অবশেষে ভালোবেসে পর্ব-০৭

0
946

#অবশেষে_ভালোবেসে
পর্বঃ ০৭
লেখিকাঃ মেহেরুন নেসা

……কল টা পিক করে কে কল করেছে না দেখেই

– জি মি. কে.?

-……..

– ওহ আপনি হ্যাঁ বলুন।

-……..

– কি?? কি বলছেন এসব আমি এখন ই আসছি….
.
সানভি তারাতারি ওই অবস্থা তেই নির্ভানের এর স্টুডিও যেটাতেই ও বেশি থাকে সেখানে পৌছালো, এসে দেখে পুরো স্টুডিও ওলটপালট হয়ে আছে বডিগার্ড কেও দেখা যাচ্ছে না নির্ভান কেও দেখছে না।

– মি. কে….. মি. কে। বলে ডাকছে কোন রুমে আছেন কে জানে আগে বারছিলো সানভি তখনই পেছন থেকে নির্ভানের ডাক শুনে

– মিস.সান??
পেছনে তাকাতেই দেখে নির্ভান হয়তো মাত্রই গোসল করে বের হয়েছে তাই শুধু একটি টাওয়াল পরে বের হয়েছে। চুল গুলো থেকে টপটপ করে পানি পরছে তার ধবধবে স্পটলেস ফর্সা কাধে সেখান থেকে গড়িয়ে নিচে পরছে সেই পানির বিন্দু টার সাথেই ওর চোখ ও নিচে নামতে নামতেই খেয়াল হলো যে ও কিভাবে তাকিয়ে আছে তাই তারাতারি চোখ সরিয়েই ঘুরে দাড়ালো

– মি. কে এসব কি?

– কি সব কি? আর তুমি এখানে কি করছো??

– বিজি ১ ফোন করে জানালো আপনি পুরো ঘর মাথায় তুলে রেখেছেন কি নাকি পাচ্ছেন না। আর এসব কি করে রেখেছেন ঘর টা কে।

– এটা স্টুডিও।

– যাই হোক কি হয়েছিলো যে পুরো স্টুডিও তে তুফান এনে ফেললেন???

– আমার লাস্ট রেকর্ডিং এর পেন ড্রাইভ টা পাচ্ছিলাম না।

– এখন পেয়েছেন?

– না পাইনি।

কথা টা শুনে সানভি হতাশ হয়ে বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে বললো,,,, সেটা জানতে আমাকে একটা কল দিলেই তো হতো এসব করার কি দরকার ছিলো?

– আমি ভাবলাম তুমি ছুটিতে আছো।

– এটুকু তো কল করলে আমি বলতেই পারতাম এখন যে আমার নিজেরই এখানে আসা লাগলো!!!

– হ্যাঁ যাই হোক এখন বলো পেন ড্রাইভ টা কোথায়? আর তুমি ওইদিকে ফিরে আছো কেনো? এদিকে ঘুরে কথা বলো।

– আগে একটু ভদ্র কাপড় চোপড় পরে নিন তারপর বলছি পেন ড্রাইভ টা কোথায় আছে।

– কেন কাপড়ে কি হয়েছে… বলে নিচে তাকাতেই দেখে ও শুধু তোয়ালে পরা,,,, ওহ শীট… বলেই নির্ভান তারাতারি গিয়ে ওই তোয়ালে বদলে একটা টি শার্ট আর প্যান্ট পরে বের হয়ে এলো। তারপর সানভি কিছু না বলেই ওর স্টুডিও রুম টা তে গিয়ে নির্ভানের ইন্সট্রুমেন্টস গুলোর পাশেই রাখা ড্রয়ার এর দুই নাম্বার ড্রয়ার টা খুলে পেন ড্রাইভ টা নির্ভানের হাতে ধরিয়ে দিলো।

– এইটা তো আমি চেক করে…. ওহ চেক করিনি। উপরের টা দেখেই চলে গিয়েছিলাম।

– এখন? শুধু শুধু এতো কিছু ওলট পালট করলেন। যাই হোক পেয়েছেন তাহলে এখন আমি আসি আর যাওয়ার সময় বাহিরে বলে যাচ্ছি কাউকে পাঠিয়ে রুম পরিষ্কার করিয়ে দিতে।

– চলে যাবে!

– জি মি. কে আজ তো আপনার আর কোনো রেকর্ডিং নেই আর আমার ও কোনো কাজ নেই তাই তো কাল ছুটি নিয়েছিলাম তাই না??

– হ্যাঁ।

– তাহলে এখন আসি।
বলেই বের হয়ে গেলো। নির্ভান এর স্টুডিও পরিষ্কার করার কথা জানাতে ওদের মেইন বাড়ির সামনে গিয়ে বলছিলো কথা টা তখনই নির্ভান এর মা এর সাথে দেখা সানভির।

– আরে সানভি? কতোদিন পর দেখলাম তোমাকে।

– আসসালামু আলাইকুম ম্যা… আই মিন আন্টি ভালো আছেন?

– ওয়ালাইকুম আসসালাম। হ্যাঁ মা ভালো আছি তুমি কেমন আছো?

– জি আন্টি ভালো আছি।

– তোমাকে তো এখন দেখাই যায়না এতো বিজি থাকো যে দেখাও করো না আমার সাথে।

– আরে আন্টি জানেন ই তো আপনার ছেলের যা কাজের চাপ নিজের জন্য একটা মূহুর্ত পাইনা। কিন্তু আজকে পেয়েছি কোনো রেকর্ডিং নেই বা পারফরম্যান্স ও নেই তাই ছুটি নিয়েছি।

– তবুও ডেকে এনেছে তাই না?

– হ্যাঁ ।

– জানি তোমাকে ছাড়া তো এখন চলতেই পারে না। যাই হোক এসেছো যখন আসো ভেতরে আসো।

– না আন্টি আজ না অন্য একদিন। আজ আমি নিজেকে সময় দিতে চাই একটু।

– ঠিকাছে তাহলে এখন থেকে বিকেল বা সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় নাও তারপর সুন্দর করে এই বাড়িতে চলে আসবে আজ রাত ডিনার আমাদের সাথে করবে।

– না আন্টি আজ না সত্যি।

– না আমি কিছু শুনবো না। আসতেই হবে নাহলে এখন যেতে দিবো না। কথা দাও সন্ধ্যায় আসবে?

– আ.. ঠিকাছে আন্টি আসবো কিন্তু একটু দেরি হবে।

– ওকে সমস্যা নেই কিন্ত আসতে হবে।
সানভি ঠিকাছে বলে বের হয়ে তো এলো কিন্তু আবার রাতে আসতে হবে ভেবে খারাপ লাগছিলো ভেবে ছিলো রাতে ও ইলা কে নিয়ে বের হবে কিন্তু এখন সন্ধ্যে পর্যন্তই থাকবে আর কি করবে। আন্টি খুব ভালো মানুষ মি.খন্দকার ও খুব ভালো আর মি. কে! সে যতই জ্বালাতন করুক না কেন কেয়ার করেন তার আশেপাশের সবাইকে দেখে রাখেন এরকম ছেলে ও খুব কম ই দেখেছে যারা একই সাথে বদমেজাজি এবং ভালো মনের মানুষ। সুন্দর হওয়ায় গর্ব করলেও অহংকার নেই যদিও নিজেকে সে সবার থেকে আলাদা ভাবে সহজে কাউকে কাছে আসতে দেয় না নিজেকে টাচ পর্যন্ত করতে দেয় না তবুও খুব ভালো মি.কে।
বাড়ির বাহিরে বেরিয়ে আসতেই কিছু দূর এগিয়ে এসে একটা রিক্সা ডেকে তাতে করে বাসায় ফিরে এলো,অনেকদিন পর রিক্সা তে চড়েও ভালো লাগছে তা নাহলে তো স্কুটি বা মি. কে এর গাড়িতে করে যেতে আসতে রিক্সায় বসার মজা টাই ভুলে গিয়েছিলো। ব্যাংকের লোন জীবনের প্রয়োজন গুলো পুরন করতে ও এতোই ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিল যে জীবনের অনেক রঙিন মুহূর্ত গুলো ও দেখেও দেখেনি।
বাসায় ফিরে ঘর টা গুছিয়ে রান্না সেরে গোসল করে রেডি হয়ে চুল মুছতে সময় আবার নির্ভানের শার্ট লেস বডি আর সেই চুল থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে পরা সেই বিন্দু বিন্দু পানির ফোটা গুলোর কথা মনে পরে গেলো।

– উফফ কি সব ভাবছি ধ্যাত। বলেই উঠে গিয়ে ইলা কে ফোন করছিলো তখনই ডোরবেল বেজে উঠলো আর গেইট খুলতেই দেখে ইলা হাজির।
এই কয়েক বছরে যেমন গুছানো একটা লাইফ পেয়েছে সানভি ইলার ও কিছুটা তেমনি যেই বুটিক এ আগে সেলস গার্ল হিসেবে কাজ করতো সেখানেই ও এখন সেলস ডিপার্টমেন্ট এ একটা পারমানেন্ট জব সামনের বছর ই নিজের ভালোবাসার মানুষ কে বিয়ে ও করতে যাচ্ছে। সেটেল্ড ইলা এখন পিছে পরেছে সানভি কে সেটেল করার জন্য।

– এই জব আর কতোদিন? নিজের লাইফ এনজয় ই করতে পারছিস না তুই। তোর ও তো একটা লাইফ আছে হ্যাঁ আমিও নির্ভানের ফ্যান বাট আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড ও। এবং এখন আমি চাই যে তুই ও নির্ভানের আগে পিছে ওর সেক্রেটারি ওর বডিগার্ড ওর মা চাচি হওয়া বন্ধ কর।

– what do you mean by মা চাচী?? আমার জব সেক্রেটারির হ্যাঁ মাঝে মাঝে বডিগার্ড ও হতে হয় তবে আমি ওর মা চাচী হয়ে যাই না।

– অবশ্যই হয়ে যাস। যখন ও কয়েক মাস পর পরই গার্লফ্রেন্ড চেঞ্জ করে তখন তুই ই তো ওর ইমেজ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পরিস। এখন ওর চিন্তা করা বাদ দে নিজের লাইফ টা কে ও একটু গুছিয়ে নে।

– দেখ ইলা এমন না যে আমার লাইফ গুছানো না! কিন্তু হ্যাঁ আমি ও সেটেল হতে চাই হাসবেন্ড, সংসার আমিও চাই কিন্তু যেই অভ্যাস তিন বছরে হয়ে গেছে তা এতো সহজে তো আর ছাড়া যায় না।

– তাই তো বলে দে তাদের ধীরে ধীরে গুটিয়ে নে নিজেকে তারপর ব্যাস আমার বলা ওই ছেলে গুলোর থেকে একজন কে পছন্দ করে সেটেল হয়ে যা। ওরা তো আগে থেকেই তোর একটা চান্স এর আসায় বসে আছে।

– ইলা…

– কি ইলা!! খারাপ কি বলেছি? ওরা সবাই ইফাজ( ইলার বয়ফ্রেন্ড) এর পরিচিত আমি সবাইকে খুব ভালো করে চিনি।

– না ইলা তবুও। তুই তো জানিস মি. কে আমার উপর কতটা নির্ভরশীল এখন আমি কাজ ছেড়ে দিলে কিভাবে হবে।

– তাহলে তাকে বলে তোকে বিয়ে করে সারাজীবন তার কাছে রেখে দিতে তা নাহলে তোকে বাকি জীবনের জন্য পাবেন না।

– ধ্যাৎ কি বলিস এসব!!

– হ্যাঁ তাও ঠিক তোকে উনি বিয়ে করলেও প্রবলেম।

– হ্যাঁ অসম্ভব।

– অসম্ভব না প্রবলেম। আমার জেলাস ফিল হবে এটাই প্রবলেম।

– ধ্যাৎ তুই না একটা।।

– তাই তো বলি আমার দেয়া লিস্ট থেকে একজন কে সর্ট লিস্ট করে লং-টার্ম এর জন্য ডেট করে ফুল টাইম ওয়াইফ হয়ে যা।। নাহলে বারবার আমি তোকে তোর মি.কে এর কথা বলতেই থাকবো।

– আচ্ছা ঠিকাছে ভেবে দেখি যদি কাউকে পছন্দ হয় তাহলে নাহয় জব ছাড়ার কথা তাদের জানিয়ে দিবো বাট মি.কে নেক্সট সেক্রেটারি না পাওয়া পর্যন্ত জব ছাড়বো না।

– ওকে ওকে তাই করিস।

– হ্যাঁ এখন ওইসব কথা বাদ দে এসব কথার জন্য তোকে আনিনি।

– হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিকাছে।
.
একদিকে সানভি ইলার সাথে ভালো সময় কাটাচ্ছে আর অপরদিকে নির্ভান সারাদিন একা একা বোর হচ্ছে ভেবেছিলো অনেক দিন মায়ের হাতের খাবার মায়ের হাতে খায় না তাই মেইন বাড়িতে গেলো কিন্তু লাভ হলো না মা ও কোথাও জানি গিয়েছে।। আর ম্যাক্স কে কল করলে জানতে পারলো ও আজকে কিসের শুটিং এ যাবে তাই ব্যাস্ত এখন একটু জ্বালানোর জন্য মিস.সান ও নেই আর কালকেই তো ওর ওই গার্লফ্রেন্ড টার সাথে ব্রেক আপ করলো নাহলে ওর সাথেই একটু টাইম পাশ করা যেতো।
.
সন্ধ্যার আগেই ইলা চলে গেলো ইফাজ এর সাথে দেখা করবে বলে। সানভি ও ওর ঘর গুছিয়ে নিয়ে একটু টিভি দেখতে বসেছিলো কি তখনই নির্ভানে এর মায়ের কল এলো ওকে আবার মনে করিয়ে দিতেই কল দিয়েছিলেন। সানভির ও আর কি করার উঠে চলে গেলো রেডি হতে।
.
সাতটার দিকে সানভি এসে দেখে নির্ভান ওর মায়ের সাথে কিচেনে কাজ করছে,,

– Good evening আন্টি, good evening Mr.K.

– Good evening Sanvi.

– আরে মিস.সান তুমি এখানে?

– হ্যাঁ আমি ডেকেছি ওকে আজ একসাথে ডিনার করবো বলে।

– ওহ ওকে। বলেই আবার ওর কাজে মন দিলো।

– আন্টি আমিও কিছু হেল্প করবো?

– না তার দরকার নেই সব হয়েই গেছে।

– প্লিজ আন্টি এমন করলে কিন্তু আর আসবো না।

– আচ্ছা আচ্ছা সালাদ টুকু বাকি আছে তাই করে দাও তাহলে।

– ঠিকাছে আন্টি থ্যাংক ইউ।
বলেই তার কাছ থেকে সালাদের টুকরি আর knife টা নিয়ে কাটতে শুরু করছিলো তখন আন্টি বললো

– আচ্ছা আমার কাজ শেষ তুমি সালাদ গুলো কেটে এসে পরো ঠিকাছে?

– হ্যাঁ আন্টি সমস্যা নেই।

আন্টি চলে যাচ্ছিলেন তখনই সানভির মনে এলো ও তো সালাদ কতোটুকু করে কাটবে তা জিজ্ঞেস ই করেনি তাই ঘুরে জিজ্ঞেস করতে পেছনে ঘুরতেই, একটু ঝুকে সালাদের টুকরি থেকে গাজর নিতে আসা নির্ভানের ঠোঁটে ঠোঁট লেগে গেলো এক্সিডেন্টালি…..
.
.
.
চলবে।