গল্প : #___অবাধ্য_পিছুটান
সাদিয়া_শওকত_বাবলি
পর্ব_৩২
( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )
৩৫.
দুপুরে বাড়ি ফেরা হয়নি তুর্যের। তাই রাতে কাজ শেষ করে একটু তাড়াতাড়িই বাড়ি ফেরার চেষ্টায় নেমেছে সে। পৃথার সাথে সারাদিন কথা হয়নি একটুও। একটা বারের জন্যও মেয়েটার ঐ সুমিষ্টি কন্ঠস্বরটা শোনা হয়নি। এই টুকু মাত্র সময়। এর মধ্যেই তুর্যের মনে হচ্ছে যেন কতশত বছর ধরে পৃথার কন্ঠ শুনছে না সে, দেখছে না মেয়েটার মায়াবী মুখ খানা। ছটফট করছে হৃদয়। একটু কল করে যে মেয়েটার সাথে কথা বলবে তারও উপায় নেই। মোবাইলই তো নেই পৃথার। যদিও সে চাইলেই বাড়ির অন্য কারো নাম্বারে কল করে পৃথার সাথে কথা বলতে চাইতে পারতো। কিন্তু এদের তো বিশ্বাস নেই কোনো। সব বি’শ্বা’স’ঘা’ত’ক এবং ঘষেটি বেগমের বংশধর। হতে পারে সে কল করলে এরা পৃথার সাথে কথা বলতে তো দিবেই না উল্টো এই কথা বলা, কথা বলা নিয়ে নাজেহাল করে ছাড়বে তাকে। তাই আর কারো নাম্বারে কল করেনি তুর্য।
রাত বেশি নয়, ঘড়ির কাঁটায় টিক টিক ধ্বনি তুলে জানান দিচ্ছে রাত কেবল আটটা। তুর্য আজকের মতো নিজের সকল কাজের অবসান ঘটিয়ে বাড়িতে ঢুকলো। বসার কক্ষ পর্যন্ত আসতেই শব্দ পেল হৈ হুল্লোড়ের। বাড়ির ছোট বড় সকলেই আড্ডা মিলিয়েছে এই কক্ষে। পৃথাও আছে এদের সাথে, বসে রয়েছে সোফায়। তারেক আর ইরা তার পাশে বসেই কি যেন বলছে আর সে হেঁসে লুটোপুটি খাচ্ছে। তুর্যের দৃষ্টি শীতল হলো, প্রশান্তিতে ছেয়ে গেল তার হৃদয়। এই মেয়েটার মুখের একটু হাসি তাকে কতটা শান্তি দেয় তা কি সে জানে? হয়তো জানে না। তুর্য মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো পৃথার হাসি মুখটার পানে। সকলে আড্ডায় এতটাই মশগুল যে এখনও তাকে খেয়াল করেনি কেউ।
কিঞ্চিৎ সময় অতিবাহিত হলো। হঠাৎ তুর্যের মেঝ চাচি কুলসুম বেগমের নজর গেল দরজার পানে। চোখে পড়লো তুর্যকে। মহিলা ক্ষানিকটা চমকালেন। অবাক কন্ঠে বললেন,
-“আরে তুর্য কখন এসেছিস? আর ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”
কুলসুম বেগমের কথায় হুশ ফিরলো সবার। চমকে উঠে তাকালো তুর্যের পানে। কুলসুম বেগম উঠে দাঁড়ালেন। ব্যস্ত ভঙ্গিতে আবার বললেন,
-“দুপুর গড়িয়ে রাতে ফিরেছিস। খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো হয়েছে তো? তুই ফ্রেশ হয়ে আয় তাড়াতাড়ি। আমি খেতে দিচ্ছি।”
তুর্য হাসলো কুলসুম বেগমের তাড়াহুড়ো দেখে অতঃপর স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
-“আপনি ব্যস্ত হবেন না মেঝ চাচী। আমি দুপুরে খেয়েছি এরপর রাতের খাবারটা আপনাদের সাথেই খাবো।”
কন্ঠে তোলা ধ্বনিগুলোর সমাপ্তি ঘটিয়ে তুর্য আর দঁড়ালো না ঐ স্থানে। লম্বা লম্বা পা ফেলে চলে গেল নিজের কক্ষে। সারাদিনের দৌড় ঝাপে শরীরটা ম্যাজ ম্যাজ করছে ভীষন। এই মুহূর্তে একটু গোসল না করলেই নয়। তুর্য দেরী করলো না, কক্ষে ঢুকেই আলমারি থেকে নিজের জামা কাপড় নিয়ে ঢুকলো ওয়াশ রুমে।
বেশ কিছুটা সময় নিয়ে গোসল সেরে সে বেরিয়ে এলো বাইরে। গলায় ঝুলানো তোয়ালে দ্বারা মাথা মুছতে মুছতে তাকালো কক্ষের আনাচে কানাচে। ভ্রু কুঁচকে এলো তুর্যের। পৃথা এখনও আসেনি এ কক্ষে? তুর্য ভেবেছিল তাকে দেখেই পৃথা এখানে আসবে। আর যদি নাও আসতে চায় তবে বাড়ির লোকেরা জোর করে পাঠিয়ে দিবে। কিন্তু তারা তা করেনি। তুর্য দাঁতে দাঁত চাপলো। বিরবিরয়ে বলল,
-“বি’শ্বা’স’ঘা’ত’কে’র দল সব। এরা না আমি সেদিন বিয়ের আসর ত্যাগ করার পর আমার বউকে ধরে রাখতে পেরেছে আর না এখন ঘরে পাঠাচ্ছে।”
তুর্য আরও কিছুক্ষন অপেক্ষা করলো পৃথার আগমনের। কিন্তু সে আসলো না। নাহ এই বাড়ির লোকগুলো তাকে আর ভালো হতে দিল না। তার চরিত্র থেকে নির্লজ্জ শব্দটার উৎখাত করতে দিল না। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো তুর্য। অধৈর্য্য কন্ঠে ডাকলো,
-“পৃথা, এই পৃথা রুমে আসো তাড়াতাড়ি।”
তুর্যের জোরালো কন্ঠের হাক ডাক শুনলো বসার কক্ষে আড্ডায় নিয়োজিত সবাই। পৃথা লজ্জা পেল। আড় চোখে তাকালো সবার পানে। সবাই কেমন ঠোঁট টিপে হাসছে তার উপর। আর এ লোকটাকে ও বলিহারি যাই। দেখে গেল এখানে ছোট বড় এতগুলো মানুষ। তারপরও এভাবে ঘরে গিয়ে না ডাকলেই কি হতো না? ইরা নিজের কনুই দিয়ে গুতো মারলো পৃথার পেটে। রসিকতা করে বলল,
-“আমার ভাইকে তো দেখছি ভালোই পাগল করেছো ভাবী। বাড়িতে ফিরেই বউকে চোখে হারাচ্ছে।”
পৃথার লজ্জা বাড়লো। লাজে মাথা নুইয়ে ফেললো সাথে সাথে। কুলসুম বেগম দেখলেন মেয়েটাকে। ঠোঁট টিপে হেসে বললেন,
-“এখনও বসে আছো কেন মেয়ে? যাও গিয়ে দেখো তোমার স্বামী তোমাকে ডেকে ডেকে আমাদের কানের পোকা মারছে কেন?”
পৃথা এলোমেলো দৃষ্টি ফেললো। এরা কি লজ্জাটাই না দিচ্ছে তাকে। এখানে থাকলে হয়তো আরও লজ্জা দিবে। তার থেকে পৃথার এখান থেকে চলে যাওয়াই ভালো হয়তো। মেয়েটা হাঁসফাঁস করে উঠে দাঁড়ালো। লজ্জালু ভঙ্গিতে সম্মুখে পা বাড়াতেই সাথী বেগম একটা গ্লাস হাতে এসে দাঁড়ালেন পৃথার নিকটে। মেয়েটার হতে গ্লাসটা ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
-“এটা নিয়ে যাও। ঠান্ডা শরবত, সারাদিন পর ছেলেটা বাড়ি ফিরেছে। শরীরটা নিশ্চই ক্লান্ত। এটা খেলে একটু ভালো লাগবে।”
পৃথা দ্বিরুক্তি করলো না। হালকা করে মাথা ঝাঁকিয়ে শরবতের গ্লাসটা হাতে নিয়ে গেল কক্ষের পানে। কিন্তু কক্ষে ঢুকেই নিজের ভোল বদলালো পৃথা। চড়া গলায় তুর্যকে বলল,
-“এভাবে ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছেন কেন? কি হয়েছে?”
তুর্য ঠোঁট উল্টালো। বাচ্চাদের মতো বলল,
-“তোমাকে ভীষন মিস করছিলাম তো। একদম চাতক পাখির ন্যায়।”
পৃথা তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো তুর্যের পানে তবে উত্তর দিল না কোনো। এ লোকের কথার উত্তর দেওয়া মানে আরেকটা অ’স’ভ্য মার্কা কথা বলার সুযোগ করে দেওয়া। পৃথা নিজে হাতে ধরে থাকা শরবতের গ্লাসটা এগিয়ে দিল তুর্যের পানে। স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
-“ছোট চাচী ঠান্ডা শরবত পাঠিয়েছেন। খেয়ে নিন তাড়াতাড়ি।”
তুর্য হাত বাড়িয়ে পৃথার হাত থেকে নিল শরবতের গ্লাসটা। এক চুমুকে গ্লাস খালি করে রাখলো পাশেই টেবিলে। অতঃপর বিছানার উপর থেকে একটা মোবাইলে বাক্স তুলে এনে বাড়িয়ে দিল পৃথার পানে। ঠান্ডা কন্ঠে বলল,
-“এটা তোমার।”
পৃথার চোখ দুটো চকচক করে উঠলো। ছো মেরে সে মোবাইলের নিল তুর্যের হাত থেকে। অবিশ্বাস্য কন্ঠে বলল,
-“সত্যি?”
তুর্য হাসলো। অভয় দিয়ে বলল,
-“একদম তিন সত্যি।”
পৃথার আনন্দ আর দেখে কে? সে মোবাইলটা নিয়ে উৎফুল্ল হয়ে বসলো বিছানায়। বাক্স খুলে বের করলো মোবাইলটা। বেশ দামীও মনে হচ্ছে। পৃথা উল্টে পাল্টে দেখতে শুরু করলো মোবাইলটা। তুর্য নিঃশব্দে বসলো তার পাশে। হুট করেই বলল,
-“পরিবারের সাথে কথা বলবে?”
পৃথার হৃদয় ভারী হলো, ওষ্ঠে স্থান পাওয়া হাসিটা উবে গেল মুহুর্তেই। ভীষণভাবে মনে পড়লো বাবা, মা এবং ভাইদের কথা। তারা কেমন আছে এখন? তার কথা কি মনে করছে? পৃথার ভীষণ ইচ্ছে করলো বাবা মা এবং ভাইদের সাথে কথা বলতে কিন্তু তার অভিমানেরা তাকে বেঁধে রেখেছে। কিভাবে পারলো তার পরিবার তার সাথে এত বড় একটা অন্যায় করতে? একটুও ভাবলো না তার কথা? তাদের কাছে মেয়ের থেকে বন্ধুত্বের সম্পর্ক রক্ষাটা কি খুব বেশিই বড় হয়ে গিয়েছিল? পৃথার চোখ মুখ শক্ত হয়ে উঠলো। শক্ত কন্ঠে বলল,
-“না।”
-“এখনও অভিমান করে আছো পরিবারের উপর?”
-“আমার কারো উপর কোনো অভিমান নেই।”
তুর্য একটু গা ঘেঁষে বসলো পৃথার। নমনীয় কন্ঠে বলল,
-“পরিবার যতই ভুল করুক না কেন তারা তোমার পরিবার পৃথা। তারা তোমাকে লালন পালন করে বড় করেছে। তারা যদি না থাকতো কখনওই তুমি এত সুন্দর একটা জীবন পেতে না। হ্যা মানছি তাদের একটা ভুল হয়েছে কিন্তু তাই বলে তুমি পরিবারের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে? জন্ম থেকে এই ১৭ টা বছর তুমি কিন্তু তাদের কাছেই ছিলে পৃথা। এই ১৭ বছরে কি তুমি তাদের সাথে কোনো ভুল করোনি? অবশ্যই করেছো। কিন্তু তারা কি সেই ভুলের জন্য তোমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে? তোমাকে কি পরিবার থেকে বিতাড়িত করেছে? করেনি বরং তোমাকে মাফ করে ভালোবেসে পরিবারের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ করে রেখেছে।
থামলো তুর্য আবার বলল,
-“শুনেছি প্রসবকালীন সময়ে একজন মা শরীরের ২০ টি হাড় ভাঙার সমান ব্যথা সহ্য করেন। যা পৃথিবীর সবচেয়ে কষ্টকর ব্যথাগুলোর একটি। প্রসবব্যথার সঙ্গে আর কোনো ব্যথার তুলনা হয় না। সেই ব্যথা সহ্য করে তোমার মা তোমাকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছে। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তোমাকে জীবন দিয়েছে। অথচ আজ তোমার জীবনের একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তুমি তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে চাইছো? হ্যা আমি তারপরও মানছি তাদের ভুল আছে, অন্যায় আছে। সমাজের আইন বা মানবাধিকারের মতে তারা তোমার জীবনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রাখে না। তবুও হয়ে গেছে একটা ভুল তাই বলে তুমি তো একদম পরিবার ছেড়ে দিতে পারো না। তাদের একটা অন্যায়ের জন্য তোমার প্রতি তাদের সারা জীবনের অবদান ভুলে যেতে পারো না।”
পৃথা মনোযোগ দিয়ে শুনলো তুর্যের সব কথাগুলো। নিজের ভুলগুলো বুঝতে পারলো। সত্যিই তো অভিমানের বশে পরিবার ছেড়ে দিতে পারে না সে। অথচ পৃথা পরিবার ছেড়েই এখানে এসেছে। মেয়েটার চোখের সম্মুখে ধীরে ধীরে ভেসে উঠলো শুরু করলো পরিবারের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো। হাসি কান্না মিলে কত মুহুর্ত। বাবার কাঁধে চড়া, ভাইদের সাথে দুষ্টুমি, মায়ের আঁচল ধরে ঘোরা। এই তো সেদিনও বাবা কি যত্ন করে ভাত খাইয়ে দিল তাকে অথচ আজ তারা কোথায়? আঁখি পল্লব ভারী হলো পৃথার। হুট করেই হু হু করে কেঁদে উঠলো মেয়েটা। তুর্য নিজের এক হাত বাড়িয়ে পৃথাকে আগলে নিল নিজ বক্ষের সাথে। শান্তনা দিয়ে বলল,
-“কান্না থামিয়ে বাড়িতে কল করো।”
পৃথা কান্না থামালো। তুর্যের বুক থেকে উঠে সোজা হয়ে বসলো। মোবাইল ঘেটে পলাশ শিকদারের নাম্বারটা তুললো স্ক্রীনে অতঃপর নিজের নতুন মোবাইল থেকে প্রথম কলটা সে তার বাবাকেই করলো।
একটু সময় রিং হতেই কলটা ধরলেন পলাশ সিকদার। ভারী কন্ঠে বললেন,
-“আসসালামুয়ালাইকুম, কে বলছেন!”
পৃথার গলা ধরে এলো। মনে হচ্ছে যেন কত বছর পর সে তার বাবার কন্ঠস্বর শুনছে। যে বাবাকে চোখে হারাতো সে সেই বাবার সাথে গোটা দুইটা দিন কথা হয়নি তার। অনেক কষ্টে নিজের কান্না দমন করলো পৃথা। অস্ফুট কন্ঠে বলল,
-“বাবা!”
চমকে উঠলেন পলাশ শিকদার। আঁখিদ্বয় ভরে উঠলো পৌঢ় লোকটার। পৃথা কল করেছে তাকে। অবশেষে তাহলে মেয়ের অভিমান ভেঙেছে। পলাশ শিকদার সামলে নিলেন নিজেকে। নমনীয় কন্ঠে বললেন,
-“অবশেষে তাহলে আমার মেয়েটার মনে পড়লো আমাদের কথা। কেমন আছিস মা?”
-“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো বাবা? আর মা ভাইয়ারা তারা কেমন আছে?”
পলাশ শিকদার উত্তর দিবেন তার আগেই শোনা গেল সুফিয়া বেগমের কন্ঠস্বর। উনি পাশেই ছিলেন স্বামীর। মেয়ে কল করেছে শুনে আর ধরে রাখতে পারেননি নিজেকে। এক প্রকার পলাশ শিকদারের থেকে মোবাইলটা ছিনিয়ে নিয়ে ধরলো নিজের কানে। ভেজা কন্ঠে বলল,
-“কেমন আছিস মা? কেন আমাদের এভাবে ছেড়ে চলে গেলি? এত অভিমান তোর?”
পৃথা কানে মোবাইল নিয়েই তাকালো তুর্যের পানে। অপরাধীর কন্ঠে মাকে বলল,
-“স্যরি মা।”
ব্যস শুরু হয়ে গেল দুই মা মেয়ের কথোপকথন। এখানে আর কারো স্থান নেই। খুঁটিনাটি পানি খাওয়া থেকে ওয়াশ রুম সবকিছুর বর্ণনায় নামলো তারা। তুর্য হতাশ হলো। কোথায় সারদিনের কাজ সেড়ে এসে দুই দন্ড বউয়ের সাথে কথা বলবে হোক ঝগড়া তা না বউ এখন তার শ্বাশুড়ির সাথে কথা বলতে ব্যস্ত। কেন যে এই সময়ে এসে সে পরিবারের সাথে কথা বলার কথা তুললো কে জানে? কাল কাজে বের হওয়ার আগে বলে যেতো কথা বলতে। সেও কাজে থাকতো আর পৃথাও পরিবারের সাথে কথা বলতো। তা না এখন শুরু করেছে। ঐ যে কথায় আছে না “চো’র পালালে বুদ্ধি বাড়ে” তুর্যের এখন বুদ্ধি বেড়েছে তবে এই বুদ্ধিতে লাভ নেই কোনো।
৩৬.
সময় প্রবাহমান। সে বয়ে চলছে নিজের গতিতে। এরই মধ্যে কেটে গেছে বেশ কয়েকটা দিন। যদিও এই কয়দিনে তুর্য আর পৃথার সম্পর্কের উন্নতি হয়নি তেমন। তুর্য নিজের কাজের জন্য দিনের বেশিরভাগ সময়ই বাড়ির বাইরে ছিল। শুধুমাত্র রাতে এসেছে তাও পৃথার ঘুমানোর পর। মাঝে মাঝে পৃথা খেয়ে ঘুমালে বিরক্ত করেনি আর না খেয়ে ঘুমালে তুলে খাইয়ে দিয়েছে। এই টুকুই তাদের সাক্ষাৎ। মোবাইল একটা কিনে দিলেও তুর্যের সময়ের অভাবে দুজনের কথা হয়ে ওঠেনি তেমন। তবে এই সব কিছুর মধ্যে তুর্য একটা ভালো কাজ করেছে। তা হলো পৃথাকে রাজশাহী কলেজ থেকে এখানকার কলেজে ট্রান্সফার করিয়ে এনেছে। এখানকার কলেজেই ভর্তি করিয়ে দিয়েছে মেয়েটাকে।
চলবে…..
গল্প : #___অবাধ্য_পিছুটান
সাদিয়া_শওকত_বাবলি
পর্ব_৩৩
( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )
৩৭.
পৃথা কলেজে ক্লাস করা শুরু করে দিয়েছে ইতমধ্যে। এমনি এই বিয়ে, মান অভিমানে সময় চলে গিয়েছে অনেকটা। পড়াশোনাচেও অনেক পিছিয়ে পড়েছে। সামনে এইচএসসি, এখনও যদি ঘাফেলতি করে তবে পরীক্ষায় ফেল করতে হবে নির্ঘাত। ইরাও পৃথার কলেজে একই ক্লাসে পড়ে শুধুমাত্র তাদের বিষয় আলাদা। তাই কলেজে যেতে কিংবা নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে ততটা অসুবিধা হয়নি পৃথার। ক্লাস করা ব্যতীত দুই ননদ ভাবী সর্বদা এক সাথেই সময় কাটিয়েছে। ইরা তার পরিচিত অনেকের সাথেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছে পৃথার। সবটা মিলিয়ে নতুন পরিবেশেও সে বেশ ভালোই আছে।
তবে ইদানীং তুর্যটা দূরে দূরে থাকছে পৃথার। গভীর রাত ছাড়া তার দেখাই পাওয়া যায় না। সারাক্ষণ শুধু কাজ আর কাজ। এত কি কাজ করে জানা নেই পৃথার। যতদূর জানে সে বাড়ির ব্যবসার কাজেই যুক্ত। কিন্তু ব্যবসার কাজ তো বাড়ির বাবা, চাচা, ভাইরাও করে। তাদের তো এত চাপ নেই। তারা দুপুরে আসে আবার রাতেও তাড়াতাড়ি আসে তাহলে তুর্যের এত কি কাজ? মাঝে মাঝে তুর্যহীনা ভীষণ মন খারাপ হয় পৃথার, চাপা অভিমান জন্মে হৃদয়ে। কিন্তু যখন রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে যায় আর মাঝ রাতে এসে তুর্য তাকে আদুরে কন্ঠে ডেকে তুলে খাইয়ে দেয় তখন সব অভিমানেরা ঝড়ে পড়ে। তুর্যের ক্লান্ত মুখটার পানে তাকিয়ে ভীষণ মায়া লাগে তখন। হৃদয়টা হাহাকার করে। ভীষণভাবে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হয়,
-“আপনি কি ভীষন ক্লান্ত?”
কিন্তু এ প্রশ্ন করতে পারে না পৃথা। নিজের ভিতরকার অস্বস্তিবোধে মনের প্রশ্ন মনেই রয়ে যায়। তবে পৃথা আজ ঘুমায়নি। অপেক্ষা করে রয়েছে তুর্যের আসার। বিছানায় কতগুলো বই ছড়িয়ে ছিটিয়ে তার মধ্যখানে ঘুমে ঢুলুঢুলু হয়ে বসে রয়েছে। অথচ তুর্যের আসার কোনো খবর নেই। পৃথা ঘাড় বাঁকিয়ে দেয়ালে টানানো ঘড়িটার পানে তাকালো একবার। ঘড়ির কাঁটায় টিক টিক ধ্বনি তুলে জানান দিচ্ছে এখন রাত ১২ টা। পৃথা অস্থির হলো। বিছানায় ফেলে রাখা মোবাইলটা হাতে তুলে নিল। একবার ভাবলো কল করবে তুর্যকে কিন্তু পরক্ষনেই আবার সিদ্ধান্ত বদলালো। ছেলেটা হয়তো নিজের কাজে ব্যস্ত আছে নয়তো ঠিক বাসায় চলে আসতো। এই কয়দিনে এইটুকু তো সে তুর্যকে চিনেছেই। পৃথা অস্থির হৃদয় নিয়ে বই খাতা ছড়ানো ছিটানো বিছানাটায় শুয়ে পড়লো, হতাশ ভঙ্গিতে তাকালো ইট পাথরে গড়া ছাদটার দিকে। ঠিক তখনই খট করে খুলে গেল কক্ষের দরজাটা। পৃথা চমকালো, হুড়মুড়িয়ে উঠে বসলো বিছানায়। দরজার পানে তাকিয়েই দেখা মিললো তুর্যের। পৃথার ওষ্ঠে হাসি ফুটে উঠলো। বিছানা থেকে তড়িঘড়ি করে নামতে নামতে সে বলল,
-“চলে এসেছেন আপনি?”
তুর্য তাকালো পৃথার পানে। মেয়েটাকে এত রাত পর্যন্ত দেখে অবাক হলো সে। এতদিনে এত রাত পর্যন্ত তো এই মেয়েকে সে জেগে থাকতে দেখেনি কখনও। তুর্য ভ্রু কুঁচকালো। বিছানার পানে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
-“আজ ঘুমাওনি এখনও? এত রাত অব্দি বসে আছো কেন?”
পৃথা অপ্রস্তুত হলো। “আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম” কথাটা বলতে গিয়েও আটকে গেল। কেমন একটা অস্বস্তি অস্বস্তি লাগছে তার। এলোমেলো দৃষ্টি ফেললো পৃথা। সত্যিটা চেপে গিয়ে বলল,
-“ঘুম আসছিলো না তাই।”
তুর্য আর ঘাটলো না পৃথাকে। বাহিরের পোশাক শরীরে জড়ানো অবস্থাতেই সটান হয়ে শুয়ে পড়লো বিছানায়। পৃথা ভরকে গেল প্রথমে তবে পরপরই জ্বলে উঠলো আবার। বাহিরের ঘর্মাক্ত, ধুলোবালিময় পোশাক পড়ে এভাবে তার পরিস্কার পরিচ্ছন্ন বিছানায় লোকটা শুয়ে পড়লো? পৃথা তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো তুর্যের পানে। ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,
-“একি আপনি বাহিরের বাসী পোশাকে শুয়ে পড়লেন কেন? উঠুন ফ্রেশ না হয়ে আসুন তাড়াতাড়ি।”
তুর্য উঠলো না। নাকমুখ কুঁচকে বলল,
-“অনেক ধকল গেছে আজ আমার উপর থেকে। একটু বিশ্রাম নিতে তো দাও।”
পৃথা শুনলো না তুর্যের কোনো কথা। ছেলেটার এক হাত টেনে বসিয়ে দিল বিছানায়। চড়া গলায় বলল,
-“আগে ফ্রেশ হয়ে আসুন তারপর বিশ্রাম নিবেন, যান।”
তুর্য বিরক্ত হলো ভীষণ। শরীরটা ম্যাজ ম্যাজ করছে একটু শুয়ে বিশ্রাম নিবে তা না। এই মেয়েটা আজ জেগে কেন আছে কে জানে? জেগে না থাকলে সে একটু বিশ্রাম নিতে পারতো। তুর্য একরাশ বিরক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়ালো বিছানা থেকে। নাক মুখ কুঁচকে বাড়ির পোশাক নিয়ে ঢুকলো ওয়াশ রুমে ঢুকলো ফ্রেশ হতে।
বেশ অনেকটা সময় নিয়ে গোসল সেড়ে বেরিয়ে এলো বাইরে তুর্য। সম্মুখে তাকিয়েই অবাক হলো সে। পৃথা বিছানা থেকে বই খাতা গুছিয়ে খাবারের প্লেট নিয়ে বসে আছে সেখানে। এ দৃশ্য বিশ্বাস করতে যেন কষ্ট হলো তুর্যের। সে ভুল দেখছে না তো? যে মেয়ে তাকে পাত্তা দেয় না, ভালোভাবে একটু কথা বলে না। সব সময় চড়া মেজাজে বসে থাকে সে কিনা আজ তার জন্য খাবার নিয়ে বসে আছে? আশ্চর্য। তুর্য চোখ বন্ধ করে আবার খুললো। নাহ ভুল দেখছে না সে। সত্যিই পৃথা খাবার নিয়ে বসে আছে তার জন্য। তুর্য এগিয়ে গেল বিছানার পানে। অবিশ্বাস্য কন্ঠে বলল,
-“তুমি আমার জন্য খাবার এনেছো?”
পৃথা অপ্রস্তুত হলো আবারও। আমতা আমতা করে বলল,
-“তা তো প্রতিদিনই আনি। শুধুমাত্র প্রতিদিন ঘুমিয়ে থাকি আর আজ জেগে আছি এই টুকুই পার্থক্য।”
তুর্য আর কথা বাড়ালো না। তার বউ যে তার জন্য খাবার নিয়ে এসেছে এই তো অনেক। এরপর আবার বেশি কিছু বলতে গেলে দেখা যাবে এইটুকু যত্নও কপালে জুটবে না। তুর্য বসে পড়লো বিছানায়। খাবার প্লেট হাতে নিয়ে বলল,
-“পাশে বসো খাইয়ে দিচ্ছি তোমাকে।”
পৃথা খায়নি, তুর্যের জন্যই বসে ছিল এতক্ষন। এই কয়দিন তুর্যের হাতে খেতে খেতে তার হাতে খাওয়াটা কেমন একটা বদ অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে পৃথার। কিন্তু এই মুহূর্তে এসে ভিতরে ভিতরে একটা অস্বস্তিবোধও হচ্ছে ভীষনভাবে। এই কয়দিন তো তুর্য তাকে ঘুমের মধ্যে খাইয়ে দিয়েছে তাই তেমন কোনো অনুভূতির উপস্থিতি টের পায়নি হৃদয়ে। কিন্তু আজ তো জেগে আছে। কেমন একটা লাগছে ভিতরে ভিতরে। একটু লজ্জা, একটু অস্বস্তিবোধ, একটু ভালো লাগা সব মিলিয়ে মিশ্র এক অনুভূতির আভাস পাচ্ছে সে নিজ হৃদয়ে। পৃথা চোখ ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকালো। কন্ঠ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চালিয়েই বলল,
-“আমি খেয়েছি। আপনি খেয়ে নিন এখন।”
তুর্য শীতল দৃষ্টিতে তাকালো পৃথার পানে। ঠান্ডা কন্ঠে বলল,
-“তোমার মুখ দেখলেই তোমার পেটের খবর আমার কাছে চলে আসে। পাশে বসো খাইয়ে দিচ্ছি।”
পৃথা অবাক হলো। আনমনেই মুখে হাত চলে গেল মেয়েটার। তার মুখে কি লেখা আছে যে সে খায়নি অপেক্ষা করে বসে রয়েছে। আয়নায় দেখতে হচ্ছে তো বিষয়টা। পৃথার ভাবনার মধ্যেই তুর্য মৃদু ধমকে উঠলো তাকে। ভারী কন্ঠে বলল,
-“কি হলো বসো।”
পৃথা আর দ্বিরুক্তি করলো না। এত রাত পর্যন্ত বসে থাকতে থাকতে পেটে ক্ষুধায় লাল বাত্তি জ্বলতে শুরু করেছে। এই লাল বাত্তির যন্ত্রনার থেকে অস্বস্তিবোধ উপেক্ষা করে খেয়ে নেওয়া ভালো। পৃথা বসে পড়লো তুর্যের পাশে। তুর্য সময় নিল না। মেয়েটা বসতেই ছোট ছোট লোকমা করে তুলে দিতে শুরু করলো তার মুখে আর সাথে সাথে নিজেও খেতে শুরু করলো তৃপ্তি নিয়ে।
***
বেশ কিছুটা সময় নিয়ে দুজনেই খাওয়া শেষ করলো। অতঃপর দুই দিকে দুইজন মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়লো বিছানায়। কিন্তু আজ কেন যেন পৃথা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে থাকতে পারলো না। অল্প সময়ের ব্যবধানেই সে ঘুরে গিয়ে তাকালো তুর্যের পানে। মায়া হলো ভীষন। লোকটা নিশ্চই খুব ক্লান্ত। তখন কেমন শুয়ে পড়লো। এতদিন করতে চাওয়া প্রশ্নটা আর নিজের ভিতরে চেপে রাখতে পারলো না পৃথা। হুট করেই বলে ফেললো,
-“আপনার কি খুব বেশি ক্লান্ত লাগছে?”
তুর্য অন্য দিকে মুখ করেই জবাব দিল,
-“ঠিক ক্লান্ত না তবে সারাদিনের কাজ কর্মে হাঁপিয়ে উঠেছি ভীষণ, মাথাটাও ধরেছে।”
পৃথা বিছানায় উঠে বসলো। ইতস্তত করে বলল,
-“আপনার মাথাটা টিপে দেব আমি? দেখবেন আর মাথা ব্যথা থাকবে না।”
তুর্য অবাক হলো। তড়িৎ গতিতে সে তাকালো পৃথার পানে। আজ কি হয়েছে মেয়েটার? এতটা খেয়াল রাখছে তার। তবে কি পৃথা সব মেনে নিতে শুরু করেছে? ভেঙে গেছে কি তার অভিমান? তুর্য ক্ষানিকটা অবাক সুরেই বলল,
-“সূর্য আজ কোন দিক থেকে উঠেছে? এত রাত অব্দি জেগে আছো, আমার জন্য খাবার আনছো আবার এখন বলছো মাথা টিপে দিবে?”
পৃথার কেমন ভালো লাগলো না তুর্যের কথাগুলো। সে কি স্বামীর প্রতি একটু মায়া করে কিছুই করতে পারে না। তাছাড়া আজ যা যা করেছে তাতে তার কতটা অস্বস্তিবোধ হয়েছে তা কি এ জানে? জানে তো নাই উল্টো তার অস্বস্তিবোধকে আরও বাড়িয়ে দিতে কতগুলো কথা বলল। পৃথা মাথা নুইয়ে ফেললো। মিনমিনিয়ে বলল,
-“ঠিক আছে দেব না মা টিপে।”
তুর্য এক দন্ড সময়ও ব্যয় করলো না। তড়িঘড়ি করে মাথা রাখলো পৃথার কোলে। ক্যাবলার মতো হেসে বলল,
-“এই না না আমি তো মজা করছিলাম একটু। তুমি মাথা টিপে দাও আমার।”
পৃথা শিউরে উঠলো তুর্যের এহেন স্পর্শে। ভিতরে ভিতরে অস্বস্তিবোধেরা যেন আরও ডানা মেললো। হৃদ স্পন্দন বাড়লো দ্রুত। ঢোক গিললো পৃথা অতঃপর বলল,
-“বালিশ আছে তো।”
তুর্য শীতল দৃষ্টিতে তাকালো পৃথার পানে। মৃদু কন্ঠে বলল,
-“তোমার কোলে মাথা রেখে যে শান্তি আমি পাচ্ছি তা ঐ নরম তুলতুলে শিমুল তুলার বালিশের নেই।”
পৃথা আর উত্তর দিল না কোনো। লাজুক ভঙ্গিতে নিজের নরম হাত রাখলো স্বামীর মাথায়। আলতো হাতে টিপে দিতে শুরু করলো মাথাটা। তুর্য পরম আবেশে নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে নিল। কিঞ্চিৎ সময় নিয়ে বলল,
-“তোমার হাত দুটো বেশ নরম বউ।”
পৃথা লজ্জা পেল। লাজুক হেসে বলল,
-“আর আপনার কপালটা ভীষন শক্ত।”
৩৮.
দুপুরের তপ্ত রৌদ্র। চারদিকে খা খা করছে যেন। সেই রৌদ্রকে মাথায় নিয়েই কলেজের সম্মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে পৃথা এবং ইরা। একটু আগেই কলেজ ছুটি হয়েছে তাদের। প্রতিদিন তাদের ছুটির আগেই বাড়ির গাড়িটা দাঁড়িয়ে থাকে এখানে তাদের। কিন্তু আজ এখনও আসছে না কেন কে জানে। চারদিকে একটু লোক সমাগমও বেশি আজ। আশেপাশে কিছু একটা ঘটেছে সম্ভবত। এতক্ষন ক্লাসে থাকার দরুন তারা জানে না কিছুই। তবে দলে দলে যেভাবে লোকজন ছোটাছুটি করছে তাতে মনে হচ্ছে মারাত্মক কিছু ঘটেছে। সকলের চোখে মুখেও কেমন আতঙ্কের ছাপ। পৃথা আর ইরার চেয়ে চেয়ে দেখছিলো সকলকে এর মধ্যেই কতগুলো ছেলে এসে দাঁড়ালো তাদের পাশে। সম্ভবত এ কলেজেরই শিক্ষার্থী এরা। কলেজ ড্রেস দেখে তো তাই মনে হচ্ছে। ছেলেগুলোর মধ্যে একজন হঠাৎ বেশ আতঙ্কের স্বরে বলল,
-“দেখলি কি নির্মম ভাবে মা’র’লো লোকটাকে।”
ছেলেটার কথা শেষ হতে না হতেই আরেকটা ছেলে বলল,
-“বুকটা একদম গু’লি করে ঝাঁ’ঝ’রা করে দিয়েছিল দেখেছিস?”
আরেকজন বলল,
-“ওদের প্রশিক্ষণই দেওয়া হয় মায়া দয়াহীভাবে।”
ইরা আর পৃথা পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনলো ছেলেগুলোর কথা। ভিতরে ভিতরে কৌতুহল অনুভব করলো তারা। কে আবার কাকে মে’রে’ছে? আর মা’রা’র’ও আবার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় নাকি? ইরা কিছুটা কৌতুহল নিয়েই ছেলেগুলোকে প্রশ্ন করলো,
-“কি হয়েছে ওখানে?”
ছেলেগুলো ওদের দিকে তাকালো। একজন বলল,
-“এনকাউন্টার হয়েছে।”
সাথে সাথেই আরেকজন বলল,
-“আরুশ শেখ তার ক্যারিয়ারের চতুর্থ একাউন্টারটা করে ফেলেছে আজ এখানে।”
চলবে…..