অপ্রিয় মাস্টার পর্ব-১৪+১৫

0
190

#অপ্রিয়_মাস্টার
পার্ট [১৪]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম

কলেজ ক্যাম্পাসে কান ধরে মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে, কন্ঠ,রিয়া,সান,সোহা,তারিফ এবং তাহিয়া।একে অপরকে দেখেই চলেছে, ওদের ঠিক সামনে বুকে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে তূর্য। ওনার পিছনে আছে প্রিন্সপাল স্যার। বারংবার তূর্য কে দেখছে এবং শুকনো ঢুক গিলছে সে,তার- ই মধ্যে মুখে এক গাদা রং লেগে থাকার কারণে হাঁচি আসছে।
” হাচ্ছু।”

শব্দ করে হাঁচি দেয় কন্ঠ, কিন্তু তাতে থমথমে মুখ খানি তূর্যের যেনো আরও থমথমে হয়ে যায়।
কিয়ৎক্ষণ আগেই লাস্ট ইয়ারের রেক ডে উপলক্ষে অনুষ্ঠান হচ্ছিল,সেখানে কন্ঠ এবং তাদের বন্ধু মহলের যাওয়ার তীব্র ইচ্ছা।সেই সুবাদে সবাই মুখে রং লাগিয়ে হলে প্রবেশ করে।
সবাই বেশ হই হুল্লোড় করতে ব্যস্ত,গানের তালে নাচছে সবাই। কন্ঠ,সান,তারিফ,রিয়া,সোহা,তাহিয়া নিজেদের মত চিৎকার করে গাইছে।
” ডিসকো দিবানি আহা ওহো।
ডিসকো দিবানি আহা ওহো।

ওদের মাঝে হঠাৎ এক মেয়ে এসে হাত ধরে টান দেয় কন্ঠ কে।
” হেই তুমি কে? তোমাকে তো চিনলাম না?”

কন্ঠ মুখ ফসকে বলে উঠে।
” আরে আমি কন্ঠ, ফাস্ট ইয়ারের।”
” কীই?”

খানিকটা চিৎকার সহকারে বলে উঠে মেয়েটা, এরপর পরেই প্রিন্সিপাল কে জানানো হয় এসব কথা।যার দরুন প্রিন্সিপাল স্যার ডেকে পাঠায় তূর্য কে।
” তূর্য তোমার ওয়াইফ কী করছে এসব?যাই হোক তুমি তো আমার ফ্রেন্ডের ছেলে,তাই সবার আগে বিষয়টি তোমাকে জানানো উচিত বলে মনে করলাম।

তূর্য কিছুই বলল না কিন্তু খুব বড় স্ট্যাপ নিল, সবার সামনে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখলো তাদের।
কন্ঠ বেশ বিরক্ত হয়, কারণ একটা অনুষ্ঠানে অংশ নিলে বড় কী এমন ক্ষতি হবে? আশ্চর্য!

তারিফের দিকে সবাই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নি’ক্ষে’প করছে কারণ ওর জন্যেই তো এমন বাজে একটা অবস্থায়
,তারিফ নিজেও বেশ বিরক্ত। অতঃপর কন্ঠের কানে ফিসফিস করে বলে উঠলো।
” তোর জামাই আমাগো ই’জ্জ’ত খাইয়া দিলো।”

কন্ঠ বেশ কাঠ কাঠ গলায় আওড়াল।
” একবার এখানে থেকে বের হই তার পর তোর ই’জ্জ’ত বাকিরা খেয়ে দিব।”

শুকনো ঢুক গিলে নেয় তারিফ, অতঃপর তাদের পুরোটা দিন মাঠে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, ধুলোবালি সবটাতে মাখো মাখো অবস্থা। এদিকে ধুলোবালিতে বেশ সমস্যা হয় কন্ঠের,সে বারংবার হাঁচি দিচ্ছে। এটা দূরে দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করেছে তূর্য, কিন্তু তবুও যেন তার মন গলেনি।সে নিজেকে যতা সম্ভব স্ট্রিক রাখার চেষ্টা করে।
________

চারিদিকে শীতের ছড়াছড়ি,গায়ে চাদর জড়িয়ে ছাদের এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে কন্ঠ, মস্তিষ্কে বারংবার তূর্য নামক পুরুষটি হানা দিচ্ছে।কাল থেকে তূর্য একবারের জন্যও তার সাথে কথা তো দূর তাকায়নি পর্যন্ত। তাতে ভেতরে ভারী কিছু অনুভব করছে সে।
বিছানার এক পাশে শুয়ে আছে কন্ঠ, ভীষণ বিরক্ত লাগছে তার।এর-ই মধ্যে রুম ঝুম শব্দ করে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, চলছে শীত কাল কিন্তু প্রকৃতি যেনো বর্ষা কালে মজেছে। বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করেছে তার,সচারাচর তেমন একটা বৃষ্টিতে ভিজে না সে।যেদিন বৃষ্টি হয়, কন্ঠ হাতে এক কাপ কফি সাথে উপন্যাসের বই নিয়ে জানালার পাশে বসে পড়বে। কিন্তু আজ যে হৃদয় ব্যাকুল হয়ে ওঠেছে, কিন্তু ব্যাকুলতার কারণ নেই।

হুট করেই বড় বড় পা ফেলে ছাদে চলে গেল কন্ঠ, বৃষ্টির ফোঁটা টুপটাপ ছুঁইয়ে দেয় কন্ঠ কে।
” হ্যাঁ বৃষ্টি আমাকে ছুঁইয়ে দাও, শান্ত করো আমার মন।”

লম্বা শ্বাস টেনে নেয় কন্ঠ, অতঃপর দুটি বলিষ্ঠ হাত কন্ঠের কোমড় জড়িয়ে নেয়।শ্বাস আটকে আসে কন্ঠের,হাতের মালিক কে দেখতে পিছু ফিরে তাকালো। শক্তপোক্ত পুরুষ কে দেখে হৃদয়ের ধুকপুকানি বেড়ে গিয়েছে।
” স্যার?”
” হুস।”
তূর্য আলগোছে ছুয়ে দেয় কন্ঠ কে, একবার নয় বারবার।
” আপনি ভীষণ বাদে মানুষ।”
আনমনে বলে উঠে কন্ঠ, তূর্য তো এখন নে’শা’য় মত্ত।ভিজে একাকার অবস্থা দুজনের, শরীরের প্রতিটি ভাঁজ বুঝতে পারছে তূর্য।
” আমাকে ছুঁয়ে দিন না? গম্ভীর ভাবে, আপনার স্পর্শ চাই।”
তূর্য হাত বাড়িয়ে দিল তার দিকে, কন্ঠ হাতে হাত রাখে তূর্যের ।কাপল ডান্স করে দুজনে, তূর্য যতটা সম্ভব নিজের সাথে জড়িয়ে নেয় তাকে।তার প্রতিটি স্পর্শে কেঁপে উঠল কন্ঠ, অতঃপর দু’জন দু’জনের মধ্যে হারিয়ে যায় কয়েক প্রহরের জন্য।
এক সময় জ্ঞান হা’রিয়ে লুটিয়ে পড়ে কন্ঠ, আগলে নেয় তূর্য,ঘরে নিয়ে শুইয়ে দেয় বিছানাতে।

বিছানার এক পাশে ল্যাপটপ কোলে নিয়ে কাজ করছিল তুফায়েল, হঠাৎ একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসে।
” হ্যালো কে বলছেন?”

অপর পাশ থেকে খিল খিল হাসির শব্দ ভেসে আসে।
” আরে আমি অরিন।”

চমকে উঠে তুফায়েল,কান থেকে ফোন নামিয়ে দেখে নেয় নাম্বার, সত্যি অচেনা একটা নাম্বার।
” অরিন কে?”

অরিন বেশ রাগান্বিত স্বরে বলে উঠে।
” আমাকে ভুলে গেলেন? আমি ওই যে জ’রি’মা’না এরপর পার্কে।”

মস্তিষ্ক মূহুর্তে খুঁজে নেয় অরিন কে, কিন্তু পরক্ষণেই ভাবে একটা মেয়ে এত রাতে তাকে কেন ফোন করছে? আশ্চর্য!
” ওহ্ হ্যাঁ মনে পড়েছে,বাট এত রাতে ফোন দেওয়ার কারণ?”

অরিন অকপটে বলে উঠে।
” আমার না আপনাকে ভাল্লাগে, ভীষণ তাই ইচ্ছে করছিল ফোন দেওয়ার তাই দিলাম।”

চমকে উঠে তুফায়েল,এই মেয়ে কী বলে? আচ্ছা এই মেয়ে কী বুঝতে পারছে না একটা ছেলে কে এমন করে ভাল্লাগে বলাটা ঠিক কী না?
তুফায়েল ফুস করে শ্বাস টেনে বলল।
” তুমি কী বুঝতে পারছো তুমি ঠিক কী বলছো?”

অরিন খিলখিলিয়ে হেসে বলল।
” অবশ্যই।”

তুফায়েল আরো আশ্চর্য হয়, মেয়েটার হাসি বেশ মনোমুগ্ধকর।
অরিন ফের বলল।
” আপনি জানেন আপনাকে দেখলে হৃদয় ব্যাকুল হয়ে উঠে। আপনার ভয়েস শুনতে পা গ ল লাগছিল।”

হুট করেই কাশি শুরু হয়ে যায় তুফায়েলের, এই মেয়ে বলে কী?
” দেখো মেয়ে তোমার সেদিনের কাজ বেশ ভালো লেগেছে,তার মানে এটা নয় যে তোমাকে আমার সবসময় ভাল্লাগে বা অন্য কিছু।বাই দা ওয়ে আমি সাবধান করে দিচ্ছি, আমাকে অযথা বিরক্ত করবে না।”

বলেই ফোন রেখে দেয় তুফায়েল, শুধু ফোন রেখেছে বললে ভুল হবে। সুইস অফ করে রেখে দিল।বেশ রাগান্বিত হয়ে উঠে অরিন, তাকে ই’গনো’র করল? আশ্চর্য!

“ঘুমাবে না?”

চোখ কচলে জিজ্ঞেস করে নীলা,সাফিন কাজ করছিল।সে ভেবেছিল হয়তো নীলা ঘুমিয়ে পড়েছে, কিন্তু না নীলা এখনও জেগে আছে।
” ঘুমাও নি এখনো?”
” উঁহু।
” কেন?”
” তুমি ছাড়া ভালো লাগছিল না,কাছে আসো।”

সাফিন ফাইল গুলো রেখে নীলার কাছে যায়,নীলা চট করে ঢুকে শুয়ে পড়ল তার, অতঃপর দুই ভালোবাসার মানুষ শান্তির ঘুম দেয়।

” মা আমার কন্ঠ কে ভীষণ মনে পড়ে।”

বিছানায় বসে ছিল আনিকা আহমেদ, উনি রিয়ার মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছে।তার-ই মধ্যে কন্ঠের কথা তুলে রিয়া,আনিকা আহমেদ বেশ চটে যান।
” এত্ত মনে পড়ার কী আছে?বিয়ে হয়েছে শশুর বাড়ী আছে।”
” হুম, আচ্ছা নীলা আপু আর আর কন্ঠ তো একই বাড়িতে থাকে,আর আমার বিয়ে হলে আমি সবার থেকে দূরে থাকবো।”

আনিকা আহমেদ নরম হলেন, সত্যি তো এই মেয়েটা কোথায় ভাগ্য আছে কে জানে?
” কী হলো মা কি ভাবছো?”
” ভাবছি এখুনি বিয়ের ভূত চেপেছে না কী? পাগল কোথাকার।”

মুখখানি চুপসে গেল রিয়ার।
______
সকাল সকাল ঘুম থেকে থেকে উঠে মাথা চেপে ধরে কন্ঠ,মাথা ব্যথা করছে বিরক্ত লাগছে তার।চোখ বন্ধ করতেই কাল রাতের কথা মনে পড়ে যায়।
” ইশ্ স্বপ্ন গুলো এত্ত জ্বালায় কেন? ভীষণ লজ্জা লাগছে এখন, আচ্ছা ওগুলো যদি সত্যি হতো?”

নিজেই মুখে হাত চেপে ধরে, এরপর ওয়াশরুমে চলে যায়।উঠে বসে তূর্য, মুচকি হেসে বলল।
” স্বপ্নটা কিন্তু বেশ সুন্দর।”

চলবে………… ✨।

#অপ্রিয়_মাস্টার
পার্ট [১৫]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম

” ছিহ্ ছিহ্ আপনি এমন করতে পারলেন স্যার?”

মাত্র কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল তূর্য,তার মধ্যে বাইরে থেকে কন্ঠ এসে কাদু কাদু কন্ঠে বলে উঠে।
” কেন কী হয়েছে?”
কন্ঠ আড়ষ্ট হয়ে জিজ্ঞেস করে।
” আপনি জানেন না ওই স্বপ্ন সত্যি?”
” কোন স্বপ্ন?”

কন্ঠ নাক মুখ কুঁ’চকে বলল।
” আপনি কাল রাতে কী করছেন আমার সাথে?”

তূর্য বেশ ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দেয়।
” তেমন কিছু না,আই মিন বেশী কিছু না।”

কন্ঠ ভড়কাল, ভীষণ ভাবে।
” তার মানে কিছু তো করেছেন?”
তূর্য বাঁকা হেসে বলল।
” ইশ্ যখন আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখো তখন কিছু হয় না? আমি কিছু করলেই দোষ?”

চমকে উঠে কন্ঠ, তূর্য কে বেশ চেঞ্জ মনে হচ্ছে। কিছু বলল না সে ত্বরিতে নিচে চলে গেল।
একা হাতে রান্না করছিল অহনা খান,শাহা খান বাড়িতে নেই। নিজের বাবার বাড়িতে গেছে যার জন্য সব কাজ একাই করছেন উনি। কন্ঠ গিয়ে ওনাকে সাহায্য করে, নাস্তার টেবিলে পুরোটা সময় তূর্য কন্ঠ কে আড় চোখে দেখছিল যা কন্ঠ কে অস্বস্তি অনুভব করাচ্ছিল।
______________
ক্লাসে আজ টেস্টের রুটিন দেওয়া হয়েছে, তাতে বেশ ঘাবড়ে গেছে।এই কয়েক দিনে একদম পড়াশোনা হয়নি, এভাবে হঠাৎ টেস্ট শুরু হচ্ছে তাতে কী থেকে কী করবে কেউই বুঝে উঠতে পারছে না।
” না ভাই এবার থেকে পড়তে হবে না হলে পরীক্ষায় ডিম পাওয়ার জন্য তৈরি হও।”

সানের কথায় আরো ঘাবড়ে গেল সবাই।তারিফ সান কে থামিয়ে বলল।
” আরে থাম তো তুই, আমার কাছে জোস একটা আইডিয়া আছে মামা।”

” কী আইডিয়া?”
বেশ উৎসাহ নিয়ে জিজ্ঞাস করে সোহা। কন্ঠ ফুসে উঠে, রাগান্বিত হয়ে বলে।
” দেখ তারিফ তোর জন্য গতবার কান ধরে মাঠে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে,এই বার এমন কিছু হলে কিন্তু।”

কন্ঠের কথার পিঠে তাহিয়া থামিয়ে বলল” তুই একটু থাম কন্ঠ,আগে শুনি তারিফ কী বলে?”

তারিফ বেশ ভাব নিয়ে বলে।
” এই তারিফ তা সুপার স্টার যা বলে সেটাই দারুণ কিছু হয়।”

সান সপাটে ওর মাথায় চা’টি মে’রে বলল।
” রাখ তোর ফাউ কথা, আর আইডিয়া বল।”
” না মানে বলছিলাম যে টেস্টের আগের দিন যদি আমরা প্রশ্ন ক’পি করি তাহলে কেমন হয়?”

সবাই কিঞ্চিৎ চমকে উঠল,কী বলছে তারিফ?
কন্ঠ ভীত হয়ে জিজ্ঞেস করে।
” তারিফ কী বলছিস এসব? এমন কিছু করলে যদি ধরা পড়ি পরে কী হতে পারে বুঝতে পারছিস?”

তাহিয়া,সোহা দুজনেই কন্ঠের সাথে সহমত পোষণ করে বলল।
” এটাই তো, এমন কিছু করলে কী হবে আন্দাজ আছে তোর?”

তারিফ বেশ কনফিডেন্স নিয়ে বলল।
” আরে বাবা কিচ্ছু হবে না,সব ঠিক হয়ে যাবে।আর কন্ঠের জামাই তো প্রফেসর, আমাগো কিছু হলে বাঁচিয়ে নেবে।”

চমকে উঠে কন্ঠ,এইই ছেলে বলে কী?
” এইইইইইইইইইইইইইইইইই কী বলিস তুই? উনি এসব জানলে কী হবে বুঝতে পারছিস? আমার অবস্থাটা একবার ভাব।”

সান কিয়ৎক্ষণ ভেবে বলল।
” কন্ঠ কিচ্ছু হবে না, আমি প্ল্যান তৈরি করে ফেলছি।”
_____________
রাতে পড়ার টেবিলে বসে খাতায় আঁকিবুঁকি লিখেছে কন্ঠ,সামনে পরীক্ষা তবে তার একটুও পড়তে ভাল্লাগছে না।
বিছানায় এসে বসলো তূর্য,সবে মাত্র খাওয়া দাওয়া শেষ করেছে।আড় চোখে তাকায় দেখে কন্ঠ এমনি বসে আছে। চোখাচোখি হওয়া মাত্র পিলে চমকে উঠে কন্ঠের, ওভাবে তাকিয়ে আছে কেন?
হঠাৎ তূর্য প্রশ্ন করে বসলো।
” লাস্ট ইয়ারের রেক ডে তে যেতে গেলে কেন?”

বার কয়েক শুকনো ঢুক গিলে নেয় কন্ঠ,কাল কের ঘটনা আজকে কেন তুলছে? ধুর ভাল্লাগে না।
” কী হলো কিছু বলছো না যে?”
কন্ঠ ভয় নিয়ে বলল।
” অনুষ্ঠান দেখতে ইচ্ছে করছিল তাই।”
” হুঁ বুঝলাম।”
” আচ্ছা স্যার একটা প্রশ্ন করি?”

তূর্য হাতে থাকা টাওয়াল বেড সাইডে‌ রেখে বলল।
” হ্যাঁ করো।”
” না মানে বলছিলাম যে এক ব্যাচ অন্য ব্যাচের অনুষ্ঠানে কেন যেতে পারবে না?”

দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তূর্য।
” তুমি জানো না কয়েক বছর আগে,ধরো পাঁচ ছয় বছর আগে হবে।কলেজে ছাত্রদের নিয়ে একটা ঝামেলা হয়েছিল, সেখানে কি নিয়ে ওদের মধ্যে কথা কা’টা’কা’টি হয়েছিল। এরপর হঠাৎ মা’রা’মা’রি শুরু হয়, যেখানে ছাত্র নেতা ছিল তখনকার এমপি সাহেবের ছেলে।উনি কলেজে ফাউন্ডেশন করত ফলস্বরূপ বিচারে অন্য দল কে ক্ষমা চাইতে হয়, এবং এরপর ঠিক করা হয় এক ব্যাচ অন্য ব্যাচের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবে না।”

কন্ঠ তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল।
” ও আচ্ছা,সেই জন্য এত্ত ঝামেলা?”
” হুম।”
কন্ঠ নিজের মত কিছু একটা ভাবে, হঠাৎ শ্বাস প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হয়,ঘাড়ে কারো উত্তপ্ত গরম নিঃশ্বাস পড়ছে।খিঁচিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয় সে, ইশ্ কী লজ্জা? বলিষ্ঠ হাত দুটো পাঁজা কোলে তুলে নিল তার ছোট্ট শরীরটা কে, কন্ঠ আঁ’ক’ড়ে ধরল তূর্যের গলা।
” ভয় পেলে মেয়ে?”

কন্ঠ চমকায়,সাথে ভ’ড়কে যায়,এ কেমন প্রশ্ন? আচ্ছা তাদের মধ্যে প্রেম নিবেদন হয়নি। ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে নি,তবে এই ছোঁয়া কে উত্তপ্ত করে তুলে মন কে? তীব্র প্রতিবাদ করতে যেয়েও কেন বারংবার ফিরে আসে?
মস্তিষ্কে হাজারো প্রশ্নের আনাগোনা কিন্তু উত্তর?
” কী করেন?”

তূর্য কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল।
” আদর।”
সারা অঙ্গে শিহরণ খেলে গেল কন্ঠের।
” আদর চাই না?”
ফের প্রশ্ন করে তূর্য,কী বলবে কন্ঠ? প্রতিটি নারী তো স্বামীর কাছ থেকে ভালোবাসা আদর সব চায়। তাহলে সে কেন চাইবে না?
” আপনি তো আমাকে প্রেম নিবেদন করেন নি স্যার?”

লজ্জা ভুলে গিয়ে প্রশ্ন করে বসলো কন্ঠ তূর্য কেই,। তূর্য হাসলো, শুধু হাসলে বললে ভুল হবে।ভুবন ভোলানো হাসি দেয়,যা মুগ্ধ করে কন্ঠ কে।
” প্রেম নিবেদন করব কেন? তুমি কী আমার প্রেমিকা?”

চমকে উঠে কন্ঠ, সত্যি তো সে তো প্রেমিকা নয়, স্ত্রী হয়। তবে কী সেই সম্পর্কের সুবাদে তাকে স্পর্শ করা?
” ছাড়ুন আমাকে,নিচে নামান।”

” কী হলো?”
” কিচ্ছু না,নামাতে বললাম তো?”
” উঁহু,নামাবো না।”
” কী চাইছেন?”
” ওই যে বললাম,আদররররর।”
” ছিহ্ ছিহ্ আপনি কী নির্ল’জ্জ হয়ে গেছেন।”
” রাগ হয়েছে?”

কন্ঠ বেশ অভিমানী হয়ে বলে।
” আমার কেন রাগ হবে? আমি কি আপনার প্রেমিকা না কী?”
” বউ হও তো!রাগ হওয়ার কথা নয় কী?”
” না একদমই না।”
” আচ্ছা শুনো প্রেমিকা নও কেন বললাম?”তোমাকে তো আমি বিয়ে করেছি, প্রেম তো করিনি,আর না তুমি আমার প্রেমিকা। তাহলে কেন প্রেম নিবেদন করব?”
” তাহলে ছুঁইছেন কেন?”
” ছুঁইলাম কই? ভালোবাসা দিলাম, তুমি না বউ! প্রেমিকার জন্য প্রেম আর বউ এর জন্য ভালোবাসা।”

চলবে……….. ✨।