#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ২৫ ক]
______________________
৫৩.
পুনরায় যে যার জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।ব্যস্ত জীবনের কাছে বিয়ের আনন্দটা এখন শুধু স্মৃতির পাতায় মিশে আছে।গত সাপ্তাহে এই সময়টাতে হলুদের আয়োজন চলছিলো ঈশা,অনু,অনি,শ্রেয়া সবাই মিলে কত আনন্দ করেছে আর কবে যে সবার এক হওয়া হবে জানা নেই ঈশার।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সরু রাস্তাটায় চোখ বুলায় ঈশা।টিউশনি শেষ বাড়ি ফিরছে সে চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ।বিয়ের পর ঈশানের সাথে তার আর দেখা হয়নি এর অবশ্য কারণ আছে ঈশান কাজের চাপে দেখা করা সুযোগ সময় কোনটাই পায়নি।অসময়ে স্কিনে ভেসে উঠলো ঈশানের নাম্বার হ্যা ঈশান ফোন করেছে।সরু ঠোঁটের কোণে মুহূর্তে ভেসে উঠলো এক চিলতে হাসি।
” ঈশান।”
” কোথায় আছো তুমি?টিউশনিতে গেছিলে?”
” হুম বাড়ি ফিরছি আমি।”
” ঠিক আছে তুমি ওখানে থাকো আমি আসছি।”
ছোট ছোট পা ফেলে এগিয়ে গেলো ঈশা।কতদিন পর ঈশানের সাথে দেখা হবে ভাবতেই আনন্দ লাগছে মনে।দুই হাত বুলিয়ে চুল ঠিক করে নিজেকে কিছুটা পরিপাটি করে নিলো।ঈশানের গাড়ি দেখা গেলো এই তো আসছে।চোখের পলকে গাড়ি থামলো ঈশার সম্মুখে জানলা দিয়ে মাথা বের করে ঈশান বলে,
” উঠে এসো।”
ঈশা গাড়িতে গিয়ে বসলো।ঈশানের দিকে তাকিয়ে সন্দিহান চোখে বলে,
” আপনি অফিস থেকে আসেননি?
” না আজ দুপুর থেকে ফ্রি আছি আপাতত কয়েক দিন কাজের চাপ কম।”
“ওহ।”
” দেখি তাকাও তো আমার দিকে।”
ঈশা তাকালো পূর্ণ দৃষ্টিতে।এতদিনের তৃষ্ণা অবশেষে মিটলো ঈশানের।এই মেয়েটাকে দেখেনি এক সাপ্তাহ এর মধ্যে রাত দুইটা কি তিনটা মাঝে মাঝে ঈশার বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা হতো সে কিন্তু রাসেল কিছুতেই বের হতে দিতো না।যেহেতু বাড়িতে মাহমুদা আছে সেই ভয়ে রাসেলের সাথে পালটা তর্ক করার সাহস তার হতো না।সে তো তেমন কিছু চায়নি সে চেয়ে ল্যাম্পপোস্টের কিনারায় দাঁড়িয়ে শুধু দেখতে চেয়েছে প্রেয়সীর আবছা মুখখানী।এতটা দূর থেকে রাতে ঈশার স্পষ্ট মুখ কোন ভাবে দেখা সম্ভব নয় তবুও ঈশানের ইচ্ছে জাগে।
” এভাবে কি দেখছেন ঈশান?”
” আমার শান্তি,আমার স্বস্তি,আমার সুখ।”
ঈশানের এই উত্তর আশা করেনি সে।লজ্জায় মুখ ঘুরালো দ্রুত জানলার বাইরে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে মৃদু হাসলো সে।ঈশান হঠাৎ তার হাত ধরলো এগিয়ে নিলো বুকের কাছে।ঈশা কিছুটা অবাক হলো তার চাহনি দেখে ঈশান হেসে বলে,
” এই যে এখানটায় কয়েকটা দিন বেশ জ্বলছে মনে শান্তি নেই।মানসিক ভাবে স্বস্তি নেই।তুমি কোনদিন জানতে চেয়েছো আমার মন কেমন আছে?”
” আপনার কি হয়েছে ঈশান?”
” জানি না।”
কথা এড়িয়ে গেলো ঈশান।তবে তার মাঝে অস্থিরতার কারণ অয়ন।সেদিনের পর ঈশানের চিন্তা বেড়েছে বহুগুন। একদিকে অয়ন ঈশাকে নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে অন্যদিকে ঈশানের গায়ে হাত দেওয়ায় তার ইগোতে লেগেছে।ঈশান এমন একজন মানুষ যে সর্বদা নিজ স্বার্থে সচেষ্ট।নিজের ইগোতে লাগলে কোন কিছুতে সে তোয়াক্কা করে না যেখানে অয়ন তার গায়ে হাত দিয়েছে।এই দুঃসাহসের বদলা যতদিন না ঈশান নিচ্ছে মনে যে শান্তি নেই তার।
” ঈশান আমার কাছে কিছু লুকাচ্ছেন?”
” না কি লুকাবো?”
ঈশান কথাটি বলে গাড়ির সামনে থাকা রুমালে বাধা পুঁটলিটা হাতে নেয়।তার গিট খুলতে খুলতে ঈশাকে বলে,
“কোলে হাত রাখো ঈশা।”
” কেন?”
” এত কথা নয় যা বলছি করো।”
ঈশা কোলে হাত রাখলো ঈশান পুঁটলিটা খুলে মাধবীলতা ফুলগুলো তার কোলে ছড়িয়ে দেয়।হাতের মুঠোয় এত ফুল দেখে আনন্দে হেসে ফেললো ঈশা।কোলে থাকা ফুল গুলো ছুঁয়ে ঈশানকে বলে,
” কোথায় পেলেন?”
” আমাদের বাগানের।সেদিন দেখলাম ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে তুমি লাফিয়ে ঝাপিয়ে ফুল নেওয়ার চেষ্টা করেছিলে তাই আজ মনে হয় তোমার জন্য আমি নিয়ে যাই।”
নিশব্দে হাসলো ঈশা।এতদিনের প্রেমে ঈশান কখনো তাকে একটা ফুল এনে দেয়নি।তাদের আসা যাওয়া রাস্তার ধারে কত যে ফুল দোকানের সম্মুখে পড়েছে কিন্তু ঈশান কোনদিন একটা ফুল নেয়নি ঈশার জন্য বরং দোকান গুলো দেখলেও সে এড়িয়ে গেছে।ওই তো সেদিনের কথা, দুজনের মাঝে কথা-কাটাকাটি এক পর্যায়ে ঈশান বলে, ” আমার মাঝে বাকিদের ধরণ চরণ খোঁজা বোকামি তোমার জন্য ঈশা।আমি এসব প্রেম ভালোবাসার রাস্তায় কোনদিন হাটিনি ইচ্ছে জাগেনি মনে।আমার জীবনটা ছিল পড়াশোনা আর কি করে নিজেকে আরো আরো অনেকটা উন্নতি করা যায় সে ভাবনায়। এখানে সেখানে ইনভেস্ট করলে কত টাকা লাভ হবে আমি সর্বদা এসব নিয়ে চলেছি এখন প্রেমিক পুরুষ হয়ে বাকিদের মতো হবো কি করে।”
ঈশা সেদিন ঈশানের কথার প্রত্যুত্তর করেনি শুধু মনে মনে হেসেছিলো।সত্যিত এই মানুষটা সর্বদা নিজেকে নিয়ে ভাবে।সে কি করে অন্যসব প্যাঁচানো বিষয় তার মাথায় ঢুকবে।
” আন্টি কেমন আছে ঈশান?”
” বেশ ভালো।বাড়িতে একা থেকে বিরক্ত হন প্রায় সময় আমাকে বকাঝকা করে তাই বিকেল হলে দিয়ে আসি রুমার বাসায় থাকুক সেখানে সময় কাটাক।”
” আপনি সময় দেন না আন্টিকে?কত বছর পর এসেছে।”
” রাত ছাড়া আমার হাতে সময় নেই।চলো কিছু খাওয়া যাক।”
” আজ নয় ঈশান আযান দিয়েছে আমাকে বাসায় ফিরতে হবে।”
” ঠিক আছে।”
গাড়ি চালানোর সময় পুরোটা রাস্তায় ঈশার হাতের ভাজে নিজের হাত বন্দি করেছে ঈশান।মাঝে মাঝে ঈশার হাতে নিজের শুষ্ক ঠোঁট ছুঁইয়ে মেয়েটাকে লজ্জায় ফেলেছে।
ঈশাকে বাসায় নামিয়ে ফিরে এলো ঈশান।
এখন তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটা করা হবে যে কাজের অপেক্ষায় ছিলো রাত দিন গোটা সাতটা দিন।ঈশানের নির্দেশে অয়নকে তুলে আনা হয়েছে আর এই কাজটা করেছে ঈশানের নতুন পাটনার হৃদয়।ছেলেটার বয়স কম একটু রক্ত গরম স্বভাবের যতটা চুপচাপ থাকার ভান ধরে তার থেকেও বেশি অস্থির সে।তার হাত চলে সবার আগে বুঝে শুনে কদম ফেলার আগেই ট্রিগারে আঙুল চেপে সম্মুখে থাকা মানুষটার বুক ঝাঝরা করে দিতে দু’বার ভাবে না।ঈশানের এই ছেলেটাকে নিয়ে ভয় হয় এই বেসামাল ছেলেটা কোন দিন না জানি কোন গন্ডোগোল পাকিয়ে দেয় আর ফেঁসে যায় ঈশান।হৃদয়ের কথা মতো একটি পরিত্যাক্ত গোডাউনে এসে থামলো ঈশান।আশেপাশে নির্জন বাশের ঝুলে থাকা তারে জ্বলছে সোডিয়ামের আলো।ঈশান বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো গোডাউনের পেছন থেকে বেরিয়ে এলো হৃদয় ঈশানকে দেখে গম্ভীর সুরে বলে,
” সালাম স্যার।আপনার লোক ভেতরে আছে।”
” তাহলে যাওয়া যাক।”
ঈশান এগিয়ে গেলো অন্ধকার কক্ষে বাইরে থেকে এক চিলতে আলো এসে হালকা আলোর সন্ধান দিয়েছে।অয়নের মুখ সম্পূর্ণ বাঁধা কালো কাপড়ে চেয়ারের সাথে বেধে রাখা হয়েছে তাকে।ঈশান বেরিয়ে এলো সেই কক্ষ ছেড়ে হৃদয় এলো তার পিছু পিছু।
” ছেলেটাকে দিনে এক পিস পাউরুটি আর এক গ্লাস পানি দেবে।এছাড়া আর কোন খাবার, পানি না।তার রুমে কোন ফ্যান লাইট কিচ্ছু চলবে না।”
” কতদিন রাখবো স্যার?”
” কম হলেও তিনদিন।”
” এত ঝামেলার কি দরকার স্যার? হাটুতে একটা গুলি মে রে দিলেই তো ভয়ে ডরে লাইনে চলে আসবে।”
” এসব করার প্রয়োজন নেই।আমি চাই সে ধুকে ধুকে দূর্বল হোক অন্তত এই ট্রামা থেকে বের হতে তার অনেকদিন লাগবে।”
” এই ছেলের অপরাধ কী স্যার?”
” প্রথম অপরাধ আমার গায়ে হাত দেওয়ার দুঃসাহস করেছে।দ্বিতীয় অপরাধ আমার স্ত্রীর দিকে হাত বাড়িয়েছে।তৃতীয় অপরাধ সে একটি মেয়েকে ভালোবার ছলনায় বিয়ে করে মেয়েটাকে ধুকে ধুকে মে রে ছে।”
” শু য়ো রটাকে অন্তত ছয়দিন তো রাখাই দরকার অনেক অপরাধ করছে।”
” যেটা বলেছি সেটা করো।”
ঈশান বেরিয়ে গেলো তার মনে এখন ভীষণ শান্তি লাগছে।রাসেল গাড়িতে বসে ছিলো হাতে তার স্প্রাইটের ক্যান।ঈশানকে ড্রাইভিং সিটে বসতে দেখে শুধালো সে,
” ঈশান তুই আর কোনদিন ভালো হবি না।ভেবেছিলাম বড় হলে ঠিক হবি এখন দেখছি উলটো।এসব ঘাত-প্রতিঘাত করে কি লাভ?”
” জানি না আমি শুধু জানি প্রতিশোধ নিতে আমি আনন্দ পাই,পালটা জবাব দিতে মজা পাই।”
” ঈশা যদি জানে অয়নের সাথে এমনটা করছিস তবে কী হবে?”
” অয়ন নিখোঁজ এটা শুনে ঈশা আগে আমায় জেরা করবে।”
” এসব করে তুই ঈশার মন থেকে উঠে যাবি ঈশান।”
” তোর কি মনে হয় ওর মন থেকে আমি উঠে গেলেও তার নিস্তার আছে?”
” তুই অদৃশ্য ফাঁদ ঈশান যে একবার ফসকে যায় সে সারাজীবনের জন্য ফেঁসে যায়।”
হো হো করে হেসে উঠলো ঈশান।রাসেলের হাত থেকে স্প্রাইটের ক্যানটা নিয়ে চুমুক বসালো সে।
” তোর কি এখন আফসোস হচ্ছে আমার সাথে বন্ধুত্ব করার?একটা সময় আমি তোর ইচ্ছে অনিচ্ছায় আঘাত দিয়েছি মানছি।তবে এখন
আমি কী তোর স্বাধীনতায় আঘাত দিচ্ছি?”
” তুই ছাড়া আমার জীবন শূণ্য ঈশান।তোর পরিবারের বাইরে প্রথম ব্যক্তি আমি যার উপর তুই অধিকার খাটিয়েছিস সর্বদা নিজের কাছে কাছে রেখেছিস আর এখন ঈশা।”
“তুই আমার ভাই রাসেল আমার পরিবার তুই।ঈশাও হবে আর কিছুটা সময়ের অপেক্ষা।একটা সময়ে যেমন বন্ধু লাগে আরেটা সময় বউ লাগে দুইটাই গুরুত্বপূর্ণ।”
ঈশানের কথায় হাসলো রাসেল।গাড়ি ছুটছে আপন গতিতে এক্ষুনি তাকে বাড়ি ফিরতে হবে বাড়ি ফেরার আগে অবশ্য মাছের বাজারটা ঘুরে ঘুরে দেখতে হবে নতুন কোন দেশী মাছ এসেছে কী না।ঈশার বাবার পরামর্শে ঈশান এখন বেশ ভালো মাছ কেনে। প্রথম যেদিন ঈশান বাজার থেকে মাছ কিনে ফিরেছিলো সেদিন রাসেল হাসতে হাসতে শেষ প্রতিটা কথায় ঈশানকে ক্ষেপালো, ‘তোকে নির্ঘাত পচা মাছ দিয়েছে তাই না?’ পরবর্তীতে মাছ দেখে সন্তুষ্ট সবাই ঈশান তবে মাছ কেনা শিখেছে।এর অবদান অবশ্য তার শশুড়ের, মাঝে মাঝে কথাটা বলে রাসেলের সাথে হাসে ঈশান।
৫৪.
পরের দিন ভার্সিটির উদ্দেশ্যে ঈশা অনু বের হলেও ভার্সিটি যাবে না অনু।আজ সকালে রাসেল অবসর আছে তাই সুযোগটা কাজে লাগালো সে।অনেক দিন হয়ে গেলো দেখা হয়নি তার সাথে।ঈশা ক্লাসে চলে গেলো অথচ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে অনু রাসেল এখনো আসলো না।ছেলেটাকে ফোন করলেই বলে।, “পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করো অনুরূপী আমি আসছি।” অথচ এই পাঁচ মিনিট গিয়ে এক ঘন্টায় গড়ালো।রাগে দুঃখে কান্না এলো অনুর হঠাৎ সম্মুখে এসে দাড়ালো একটি গাড়ি তার বুঝতে আর বাকি নেই রাসেল এসেছে।অনু চপল পায়ে এগিয়ে গেলো গাড়ির কাছে দ্রুত গাড়িতে বসে রাসেলকে নির্দেশ দিলো,
“মুখ থেকে একটা কথাও বের করবে না দ্রুত চলো।”
রাসেল বেশ ভালো ভাবে বুঝলো মেয়েটা রেগে আছে তাই কথা না বাড়িয়ে চললো তাদের গন্তব্য স্থলে।একটি স্কুলের সামনে ঝালমুড়ি ওয়ালাকে দেখে গাড়ি থামালো রাসেল।গাড়ি থেকে নেমে অনুর জন্য ঝালমুড়ির অর্ডার করলো।অনু গাড়ি থেকে নেমে আশেপাশে চোখ বুলালো।এই জায়গাটা ভীষণ সুন্দর নির্মল বাতাস বইছে চারিদিকে।ঠোঙা ভরতি ঝালমুড়ি নিয়ে রাসেল ফিরলো তার কাছে।অনু দুই হাত ভাজ করে বক্ষে জড়িয়ে ভাব নিয়ে বলে,
” খাব না আমি।”
” খাবেনা!কিন্তু কেন?”
” তোমার প্রতি আমি বিরক্ত রাসেল।”
” আমি আবার কি করলাম?”
“তুমি আজ এক ঘন্টা দেরি করেছো এই এক ঘন্টা কতটা মূল্যবান আমাদের জীবনে তুমি জানো?তুমি কি আবার ফিরিয়ে দিতে পারবে আমার সেই সময়?”
রাসেল অবাক হলো ঠোঁট বাকিয়ে হেসে ঠোঙা ধরিয়ে দিলো অনুর হাতে।
” এই সামান্য কারণে এত রেগে আছো।”
” তোমার কাছে এটা সামান্য কারণ!তুমি জানো আমি গতকাল রাত থেকে কত এক্সাইটেড ছিলাম আমি কত আনন্দে ছিলাম অথচ তুমি আমায় মিথ্যা বলেছো।তুমি বাসায় ছিলে ঘুমাচ্ছিলে অথচ প্রতিবার ফোনে আমায় বলেছো যানজটে আটকে আছো ছিহ রাসেল আমাদের সম্পর্কে আজকাল মিথ্যারা প্রশ্রয় পায়।”
অনুর দুচোখ ছলছল করছে কথার মাঝে গলাটা ধরে এলো বারংবার।অনুকে ছুঁতে গেলে ছিটকে সরে যায় সে।
” কাছে আসবে না।”
” আমি ঘুমিয়ে ছিলাম এটা তোমায় কে বললো?”
” ঈশান ভাই বলেছে তিনি ভিডিও কলে আমায় দেখিয়েছেন।”
জিহ্বায় কামড় পড়লো রাসেলের এই ঈশানটা তাকে বেফাঁস ফাঁসিয়ে যাচ্ছে।কয়েকদিন আগে তাদের সম্পর্কের কথা ঈশার কাছে বলে সে কি ঝগড়া বাঁধালো এখন আবার।
” আমি সরি অনু তুমি রাগ করবে ভেবে বলতে পারিনি আসলে কাজের এত প্রেসার শরীরটাও দূর্বল ছিলো।এবার বলো কি করলে তোমার রাগ কমবে অনুরূপী?”
” কান ধরে উঠ বস কর বিশ বার।”
“কি!”
” যা বলছি তা কর।”
” আশেপাশে মানুষ তুমি দেখছো না?”
” দেখছি বলে এই শাস্তি দিলাম মানুষ দেখুক তুমিও লজ্জা পাও অন্তত এই দিনের কথা ভেবে আর কোনদিন আমায় মিথ্যে বলবে না।”
অনুকে অনেকবার মানানোর চেষ্টা চালালো কিন্তু মেয়েটা অনড় তাই অনুর কথায় রাসেল বাধ্য হলো। আশেপাশে তাকালো চোরা চোখে।কানে হাত দিয়ে স্কুলের সামনে কানে ধরে উঠ বস করলো বিশ বার।বেচারার অবস্থা দেখে খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো অনু অপরদিকে আশেপাশের মানুষ তাদের দিকে তাকিয়ে আছে অবাক হয়ে।
” তুমি বড্ড বেশি জ্বালাও অনুরূপী।”
.
দুপুরের পর আকাশটা কালো মেঘে ঢেকে গেছে বাতাসের শনশন শব্দ ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে।দুর দুরান্তের গাছগুলো একে একে যেন নৃত্য করছে।জানলার ফাঁক দিয়ে মুক্ত আকাশটার পানে তাকিয়ে কলিজা মুষড়ে উঠলো ঈশার।মুজাহিদ হাসান বেরিয়েছেন এই ঝড়বৃষ্টি মাথায় নিয়ে তার সাথে ছিলো ঈশার মামা ‘রমিজ’।এই দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় পাত্তা না দিয়ে তাদের বের হওয়ার পেছনে একটি বড় কারণ আছে আর তা হলো অয়ন।ছেলেটা গতকাল সকালে অফিসে যায় এরপর আর বাসায় ফেরেনি।সারাটা রাত তার বন্ধু বান্ধব আত্নীয় সজনের কাছে খোঁজ নিয়েছে কিন্তু ছেলেটা কোথাও নেই।ভেবেছিলো সকালে ফিরবে কিন্তু সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো ঘরের ছেলে ঘরে ফিরলো না।অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায় গতকাল অফিস টাইম শেষে বেরিয়ে পড়ে অয়ন কিন্তু আজ সকালে সে অফিসে আসেনি।ছেলে নিখোঁজে কান্নার রোল পড়ে যায় ছেলেকে কোথায় খুঁজবে কি করবে ভেবে কুল পেলেন না অয়নের বাবা রমিজ।তাই বাধ্য হয়ে মুজাহিদ হাসানের সাথে যোগাযোগ করেন তিনি।মুজাহিদ হাসান পুলিশকে জানানোর কথা বললে বারণ করেন রমিজ।পুলিশ কেস মামলা মোকদ্দমা এসব অপছন্দ করেন তিনি। অবশ্য কেস মামলা মোকদ্দমা পুলিশ, মধ্যবিত্তের কাছে এগুলো বড্ড আতঙ্কের নাম।
সবার আহাজারি,ব্যাকুলতা দেখছিলো ঈশা কিছু বলতে গিয়েও সে পারছে না অয়নের নিখোঁজের পেছনে ঈশানের হাত আছে তাতে ঈশা শতভাগ নিশ্চিত সে।তাই দেরি না করে ফোন করলো ঈশানকে।অসময়ে ঈশার ফোন পেয়ে কিঞ্চিৎ হাসলো ঈশান সে জানে ঈশা এখন কেন তাকে স্মরণ করেছে।
” আমার জানটা কেমন আছে?”
” রসিয়ে রসিয়ে কথা বলা বন্ধ করুন ঈশান।”
” ভালো কথা বললেও মানুষের আজকাল ভালো লাগে না কেন বুঝি না।”
” অয়ন কোথায় ঈশান?”
” আমি জানবো কি করে?”
” অয়ন ভাই গত রাত থেকে নিখোঁজ।”
” ও।”
” ও!শুধুই ও?আর কিছু বলবেন না?”
” ওই ছেলের ব্যপারে কোন কথা বলার আগ্রহ আমার নেই ঈশা।”
” অয়ন ভাইয়ের সাথে আপনি কিছু করেছেন তাইনা?”
” তোমার যা ইচ্ছা হয় ভাবো।”
” ঈশান দয়া করুন।”
বাইরে প্রচন্ড ঝড় শুরু হয়েছে সেই সাথে যেনো ঈশার মনেও ঝড় চলছে।অথচ ঈশান নিরব নিশ্চিন্ত।স্বচ্ছ কাঁচের মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে বাইরের তান্ডবলীলা।সেই তান্ডবে ঈশানের মনেও যেন আকস্মিক তান্ডব শুরু হয়েছে।
” আমাকেও একটু দয়া করো ঈশা বাইরে ঝড় হচ্ছে এই মুহূর্তে তোমার এসব শুনতে ভালো লাগছে না।এখন সময় প্রেমের আমাদের প্রেমময় মুহূর্তের।”
” অয়ন ভাইকে ছাড়ুন ঈশান এমন করে আপনার লাভ কি হচ্ছে?”
” তোমায় এখন কাছে পেলে জাপটে জড়িয়ে ধরতাম।তোমার কোমল গালে আমার অবাধ্য ঠোঁটের ছোয়া দিতাম।”
” আমি আপনায় কি বলছি শুনতে পাচ্ছেন না?”
” আমি কি বলছি তুমি বুঝতে পারছো না?আমার এখন প্রেম পেয়েছে।”
” ঈশান এসব বন্ধ করুন এবার।”
” কেন তোমার কি প্রেম প্রেম পাচ্ছে?অনুভূতি পালটে যাচ্ছে তাই না?”
” আমি অনুভূতি শূণ্য ঈশান।”
” আর আমি তোমায় ছাড়া শূণ্য।”
#চলবে___
#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ২৫খ]
_____________________
৫৫.
পরনিন্দা যার সর্বদা চর্চায় থাকতো সেই মানুষটা আজ বোবা হয়ে গেছে।ছেলে হারানোর শোকে স্তব্দ বাকরুদ্ধ।অয়ন নিখোঁজের আজ তিনদিন চলছে না চাইতেও পুলিশের আশ্রয় নেন রমিজ।পুলিশ অয়নকে হন্য হয়ে খুঁজছে কিন্তু সে কোথায় কোন তথ্য এখনো পেতে সক্ষম হয়নি তারা।ঈশা নিশ্চুপ চোখে সবার কার্যকলাপ দেখছে মনে মনে অপরাধবোধে জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে।তার কারণে আজ অয়নের এই দশা এই গল্পের মূল কেন্দ্রবিন্দু তো সে নিজে।ঈশানকে কতবার হাত জোর করেছিলো কতবার বলেছিলো অয়ন ভাইকে ছেড়ে দিতে কিন্তু ছেলেটা জবাবে একটা কথাই বলেছে, “অয়নের সাহস বেড়েছে আমার গায়ে হাত দেওয়ার মতো স্পর্ধা দেখিয়েছে।যে আমার দিকে আঙুল তুলে তাকে পায়ের তলায় পিষে রাখি আর অয়ন তো আমার গায়ে হাত তুলেছে তাহলে তার সাথে কি করতাম আশা করি বুঝতে পারছো।কিন্তু তোমার কথা ভেবে আমি কিছুই করছি না ঈশা যতটুকু করছি ততটুকু আমার মনের শান্তির দায়ে করছি।”
এতবার করে বোঝানোর পরেও যখন ঈশানকে মানানো গেলো না তখন বাধ্য হয়ে ছেলেটার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে সে।ঈশানকে ভালোবাসা তার জীবনের চরম ভুল ছিলো।ঈশানের ভালোবাসা কোন ধরণের তা বুঝতে বাকি নেই ঈশার।খাচায় বন্দি পাখিকে মনিব যেমন ভালোবাসে ঈশান তেমনটা ঈশাকে বাসে।পাখিটার উড়ার ক্ষমতা রুদ্ধ করে ওই নিল আকাশটা ছিনিয়ে মনিব যেমন খাচায় রেখে আদর সোহাগ করে ঈশান ঠিক তেমন।এই ছেলেটার প্রতি কি করে যে ভালোবাসা জন্মালো ভেবে পেলো না ঈশা।অবশ্য এই ভালোবাসার সূচনাটা তখন থেকে শুরু হয় যখন অনুর মাঝে ব্যস্ততার রেশ পাওয়া যায় দুইজনের মাঝে আগের মতো আড্ডা সময় দেওয়া কম হতো হয়তো রাসেলের সাথে সময় কাটানো হতো অনুর।তখন না বুঝলেও এখন এই বিষয়টা বেশ ভালোভাবে বুঝতে পারছে ঈশা।আর এসবের মাঝে ঈশানের সাথে দেখা সাক্ষাৎ ঈশানের পাগলামি সব মিলিয়ে দূর্বল হয়ে পড়ে ঈশা আর মোড় নেয় ভালোবাসার।ঈশানের এসব কান্ড কীর্তি ঈশার কাছে ভালোবাসা নয় বরং যেন উন্মাদের উন্মাদনা।বুঝতে অনেকটা সময় লাগিয়েছে কিন্তু এখন আর না অনেক হয়েছে।নিজের মনকে শক্ত করবে ঈশা তাকে দূর্বল হলে চলবে না।ঈশান শাহরিয়ারের পথে আর সে হাটবে না যতটা পারা যায় এড়িয়ে চলবে সে।এমন ক্রিমিনাল মাইন্ডের মানুষের কাছ থেকে যতটা পারা যায় দূরে থাকাই শ্রেয়।এরা ভালোবাসার দোহাই দিয়ে আর কি কি করবে কে যানে।
লেকচারারের প্রতিটা বক্তব্য মন দিয়ে শুনছে ঈশা।পাশে বসে অনু কোলে মোবাইল রেখে টাইপিং করছে নিশ্চয়ই রাসেলের সাথে মেসেজে কথা বলছে।পড়াশোনার ক্ষেত্রে বড্ড ফাঁকিবাজ অনু একে নাচুনি বুড়ি তার উপর ঢোলের বারি হিসেবে রাসেল উদয় হয়েছে।ঈশার চাপে যা একটু পড়াশোনা করতো এখন সেটাও না।লেকচারের বক্তব্য থেমে যায় একজন ব্যক্তির আগমনে।
” আসবো?”
লেকচারার ঘুরে তাকান দরজার সম্মুখে ঈশানকে দেখে প্রশস্ত হয় তার ঠোঁট যুগল।
” শাহরিয়ার যে এসো এসো।”
ঈশান এগিয়ে গেলো হাতে হাত মেলালো লেকচারের।এতক্ষণ ক্লাসে যে নিস্তব্ধতা ছিলো মুহূর্তে সেটা গায়েব হয়ে গেলো।প্রতিটা ছেলে মেয়ের মাঝে চলছে কানাকানি।লেকচারার হাঁক ডাকলেন গাম্ভীর্য এঁটে বলেন,
” সাইলেন্ট সাইলেন্ট।”
ঈশানের দু’চোখ ভীড়ের মাঝে খুঁজে নিলো ঈশাকে।আতঙ্কে মেয়েটা কেমন ঘেমে যাচ্ছে চোখ দুটো অস্থির সেই চোখে কত শত প্রশ্নেরা খেলা করছে।”
” শাহরিয়ার কেমন আছো?তোমার বাবা কেমন আছেন?ইদানীং তাকে পাওয়া যাচ্ছে না ফোনে।”
” আমি আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের দোয়ায় বেশ ভালো আছি আঙ্কেল।বাবার কথা জানতে চাইবেন না প্লিজ ওনার কোন খোঁজ আমি রাখি না।”
” এভাবে আর কতদিন চলবে?তোমার বাবা ভুল করেছেন তাতে তিনি অনুতপ্ত।”
” কিন্তু বাবাতো কোনদিনও বলেনি তার ভুল হয়েছে তিনি ভুল বুঝতে পেরেছেন যেদিন বলবে সেদিন আমি ফিরবো।”
” এখন কেনো এলে?ঈশার জন্য?”
” জি আঙ্কেল আমাকে চট্রগ্রামে যেতে হবে তাই যাওয়ার আগে দেখা করে যেতে চাই।”
” বিয়ে কবে করছো?”
” পরিস্থিতির উপর নির্ভর।”
” অল দা বেস্ট শাহরিয়ার যা হবে ভালোর জন্য হবে।”
লেকচারের কথা স্মিত হাসলো ঈশান।ঈশার দিকে তাকিয়ে লেকচারার নির্দেশ করেন বই খাতা ঘুছিয়ে উঠে আসতে।ঈশা উঠে আসতে ঈশান তাকে যেতে বলে সবার সামনে সিনক্রিয়েট করা বোকামি তাই চুপচাপ ক্লাস থেকে বেরিয়ে পড়লো সে।
ঈশান তাকে নিয়ে এসেছে কলেজের কাছে সেই ক্যাফেতে।তারা ছাড়া আশেপাশে মানুষজন নেই পুরোটা ক্যাফ ফাঁকা। নিশ্চয়ই এটা ঈশানের কারসাজি।ঈশার হাত টেনে বসালো ঈশান টুকটাক খাওয়ার অর্ডার দিয়ে বসলো ঈশার মুখোমুখি।
” আমাকে ইগ্নোর করে যাচ্ছো।সেদিন দুপুরের পর সবকিছু থেকে আমায় ব্লক করেছো কোন যোগাযোগ রাখনি।তোমার কি ধারনা আমি এসব মুখ বুঝে সহ্য করছি?আমি তোমায় সময় দিচ্ছি ঈশা।একমাত্র রাসেলের কথায় কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।”
” কিসের সময় দিচ্ছেন আমায়?আমি আপনার কাছে কোন সময় চেয়েছি?”
” আজ রাতে অয়নকে ফিরে আসবে।”
” ও বাঁচিয়ে রেখে ছিলেন আমি তো ভেবেছিলাম লাশটা এতদিনে পচেও গেছে।”
ঈশান ক্রূর হাসলো।সেই হাসিতে গায়ে জ্বলন ধরলো ঈশার।
” আমি আপনার সাথে কোন সম্পর্ক রাখতে চাই না ঈশান।আমাদের সম্পর্ক এখানে শেষ।”
” বললে আর মেনে নিলাম?”
” মানতে বাধ্য আপনি।”
” আমি আজ দুপুরে চট্রগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হবো নিজের খেয়াল রাখবে উলটা পালটা এমন কোন কাজ করো না যাতে আমি হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ি।”
” কথা ঘুরিয়ে লাভ নেই ঈশান আমি যখন বলেছি এই সম্পর্ক রাখবো না তখন… ”
” বার বার এক কথা কেন বলছো তুমি?মুখে মুখে বললে আর আমি ভেঙ্গে দিলাম এতই সহজ।”
” তাহলে কি আপনার সাথে যুদ্ধ করতে হবে?যুদ্ধ ঘোষণা করে এই সম্পর্ক ভাঙবো?”
” সেই যুদ্ধতে তুমি হেরে যাবে ঈশা।আমার সাথে লড়াই এত সহজ নয়।”
ঈশানের সাথে তর্কেও হেরে যাচ্ছে ঈশা।ওয়েটার দুই মগ কফি একটা পানির বোতল এবং স্যান্ডউইচ দিয়ে গেছে।ঈশা দ্রুত হাতে সামনে থাকা পানির বোতলটা নিয়ে অর্ধেক পানি পান করলো গলাটা ভিজেছে এবার একটু হলেও শান্তি শান্তি লাগছে।
” অয়নের হাত থেতলে দিয়েছেন আমি কিছু বলতে গিয়েও বলিনি।এখন তাকে গুম করেছেন মানলাম দোষ করলে অয়ন ভাই করেছেন তাহলে তার শাস্তি উনার পরিবার কেন পাবেন?মামা খালা সবার বাড়ির অবস্থা আপনি জানেন তারা কতটা চিন্তায় আছে?”
” আমার জেনে লাভ নেই আমি যেটা ঠিক সেটাই করেছি যে আমার দিকে আঙুল তুলে তাকে পিষে ফেলি আর ও তো গায়ে হাত দেওয়ার সাহস করেছে আমার ইগোতে লেগেছে তোমার কথা ভেবে বেশি কিছু করিনি শুধু..।”
গরম কফি মুখে,গলায়,বুকে পড়তে থমকে গেলো ঈশান।চামড়া কেমন জ্বলে যাচ্ছে কেউ যেন এ সি ড ছুড়েছে।কফির মগটা হাত থেকে টেবিলে সশব্দে রাখলো ঈশা ততক্ষনে ঈশান দাঁড়িয়ে গেছে।দুই হাত টেবিলে ভর রেখে ঈশানের দিকে ঝুঁকে আসে ঈশা এবং ক্রূর হেসে বলে,
“এবার আপনার ইগোতে লেগেছে তাই না ঈশান?কি করবেন আমায় মারবেন,গুম করবেন,নাকি খু ন?”
গায়ের শার্টটা আলগোছে খুলে নিলো ঈশান ঈশা এমন দুঃসাহস কাজ করবে স্বপ্নেও ভাবেনি।ঈশার কাছে এগিয়ে এসে ঈশার ওড়নার কোন ধরলো ধীরে ধীরে মুছলো মুখ,গলা,বুক।ফর্সা চমড়া কেমন লাল হয়ে গেছে সেদিকে তাকিয়ে ভড়কে গেলো ঈশা।ঈশানের হাত থেকে ওড়না ছাড়িয়ে সরে গেলো দ্রুত।ঈশানকে খালি গায়ে দেখে লজ্জা নিংড়ে গেল সুঠাম দেহের অধিকারী ছেলেটা বাইরে থেকে না ভেঙলেও ভেতরে ভেতরে গুড়িয়ে গেছে।
” এত ঘাবড়ে যাচ্ছো কেন ঈশা?”
কথাটা বলে হাসলো ঈশান।এই হাসিতে কোন আনন্দের ছাপ নেই।কেমন থমথমে নিগূঢ় আনন্দহীন হাসি।ঈশার এত সাহস এত জেদ এক নিমিষে হাওয়া গেছে মনে মনে নিজের প্রতি রাগ লাগলো তার তবুও বাইরে থেকে অনুভূতি গুলো টলতে দিলো না।দৃঢ় সরে বলে,
” মা র বে ন?মে রে ফেলুন।”
” এখন থেকে শুধু তুমি আমার ভালোবাসা নও ঈশা তুমি আমার জেদে পরিনত হয়েছো।তোমায় অর্জনের জেদটা আমার এক জীবনের শেষ নিশ্বাস অবধি থাকবে।”
ঈশান হাসলো সেই হাসিতে গায়ে কাটা দিলো ঈশার।বড় বড় পা ফেলে বেরিয়ে গেলো সে।
সারাটা শরীর বিবশ হয়ে আসছে মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতা যেন লুপ্ত হয়েছে।এই সময়ের অনুভূতিটা কেমন ঈশান ভাষায় প্রকাশ করতে পারবে না।না অপমান না জেদ কোনটার রেশ তার মাঝে নেই গাড়ি চলছে ফুল স্প্রিডে।তার টলমলে অশ্রুসিক্ত দুচোখ রক্তিম।সরু দু’ফালি ঠোঁট কিছুক্ষণ পর পর উলটে যাচ্ছে বড় বড় ঢোক গিলে নিজেকে যথা সাধ্য সংযত রাখার চেষ্টা চালালো ঈশান তবে লাভ কী হলো সেই তো কেঁদে ফেললো।দুচোখ ভেসে গেছে জলে সেই জল চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো দু’গালে।শেষ কবে কেঁদেছে ঈশান তার মনে নেই।হয়তো তখন যখন পরিবারের মানুষগুলোকে ছেড়ে একাই দেশে ফিরেছে সে চোখ ভরতি স্বপ্ন হাত ভরতি শূন্যের জোয়ার।সফল্য লাভের আশায় প্রতিটা রাতে সে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে কখনো কখনো নিজের সাথে নিজে না পেরে কেঁদেছে সেই কান্না কেউ দেখেনি এমনকি রাসেলও না।গাড়ি থামলো গেটের সামনে ধপধপ পা ফেলে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে ডানে বামে না তাকিয়ে নিজের কক্ষে চলে গেল।হাতে তোয়ালে নিয়ে ছুটে গেল ওয়াশরুমে।ঝরণার পানি ছেড়ে নিশ্চুপ ভিজতে থাকে।পোড়া স্থানে পানি লাগায় জ্বালাপোড়া বহুগুনে বেড়ে যায়।চামড়ার উপরেও জ্বলছে চামড়ার ভেতরে যে হৃদযন্ত্রটা আছে সেখানেও জ্বলছে।এত জ্বালা কী করে সহ্য করবে ঈশান।
৫৬.
সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ফিরে এলো অয়ন। ছেলেটা শারিরীক ভাবে খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে।অবশ্য এটাই চেয়েছিলো ঈশান।আসার পর থেকে সে চুপচাপ থম মেরে বসে আছে।তাকে যখন সবাই জিজ্ঞেস করছে সে কোথায় ছিলো, কি হয়েছিলো এসবের উত্তর দিতে পারেনি সে।সে শুধু জানে রাত দিন চব্বিশ ঘন্টা তাকে চেয়ারের সাথে বেধে রাখা হয়েছে চোখ বেঁধে।সন্তান ফিরে পেয়ে স্বস্তির শ্বাস ছাড়লো বাবা মা।ঈশার মা বেজায় খুশি অয়ন ফিরে এসেছে সবার বুক থেকে চাপা পাথরটা সরে গেছে।কিন্তু নিরব হয়ে রইলো ঈশা নিজের কান্ডে সে নিজেই হতবিহ্বল।রাগে জেদে অন্ধ হয়ে কি করে পারলো ঈশানকে আঘাত দিতে?কি করে পারলো সে?অনু তার সামনে বসে আছে সে পর্যবেক্ষণ করছে ঈশার চোখ দুটো।এই দুটি চোখ থেকে যে কোন সময়ে গড়িয়ে পড়বে বিন্দু বিন্দু জল।হলোও তাই কয়েক মিনিটের মাঝে কেঁদে ফেললো ঈশা সান্ত্বনা দিয়ে তার হাত জড়িয়ে ধরলো অনু।
” এখন কান্না করে কি হবে?যা করার করে ফেলেছিস।”
” উনি কষ্ট পেয়েছেন অনু, খুব কষ্ট পেয়েছেন।”
” তুই ছেড়ে যেতে চাইছিলি এখন ঈশান ভাই তোকে ছেড়ে যাবে তাহলে কাঁদছিস কেন?”
” জানি না আমি শুধু জানি আমার খারাপ লাগছে।”
” তুই ঈশান ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক রাখবি?”
” একদমি না।প্রয়োজনে এই শহর ছাড়বো তবুও উনার কাছে ফিরবো না।”
” তাহলে এত কাঁদছিস কেন?মানসিক ভাবে এই কয়েকদিন চাপে ছিলি এবার ঘুম দে।আয় তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দি।”
ঈশার যখন চোখ লেগে এলো ঠিক তখনি ফোন করলো ঈশান।একবার দুইবার তিনবার চারবার এভাবে একেরপর এক ছয়টা ফোন আসে।কিন্তু একবারেও ফোন রিসিভ করেনি ঈশা।অনু মন থেকে চেয়েছিলো ঈশা ফোন ধরুক সব মিটে যাক কিন্তু মেয়েটা ফোন ধরলো না সে জেদে অনড় রইলো।দেয়াল ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো সময়টা রাত একটা নিজের মনকে বুঝিয়ে পুণরায় ঘুমানোর চেষ্টা চালায় কিন্তু ঘুম আর ধরা দেয় না।কয়েক মিনিট পর ফোনে একটি মেসেজ আসে ঈশানের নাম্বার থেকে।দ্রুত হাতে মেসেজটি ওপেন করে ঈশা।
” তুমি আকাশের বুকে বিশালতার উপমা,তুমি আমার চোখতে সরলতার প্রতিমা।
আমি তোমাকে গড়ি ভেঙ্গে চুরে শতবার,রয়েছো তুমি বহুদূরে ..
আমাকে রেখে ছলনায়,
এ হৃদয় ভেঙ্গে গেলে জানো কি তা
লাগে না, লাগে না জোড়া…..
আমি এখন আছি খোলা বিস্তৃত একটা ছাদে।ছাদে বসে আছি আমি সহ আরো বেশ কয়েকজন তাদের মাঝে কয়েকজনের গানের গলা দুর্দান্ত একজন ভালো গিটার বাজায়।
নিস্তব্ধ নিগূঢ় পরিবেশটায় তারা বারবার এই একটা গানটা গাইছে।এই গানটা আমি কখনো বিশেষ ভাবে শুনি নাই।তবে এখন কেন জানি গানের প্রতিটা শব্দে আমি তোমায় খুঁজে পাই ঈশা।আমাকে ছলনায় রেখে তুমি কী শান্তি পাও মেয়ে?এই লাইনটা মাথায় রেখো, এ হৃদয় ভেঙ্গে গেলে জানো কি তা
লাগে না, লাগে না জোড়া..!”
প্রচন্ড মনখারাপ হতাশার মাঝেও হেসে ফেললো ঈশা।তার মনের কালো মেঘ কেটে গেছে যেখানে যেন অনুভূতির বৃষ্টি ঝরছে। ঈশার হাসি দেখে মোবাইল টেনে নিলো অনু পুরো মেসেজটি পড়ে সে নিজেও স্তব্ধ।
#চলবে____
#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ২৬ক]
____________________
৫৭.
ঈশানের সাথে আগের মতো জলচল নেই ব্যপারটা খুব বেশি ভালো লাগছে না আবার মন্দ লাগছে না।সময় তো কেটে যাচ্ছে।নিজেকে ভীষণ ব্যস্ত করে তুলেছে ঈশা পরিবারের সাথে সময় কাটানো,ফাঁকে ফাঁকে ফুফুর বাড়ি থেকে ঘুরে আসা সবটাই ঈশানকে ভুলে থাকার চেষ্টা।তবে ভুলে কী থাকা যায়?এই তো সেদিনের কথা মাধবীলতা গাছটাত ঝুলে থাকা মাধবীলতা ফুল দেখে পুলকিত হয় ঈশার মন কয়েক সেকেন্ডে স্মৃতি রোমন্থে ঈশানের কথা মাথায় আসতে মনটা ভালো হওয়ার চেয়ে দ্বিগুণ খারাপ হয়।ছেলেটার ব্যকুল দৃষ্টি ঈশার হাতে ছড়িয়ে দেওয়া ফুল সবটা মনে আসতে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে এলো ঈশার।
দেয়াল ঘড়িতে রাত সাড়ে এগারোটা ইদানীং শরীরটা বড্ড খারাপ যাচ্ছে।হুট করে মাথা ব্যথা বেড়ে গেলো।কক্ষের লাইটটা অফ করে শুয়ে রইলো চুপচাপ, উদ্দেশ্য ঘুমানোর চেষ্টা।কিয়ৎক্ষণ বাদে হঠাৎ কক্ষের লাইট জ্বলে উঠে বিরক্তে মুখ কুচকে দরজায় তাকাতে দেখতে পায় অনুকে।ইদানীং অনু এক ছলচাতুরী পেয়েছে ঈশার সাথে ঘুমাবে বলে হাজির হয় যদিও ঈশা এতে বারণ করে না কিন্তু টানা চার পাঁচদিন একই কান্ড চলতে থাকলে ঈশার মনে সন্দেহ তো আসবেই।
” তুই?”
” ঘুমাবো আপত্তি আছে নাকি?”
” না।কিন্তু সন্দেহ আছে।”
” কেন?”
” ইদানীং আমার সাথে ঘুমানোর বাহানার কারণ?”
অনু থতমত চোখে তাকালো সে।কি করে বলবে এটা ঈশানের রিকুয়েষ্ট বললে তো আজ রণক্ষেত্র সৃষ্টি হবে।
” আগামী বছর আমরা কে কোথায় থাকবো বলতো তোর বিয়ে হয়ে যাবে হয়তো আমার এসব ভেবে খারাপ লাগে।”
ঈশা আনমনে হাসলো আগামী তিন বছরেও সে বিয়ে করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিজেকে আগে ঘুছিয়ে নিতে হবে,চাকরি করার স্বপ্নের পথ একটু একটু করে পরিষ্কার করতে হবে অথচ অনু ফাঁকিবাজ এই মেয়ে বোধহয় এই বছরেই বিয়ে সারবে।পড়াশোনার নাম শুনলে তো তার জ্বর হয়।
“এসেছিস যখন মাথাটা একটু মালিশ করে দে ভীষণ যন্ত্রণা করছে।”
” সে কি হঠাৎ? ”
” জানি না।ড্রয়ারে মলম আছে নিয়ে আয়।”
অনু দ্রুত বেগে ছুটলো মলম লাগিয়ে মালিশ করলো ঈশার কপালে।কিছুটা মুহূর্ত পর ঘুমে কাবু ঈশা।মেয়েটার ঘুম গাঢ় হতে কক্ষের দরজা রুদ্ধ করে বিছানায় ফেরে অনু।তার হাতে দুটি ফোন নিয়ে অপেক্ষা করে ঈশানের ফোনের কিয়ৎক্ষণ বাদে ফোন করলো ঈশান অডিও নয় ভিডিও কল।পেছনের ক্যামেরা ঈশার দিকে দিয়ে বালিশের সাথে ফোনটা সেটিং করে নিজের কাজে ব্যস্ত হলো অনু এখন তার কাজ রাসেলের সাথে কথা বলা।অপর দিকে সোফায় বসে একগাদা কাজ সারছে ঈশান,দ্রুত বাড়ি ফেরার লোভে যত পারা যায় কাজ করছে সে কতদিন যে ঠিক ঠাক ঘুমায় না তবুও নিজেকে একটুও ভিড়ায় না।রাসেল কয়েকটা ফাইল নিয়ে তার রুমে চলে গেছে।কাজের ফাঁকে ফাঁকে ঈশানের দৃষ্টি ল্যাপটপের স্কিনে যেখানে ভেসে আছে ঘুমন্ত এক রমণী।সারাদিনের ক্লান্তি ভুলতে ঈশানের এই মেয়েটাকে প্রয়োজন।ঈশা তাকে উপেক্ষা করছে করুক যতটা পারা যায় করতে থাকুক কিন্তু এই ছল কৌশল বেশি দিন নয়।ঈশান ফিরবে নিজের অধিকারের নাম দিতে ফিরবে।
ঈশানের শেষ ভরসা অনু মেয়েটাকে সারাদিন জ্বালিয়ে মা রছে ঈশান ঈশার প্রতিটা আপডেট সে তার কাছ থেকেই পায়।
কাগজ পত্র ঘুছিয়ে গাঢ় শ্বাস ছাড়লো ঈশান স্কিনে তাকিয়ে স্মিত হাসলো।ঈশার এলোমেলো চুল ছুঁয়ে দিতে হাত রাখলো কিন্তু আফসোস তাদের মাঝে এখন অনেকটা দূরত্ব।রাত দুইটা ছুঁই ছুঁই কাজ শেষ করে বিছানায় ফিরলো ঈশান ল্যাপটপ তখন তার হাতে ছিল ঈশাকে আর কিছুক্ষণ দেখে ফোন রাখলো অনু পাগলটা নিশ্চয়ই এখনো রাসেলের সাথে কথায় ব্যস্ত।
দেরি না করে ঘুমানোর চেষ্ট চালালো ঈশান তবে ঘুমটা তার চোখে ধরা দিলো না।মাঝরাতের যে মন খারাপ হতাশা সবটা এখন ঘিরে রেখেছে তাকে।মাথায় কিলবিল করছে হাজার খানেক প্রশ্ন।ঈশার প্রতি এত মায়া বাড়িয়ে লাভ কি হলো?সেই তো দূরত্ব তৈরি হয়েছে।তাকে ভালোবাসা ঈশানের ভুল নয় কী?ঈশা যদি ছেড়ে চলে যায়!বুকের ভেতর মুষড়ে উঠলো ঈশানের তার কিচ্ছু ভালো লাগছে না রুমের প্রতিটি ড্রয়ারে সিগারেটের প্যাকে খুঁজলো এ ছাড়া এখন আর চিন্তার হাত থেকে বাঁচা যাবে না।হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো ঈশানের এত রাতে কে ফোন করেছে ভাবতে ভাবতে ফোন তুললো সে।চট্রগ্রামে যাওয়ার আগে হৃদয়কে বলে গেছিলো ঈশার উপর নজর রাখতে হঠাৎ হৃদয়ের ফোনে কিছুটা বিচলিত হলো ঈশান।
” এত রাতে কোন সমস্যা হৃদয়।”
” ঈশা ম্যাডামের সাথে তিয়াশ নামের ছেলেটা একান্ত দেখা করবে দুইদিন পর আজ ভার্সিটির সামনে ম্যাডামের সাথে উনার দেখা হয়।উনি ব্যস্ত ছিলেন বলে অল্প কথা বলেই চলে যান।”
” এত বড় সাহস,তোমার এই কথা জানাতে এত দেরি হলো কেন?”
” স্যার তিয়াশের সম্পর্কে বিশদ খোঁজ খবর নিয়েছিলাম।”
” কি কি জানলে?”
“উনার গার্লফ্রেন্ড আছে তিনি বর্তমানে ইন্ডিয়া থাকছেন।এর কারণ উনার বাবা মায়ের ডিভোর্স হয়েছে মা ইন্ডিয়া থাকেন সেখানেই চাকরি করেন নিজের বসত গড়েছেন।আর বাবা দেশে থাকেন।উনার গার্লফ্রেন্ড দুইদিক ম্যানেজ করে চলেন।”
ঈশান ভীষণ অবাক হলো।তিয়াশের গার্লফ্রেন্ড আছে তাহলে ঈশার সম্পর্কে সে এত ব্যাকুল কেন?অবশ্য ঘরে স্ত্রী থেকেও তো পরনারীতে আসক্ত হয় আর তিয়াশের কেস তো গার্লফ্রেন্ড নিয়ে আজ বাদে কাল ছেড়ে দিলে মেয়েটার কিচ্ছু করার থাকবে না।নড়ে চড়ে উঠলো ঈশান ঈশাকে হারানোর ভয়টা বেড়ে গেলো শতগুন।
” ঠিক আছে সেদিন আমি ফিরবো ওদের একান্ত সাক্ষাৎ করাচ্ছি আমি।”
৫৮.
তিয়াশের সাথে ঈশার দেখা হয়নি বেশ কয়েকদিন হলো।সেদিন হঠাৎ তিয়াশ আবদার করে বসলো ঈশার সাথে দেখা করবে।ঈশাও আর দ্বিমত পোষণ করতে পারলো না ভার্সিটির দুটো ক্লাস মিস দিয়ে দেখা করতে এলো তিয়াশের সাথে।অনুকে রেখে এলো ক্লাসে।ঈশাকে অনেকদিন পর দেখে হাস্যজ্বল হয়ে উঠলো ছেলেটার মুখ।ভার্সিটির কাছে ক্যাফেতে এলো দুজন একসাথে।
” তোমায় অনেকদিন পর দেখলাম ঈশা অনেক প্রিটি হয়ে গেছো।”
লাজুক হাসলো সে।তিয়াশকে খুশি করতে মুচকি হেসে বলে,
” আপনিও বেশ হয়েছেন।”
” সত্যি বলছো?”
শব্দ করে হাসলো ঈশা।তিয়াশ দুইটা ক্যাপাচিনো অর্ডার করলো।তিয়াশের চোখে আচমকা দেখা গেলো লাজুকতার ছাপ।
” আমি মাকে তোমার কথা বলেছি।মা ভীষণ খুশি হয়েছে।”
” তাই?”
” হুম।একদিন তোমায় নিয়ে যেতে বলেছে যাবে ঈশা?”
ঈশা দ্বিধায় পড়লো একটা ছেলের সাথে তার বাসায় যাওয়াটা ভালো ঠেকলো না তার কাছে।ঈশার দ্বিধা দেখে তিয়াশ বলে,
” অনুকেও নিয়ে যাবে প্রয়োজনে রুদবাকে নিয়ে যাবো তুমি কি সন্দিহান ঈশা?”
” একদমি নয় আমি যাব।ওদের সবাইকে নিয়ে যাব।”
তিয়াশ মিষ্টি হাসলো।টুকটাক কথার ফাঁকে ক্যাপাচিনো নিয়ে আসে ওয়েটার।
ভর দুপুর সময়টাতে সূর্য তার প্রখরতা দেখাতে কার্পন্য করেনি।প্রচন্ড গরমে বাইরে চৌচির অবস্থা।একই চৌচিরতা দেখা গেলো ঈশানের মুখচ্ছবিতে।ছেলেটা কঠিন মুখ নিয়ে কাঁচের দরজা ঠেলে ঢুকলো ক্যাফেতে।তার পিছু পিছু প্রবেশ করলো রাসেল তার মুখটাও কঠিন হয়ে আছে।দুজনে অফিস থেকে ফিরেছে বোঝাই যাচ্ছে।ক্যাফেতে প্রবেশ করতে মাঝখানের একটি সিটে দেখা গেলো ঈশাকে তার মুখোমুখি তিয়াশ।রাসেল ঈশান দুজন গিয়ে বসলো তার পাশের টেবিলে।দুজনের মুখে গম্ভীরতা এঁটে আছে।তিয়াশ কিংবা ঈশা কেউ খেয়াল করেনি তাদের।রাসেল কেমন হাঁশফাঁশ করছে তাকে দেখে বোঝাই যাচ্ছে তার মাঝে বড্ড জেদ কাজ করছে।
” ঈশান, ঈশার সাহস হলো কি করে তিয়াশের সাথে একা দেখা করার।”
” সাহস থাকা ভালো।ভীতুদের আমি পছন্দ করি না।”
” যদি আমার অনু হতো তাহলে আজ যে কি হতো।তুই সত্যি করে বল ঈশান ঈশার কী সত্যি তোর প্রতি ফিলিংস আছে?যদি না থাকে তবে সে যা ইচ্ছা করুক আমরা বাড়াবাড়ি করার কেউ না।”
” মাঠে যখন নেমেছি গোল দেওয়া ছাড়া মাঠ থেকে ফেরার খেলোয়াড় আমি নই।ঈশার মনে ফিলিংস সে তো সামান্য ব্যপার।ঈশা আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে।”
” তাহলে তুই সহ্য করছিস কি করে তিয়াশের পাশে ওঁকে দেখে?”
” কে সহ্য করছে?আমি যাকে ভালোবাসবো আমি ব্যতীত তার আশেপাশে কোন পুরুষকে সহ্য করবো না।যেখানে তুই ফ্রেন্ড হওয়া সত্ত্বেও তোকে রেহাই দি না সেখানে নিজের মনের মানুষকে কি করে রেহাই দিবো?এসব ব্যপারে আমি বড্ড কৃপন।”
রাসেল দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো দ্রুত পাশে উঠে গেলো এবং বসলো তিয়াশের পাশের চেয়ারে।তিয়াশ রাসেলের চোখে চোখ রাখতে দাঁত কিড়মিড় করে তাকালো সে।ঈশান বসলো ঈশার পাশে।ঈশা সবে ক্যাপাচিনো মুখে তুলেছে ঈশানকে দেখে বিষম খেলো সে।ঠোঁটের কোণে লেগে গেলো খানিকটা ক্যাপাচিনো।ঈশান কিঞ্চিৎ হেসে বৃদ্ধা আঙুলের সাহায্যে ধীরে ধীরে ঈশার ঠোঁট মুছে দিলো।
” জান ধীরে ধীরে খাও।”
” হু!”
” ভয় পায় না জান।আমি খাইয়ে দি?”
তিয়াশ অবাক হলো।তিয়াশ কিছু বলার আগে রাসেল বলে,
” আপনার সাথে আমার কথা আছে ভাই, একটু সাইডে আসুন।”
তিয়াশ উঠতে চাইলো না।তবুও রাসেল তার হাত টেনে সরিয়ে আনলো।ঈশান ঈশার বাহু টেনে কাছে আনলো।
” মুখটা এমন করেছো কেন জান?ক্যাপাচিনোটা স্বাদ হয়নি?স্বাদ বাড়াতে আমি আমার থুথু মিশিয়ে দেবো?”
ঈশানকে এখানে দেখতে পাবে মোটেও আশা করেনি ঈশা।রাসেল তিয়াশকে নিয়ে কোথায় গেল?বড্ড ভাবনায় পড়লো সে।ঈশানের কথার ভিঙ্গিমাও ভিন্ন কি চলছে এই ছেলের মনে?
“আপনি এখানে কি করছেন ঈশান?”
” তোমাদের একান্ত সাক্ষাৎকারের জোয়ারে ভাটা ফেলতে এসেছি জান।”
” মানে?”
” বুঝতে পারছো না জান?তিয়াশের সাথে তোমার কী সম্পর্ক?”
” তিয়াশের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই ঈশান। আমরা জাস্ট ফ্রেন্ড বিশ্বাস করুন আমায় বেশি না একটুখানি বিশ্বাস।”
” অয়ন আমার ভাইয়ের মতো যেহেতু আমার কোন আপন ভাই নেই তাই আমার সব কাজিন আমার ভাই।তারাও আমাকে বোন মানে আপনি শুধু শুধু সন্দেহ করছেন ঈশান।..এই ডায়ালগ গুলো তোমার ছিল মনে পড়ে?অয়ন তোমার ভাই তাহলে ভাই কি করে এমন করলো আর এবার তিয়াশ জাস্ট ফ্রেন্ড,তিয়াশ আমার বড় হয় সে রুমার সমবয়সী তাহলে তোমার থেকে দ্বিগুণ বেশি বয়সের মানুষের সাথে কিসের বন্ধুত্ব?”
” বন্ধুত্ব বয়স দেখে হয়?মন থেকে হয় ঈশান।”
” তো এই মন দেওয়া নেওয়া যে একদিন অন্যদিকে মোড় নেবে এসব কি আমি বুঝিনা?তিয়াশ বেশি বাড় বেড়েছে।”
” তখন থেকে তর্ক করে যাচ্ছেন তিয়াশ আমাকে কখনো সেচ্ছায় ছুঁয়ে দেখেননি আর অয়ন ভাইয়ের চাহনি ছোঁয়া সবটা নোংরা ছিল।”
ঈশান চুপ করে রইলো চোখে চোখ রাখলো ঈশার।বাম হাতটা বাড়িয়ে ধরলো ঈশার ডান গাল।নরম স্বরে ঈশাকে বলে,
” অয়ন ভালো ছিল না সেটা তুমি স্বীকার করলে।তাহলে অয়নের সাথে আমি যা করেছি সেটা নিয়ে আমার সাথে এতটা মন কষাকষি কেন?তুমি আমায় কতটা ভোগালে জানো?”
” কেন করছি জানেন?আমি আপনাকে ভয় পাই ঈশান এই যে আজ ওর সাথে কাল তার সাথে এভাবে আমি যার সাথে সখ্যতা গড়বো তাকেই আপনি গুম করবেন আর না হয় ক্ষতি।দোষ তো আমি করছি তাহলে আমাকে শাস্তি দিন।”
” যেদিন তোমার ভুল দেখবো সেদিন তোমারো নিস্তার নেই ঈশা।”
–
আলাদা কথা বলার উদ্দেশ্যে তিয়াশের মুখোমুখি রাসেল।তিয়াশ বড্ড অবাক হলো আজ ঈশানের ব্যবহারে ঈশা ঈশানের মাঝে কি চলছে তা যে জানা ছাড়া স্বস্তি নেই।
” ভালো আছেন মিস্টার তিয়াশ?”
” ভালো ছিলাম তবে আপনাদের কার্যকলাপে এখন কিছুটা বিচলিত আছি।”
“তাহলে সরাসরি আসল কথায় আসা যাক।”
” অবশ্যই।”
” আপনার ঈশার সম্পর্কটা কেমন মানে আমি মিন করছি আপনি কী ঈশাকে পছন্দ করেন?”
” হ্যা অবশ্যই পছন্দ করি।তবে আপনারা যা মিন করতে চাইছেন তেমনটা না আমি ঈশাকে ফ্রেন্ডের চোখে দেখি আমরা ফ্রেন্ডলি ব্যস এইটুকুই।”
” শুনে খুশি হলাম।”
রাসেলের কথায় ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো তিয়াশ কিছুটা রসিয়ে বলে,
” আরেকটা কথা শুনলে খুশি হবেন চার বছর ধরে আমার একটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে আর আমরা খুব শীঘ্রই বিয়ে করতে চলেছি।”
চোখ মুখ ঝলকে উঠলো রাসেলের এই কথা শুনে সে ভীষণ খুশি নিশ্চয়ই ঈশান শুনলেও খুশি হবে।
” তবে মেয়েটা ব্রোকেন ফ্যামিলির আমার মা কিছুতেই এই সম্পর্ক মেনে নেবে না তাই আমি ঈশার সাহায্য চাইতে এসেছি আজ।”
” শুধু ঈশা না আমরাও আপনাকে সাহায্য করবো যে করে হোক আপনার সম্পর্কের পূর্ণতা দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। শুধু আপনি ঈশার থেকে একটু দূরে থাকবেন।”
শব্দ করে হেসে ফেললো তিয়াশ।চেয়ারে গা এলিয়ে বলে,
” জেলাস?”
” উহ আমি নই যার জেলাস করার কথা সে।”
” ওদের সম্পর্ক কত দিনের?রুমার বাড়িতে যতগুলো পার্টি ছিল একটাতেও ওদের একসাথে দেখলাম না বরং মনে হয়েছে একে অপরের চক্ষু শূল।সেদিন রেস্টুরেন্টে দেখলাম ঈশান চলে যাওয়ায় ঈশাও গেল ঠিক তখনি আমার খটকা লেগেছিল।”
“খুব শীঘ্রই ওরা এক হবে।”
.
” তোমার প্রত্যাখ্যান মেনে নিতে পারবো না আমি কোন দিক দিয়ে অযোগ্য বলবে?”
” যোগ্য অযোগ্যের বিষয় এটা নয়।আমি যাকে সারাজীবনের জন্য পছন্দ করবো সে অবশ্যই নরম মনের মানুষ হবে আমাকে এবং আমার পছন্দকে সম্মান করবে কেয়ার করবে।
” এতদিন আমার সাথে থেকে তোমার কি মনে হয়েছে?আমি তোমার কেয়ার করিনি?”
” আমাকে আপনি সবার মাঝে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন আর এই গুরুত্ব আপনার কাছে কেয়ারিং লাগতে পারে তবে আপনার এই কেয়ারিং এর যে সাইড এফেক্ট আছে সেটা আমি আজ বুঝতে পারছি।”
” তুমি বেশি বুঝো ঈশা তোমার সাথে আমার এই সম্পর্কে কোন কথা নেই যা হবে তোমার পরিবারের সাথে।”
৫৯.
রৌদ্রময় শহরটায় আচমকা মেঘের দেখা মিলেছে এই বুঝি আকাশের কোল বেয়ে বর্ষণ নামবে সিক্ত হবে তপ্ত ধরণি।বৃষ্টি আসবে বলে রান্না ঘরের দিকে ছুটলেন মাহমুদা ছেলে এসেছে গতকাল কতদিন পর ছেলেকে কাছে পেলেন এই নিয়ে তার আনন্দের শেষ নেই।রাসেল হঠাৎ আবদার করলো বেগুনি আর আলুরচপ খাবে তাই তিনি দেরি করলেন না।দ্রুত হাতে আলুর চপ আর বেগুনি তৈরি করতে লেগে গেলেন।ঈশান আর রাসেল তখন কিচেন রুমে ছিলো দুইটা চেয়ার টেনে বসেছে তারা।মাহমুদা গরম গরম বেগুনি ভেজে ঝুড়িতে তুলতে দুই ছেলে গবগবে সবটা সাবাড় করছে।এতদিন ঈশানদের রান্নার কাজ করতেন একজন অর্ধ বয়সী মহিলা যার নাম নূরা।মাহমুদা আসার পর থেকে টুকটাক কাজে সাহায্য করতে হয় তাকে এই ছাড়া বাকি কাজ মাহমুদা নিজের হাতে করেন।নূরা মন দিয়ে টিভি দেখছিলেন মাহমুদা গলা ছেড়ে ডাকলেন তাকে,
” নূরা আপা এদিকে আসেন।”
আদেশ পেয়ে চটজলদি এগিয়ে গেলো কিচেনে।মাহমুদার মুখোমুখি হতে স্মিত হাসলেন।
” এই চপগুলো নিয়ে যান।টিভি দেখুন আর খান।”
” দুই মানিক রতনকে আগে দেন আপা ওনারা তো ভাজাপোড়া খায় না তেমন আজ দেখে অবাক না হয়ে পারলাম না।”
নূরার কথা শুনে এক গাল হাসে রাসেল।হাতের চপ দেখিয়ে বলে,
” আন্টি আবার কখন দেশে আসবেন তার ঠিক নেই।তাই যতটুকু পারা যায় খেয়ে নিতে হবে।”
ঈশান হাত ইশারায় ডাকলো নূরাকে এবং মিহি স্বরে বলে ।
” আন্টি দারোয়ান আঙ্কেল আর কাশেম চাচাকে দিয়ে আসতে ভুলবেন না।আমার মায়ের হাতের স্পেশাল কেউ মিস করবেন না কিন্তু।”
সন্ধ্যার চায়ের আড্ডা শেষে টিভি দেখতে বসলো সবাই।ঈশান ঈশার ব্যপারে তার মাকে জানাতে চায় কিন্তু কোথা থেকে শুরু করবে বুঝতে পারছে না।রাসেল পাশ থেকে তাকে অভয় দিয়ে যাচ্ছে।
” আম্মু একটা কথা ছিল।”
” বল।”
” তুমি বিয়ের কথা বলছিলে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তুমি দেশে থাকতে থাকতে…।”
” চট্রগ্রাম গিয়ে কি তোমার মাথার জট খুলেছে?”
” না অনেক আগে খুলেছে তবে তোমায় এখন বলছি।”
” মেয়ে কি পছন্দ করা আছে নাকি আমায় খুঁজতে হবে?”
” আমার পছন্দ করা আছে আম্মু।”
মাহমুদা অবাক হলেন ঘুরে বসে চোখে চোখ রাখলেন ঈশানের।অবাক হয়ে বলেন,
” সে কে?”
” ঈশা।”
” অসম্ভব!”
#চলবে___
#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ২৬ খ]
____________________
ধীরে ধীরে বৃষ্টির গতিক বাড়লো চারদিকে উজাড় করে নামলো বর্ষন।ঘর জুড়ে পিনপিনে নিরবতা।এক বুক আশা নিয়ে ঈশান তাকিয়ে আছে মাহমুদার দিকে।রাসেল দুজনের কান্ড দেখছে কী চলছে এখন মাহমুদার মনে?কিছুক্ষণ আগের কথা মাহমুদা যেন বেমালুম ভুলে বসে আছে তিনি বেশ মনোযোগ দিয়ে টিভি দেখছেন।তার এই বেখেয়ালি হাভ ভাব মোটেও পছন্দ হলো না ঈশানের।
” আম্মু অসম্ভব কেন?তা বললে না তো।”
” এসব বিষয়ে আমার এখন কথা বলতে ভালো লাগছে না ঈশান।রাসেলের জন্য যখন আমি ঈশাকে পছন্দ করলাম তখন বললে আমার রুচির ঘাটতি এই সেই আর এখন এই মেয়েকে তুমি বিয়ে করবে?হাস্যকর লাগলো।”
ঈশান ঢোক গিললো ঈশাকে ভীষণ পছন্দ করেন মাহমুদা।বিয়েতে তিনি রাজি হবেন নিশ্চয়ই তবে এই নিয়ে অনেকটা কষরত করতে হবে তাকে এই যা।
” আমি যখন বলেছিলাম কথাটা তখন আমার ঈশার সাথে ঝামেলা চলছিলো শুধু তার সাথে নয় তার পরিবারের সাথেও।”
” মানে?কি হয়েছিলো?
ঈশান শুরু থেকে সবটা খুলে বললো।ঈশানের কথা যত শুনছিলেন ততই অবাক হচ্ছেন মাহমুদা।যদিও ঈশান অয়নের বিষয়টা এবং ঈশার সাথে বদলা নেওয়ার বিষয়টা এড়িয়ে যায়।রাসেলের চোখে চোখ রাখতে দেখতে পায় রাসেলের হাস্যকর মুখ।ছেলেটা হাসছে কেন?নিশ্চয়ই বাঘ বিড়াল হয়ে সবটা স্বীকার করার জন্য।
” কিরে রাসেল তুই আমাকে এসব কথা কখনো বলেছিস?আমার ছেলেটা এসব করে বেড়ায়।”
” তাই তো হাসছি আন্টি আসামী সব নিজের মুখে স্বীকার করছে ভাবতে পারছেন সে কতটা অসহায়?”
” হুম আমাদের রুচির দুর্ভিক্ষের ছিল তাই আমরা ঈশাকে পছন্দ করেছি। হঠাৎ এনার রুচির দুর্ভিক্ষ হলো কেন?”
রাসেল আর মাহমুদা যে তার অসহায়ত্বের সুযোগ নিচ্ছে তা বেশ ভালো ভাবে বুঝতে পারছে ঈশান।ভেতরটা ঝড় বইলেও সম্মুখে সে নিরব।
” জেদের কারণে বলেছি তুমি কি বুঝতে পারছো না আম্মু?”
” হ্যাঁ পারছি।তবে ঈশার মতো মেয়ে তুমি ডিজার্ভ করো না।”
চমকালো ভড়কালো ঈশান।হতবাক সে চাহনি।ঈশান কোন দিক থেকে অযোগ্য?
” এ কথা তুমি কেন বললে আম্মু?”
” নিজের উগ্র আচরণ আগে বশে আনো এই মেজাজে তোমার সংসার চলবে না।তুমি আমার ছেলে আমি তোমাকে ভালোভাবে চিনি ঈশান।”
মাহমুদার কথায় ফিঁক করে ফেললো রাসেল।তার হাসিতে গা জ্বলে উঠলো ঈশানের।ঈশানের কড়া দৃষ্টি উপেক্ষা করলো সে।
” আন্টি বিয়ে করিয়ে দেন দুইটাই এক ধাঁচের।বিয়ে পর দেখবেন আপনার ছেলে সোজা হয়ে গেছে।”
রাসেলের কথায় মাহমুদা হাসলেন।বাইরে থেকে চুপচাপ থাকলেও মনে মনে তিনি ভীষণ খুশি।তবে ঈশানের বাবার কথা মাথায় আসতে চমকে যান মাহমুদা মুহূর্তে চোখে মুখে নেমে আসে হতাশার ছাপ।
” তোমার বাবা শুনলে…”
” খবরদার এই বিয়ের কথা বাবা যেন না জানে।”
” এ কি করে হয়?তোমার জন্মদাতা পিতা সে।”
“পিতা হয়েও আমাকে বুঝলেন না।আগে বিয়ে হবে তারপর যা হবার হবে।”
” ঈশার বাবা নিশ্চয়ই তোমার বাবার সাথে আলোচনা করতে চাইবে তখন?”
” আমি ম্যানেজ করে নেবো কোন চিন্তা নাই।”
” বিয়ের পর যদি ঈশা সব জানতে পারে?ঈশা কোনদিন সুখি হবে না মনের কাটা তার থেকে যাবে।”
” কী জানবে ঈশা? হ্যাঁ কী জানবে?এসব কথা আমার সামনে তুলবে না খবরদার বলছি মা।যা আমি করিনি তা নিয়ে অপবাদ দেওয়া এবার বন্ধ করো।আমি আমার সুখ খুঁজে পেয়েছি এই সুখের যে দেয়াল তুলবে তাকে আমি ছিন্নভিন্ন করে ছাড়বো।”
ঈশান রেগে গেলো।বাজখাঁই গলায় কথাটা শেষ করে দ্রুত নিজের রুমের দিকে হাটা ধরলো।এসব কথা তার শুনতে ভালোলাগে না একটু না।পরবর্তী জীবনটা সে সুখের চায় শুধু ঈশাকে নিয়ে সুখে থাকতে চায় ব্যস।যদি এই সুখের বাঁধা হয়ে কেউ আসে তবে অতিত বর্তমান ভবিষ্যৎ সবটা ভুলে যাবে ঈশান।
ছেলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলেন মাহমুদা।হতাশার শ্বাস বেরিয়ে এলো তার বুক থেকে।রাসেলকে উদ্দেশ্য করে সন্দিহান স্বরে বলে,
” ঈশা কি ওর ভালোবাসা নাকি জেদ?”
” ভালোবাসা।”
৬০.
ক্লাসের বাইরে অনেকদিন পর সব বন্ধুরা এক হয়েছে।মীরা, দিহান, ঈশা, অনু আজ একসাথে কিছুটা সময় কাটানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তাই তারা সবাই মিলে তাদের পছন্দের রেস্টুরেন্টে পিৎজা খেতে আসে।পিৎজার সাথে টুকটাক কিছু খাবার অর্ডার করে পুনরায় আড্ডায় মশগুল হয়।মীরা আর দিহানের সম্পর্কের বেশ উন্নতি হয়েছে তাদের সম্পর্কটা, আর সেই উপলক্ষ্যে আজকের ট্রিট দিচ্ছে দিহান ।
দুপুরের পরে হওয়ায় রেস্টুরেন্টে ভীড় কিছুটা কম যখন বিকেল গড়িয়ে আসবে তখন নিশ্চয়ই ভীড় হবে।নিরিবিলি পরিবেশে হঠাৎ স্টাফদের কানাঘুষা চলতে শুরু করে।নিরিবিলি পরিবেশটা আচমকা যেন ব্যস্ত হয়ে উঠে।দলের মাঝে একজন বলে, “তোমরা টেবিলটা আবার চেক করো ঈশান স্যার কোন ভুল পছন্দ করেন না।” ঈশান স্যার নামটা শুনতে খটকা লাগলো ঈশার অবশ্য এই দুনিয়াতে ঈশান বলে কি একটাই মানুষ আছে?নিজের ভাবনার প্রতি হাসি পেলো ঈশার।বন্ধুদের মাঝে যখন আড্ডা চলছিলো তার মাঝে মীরার চোখ পড়ে দরজায়।গোলাপি ন্যুড ব্লেজার গায়ে ছেলেটা যে ঈশান চিনতে একটুও ভুল হয়নি তার।পাশে ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরাহিত একটি মেয়ে।যার হাই হিলের ঠকঠক শব্দে সবার নজর কাড়তে বাধ্য।মেয়েটার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে হাস্যজ্বল রাসেল।তাদের মাঝে মেয়েটা কে তা জানার প্রবল আগ্রহ দেখা দিলো মীরার মাঝে।সে ঈশার হাত ধরে ফিসফিস শব্দে বলে,
” এই দেখো ওরা ঈশান আর রাসেল না?”
ঈশা চমকে ঘুরে তাকালো ঈশানের পাশে মেয়েটিকে দেখে তার আনন্দেরা পাখা মেলে দূর আকাশে উড়ে গেলো।
.
ঈশানের বেশ অনেকটা বছরের পথ চলা নন্দিতার সঙ্গে।নন্দিতার গ্রুপ আর তার গ্রুপের মাঝে বেশ সখ্যতা।নন্দিতার জন্মস্থান মালেশিয়ার কুয়ালালামপুরে।নন্দিতার বাবার যখন বয়সের ভারে উঠে দাঁড়াতে হিমশিম খান তখন এত বড় ব্যবসার দায়িত্ব দেন বড় মেয়ে নন্দিতাকে।মেয়েটাও বাবার ভরসার মান রেখেছে এতটা বছর একা হাতে সামলে গেছে সবটা।প্রতিবছর একবার বাংলাদেশে আসে সে।এই মেয়েটার প্রতি ঈশানের রয়েছে বেশ শ্রদ্ধাবোধ এবং সম্মান।এই রেস্টুরেন্ট’টা বেশ পছন্দ ঈশানের মাঝে মাঝে এখানে আসা হয় আর প্রতিটা স্টাফ ঈশানকে ভালোভাবেই চেনে।মেন্যু কার্ড হাতে তুলে নন্দিতার দিকে বাড়িয়ে দিলো ঈশান।স্লিম ফিগারের মেয়েটি বয়সে ঈশানের বড় অথচ কে মানবে এই কথা?তার হাসিতে যেন বলে দেয় একজন অষ্টাদশী নারী সে।
” এখানকার কোন খাবার টা ভালো পছন্দ করে তুমি অর্ডার দাও ঈশান।”
” ভেবেছিলাম তোমায় বাঙালি রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাবো কিন্তু আম্মু শুনে বারণ করলো।আম্মু চায় নিজ হাতে রান্না করে তোমায় খাওয়াবে।”
” আন্টির সাথে কথা বলে আমার ভীষণ ভালো লেগেছে ঈশান।উনি খুব মিষ্টি ভাষী,এবং চমৎকার ব্যক্তি।তাই আন্টির ইনভাইট না রেখে পারলাম না।”
ঈশান স্মিত হাসলো টুকটাক খাবার অর্ডার করে বিজনেস সম্পর্কে আলোচনা করছিলো তাদের সাথে টুকটাক কথা বলছিলো রাসেল।হঠাৎ ফোন বেজে উঠতে অনুর নাম্বার দেখে দ্রুত কেটে দিলো।রাসেল ফোন কাটতে দ্রুত মেসেজ পাঠায় অনু।সেখানে লেখা ছিল “পাশে তাকাও।” রাসেল তৎক্ষণাৎ পাশে তাকালো অনু আর ঈশাকে দেখে বেশ অবাক হলো।কথার মাঝে ঈশানকে হাত ইশারায় পেছনে তাকাতে বলে রাসেল।ঈশান পেছনে ঈশার দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে রয় এরপর পুণরায় নন্দিতার সাথে কথায় মশগুল হয়।ঈশানের এড়িয়ে যাওয়ার ভাবটা দেখে সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে রাসেল।এটা কি হওয়ার ছিলো?
অপরদিকে অনু আর ঈশা দুজনের চোখাচোখি হয় ঈশানের এড়িয়ে যাওয়াটা কি স্বাভাবিক?অর্ডার দেওয়া খাবার একে একে আসতে শুরু করেছে দিহান সবাইকে খাওয়ারে মনোযোগ দিতে বলে সবাই ঈশানের টপিক বাদ দিয়ে নিজেদের মাঝে কথা বলতে থাকে।কিন্তু স্বাভাবিক হতে পারলো না ঈশা একে একে কেটে গেলো বেশ কিছুটা সময় ঈশান একবারেও ঘুরে তাকায়নি ঈশার দিকে।বরং পাশে থাকা মেয়েটার সাথে হাসিমুখে কথা বলছে তবে এই মেয়েটা কি ঈশানের নতুন গার্লফ্রেন্ড।ভেতরটা নড়ে উঠলো ঈশার গলা ধরে এলো মুহূর্তে কিন্তু নিজের এই আবেগকে প্রশ্রয় দিলো না।সে তো এটাই চেয়েছিলো ঈশান চলে যাক ঈশান নিজের মতো থাকুক তবে আজ এত কষ্ট কেন?নিজের মনকে শক্ত করলো ঈশা মনের কোনে অসীম জেদ কাজ করলো ঈশান যদি নতুন কাউকে পেয়ে তাকে এড়িয়ে যেতে পারে তবে সে কেন পারবে না? সে নিজেও পারবে।এই জেদটাই কাজে লাগলো ঈশার পুরো সময়টায় একটি বারেও ঈশানের দিকে তাকালো না ভুলেও।
.
আজ যেন আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমেছে বৃষ্টির বড় বড় ফোটা ধুয়ে নিয়ে যাচ্ছে সবকিছু।রাস্তায় যে যেভাবে ছিলো সবাই দৌড়ে পালালো অথচ একদল সেচ্ছায় নামলো রাস্তায়।আশেপাশে সবটা নিরিবিলি দিহান মীরা দুজনে এক সাথে ভিজছে ঈশা নিজেও নেমে গেছে রাস্তায়।অনু দাঁডিয়ে রইলো এক কোনে উদ্দেশ্য মীরা আর দিহানের কিছু ছবি তুলবে।ধীরে ধীরে বৃষ্টির প্রকপ আরো বাড়লো চার জনে ভিজে টইম্বুর।চারজন বন্ধু উদ্দেশ্যহীন হাটতে শুরু করে আজ বুঝি তাদের দুঃখ নেই,থাকলেও ধুয়ে মুছে সাফ হয়েছে এই বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটায় আনন্দ ঝরছে।
বৃষ্টি দেখে উচ্ছ্বসিত নন্দিতা হঠাৎ বায়না করে বসলো সে ভিজবে কিন্তু ঈশান এই রিক্স নিতে চায় না এখানে ভেজার কোন দরকার নেই তাই ড্রাইভারকে দিয়ে নন্দিতাকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো মাহমুদার কাছে বাড়ি ফিরে যত ইচ্ছা ভিজতে পারবে।রেস্টুরেন্টের সামনে পকেটে হাত গুটিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ঈশান রাসেল তার পাশে ছিল।
” ঈশাকে ইগ্নোর করলি কেন?”
” নন্দিতার সামনে কোন সিক্রিয়েট চাইনি তাই।”
” বাড়ি ফিরলি না যে?এখন গাড়ি পাবো কোথায় এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি মাছি তাড়া করবি?”
” চল ভিজি।”
” কি!মনে কি রঙ লেগেছে?”
” হুম ঈশা লাগিয়ে দিয়েছে।”
” মজা করিস না ঈশান।”
” আমি মজা করছি না।চল ঈশাকে খুঁজতে হবে আশা করি বেশি দূর যায়নি।”
বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হাটা ধরলো ঈশান।তার পিছু পিছু চললো রাসেল।কিছুক্ষণ বাদে সন্ধ্যা নামবে কিন্তু এখনি মনে হচ্ছে সন্ধ্যা হয়ে গেছে মেঘের কারণে কী না।
দিহান মীরাকে বাসায় পৌঁছে দেবে বলে আগে বিদায় জানিয়েছে।অনু আর ঈশা একলা একা হাটছে রাস্তায় অনেক্ষণ যাবৎ রিক্সার সন্ধান করেও খালি রিক্সা পায়নি।আর যে দু’একটা পেয়েছে সেগুলো তিনগুন দাম চেয়ে বসলো।বিরক্ত হয়ে হাটা ধরলো ঈশা।বৃষ্টি এখনো থামেনি মাগরিবের আযান শেষ হয়েছে নিশ্চয়ই এখন গাঢ় অন্ধকার নামবে কিন্তু ভয় নেই ঈশার মনে নিজেকে আজ মুক্ত পাখি লাগছে।
হাটতে হাটতে অনেকটা পথ পেরিয়ে এলো ঈশা, সে একাই বকবক করছে অনুর কোন সাড়া নেই সন্দিহান চোখে পাশে তাকাতে থমকে গেলো সে। অনু কোথাও নেই!কিছুটা দূর একটা ছেলেকে দেখা যাচ্ছে ভিজতে ভিজতে এদিকেই আসছে।অজানা আতঙ্কে বুকের ভেতরটা ধক করে উঠলো ঈশার।আশেপাশে তাকিয়ে এলোমেলো পায়ে অনুকে খুঁজতে থাকে হঠাৎ কেউ ঈশার হাত টেনে ধরে সম্মুখে ঈশানকে দেখতে পেয়ে কিছুটা বিচলিত হয়।
” ভয় পাচ্ছো কেন ঈশা?”
” অনু কোথায়?নিশ্চয়ই আপনি সরিয়ে দিয়েছেন।”
” রাসেলের সাথে ওই যে ওই দোকানটায় গেছে ওরা আসবে তুমি চলো।”
” চলো মানে কি হ্যাঁ?আমি আপনার সাথে যাব না।”
“তাহলে কার সাথে যাবে?”
ঈশা অনুর অপেক্ষা করলো না দ্রুত পায়ে হাটতে শুরু করলো সামনে।ঈশান ছুটলো তার পিছু পিছু।
” আমার পাশে একদম হাটবেন না।”
” যার পাশে হাটলে মানায় তার পাশেই হাটছি।”
কিছু ভেবে গায়ের ব্লেজার খুলে ঈশার গায়ে পরিয়ে দিলো ঈশান সঙ্গে সঙ্গে তা ছাড়িয়ে নিলো ঈশা।
” আদিখ্যেতা দেখাবেন না সহ্য লাগে আমার।”
” আমি এখন যা বলবো তা সহ্য করতে পারবে?”
” মানে?”
” প্রতিটি ভাজে ভাজে সদ্য ফোটা ফুল….”
ঈশানের কথা শেষ হওয়ার আগে তার হাত থেকে ব্লেজার ছিনিয়ে নিলো ঈশা।ঈশার কান্ড দেখে ঠোঁট কুচকে হাসলো ঈশান।আগা গোড়া ঈশানকে একবার দেখে বিড়বিড় করে বলে, ” অসভ্য ছেলে।”
” সভ্য হয়ে লাভ কী হলো?তাই অসভ্য হতে বাধ্য হলাম।”
” আমার কাছে কেন এসেছেন?বলেছিনা দূরে দূরে থাকবেন।”
” কাছে আসার ব্যবস্থা করছি আর তুমি দূরে সরিয়ে দিচ্ছো।”
ধীরে ধীরে বৃষ্টি কমলো তবে বিদ্যুৎ চমকানো বাড়লো।আকাশের ডাক বাড়ছে ধীরে ধীরে।ঈশার সাথে সাথে এবার ভয় বাড়লো ঈশানের যত দ্রুত সম্ভব ঈশাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে হবে।অনু রাসেলের দেখা নেই এই পাগল গাড়ি নিয়ে কোথায় গেছে কে জানে।ঈশা বেসামাল পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে যে করে হোক তাকে বাসায় ফিরতে হবে।ঈশার কান্ড দেখে ঈশান বলে,
” সাবধান পড়ে যাবে।”
ঈশা ঈশানের কথা শুনলো না নিজের বেপরোয়া স্বভাবটা প্রশ্রয় দিতে গিয়ে বাধলো বিপত্তি রাস্তায় থাকা ইটের সঙ্গে হুমড়ি খেয়ে পড়লো রাস্তায়।
” বলেছিনা সাবধানে চলবে সব কাজে জেদ।”
ঈশানের ধমকে চুপসে গেলো ঈশা ডান পায়ের বৃদ্ধা আঙুলের যন্ত্রণায় চাপা আর্তনাদ করলো।আবছা আলোতে চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারলো নখ উলটে গেছে বেগতিক রক্ত ঝরছে।ঈশার ব্যগে রুমাল ছিলো দ্রুত রুমাল দিয়ে পা বাধলো তার।পুনরায় আকাশ ঝাপিয়ে বৃষ্টি নেমেছে ঈশান দ্রুত হাতে পাজাকোলে তুলে নিলো ঈশাকে।ঈশানের কান্ডে চমকে গেলো ঈশা।
” আরে ছাড়ুন আমি হাটতে পারবো।”
” পারবে না।”
” নামিয়ে দেন সেদিন কি বলেছেন আমি কি ভুলে গেছি?আপনি বলেছেন আমায় কোলে তুলে আপনার হাতে চোট লেগেছে আর এখন…”
“চুপ করো।এত বকবক করো কেন?কি সুন্দর মুহূর্ত একটু ফিল নাও।”
” ফিল টিল নেওয়ার ইচ্ছে আমার নেই আমাকে নামান ঈশান।”
ঈশান হাটতে থাকলো সামনের দিকে।ঈশা তাকিয়ে রইলো নির্ণিমেষ। ছেলেটার চোখের পাপড়ি চুইয়ে জল ঝরছে গাল বেয়ে সে পানি এসে ঠেকছে গলায় কিছুটা ঠোটে।ঈশার চাহনি বেসামাল করলো ঈশানকে তার ধারা ভুল সংঘটিত হওয়ার আগে ঈশার মনোযোগ ভঙ্গ করলো দ্রুত।
” তুমি ইচ্ছে করে পড়েছিলে তাই না?যাতে আমি তোমায় কোলে তুলি আর রোমান্টিক মোমেন্ট ক্রিয়েট হয়।উমম তোমার মনে মনে এতটা।”
৬০.
আজ শুক্রবার ছুটির দিন।ঘুমটা একটু দেরিতে ভাঙলো ঈশার।বাবা নিশ্চয়ই বাজারে চলে গেছেন বাজার নিয়ে ফিরেছেন কি?ঘুমঘুম চোখে ঢুলতে ঢুলতে কিচেনে গেলো ঈশা।পুরোটা কিচেনে বাজারের ব্যাগে ভরতি কাজের খালাও এসেছেন দেখছি।
” আম্মু এত বাজার আনলো যে?”
” আজ আমাদের মেহমান আসবে মা যা যা দ্রুত মুখ ধুয়ে আয় অনেক কাজ আছে।”
” কে আসবে?”
” ঈশানরা।”
” কিন্তু কেন?”
” তোকে বিয়ে করতে অসভ্য মেয়ে এত কথা না বলে এখান থেকে যা।”
ঈশা চমকে গেলো মায়ের কথায় লহমায় তার ঘুম উবে গেলো।সুলতানা বিরক্ত হয়ে মেয়েকে বিয়ের কথা বলেছেন অথচ তিনি আদৌ জানলেন না ঈশানের মায়ের এই বাড়িতে আসার উদ্দেশ্যে একটাই আর সেটা হলো, বিয়ে।
#চলবে___