অবাধ্য বাঁধনে পর্ব-২৩+২৪

0
333

#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ২৩ক]
______________________
” বাপ ছেলের এক কথা আমাদের পছন্দ অপছন্দ পরে আগে অনু কি বলে সেটা জানার বিষয়।মেয়েটা কি পড়া শেষ করবে নাকি এখনি বিয়ের জন্য মত দেবে।আপনি বলেন ভাবি এত ভালো প্রস্তাব সচরাচর কি পাওয়া যাবে?হাত ছাড়া করলে তো আমাদেরি লস।ছেলের মা বলেছে বিয়ের পরেও ছেলের বউকে পড়াবে তাহলে এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া কি উচিত হবে আপনার বিবেকে কী বলে?”

এই নাগাড়ে কথাটি শেষ করে থামলেন দোলন।অনুর বিয়ের ব্যপারে তিনি ভীষণ খুশি অবশ্য খুশি হবেন না কেন এত বড় ঘর থেকে প্রস্তাব এসেছে কেউ তো চাইবে না ফিরিয়ে দিতে।ঈশা গায়ে ওড়না জড়িয়ে আড়ালে বেরিয়ে পড়লো কক্ষ ছেড়ে এক্ষুনি তাকে অনুর কাছে যেতে হবে।
অনুদের বাসায় এসে বেল বাজাতে দরজা খুলেন অনুর বাবা বেলায়াত।ঈশাকে দেখে তিনি ভীষণ খুশি হলেন।

” কেমন আছো আম্মু?জ্বর সেরেছে?”

” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আঙ্কেল আপনি ভালো আছেন?অনু কোথায়?”

” বেশ ভালো আছি যাও যাও অনু তার রুমে আছে।”

হাসি মুখে অনুর কক্ষে এগিয়ে গেলো ঈশা দরজাটা লাগানো ছিলো ছিটকিনি ছাড়া।অল্প চাপে দরজা ঠেলতে সঙ্গে সঙ্গে খুলে যায় তখনি নজরে আসে বেগুনি শাড়ি পড়া অনুকে।মেয়েটা বিছানার কোনে বসে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে জানলার বাইরে।কক্ষে কারো উপস্থিত টের পেয়ে ভেজা চোখ দুটো মুছে নেয় অনু।ঘাড় ঘুরাতে ঈশাকে দেখতে পেয়ে দ্বিগুণ চমকে যায়।গায়ের শাড়িটা ঠিক করে চপল পায়ে দাঁড়ায় মেঝেতে।

” তুই এখানে?”

” বিয়ে করছিস আমায় ছাড়া।”

” আমি তোকে বলেছিলাম আজ দেখতে আসবে।”

” হুম।”

ঈশা এগিয়ে এলো চোখ বুলালো পুরো রুমটায়।মেঝেতে কয়েকটা কাঁচের চুড়ি ভেঙ্গে পড়ে আছে নিশ্চয়ই জেদ করে ভেঙ্গেছে।

” রাসেল ভাইয়া জানে এসব?”

” ওর সাথে আমার আর কোন সম্পর্ক নেই।”

“কেন সম্পর্ক নেই আমার জন্য?”

অনু নেতিবাচক মাথা নাড়ায়।ঈশা তার হাত টেনে পাশে বসায়।

“যে দেখতে এসেছিলো ছেলে কেমন?”

” জানি না।”

” কেন তুই দেখিসনি?”

” দেখার প্রয়োজন বোধ করিনি।ছেলের মায়ের কথাগুলো গায়ের চামড়া জ্বালিয়ে দিয়েছে।”

” কেন কী বলেছে?”

” বারবার বলছিলো উনার ছেলের মাসিক ইনকাম নাকি অনেক বেশি।উনার ছেলেকে জামাই হিসেবে পেয়ে আমাদের জনম জনমের ভাগ্য।আমাদের মতো পরিবার তাদের জন্য না। চাইলে তারা আরো বড় পরিবারে ছেলের বিয়ের ব্যবস্থা করতে পারেন।”

” তো এখানে পড়ে আছে কেন?”

” ছেলের পছন্দ তাই।”

ঈশা হতাশার শ্বাস ছাড়লো।শাশুড়ীটা বেশি সুবিধার নয় ছেলের ইনকাম নিয়ে যার বিয়ের আগে বড়াই বিয়ের পর না জানি কি কি বলবেন।

” আঙ্কেল আন্টি রাজি?”

” আম্মু রাজি তবে ভাইয়া আর বাবার এক কথা আমি যা বলবো তাই হবে।”

” তো তুই কি করবি?”

” জানি না।মা যা বলবে তাই।”

” আগুনে ঝাপ দিতে প্রস্তুত তাহলে। এসব ছাড় রাসেল ভাইকে ফোন কর সব মিটমাট কর।আমি আর রেগে নেই আর এই বিয়েটা ক্যান্সেল কর।”

খুশিতে ডগমগ হলো অনু।কান্নার মাঝে হেসে ফেললো শব্দ করে খুশিতে জড়িয়ে ধরলো ঈশার গলা।

” সত্য বলছিস আমরা আবার স্বাভাবিক হবো?”

” হুম হবো।”

৪৭.
ব্যস্ততার মাঝে ইসমাইলের খোজ পাওয়ার মাধ্যমটি কাজে লাগাতে বেমালুম ভুলে বসে ছিলো ঈশান।অবশ্য কাজের চাপে এসব কথা মাথায় থাকার কথাও না।সেদিন ধরা পড়া লোকটির দেওয়া নাম্বারে ফোন করলো ঈশান।দুই তিনবার চেষ্টার পর ফোনে পাওয়া গেলো বড় সাহেবকে।ঈশানের পরিচয় পেয়ে কিঞ্চিৎ শব্দ করে হেসে উঠলেন তিনি।

” ঈশান শাহরিয়ার আমাকে ফোন করেছেন এটা তো আমার ভাগ্য?তা বলুন কীভাবে সাহায্য করতে পারি আপনাকে?”

” ইসমাইলকে প্রয়োজন আমার।আমি যে আপনার সাথে যোগাযোগ করেছি এটা যেন ইসমাইল না জানে।”

” ইসমাইল আপনার অনেক কাজ করে দিয়েছে তা আমি জানি শুনেছি।হঠাৎ আবার ওঁকে প্রয়োজন কেন?”

” সেসব কথা পরেও জানতে পারবেন তবে আপনার সাথে আমি একটা ডিল করতে চাই।আপনি যত টাকা চান আমি দেবো শুধু ইসমাইলকে আমার প্রয়োজন।”

” তার খোঁজ আপনি জানেন?”

” জানিনা বলেই আপনার সাথে যোগাযোগ করেছি।”

” আমার এক বিদেশি ক্লাইন্টের সাথে সে প্রতারণা করেছে এর দায়ে ইসমাইলকে তারা নিয়ে যায়।লা শ টা কোথায় ফেলেছে আমি নিজেও জানি না।”

বড় সাহেবের শুনে চমকে যায় ঈশান।ইসমাইলের লা শ! কি বলছেন এসব।

” লাশ মানে?”

“ইসমাইল মারা গেছে সেটা সুনিশ্চিত তবে তার লা শ এই দেশে নেই এটাও আমি সুনিশ্চিত।”

ঈশান থমকে গেলো।ইসমাইল মারা গেছে এটা বিশ্বাস করতেও তার কষ্ট হচ্ছে।এভাবে একটা মানুষ উধাও হয়ে গেলো পৃথিবী ছেড়ে।

৪৮.
সেদিন রাতেই অনু তার বিয়ের ব্যপারটা বেশি দূর যেতে দেয়নি।রাতেই এই বিয়ে না করেছে।এতে অবশ্য অনুর বাবা বেলায়েত বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাননি।তিনি আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এই বিয়ের ব্যপারে অনু যা বলবে তাই হবে।যেহেতু অনুর পড়া শেষ হয়নি তাছাড়া ছেলের পরিবারকে খুব একটা সুবিধার মনে হয়নি তার।কিন্ত বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখালেন অনুর মা দোলন। সেদিন রাতে অনুর উপর ক্ষেপে চেচিয়ে সারা বাড়ি মাথায় তুলেছিলেন।প্রায় একসাপ্তাহ রেগে মেগে অনুর সাথে কথা বলেননি।রাসেলকে পাওয়ার জন্য অনু যেকোনো ঝামেলা পোহাতে রাজি এমনি এমনি এই ছেলেটা বাঘে আনেনি সে কতটা কৌশলে বাঘে এনেছে সেটা একমাত্র অনু জানে।
অপরদিকে ঈশান ঈশার সম্পর্কে উন্নতি হয়েছে।দুজনের ঝুটঝামেলা কিছুটা হলেও কমেছে।
আজ টিউশনিতে যাবে না বলে ঠিক করেছে ঈশা এর পেছেও অবশ্য বড় একটা কারণ আছে।

দুপুরের পর রোদ কেটে আকাশটা মেঘলা হয়ে উঠেছে।চারিদিকে শীতল বাতাস বইছে।ঈশা ব্যাগ থেকে ফোন বের করে কল করলো ঈশানকে।একবার রিং হওয়ার সাথে সাথে ফোন তুললো ঈশান।

” আপনি কোথায় ঈশান?আমি আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো।”

” পাঁচ মিনিট প্লিজ।এই শহরের যানজটের কথা আর নতুন করে বলার নেই।আর একটুখানি অপেক্ষা করো প্লিজ।”

পাঁচ মিনিটের কথা থাকলেও ঈশা দাঁড়িয়ে রইলো প্রায় বারো মিনিট।ঈশান আসতে কপট রাগ দেখিয়ে তাকিয়ে রইলো ঈশা।

” গাড়িতে উঠুন মেডাম একটু দেরি হয়ে গেছে আমার সরি।”

” একটু না আপনি অনেকটা দেরি করেছেন।”

ঈশান হাসলো ঈশা উঠে বসতে পুণরায় চলতে শুরু করলে।ঈশানের পোশাকে বোঝা যাচ্ছে সে অফিস থেকে ফিরেছে তার ক্লান্ত চেহারা দেখে ঈশা বলে,

” দুপুরের খাবার খেয়েছেন?”

” না সময় পাইনি।”

” তাহলে আগে খাবেন তারপর শপিং এ যাবো।”

” একবারে বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে খেতে হবে।”

” এত কথা শুনতে চাই না।”

ঈশান হাসলো ঈশা তার ইদানীং একটু বেশি যত্ন করছে।

” মা এই সাপ্তাহে আসছে তাই তোমাকে আজ তাড়া দিয়েছি শপিং এ যাবো বলে।আমি চাই মায়ের রুমটা নিজের হাতে সাজাতে আর এসব ব্যপারে তুমি সাহায্য করবে।”

” সময় তো একদম কম এই অল্প সময়ে এতগুলো শপিং কর‍তে পারবেন?খাট,আলমারি,সোফা আরো কত কি।আপনি এক কাজ করুন রান্না ঘরটা আন্টির সাজেশন নিয়ে সাজিয়ে নিন যেহেতু আন্টি দেশে আসলে তিনি আপনাকে রান্না করে খাওয়াবেন একজন গৃহিনীর কাছে তার রান্না ঘরটা কিন্তু অতি আপন এবং ভালোবাসার।”

” এটা আমি ভেবে দেখিনি ঈশা ভালো বলেছো।”

ঈশান একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামলো।খাবার অর্ডার করে ঈশাকে বসিয়ে সে চললো ফ্রেশ হতে।

ঈশার টেবিল থেকে কিছুটা দূরের টেবিলে ছিলো ভার্সিটির সেই স্মোক করা বেয়াড়া স্বভাবের মেয়েগুলো।ঈশাকে একা দেখতে পেয়ে তারা উঠে আসে ঈশার কাছে।সেদিনের পর তাদের নামে অভিযোগ জানানো হয় এবং ভার্সিটি থেকে তাদের সবাইকে একমাসের জন্য সাসপেন্ড করা হয়।তাই ঈশার প্রতি তাদের জমানো ক্ষোভ ছিলো অসীম।

ঈশা বসে বসে ফোন স্ক্রুল করছিলো তার পাশে কেউ দল বেঁধে দাঁড়িয়েছে বুঝতে পেরে চমকে তাকায় সে।মেয়েগুলোকে দেখতে পেয়ে কলিজাটা শুকিয়ে এলো ঈশার।দলের মাঝে একটা মেয়ে ঈশার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নেয়।

” কিরে তোকে এখানে পাবো স্বপ্নেও ভাবিনি।কার সাথে এসেছিস তোর নাগরের সাথে?কই তোর নাগর দেখি তারে।”

মেয়েগুলোর বিশ্রি ইঙ্গিতে প্রচন্ড জেদ লাগলো ঈশার।

“বেয়াদবি করছেন কেন আপনারা?সময় থাকতে থাকতে এখান থেকে চলে যান।”

” চলে যাবো?তোর এক ধমকে চলে যাবো কি ভাবিস নিজেকে তোর মতো মেয়ে কি করে এত সুন্দর একটা ছেলে পটায় আমার মাথায় ধরে না।সেদিনের সেই ছেলেটাকে এক দেখাতেই আমি ফিদা।”

মেয়েটার কথা সামিল হয় অন্য একটি মেয়ে সুযোগ পেয়ে ঈশাকে অপমান করতে পিছ পা হয়না সেও।

” আসলেও ছেলেটাকে দেখছিস এই মেয়েটার সাথে মোটেও যায় না।এই মেয়ে ওই ছেলের নাম্বারটা দে।”

তীব্র অপমানে গা জ্বলে উঠলো ঈশার।মুখ ফুটে কিছু বলার আগে ঈশানের কণ্ঠে থমকে যায় সে।মেয়েগুলো আকস্মিক ঈশানের কথা শুনে ঘুরে তাকায়।

” নাম্বার দিয়ে কি করবেন প্রেম টেম করার ইচ্ছে আছে নাকি?সরি আমি অলরেডি বুকিং হয়ে গেছি।বউ আমার ভীষণ তেজি অন্য মেয়েদের দিকে তাকালে চোখের চাহনি দিয়ে আমায় ভষ্ম করে ছাড়বে।”

ঈশান থামলো ঈশার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে তার কাধে হাত রেখে আগলে ধরলো।মেয়েগুলো ড্যাবড্যাব চোখে চেয়ে রইলো ঈশানের দিকে।

” আমার নাম্বার দিয়ে কি করবেন আপনারা হু?প্রেম করতে চাইছেন?কি বলছিলেন যেন ঈশার মতো মেয়ে আমার সাথে যায় না।তবে কার সাথে যায় আপনাদের মতো মেয়েদের সাথে?আমার রুচির এতটাও দুর্ভিক্ষ হয় নি যে ঈশান শাহরিয়ার আপনাদের মতো মেয়ের সাথে প্রেম করবে।”

অপমানে নড়ে চড়ে একে অপরের দিকে তাকালো মেয়েগুলো।তারা ভাবেনি সত্যি সত্যি ঈশানের দেখা পাবে।ঈশান মেয়েগুলোর চাহনি বুঝতে পেরে ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

” জান বিরক্ত লাগছে তাই না?এই আপনারা সরুন সামনে থেকে আমার জানের বিরক্ত লাগছে, থাক সরতে হবে না আমরাই সরে যাই ডাস্টবিনের আশেপাশে তো আর বসা যায় না।”
#চলবে___

#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ২৩ খ ]
___________________
অনেক বছরের অপেক্ষার অবসান আজ হতে চলেছে।ঈশানের মা আজ দেশে ফিরছেন এই নিয়ে ঈশান আর রাসেলের আনন্দের শেষ নেই।সারা বাড়ি সাজানো হয়েছে ফুল দিয়ে।ঘরের ভেতরে প্রবেশ পথে গোলাপের পাপড়ির গালিচা সাজানো হয়েছে।ছেলের এসব পাগলামিতে কান্নার মাঝেও হাসলেন মাহমুদা।এয়ারপোর্টে দেখা হওয়ার সাথে সাথে মাহমুদার কান্না শুরু এর মাঝে আর থামেনি দুই ছেলেকে কাছে পেয়ে আবেগে আপ্লুত তিনি।লাল গালিচায় পা ফেলে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করেন মাহমুদা।পুরো বাড়িটা তিনি দেখছেন অবাক চোখে।

” আমার দুই ছেলে এত বড় হয়ে গেছে।এত বড় বাড়ি তোমাদের!”

” বাড়ি বড় হলে কি হবে থাকার মানুষ নেই আন্টি।এখন তুমি এসেছো ঘরটা আনন্দে ভরে গেছে।”

রাসেলের কথায় স্মিত হাসলেন মাহমুদা।আদুরে হাতে ছুঁয়ে দিলেন তার গাল।কঁপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে চুমু খেলেন শব্দ করে।ঈশানকে পাশে টেনে তার কপালেও এঁকে দিলেন ভালোবাসার পরশ।

” আমার দুই হীরার টুকরো ছেলে জীবনে আরো উন্নতি কর।”

৪৭.
হঠাৎ করে নাজিমের বিয়ের দিন ধার্য করা হয়।পারিবারিক ভাবে স্বল্প আয়োজনে বিয়েটা সম্পর্ন হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।যেহেতু হঠাৎ বিয়ের দিন ঠিক হয়েছে তাই সবার মাঝে হুড়োহুড়ি ব্যপারটা বৃদ্ধমান।শপিং নিয়ে সবার তোড়জোড় অবস্থা।মাহমুদা দেশে এসেছেন তাই বিয়ের দাওয়াত থেকে বাদ পড়েননি তিনিও।নাজিমের মা আলেয়া এসে দাওয়াত করে গেছেন।ঈশান তার মাকে নিয়ে শপিং এর উদ্দেশ্যে বের হয়।রাসেল তার সঙ্গেই ছিলো।মায়ের জন্য শাড়ি কিনে অর্নামেন্টসের দোকানে প্রবেশ করতে এক পাশে চেপে দাঁড়ায় এই দোকানে মেয়েদের অভাব নেই।মাহমুদা পুরো দোকানটায় চোখ বুলাতে নজরে আসে একটির মেয়ের মুখ যাকে তিনি ভীষণ পছন্দ করেন।

ঈশা আর অনু দুইজনে গহনা পছন্দ করছিলো আকস্মিক কেউ ঈশার হাত টেনে ধরে।অবাক চোখে পেছনে ঘুরতে নজরে আসে হাস্যজ্বল একজন ব্যক্তির মুখ।

” এই তুমি ঈশা না?”

মাহমুদার কথায় দ্বিধাদ্বন্দে মাথা নাড়ায় ঈশা।

” জ.. জি।”

” আমাকে চিনতে পেরেছো?”

” আপনি কে উম মনে পড়ছে না।”

” রুমার খালা তোমার সাথে ভিডিও কলে কথা বলেছি মনে আছে?”

ঈশার মনে পড়ে উনি ঈশানের মা।চিনতে এতটা ভুল করেছে।এক গাল হেসে দ্রুত সালাম জানালো মাহমুদাকে।মাহমুদা দোকান থেকে বের করে এনে রাসেলের সামনে দাঁড় করালো ঈশাকে।

” দেখ কাকে খুঁজে পেয়েছি।”

ঈশান ফোনে কথা বলছিলো মায়ের পাশে ঈশাকে দেখে দ্রুত এগিয়ে আসে।অবাক চাহনি নিক্ষেপ করে দুজনের দিকে।ঈশান কান থেকে ফোন রেখে বলে,

” ঈশা তুমি এখানে?”

ঈশা প্রত্যুত্তর করলো না।মাহমুদা খুশিতে জড়িয়ে ধরলেন ঈশাকে।মাহমুদার ব্যবহারে ধাপে ধাপে অবাক হলো ঈশা যেখানে ঈশান রাগি তেজি দেমাকি সেখানে তার মা সহজ সরল বন্ধুত্বপূর্ণ।মাহমুদাকে শাড়ির সাথে বাকি অর্নামেন্টস গুলো অনু আর ঈশা মিলে পছন্দ করে দেয় তাদের মাঝে তৈরি হওয়া মেলবন্ধন দেখে মনে মনে খুশি হয় ঈশান।কেনাকাটা শেষ করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন তারা।ড্রাইভিং সিটে ঈশানের পাশে ছিলেন মাহমুদা রাসেল পেছনে বসে ছিলো।হঠাৎ মনটা খারাপ হয়ে গেলো মাহমুদার হতাশার শ্বাস ছেড়ে আফসোস সুরে রাসেলের উদ্দেশ্যে বলে,

” খাঁটি রত্নটা হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছেরে রাসেল।”

সন্দিহান চোখে রাসেল বলে,
” কিসের রত্ন?”

” ঈশা রত্নের কথা বলছি মেয়েটা কি ভালো তোর পাশে ভালো মানিয়েছে।”

” মানালেই কি বিয়ে করতে হবে আন্টি?”

” জানি তোর পছন্দের মানুষ আছে বাবা।কিন্তু ঈশাটা যে হাত ছাড়া হয়ে যাবে এই ভেবে আফসোস হচ্ছে।”

” শুধুই কি ঈশাকে ভালো লেগেছে তোমার ঈশার পাশের মেয়েটাকে ভালো লাগেনি?”

” সেও ভালো এক কথায় ভীষণ ভালো।”

” ঈশাকে তোমার ছেলের জন্য নিয়ে যাও আন্টি।”

” পা গ ল নাকি আমি ওর মতো মিষ্টি মেয়েকে কি না ঈশানের মতো ঝাঁঝের ভান্ডারে ফেলবো।ঈশান এই মেয়ের যত্ন করতে পারবে?রাগের মাথায় চড় থাপ্পড় মা র তে দ্বিধা করবে না আমার ছেলেকে আমি ভালোভাবে চিনি।”

” তা ঠিক বলেছো।”

কথাটা বলে ঠোঁট চেপে হেসে ফেলে রাসেল।ঈশান ঘাড় ঘুরিয়ে চোখ রাঙিয়ে তাকায় রাসেলের দিকে।ঈশানের নজর এড়ালো না মাহমুদার তিনি উলটো কঠোর চোখে তাকালেন ঈশানের দিকে।
.

রাত দুইটা ছুঁই ছুঁই ঈশান তার কাজ সেরে মাত্র বাসায় ফিরেছে।নাজিমের বিয়ে নিয়ে তার কম দায়িত্ব নেই সেই দায়িত্ব পালনে তাকে সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হচ্ছে।সারাদিনের ক্লান্তির অবসান ঘটাতে এই মুহূর্তে ঈশাকে প্রয়োজন তাই চিন্তা ভাবনা ছাড়া এত রাতে ফোন করে বসলো ঈশাকে।ঈশা তখন গভীর ঘুমে কাবু কল আসতে ঝাপসা চোখে রিসিভ করে কানে তুলে,

” হ্যালো কে।”

ঈশার ঘুম জড়ানো কণ্ঠ শুনে ঈশান মজার ছলে বলে,

” আমি সে।”

” সে আবার কে?”

” কে টাই হলো সে।”

” কি সে কে? ”

” আমি সে।”

” পা গ ল নাকি।কি সে কে সে কে করছেন।”

ঈশার ঘুমটা প্রায় ছুটে এলো স্কিনে ঈশানের নাম্বার দেখে অবাক হয়ে বলে,

” এত রাতে আপনি ফোন করে টিটকারি করছেন আমার সাথে।আপনি কি প্যাঁচা?রাত জাগা প্যাঁচা।”

” আমি প্যাঁচা তুমি প্যাঁচি এবার শান্তি।কেমন আছো তুমি?”

” ভালো ছিলাম তবে এখন ভালো নেই।”

” সরি ফোন করার জন্য ভালো লাগছিলো না তাই ফোন করলাম।

” রাতে খেয়েছেন?”

” না।”

” খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।কাল থেকে হলুদের অনুষ্ঠান আরো অনেক কাজ আছে।”

” তোমাকে দেখার অপেক্ষায় রইলাম।”

৪৮.
গায়ে হলুদে মেয়ের বাড়ির এবং ছেলের বাড়ির প্রত্যকের পোশাকের রঙ নির্ধারিত ছিলো।মেয়েরা গোলাপি রঙের শাড়ি পরবে এবং ছেলেরা বাসন্তি রঙের পাঞ্জাবি।ঈশা অনু দুজনে একই সাজে সেজেছে।ঈশার মামি ‘সুমা’ একটি প্লেটে মিষ্টি সাজিয়ে রাখছিলেন ঈশাকে দেখে একটু তোষামোদ করে বলেন,

” এটা কে লো?চেনা যাচ্ছে না দেখি দেখি দেখি।”

ঈশার হাত টেনে ধরলেন সুমা।

” তোকে তো ভারী সুন্দর লাগছে।আমার তো মনে হয় না শ্রেয়ার বিয়েটা হবে ছেলে পক্ষের মানুষ তো তোকে নিয়ে টানাটানি লেগে যাবে।”

সুমার সূক্ষ্ম খোঁচানো কথা বুঝতে পেরে কপট হাসলো ঈশা।

” যার বিয়ে তাকে গিয়ে দেখো হুরপরী লাগছে।”

” তোকেও কম সুন্দর লাগছে না।”

” আমরা প্রত্যকেই সুন্দর।”

ঈশা দ্রুত সরে আসলো সুমার নজর থেকে।ছাদে স্টেজ করা হয়েছে তাই ঈশা অনু ছাদের দিকে গেলো।ঈশার মামির কান্ডে অনু বলে,

” তোর মামি তোর প্রশংসা করেছে এটা কি আমার স্বপ্ন নাকি সত্যি?”

” আয় চিমটি কেটে বুঝিয়ে দি।”

” আমার গড়বড় লাগছে ঈশা যে মানুষ সারাক্ষণ অন্যর ঢোল পেটানোর কাজে লেগে থাকে, এ পাড়ার কথা ওই পাড়ায় গিয়ে লাগায় সেই মামি তোর প্রশংসা করেছে ভাবা যায়।শ্রেয়ার এঙেজমেন্টের দিনেও তো তোকে দফায় দফায় কম অপমান করেননি।”

” শুধু কি আমাকে করেছেন সবাইকে করেছেন।তিনি কাউকে রেহাই দেননা।বাদ দে এসব রিনা খান টাইপের মহিলার কথা বলে আমাদের মুড নষ্ট করে লাভ নেই। ”

ঈশা অনু দুজনে স্টেজে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ছবি তুলে।ছাদে থাকা কাজিনদের সাথে কিছুক্ষণ গল্প স্বল্প করে নিচে নেমে আসে তারপর সব কাজিন মিলে শ্রেয়াকে স্টেজে নিয়ে যায়।ছেলে পক্ষের অতিথিরা আসবে বলে তাদের স্বাগত জানাতে ফুল গুলো একে একে সাজিয়ে নিচ্ছে বাকিরা।

ঈশার মামতো ভাই ‘অয়ন’ অনন্যদের সাথে হাতে হাত লেগে টুকটাক কাজ করছিলো ঈশার মামি সুমা ছেলের হাত টেনে আড়ালে এনে রেগে বলেন,

” তোকে আমি কি বলেছিলাম?কু ত্তা র বাচ্চা সব ভুলে গেছিস?”

” গালি দিচ্ছো কেন মা?কি বলেছিলে এত ঝামেলার মাঝে আমার মনে আছে নাকি?”

” কু ত্তা র বাচ্চা তোকে জন্ম দেওয়াই ভুল হইছে।গা /ধা ই *ত *রের জাত।”

” আহ কি বলেছিলে সেটা বলো।”

” তোকে আমি বলেছিলাম এবার ঈশার পাশে পাশে থাকবি মেয়েটাকে তোর প্রতি দূর্বল করার চেষ্টা করবি আর তুই এখানে কি করছিস হা রা ম জা দা”

” আমি ভুলেই গেছিলাম এবার থেকে আর ভুল হবে না মা।”

অয়ন মায়ের আদেশ পেয়ে খুঁজতে থাকলো ঈশাকে যে করে হোক পাখি শি কা র করতেই হবে।
.
ছেলের পক্ষের লোক চলে আসতে সবার মাঝে হইচই পড়ে যায়।সেই পক্ষের সব ছেলেরা বাসন্তী রাঙা পাঞ্জাবি পরেছে আর মেয়েরা বাসন্তী রাঙা শাড়ি।ভীড়ের মাঝে ঈশানের চোখ খুঁজছিলো ঈশাকে কিছুটা সময় পর পেয়েও গেলো অনু ঈশা দুজন একসাথে দাঁড়িয়ে ছিলো।রাসেল ঈশানের কাধ চাঁপড়ে বলে,

” ঈশা অনু চেনা যাচ্ছে না দুইজনকে এক লাগছে।পা থেকে মাথা পর্যন্ত সবটা এক সাজ।”

” চোখের মাথা খেয়ে আবার আমার বউকে তোর বউ ভেবে বসিস না খবরদার।”

” তোবা তোবা এই কাজ ভুলেও করা যাবে না।অনু আমায় গিলে খাবে।”

” আমি কি ছেড়ে দেবো?কাঁদা জলে তোর মাথা গেড়ে দেবো।”

” আমি জানি আমার বউ, বন্ধু দুজনেই ডেঞ্জারাস আর আমি বলির পাঠা।”

মাহমুদার সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো ঈশার দুজনের কিছুটা সময় ব্যয় করলো।শ্রেয়া এবং নাজিমের ফটোশুট চলছিলো নাদিম বাচ্চা ছেলেটা কিছুক্ষণ পরপর গোলাপ ফুল এনে ঈশার হাতে দিয়ে বলে,’আই লাবু মাই ঈশা’ ঈশা তার ফুল নিয়ে খিলখিলিয়ে হাসতে থাকে।ঈশান দূর থেকে তাকে পরখ করছিলো।এখনো একে অপরের মুখোমুখি হয়নি।ছেলেপক্ষের কিছু ছেলে দুষ্টু প্রকৃতির তারা কিছুক্ষণ পরপর মেয়ে পক্ষের দলে এসে এটা ওটা বলে মজার ছলে ঝগড়া করার চেষ্টা করছে।মেয়ে পক্ষের হয়ে ঈশাও এটা ওটা বলে তাদের সাথে তর্ক বির্তক করছে বিয়ে বাড়িতে এসব স্বাভাবিক হলেও ঈশানের কাছে এই বিষয়টা বড্ড বিরক্ত লাগলো।

প্রথম ধাপে শ্রেয়া এবং নাজিমকে হলুদ লাগানো শুরু করেছে বাড়ির মুরব্বিরা।ঈশান ইশারায় ঈশাকে ডাকতে ঈশা পূর্ণ দৃষ্টি রাখলো ঈশানের দিকে হাত ইশারায় বুঝিয়ে দিলো তাকে সুন্দর লাগছে।ঈশার কাছে প্রশংসা পেয়ে মাথা নুইয়ে হাসলো ঈশান এবং এগিয়ে এলো ঈশার কাছে।

” মেডাম আমার প্রচন্ড হিংসে হচ্ছে আমার মানুষটাকে আমি চোখের তৃষ্ণা মিটিয়ে দেখতে পাচ্ছি না।”

” বারণ করলো কে?দেখতে থাকুন।”

” এভাবে আমার তেষ্টা মিটবে না যে।”

ঈশা ঘুরে তাকালো ঈশানের দিকে,

” এভাবে বলছেন কেন আমার কি লজ্জা লাগে না?”

ঈশান স্মিত হাসলো।আসরে রাসেল অনুকে দেখা যাচ্ছে না নিশ্চয়ই তারা চিপাচাপায় লুকিয়ে পড়েছে।নাজিমের কাজিনদের মাঝে একজন এগিয়ে এলো ঈশার কাছে পাশে ঈশানকে দেখে ভাবলো সুযোগ বুঝে কথার ফাঁকে ফাঁকে ঈশার সাথে ভাব বিনিময় করবে।ছেলেটা এগিয়ে এসে ঈশানের উদ্দেশ্যে বললো,

” তোমাকে খুঁজছিলাম ঈশান।”

” হঠাৎ আমাকে কেন?”

” নাজিমকে হলুদ ছোঁয়াবে না?”

” আগে দুইপক্ষের বড়দের শেষ হোক তারপর।”

” ওকে।হ্যালো মিস আপনি ঈশা?”

ছেলেটার কথায় ঈশা মুচকি হাসে মাথা দুলিয়ে বলে,

” হুম আমি ঈশা।”

” আপনাকে বেশ সুন্দর লাগছে অন্যরকম সুন্দর।”

ছেলেটার গলার স্বর পালটে এলো ঈশান বুঝতে পারলো ছেলেটা ঈশার সাথে ভাব জমাতে এসেছে।বুকের ভেতরটায় মুহূর্তে মুষড়ে উঠলো মেজাজটা সহসা বিগড়ে গেলো।তবে এখন রাগ দেখালে অনুষ্ঠানে প্রভাব পড়বে তাই ঠান্ডা মাথায় ঈশান বলে,

” রং নাম্বারে ডায়াল করেছো ব্রো।”

” মানে?”

” মানে যার সাথে ভাব করতে চাইছো সেই মানুষটা আমার।’আমার’ শব্দটার মানে বুঝো?”

ঈশা সরে দাঁড়ালো ঈশানের এমন অধিকার বোধ দেখে তার ভেতরটা ধুকপুক করছে।
ছেলেটা লজ্জায় পড়লো ঈশানকে সরি বলে সরে গেলো সেখান থেকে।পুরোটা অনুষ্ঠানে ঈশান ঈশার পিছু ছাড়লো না তার অস্থির লাগছে এই বুঝি ঈশার মন অন্যদিকে চলে যাবে।এই বুঝি ঈশা তার ভালোবাসার বাঁধন ছেড়ে উড়ে যাবে।ঈশা সবার সাথেই টুকটাক মজা করছিলো তার পরিবারের কাজিন ভাইদের সাথে যখনি কথা বলতে চায় ঈশান রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তার দিকে।এই বিষয়টা মোটেও ভালো লাগেনা ঈশার এতটা জেরা করার কি আছে।

” ঈশান আপনি এমন করছেন কেন?আমার মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে আমি জেল গারোদের কয়দি আর আপনি পুলিশ।”

” ভুল বলনি তুমি তো কয়দি।আমার মনের জেলে বন্দি থাকা কয়দি।”

” সবার কথা বাদ দিলাম আমার কাজিনদের আমি ভাইয়ের নজরে দেখি ওনারা সবাই আমাকে বোনের চোখে দেখেন এসব ব্যপারে আপনার সন্দেহ কিন্তু আমি মোটেও সহ্য করবো না।”

” এই কাজিন গুলো কুমিরের মতো ডুবে থাকে আর শিকারকে সুযোগ মতো পেলে এক ছোবলে মুখে তুলে।”

” ব্যস আমি আর কোন কথা শুনবো না আমার আপন ভাই নেই ওরাই আমার ভাই।”

ঈশা যখন বড়াই করে কথাগুলো বলছিলো তখনি তার সব বিশ্বাসের কাঁচ ভেঙে দেয় মামতো ভাই অয়ন।হঠাৎ কোথা থেকে এসে ঈশার কোমড় জড়িয়ে ধরে ছেলেটা। অয়নের আঙুল ছুঁয়ে যায় ঈশার অনাবৃত কোমড়ে।ঈশান তাকিয়ে রইলো সেদিকে।

” ঈশু শ্রেয়াকে হলুদ লাগাবে না চলো না।আমি আর তুমি একসাথে বসবো।”

ঈশানের চাহনি কঠর হয়।দাঁত চেপে তাকিয়ে রইলো ঈশার দিকে ঈশা নিজেও তাজ্জব বনে গেছে।অয়নের ছোঁয়া মোটেও স্বাভাবিক ছিলো না।
#চলবে__

#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ২৪ক]
___________________
৪৯.
সম্পর্কের শুরুতে অনুকে যতটা সহজ সরজ ঠান্ডা মাথার ভেবেছিলো সম্পর্ক যতটা গভীর হলো রাসেলের ভাবনাকে মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়ে অনুর আসল রূপ বেরিয়ে এলো।মেয়েটা শান্ত সহজ সরলের লেবাস ধরে থাকলেও মেয়েটা প্রচন্ড অশান্ত,রুক্ষ,জেদি এবং রাগী।কিছুক্ষণ আগে ছেলে পক্ষের একটি মেয়ে হাত ইশারায় রাসেলকে হাই জানায় রাসেলের চোখে চোখ পড়ায় সেও হাত তুলে হাই জানায় বিষয়টা এখানে শেষ ছিলো কিন্তু শেষ হতে দিলো না অনু।মেয়েটা এই ব্যপার নিয়ে ভীষণ রেগে আছে রাসেল তাকে কিছুতেই মানাতে সক্ষম হচ্ছে না।না পেরে অনুর পাশে চুপচাপ বসে পড়লো সে।অপরদিকে অনু রাগে ফোঁপাচ্ছে বিড়বিড় করে রাসেলকে বেশ কয়েকটা গালিও দিলো।

” সামান্য একটা বিষয় নিয়ে এত রাগ বেমানান অনু।”

” সামান্য!এটা সামান্য লাগে তোর কাছে?”

” তুই তুকারি করছো কেন?”

” বেশ করেছি।”

” এখনি আমাকে সম্মান দিচ্ছো না বিয়ের পর তো…”

” বিয়ে?কে করবে তোমায় আমি?তোমার সাথে আমার সম্পর্ক এখানেই শেষ।”

” অনু প্লিজ এসব বলে না।”

রাসেলের অনুর মাঝে ছুটে আসে ঈশা বসে যায় অনু আর রাসেলের মাঝের চেয়ারটায়।হঠাৎ ঈশার আগমনে থতমত খেয়ে যায় রাসেল।

” তোমার আবার কি হলো?আমাদের মাঝে কাবাবে হাড্ডি হচ্ছো কেন?”

” সর্বনাশ হয়ে গেছে রাসেল ভাই।এবার আমি কি করবো পা গ লা ষাড় ক্ষেপেছে।”

” কে ঈশান?”

” হুম ভীষণ ক্ষেপেছে।”

” করেছো কি তুমি?”

ঈশা পুরো ঘটনাটা খুলে বললো তার কথা শুনে কিঞ্চিৎ হাসলো রাসেল
চেয়ারে গা এলিয়ে বলে,

” মাত্র শুরু এর শেষ কোথায় জানা নেই।”

” মানে? কি সব বলছেন।”

” আমি ঈশানের বন্ধু ছিলাম আমি জানি সে কেমন।ছোট থেকে আমি কোন বন্ধু বানাতে পারিনি আমার কোন বন্ধু ছিলো না।আমার আশেপাশে কাউকে ঈশান সহ্য করতো না তার একটাই কথা যেখানে সে আমার জীবনে আছে সেখানে আর কোন বন্ধু থাকতে পারবে না।তারপরেও ক্লাসের কিছু ছেলে মেয়ের সাথে আমার ভাব হয় ঈশান তাদের রেহাই দেয়নি মারামারি ঝগড়া কোন অংশে কম করেনি আমিও সবটা মেনে নিলাম মানিয়ে নিলাম। ঈশান হয়ে উঠলো আমার বন্ধু আর ভাই।এই যে অনুর সাথে সম্পর্কের প্রায় একবছর হতে চললো আগে থেকে আমি ঈশানকে কিছু বলিনি কারণ সে যদি আবার অনুর ক্ষতি করে দেয়।আমার পালা শেষ এবার তোমার পালা।”

” আমার পালা মানে?তাই বলে আমি আমার কাজিনদের থেকে দূরে থাকবো?”

” ঈশান একগুঁয়ে স্বভাবের সে যখন বলেছে ওদের সাথে বেশি মিশতে পারবে না তখন পারবে না।তুমি যদি কথা না শুনো তবে দেখবে জল কত দূর গড়ায়।”

” কি বলেন এমন স্বভাবের মানুষের সাথে সারা জীবন থাকার প্রতিজ্ঞা করেছি আমি ,ওনার সাথে সারাজীবন থাকা অসম্ভব।আমি পারবো না।”

” এসব এখন বলে লাভ কী?তুমি সম্পর্ক ভাঙতে চাও?একবার মুখ থেকে বের করে দেখো তান্ডব চলবে।তার থেকে ভালো ঈশানের সাথে এই ব্যপারে ঠান্ডা মাথায় আলোচনা করো।”

“হুম।”

ঈশা উঠে দাঁড়ায় হঠাৎ তাদের মাঝে অয়ন আবার উদয় হয়।ছেলেটা আগের বারের ন্যায় ঈশার কোমড় জড়িয়ে ধরে।অয়নের এমন আচরণে অবাক না হয়ে পারলো না ঈশা।অয়ন ভাই কখনোই এমন ছিলেন না এতটা বেয়াদবি করার সাহস তো কখনো করেননি হঠাৎ তার কী হলো।অনু অবাক হয়ে দেখছিলো সবটা।ঈশা ঝটকায় হাত ছাড়ায় অয়নের।

” কি হচ্ছে কি অয়ন ভাই?আপনি হুট হাট এভাবে ধরছেন কেন?”

” অনুষ্ঠান শেষ পর্যায়ে সবাই ডান্স করবে চলো আমরাও করি।”

” আপনার ইচ্ছে থাকলে অন্য কাউকে খুঁজে নাচতে থাকেন গাইতে থাকেন খবরদার পুণরায় আমায় এভাবে জড়িয়ে ধরবেন না বাবার কাছে নালিশ করতে একটুও সময় নেবো না।”

” ঈশা তুমি..”

ঈশা চোখ রাঙায় অয়ন মাথা নেড়ে চলে যায় সেখান থেকে।আশেপাশে ছেলে পক্ষের কিছু মানুষ তার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে মন চাইছে ঈশার।অনু উঠে দাঁড়িয়ে ঈশার হাত ধরে।

” অয়ন ভাইয়ের আচরণ মোটেও স্বাভাবিক লাগছেনা ঈশা।তখনো তোকে কেমন করে ছুঁয়ে দিয়েছে ঈশান ভাইয়ের রেগে যাওয়াটা স্বাভাবিক।আমার নিজেরি কেমন রাগ লাগছে তুই সাবধানে থাকিস।ঈশান ভাইকে দেখছি না যে উনি কোথায়?”

” আমার সাথে রাগ দেখিয়ে বেরিয়ে গেছে।”
.

হলুদের অনুষ্ঠন শেষ হলো মধ্যরাতে বাড়ির মুরব্বিরা সবাই নিচে চলে গেছেন।অনন্য সদস্যরা ছাদে অপেক্ষা করছে কখনো ডান্স শুরু হবে।পুরো ছাদটা অন্ধকার করে পার্টি লাইট গুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।গান শুরু হতে সবাই সবার নাচ নিয়ে ব্যস্ত ঈশা অনু এক সাথেই ছিলো রাসেল তাদের পাশে ছিলো সবার নাচের তালে তালে অয়ন কিছুটা ঈশার পাশ ঘেষে দাঁড়ায়।বিষয়টা বুঝতে পেরে রাসেল ঈশাকে সরিয়ে দেয় এবং সে অয়নের পাশে দাঁড়ায় বিষয়টা বুঝতে পেরে তাচ্ছিল্য হাসে ঈশা অনু।নাচের তালে তালে সবাই যখন ঘোরের মাঝে ছিলো তখনি ঈশার হাত টেনে ধরে কেউ।চমকে পাশে তাকাতে আবছা আলোতে ঈশানকে দেখতে পেয়ে নিশ্চিন্ত হয়।আশেপাশে পরখ করে ঈশার হাত টেনে নিয়ে যায় ঈশান ছাদের এক সাইডে প্যান্ডেল করা হলেও অন্য সাইড ছিলো সম্পূর্ণ ফাঁকা সেদিকে তেমন কোন আলো ছিলো না।ঈশাকে রেলিঙের পাশে দাঁড় করিয়ে তার মুখোমুখি দাঁড়ালো ঈশান বাম হাতে জলন্ত সিগারেটটায় নজর এড়ালো না ঈশার।

” আমাকে নিয়ে এলেন কেন?”

” অনেক হয়েছে আর না আর সহ্য করতে পারছি না।”

” কি বলছেন আপনি?”

” শু য়ো রটা তোমাকে আবার ছুঁয়েছে কি ভেবেছিলে আমি চলে গেছি?কিচ্ছু দেখতে পাইনি?”

” ঈশান আমার…”

” চুপ, একদম চুপ ডান্সের সময়েও ও তোমার পাশে এসেছিলো সেটাও আমি স্পষ্ট দেখেছি।তারপরেও বলবে এরা তোমার ভাই?”

” সবাই এক না উনি…”

” মানলাম সবাই এক না কিন্তু আমি যেটা চোখের সামনে দেখেছি সেটা ভুলবো কি করে?”

ঈশানের কথা এলোমেলো হয়ে এলো বাম হাতের সিগারেটটা বেঘোরে টানছে সে ডান হাতে শক্ত করে ধরে আছে ঈশার হাত।ঈশা দ্রুত হাতে ঈশানের সিগারেটটা ছুড়ে ফেললো ছাদের বাইরে।

” আমার সামনে আর কোন দিন স্মোক করবেন না আমার এসব ভালো লাগে না।”

” আমারো ভালো লাগে না কেউ তোমার আশেপাশে ঘুরঘুর করলে।অয়নের সব ডিটেইলস আমায় দাও।”

” কি প্রয়োজন?।”

” তুমি বলবে নাকি আমি খুঁজে নেবো?আমি যদি খুঁজতে থাকি তবে ভালো কিছু হবে না ঈশা।”

ঈশা চুপসে যায় আশেপাশে চোখ বুলায় সতর্ক দৃষ্টিতে।ঈশানকে সরিয়ে সে কিছুটা দূরে দাঁড়ায়।

” ঈশান এসব বাদ দেন অয়ন ভাই…”

প্রচন্ড রেগে গেলো ঈশান।দু কদম এগিয়ে এসে ঈশার বাহু চেপে ধরলো রেলিঙের সাথে দাঁড় করিয়ে থুতনি চেপে রাগে গজগজে বলে,

” কোন বাহানা শুনতে চাই না।আমি যে রেগে আছি তুমি বুঝতে পারছো না?এক্ষুনি অয়নের সম্পর্কে বলো।”

” বলছি বলছি আমাকে ছাড়ুন।

ঈশান দূরে সরে দাঁড়ালো দুই হাত বুকের সাথে ভাজ করে চোখ চোখ রাখলো ঈশার।

” অয়ন ভাই আমাদের কাজিনদের মাঝে সবার বড় মানে ধরা যায় আপনার থেকেও বয়সে অনেক বড়।”

” বয়স কতো তার?”

” চৌত্রিশ পঁয়ত্রিশ হবে।মামির দুই ছেলে এক মেয়ে।বড় ছেলে অয়ন ভাই।তিনি যখন অনার্সে পড়তেন তখন প্রেমে পড়ে পালিয়ে বিয়ে করেন।অয়ন ভাই মা ভক্ত ছেলে মা এখানে বসতে বললে বসবে উঠতে বললে উঠবে ঠিক এমন স্বভাবের।যাকে বিয়ে করেছিলেন সেই মেয়ের বাবা ছিলো না মা ছিলো তারা গরবী ছিলো।মামি অয়ন ভাইয়ের বিয়েটা মেনে নেয়নি এমনকি মামাও না তবুও মেয়েটি একপ্রকার যুদ্ধ করে সংসার চালিয়ে যায়।মামা মামির লোভটা একটু বেশি তারা সবসময় চাইতো মেয়ের বাড়ি থেকে এটা ওটা যেনো পাঠানো হয়।প্রথমে আবদার করলেন বাইক সেটাও আদায় করে ছেড়েছেন।বিয়ের সাত আট মাসের মাথায় খবর এলো ভাবী প্রেগন্যান্ট মামি কিছুতেই চাননা বাচ্চাটা পৃথিবীতে আসুক তাই অয়ন ভাইকে বলা হয় এব্রোশন করাতে ভাবি নাকি রাজি ছিলো না অয়ন ভাই এতে মারধর শুরু করেন সাথে মামি তো আছেই।মেয়েটা না পেরে নিজের সন্তানকে মা র তে রাজি হয়।এরপর মেয়েটার অত্যাচার বেড়েই চলে কারণে অকারণে মামি এবং অয়ন ভাই ভাবিকে মা র তো।বিয়ের দেড় বছরের সময় আবার প্রকাশ হলো ভাবি প্রেগন্যান্ট এবারেও একই কান্ড হলো সেই মা র ধ র এবার আর বাচ্চা এব্রোশন করাতে রাজি হয়নি ভাবি তবুও বাচ্চাটা বাঁচানো যায়নি।এক পর্যায়ে এদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ভাবি নিজ থেকেই ডিভোর্স দেন।এর মাঝেও অনেক কাহিনি হয় প্রায় এক বছর হয়ে গেলো অয়ন ভাইয়ের ডিভোর্স হয়েছে। তিনি ভালো জব করেন ভালো স্যালারি পান এই নিয়ে মামির দাম্ভিকতার শেষ নেই।আমাদের পরিবারের সবাই এসব জানেন কিন্তু কেউ কখনো প্রতিবাদ করতে পারে না মামি মামা দুইজনে প্রচন্ড বেয়াড়া স্বভাবের কেউ তাদের এসব ব্যপারে কিছু বললেও অকথ্য ভাষায় কথা বলেন।”

সবটা শুনে ঈশান কিছুক্ষণ চুপচাপ রইলো।ঈশা ঈশানের দিকে তাকাতে সে বলে,

” যা বোঝার আমি বুঝেছি আরেকটা কথা তোমাকে বলছি আজ আমি পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে কিছু করিনি কিছু বলিনি কিন্তু এরপর এমন যদি আমার চোখে পড়ে তাহলে কি হবে তোমার ধারনার বাইরে।

৫০.
সবাই ফ্রেশ হয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলো।ঈশা অনু শ্রেয়া সহ আরো দুইজন একই বিছানায় ঘুমাবে।শ্রেয়ার রুমের মেঝেতে যে যেভাবে পেরেছে ঘুমিয়ে পড়েছে।বিয়ে বাড়ির অবস্থাটাই এমন মেঝেতে পা রাখার জায়গা নেই ঈশা বারান্দায় উঁকি দিয়ে দেখতে পায় সেখানেও একজন ঘুমিয়ে আছে মনে মনে হাসলো সে।শ্রেয়া ফোনটা চার্জে বসিয়ে শুয়ে পড়লো ঈশার পাশে।অনুর দিকে ভ্রু নাচিয়ে হেসে বলে,

” কি গো ডুবে ডুবে জল খাও কি ভেবেছো জানতে পারবো না?”

” মানে কি করেছি আপু?”

” এই মিথ্যা বলবে না রাসেলের সাথে তোমার সম্পর্ক আছে তাই না?”

অনু ঢোক গিললো সতর্ক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ঈশার দিকে।ঈশা বুঝতে পেরে শ্রেয়ার উদ্দেশ্যে বলে,

” আপু এ কথা কাউকে বলো না প্লিজ।আম্মু আব্বুর কানে গেলে বেচারি বিপদে পড়বে।”

” না না কাউকে বলবো না।আমার জানা মতে রাসেল ভালো ছেলে নাজিম নিজে বলেছে আমায়।”

” শুনলাম নাজিম ভাই নাকি তোমায় সঙ্গে নিয়ে যাবে দেশের বাইরে এটা কি সত্যি?”

” সে তো বলেছে বাকিটা ভাগ্য নির্ভর।”

শ্রেয়ার কথার প্রত্যুত্তর করার আগে থেমে যায় ঈশা বাইরে থেকে শোরগোল পাওয়া যাচ্ছে।সবাই কেমন চিৎকার করছে।ঈশা সহ সবাই উঠে বসলো একে একে সবাই ছুটলো কক্ষের বাইরে।ঘরের বাইরে উঠনে সবাই জড়ো হয়ে গেছে এক পাশে আগুন জ্বলছে বাবুর্চিরা রান্না বসিয়ে দিয়েছে।ভীড় ঠেলে এগিয়ে গেলো ঈশা এবং অনু।ভীড়ে থাকা মধ্যমণি অয়ন ছেলেটার হাত চুইয়ে রক্ত ঝরছে।ডান হাতটা সম্পূর্ণ থেতলে গেছে বাসার সকলের মাঝে হুলুস্থুল বেঁধে গেছে।শ্রেয়ার বাবা কাপড় এনে দ্রুত বেঁধে দিলেন অয়নের হাত।ঈশা ঢোক গিলে এগিয়ে গেলো তার মায়ের কাছে।

” আম্মু অয়ন ভাইয়ের কি হয়েছে?”

” সে রাতে বেরিয়েছিলো তাকে নাকি ছিনতাইকারী ধরেছে পকেটে যা ছিলো সব নিয়ে গেছে হাতটা ইট দিয়ে থেতলে দিয়েছে।বাম হাতে বেশি লাগেনি ডান হাতের অবস্থা খারাপ।”

অয়নকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয় ঈশা অনু দুজন দুজনকে চোখ ইশারা করে তারা ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে এসব কে করেছে।ঈশা আড়াল হয় দ্রুত ফোন করে ঈশানকে রিং হওয়ার সাথে সাথে ফোন তুলে ঈশান।

” ঘুমাওনি নাকি আমায় ছাড়া ঘুম আসছে না? আসবো ঘুম পাড়িয়ে দিতে?”

” ফা ল তু কথা বলবেন না ঈশান।আপনি অয়ন ভাইয়ের সাথে এটা কি করে করলেন?আপনাকে আমি বারণ করেছিলাম।”

” নিজেকে অনেক মানানোর চেষ্টা করেছি কিছুতেই কিছু হলো না।তাই মন যা চেয়েছে তাই করেছি।”

” আপনার কি ধারণা এসব করে আমার চোখে ভালো থাকবেন আপনি?”

” ভালো থাকার দরকার নেই আজ যা করেছি সেটা মাথায় রাখবে ভবিষ্যৎতে এমন ভুল আর দ্বিতীয়বার কেউ করার আগে তুমি সতর্ক হবে।”

” ভবিষ্যৎ! কিসের ভবিষ্যৎ আমাদের সম্পর্কের কোন ভবিষ্যৎ নেই এই সম্পর্কের শেষ এখানেই।”

” বুঝতে পেরেছি তোমার মাথা গরম আছে উলটা পালটা কথা বলে আমার মাথাটাও গরম করে দেবে।যাও ঘুমাও জান, কাল দেখা হবে।”

” ঈশান…”

দ্রুত ফোন কেটে দিলো ঈশান।ঈশার নাম্বার ব্লকে রেখে শব্দ করে হাসতে থাকে।কিছুক্ষণ আগে গোসল করে ফিরেছে সে। সারা শরীরে তার বিন্দু বিন্দু পানি আয়না নিজেকে দেখে চুলে হাত বুলিয়ে বলে,

” তুমি বললেই আমি ছেড়ে যাবো?আমায় এখনো চিনতে পারোনি মেয়ে।”
#চলবে___

#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ২৪ খ]
___________________________
৫১.
অয়নের বিয়ের আনন্দে ভাটা পড়েছে।ডান হাতের বেহাল দশা চুপচাপ এক সাইডে বসে থাকা ছাড়া তার আর কাজ নেই।বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হবে কিছুক্ষণ পরেই।ছেলে পক্ষ এলো বলে।শ্রেয়াকে নিয়ে ঈশা পার্লার থেকে ফিরেছে কেবল।ঈশা আজ সাজতে কার্পণ্য করেনি বসার ঘরে প্রবেশ করতে মুখোমুখি হয় অয়নের ছেলেটা কেমন নির্ণিমেষ তার দিকে তাকিয়ে আছে।দ্বিধায় চোখ সরালো ঈশা আমতা আমতা স্বরে বলে,

” কিছু বলবেন অয়ন ভাই?”

” কি আর বলবো তোমাকে সুন্দর লাগছে।”

” ধন্যবাদ।’

ঈশা পাশ কাটিয়ে চলে গেলো দম যেন তার বন্ধ হয়ে এসেছিলো।ঈশান সকাল থেকে বারবার ফোন করে যাচ্ছে বিরক্ত হয়ে ঈশানকে ব্লক করেছে সে।কিছুক্ষণ পর বরপক্ষ চলে আসবে আর তখন নিজেকে যতটা পারা যায় ঈশান থেকে দূরে দূরে রাখতে হবে।শ্রেয়াকে রুমে পাঠিয়ে বাদ বাকি কাজিনদের খোঁজে গেলো ঈশা।একটা রুমে সবাই জড় হয়ে ঝগড়া করছে দুইজনের মাঝে তো বেশ কথা কাটাকাটি লেগে গেলো।ঈশা এগিয়ে গেলো তাদের কাছে।মামা তো বোন অনিকে জিজ্ঞেস করে,

“কী হয়েছে তোরা ঝগড়া করছিস কেন অনি?”

” বর পক্ষ এলো বলে অথচ বিয়ের গেট ধরবে কে?বর পক্ষের দলে কম ছেলে নেই এদের সাথে পেরে উঠবো কি করে ওদের বললাম তোরা আমার সাথে থাকবি কিন্তু ভীতুর ডিম একটাও থাকবে না।তুমি থাকবে ঈশাপু?”

ঈশা চমকে গেলো আড় চোখে তাকালো অনুর দিকে।বিয়ের গেটে দাঁড়ানো মানে ঈশানের মুখোমুখি হওয়া যেটা সে ভুলেও চায় না।

” আমি না বরং তোরা যা এই সবাই যাবি কিন্তু।”

” এদের কোন দরকার নেই। ঈশা আপু আর অনু আপু আমার পাশে থাকলেই হবে বাকিরা পেছনে থাকুক এরা ভাগের টাকা চাইলেও দেবো না আর দিলেও বিশ টাকার বেশি না।”

” প্লিজ অনি আমাকে এসবে টানিস না ভাইয়ারা কোথায়?তারাও দাঁড়াতে পারে।”

” তারা এই দায়িত্ব আমাদের দিয়েছে তারা শুধু পাশে থাকবে টাকা আদায় করার দায়িত্ব আমাদের।ও ঈশাপু চলো না প্লিজ এই কথাটা রাখো।অনু আপু তুমি হ্যাঁ বলে দাও দেখবে তোমার বান্ধবী রাজি হয়ে যাবে।”

অনু স্মিত হাসে ঈশার হাত ধরে বলে,

” রাজি হয়ে যা ঈশা।”

বর যাত্রী এসে পড়েছে সবার মাঝে সৃষ্টি হয়েছে আগ্রহ আনন্দ সবাই ছুটে গেলো গেটের সামনে।বর যাত্রীর এক অংশ প্রবেশ করলেও বর দাঁড়িয়ে রইলো গেটের বাইরে।লাল ফিতা বেঁধে টেবিলে শরবত মিষ্টি নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো একদল।ঈশান কিছুটা দূরে বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো এসব গ্যাঞ্জাম তার বড্ড বিরক্ত লাগে।কিন্তু যখনি গেটের সামনে
ঈশাকে দেখতে পেলো তখনি ভিড় ঢেলে সামনে আসলো সে দাঁড়িয়ে পড়লো বরের পাশে।তাকে দেখে রাসেল বলে,

” তুই না এসব গ্যাঞ্জাম পছন্দ করিস না তবে এলি কেন?”

” সামনে দেখ বউ এসেছে, না এসে পারা যায়?”

অনি বরকে শরবত মিষ্টি খাওয়ালো বরের দলের একজন কাচি হাতে তুলতে কাচি ধরে ফেললো সে।

ঈশান নিমেষহীন তাকিয়ে আছে ঈশার দিকে ঈশানের চাহনি দেখে মুখ ভেংচি কাটলো ঈশা।গোল্ডেন রঙের লেহেঙ্গায় ভারী মেকাপে মেয়েটাকে কি সুন্দর লাগছে।ঈশার কানে বড় বড় দুল গুলো দেখে কপাল কুচকালো ঈশান তার মনে প্রশ্নেরা উঁকি দেয়, ‘এটা আবার কেমন দুল?এটাও কি ফ্যাশন!কান ছিড়ে পড়ে যাবে সেদিকে খবর নেই অথচ এই দুল লাগিয়ে দিব্বি হাটছে।মেয়েরা পারেও বটে।’

বর যাত্রীর মাঝে হইচই পড়ে গেছে সবাই টাকা নিয়ে তর্কাতর্কি শুরু করেছে।বর পক্ষের ছেলে মেয়েদের ছলচাতুরী দেখে নড়েচড়ে দাঁড়ায় ঈশা যে করে হোক টাকা আদায় করতেই হবে।অনু ছেলেটার হাত থেকে কেচি নিয়ে বলে,

” ফিতা কেটে প্রবেশ করতে হলে পঞ্চাশ হাজার টাকা ঢালতে হবে।”

” কত টাকা কত?শুনতে পাইনি।”

” পঞ্চাশ পঞ্চাশ হাজার টাকা।”

ছেলে পক্ষের মাঝে পুণরায় শোরগোল পড়লো তারা কিছুতেই টাকা দেবে না তাই ভুজংভাজাং কথা বলে অনুকে দমাতে চাইছে।ঈশা গলা ঝেরে কেশে বলে,

” আমাদের দাবি একটাই পঞ্চাশ হাজার টাকা চাই।”

” এই মেয়ে পঞ্চাশ বানান করতে পারো?দেখি বানান করে শোনাও আমায়।”

ঈশার কথার প্রত্যুত্তর করলো ঈশান।পঞ্চাশ বানান মুখে কী করে করবে সে।থমকে গেলো ঈশা কটমট চোখে তাকালো ঈশানের দিকে ছেলেটা তাকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে।ঈশা মনে মনে পঞ্চাশ বানান করার চেষ্টা চালালো, ‘প ন চ আকার চা দূর কিসব বলছি।’
দ্বিধায় পড়ে কথা ঘুরিয়ে দিলো ঈশা ঈশানের দিকে তাকিয়ে বলে,

” ঠিক আছে ছাড় দিলাম চল্লিশ হাজার টাকা দিন।”

” ধরো চল্লিশ হাজার টাকা দিলাম তার মাঝে সব দুইশত টাকার নোট এবার বলো চল্লিশ হাজারে কয়টা দুইশ টাকার নোট থাকবে।যদি বলতে পারো চল্লিশ হাজার টাকা অনায়াসে দিয়ে দিবো।”

মেয়ে পক্ষের সবাই থমকে গেলো ঈশানের ছলচাতুরীর কাছে হেরে যাচ্ছে তারা।এই মুহূর্তে ঈশার অংক মাথায় আসছে না।তাকে ফোন হাতে তুলতে দেখে চেচিয়ে উঠে ঈশান।

” খবরদার ফোনে কোন গুন ভাগ হবে না যা হবে মুখে মুখে।”

ভরা মজলিশে লজ্জায় পড়লো ঈশা অনুর দিকে তাকালো অসহায় দৃষ্টিতে।অনু ঈশার কানের কাছে গিয়ে বলে,

” ঈশানের সাথে এভাবে পারা যাবে না।আমাদের জিততে হলে একটাই রাস্তা আছে।”

” সে টা কী?”

” ঈশান ভাইকে নরম সুরে গরম কথা বলে হুমকি দে।দেখবি কাজ হয়ে যাবে।”

ঈশা মাথা নাড়ালো গলা ঝেরে জোরে বলে,

” থাক চল্লিশ হাজার লাগবে না আমাদের ত্রিশ হাজার দিন।”

ছেলে পক্ষের মাঝে হইহই পড়ে গেলো সবাই হেসে হেসে মেয়ে পক্ষকে খোঁচাতে ব্যস্ত।দলের মাঝে একটি ছেলে বলে উঠে,

” দুইটা প্রশ্ন জানতে চেয়েছি একটাও তো পারলেন না তাই কি টাকার অংক কমিয়ে দিসেন? এতে অবশ্য আমাদের ভালো কি বলিস তোরা?”

ছেলেদের মাঝে পুণরায় শোরগোল পড়লো।ঈশা দাম্ভিকতার হাসি দিয়ে বলে,

” মোটেও না চল্লিশ হাজার টাকার কথা শুনে মুখটা শকুনের মতো বানিয়ে ফেলেছেন তাই টাকার অংক কমিয়ে দিয়েছি।”

ঈশা টেবিলে হাত ভর করে ইশারায় ঈশানকে কাছে ডাকলো ঈশান নিজেও ঝুকে পড়লো ঈশার কাছে।ঈশা ঈশানের চোখে চোখ রেখে স্বল্প স্বরে বলে,

” এই শুনো না।”

” শুনছিতো বলো না।”

” এরা যদি নাজিম ভাইয়ের শালা-শালি হয় ভেবে দেখো এরা তোমারো শালা-শালি।এদের খুশি করার দায়িত্ব কিন্তু তোমারো।”

“তাদের বোনটা তো দুলাভাইকে খুশি করতে পারে না আমি কেন তাহলে তাদের খুশি করবো।”

” খুশি করার সময় হলে খুশি করে দেবো এত কথা বলেন কেন?”

” আরে রেগে যাচ্ছো কেন?”

” আপনি যদি আমার পক্ষ না নে তবে আপনার সাথে আমার কোন কথা নেই।এমন বিরোধী দলের হাজবেন্ড আমার প্রয়োজন নেই হুহ।”

ঈশান গলা ঝারলো সবার দিকে পরখ করে মেয়ে পক্ষকে বলে,

” আপনাদের দাবি কতো?”

” আমাদের দাবি একটাই ত্রিশ হাজার টাকা চাই।”

সবার এক সঙ্গে জবাব দিলো ঈশান কানে হাত দিয়ে এগিয়ে গেলো গাড়ির কাছে সেখানেই তার টাকা রাখা।দশ হাজার টাকার তিনটে বান্ডিল নিয়ে ফিরলো সে এবং টাকা দিয়ে দিলো ঈশার হাতে।টাকা পেয়ে মেয়ে পক্ষের সবার আনন্দের শেষ নেই তাদের লাফালাফি দেখে বোঝাই যাচ্ছে তারা কতটা খুশি।বর পক্ষের সবাই বাক্যহারা সবার মাঝে স্তব্ধতা বিরাজমান ঈশান যে এমন বোকামি করবে তারা স্বপ্নেও ভাবেনি।নাজিম অবাক হয়ে তাকালো ঈশানের দিকে।

“এই তোর হয়েছে কী?ত্রিশ হাজার টাকা তুই দিয়ে দিলি!কথা ছিলো দশ হাজার দেবো এর উপর একটা টাকাও না।”

” বিয়ে তো একবারেই করবি নাকি দুইবার করার ইচ্ছে আছে?এত কার্পণ্য করিস কেন?দেখ তোর শালা-শালিরা কত খুশি এদের খুশির কাছে ত্রিশ হাজার টাকা কোন ব্যপার না।”

” কথা ঘুরাবি না তুই যে তোর ঈশার কথায় টাকা দিয়েছিস সেটা আমি ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি।তুই তো ভাই বন্ধু না শত্রু।”

” আমি তোর শত্রু? ঠিক আছে বাকি কাজ তো এখনো বাকি তুই দেখিস আমি কি কি করি।”

রাসেল জানতো ঈশার কথায় ঈশান গলে যাবে তাই মনে মনে হাসলো সে।
রাসেল বেশ কয়েকবার অনুর চোখে চোখ রাখে তবে অনু এমন ভাব করছে যেন সে চেনে না এই মানুষটাকে।
.
শ্রেয়ার কক্ষে তার দূর সম্পর্কের আত্মীয় সজনরা বসেছিলো ঈশা ও অনু তাদের পাশেই ছিলো।হুড়োহুড়ি পায়ে দ্রুত কক্ষে আসেন ঈশার মামি সুমা শ্রেয়াকে আগাগোড়া দেখে ঠোঁট বাঁকান তিনি।

” কিরে তোর শশুড় বাড়ি থেকে নাকি কত ভরি স্বর্ণ দিলো তাহলে গলায় হাতে কানে এসব কি দিলি?সত্যি দিয়েছে নাকি তোর মা বাবা চাপা ছিলো সেসব।”

অনন্যা আত্মীয়দের সামনে লজ্জায় পড়লো শ্রেয়া।কক্ষে দুজন ছেলে পক্ষের অতিথিও ছিলো।নতুন বউ হিসেবে নিজেকে যতটা পারা যায় শান্ত রাখার চেষ্টা চালালো।

” শুনলাম ছেলে নাকি বিদেশ নিয়ে যাবে এসব কি আদৌ সত্যি নাকি মিথ্যা অবশ্য আমাদের এসব নিয়ে ঘেটে লাভ নেই।আহারে মা তোর জন্য মায়া লাগছে স্বর্ণ গহনা হলো আসল আর তোকে….

সুমার কথা শেষ হওয়ার আগে প্রত্যুত্তর করলো ঈশা।

” এই তো বললেন এসব নিয়ে নাকি তোমাদের ঘেটে লাভ নেই তাহলে ঘাটছো কেন মামি?যে টা বুঝো না তা নিয়ে কথা না বললে নয় কি?এই সাজ পরনের লেহেঙ্গার সাথে কি স্বর্ণটা মানান সই হবে?শ্রেয়াপুর সাজের সাথে যদি স্বর্ণ পরানো হয় তবে পুরোটা ঘেটে ঘ হয়ে যাবে।ডায়মন্ড কাটের অর্নামেন্টস গুলাই বেস্ট লাগছে।”

ঈশার জবাবে মুখটা কুচকে নিলেন সুমা।তৎক্ষণাৎ শ্রেয়ার ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠলো হাসি রেখা।সুমা থমথমে মুখে বলেন,

” কিরে ঈশা কবে থেকে মুখে মুখে তর্ক শিখেছিস?তোর বাবা মা এইজন্য পড়াশোনা করান?একটা বেয়াদব তৈরি হয়েছিস।”

” তোমার যদি আমাকে বেয়াদব মনে হয় তাহলে আমি বেয়াদব আমার ভুলক্রুটি থাকলে মাফ করো।”

অনুর হাত টেনে উঠে গেলো ঈশা মামির মুখোমুখি থাকা মানে আরো বেশ কয়েকবার তর্ক হওয়া তাই চলে যাওয়াই ভালো।ঈশাকে যেতে দেখে তেতে উঠলেন সুমা আশেপাশে থাকা অতিথিদের দিকে তাকিয়ে বলেন,

” এই মেয়ে জন্মের বেয়াদব পরের বাড়ি গিয়ে দেখবেন দুই দিনেও টিকবে না।এসব মেয়েকে চেনা আছে লা থি মে রে বের করবে।”

৫২.
হাসি,আড্ডা,ব্যস্ততা সব মিলিয়ে শ্রেয়ার বিয়ে সম্পূর্ণ হয়।কনে বিদায়ের পর্বটা ছিলো হৃদয়াবেগ কষ্টদায়ক।শ্রেয়াদের বাড়ি কেমন নির্জিব নিস্তব্ধ হয়ে গেছে গতরাতের আনন্দটা আজকে আর নেই এক রাশ মন খারাপ ঘিরে ধরেছে সবাইকে।
অপরদিকে নাজিমদের বাড়িতে হই হুল্লোড় চলছে সবার মাঝেই ব্যস্ততা।শ্রেয়া চুপচাপ বসে আছে তার শাশুড়ী আলেয়ার কক্ষে।আত্মীয় সজন সকলে কিছুক্ষণ পরপর বউ দেখার বাহানায় কক্ষে প্রবেশ করে।সবার মাঝে নিজেকে কেমন ভীন গ্রহের প্রাণী লাগছে শ্রেয়ার, সবার দৃষ্টি আজ তার দিকে সীমাবদ্ধ।

নাজিমের কাজিন সহ ভাবীরা শ্রেয়াকে নিয়ে নাজিমের কক্ষে দিকে রওনা হলো আকস্মিক সেখানে বেধে গেলো হট্টোগোল।ঈশান, রাসেল সহ নাজিমের অনন্য বন্ধুরা তার রুম অবরুদ্ধ করেছে।নাজিম অনেকবার রিকুয়েষ্ট করেও তাদের মানাতে পারলো না।আর এই পুরো দলের কলকাঠি নাড়াচ্ছে ঈশান।সে অনড় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো, যে করে হোক তাদের বিশ হাজার টাকা বকশিশ দিতেই হবে।নাজিম ঈশানের মন গলাতে বলে,

” ঈশান প্লিজ ভাই এমন করিস না।”

” কেমন করবো না?”

” বিয়ের গেটে ত্রিশ হাজার টাকা দিয়ে এলি এখন আবার বিশ হাজার কি শুরু করেছিস তুই।”

” তুই গেটে দাঁড়িয়ে বললি না আমি বন্ধু না শত্রু নে এবার শত্রুর মতো কাজ করলাম বিশ হাজার টাকা দে।”

” ঈশান।”

” অনুনয় করে লাভ নেই বন্ধু বিশ হাজার টাকা দে।প্রয়োজনে সারা রাত লাগাবো তোর বাসরের সব ফুল শুকিয়ে যাবে প্রতিটা প্রদীপের তেল ফুরিয়ে যাবে আহারে কষ্ট।টাকা আসবে টাকা যাবে কিন্তু এই রাত ফিরে পাবি না ভেবে দেখ।নাজিম দেখে দেখ ভাবির ক্লান্ত চেহারা বেশি দেরি হলে তোর লস ভাবি বলবে যাই ঘুমাই তুমি তোমার টাকা নিয়ে বাসর করো।”

ঈশানের যুক্তি শুনে বাকিরাও সহমত করলো।রাসেল ঈশানের কান্ড দেখে চিন্তায় পড়লো এই ছেলে তো তার বিয়েতেও সব পন্ড করে ছাড়বে।নাজিম না পেরে টাকার বান্ডিল নিয়ে ফিরলো ঈশানের হাতে টাকা দিয়ে অভিমানের ছলে বলে,

” সময় আমারো আসবে।”

” কোনদিন না কারণ বিয়েতে তো আমি তোদের ইনভাইট করবো না শুধু শুধু এসে খেয়ে যাবি আর বদনাম করবি এই রান্নায় তেল বেশি হয়েছে এই রান্নায় লবন কম হয়েছে।”

” তোর কপালে বিয়ে নাই ঈশান।”

নাজিমের কথায় হাসলো ঈশান শ্রেয়ার সম্মুখে দাঁড়িয়ে স্বল্প সরে বলে,

” অল দা বেস্ট ভাবি নাজিমকে আজকেই আঁচলে বেঁধে ফেলবেন উঠতে বসতে শাসাবেন।”

.
বিয়ের পর বৌভাত।বৌভাত অনুষ্ঠান সবটা বেশ সুষ্ঠ ভাবে সম্পূর্ণ হয়।ঈশানের মায়ের সাথে ঈশার ভাব দেখে মনে মনে সন্তুষ্ট হলেন মুজাহিদ হাসান।একটা সময় ঈশা আর ঈশানের মাঝে বৈরতা ছিলো দুজন ছিলো দুজনের চোখের বালি কিন্তু এখন দুজন দুজনকে সম্মান করে তাদের সম্পর্কটাও ভালো।ঈশানের সম্পূর্ণ বিপরীত হলো তার মা কথা বার্তা চাল চলন তিনি সম্পূর্ণ আলাদা।ঈশান যতটা গাম্ভীর্য তার মা ততটাই উলটা।এই মানুষটার মুখ থেকে কখনো হাসি সরে না তিনি সম্পূর্ণ মিশুক একজন মানুষ।

ধীরে ধীরে অতিথিরা বিদায় জানিয়েছে নাজিমদের বাড়ি জুড়ে এখন মানুষ আগের থেকেও অনেকটা কম।সারাদিনে অনুর সাথে দেখা করার সুযোগ হলো রাসেলের।নাজিমের কক্ষে অনুমতি বিহীন এই মুহূর্তে কেউ প্রবেশ করবে না তাই সেই কক্ষটি বেছে নিলো রাসেল।পুরো রুমটা পরখ করে বিছানায় বসলো অনু।রাসেল তার কাঁধে মাথা ফেলে ক্লান্ত স্বরে বলে,

” তুমি ইদানীং আমায় ভুলে গেছো অনু একটুও সময় দাও না আমায়।গতকাল বিয়েতে তুমি আর ঈশা দুজনেই আমাদের চোখের আড়ালে ছিলে ব্যপারটা কি বলতো?”

” গায়ে হলুদে যে চিপকে ছিলেন মশাই শ্রেয়া আপু সহ বাকিরা বুঝে ফেলেছে আপনার আমার মাঝে কিছু চলছে তাই দূরে দূরে থাকাটাই ভালো।”

” কিন্তু এই ভালো যে আমার ভালো লাগছে না।”

” ভালো লাগা লাগি পরে আগে বলুন আমায় কেমন লাগছে?”

” প্রতিদিনের মতো সুন্দর।”

” তাহলে আসুন ছবি তুলি আপনার সাথে আজ সারাদিনে একটা ছবিও তুলা হয়নি।”

” ভালো লাগছে না অনু।”

” ভালো লাগতে হবে।”

অনুর জেদের কাছে হারলো রাসেল শুরু হলো দুজনের ছবি তুলার যুদ্ধ।
.

অনুকে খুঁজতে খুঁজতে দিশাহীন ঈশা কেউ দিতে পারলো না অনুর খোঁজ সবচেয়ে বড় কথা অনু নেই রাসেলো নেই তার মানে দুই বজ্জাত এক সাথে আছে।বুঝতে পেরে কোমড়ে হাত রাখলো ঈশা আশেপাশে পরখ করে দেখা মিললো ঈশানের ছেলেটা তার দিকেই আসছে।

” এখানে কি করছো তুমি?”

” অনুকে খুঁজে পাচ্ছি না।”

” আমিও রাসেলকে খুঁজে পেলাম না ফোনটাও তুলছে না।”

” তার মানে আমার সন্দেহ ঠিক দুজনে এক সাথে আছে।”

” আমার সাথে আসো ঈশা।”

ঈশাকে আদেশ করে হাটা ধরলো ঈশান।ঈশানের পিছু পিছু চললো ঈশা।ঈশা ভেবেছিলো অনুকে খুঁজতে যাচ্ছে সে কিন্তু তার ধারনা ভুল প্রমান করে ঈশান তাকে ছাদে নিয়ে এসেছে।সম্পূর্ণ ছাদ ফাঁকা।দ্রুত হাতে দরজটা ভিড়ে দিলো ঈশান।

” এখানে কেন এলাম?”

ঈশার জিজ্ঞেসা দৃষ্টি উপেক্ষা করলো ঈশান।ঈশার ডান হাত জড়িয়ে চুমু খেলো হাতের পৃষ্ঠে।

” আরেকটা উইকেট পড়লো আমাদেরটা কবে পড়বে?”

” এত ব্যস্ত হচ্ছেন কেন মশাই?ধৈর্য ধরুন ধৈর্যর ফল মিষ্টি।”

” যা করার ছয় মাসের ভেতর করতে হবে আম্মু চলে যাবে তাই আমি চাই এর মাঝেই যা হবার হবে।”

ঈশা থমকে গেলো সম্পর্কের শুরু হয়েছে মাত্র কয়েকদিন এর মাঝে বিয়ে!তাছাড়া ঈশানকে তার অদ্ভুত লাগে এই যে রাসেলের কাছে এত কথা শুনেছে এই ছেলে বিয়ের পর নিশ্চয়ই কঠোর হবে আচ্ছা ঈশার স্বাধীনতা কি খর্ব করবে?ঈশার ভাবনার মাঝে ঈশাকে জড়িয়ে ধরলো ঈশান মেয়েটার মাথা ঠেকলো ঈশানের বুকে।

” কি ভাবছো?”

” ক..কিছু না।ঈশান যদি বাবা মা না মানে?”

” কেন মানবে না?”

” না মানার হাজারটা কারণ দাঁড় করাতে পারে।”

ঈশান কিছুটা রেগে গেলো তার আঁজলায় বাঁধলো ঈশার গাল।

” কেন মানবে না?কি চাই টাকা সম্পত্তি, বিশ্বস্ততা?সব আমার আছে তাহলে কেন মানবে না?”

” আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন?”

” নিচে যাও তুমি মুড খারাপ করে দিয়েছো আমার।”

” ঈশান রাগ দেখাবেন না আমি তো কথার কথা বলেছি।”

ঈশান কিছুটা শান্ত হলো কপালে ছুঁয়ে দিলো ঈশার ঠোঁট।

” তুমি কি চাও বলো?আমায় চাও না?”

” হ্যা কিন্তু.. ”

” কোন কিন্তু নেই আর এই বিষয়ে তোমার ভাবতেও হবে না নিচে যাও তোমাদের যাওয়ার সময় হয়েছে।”

ঈশা নিচে চলে গেলো।রেলিঙে দুহাত ভর করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ঈশান।হঠাৎ কেউ তার কাঁধে হাত রাখতে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো সে।অয়নকে দেখতে পেয়ে কিঞ্চিৎ চমকে গেলো।অয়ন তাহলে ছাদে ছিলো অথচ ঈশান তাকে দেখতে পেলো না।

” ঈশার সাথে তোমার সম্পর্ক আছে?”

অয়নের প্রশ্নে বুক ফুলিয়ে ঈশান জবাব দেয়,

” হুম কেন কি দরকার?”

” খবরদার ঈশার কথা ভুলে যাও, না হলে পস্তাবে তুমি।”

” কেন পস্তাবো?”

” ঈশার সাথে আমার বিয়ে হবে পারিবারিক ভাবে।”

ঈশান কিছুটা অবাক হলো এমন একটা ছেলের সাথে ঈশার বিয়ে?এই বিয়েতে তার মা বাবার মত আছে!

” সে টা আমার জানার দরকার নেই আমি ঈশাকে ভালোবাসি।”

ঈশানের কথা শুনে রেগে গেলো অয়ন খুবলে ধরলো ঈশানের কলার।ঈশান চমকে গেলো এত বড় সাহস ঈশান শাহরিয়ারের কলারে হাত দেয় এই ছেলে হয়তো জানেই না তার সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা কে,তার পরিচয় কী।মনে মনে হাসলো ঈশান অয়নের হাতের দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে বলে,

” ফিনিশ।”
#চলবে___