ্ণেন্দু তোর জন্মদিনের কথা | জানিসই তো , কিরকম কাজপাগল ছেলে ! ও ইচ্ছে করে করেনি |”

কথাগুলো যেন একটু জোর করেই বলেছিলো আলো | তবে ও জানে , দীপ্তির যা বোঝার ও বুঝে গেছে| আলোর কোনো বানানো কথায়ই আর সেই ভাবনাটা বদলাবে না কখনো !

যাইহোক,এরপরের দিন দীপ্তি একটু আনমনেই সকালবেলা বইয়ের তাকটা গোছাচ্ছিল নিজের | ইচ্ছে করেই এখনো রেডি হয়নি অফিসের জন্য | ব্রেকফাস্ট টেবিলে যাতে কৃষ্ণেন্দুর মুখোমুখি হতে না হয় এই ভেবে | আর অফিস একদম টাইমে পৌঁছেই বা কি করবে ! এখন অফিসে ও একজন আনইম্পর্টেন্ট এমপ্লয়ি | দুটো ডিকটেশন নেয়া ছাড়া যার আর বিশেষ কাজ নেই | তাই ওর আগে পরে গেলেও সেখানকার কোনো কাজ আটকাবে না ! এইসবই ভেবে বইগুলো সাজাচ্ছিলো পর পর ধুলো ঝেড়ে | তখনই হঠাৎ কৃষ্ণেন্দু বিনা নোটিশে এসে হাজির ওর ঘরে | দীপ্তি যদিও এই মুহূর্তে ছেলেটার মুখোমুখি হতে চায়নি একদম| ও আজ একটা দূরত্বই চেয়েছিলো কৃষ্ণেন্দুর কাছ থেকে | তাই কৃষ্ণেন্দু আসতেই ও আর কৃষ্ণেন্দুকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে নিজেই জিজ্ঞাসা করে উঠেছিল ,

———- ” কি ব্যাপার ? কোনো দরকার আছে ?”

কৃষ্ণেন্দু ওর গম্ভীর মুখটা দেখে হয়তো বুঝেছিলো খারাপ লাগাটাকে | তাই একটু নরম গলায় কিছু কথা ভেবে উত্তর দিয়েছিলো ,

———- ” কেন ? দরকার না থাকলে আসতে পারি না তোর ঘরে ?”

দীপ্তি কথাটা শুনে এবার একটু দৃঢ় গলায়ই বলেছিলো ,

———- ” না , তোমার সময় আসলে খুব দামি তো | শুধু শুধু নষ্ট করাটা ঠিক না |”

কথাটা শেষ করেই ও আবার সেই বই এর তাকে মন দিয়েছিলো | কৃষ্ণেন্দু এই মুহূর্তে ঠিক কি বলবে বুঝতে পারছিলো না! তাও কিছু কথা সাজিয়ে বলেছিলো ,

—————- ” আমি জানি তোর খারাপ লেগেছে | কাল আসলে আমার পর পর কতগুলো মিটিং ছিল ! জানি না কিভাবে ভুলে গেলাম তোর জন্মদিনটা ! সিরিয়াসলি , এখন ভেবে নিজের ওপরই নিজের রাগ হচ্ছে | এই ভুলটা যে কি করে !”

কৃষ্ণেন্দুর কথাটা এবার দীপ্তি আর শেষ হতে দিলো না | আসলে সত্যি আজ আর ভালো লাগছে না এই ছেলেটার কোনো কথা শুনতে! তাই ওকে থামিয়ে বলে উঠলো ,

————- ” দশটা পনেরো বেজে গেছে | তোমার এবার কিন্তু সত্যি লেট্ হয়ে যাবে | আজকে একজন ইনভেস্টরেরও তো আসার কথা ছিল ! ”

কৃষ্ণেন্দু এই কথাগুলোর পর খুব ভালো করে বুঝতে পারছিলো দীপ্তি ওকে এভয়েড করতে চায় আজ | তবে এটা তো কৃষ্ণেন্দু হতে দিতে পারে না | তাই এবার হঠাৎ দীপ্তির হাতটা ও খুব শক্ত করে ধরে ফেললো | তারপর আলতো স্বরে বললো , ———- ” আমাকে এভয়েড করতে চাইলেও আমি তোকে সেটা করতে দেব না , চিন্তা নেই | সে যতই রাগ থাকুক আমার ওপর ! আমি বিকেল ছটায় আজ তোকে নিতে আসবো | রেডি থাকিস | কাল জানি খুব বড়ো ভুল হয়ে গেছে একটা | কিন্তু আজকে আই প্রমিজ আমি পুরোপুরি চেষ্টা করবো সেই ভুলটাকে ঠিক করার |”

দীপ্তি এইসব কথা শুনেও কিছুতেই আর আগের মতন হতে পারছিলো না আজ| ও জানতো আসলে, ভেতর থেকে যেই তারটা কেটে গেছে , সেটাকে জোর করে জোড়া দেয়ার চেষ্টা করলেই সব ঠিক হয় না ! তাই একটু ভেবে অন্ধকার মুখেই বলেছিলো , ———- ” এইসবের কোনো দরকার নেই কৃষ্ণেন্দু | আর আমি জানি তোমার অনেক কাজ থাকে | সেইসব ফেলে একটা আনইম্পর্টেন্ট ব্যাপার নিয়ে অতো ভাবার দরকার নেই ! ”

কথাটা বলেই দীপ্তি হাতটা ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করছিলো এখন কৃষ্ণেন্দুর কাছ থেকে | কিন্তু কৃষ্ণেন্দু আগের মতনই খুব শক্তভাবে দীপ্তির হাতটা ধরে রেখেই বললো ,

———— ” আমি জানি না তুই আসবি কি না ! কিন্তু আমি আসবো আজ বিকেল ছটায় ঠিক | আর ওয়েট করবো | আমি জানি তুই আমার ওপর বেশিক্ষণ রেগে থাকতে পারবি না | তুই আর একটা চান্স আমায় ঠিকই দিবি | আমি সত্যি ওয়েট করবো , মন থেকে |”

কথাগুলো বলেই কৃষ্ণেন্দু এবার ঘরটা ফাঁকা করে চলে গেলো এই মুহূর্তে | তবে দীপ্তি ঠিক বুঝতে পারলো না কি বোঝাতে চাইলো কৃষ্ণেন্দু ! হঠাৎ এতো চেষ্টা কিসের ! ও তো বুঝেই গেছে কৃষ্ণেন্দুর কাছে ওর জায়গাটা ঠিক কতটা ! তাহলে আবার নতুন করে বোঝানোর তো দরকার নেই কিছু | এইসব ভাবনার ভিড়েই আবার এলোমেলো বইয়ের তাকে মন দিলো দীপ্তি |

তবে বেশিক্ষণ আর মনটাকে ঘুরিয়ে থাকতে পারেনি সেদিন দীপ্তি | কৃষ্ণেন্দুর কথার ওপর আজ অব্দি কোনোদিনও না বলতে পারেনি ও | হয়তো এতদিনে এটা একটা অভ্যাসে দাঁড়িয়েছে | তাই বিকেল সাড়ে পাঁচটা বাজতেই ও আলমারিটা খুলে লাল রঙের চুড়িদারটা বার করলো নিজের | কাল জন্মদিনে মা গিফ্ট করেছে এটা | তারপর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চোখে আলতো কাজল ছুঁয়ে দিলো নিজের , সঙ্গে কপালে পড়লো একটা ছোট্ট টিপ্ | তারপর লাল রঙে নিজেকে সাজিয়ে জানলার ধারে এসে দাঁড়ালো | এই জানলা দিয়ে সামনের রাস্তাটা অনেকদূর অব্দি দেখা যায় | তবে সেটা এখন ফাঁকাই | ওর যার জন্য অপেক্ষা , সে আসেনি এখনো | কে জানে ! হয়তো আবারও ভুলে গেছে ! কাজের ভিড়ে হারিয়ে গেছে কোথাও আবার কৃষ্ণেন্দু | এ আর নতুন কি ! কথাটা ভেবে ও ঘড়ির দিকে তাকালো | ছটা বেজে পাঁচ মিনিট | ভেবে একটা দীর্ঘ্যশ্বাস চলে এলো আপনাআপনি | কেন যে বোকার মতো রেডি হয়ে অপেক্ষা করছে ! কথাটা ভেবেই ও জানলা থেকে সরে দাঁড়াতে যাবে তখনই রাস্তায় সেই চেনা গাড়ির আওয়াজ | দীপ্তি সঙ্গে সঙ্গে এবার চোখটা জানলার দিকে ঘুরিয়ে অবাক ! কৃষ্ণেন্দু সত্যি এসেছে ওর জন্য ! হঠাৎ কথাটা ভেবেই আনমনে একটা হাসি চলে এলো মুখে | ও আর নিজের ঘরে দাঁড়িয়ে না থেকে এবার বাইরে বেড়িয়ে এলো , কৃষ্ণেন্দুর সামনে | কৃষ্ণেন্দুর মুখেও এখন চওড়া হাসি | ও গাড়ির সামনের দরজাটা খুলে দিলো দীপ্তির জন্য |

সেদিন এরপর এলোমেলো রাস্তা পেরিয়ে ওরা এসে হাজির হয়েছিল একটা রুফটপ রেস্টুরেন্টে | কৃষ্ণেন্দু প্রত্যেকবারের মতন এইবারও দীপ্তির জন্য সেই চকলেট কেকটাই অর্ডার করেছিল | দীপ্তির যেন স্বপ্নের মতন লাগছিলো ব্যাপারটা | তাহলে কি ও এতদিন ধরে যা ভাবছিলো সেটা ভুল ! কাজের চাপের জন্য কৃষ্ণেন্দু দূরে থাকতো ! আসলে মন থেকে দূরে যায়নি কখনো ! প্রশ্নগুলো আপনাআপনি এসে ভিড় করলো আজ এই মুহূর্তে | তবে আরো একটা ব্যাপার দেখে দীপ্তি অবাক হয়েছিল সেইদিন | কৃষ্ণেন্দুর ফোনটা আজ একবারও বেজে ওঠেনি এই রেস্টুরেন্টে আসার পর থেকে | তাই দীপ্তি নিজের কৌতূহলকে আর আটকে না রেখে জিজ্ঞেস করেই ফেললো অবশেষে , ———— ” কি হয়েছে বলো তো আজ ? একবারও মোবাইলটা বেজে উঠলো না যে এতক্ষণে ! অফিস থেকে তো এর মধ্যে বেশ কয়েকবার ফোন এসে যাওয়ার কথা !”

দীপ্তির প্রশ্নটা শুনে কৃষ্ণেন্দু এবার হেসে ফেললো | তারপর মোবাইলটা ওর সামনে পকেট থেকে বার করে টেবিলে রেখে বলে উঠলো , ———- ” কারণ মোবাইলটা সুইচ অফ তাই | ভুল ঠিক করতে এসেছি , মোবাইলকে এর মধ্যে আনলে চলবে না কি !”

কথাটা শুনে দীপ্তির মুখে আলতো হাসি | ঠিক কি উত্তর দেবে বুঝতে পারছিলো না এখন | কৃষ্ণেন্দু নিজের মোবাইল সুইচ অফ করেছে বিশ্বাস হচ্ছে না ঠিক ! যা কাজ পাগল ছেলে! যাই হোক , এইসব ভাবনার ভিড়েই সেদিন সন্ধ্যেটা কেটে গেছিলো ওদের | তবে এরপর কৃষ্ণেন্দু দীপ্তিকে আর একটু অবাক করে দিয়ে বাড়ির দিকে গাড়িটা না ঘুরিয়ে অন্য একটা রাস্তায় নিয়ে গিয়েছিলো | তারপর একটা বাংলো প্যাটার্নের বাড়ির সামনে এসে দাঁড় করিয়েছিলো গাড়িটা | দীপ্তি ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারেনি তখনও ! ও একটা প্রশ্নবোধক চিহ্নের মতন মুখ করেই বলেছিলো ,

———— ” এখানে কেন এলাম আমরা ? এটা কার বাড়ি ?”

কৃষ্ণেন্দু কথাটাকে ঠিক পাত্তা না দিয়ে বলে উঠেছিল এবার , ———– ” সেটা পরে জানতে পারবি | আগে ভেতরে তো চল |”

তারপর সময় নিয়ে ওকে ফাঁকা বাড়িটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখিয়েছিলো | ড্রইং রুম , স্টাডি রুম , ছটা বেড রুম , অনেকগুলো সুন্দর করে সাজানো ব্যালকনি , ছাদের ওপরে ছোট্ট একটা সুইমিং পুল , কি নেই এই বাড়িতে ! দীপ্তি তো মুগ্ধ দৃষ্টিতেই দেখছিলো সবটা | তবে বুঝতে পারছিলো না এটা কার বাড়ি ! আর এই বাড়িতে কোনো লোক নেই কেন ! তবে কৃষ্ণেন্দু আর বেশিক্ষণ সাসপেন্স না রেখে অবশেষে বলে উঠেছিল , ———— ” তোকে অনেকদিন আগে বলতাম না; আমার একটা ড্রিম হাউজ চাই | কাল ফাইনালি সেটা নিজের হলো | এই বাড়িটা আমি কিনেছি |”

কথাটা শুনে দীপ্তি এই মুহূর্তে কেমন যেন থমকে গেলো হঠাৎ ! সন্ধ্যে থেকে যেই ভালো লাগা গুলো এসে জমেছিলো মনে , কয়েক সেকেন্ডের ভিড়ে সেগুলো সব হারিয়ে গেলো কোথায় ! কৃষ্ণেন্দুর এই বাড়িটা ! তার মানে এরপর আর ওদের সঙ্গে ওদের ওই ছোট্ট বাড়িটাতে কৃষ্ণেন্দু থাকবে না ! কথাটা না চাইতেও মন বলে উঠলো ওর | কিছুতেই যেন এই সময়ে ও খুব খুশি হতে পারলো না কৃষ্ণেন্দুর সামনে | তা ও জোর করে অল্প হাসার চেষ্টা করে বললো , ———— ” বাহ্ , খুব ভালো | তাহলে কবে শিফ্ট করছো এখানে ?”

কৃষ্ণেন্দু এই প্রশ্নটায় এবার একটু অবাক হয়েই বলে উঠলো , ———- ” শিফ্ট করছো মানে ! জিজ্ঞেস কর আমরা কবে শিফ্ট করছি এখানে ?”

দীপ্তি এই কথাটার কোনো মানে খুঁজে না পেয়েই বললো এখন , ———– ” আমরা ! কিসব যে বলো না তুমি ! এটা হয় না | যাইহোক , তবে মাঝে মাঝে নিশ্চয়ই আসবো | যোগাযোগ তো থাকবেই |”

কথাটা শেষ হতেই কৃষ্ণেন্দু এবার একটু রেগেই বললো , ———— ” কেন ! না হওয়ার কি আছে ! এতদিন আমি তোদের বাড়ি থাকিনি ? তাহলে তুই আলো মা কেন এখানে থাকতে পারবি না ?”

দীপ্তি এর ঠিক কি উত্তর দেবে বুঝতে পারলো না | তা ও একটু জোর দিয়ে বলে উঠলো আরেকবার , ——— ” এটা হয় না কৃষ্ণেন্দু | যাইহোক অনেক দেরি হয়ে গেছে | বাড়ি ফিরতে হবে এখন | মা নিশ্চয়ই চিন্তা করছে আমাদের জন্য |”

কথাটা শেষ করেই দীপ্তি এবার চলে যেতে যাচ্ছিলো কৃষ্ণেন্দুর কাছ থেকে , কিন্তু পারলো না | কারণ উল্টো দিকের মানুষটা শক্ত করে ওর হাতটা ধরে ফেললো হঠাৎ | তারপর ওর মনে থাকা অনেকদিনের না বলা কথাগুলো বলে ফেললো একদম বিনা নোটিশে | কৃষ্ণেন্দু বেশ দৃঢ় গলায়ই বললো , ———- ” আর যদি বলি তোকে ভালোবাসি আমি | এতদিন ধরে এতো কাজ করছিলাম এই বাড়িটা কিনবো বলে ! যাতে আমরা একসঙ্গে এখানে থাকতে পারি ! তাহলেও থাকবি না এই বাড়িতে ?”

দীপ্তির কথাগুলো শুনে কেমন এলোমেলো হয়ে গেল কয়েক সেকেন্ড| এইসব কি বললো কৃষ্ণেন্দু ! ভালোবাসে ওকে ! কথাটা ভেবেই ও অবাক চোখে ছেলেটার দিকে তাকালো , আর তখনও কৃষ্ণেন্দু বলেই চললো ,

———— ” আমি জানি আমি এই কমাস তোকে একদম সময় দিতে পারিনি | হয়তো তুই এখন এটাই ভাবিস যে আমি কাজ ছাড়া কিছুই বুঝি না আর জীবনে | কিন্তু আসলে আমি এইসবই করছিলাম আমাদের জন্য | আমি সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম তোকে এই বাড়িটা | আমি জানি তুইও আমার জন্য ফিল করিস | কখনো মুখে বলিসনি | কিন্তু কিছু না বলে চুপচাপ সব সময়ই বুঝিয়ে দিয়েছিস | যাইহোক , আমরা দুজনে কি নতুন একটা শুরু করতে পারি ? আমাকে তোর লাইফে একটা পার্মানেন্ট জায়গা দিবি প্লিজ ?”

কৃষ্ণেন্দু কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে গেলো এই মুহূর্তে | তবে দীপ্তি যেন কেমন নির্বাকই রয়ে গেলো ওর সামনে | এটা সত্যি না স্বপ্ন ঠিক বুঝতে পারলো না ! হঠাৎ একটা রুক্ষ বাস্তবে ভরা সময় পেরিয়ে এক গোছা রূপকথা এসে ধরা দিল ওর সামনে , যেটা ভাবেনি কখনো | তাই নিস্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কৃষ্ণেন্দুর দিকে |

না , এরপর আর ওই বাড়িতে থাকতে না বলেনি দীপ্তি | কেউ যদি এতো মন থেকে ওকে একটা ঠিকানা দিতে চায় নিজের মনে , তাহলে কি আর না বলা যায় ! তাই শক্ত করে কৃষ্ণেন্দুকে আঁকড়ে ধরেছিলো ও , এই প্রথমবার , নিজের সবটা দিয়ে |
চলবে