অবাধ্য প্রেম পর্ব-২৯+৩০

0
471

#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_২৯
#নন্দিনী_নীলা

আকাশে মেঘ বৃষ্টির খেলা। হুটহাট আকাশ মেঘলা হয়ে যায় আর ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পরতে থাকে ভালোই লাগে এমন খেলা দেখতে কিন্তু এখন যে কাজের তাড়া বড়। বিয়ের সব আয়োজন করতে চেয়েছে বাগানে। বৃষ্টির জন্য কাজ এগিয়েছে না।
আজ সবাই যাবে মার্কেট করতে। বিয়ের শপিং কিছু করেছে বাড়ির লোকেরা এখন কনে তার নিজের পছন্দে বিয়ের পোশাক কিনবে সে জন্যই নিয়ে যাবে। বর কনে কে নিয়ে বিয়ের শপিং করতে যাবে। সাথে আছি আমি, নিবিড়, মাহি, আবির।
তাহমিনা আপু আর রাফসান কাকাকে আলাদা গাড়িতে দেওয়া হলো। তাদের একটু প্রাইভেসি দেওয়ার জন্য আরেকটা গাড়ি নেয়া হলো যেটা বাদবাকি আমরা সবাই উঠলাম। মাহি আর আমি পেছনে বসেছি‌ সামনে নিবিড় আর আবির।
মার্কেটে এসে দেখলাম তাহমিনা আপু এসে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের জন্য ওয়েট করছে।

সবাই মিলে একসাথে শপিং মলে ঢুকলাম। আপুর জন্য বেনারসি দেখা হচ্ছে। আমরা সবাই দেখছি নিবিড় ফোন কানে ধরে ওই দূরে দাঁড়িয়ে কার সাথে যেন কথা বলছে। আপু শাড়ি চয়েজ করতে পারছে না বারবার কাকার দিকে তাকাচ্ছে তার তাকানো দেখে আমি বুঝে ফেললাম ফট করেই। হয়তোবা আপু চাইছে কাকা তাকে শাড়ি চয়েজ করে দিক। কাকা বুঝতে পারছে না শুধু জিজ্ঞেস করছে কোনটা ভালো লাগছে কোনটা ভালো লাগছে।
কাকার এমন গাধামি দেখে আমার হাসি পাচ্ছে।
আপু যে নিজে থেকে এ কথাটা বলতে পারবেন আর কাকা ও তার ইশারা বুঝতে পারবেনা। মাঝখান থেকে কি আপু শাড়ি না কিনে চলে যাবে নাকি আমাকে কিছু একটা করতে হবে।

আমি উঠে গিয়ে কাকার পাশে বসে ফিসফিস করে বললাম কাকা কে উদ্দেশ্য করে ,, ‘ কাকা আপনি একটা শাড়ি চয়েজ করে দিন আপুকে। আপনার পছন্দের শাড়ি পরার জন্য আপু পছন্দ করছে না। আপু চাইতেছে আপনি তাকে শাড়িটা পছন্দ করে দেন। কিন্তু আপনি তো কিছুই বুঝতে পারছেন না। আপনি এই বুদ্ধি নিয়ে কিভাবে পুলিশে চাকরি পেলেন সেটাই আমার মাথায় ঢুকছেনা।’

কাক আমার দিকে বিস্ময়কর চোখে তাকালো। আমি উঠে দাঁড়ালাম। নিবির এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।

আমি কপাল কুঁচকে বললাম, ‘ কি হয়েছে?’

‘ ফিসফিস করে কাকাকে কি বললে?’

‘ যাকে বলেছি সে শুনলেই হবে আপনার জানতে হবে না।’

‘ কিন্তু আমি তো শুনে ফেলেছি।’

‘ তো জিজ্ঞেস করছেন কেন?’

‘জিজ্ঞেস করছি কেন সামনে তাকাও তাহলেই বুঝতে পারবে!’

আমি বললাম, ‘আজব তো সামনে তাকিয়ে আমি কি বুঝতে পারবো আপনি বলেন।’

নিবিড় আমার মাথায় হাত দিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে সামনের দিকে ঘুরিয়ে বলল, ‘ দেখো।’

আমি সামনে তাকিয়ে হা করে আছি। রাফসান কাকা সামনে থাকা সবুজ একটা শাড়ি হাতে নিয়ে বসে আছে। আমি তো চোখ বড় বড় করে সবুজ শাড়িটার দিকে তাকিয়ে আছি আপুর কাছে একদিন শুনতে পেয়েছি সে নাকি সবুজ কালার পছন্দ করে না। যে কালার আপুর পছন্দ নয় সেইটাই রাফসান হাতে ধরে বসে আছে।

আমি বিরবির করে বললাম, ‘ কাকা কি সবুজ কালার ছাড়া আর কোন কালার পেল না ধরার জন্য। এই কালার তো আপু একটু পছন্দ করে না একদিন আপু বলেছিল।’

নিবিড় বলল, ‘ কিন্তু আমার কাকার তো এই কালার টাই ফেভারিট। তুমি তাকে নিজের পছন্দমত চয়েজ করে দিতে বলছ তো সে তার পছন্দমত ধরেছে।’.

আপনি তারমানে আগেই জানতেন তাদের পছন্দের মধ্যে ঝামেলা আছে।

‘হুম আমি তো সবই জানি। কারণ আমি তো কাকার প্রেম ডাইরিটা লুকিয়ে পড়ে ফেলেছিলাম।’

‘ আপনি জেনে বুঝে আমাকে এটা করতে দিলেন কেন?’

‘তোমার মাথায় যে সব গাধামো বুদ্ধি সেটা বোঝানোর জন্য।’

আমি দাঁত কটমট করে বসলাম। নিবিড় গিয়ে কাকার হাত থেকে শাড়ি ফেলে নিজের চয়েস করা একটা শাড়ি বলতে গেলে এখানে সবচেয়ে সুন্দর যে শাড়িটা আমার এটাই ভালো লাগছিল সেই শাড়িটা কাকার হাতে দিলো। আপুর তখন কল আসছিল তাই একটু উঠে গেছিল । এইজন্যে সবকিছুই তার নজরের আড়ালে হল তারপর নিবি ড় কাকা কি কি যেন বলল কাকা সেই শাড়িটা দিকে তাকিয়ে বলল,, ‘শাড়িটা তো খুব সুন্দর তাহমিনাকে খুব সুন্দর মানাবে তাই নারে নিবিড়।’

কাকা যখন এই কথাটা বলছিল সেই মুহূর্তেই আপু এসে বসে আর কাকার সব কথা শুনতে পায়। কাকার কথা শুনে আপু তো লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে।

কেনাকাটা শেষ করে আমরা রেস্টুরেন্টে গেলাম। ডিনার করে বাসায় ফিরে যাবে সবাই। রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসেছি সবাই তখন আপুর ফোনে কল আসে কে যেন কল করেছে। তাকে আপু রেস্টুরেন্টে আসতে বলল। আপু কথা শেষ করার পরে বলল লিহান নাকি কল করেছিল। আমরা আসার সময় লিহানকে ডাকতে গেছিলাম কিন্তু সে দুপুরে খেয়েই ঘুম দিয়েছে তার ঘুম ভাঙানো যায় নাই এজন্য তাকে রেখে আসছি।খাবার অর্ডার দেওয়া হলো।

মাহি নিজের ইচ্ছামত অর্ডার দিয়েছে আবির ও নিজের ইচ্ছামত দিয়েছে আর আমাদের সবারটা দিয়েছে নিবিড়। মাহি বসেছে আমার পাশে একটু পর পর আমার কানের কাছে বলছে আমার ড্রেসটা সবচেয়ে সুন্দর হয়েছে তাই না।
আমি মাথা নাড়িয়ে স্বীকার করে যাচ্ছি কতবার যে বললাম। আর আবিরের ব্যাপারটা তো আমি ধরতে পারতেছি না। ওর দিকে যতবার আমি তাকিয়েছি দেখেছি ও আমাকে দেখে শুধু মিটিমিটি হাসছে। কয়েকবার ওকে ডেকে জিজ্ঞেসও করেছি, সমস্যা কি? আমার দিকে তাকিয়ে হাসছো কেন?’

আবির তখন হাসি অফ করে বলে, ‘ কেন হাসলে সমস্যা কি? তোমার তো খুশি হওয়া উচিত আপু তোমাকে দেখে আমি খুশি আছি হাসিখুশি আছি।’

‘আমাকে না দেখলে কি তুমি হাসি খুশি থাকো না। তোমার হাসি দেখে তো আমার অন্য কিছু মনে হচ্ছে। সত্যি করে বলো তুমি আমাকে দেখে হাসো কেন?’

আবির বিপাকে পড়ে যায়। ছোঁয়া তো ওকে একদম চেপে ধরেছে সত্যি কথা না জেনে মনে হয় ওকে ছাড়বেই না। কি বিপদে পড়ায় গেল। তখন আবির কায়দা করে একটু অ্যাক্টিং করে। ছোঁয়ার পেছনে তাকিয়ে বলে, ‘আরে নিবিড় ভাইয়া দেখো না ছোঁয়া আপু কি সব জিগ্গেস করছে আমাকে।’

আমিও বোকার মত পেছনে তাকাতেই সামনে থেকে আবির চলে যায়। আর আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি ফাঁকা কেউ নাই। আবির আমাকে বোকা বানিয়েছে। এখন আবার খাবার টেবিলে বসে দাঁত কেলাচ্ছে। আমি রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করছি আবিরের দিকে। হুট করে আমার নজর গেল আবিরের চোখের দৃষ্টির উপর। ভালো করে খেয়াল করে দেখি আবির একবার আমার দিকে তো একবার নিবিড়ের দিকে তাকাচ্ছে। আর মিটি মিটি হাসছে।

আমি ফট করে বসা থেকে দাঁড়িয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ এই আবির চলো একটু এদিকে।’

আবির থতমত খেয়ে আমার দিকে তাকালো।
হতবুদ্ধি চোখ মুখ করে বলল, ‘কেন আপু?’

পাশ থেকে মাহি আমাকে বলল, ‘তুমি এখন কোথায় যাবে?’

তাহমিনা আপু বলল, ‘ ক‌ই যাবি? ‘

আমি সবার উদ্দেশ্যে কি বলব ভাবছি। উত্তেজিত হয়ে তো আবিরকে ডেকে ফেললাম এখন সবার উদ্দেশ্যে আমার এমন কিছু বলতে হবে যাতে সবাই উত্তর পেয়ে যায়।

আমি নিবিড়ের দিকে রাগ মিশ্রিত চোখে চেয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললাম, ‘ আমার একটা দরকার আছে। তাই ভাবছি আবির কে নিয়ে যাই ও তো ফ্রি আর ও তো সবকিছুই চিনে।’

‘ রাফসান কে নিয়ে যা।’

‘না না না তার দরকার হবে না। আবির গেলেই হবে। আবির চলো তো বলেই বেরিয়ে এলাম আবির হয়তোবা বুঝতে পেরেছে আমি ওকে কায়দা করে আমার প্রশ্নে জালে ফাঁসানোর জন্য নিয়ে যাচ্ছি।

ও নিবিড় কে কিছু বলতে যাচ্ছিল। আমি তখন চেঁচিয়ে ডেকে উঠি।
আবির আর নিবিড় কে কিছু বলার সুযোগ পায় না দৌড়ে আমার সাথে হাঁটতে লাগে। আবিরকে টেনে বাইরে এনে কোমরে হাত দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে জিজ্ঞেস করি, ‘ তোমার ভাই কে আর আমাকে দেখে মিটিমিটি হাসছিল কেন? সত্যি করে বলো না হলে কিন্তু তোমার যে গার্লফ্রেন্ড আছে সেটা আমি নিবিড়কে বলে দেব।’

আবির বলে, ‘আমার গার্লফ্রেন্ড আছে তার প্রমাণ কি? আর ভাইয়াকে বললে তাই কি হবে ভাইয়ার ও তো আছে।’

আমি হতবিহ্বল কন্ঠে বলি,’ কিহহ বললে?’

#চলবে……..

#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_৩০
#নন্দিনী_নীলা

আবির বলল,’ জোরেই তো বললাম আমার কথা কি তুমি শুনতে পাও নাই?’

আমি বললাম, ‘ চুপ তোমার ভাইয়া আসছে টপিক চেঞ্জ করো।’

আবির আমার পেছনে তাকিয়ে দেখলাম আসলেই নিবিড় বাইরে আসছে তা দেখে ও তো জাটকা খেলো। বিস্মিত গলায় বলল, ‘ তুমি তো আমার দিকে ফিরে আছো তুমি বুঝলে কিভাবে ভাই আসছে?’

‘ রাক্ষসটা যেভাবে আমাদের বাইরে আসার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমি নিশ্চিত ছিলাম এখানে আসার দুই মিনিটের মাথায় হাজির হবে। ‘

‘ বাহ ভাইয়াকে কত চেনো বোঝো তাই না আপু‌।’ বলেই আবার মিটিমিটি করে হেসে উঠলো।

আমি রেগে কিছু বলতে যাব তখনি নিবিড় এসে হাজির। ও এসেই আবিরের শেষ কথা শুনে ধমক দিয়ে বলল, ‘ বেশি পাকনামো করলে কিন্তু এখানে আমার কাছে কান মলা খাবি যা এখান থেকে।’

নিবিড়ের ধমক শুনে আবির চলে যাচ্ছিল আমি পেছনে ডেকে বললাম, ‘ আরে আবির আমাকে রেখে কোথায় যাচ্ছ?’

নিবিড় আমার হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে বলল,,’ তুমি তো আমার সাথে যাবে সোনা। ওকে যেতে দাও।’

আমি আবিরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। নিবিড়ের কথা আর আমার হাতে নিবিড়ের স্পর্শ পেয়ে শিউরে উঠলাম। নিবিড়ের এমন ধারা কথা শুনে আমার মুখটা হা হয়ে গেল। আমি অবাক নয়নে নিবিড় দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকালাম।

আমি বিস্মিত গলায় বললাম, ‘ কি বললেন আপনি ?’

নিবিড় আমার কথার উত্তর দিল না। আমাকে টেনে কোথায় জানি নিয়ে যেতে লাগল।
‘ আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে।’

‘ রাস্তায় চেঁচামেচি না করে চুপচাপ চলো আমার সাথে! রাস্তায় মানুষ কে সার্কাস দেখাতে না চাইলে। শান্ত থাকো।’

‘ আপনি ওমন অদ্ভুত করে কথা বললেন কেন আমার সাথে?’ হাঁটতে হাঁটতে আমি নিবিড়ের কান গালের দিকে চেয়ে থেকে প্রশ্ন করলাম। নিবিড়ের বাচ্চা আমার কথার উত্তর দিল না।

পাশ থেকে কারো ডাক কানে এলো ছোঁয়া বলে ডাকছে। আমি অপর সাইডে তাকিয়ে দেখি লিহান। আমাকে ডাকছে।

‘ আরে ছাড়ুন লিহান ডাকছে শুনি কি বলতে চায়।’

‘ ও তোমাকে খুঁজতে আসে নাই। আর না জরুরি কথা বলতে ডাকছে। তাই না শুনলেও চলবে।’

‘ কিন্তু আপনি আমায় ক‌ই নিয়ে যাচ্ছেন?’

নিবিড় আমার দিকে চেয়ে মুচকি হেসে বলল, ‘ এতো অধৈর্য কেন?’

‘ আপনিও হাসছেন? উফফ আজ সব উল্টা পাল্টা হচ্ছে কেন?’

নিবিড় হাসি মুখে বলল, ‘ কি উল্টা পাল্টা হয়েছে?’

আমি বললাম,, ‘ সবকিছুই। আপনার হাসি আমার হজম হচ্ছে না। একদম আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসবেন না। রেগে তাকান।’

‘ নো আজকে আমি রাগবো না।’

আমি নিবিড় কে রাগানোর জন্য বললাম, ‘ আপনি একটা রাক্ষস। আপনি ফাজিল। আপনি….

নিবিড় আমার কথায় তবু ও রাগ না করে বলল, ‘ এসব বলে লাভ নেই আমি তো রাগ করব না।’

‘ আপনি বুঝতে পারছেন না!’

নিবিড় আমার কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে নিলো। আবার কি ভেবে যেন মুচকি মুচকি হাসতে লাগল। আমার তো পাগল হবার উপক্রম। মাথার ওপরে যাচ্ছে আমি থতমত খাওয়া মুখে নিবিড়ের হাসি মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে আছে এই তুমি এই হাসি আমি সহ্য করতে পারছি না।

নিবিড় আমাকে অবাকের উপর অবাক করতে লাগল। আমাকে নিয়ে এলো জুয়েলারি দোকানে। এটায় আমি একটু আগেও এসেছিলাম। তাহমিনা আপুর সাথে আপু যখন জুয়েলারি কিনছিল তখন আমি একজোড়া কানের দুল দেখছিলাম দেখে আমার অনেক পছন্দ হয়েছিল। কিন্তু স্বর্ণের কানের দুল কিনার মত টাকা না আমার আছে না। না কখনো হবে তাই দেখে উল্টে পাল্টে আবার রেখে দিয়েছি কেউ নজর দেওয়ার আগেই।
এই দোকানে নিবিড় আমাকে কেন নিয়ে আসলো সেটাই আমি বুঝতে পারছি না।

আমি নিবিড়ের দিকে কপাল কুঁচকে বললাম, ‘এখানে নিয়ে আসলেন কেন? এখানে কি কাজ আপনার?’

নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ কাজ আছে বলেই এসেছি। তোমার মত আমি তো আর আজাইরা কাজে যেখানে সেখানে যায় না।’

আমি নক ফুলিয়ে বললাম, ‘ আমি আবার কখন আজাইরা কাজে গেলাম। একদম আমাকে খোঁচা দিবেন না।’

‘ দরকার নাই। শোন আমি কিছু জুয়েলারি কিনব তুমি একটু চয়েস করে দাও। মেয়েদের জিনিস কেনার অভ্যাস নাই তো তাই তোমাকে নিয়ে এলাম।’

‘ করে আর কার জন্য কিনবেন? আর আমাকেই কেন আনতে হবে তখন সবাই ছিল তাদের বলতেন!’

নিবিড় বলল, ‘ পাগল নাকি সবাইকে বলে কি আমি কেস খাবো নাকি। গার্লফ্রেন্ডের জন্য জিনিস কিনবো সেটা কি সবাইকে জানে কেনা যায়।’

‘তাদের জানানো যায় না আর আমাকে জানানো যায় তাই না?’

‘ তারা পরিবারের লোক এই ভাবে কি জানানো যায়? তুমি তো আমার কেউ না তাই তোমাকে জানালে সমস্যা নাই‌!’

আমি করবো না বলে বললাম, ‘ও আচ্ছা। আমি তো আপনাকে কোন হেল্প করব না। যারতার জন্য জিনিস আমি চয়েস করতে পারব না সরি। ‘

‘আচ্ছা না করলে আমি করি তুমি দেখো। আমার নিজের চয়েজ‌ অনেক ভালো।’

আমি রাগ দেখিয়ে বললাম, ‘ আপনি নিজেই করতে পারেন নিজের চয়েস এতো ভালো তাইলে আমাকে নিয়ে আসছেন কেন?’

‘ আমার তো তোমাকে দিয়ে করানোর ইচ্ছে ছিল কিন্তু তুমি তো করবে না তো কি করব নিজের‌ই করতে হবে।’

আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম, ‘ আপনি মাঝে মাঝে ওমন অদ্ভূত ধারায় কথা বলেন কেন আমার সাথে?’

নিবিড় অবুঝ সুরে বলল, ‘ কেমন ধারায়?’

‘ তখন ওমন অদ্ভুত করে হাসলেন কেন?’

নিবিড় আবার ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল, ‘ কেন আমার হাসি কি সুন্দর না? নাকি আমার হাসি দেখে ভয় পেয়ে গেছো! প্রেমে পড়ে যাবে বলে।’

আমি চোখ ছোট ছোট করে বললাম, ‘ আপনাকে ভূতে ধরছে। না হলে আপনার মাথার ইস্কুল ঢিলা হয়ে গেছে অকারনেই হাসছেন পাগলের মত।’

নিবিড় আমার কথা শুনে হা হা করে হেসে উঠলো উচ্চ গলায়।

‘আচ্ছা তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দেব তার আগে তুমি আমাকে কয়েকটা জিনিস চয়েজ করে দাও।’

‘ সবকিছুতেই আপনার শুধু একটা ঝামেলা রাখতে হবে। আচ্ছা বলেন কি কি লাগবে আপনার।’

নিবিড় আমাকে বলল একটাও রিং এক জোড়া কানের দুল।

দোকানে আসার পর আমার নজর শুধু সেই চয়েজ করার কানের দুলের উপরেই পরছিল। আমার নজর আটকে আছে সেখানেই। এটা কেনার মত সামর্থ্য আমার হবে না আর হলেও সেটা দিয়ে আমি আরেকটা কিছু করতে পারবো কানের দুল কিনে আমার টাকা নষ্ট করার মানে হয় না। এটাই নিবিড়কে পছন্দ করে দিলাম আর একটা রিং পছন্দ করে দিলাম। দুটো জিনিসের দাম শুনে আমার মাথা ঘুরে উঠলো। আমি মাথায় হাত দিয়ে নিবিড় কে বললাম, ‘ এই ছোট আন্টির এত দাম? উনারা আপনাকে ঠকাচ্ছে রেখে দিন। এই আপনাকে আমি ২০-৩০ টাকায় এনে দিতে পারব। এখানে এক লাখ টাকা বলছে এরা তো ডাকাত। ‘

নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে গলার স্বর নামিয়ে বলল, ‘ স্টপ দিস। এই রিং তুমি ২০/৩০ টাকায় এনে দিতে পারবে পাগল তুমি?’

‘ একদম আমাকে পাগল বলবেন না‌ এটা তো স্বর্ণের না। এটা এতো দাম কি করে হয়?’

‘ গাঁধী এটা ডায়মন্ডের। নিজের মুখটা বন্ধ রাখ।’ আমাকে ধমক দিয়ে চুপ করালো।

‘ আপনার গার্লফ্রেন্ড বিয়েতে আসবে না?’

নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ আছেই তো আর আসবে কি?’

আমি অবাক গলায় বলল, ‘ আছেই ক‌ই আমি তো তার একটি ছবি ছাড়া। তাকে আর দেখলাম না।’

নিবিড় ভ্রু কুঁচকে অবাক স্বরে বলল, ‘ হোয়াট?’

‘আমার খিদে লাগছে আপনার সাথে পেছাল পারতে পারব না।’
বলেই নিবিড় কে রেখেই আমি রেস্টুরেন্টের দিকে হাঁটতে লাগলাম। নিবিড় ও আমার পেছনেই আসছে।

রেস্টুরেন্টে আসতেই লিহান আমাদের দিকে চেয়ে বলে উঠলো, ‘ ওই ভাবে দুজনে কোথায় যাচ্ছিলে? কত ডাকলাম শুনলেই না।’

আমি হাসার চেষ্টা করে বললাম, ‘ একটা দরকারে গেছিলাম তুমি কোথায় ছিলে তোমাকে তো দেখলাম না?’

লিহান অবাক গলায় বলল, ‘ তুমি না আমার দিকে একবার তাকালে কি যেন বলতে চেয়ে বললে না।’

আমি বিচলিত গলায় বললাম, ‘ কই আমিতো তোমায় দেখিনি এই মাত্র দেখলাম তোমায়।’

লিহান ভাবুক গলায় বলল, ‘ সত্যি দেখনি? তাহলে কি আমি ভুল দেখলাম নাকি!’

নিবিড় বসতে বসতে বলল, ‘ তুমি তো একনাগারে ডাকতেছিলে। এজন্য তুমি আন্দাজ করে নিয়েছে আমরা তোমাকে দেখেছি। এটা জাস্ট তোমার ভাবনা আমরা তোমাকে দেখলে অবশ্যই কথা বলতাম।’

আমি নিবিড়ের কি দারুন মিথ্যা বলার স্টাইলের দিকে তাকিয়ে আছি। এ দেখি আমার থেকেও বেশি বানিয়ে কথা বলতে পারে। ‌
#চলবে……..