অন্যরকম ভালোবাসা ২ পর্ব-২০+২১

0
775

#অন্যরকম_ভালোবাসা 💓 [২]
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব:: ২০

বর্ষাকাল পেরিয়ে গেছে বেশ কিছুদিন পূর্বে। মেঘের খেলা নেই বললেই চলে। আকাশ এখন একদম পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন। শরৎকালের হাওয়া বইছে চারদিকে। রাতের আকাশ জুড়ে থালা সমপরিমাণ বড় চাঁদ উঠেছে। বাইরে মেঘের দেখা না থাকলেও ইশরার ললাটে বিন্দু বিন্দু বৃষ্টি কণার মতো জলকণা। চুলোর আঁচে ঘেমে উঠেছে সে। সবজি কাঁটার ফাঁকে ফাঁকে সেই ঘামগুলো মুছতে দেখা যাচ্ছে মাঝে মাঝে তাকে। হঠাৎ শরীরটা যেন আরো উষ্ণতার ছোঁয়া খেয়ে গেল। অতি পরিচিত সেই শিহরণ। স্মিত হাঁসলো ইশরা। তার আয়ান এসেছে। ঘামে লেপ্টে থাকা চুলগুলো পেছনে হেলিয়ে দিল। কোমড় জড়িয়ে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়া কালো কুচকুচে চুলগুলো হাত খোঁপা করে দিল সে। ওরনার এক প্রান্ত দিয়ে ললাটে জমে থাকা পানিগুলো মুছে দিল। পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল..

— “কি রান্না করছ ইশুপাখি?”

সোজাসাপ্টা উত্তর দিলো ইশরা.. — “দেখতেই তো পাচ্ছিস কি রান্না..

পরের শব্দগুলো উচ্চারণ করার আগেই মুখে আঙ্গুল দিয়ে থামিয়ে দিল আয়ান। কাঁধে নিজের চিবুক ঠেকিয়ে বলল.. — “এখন থেকে নো তুই, অনলি তুমি! বুঝলে পারছিস? এবার উত্তর দে..

ইশরা সবজি কাঁটা রেখে আয়ানের গোছানো চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলল..

— “হম বুঝলে পেরেছি! (একটু থেমে আবার) সবজি তরকারি রান্না করছি।”

ছেড়ে দিলো ইশরাকে। এগিয়ে গেল ফ্রিজের দিকে। কয়েকটা ফল বের করে ধুয়ে নিলো। সুন্দর করে সাজিয়ে নিল। তাকের উপর বসে কামড় বসালো সেগুলোতে। শূন্যতায় পা দুলালো কিছুক্ষণ। ইশরা শান্তমণে নিজের কাজ করে চলেছে। নিরবতায় কেটে গেল বেশ কিছুক্ষণ। অতঃপর মুখ খুললো আয়ান। চিবুতে চিবুতে বলল..

— “আঙ্কেলের অবস্থা এখন কেমন ইশু। আমি তোদের নিয়ে যেতে এসেছি! কালকে তনুকে দেখতে আসবে!”

তপ্ত শ্বাস ত্যাগ করলো ইশরা। সবজি তরকারি ঢেকে দিলো সে। চুলোর আঁচ-টা লো হিটে রেখে আয়ানের দিকে ফিরলো। মলিন কন্ঠে বলল..

— “১৫ দিন হয়েছে হসপিটাল থেকে বাড়িতে এনেছি। অবস্থা আগের মতোই, একটুও উন্নতি হয়েছে।”

নিরবতায় ছেড়ে গেল দুজনের মাঝে। থেমে গেল শব্দ গুলো। একহাত টেনে ইশরাকে বুকের সাথে পেঁচিয়ে নিল আয়ান। দুগালে হাত রেখে বলল..

— “চিন্তা করো না, আঙ্কেল খুব শ্রীঘ্রই সুস্থ হয়ে যাবে। আর আমি আমার ইশুপাখিকে মনের পাখি করে নিয়ে যাবো।”

মাথা নুইয়ে নিল ইশরা। দুজনের মাঝে ঘটল তৃতীয় ব্যক্তির আগমন। কিছুটা দ্রুত নিয়ে সরে দাঁড়াল সে। তমোনা এসেছে। আয়ানকে ইশরার পাশে কিচেনে দেখে কিছুটা অবাক হলেন তিনি। কৌতূহলী চোখে একবার ইশরা দিকে তাকিয়ে আয়ানের দিকে পর্যবেক্ষণ করলো সে। নিজের ভেতরের কৌতূহল মেটাতে প্রশ্ন ছুঁড়ল ..

— “আয়ান, এতো রাতে তুমি এখানে?”

এবার তাক থেকে নেমে দাঁড়ালো আয়ান।‌ ইতোহস্ত বোধ নিয়ে বলতে শুরু করল..

— “আসলে আন্টি, আমি আপনাদের নিয়ে যেতে এসেছি। দুয়ানের বাবা বিয়ের জন্য তাড়া দিচ্ছেন। বাবা আর কিছুদিন সময় চেয়েছিলেন। যাতে আঙ্কেল সুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু..

— “তুমি ইশুকে নিয়ে যাও। তোমার শ্বশুর মশাইয়ের এমন অবস্থার আমি কিংবা সে যাচ্ছি না।‌ ”

বাঁধ সাধল ইশরা। যে গেলে রান্না কে করবে? তার মা রান্না করলে বাবার কাছে কে থাকবে। মেয়ে হয়ে নিজের দায়িত্ব অবহেলা করতে পারছে না সে। নত সুরে বলল..– “মা আমি যাবো না।”
মেয়ে মন বুঝতে দ্বি-মুহুর্ত সময় লাগলো না তমোনার। ফিচেল হাঁসলেন তিনি। মেয়ের পাশে দাঁড়িয়ে শব্দহীন কাঁধে চপল মারলেন তিনি। বললেন..

— “চিন্তা করিস না। পাশের বাসার নিরা কাল থেকে কাজে আসবে। একটু ঘুরে আয়, ভালো লাগবে।”

তমোনা চলে গেলেন। ইশরা রান্নার কাজে মন দিলো।

______________
রাতের আকাশ কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। গাড়িতে নিরব হয়ে বসে আছে দুই মানব। কারো মুখে কথা নেই। গাড়ি চলার শো শো আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। আয়ান চেয়েও ইশরার মুখ থেকে কথায় বের করতে পারেনি। এক হাত ইশরার হাতের মুঠোয় বন্দী করে নিল। ড্রাইভ করতে করতে বলল.. –” ইশু তুমি কি আমার সাথে যেতে চাইছো না।”
প্রতিউত্তর পাওয়া গেল না বিপরীত মানুষটির থেকে। ঠোঁট কামড়ালো আয়ান। আঙুলের ভাঁজে বন্দী হাতটা ছেড়ে দিল। গাড়ি থামিয়ে দিল। জানালার কাচ তুলে দিল। দৃষ্টি সামনের কাঁচ থেকে বাইরের অন্ধকারে বন্দী করে বলল..

— “আমি জানি ইশু, বাবার জন্য তুই সব করতে পারিস। কিন্তু আমার জন্য তার তিল পরিমাণও করতে পারিস না। কই আমাকে যখন বাড়িতে রিলিজ করা হয়, তখন তুই একবারও আসিস নি। আঙ্কেল অসুস্থ মেনে নিয়েছি। ফোন করলে ব্যস্ত থাকতিস তুই। আমি তাও মেনে নিয়েছি। শুধুমাত্র একটা দিন তোর সাথে কাটাতে চেয়েছি। সেটা তো আমার জন্য নয়, তনু জন্য। তাতেও তোর আপত্তি। আচ্ছা তোর প্রতি কি আমার একটুও অধিকার নেই। সামান্য আবদার করতে পারি না। আমি বুঝতে পারছি না। কোনটা আমার করা উচিত। একটা কাজ কর, আমাকে জানিয়ে দে,
আমি তার থেকে বেশি অধিকার দেখাতে আসবো না।”

অনুসূচনায় পূর্ণ হয়ে উঠল ইশরা। আয়ানের অভিযোগ এক বিন্দুও মিথ্যা নয়। একজনের প্রতি দায়িত্ব পালন করছে গিয়ে সে আরেকজনকে অবহেলা করছে। ওরনার এক প্রান্ত আঙুলের ডগায় পেঁচিয়ে নিল। আমতা আমতা করে বলল..– “স্যরি!”

আয়ানও চুপ হয়ে গেল। ইশরার মন ভারী হয়ে এলো। বর্তমানে কি করা উচিত ভুলে গেছে সে। কিন্তু আয়ানের মুখ ভাড় করে রাখাটা পছন্দ হলো না তার। নিজের সিট ছেড়ে দিয়ে আয়ানের কোলে বসে পড়লো। গলা জড়িয়ে ধরে থুতনিতে অধর ছুয়ে দিল। ঠোঁট উল্টে বলল..– “এখনও রাগ করে থাকবে?”
এবারও প্রতিউত্তর এলো না। কিছু গভীর ভাবে ভাবল সে। একটু ঝুঁকে পেছনের সিট থেকে খাবারের ক্যারিটা সামনে নিয়ে এলো। খাবারের বাটি বের করে নিল। জানালার কাঁচ খুলে হাত ধুয়ে নিল সে। খাবার মেখে এগিয়ে দিলো আয়ানের দিকে। আয়ান নিলো না। একবারও তাকালো না ইশরার দিকে।

এবার মুখ ভাড় হয়ে এলো তার। তর্জনীটা পেটের উপর রেখে আস্তে আস্তে উপরে বুক নিয়ে এলো। বলল..

— “শুনেছি পেট ফাঁকা থাকলে কিছু ভালো লাগে না। পেট ভর্তি থাকলে বুক পর্যন্ত পৌঁছায়। সেখানে এটা তোমার বউয়ের রান্না। তাও আবার প্রথমবার খাবে। এটা খেলে আর রাগ করে থাকতে পারবে না।”

তবুও মুখ তুললো না আয়ান। বিরাগী হলো ইশরা। লোকমা বড় করে তুলে নিলো। একহাতে আয়ানের গাল শক্ত করে চেপে খাবারগুলো মুখে পুড়ে দিল। হতবাক হয়ে অবলোকন করলো আয়ান। খাবার চিবুলো না। কদাচিৎ ফাঁক হয়ে এলো ঠোঁট যুগল। এবার গাল ছেড়ে ঠোঁট জোড়া শক্ত করে চেপে ধরলো ইশরা। নয়নের ইশারায় খেতে বলল। কোনোরকম চিবিয়ে গিলে ফেললো সে। আয়ানের খাওয়া শেষ করতে হাত সরিয়ে নিল ইশরা। পানির বোতল এগিয়ে দিল। আয়ান বোতল নিয়ে এক ঢোক পানি পান করলো। হাতের আঙুলে নিয়ে মুখ মুছে নিলো। সন্দিহান স্বরে বলল..
— “এভাবে কাউকে কখনো খাওয়াতে দেখেছো?”

— “তুমি তো আমার উপর রেগে ছিলে তাই!”

— “তার মানে আমি এভাবে রাগলে খাইয়ে দিয়ে আমার রাগ ভাঙাবে। নো প্রবলেম। এখন থেকে কারণে অকারণে রেগে থাকবে।” (ভ্রু নাচিয়ে আয়ান)

–” না!” সোজাসাপ্টা উত্তর দিলো ইশরা।

— “ইশুপাখি তুমি তো আমার রাগ ভাঙিয়ে দিলে। এবার তোমাকে কি দেওয়া যায়।”

গাড়ির ভেতরে রক্ষিত ড্রয়ার থেকে এক গুচ্ছ কদম ফুল বের করে ইশরা হাতে দিল। একদম শুকিয়ে গেছে। পাপড়িগুলো হাতের স্পর্শ পেতেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল একে অপরের থেকে। ইশরার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠল।

আয়ান অপলোক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার প্রিয়শ্রীর দিকে। বলল..

— “এই কদম গুচ্ছ অনেক আগে তোর জন্য এনেছিলাম। দিবো, দিবো করে দেওয়া হয়নি। একদিকে ভালোই হয়েছে। এখন বর্ষা নেই শরৎ ঋতু। অনেক স্পেশাল।”

— “তাহলে হেমন্ত ঋতুকে কাশফুল দিবি। (একটু ভেবে আবার) আচ্ছা কাশফুল তো ঝড়ে যায়। দিবি কিভাবে?”

— “সেটা তোকে ভাবতে হবে না।”
ইশরার নাক টেনে ড্রাইভে মন স্থাপন করলো আয়ান। ইশরা কদম গুচ্ছ একহাতে শক্ত করে মুঠো করে নিলো। নিজের আশা পূর্ন মাথাটা আয়ানের কাঁধে হেলিয়ে দিল। আয়ানের বাহু পেঁচিয়ে নয়ন গ্ৰথণ করে নিল। তার কাছে এর চেয়ে সুন্দর মুহুর্তে আর নেই। না কখনো হওয়া সম্ভব।

(চলবে.. ইনশাআল্লাহ)

#অন্যরকম_ভালোবাসা 💓 [২]
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব:: ২১

কালো রঙের জামদানি শাড়িতে সেজেছে ইশরা। কালো মাঝে মোটা লাল পাড়। তার সাথে যোগ দিয়ে সেজেছে আহম্মেদ বাড়ির সকলে। ইশরা তনুকে সাজিয়ে কিচেনে প্রবেশ করল। তিথি অতিথির আপ্পায়নের ব্যবস্থা করছে। চারদিকে নিখুঁত চোখে পর্যবেক্ষণ করলো সে। সবকিছু প্রস্তুত থাকলেও শরবতের ব্যবস্থা করা নেই। শাড়ির আঁচলটা কোমড়ে পেঁচিয়ে লেগে পড়লো ইশরা। আঁটকে দিলো তিথি। ইশরার হাত থেকে চিনির কৌটা নিয়ে বললেন..

— “ইশু তুমি তনুর কাছে যাও। ওদিকে, কার কি প্রয়োজন হয়, সেটা দেখ। এদিকটা আমি দেখছি‌‌।”

ইশরা বারণ শুনলো না। তিথির হাত থেকে চিনির কৌটা ফিরিয়ে নিয়ে নিল। তিথির মাথা থেকে পা অবধি পর্যবেক্ষণ করে বলল..

— “মা আপনি গিয়ে নিজের জামা কাপড় পাল্টে নিন। সব-তো তৈরি করে রেখেছেন। বাকিটা আমি ম্যানেজ করে নিলো।”

তিথি তাতে রাজি হলেন না। ইশরাও দমে গেল না। হাত ধরে টেনে বের করে দিল। ইশরার সাথে না পেরে বেরিয়ে গেলেন তিথি।

বাইরে দাঁড়িয়ে উঁকি ঝুঁকি দিলো আয়ান। নজরে এলো না তিথিকে। সময় অবিলম্ব না করে ঢুকে গেল কিচেনে। দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইল ইশরার দিকে। আজ কালো শাড়িতে হুর পরী লাগছে তাকে। কাজল রাঙা নয়ন, গোলাপি রঙের অধর জোড়া। শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুঁজে রাখা। ফলস্বরূপ কোমরের বেশ কিছুটা অংশ উন্নুক্ত হয়ে আছে। দৃশ্যমান হলো অনেকটা। ডানহাত বুকের বাম পাশে রেখে বলল..– “পাক্কা গৃহিণী। আমার মনের রানী। পারফেক্ট ম্যাচ।”

পিছনে ফিরল ইশরা। ভ্রু কুঁচকালো সে‌। কোমর থেকে শাড়ি খুলে নিল। কোমড়ে হাত রেখে বলল..– কি চাই।
আয়ান মাথা নাড়িয়ে না বোধক সায় দিলো সে। বিনিময়ে বাক্য উচ্চারণ করলো না ইশরা। গ্লাসে শরবত ঢেলে, ঢেকে রাখল। পা বাড়ালো রুমের দিকে। কিন্তু তার যাত্রা সফল হলো না।‌ আয়ান শাড়ির আঁচল আঙুলে পেঁচিয়ে নিলো। সাথে সাথে কান পড়লো শাড়িতে। থেমে গেল চরণ। পিন বিহীন শাড়িটা খসে পড়ার চেষ্টা করতেই হাত রাখল বুকে ইশরা। পড়লো না শাড়িটা। তবে আরো জোরে টান পড়লো। দেয়ালের সাথে মিশিয়ে নিল ইশরাকে। মুখশ্রীতে উষ্ণ গরম ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিল চুলগুলো।

প্রবেশ করলো রিহু। কান ধরে টেনে নিয়ে এলো আয়ানকে। হাঁসি দিয়ে বলল..

— “বাড়ির এতোবড় রুম থাকতে কিচেনে এসেছিস রোমান্স করতে। হাউ ফানি তাই না,”

লজ্জায় রাঙা হয়ে এলো ইশরার মুখ। আশে পাশে না তাকিয়ে এক ছুটে বেরিয়ে গেল সে। আয়ান সরু চোখে রিহুর দিকে তাকালো। মুখ ছোট করে বলল..

— “দিদা, আসার আর কোনো সময় পেলে না। সবটার বারোটা বাজিয়ে দিয়ে, তবে ছাড়লে।”

সাথে সাথে কান টেনে ধরলেন রিহু। মজার ছলে বলল..– “দাদু ভাই, এতোই যখন পারো সেটা রুমের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই হতো।”

ধ্যাত বলে কিচেন ত্যাগ করলো আয়ান। পেছন থেকে নজর কাটলেন রিহু। এরা একে অপরকে ছাড়া অপরিপূরক।

___________________
খাবার সাজিয়ে একে একে‌ পরিবর্তন করা হলো। তদানীং মাথায় এক হাত আঁচল টেনে, হাতে শরবতের ট্রে নিয়ে প্রবেশ করলো তনয়া। তার ধরে ধরে নিয়ে এলো ইশরা। সবার সামনের সিঙ্গেল সোফার বসিয়ে দিল তনয়াকে। নিজে দখল করে নিল দুয়ানের পাশের সিট। বেস্ট ফ্রেন্ড বলে কথা একটু সাহায্য তো তার প্রাপ্ত। কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলল..

— “তলে তলে বিয়ে পর্যন্ত গড়িয়ে গেলো। আর তুই আমাকে কিছু জানাসনি। একদম এইসব মিঠে যাক, তোকে পানিতে যদি না চুবিয়েছি।”

একটুকু বলেই লোক দেখানো হাসলো ইশরা। দুয়ান যতোটুকু নার্ভাস ছিল, এখন আরো নার্ভাস হয়ে গেল। তনয়া একে একে সবাইকে শরবত পরিবেশন করল। দুয়ান খাওয়ার উপযুক্ত নেই। তার হাত রীতিমত কাঁপছে।

বেশ কিছুক্ষণ সময় পেরিয়ে গেছে। তাদের তনয়াকে পছন্দ হয়েছে। ছোট একটা রিং পড়িয়ে দিয়েছে তনয়ার হাতে। সব ঠিকই চলছিলো। কিন্তু মাঝপথে গন্ডগোল করে দিল দুয়ানের বাবা। ইশরা আর দুয়ানের দিকে তাকিয়ে বললেন..

— “আমার ইচ্ছে ছিল, ইশরাকে আমার ছেলের বউ করব। কিন্তু সেটা আর হলো কই, তার আগেই আয়ান বিয়ে করে নিল। (একটু থেমে আবার)
আয়ানও আমার ছেলের মতো। তাই ইশরাও আমার বউমা।”

বিনিময়ে সবাই একগাল হাসি উপহার দিলো। কিন্তু হাসি নেই আয়ানের মুখে। এগিয়ে গেল ইশরার দিকে। মৃদু ঝুঁকে গেল ইশরার দিকে। দাঁতে দাঁত চেপে বলল..
— “এখনে তোমার কাজ শেষ, ঘরে গিয়ে চুপচাপ পড়তে বসো, নাহলে বসে থাকো। আমি বলা না পর্যন্ত বের হবে না।”

আয়ানের কথার মানে বুঝতে ব্যর্থ হলো ইশরা। কৌতূহলী চোখে অবলোকন করলো আয়ানকে। আয়ান বেশ রেগে আছে তাকে দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। চোখের ইশারায় রুমে যেতে বলল তাকে। বাক্য উচ্চারণ করলো না সে। উঠে দাঁড়ালো। ইশরা উঠতেই আয়ান দখল করে নিল জায়গাটা। আয়ানকে বকতে বকতে রুমের দিকে পা বাড়ালো সে। হঠাৎ আয়ানের এমন ব্যবহার ভালো লাগলো না তার কাছে। কি হতো যদি আরেকটু সে ওখানে থাকতো। একদম সে আয়ানের সাথে কথায় বলবে না।

________________
রাতটি ছিল অমাবস্যা রাত। চন্দ্রের দেখা নেই। অন্ধকার চারদিকে। সেই অন্ধকারের মাঝে বেলকেনিতে বসে আছে ইশরা। তার মন অন্ধকারের ন্যায় ভার করে আছে। অতিথি বিধেয় হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগে। আয়ান এসে দাঁড়ালো তার পাশে। মুখ ফিরিয়ে নিলো‌ সে। দুরত্ব নিয়ে দাঁড়ালো দুজনের মাঝে। আয়ান নিমিষেই ঘুচিয়ে নিলো সেই দুরত্ব। গাঁ ঘেঁষে দাঁড়ালো তার পাশে। ইশরার সরে দাঁড়ালো খানিকটা। আয়ান এবার পূর্বের ন্যায় কাজ করলো। ইশরার ভার করে রাখা মুখটা নিজের দিকে ফিরিয়ে নিল। আদুরে গলায় বলল..

— “কি হয়েছে ইশুপাখি। এতোটা রাগ করে আছো কেন?”

ইশরা জবার দিলো না। আয়ানকে ছাড়িয়ে রুমের দিকে হাটা দিল। আয়ান মাঝপথে থামিয়ে দিলো তাকে। সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। বলল..

— “আমার ইশুপাখি আমার উপর রাগ করছে। আমি তাকে ঘরে এসে বসে থাকতে বলেছি তাই। কি করবো বলো, এরা যে রীতিমত আমার বউকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলো।”

আয়ানের বাচ্চা বাচ্চা মুখ দেখে প্রচুর হাসি পেল ইশরার। কিন্তু হাসতে দেখা গেল না তাকে। ঠোঁট কামড়ে অভিমানের ভান ধরল। বলল..– “আমি যতোদিন তোর সাথে ছিলাম, ততদিন তুই এমন করেছিস। একটা দিনও শান্তিতে থাকতে দিস নি। থাকবো না আমি তোর সাথে।”

নাকে কান্না জুড়ে দিলো ইশরা। আয়ানের চোখ চড়কগাছ। ইশরার ঝুঁকে থাকা হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল..

— “আজকের কষ্ট পাওয়া দিনটা না-হয় রঙে রঙিন করে দিলাম। স্বরণীয় করে রাখলাম স্মৃতির পাতায়।”

ম-মা, আর উচ্চারণ করতে পারল না ইশরা। অধর জোড়া বন্দী হলো অন্যকারো উষ্ণময় ছোঁয়ায়। শিহরণ ছড়িয়ে গেল সারা দেহে। মৃদু কেঁপে কেঁপে উঠলো সে। আবেশে গ্ৰথণ করে নিল লোচন যুগল। বেশ কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরে ছেড়ে দাঁড়ালো আয়ান। লজ্জায় মাথা নিচু করে নিল ইশরা। একদম পায়ের আঙুলের দিকে। দুজনের মাঝে দুরত্ব ঘুচে স্বল্প ঝুঁকে কোলে তুলে নিলো ইশরাকে। পা বাড়ালো রুমের দিকে। ললাটে ললাট মেশালো আয়ান। নেশাগ্রস্ত দের মতো বলল..

— “ভালোবাসা কি? জানা নেই আমার। আমার কাছে ভালোবাসা মানে তুই, তোকে ছাড়া কিছু কল্পনা করতে পারি না। নিজেকে কেমন শূন্য শূন্য মনে হয়। অপূর্ণ লাগে নিজেকে। নিজেকে পূর্ণতা দিতে তোকে আমার চাই‌। খুব কাছে চাই।”

ইশরার লজ্জার্থ মুখটা আয়ানের বক্ষে আড়াল করে নিল। সেও চাই এই মানুষটিকে‌। খুব কাছে চায়।
থমকে গেল সময়। নিভে গেল আলো। পাখিরা উড়ে গেল অজানায়। তারা-রা নিঃস্ব হয়ে গেল চাঁদ বিহীন আকাশে।

(চলবে.. ইনশাআল্লাহ)