#অবশেষে_পূর্ণতা
#লেখক_আহম্মেদ_নীল
#পর্ব_১৬
‘ফারিয়া সহ তার বাবা-মা তো হতভর হয়ে যায়। চার তলা বিশিষ্ট সুন্দর একটা বাড়ির ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে। বাড়ির মাঝখানে সুইমিংপুল পুকুর রয়েছে,যা বাড়ির সৌন্দর্য আরো দ্বিগুন হারে বাড়িয়ে তুলেছে। ফারিয়া সার্ভেন্টকে উদ্দেশ্য করে বললো,এটা কি নীলদের বাসা.?
-‘সার্ভেন্ট বলতে হাসতে হাসতে বলতে লাগলে,নীল স্যারের বাসা ছাড়া আবার কাগোর বাসা হবে.?তারপর গুটিগুটি পায়ে গেটে বাসার ভেতর যেতে লাগলো। একটু পর নীল বাসার ভেতর থেকে বেড়িয়ে এসে ওদের সাথে করে ভেতরে নিয়ে যেতে লাগে। ভেতরে যেতেই নীলের বাবাকে দেখলো বসে আছে ফারিয়া সবাইকে সালাম দিলো,তারপর ইমতিয়াজ চৌধুরীর পায়ে সালাম করলো,সাদিয়া বেগম রুমের ভেতরে নাস্তা রেডি করছে। ইমতিয়াজ চৌধুরী ফারিয়াকে দেখে খুব পছন্দ হলো। সবাই সোফায় বসে আছে। কিছুক্ষণ পর সাদিয়া বেগম এসে নাস্তা দিলো ডাইনিং টেবিলে। ফারিয়া সাদিয়া বেগমকে সালাম করলো।(লেখক_আহম্মেদ_নীল) ইমতিয়াজ চৌধুরী অনেকটা অবাক হয়ে যায়,ফারিয়ার ব্যবহারে। এই যুগেও তাহলে এমন মেয়ে পাওয়া যায়,যে কিনা পায়ে সালাম করে কথাগুলো ভাবছে ইমতিয়াজ চৌধুরী। হাজারো রকমের নাস্তা সাজানো হয়েছে।
-“ফারিয়া কয়েক টুকরা আপেলের চির নিলো। আর আমিন সাহেব ও অহনা বেগমও সামান্য একটু খেয়ে বসে থাকে। এদিকে নীল ফারিয়ার সামনে বসে আছে। ফারিয়াকে নীল শাড়ি পড়ে একদম পরীর মতো লাগছে। নীলের চোখের ফারিয়াকে আজ অন্যদিনের তুলনায় একটু বেশি সুন্দর আর মায়াবী লাগছে। নীলের পরিবারে সবাই রয়েছে। ইমতিয়াজ চৌধুরী একটু গলা খাকড়িয়ে বলতে লাগলো,আসল কথায় আসা যায়। ইমতিয়াজ চৌধুরীর কথায় সবাই তার দিকে লক্ষ করলো। ইমতিয়াজ চৌধুরী সকলকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো,নীল আমার একমাত্র আদরের ছেলে। আজ পর্যন্ত নীল যা চেয়েছে তা আমি চোখের নিমিষেই এনে দিয়েছি। আশা করছি নীল আমাদের কত আদরের একমাত্র সন্তান তা এতক্ষণে আপনারা বুঝতে পারছেন.?
‘নীলের বাবা বলতে লাগলো,আপনাদের কোন চাওয়ার কিংবা আবদার থাকলে তা সরাসরি এখন বলতে পারেন কোন দ্বিধা করবেন না। ফারিয়ার বাবা বলতে লাগলো,ছি, ছি আপনারা এসব কি বলছেন.? আমাদের একটায় চাওয়া আমাদের এই অসহায় মেয়েটাকে আপনারা নিজেদের মেয়ে ভেবে তাকে আগলে রাখবেন। আপনারা নিশ্চয়ই ফারিয়ার বিষয়ে সবকিছু শুনেছেন নীল বাবার কাছ থেকে। আমরা কোনমতেই রাজি হতে চায়নি,কারন আমরা চাইনি আমাদের এমন মেয়েকে কারো ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে। তবে নীল বাবা আমাদের প্রতিনিয়ত বুঝিয়েছে। তারজন্য আমরা রাজি হয়েছি।
(লেখক_আহম্মেদ_নীল)
“কোন বাবাই চায়না, তার মেয়েটার ডিভোর্স হোক। তবে পরিস্থিতি আর বাস্তবটা আমাদের এমন সম্মুখিনি এনে দেয়।
কিন্তুু আমাদের সমাজের মানুষ একজন ডিভোর্সী মেয়ে বলতে বুঝে হয় তার চরিত্র খারাপ কিংবা কোন পরকিয়ায় লিপ্ত ছিলো,তা না হলে কেনো ডিভোর্স দিবে.? কিন্তুু সমাজের মানুষ প্রকৃত কারনটা খুজতে চায়না, আসলেই কি মেয়েটা আদেও এমন.? নাকি তার স্বামী খারাপ কিংবা ছেলে পক্ষের কোন দোষ আছে কিনা। তারা শুধু ডিভোর্স মেয়ের দোষারোপ করতে ব্যস্থ থাকে। কথাগুলো আমিন সাহেব বলছে আর তার দু নয়ন ভিজে যায়,তা বুঝতে পেরে ইমতিয়াজ সাহেব বলতে লাগলো,আপনাদের আর কিছু বলতে হবে না। ইমতিয়াজ সাহেব কথায় সাদিয়া একমত পোষন করলো।
-‘ইমতিয়াজ সাহেব বলতে লাগলো,দেখুন আমরা ফারিয়ার অতীত নিয়ে কোন কথা বলতে চায়না কিংবা জানতেও চায়না। আমরা তাকে আমাদের ছেলের বউ করে নিতে চাই,চিন্তা করবেন না আমরা আমাদের মেয়ের মতো করে আগলে রাখবো। কারন আমাদের কোন মেয়ে নেই। সাদিয়া বেগম বলতে লাগলো,আপনারা একদম চিন্তা করবেন না,আপনাদের মেয়েকে কোন সময় কোনকিছুর ঘটতি হতে দিবো না,হোক ভালোবাসার কিংবা অন্যকিছুর।
-“আমিন সাহেব ইমতিয়াজ চৌধুরীকে বললো,ফারিয়ার পেটে যে বাচ্চা আছে ওর কি হবে.?প্রতিত্তোরে ইমতিয়াজ চৌধুরী বললো,নিষ্পাপ শিশুকে নিয়ে একদম চিন্তা করবেন না। আমরা চাই সে আমাদের চৌধুরী পরিবারের পরিচয়ে বড় হবে। আমাদের দাদুভাই। আর কোনদিন বলবেন না যে ওটা অন্য কারো সন্তান। আমি চাইনা এই কথাটা আমরা ব্যাতিত অন্য কেউ জানুক। নীল আমাকে সবকিছু বলেছে তাই আপনাদের আর কোন কিছু বলার প্রয়োজন নেই।(লেখক_আহম্মেদ_নীল) আমরা আপাতত বিয়ের কোন আয়োজন করবো না,কারন ইসলামিক নিয়ম অনুসারে ফারিয়া মার প্রেগন্যান্ট থাকা অবস্থায় তাকে ডিভোর্স দিয়েছে,তাই ডিভোর্সটা ইসলামিক শরিয়তের বিধানে ডিভোর্স হবেনা,আবার বিয়েটাও অবৈধ হবে।তাই বাচ্চাটা হওয়ার পর আমরা নতুন করে বিয়ে দিবো কোট থেকে আর,আগের পক্ষের ডিভোর্সটা আইনগতভাবে কার্যকর করে নিবো। আপনাদের কোন চিন্তা নেই।
‘ফারিয়া মাথা নিচু করে বসে তাদের সকল কথা শুনছে। আর ভাবছে কতটা ভালো মানুষ নীলের পরিবারে সবাই। কতটা আপ্পায়ন করে আমাকে গ্রহন করে নিচ্ছে। একে আমি ডিভোর্সী মেয়ে তার উপরে আমার পেটে অন্যের বাচ্চা রয়েছে তাও তারা মেনে নিবে। কথাগুলো ভাবতেই ফারিয়ার চোখ দিয়ে টপটপ করে অশ্রু কনাগুলো গড়িয়ে পড়তে লাগে।(লেখক_আহম্মেদ_নীল) সাদিয়া বেগম বুঝতে পেরে ফারিয়ার পাশে গিয়ে আস্তে আস্তে বলে এই মেয়ে কান্না থামাও,এখন থেকে তুমি আমাদের মেয়ে,সো আর কোনদিন মায়ের সামনে একদম চোখের পানি ঝড়াবে না। ফারিয়া নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সাদিয়া বেগমকে জড়িয়ে ধরে,এদিকে সবাই যার যার মতো আলাপ করছে। সাদিয়া বেগম ফারিয়ার মতো অসহায় মেয়েকে পুত্রবধু হিসাবে পেয়ে সত্যি তার মনের ভেতরে আজকে অন্যরকম একটা শান্তি লাগছে। ফারিয়ার ভেতরের কষ্টগুলো অনেকটা উপলব্ধি করতে পারে সাদিয়া বেগম।
“মোটামুটি সব কথা প্রায় শেষ।ইমতিয়াজ চৌধুরী একটু গলা খাকড়িয়ে বলে,আমরা আগামী পরশু আপনাদের বাসা থেকে আমাদের বাসায় ফারিয়াকে নিয়ে আসতে চাই,আপনাদের কোন সমস্যা থাকলে বলতে পারে.? ফারিয়ার বাবা বললো,সমস্যা নেই তবে,এখন তো ফারিয়াকে দেখার জন্য সবসময় একটা মানুষ সাথে লাগবে,কখন কি হয় বলা যায়না। সাদিয়া বেগম বললো,ফারিয়াকে দেখাশোনার জন্য সবসময় আমরা আছি,আর পাশাপাশি ৩ জনকে রাখা হবে আপনারা একদম চিন্তা করবেন না। আমিন সাহেব আর না করতে পারলো না। নীলতো আজ মহা খুশি,অনেক প্রতিকূলতার সাথে সংগ্রাম করার পর ফারিয়া নামক রমনীকে পেতে চলেছে,তাও আবার সারাজীবনের জন্য।
-‘বিকাল ঘুনিয়ে সন্ধায় হয়ে এলো। ইমতিয়াজ চৌধুরী আমিন সাহেব আর অহনা বেগমকে তাদের রুমে নিয়ে গেলো। আমিন সাহেব যত তাদের দেখতে ততই অবাক হচ্ছে। এত বড় পরিবারে আর ধনি মানুষরা ফারিয়াকে এভাবে গ্রহণ করবে তা স্বপ্নেও কখনো ভাবতে পারিনি। অহনা বেগমও আজ অনেক খুশি,শেষমেশ মেয়েটার একটা গতি হলো। ফারিয়া একা মনমরা হয়ে বসে আছে,আর ওদিকে নীলও নিজের রুমে বসে আছে নিশ্চুপ হয়ে। তার মনের মাঝে একরাশ ইচ্ছে করছে ফারিয়ার সাথে গল্প করতে,তার নিষ্পাপ মায়াভরা মুখটা দেখতে (লেখক_আহম্মেদ_নীল)তবে মা-বাবার সামনে বলাটা কেমন একটা হয়ে যাবে,তাই বলতে পারিনি। সাদিয়া বেগম বললো,মা তুমি বরং নীলের রুমে যাও। এই নীল বাবা একটু শুনে যাও তো,মায়ের ডাকে নীল তড়িঘড়ি করে রুমের সামনে আসতেই সাদিয়া বেগম বললো,নীল ফারিয়াকে একটু তোমার রুমে নিয়ে যাও কিংবা ফুলবাগানগুলো দেখিয়ে আনো। ফারিয়ার নীলের মায়ের মুখের উপর না করতে পারে না।
-“তারপর ফারিয়া উঠে রুমে সামনে এসেই ফারিয়াকে বলে ধরবো নাকি একা একা হাটতে পারবে.? ফারিয়া বলে পারবে। তবে একটু যেতেই নীল ফারিয়ার থেকে অনুমতি চাই তাকে ধরার জন্য। আদেও কি ফারিয়ার না করার সাধ্য আছে। যে মানুষটা তাকে নতুন একটা জীবন দিয়েছে।(লেখক_আহম্মেদ_নীল) ফারিয়া বললো,আপনার আবার অনুমতি লাগবে.? ধরতে পারেন কোন সমস্যা নেই। নীল ফারিয়াকে প্রথমে নিয়ে যায় তার রুমে। নীলের রুমটা দেখে ফারিয়া হতভম্ব হয়ে যায়,রুমটায় বাচ্চাদের অনেক খেলনা সাজিয়ে রাখা আর ওয়ালে অনেক কয়টা বাচ্চাদের সুন্দর সুন্দর পিকচার টাঙানো আছে। আর বেডে তিনটা বালিশ সাজানো আছে,তার একপাশে একটা সুন্দর পুতুল রয়েছে। ফারিয়া এতক্ষণে বুঝতে পারলো,নীল হয়তো তাকে আর তার বাচ্চাকে নিয়ে এত প্লান। ফারিয়ার ইচ্ছে হচ্ছে নীলকে জড়িয়ে ধরে তার শার্টটা ভিজিয়ে দিতে,আর ওই বুকের মাঝে সারাজীবন এর জন্য নিজিকে বিলিয়ে দিতে। তবে এখন এটা সম্ভব না।
‘নীলের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিতে থাকে ফারিয়া,যা দেখে নীল অনেকটা খুশি হলো। ফারিয়া মুখে হাসি বিরাজ করলো অনেকদিন পর। তারপর নীল ফারিয়াকে নিয়ে গেলো বাগানে। একে একে সবকিছু দেখাতে লাগে,রাত হয়ে অন্ধকার হলেও পুরো বাগানে লাইটিং দেওয়া আছে,দেখতে একটু সমস্যা হচ্ছে না।(লেখক_আহম্মেদ_নীল) বাহারী রকমের ভুল ফুটে রয়েছে গাছে,ফারিয়াকে ফুলের মাঝে দাঁড়াতে বললো,ফারিয়া বুঝতে পারলো না তাকে কেনো এই সময় ফুলের বাঝে দাড়াতে বলছে। হঠাৎ নীল নিজের পকেট থেকে আইফোনটা বের করে ফারিয়ার পিক তুলে। তারপর কিছু পিক নিজেও ওঠে ফারিয়াকে সাথে নিয়ে। হয়তো একগুলো নীল ফ্রেমে বন্ধি করে রাখবে জনম জনমের জন্য।
(লেখক_আহম্মেদ_নীল)
______________
-‘এদিকে সামিয়া পরের দিন সকাল হলে নারগিস বেগমকে বলে তার নাক থেকে রক্তক্ষরনের বিষয়টা। নারগিস বেগম প্রথমে ভাবলো,হয়তো সামান্য কোন সমস্যার কারনে এমনটা হচ্ছে। নারগিস বেগম ড্রাইভারকে বললো,গাড়ি বের করতে তারা বড় একটা ডাক্তারের কাছে যাবে। নারগিস বেগমের কথা অনুযারী ড্রাইভার ঢাকা মেডিকেল এ নিয়ে গেলো সামিয়াকে। তারপর নারগিস বেগম নিয়ে গেলো তার একটা পরিচিত মানুষের কাছে। সামিয়াকে ভেতরে নিয়ে গেলো চেকাপ করাতে,আর নারগিস বেগম বসে রইলো। ছেলের জন্য যে সে সবসময় চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছে। অনেকক্ষণ পর ডাক্তার কিছু রিপোর্ট নিয়ে নারগিস বেগমের হাতে ধরিয়ে দিলো। বিশেষ কোন গুরুতর সমস্যা হয়েছে.? ডাক্তার কোন কথা বলেনা,যা দেখে নারগিস বেগম অনেকটা হতভম্ব হয়ে যায়। তখুনি নারগিস বেগম রিপোর্টটাহাতে নিয়ে দেখে যা দেখতে পারে,তা দেখে কয়েক মিনিট পাথরের ন্যায় দাড়িয়ে থাকে। তার শরীরের কোন শক্তি নেই,কথা বলার শক্তিটুকু হারিয়েছে।
“নারগিস বেগম দেখলো,সামিয়ার ব্রেইন ক্যান্সার ধরা পড়েছে। নারগিস বেগম বারবার রিপোর্টটা উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখতে থাকে। বারবার একই বিষয় পরিলক্ষিত করতে পারে। তারপর নারগিস বেগম ডক্টরকে বলতে লাগে,আপনার হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে। প্রতিত্তোরে জবাব দিলো,আজ পর্যন্ত আমাদের কোন রিপোর্ট ভুল বলে প্রমান হয়নি আশা করবো এটাও ভুল বলে প্রমান হবেনা। তারপর ডাক্তার চলে গেলো। আর নারগিস বেগমের চোখ বেয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়তে লাগে। হয়তো তাদের জন্য অপেক্ষা করা ভয়ংকর সব পরিনত বাস্তব রুপ নিচ্ছে একে একে।
-তখুনি হঠাৎ নারগিস বেগমকে চমকিয়ে,,,
চলবে কী.?