অবাধ্য বাঁধনে পর্ব-৩১+৩২

0
305

#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩১ক]
______________________
হাতে একটি প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে ঈশার গাল টেনে দিলো হাসিন।কয়েক সেকেন্ড প্যাকেটটা পরখ করে চোখ তুলে তাকালো হাসিনের পানে।

” এটা কী?”

” তোর জন্য একটা উপহার এনেছি।”

” কি এনেছো?”

” খুলে দেখ।”

ঈশা দ্রুত হাতে প্যাকেটটা খুলে।বেগুনি রঙের একটি জামদানি শাড়ি।নজর কাড়া সৌন্দর্য বিরাজ করছে এই শাড়িতে।শাড়ি অর্ধেকটা খুলে গায়ে জড়িয়ে নিলো ঈশা মিষ্টি হেসে হাসিনকে বলে,

” আমায় কেমন লাগছে?”

“সুন্দর।”

ঈশা হাসলো হাসিন অন্য একটি প্যাকেট এগিয়ে দিলো অনুর দিকে।মেয়েটার প্রশ্নবিদ্ধ চোখ পড়তে পারলো হাসিন চোখ ইশারায় বললো প্যাকেট খুলতে।অনু প্যাকেটটা খুলে স্তম্ভিত হয়ে রয়।ঈশাকে দেওয়া শাড়িটার মতো একই ডিজাইনের এবং রঙের শাড়ি তার হাতেরটা।

” এটা কার হাসিন ভাই?”

” তোর জন্য।তুই আমার আরেক বোন বুঝলি?”

খুশিতে যেন কেঁদে ফেলবে মেয়েটা এতটা ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য কি সে?ঈশাদের পরিবার তাকে এতটা আপন করে নিয়েছে।শ্রেয়ারা মাত্র এসে পৌঁছে গেছে।মেয়েটা আগে এসেই ঈশার রুমে প্রবেশ করলো গাল টেনে ধরলো ঈশার।

” কিরে তুই নাকি বিয়ে করবি না এখন যে নাচতে নাচতে বিয়ে করতে বসে গেলি?”

” আর লজ্জা দিও না আমায়।দুলাভাই এসেছে?”

” না সে ঈশানদের সাথে আসবে।বেচারা কি করবে বলতো দুইদিক থেকে দাওয়াত পেয়ে সে যে কী খুশি।মামিদের দাওয়াত করা হয়েছে তারা নাকি আসবে না, না এলেই ভালো।”

” এভাবে বললো না।”

” তো কিভাবে বলবো?বেশি ভালো সাজতে যাবি না ঈশা দেখবি অপ্রত্যাশিত বাশের ঝুড়ি তোর পেছনে ঘুরবে।”

” বাকিরা কই?”

“আছে আছে সেদিকটা নিয়ে তোর ভাবতে হবে না।তোকে কি সুন্দর লাগছেরে ঈশান তো আজ চোখে হারাবে তোকে।আমার ভয় হচ্ছে,আবার না বলে বসে আজকেই বিয়ে।”

শ্রেয়ার দুষ্টু মিষ্টি কথার আদলে লজ্জায় নিংড়ে যায় ঈশা।অনুও কম যায় না একেকবার একেক কথা বলে মেয়েটাকে লজ্জায় মা র ছে।ঈশাদের বাসায় কানায় কানায় পূর্ণ হলো অতিথিদের আগমনে।অনু দায়িত্ব ঈশার আশেপাশে থাকা।সুলতানার কাজে সাহায্য করছেন ঈশার ফুফু,খালামনিরা।যেহেতু রাতের অনুষ্ঠান ছিল সেহেতু ঈশানরা সন্ধ্যার পর এসে উপস্থিত হয়।ছেলের খুশিতে ঈশানের মা আজ বেজায় খুশি।লালটুকটুকে ঈশাকে দেখে কপালে চুমু খেতে ভুললেন না।সারাটা সময় তিনি ঈশাকে নিয়ে ছিলেন ঈশা কি খাবে কি করবে সে কত প্রশ্ন।মাহমুদার এতটা আদর-যত্ন দেখে মুজাহিদ হাসান নিশ্চিন্ত হলেন সারাটা জীবন যদি এই মানুষটা ঈশাকে স্বার্থহীন ভালোবেসে যায় তবে মেয়েকে দূরে রেখেও শান্তি পাবেন তিনি।
.
আত্মীয় সজনের ভিড়ের মাঝে অনুর সাথে একান্ত কথা বলা হলো না রাসেলের।মেয়েটা বার বার কেন চোখের আড়াল হয়?শুধু দিক বেদিক ছুটছে অথচ তাকে দেখার বাহানায় রাসেল একবার এই রুমে আরেকবার ওইরুমে ঘুরছে।ঈশানকে দেখার উদ্দেশ্যে বসার ঘরে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিলো অনু।হঠাৎ কানে আসে চিরপরিচিত রাসেলে কণ্ঠ।

” শাড়ি পরলে কি হতো?”

রাসেল কথাটি বলে অনুকে রেখে চলে যায় ঈশানের কাছে।অনু ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রয় সরু চোখে মনে মনে ভেংচি কেটে বলে, “বিয়ে কি আমার লাগছে?”

আংটি বদলের কাজটা এবার শেষ করা দরকার।বাড়ির সকল মুরব্বিরা মিলে টুকটাক আলাপ আলোচনা করছিলো।ঈশানকে নিয়ে রুমা ঈশার রুমে গেলো দুজনের চোখাচোখি হতে পাশ থেকে রাসেল আর অনু ওওঅঅ বলে সুর তুলে।তাদের দুজনের চিৎকার বাকিরা না বুঝলেও রুমা ভালো ভাবেই বুঝতে পারলো।ঈশানকে টেনে বসালো ঈশার মুখোমুখি একটি চেয়ারে।সবার হই হুল্লোড়ে লজ্জায় মেয়েটার চিবুক ছুঁয়েছে বুকে।আড় চোখে একবার তাকালো ঈশানের দিকে সাদা রঙের পাঞ্জাবিতে ছেলেটাকে বেশ দারুন লাগছে।ঈশার কাজিনরা এটা ওটা বলে ঈশানকে লজ্জা দিচ্ছে কিন্তু এই ছেলে যে বড্ড নিলর্জ্জ।শ্রেয়া ঈশানের কানের কাছে এসে স্বল্প স্বরে বলে,

” ঈশাকে কিছু জিজ্ঞেস করবেন বিয়েতে রাজি আছে কি না যা ইচ্ছে জিজ্ঞেস করতে পারেন।”

“ও বিয়েতে রাজি থাকুক আর থাকুক বিয়েতে আমি ওঁকেই করবো।”

ঈশানের বলা কথাটি ঈশার কানে আসতে সঙ্গে সঙ্গে চোখ বন্ধ করে সে।আশেপাশের কাজিনদের হই হই বেড়েছে অনু রাসেলের লাগামহীন কথায় ঈশাকে লজ্জা দিচ্ছে।ঈশানের এই কথাটা বলার কি দরকার ছিল?এবার সবাই তাকে প্রতিটা ধাপে এই কথা বলে রাগাবে।ছিহ ছিহ ছিহ এই মানুষটা এমন কেন।মনে মনে কথাগুলো বললো ঈশা।ঈশার ফুফু আতিয়া তাকে নিয়ে চললো বসার ঘরে অপরদিকে রুমা ঈশানকে নিয়ে গেলো।দুজনের আংটি বদল সুষ্ঠভাবে সম্পূর্ণ হলো।রাতের খাবারে কোন দিক দিয়ে কমতি রাখেননি মুজাহিদ হাসান সবার খাওয়া শেষে রুমা ঈশান এবং ঈশাকে তাদের রুমে পাঠায় একান্ত কথা বলার জন্য।রুমে ফিরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রয় ঈশা অপরদিকে ঈশান পুরো রুমটা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে।এটা তার বউয়ের রুম আগামী কয়েকমাস পর রুমটা তারো হবে।ঈশান সরু চোখে পরখ করলো ঈশাকে।মেয়েটা এত লজ্জা পাচ্ছে কেন অদ্ভুত!ঈশান কয়েক পল এগিয়ে বসলো ঈশার খাটে।

” ঈশা আমি কি নতুন?লজ্জা পাও কেন?”

” আপনার লজ্জা না থাকতে পারে আমার তো আছে।”

” লজ্জা নারীর ভূষণ আমার নয় তাই আমি নিলর্জ্জ হলেও চলবে।বুঝলে ঈশা তোমার খাটটা আমায় কেমন টানছে।”

” মানে?”

” মানে হলো এই খাটের মালিক দীর্ঘদিন একা ঘুমায় তাই আর কি…”

” ঈশান।”

ঈশার চোখ রাঙানোতে চুপ হয়ে যায় ঈশান।কিছুটা সময় স্থির দৃষ্টিতে ঈশার পানে তাকিয়ে রইলো ঈশান কিন্তু মেয়েটা একবারেও তার দিকে তাকালো না।

” আমি তোমার দিকে অপলক তাকিয়ে আছি কিন্তু তুমি একবারেও তাকাও নি কেন ঈশা?আমায় কি সুন্দর লাগছে না।”

” আমার চোখে যে সুন্দর সে সর্বদা সুন্দর।”

ঈশান এগিয়ে আসে ঈশার কাছে।মেয়েটার চিবুক তুলে তাকালো মোহময় দৃষ্টিতে।

” এবার তুমি খুশি?অবশেষে আমারা এক হবো।”

” এখনো দীর্ঘ অপেক্ষা বাকি ঈশান।এটা তো প্রথম ধাপ।”

” বাকি ধাপটাও আমরা এগিয়ে যাব
দেখবে যা হবে ভালো জন্য হবে।তুমি আমার পাশে থাকবে তো?”

” অবশ্যই।শেষ নিঃশ্বাস অবধি।”

ঈশার কথায় মিহি হাসলো ঈশান।তার আদুরে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় ঈশার কপালে।ঈশানের গাঢ় চুম্বন নিশ্চুপ অনুভব করে ঈশা।সবটা কেমন স্বপ্ন লাগছে ঘুম ভেঙ্গে গেলে কি এই সুন্দর স্বপ্নটা ভাঙ্গবে?

৭১.
একের পর এক ঈশানের এঙ্গেইজমেন্টের ছবি গুলো দেখছিলেন আবিদ।মনে মনে তিনি বেজায় অসন্তুষ্ট এমন একটা পরিবারের সাথে কিছুতেই আত্মীয়তা করতে চান না তিনি কিন্তু এই ছেলে তার সব জল্পনা কল্পনা ভেস্তে দিয়েছে নিজের যা ইচ্ছে করুক ঈশানের ব্যপারে আর কিচ্ছু জানেন না তিনি।মাহমুদা কলে আছে বিধায় শান্তিতে বকাঝকা ও করতে পারলেন না।

” কেমন দেখলে বউ মা?”

” দেখলাম।”

” আহ কি বলছি বুঝতে পারছো না?ঈশাকে কেমন লাগছে তোমার ছেলের পাশে মানিয়েছে না?একেরবারে রাজযোটক।”

” এ ব্যপারে আমি কিছু বলতে চাই না তোমাদের খুশিতে আমার খুশি।আমি দেশে যাব না কিছু একটা বুঝিয়ে কয়েক মাসের মধ্যে বিয়ের কাজ শেষ করো।এখানে যে সংসার ফেলে গেছো তোমার মাথায় আছে?”

” হুম দেখছি কি করা যায়।শুননা আপাকে এসব কিছু বলেছো?আমি বারণ করেছিলাম তোমায়।”

” না বলিনি সে কিছু জানে না এ সম্পর্কে।”

” নিশ্চিন্ত হলাম আমি।এখন রাখছি তুমি ভালো থেকো।”

” তুমিও।”

মাহমুদা ফোন রেখে ঈশানের দিকে তাকালেন ছেলেটা রাসেলের সাথে আজকের ছবিগুলো নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করছে।ছেলের খুশিতে মনটা ভরে উঠলো মাহমুদার।
৭২.
এদের দুই পক্ষের ঝামেলা আজকালকের নয় বরং এই ঝামেলা দেড় বছর যাবৎ।ঈশান এবং তার অপর পক্ষের দল আজ শান্তিচুক্তি কর‍তে এসেছে তাদের জায়গা জমি নিয়ে ঝামেলা আজ মেটাতে এসেছে।কিন্তু সব ঠিকঠাক থাকলেও অপরপক্ষের কয়েকজন যেন আজ এখানে মিমাংসা নয় বরং ঝামেলা বাড়াতে এসেছে।সবটা চুপচাপ হজম করছিলো ঈশান।দুই দলের গার্ডদের মাঝে এক দফা মা রা মা রি সংঘটিত হয় এই ব্যপারে ঝামেলা চায় না রাসেল তাই সবাইকে শান্ত করে পুনরায় আলোচনায় বসে।আলোচনার মাঝে আবার কথা কাটাকাটি হয় আর এবার সবচেয়ে বড় ভুলটা করে তারা।কথার মাঝে রাসেলের শার্ট টেনে ধরে একজন যেটা মোটেও পছন্দ হয়নি ঈশানের।বরং সুপ্ত রাগ মথাচড়া দিয়ে উঠেছে মুহূর্তে।ঈশান গম্ভীর স্বরে বলে,

” ঝামেলার সমাপ্তি জানাতে এসেছিলাম কিন্তু তোরা তো সূচনা করে দিয়েছিস।”

” এই ঝামেলার কখনো সমাপ্তি টানবে না।আমরা যা বলছি মেনে নাও ঈশান শাহরিয়ার।”

” কখনো না।”

ঈশান তার গার্ডদের ইশারা করে মুহূর্তে সবাই মিলে ঘিরে ধরে অপর পক্ষকে।যে ছেলেটা রাসেলের গায়ে হাত তুলে সেই ছেলেটার দিকে ঈশান এগিয়ে যেতে এক ছুটে বেড়িয়ে যায় সে।যেহেতু তারা কনস্ট্রাকশন বিল্ডিং এর নিচে ছিল সেখানে অসংখ্যা ছোট বড় রডের টুকরো পড়ে ছিল।ঈশান সেখান থেকে একটা হাতে তুলে ছুটে চলে সেই ছেলেটার পিছনে।ঈশানকে ছুটতে দেখে রাসেল সব দায়িত্ব রাজীবকে দিয়ে সে নিজেও ঈশানের পিছন পিছন ছুটে।এই ছেলের প্রচন্ড রাগ উঠেছে নির্ঘাত কোন অঘটন ঘটাবে।ঈশান ছুটতে ছুটতে সেই এলাকার বাইরে বেরিয়ে যায়।অন্য গলির দিকে বাক দিতে সামনে থাকা ছেলেটির সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুইজন মেয়ে রাস্তায় পড়ে যায়।সেদিকে ঈশান খেয়াল করলো না বরং ছেলেটিকে ধরতে পেরে পৈশাচিক হাসি দেয়।

” আমার নজরের বাইরে যাওয়া এত সহজ নয় মিস্টার।”

” আ..আমি ইচ্ছে করে করিনি ওনারা আমাকে ইশারা করেছিলো আপনার ভাইয়ের গায়ে আঘাত করতে বিশ্বাস করুন আমি….”

ঈশান হাতের রডটা নিয়ে এলোপাতাড়ি মা র তে শুরু করে।ছেলেটা পুনরায় পালাতে উদ্যত হলে ঈশান তাকে ধরে নেয়।

রাস্তায় ছিটকে পড়া সেই মেয়ে দুটি ঈশা এবং অনু।চোখের পলকে কি হলো কি হচ্ছে কোন কিছু মাথায় ঢুকছে না তাদের।রাসেল ঈশানকে যতটুকু পারা যায় বাঁধা দিচ্ছে কিন্তু এই ছেলে তো একবার যখন ক্ষেপেছে তখন তৃপ্তি নিয়ে না মে রে ছাড়বে না।অসংলগ্ন ভাবে পড়ায় ঈশার হাতের তালু পিচ ঢালা রাস্তায় পড়ে চামড়া ছিড়ে গেছে কয়েক স্থানে রক্ত দেখা যাচ্ছে।অপরদিকে অনু কনুইতে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে মেয়েটার কনুইর চামড়া ছিলে একাকার অবস্থা।

ছেলেটাকে মা রা র মাঝ পথে রাসেল ঈশানকে থামিয়ে দেয় যার ফলে আহত ছেলেটা যেভাবে পেরেছে পালিয়ে বেঁচেছে।নিজের শরীর থেকে রাসেলের হাত ছিটকে সরিয়ে দেয় ঈশান।

” ছুবি না আমায়।বেয়াদব ছেলে আমার কাজে বাধা দেওয়া তোর পেশা হয়ে উঠছে নাকি?”

” ঈশান প্লিজ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ কর।এভাবে উল্টা পাল্টা মা র লে এই ছেলে মরে যাবে তখন…”

রাসেলের কথা থেমে যায় ঈশানের চোখের দিকে তাকাতে।ছেলেটা বিস্মিত হয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।রাসেল পাশে তাকাতে ঈশা আর অনুকে দেখে চমকে যায়।ঈশান এগিয়ে আসে ঈশার কাছে।ঈশানের রক্তিম চাহনি দেখে ভয়ে দু’কদম পিছিয়ে যায় ঈশা।

” এখানে কি করছো তুমি?এই মেয়ে কথা বলছো না কেন?”

শেষোক্ত বাক্যটি ধমক সুরে বললো ঈশান।ঈশানের কান্ড দেখে ঈশার মুখে তালা লেগে গেছে।এই ঈশানকে সে চেনে না এই ঈশান তার আপন নয়।এই ঈশান সেই প্রথম দিনের ঈশান যার মাঝে ছিল অহংকার,হিংস্রতা,জেদ।রাসেল এগিয়ে এসে অনুকে ইশারা করে কি হয়েছে মেয়েটা বলার আগে ঈশান ঈশার গাল চেপে ধরে,

” কথা বলো এখানে কেন তুমি?তোমার এখানে আসার কথা না, তবে এখানে কি করছো তুমি?”

রাসেল দ্রুত ছাড়িয়ে নেয় ঈশানকে।আকস্মিক কি হচ্ছে তাদের সাথে বুঝে উঠতে হিমশিম খাচ্ছে ঈশা।ভয়ে ঢোক গিলে অনুর হাত ধরলো ঈশান মেয়েটার হাতের দিকে নজর রাখতে চোখে পড়লো ঈশার কা টা হাত।

” তোমার হাতের এই অবস্থা কেন?কি হয়েছে?কে করেছে এমন?কে করেছে বলো আমায়।”

ঈশার হাত টেনে ধরলো ঈশান।ঈশা তাকালো ঈশানের পানে ছেলেটার শরীর থেকে ঘাম ঝরছে।শরীরের সব শক্তি দিয়ে প্রহার করেছিল বোধহয় তাই তো এই অবস্থা।অজানা আতঙ্কে ঈশার ভীষণ ভয় লাগছে আবার মনের কোণে জমেছে গভীর অভিমান সেদিন ঈশান বলেছিল এসব ছাড়বে কিন্তু সে তো ছাড়েনি।
#চলবে___

#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩১খ]
_____________________
ঈশানের কর্কশ কণ্ঠে বলা প্রতিটা কথা কানে আসছে ঈশার।অদূরে দাঁড়িয়ে কানে ফোন রেখে কাউকে দেদারসে গালি ছুড়ছে ঈশান।বাংলার মাঝে ইংরেজি ঢুকিয়ে যেভাবে পারছে গালি দিয়ে মন শান্ত করছে।ঈশা চুপচাপ বসে আছে চেয়ারে হাতের অল্প একটু জায়গায় ব্যান্ডেজ করা।অনুর হাতের কনুইয়ে জামার কারনে বেশি ক্ষত হয়নি তবুও কেমন জ্বালাপোড়া করছে।মেয়েটার হাতে ওয়ানটাইম ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিলো ফার্মেসীর লোকটি।রাসেল একটি পানির বোতল এগিয়ে দিলো অনুকে।

” নাও গলা ভিজাও ঈশাকেও দিও।”

অর্ধেকটা পানি শেষ করে অনু বোতল এগিয়ে দিলো ঈশার কাছে বাকি পানিটুকু শেষ করলো ঈশা।অনুর মনটা ভীষণ খারাপ হলো এত সুখের মাঝে দুঃখ কেন আসে?এতক্ষণ তারা কত আনন্দে ছিল আর এখন!

” এই গলিতে তোমাদের কাজ কি?”

” হাত ভাঙ্গতে এসেছিলাম হাত তো ভাঙ্গেনি তাই আফসোস হচ্ছে।”

অনুর ত্যাড়া কথায় চুপসে যায় রাসেল।এই মেয়েটা তাকে জ্বালিয়ে মা র বে।ফার্মেসীর লোকটি ড্যাব ড্যাব চোখে তাকিয়ে রইলো অনুর দিকে।রাসেল বিল মিটিয়ে অন্য দোকানের দিকে গেল সঙ্গে করে দুটো আইস্ত্রিম নিয়ে ফিরলো সে।ঈশার দিকে বাড়িতে দিতে হাত ইশারায় বারণ করলো ঈশা।

” কি হলো নাও ঈশা।”

” না আমার এখন ইচ্ছে করছে না।”

” কিন্তু কেন?ভালো লাগবে নাও।”

ঈশা তবুও নিলো না তার মন মেজাজের অবস্থা ভালো নেই ঈশানের প্রতি বিরক্ত চলে এসেছে।ফোন পকেটে পুরে ফিরলো ঈশান চোখে মুখে রাগী ভাব এখনো বৃদ্ধমান।অনু হাতে আইসক্রিম নিয়ে খাওয়া শুরু করলো ঈশানকে আসতে দেখে সবার অগোচরে ঈশার হাতে ধাক্কা দিলো।ঈশা বিরক্ত হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে তাকালো অনুর দিকে।

” এদিকের কাজ শেষ?”

” হ্যা শেষ।ঈশা অনুকে সিএনজি নিয়ে দি ওরা চলে যাবে।”

রাসেলের কথায় মাথা দুলালো ঈশান।একটি চেয়ার নিয়ে ঈশান বসলো ঈশার দিকে মুখ করে।

” তোমরা এই রাস্তায় কেন?”

” এই জায়গাটা কি আপনার দখল করা?আসতে মানা?”

” সাধারণ প্রশ্নটা এভাবে ঘুরিয়ে বলছো কেন ঈশা?”

” আমার এখন কোন কথা বলতে ভালো লাগছে না বাড়ি যাব আমি।”

“রেগে আছো কেন?”

ঈশা প্রত্যুত্তর করলো না।অনু আইসক্রিম মুখে নিয়ে একবার ঈশা আরেকবার ঈশানকে পরখ করছে।অপরদিকে রাসেল সিএনজি খুঁজতে কোন গ্রহে গেছে কে জানে।ঈশান আলগোছে ঈশার হাত টেনে নিলো খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলো কতখানি আঘাত লেগেছে।

” আমি কি টর্নেডো নাকি ঈশা?নাকি কালবৈশাখী?”

ঈশানের প্রশ্নে ভ্রু কুচকে যায় ঈশার।সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকাতে হতাশার শ্বাস ছাড়লো ছেলেটা।

” প্রথম দিন রাজীবের মাধ্যমে আঘাত পেলে।এরপর সেদিন আমি ছুঁতে গেলে হুমড়ি খেয়ে পড়ে নখ উল্টে ফেললে আজ আবার হাতের চামড়ে ছিড়ে গেছে।”

“আপনাকে দেখে ঈশার হুশ থাকে না দুলাভাই।এত সুন্দর হট ড্যাশিং মন ভুলানো প্রেমিক যার থাকে তার কি আর বিশ্বভুবন মাথায় থাকে?”

অনুর প্রত্যুত্তরে কপট রাগ দেখালো ঈশা।চোখের পলকে ধুমধাম কয়েকটা কিল পিঠে পড়লো অনুর।মাগো বলে চিৎকার দিয়ে উঠে দাঁড়ালো অনু।

” আমি মিথ্যা বলেছি নাকি ঈশা?আমায় মা র লি কেন?দুলাভাই আপনি আপনার তেজিকে সামনাল আমি আমার জনকে খুঁজে আসি।”

অনু গটগট পায়ে চলে গেলো।ঈশান আর কথা বাড়ালো না একটু একটু করে হাত বুলিয়ে দিল ঈশার হাতে।ঈশার রাগ এখনো কমেনি বরং ঈশানকে দেখার পর বাড়ছে।

” কি হলো চুপ কেন তুমি?আর কোথায় ব্যথা পেয়েছো?”

” আপনি আমায় মিথ্যা বলেছেন ঈশান এখনো আপনি গুন্ডাদের মতো আচরণ করেন।”

” ছেলেটাকে মারায় তোমার জেদ হচ্ছে?মুখের আগে হাত চলা আমার ছোট বেলার অভ্যাস এত সহজে কি যাবে?ওই ছেলেটা রাসেলের গায়ে হাত দিয়েছে ভেবে দেখ কত বড় কলিজা।”

” আমার বাবার চোখে এসব পড়লে তার মনের অবস্থা কি হবে বুঝতে পারছেন?”

” তোমার বাবা আমার সম্পর্কে ভালো করে জানেন আশা করি মনে আছে আমাদের সেদিনের আলাপটা কিন্তু ভালো ছিল না।”

” তার মানে আপনি এসব ছাড়বেন না তাই তো?”

” জানি না আমি।”

” এসব ছাড়তে পারবেন না তবে আমাকে ছেড়ে দিন।”

ঈশার জবাবে কিঞ্চিৎ অবাক হলো ঈশান।কয়েক সেকেন্ডের নিজের ভাব গম্ভীরতা পালটে হাসলো শব্দ করে।সেই হাসিতে গা জ্বলে উঠলো ঈশার

” তুমি আমার সাথে পাল্লা দিয়ে পারবে?আমি কি বলেছি ভুলে গেছ?এখানে কি করছিলে সেটা বলো।”

” মীরা নাকি অসুস্থ তাকে দেখতে এলাম।”

” নিজেরা এসেছিলে নাকি দিহান পাঠালো হুম?”

” যা ভাবছেন তাই।”

” জানতাম।”

ঈশান মিহি হাসলো।তাদের কথার মাঝে এসে উপস্থিত হয় রাজীব।ছেলেটাকে দেখে আনমনে গলায় হাত চলে যায় ঈশার।এই ছেলের হাতে এন্টিকাটার ছিল বলেই ঈশার গলায় সেদিন আঘাত লাগে।এরা কতটা সাংঘাতিক।ঈশার ভাবমূর্তি বুঝতে পারলো ঈশান।রাজীব ঈশাকে দেখে একগাল হাসে।

” আসসালামু আলাইকুম ভাবী ভালো আছেন?সেদিনের ভুলের জন্য ক্ষমা চাইবার সুযোগ হয়ে উঠেনি আজ যখন পেয়েছি তখন আপনার কাছ থেকে মাফ না নিয়ে যাচ্ছি না।”

ঈশা বিব্রতবোধ করলো আড় চোখে তাকালো ঈশানের দিকে।ছেলেটা নিশ্চুপ ফোনে ধ্যান বসিয়েছে।

” আ..আমি মাফ করার কেউ না।যা হয়েছে সেটা এক্সিডেন্টলি।”

” না তার পরেও…”

রাজীবের কথা শেষ হওয়ার আগে মুখ খুললো ঈশান।

” রাজীব ওরা কোথায়?”

” ওনাদের ছেড়ে দিয়েছি এই ঝামেলা সমাধান হবে না শুধু শুধু বাড়বে তাই রাসেল ভাই যা বললো তাই করেছি।”

” গাড়ি কোথায়?”

” সামনে পার্কিং করার জায়গা আছে সেখানে রেখে এসেছি এই নিন চাবি।”

ঈশান চাবি হাতে নিলো ঈশাকে ইশারা করলো উঠতে মেয়েটার হাত ধরে ঈশান এগিয়ে গেলো রাস্তায়।রাসেল আর অনু দুজনকে একসাথে দেখে এগিয়ে গেল ঈশান।

” কিরে সিএনজি পেয়েছিস?”

” হ্যা লোকটা দোকানে গেছে পান কিনতে অপেক্ষা কর আসছে।”
৭৩.
ঈশান বাড়িতে ফিরলো রাত আটটায়।গোসল সেরে ফোন করলো ঈশাকে একবার দুইবার তিনবার দিয়েও যখন ফোনে পেলো না তখন হোয়াটসঅ্যাপে একটা মেসেজ দিলও, “কই তুমি?” ।অপরদিকে ঈশা কিচেনে ছিলো অনুর জন্য আলুরচপ ভাজতে।ঈশার ফোন আসায় অনু দ্রুত রুমে আসে ফোনে ঈশানের মেসেজ দেখে মাথায় তার শয়তানি বুদ্ধি চাপে।ফোন আনলক করে ঈশানকে মেসেজ পাঠায়।

“আমি তো আপনার মনে মাঝে আছি।আপনি কোথায় আছেন?”

ঈশার মেসেজটা দেখে ভ্রু কুচকে গেলো ঈশানের মেয়েটা কি আজ রোমান্টিক মুডে আছে?বিকালে তো একদফা কথা কাটাকাটি হলো।

” বাসায় আছি ঈশা।তোমার হাতের কি অবস্থা?”

” এটা কেমন কথা ঈশান আপনার উত্তরটা হতো, আপনি আমার মনে আছেন।একটুও ভালোবাসেন না আমায়।”

” রাগ করে না আমি তোমায় কতটা ভালোবাসি এটা বলতে হবে?আজ কি মুড ভালো তোমার?”

ঈশানের মেসেজ পড়ে মুখ চেপে হেসে ফেললো অনু।ঈশানের কি সন্দেহ হচ্ছে একটু বুঝে শুনে কথা বলতে হবে তবে।

“হুম আজকে আমার মন ভালো।শুনেন না ঈশান।”

” বলো।”

” আমাদের বিয়েটা আর দেরি করা ঠিক হবে না।যত দ্রুত সম্ভব বিয়ের দিন ক্ষণ ঠিক করুন।”

ঈশান মেসেজটা পড়ে কয়েক মিনিট চুপ থাকলো ঈশা কখনো এমন মেসেজ দেবে না।তবুও কথা চালিয়ে গেলো সে।

” আমার কাছে আসতে এত তাড়া?চলে আসো বারণ করলো কে?”

” এভাবে কি যাওয়া যায়?সম্পর্কের নাম না দিয়ে যাব না।তাই বলছি কি বিয়ের তারিখটা এবার ঠিক করা দরকার।”

” হুম বিয়ের তারিখ ঠিক হলে তো তোমার লাভ।আমি আর ঈশা বিয়ে করে ফেললে তোমার আর রাসেলের লাইন ক্লিয়ার।কানের নিচে দুইটা দিয়ে সব ভূত নামিয়ে দেবো।অনু ভালো মেয়ের মতো দ্রুত ফোন নিয়ে ঈশাকে দাও।”

ঈশান বুঝতে পারলো!হায় আল্লাহ এই ছেলের সাথে পারা দায়।ঈশানের মেসেজ পড়ে দ্রুত ফোন রেখে দিলো অনু।এই ছেলে কি করে বুঝলো দূর মজা করেও শান্তি নেই।
অনু কিছুটা সাহস নিয়ে পুনরায় মেসেজ করে,

” দুলাভাই একটা টিপস দেওয়ার ছিল।”

” কি টিপস?”

” আপনি মুভি দেখেন?”

” হুম কিন্তু কেন?”

” একশন মুভি নিশ্চয়ই?”

” হ্যাঁ।”

” এসব একশন মুভি দেখে কি হয়?সারাদিন মারপিট করা ছাড়া আর কি করেন?দেখা গেলো বিয়ের পর তর্কতর্কি লাগলে ঈশাকে একটা চেয়ার তুলে তাড়া করবেন অপরদিকে ঈশা হাতে খুনতি নিয়ে আপনাকে তাড়া করবে।তাই বলছি কি এবার থেকে রোমান্টিক মুভি দেখবেন আপনাদের প্রেম এত পানসে কেন বলুন তো?ঈশা এক পানসে আপনি আরেক পানসে।”

” এই মেয়ে তুমি কি আমার সাথে প্রেম করছো?তুমি কি করে বুঝলে আমি পানসে?”

” ইয়ে না মানে বললাম আরকি।যা বলেছি মাথায় রাখবেন কিন্তু।”

” তুমি এসব ট্রিকস গিয়ে তোমার গাধাকে খাটাও আমাকে এসব বলতে হবে না।এক্ষুনি ফোন রাখো না হলে কিন্তু খবর আছে অনু।”

অনু তরান্বিত ফোনটা ছুড়ে ফেললো।ঈশান মানে আতঙ্ক এসব আতঙ্কের সাথে যত কথা হবে ততই হার্টের সমস্যা দেখা দেবে।
.
অনুকে দু’একটা ঝারি দিলেও মনে মনে অনুর কথা গুলো নোট করলো ঈশান।আজ রাতে তার মিশন রোমান্টিক মুভি দেখা তাই তো ডিনার সেরে রাসেলের রুমের দিকে যায়।ঈশানকে দেখে শোয়া থেকে উঠে বসে রাসেল ভ্রু কুচকে বলে,

” হঠাৎ কিছু কি হয়েছে?”

” মুভি দেখবো।”

” ওকে বস অন করছি কোনটা দেখবি সিলেক্ট করে এসেছিস?”

” উমম না।রোমান্টিক মুভি দেখবো।”

বিস্ফোরিত চোখে তাকালো রাসেল।দু’কানে বার বার প্রতিধ্বনি তুলছে ঈশানের বলা কথা।অবিশ্বাস্য চোখে ঈশানের দিকে তাকিয়ে রইলো রাসেল।

” এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?”

” তোর কি হয়েছে শরীর ঠিক আছে?”

” হ্যা কেন?”

” না মানে…”

” বুঝতে পারছি তোর এমন রিয়েকশন কেন।অনু বললো আমি নাকি পানসে প্রেম করি তাই সাজেস্ট করলো রোমান্টিক মুভি দেখতে।দেখি চালাতো একটা।”

রাসেল দু’ঠোঁট কুচকে হাসে।রাসেল মুভি অন করে বসে পড়ে ঈশানের পেছনে।মুভির প্রতিটা সিন বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখছিলো ঈশান রাসেল আড় চোখে পরখ করছিলো তাকে।কিছুটা সময় পর মুভির কিছু সিন দেখে চোখ বড় হয়ে গেলো ঈশানের।কান দিয়ে তার ধোঁয়া উঠছে আড় চোখে রাসেলের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলো ছেলেটা ড্যাব ড্যাব চোখে সবটা হজম করছে।ঈশান দ্রুত রিমোট নিয়ে টিভি অফ করলো।কোলে থাকা বালিশটা ছুড়ে দিলো রাসেলের মাথায়।

” শালা ডার্টি।রোমান্টিক দিতে বলেছি আর তুই…”

” দোস্ত মুভিটার হিরো ডার্টি বাট লয়াল।”

” এক চড় দেব তোর কান ভনভন শুরু হয়ে যাবে।তুই আর অনু এক ধরনের তোদের মিল হওয়ারি ছিল।”

” আ..অনুকে টানিস না ওর দোষ নাই আমি ইচ্ছে করে এই মুভি দিয়েছি তোর রিয়েকশন দেখার আশায়।দাড়া অন্যটা চালাই।”

” আমার মুডের উপর ঠাডা পড়ছে আর কোন মুভি দেখার স্বাদ আমার নাই।”

ঈশান পপকর্নের বাটিটা রাসেলের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে চলে গেলো নিজের রুমে।অপরদিকে রাসেল বিষণ্ণ মনে তাকিয়ে রইলো টিভির দিকে।সে ভেবেছিল ঈশানটা খুশি হবে উলটো তাকে ধুয়ে দিয়ে চলে গেলো।অদ্ভুত!
#চলবে___

#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩২ক]
______________________
ঈশানের ঘ্যানঘ্যানানিতে বিরক্ত মাহমুদা।আজ সন্ধ্যার পর ঈশান অবসর আছে তাই সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঈশাকে নিয়ে বের হবে কিন্তু এত রাতে ঈশা কি করে বের হবে?তাই সে ফন্দি আটলো শেষ ভরসা মাহমুদা।মায়ের আঁচল ছাড়ছে না ঈশান যে করে মাহমুদা ঈশার বাবাকে ফোন করে রাজি করাবে আজ ঈশানের সাথে যেন বের হতে অনুমতি দেয়।ছেলের এত তোড়জোড়ের কাছে বাধ্য হলেন মাহমুদা।বুঝিয়ে বলায় ঈশার বাবা রাজিও হলেন বিয়ের আগে তাদের দুজনকে জানা শোনার দরকার আছে।অনুমতি পেয়ে ঈশাদের বাড়ি গেলো ঈশান।সুলতানা জানালেন ঈশা তার কক্ষে আছে অনুমতি নিয়ে ঈশার কক্ষে গেলো ঈশান।

গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ঈশা হাতে একটুআধটু টান পড়তে নড়ে চড়ে উঠে আড়মোড়া কাটিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ে।এভাবে কেটে গেলো কিছুটা সময়।ঈশান অপলক তাকিয়ে আছে ঈশার দিকে।এভাবে চলতে থাকলে সারাটা রাত লেগে যাবে কিন্তু ঈশার ঘুমন্ত মুখ দেখার লোভটাও সামলাতে পারছে না ঈশান।না চাইতেও আস্তেধীরে ঈশাকে ঘুম থেকে জাগ্রত করার চেষ্টা করলো ঈশান কিন্তু এই মেয়ে যে ঘুমিয়ে তো ঘুমিয়েই যাচ্ছে।না চাইতেও ঈশাকে জোরে ধাক্কা দিলো ঈশান যার ফলে পিটপিট চোখে তাকালো ঈশা।শিয়রে ঈশানকে দেখে বিড়বিড় করে বলে,

“ঘুমের মাঝেও জ্বালায় কি এক যন্ত্রণা!”

” আর কত ঘুমাবে?এবার তোমার ঘুম আমার যন্ত্রণা বাড়াচ্ছে।”

ঈশানের কণ্ঠে চোখ মেলে তাকায় ঈশা।ঈশানকে দেখে কয়েক মিনিট স্তব্ধ হয়ে আকস্মিক উঠে বসে।দ্রুত ঈশানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে অসংলগ্ন ভাবে পড়ে যায় ঈশান।

” এ..এখানে কেন এসেছেন?এখান থেকে জান আপনি আল্লাহ কেউ দেখে ফেললে কেয়ামত হয়ে যাবে।”

” কে দেখবে?এত অস্থির হচ্ছো কেন?”

” আপনি যান প্লিজ চলে যান আমি…”

” ছেলেটা সবে এলো আর এখনি যাবে তোমার কি বুদ্ধিসুদ্ধি লোপ পেয়েছে ঈশা?”

শেষোক্ত বাক্যটি কপট রাগ দেখিয়ে বললেন সুলতানা।মায়ের আগমনে কলিজায় মোচড় দিলো ঈশার।মেয়ের দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙালেন সুলতানা।

” যাও এক্ষুনি তৈরি হয়ে নাও ঈশান বাবা তোমাকে নিয়ে বের হবে।”

মায়ের আদেশে মাথা দুলালো ঈশা।সুলতানা ঈশানকে নিয়ে যায় বসার ঘরে জামাইয়ের জন্য স্পেশাল চা,কফি দুটোই করেছেন তিনি।ঈশান শ্বশুরের মন গলিয়েছে কিন্তু শ্বাশুড়ির মন গলাতে এখনো সুযোগ পায়নি তাই মিষ্টি হেসে বলে,

” দুর্দান্ত কফি এরপর থেকে যতবার আসবো আপনি কিন্তু আমায় কফি করে খাওয়াবেন আন্টি।”

” তোমার সত্যি ভালো লেগেছে?”

” মিথ্যা বলবো কেন?”

ঈশানের প্রশংসা পেয়ে সুলতানা ভীষণ খুশি আনন্দে পুলকিত তার মন।
.
প্রথমত কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় ভীষণ বিরক্ত ঈশা।দ্বিতীয়ত এই রাতে ঈশান তাকে শাড়ি পরতে বাধ্য করছে মুড অফ থাকলে শাড়ি পরার মন থাকে?এই কথা বোঝাবে কে এই ছেলেকে।মুখটা ভার করে ঈশানের পাশাপাশি হাটছে সে।ঈশান শাহরিয়ার আজ একেরপর এক চমক দেখাচ্ছে ঈশাকে নিয়ে তিনি ঘুরতে এসেছেন কিন্তু কোন গাড়ি আনেননি।কেন আনেননি?কারন তিনি নাকি আজ পায়ে হেটে ভ্রমণ করবেন।সেদিন হাসিনের দেওয়া বেগুনি রঙের শাড়িটি পরেছে ঈশা।ডান হাতটা যে ঈশান ধরেছে এই হাত ছাড়ার আর নাম নেই।ঈশানের পাশাপাশি হাটছে সে কোথায় যাচ্ছে,কেন যাচ্ছে সে নিজেও জানে না।তার মন খারাপের সঙ্গ দিচ্ছে দূর আকাশের সরু বাঁকানো চাঁদটা।সে যতটুকু যাচ্ছে মনে হচ্ছে চাঁদটাও তার পাশাপাশি হাটছে।ঈশা কিছুক্ষণ পর পর আকাশের দিকে চোখ বুলায় তার হাভ ভাব বুঝতে পেরে ঈশান বলে,

” ছোট বেলার অভ্যাস এখনো আছে?চাঁদ পাশাপাশি হাটে এই ভ্রান্ত ধারণা মাথায় নিয়ে ঘুরার?”

” ভ্রান্ত ধারণা হলেও এটা ভাবতে তো মন্দ লাগে না।”

” তা বেশ বলেছো।”

” আজ হঠাৎ আমাকে নিয়ে বের হলেন?”

” ভাবলাম কিছু স্মৃতি তৈরি করি।”

” স্মৃতি কিন্তু পুড়ায় জানেন তো?”

” সেটা অবস্থান বুঝে।”

প্রত্যুত্তর করলো না ঈশা।দুজনে হাটতে থাকলো উদ্দেশ্যহীন পথে।আশেপাশে হাটছে পথচারীরা তারা নিশ্চয়ই তাদের গন্তব্যে হাটছে কিন্তু ঈশানের আজ কোন গন্তব্য নেই যতটা পারা যায় আজ হাটবে সে।

” ঈশান বোবা হয়ে হাটলে কি মজা আছে?আপানি কোন কথাই বলছেন না।”

” আমি কথা খুঁজে পাচ্ছি না ঈশা।আমার আজ নিরব থাকতে বেশি ভালো লাগছে।”

“চলুন মেলায় যাই।সামনে একটা মেলা আছে।”

” মেলা আমার মোটেও ভালো লাগে না ঈশা।কেমন গিজগিজে অবস্থা।”

” এসব বলে তো লাভ নেই।চলুন চলুন মেলায় যাই।”

ঈশার জেদের কাছে হারলো ঈশান দুজন মিলে অবশেষে প্রবেশ করলো মেলায়।চারিদিকে গিজগিজে অবস্থা দেখে ভীষণ বিরক্ত প্রকাশ করলো ছেলেটা কিন্তু তার এসব হাভ ভাবে পাত্তা দিলো না ঈশা।সে পুরো মেলায় আনন্দের সাথে ঘুরছিলো।হাওয়াই মিঠাই দেখে চেচিয়ে বলে,

” ঈশান ঈশান চলুন আমরা পিংকি খাই।”

” পিংকি?”

ভ্রু কুচকালো ঈশান।ঈশা এক গাল হেসে ঈশানের হাত টেনে বলে,

” হাওয়াই মিঠাইকে আমরা পিংকি বলি।তার রঙটা দেখুন কি সুন্দর!”

” এই নাম নিশ্চয়ই অনু দিয়েছে?”

” আপনি কি করে বুঝলেন।”

” মেয়েটাকে আমি ভালোভাবে চিনেছি ওর সাথে আমার অতি জরুরি বৈঠক আছে।”

” বৈঠক!”

” বুঝবে না তুমি চলো।”

হাওয়াই মিঠাই হাতে দাঁড়িয়ে ছিল ছোট্ট একটি ছেলে।এই বয়সে তার ঘাড়ে হয়তো সংসারের চাপ পড়েছে।ছেলেটাকে দেখে ভীষণ মায়া লাগলো ঈশার।ঈশান বুঝতে পারলো ঈশার চাহনি ছেলেটিকে বললো বিশটা হাওয়াই মিঠাই দিতে।ঈশানের নির্দেশ শুনে ঈশা বিচলিত কণ্ঠে বলে,

” এতগুলো দিয়ে আমি কি করবো?”

” যাকে ভালো লাগবে তাকে দিবে নিতে বলেছি নাও।”

ঈশা বিশটা হাওয়াই মিঠাই নিয়ে হাটা শুরু করে আশেপাশে যেখানে বাচ্চা পেয়েছে একটা একটা করে তাদের হাতে দিয়েছে।সব শেষে তার হাতে রইলো একটি।চুড়ির দোকানে গিয়ে ঈশা বললো সে চুড়ি কিনবে তাতে অবশ্য বারণ করলো না ঈশান।এক মুঠ চুড়ি হাতে নিতে তার হাত আঁকড়ে ধরলো ছেলেটা।

” দাও আমি পরিয়ে দি।”

ঈশা বাঁধা দিলো না ছেলেটা কি সুন্দর যত্ন করে ঈশার হাতে চুড়ি পরিয়ে দিচ্ছে।ঈশার চুড়ি কেনা শেষ হতে একে একে পাঁচ ডজন চুড়ি কিনলো ঈশা। প্রতিট ডজনের আলাদা আলাদা সাইজ দেখে সন্দিজান কণ্ঠে ঈশান বলে,

” এসব কার?”

“আন্টি,রুমাপু,রুদবা,অনু,আর আম্মুর জন্য সুন্দর হয়েছে না?

” আম্মু আর আন্টি এই বয়সে কাঁচের চুড়ি পরবে!”

” আমার জন্য পরবে।আপনার কোন সমস্যা?”

” ম্যাডাম হুকুম করেছে আমি আর কি বলতে পারি?”

ঈশা পছন্দ করে রুদবার জন্য আরো কয়েকটা ক্লিপ কিনলো।পুরোটা মেলা ঘুরলো ঈশা।শেষে তার জেদ চাপলো সে নাগর দোলায় উঠবে ঈশান বেশ কয়েকবার বারণ করলো মেয়েটাকে কিন্তু ঈশা তার বারন শুনেনি।কি আর করার শেষ পর্যন্ত নাগর দোলায় চড়ে বসলো দুজনে।প্রথম প্রথম সবটা ঠিক ছিল কিন্তু যখনি নাগর দোলা জোরে জোরে ওঠা নামা শুরু করলো তখন ঈশার চিৎকারে কানের পর্দা ফাটার জোগাড় হলো ঈশানের।মেয়েটা খুবলে ধরেছে ঈশানের হাত বড় বড় নখের কারনে ঈশানের হাতের চামড়ায় দেবে গেছে নখ।ঈশার গলা ফাটানো চিৎকারে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে ঈশান।

” এত চিৎকার দিচ্ছ কেন?আস্তে আস্তে প্লিজ মুখে তালা দাও।”

” ভ.. ভয় লাগছে আমাকে নামাই দেন।”

” উঠবে বলছিলে এখন নামবে কেন?”

” না না আনি নামবো আমার ভয় লাগছে।”

নাগর দোলার গতি বাড়লো ঈশা পুনরায় চিৎকার দিতে এবার ঈশান নিজেও চিৎকার দিতে শুরু করে ঈশানের চিৎকারে চুপসে যায় ঈশা।

” আপনি চেচাচ্ছেন কেন?”

” আমি ফিল করতে চাইছি তুমি চেচিয়ে কি মজা পাচ্ছো।”

” আসুন তবে একসাথে করি।”

ঈশান ঈশা দুজনে একসাথে চিৎকার দিতে তাদের কান্ডে আশেপাশে থাকা অন্যরা ভুত দেখার মতো তাকিয়ে রইলো।ঘুরানো শেষে হেলেদুলে নামলো ঈশা প্রচন্ড মাথা ঘুরানোর ফলে তার শরীরে একটু শক্তিও নেই।

ঈশান ঈশার হাত টেনে বসালো পাশে থাকা ফুসকার দোকানের একটি চেয়ারে।

” ফুফা ফুফুর গর্বের কারণ নাকি তাদের মেয়ে হবে বাহ এখন তো দেখছি সেই মেয়ে আসলেও গর্বের কারণ হবে।রাত বিরাতে ছেলে নিয়ে মেলায়।”

চিরপরিচিত কণ্ঠে কেঁপে উঠলো ঈশা।পাশে তাকাতে অয়নকে দেখে কলিজাটা মুচড়ে উঠলো।অয়নকে দেখে মেজাজটা বিগড়ে গেলো ঈশানের কিন্তু ঈশার সামনে কোন ঝামেলা চায় না সে।

” অয়ন ভাই।”

” আশা করনি তাই না?চিন্তা করো না ফুফা ফুফিকে কিছু বলবো না।”

” বলা বলির তো কিছু নেই মা বাবার অনুমতিতে এখানে এসেছি।”

” ওও বড়লোক ছেলে দেখে তোমার মা বাবার কান্ডজ্ঞান লোপ পেয়েছে।টাকার লোভ সবারি থাকে।”

” ঈশানের সাথে আমার বিয়ে ঠিক আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন?”

” বিয়ে তো আর হয়নি।”

” তো?ভালোবাসি আমরা একে অপরকে।এই যে ঈশান আমার হাত ছুঁয়েছে তাতে আপনার গায়ে লাগছে তাই না?আপনার মতো নোংরা ছোঁয়া তো তার নয়।”

” ঈশা মুখ সামলে কথা বলো।”

” মুখ আপনারো সামলানো উচিত ছিল।”

” এইটুকুনি মেয়ে কোলে পিঠে মানুষ করেছি এখন মুখেমুখে তর্ক করছো?এক চড়ে…”

” চুপ একটা কথাও আর শুনতে চাই না।”

শেষোক্ত বাক্যে ঈশানের কথায় চুপ হয় যায় অয়ন।ঈশানের দিকে তাকিয়ে তার রাগ বাড়লো বহুগুন।

” আপনি কে? আমি আমার কাজিনের সাথে কথা বলছি সরে দাঁড়ান।”

” আপনার কাজিন আমার হবু স্ত্রী।”

” এই যে মিস্টার বেশি বাড় বেড়েছেন।”

“কে বেশি বাড় বেড়েছে প্রকাশ করবো কী?হোটেল রুম নাম্বার একশ চার কি ঠিক বলছি তো মিস্টার অয়ন?”

ঈশানের কথায় চুপসে যায় অয়নের মুখ।তার চোখে মুখে ছেঁয়ে গেছে আতঙ্ক সেই চাহনি সন্দিহান চোখে পরখ করলো ঈশা।অয়ন কথা বাড়ালো না সে উলটা পথে আবার হাটা শুরু করলো।অয়নের ব্যবহারে খটকা লাগলো ঈশার।

” হোটেল রুম নাম্বার একশ চার কি ঈশান?এই কথা বলায় অয়ন ভাই ভয় পেল কেন?”

” তুমি বুঝে নিও ঠান্ডা মাথায় আপাতত আমি কিচ্ছু বলবো না।”
.

অয়নের আগমনে ঈশার মনটা খারাপ হলেও ঈশান সেই মন খারাপের সময়টা দীর্ঘ হতে দিলো না।
এটা ওটা বলে মেয়েটাকে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা চালালো ঈশান।রাত প্রায় নয়টা বেজে গেছে অদ্ভুত এত অল্প সময় কাটালো অথচ নয়টা বেজে গেলো।

” কি খাবে ঈশা ডিনার করে বাসায় ফিরবো।”

” চলেন ঝালমুড়ি খাই।”

” এসব খেয়ে কি পেট ভরবে?”

” আমার চলবে।”

ঈশান বারণ করলো না।ঈশাকে ঝালমুড়ি কিনে দিয়ে সে দাঁড়ালো ঈশার পাশে।মেলায় ভিড় বেড়েছে আশেপাশের ধাক্কাধাক্কারি ফলে একজনের গা ঘেষে আরেকজন যাচ্ছে।এসব মোটেও ভালো লাগে না ঈশানের।তার দুই হাত প্রশস্ত করে যতটা পারা যায় ঈশাকে আগলে রাখলো ঈশান।ঈশানের কান্ডে পাশের দোকানে থাকা একটি লোক বলে,

” নোয়া বিয়া নাকি?”

ঈশান প্রত্যুত্তর করলো না কপট হেসে তাকালো লোকটার দিকে।

” পথম পথম এমন হজ্ঞলের আদর সোহাগ থাহে বিয়ার একবছরে দেহা যায় আসল মুখ।”

বুকের ভেতর ধক করে উঠলো ঈশার।ঈশানের পরিবর্তন সে মানতে পারবে না কিছুতেই না।ঈশানের ভালোবাসা পাওয়ার লোভ তার সর্বদা থাকবে।লোকটার কথায় স্মিথ হাসে ঈশান।নম্র স্বরে লোকটিকে বলে,

” দোয়া করবেন মামা এই আদর সোহাগ যেন আমার শেষ নিশ্বাস অবধি থাকে।”

মেলায় ঘুরাঘুরি শেষে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো তারা।ঈশাদের বাড়ির রাস্তাটা একটু বেশি নির্জন যার কারনে ঈশার হাতে থাকা কাঁচের চুড়ির টুংটাং আওয়াজ কানে আসছিলো ঈশানের।মেয়েটার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে ঈশান আশেপাশে কয়েকটি কুকুর দেখে ভয়ে কুঁকড়ে উঠলো ঈশা।তাদের দেখে কেমন ঘেউ ঘেউ করছে।ঈশান বুঝতে পেরে হাসতে শুরু করলো।

” সেদিনের কথা মনে আছে ঈশা?”

” জীবনেও ভুলবো না।কুকুর গুলোর চেয়ে আপনি সাংঘাতিক ছিলেন।দৌড়ের মাঝে আমাকে প্রস্তাব দিয়েছেন ভাবা যায়।”

” ঈশান শাহরিয়ার সু্যোগের সৎ ব্যবহার করতে কখনো ভুলে না।”

ঈশাদের ফ্লাটের কাছাকাছি আসতে পা থেমে গেলো ঈশানের।এখন বিদায়ের পালা এই বিদায় না দিলে কি হয়?ঈশাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলেই তো পারে।ঈশানের মনটা বড্ড বেশি খারাপ হলো।

” এখন তবে যাই?”

” চলে যাবে?”

” আমার তো দেরি হয়ে গেছে ঈশান।অন্য একদিন আবার ঘুরবো।”

” তবে যাও।”

ঈশান ঈশার হাত ছাড়লো না ধরে রাখলো এখনো।যাওয়ার অনুমতি দিয়েও মেয়েটাকে ছাড়ছে না সে।

” ঈশান ছাড়ুন এবার।”

” না ছাড়লে?”

” এখানে দাঁড়িয়ে দূর আকাশের চাঁদ দেখবো।”

” আমার অদূরের চাঁদ তো তুমি,আমি না হয় বিভোর চোখে তোমায় দেখবো।”

ঈশা লাজুক হাসে ঈশান তার হাত ছেড়ে দিলো বিদায় জানিয়ে ঈশা চলে গেলো গেটের ভিতর অপরদিকে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো ঈশান।

ঈশা যাওয়ার পর বড় বড় পা ফেলে হেটে এগিয়ে যাচ্ছে ঈশান।হঠাৎ আবছায়ায় আলোয় নজরে এলো একটি ছেলে কানে ধরে উঠবস করছে ভালোভাবে পরখ করতে ঈশান বুঝলো এই ছেলেটি রাসেল।দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে রাসেলের কান টেনে দাঁড়া করালো ঈশান।

” কানে ধরে উঠবস করছিস কেন?মাথা কি ঠিক আছে?”

” অনুর সাথে ঝামেলা হয়েছে আমার সাথে রাগ করে হারপিক খাবে বলছে তাই…”

” তোর বুদ্ধি কি দিন দিন হাটুতে নামছে?অনুর সাহস আছে এসব করার।তুইও না একটা গাঁধা।”

” ওই দেখ তুই হারপিকের বোতল হাতে দাঁড়িয়ে আছে।”

ঈশান উপরে তাকালো বারান্দায় অস্পষ্ট একটি মেয়েকে দেখা যাচ্ছে।ঈশান ফোন করলো অনুকে মেয়েটাও ভাবলো হয়তো তাকে বোঝাতে ফোন করেছে তাই ভাব দেখাতে ফোন ধরলো অনু।কিছুটা রাগী ভাব নিয়ে বলে,

” বলুন ভাইয়া।”

” তুমি নাকি হারপিক খাবে?এক্ষুনি খাও তোমার হসপিটালের যাবতীয় সব খরচ আমি দিব।তাই কোন চিন্তা নাই এক্ষুনি হারপিক খাও।”

” ভাই…”

” এত কথা কিসের এক্ষুনি খাবে তুমি।আমি দেখতে চাই অনুর কতখানি সাহস আছে।”

” ভাইয়া আমি তো.. ”

” তুমি হারপিক খাবে অনু যদি না খাও এখনি তোমার বাসায় গিয়ে…”

” সরি ভাইয়া সরি।রাসেলকে একটু জ্বালাচ্ছিলাম আসলে ঝগড়া না করলে মজা নাই।আপনার ভয়ে আমি এখন ফোন বন্ধ করে রাখবো তাই দয়া করে আমায় আর ফোন দিয়ে টেনশনে রাখবেন না।ভালো থাকবেন দুলাভাই।”
.

” ঈশান নাকি আজ ঈশার সাথে বেরিয়েছে?”

” জি ঠিক শুনেছেন।”

“সম্পর্ক কত দূর?”

” অনেকটা গভীর।আমি মাঝে মাঝে ভাবি নওশীন ঈশা মানে মিসেস শাহরিয়ার যখন জানতে পারবেন তার হাজবেন্ড ঈশান একজন রেপিস্ট তখন এত আবেগ,এত প্রেম কোথায় যাবে?”

শেষোক্ত বাক্যটি বলে হাসতে শুরু করলেন আগন্তুক।তার হাসিতে তাল মেলালো অপর ব্যক্তিটি।
#চলবে___

#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩২খ]
____________________
৭৪.
রাত তিনটা বাজতে চললো ঈশান বেঘোরে ঘুমোচ্ছে তার সামনে পড়ে আছে ল্যাপটপ।ল্যাপটপের স্কিনে ভাসছে ঈশার মুখ, দুজনে এতক্ষণ ভিডিও কলে কথা বলছিল কিন্তু কথার মাঝে ঘুমিয়ে পড়ে ঈশান।ক্লান্ত শরীরে এই দুচোখ মেলে রাখার আর কোন শক্তি নেই।ঈশা চুপচাপ দেখছে ঈশানের ঘুমন্ত মুখ।আজ তার পরিক্ষা শেষ হয়েছে তাই এখন থেকে তার ছুটি।সেই আগের মতো ঘুরা ফেরা জীবনের আনন্দ ফিরে আসবে।ঈশা হাত নাড়িয়ে কাচের চুড়িগুলো দেখে সেদিন ঈশান মেলা থেকে চুড়িগুলো কিনে দিয়েছিল তাকে।সেদিনের পর কাটলো তিনমাস এই কয়েক মাসে কত কি পালটেছে তাদের জীবনে কিন্তু ভালোবাসা পালটেনি দুজনের প্রতি দুজনের ভালোবাসা শ্রদ্ধাবোধ বরং সময়ের তালে তালে বাড়ছে।

হাতের চুড়ি খুলে বিছানার এক কোনে রাখলো ঈশা গায়ের শাড়িটা নিয়েই ঘুমিয়ে পড়তে উদ্যত হলো।ঈশানের অনুরোধে শাড়ি পরেছিল সেই দশটা থেকে ভিডিও কলে কথা চলছিল তাদের কিন্তু তিনটার আগেই ঘুমিয়ে গেলো ঈশান।কল কেটে শুয়ে দু’চোখ বন্ধ করলো ঈশা এখন সে ঘুম দেবে শান্তির ঘুম।
.
বিছানায় তিনটে জামা রেখে উলটে পালটে দেখছে ঈশা।আজ সে কোনটা পড়বে?তিনটাই ভালো লাগছে তাই তো তার এত ভাবনা।ঈশান বলেছে বিকালে বের হবে কতদিন পর একান্ত বের হওয়ার সুযোগ হলো।হঠাৎ ঈশার কক্ষে হন্তদন্ত পায়ে প্রবেশ করলেন সুলতানা মেয়ের হাত টেনে বলেন,

” কোথায় যাবে?”

” ঈ..ঈশানের সাথে।”

” কোথাও যাবে না তুমি।একদম কোথাও না।”

মায়ের কথায় অবাক হলো ঈশা।সন্দিহান চোখে তাকাতে সুলতানা টেনে ধরলো তার হাত।

“চলো তোমার বাবার কাছে ”

” কেন আম্মু কি হয়েছে?”

” চলো আগে তারপর সব শুনতে পাবে।”

মায়ের হঠাৎ এমন আচরণে ঘাবড়ে গেল ঈশা।মুজাহিদ হাসান তখন কপালে হাত ঠেকিয়ে বসে আছেন ঈশাকে দেখে কিছুটা স্বাভাবিক হলেন তিনি।ঈশা গিয়ে বসলো তার বাবার পাশে মুজাহিদ হাসান মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,

“তোমায় কিছু কথা বলবো চুপচাপ শুনবে।”

” হুম।”

” ঈশানের সাথে তোমার বিয়ে আমরা ঠিক করেছি আবার আমরাই এখন ভেঙে দিতে চাইছি এত তোমার মতামত কি?”

মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো ঈশার।বসা থেকে ত্বরান্বিত উঠে দাঁড়ালো সে।

” এসব কি বলছো কেন বলছো?”

” আমি জানি ঈশানের প্রতি তোমার অনুভূতি তৈরি হয়েছে সময়ের সাথে সাথে যা তোমায় পুড়িয়ে মা র বে।তাই এখনি সময় সঠিক সিদ্ধান্তের।”

” বাবা এসব কেন বলছো?”

” ঈশান ক্ষমতার দাপট দেখায় তা আমি জানতাম কিন্তু ঈশান যে ক্রিমিনাল মাইন্ডের তা তো জানতাম না।”

” কি করেছে ঈশান?কেন এসব বলছো?”

মুজাহিদ হাসান ঈশার দিকে তার মোবাইল বাড়িয়ে দিলেন। স্কিনে একটি ছবি যেখানে দেখা যাচ্ছে ঈশান অয়নের গাল চেপে রেখেছে আর অয়নের হাত পা চেয়ারের সাথে বাঁধা চোখে কালো কাপড়।এমন আরো বেশ কয়েকটি ছবি একেরপর এক দেখলো ঈশা।মা বাবার কাছে এসব ছবি কি করে গেল?ভয়ে গলা শুকিয়ে এলো তার।

” এবার কেন বারণ করেছি নিশ্চিয়ই বুঝতে পারছো?যে ছেলে আমাদের আত্মীয়দের ক্ষতি করে সেই ছেলের প্রতি আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।আমি মেনে নিয়েছিলাম টাকা দিতে পারিনি আমার অন্যয় কিন্তু অয়ন কি দোষ করেছিল?সেই কদিন অয়ন নিখোঁজ করেছিল এই ঈশান শাহরিয়ার।”

” বাবা উনারা বিয়ে ভাঙার কথা এসব জানলে..”

ঈশার কথা থামিয়ে দিলেন সুলতানা মেয়েকে ধমক দিয়ে বলেন,

” সেসব আমরা জানবো তোমাকে ভাবতে হবে না।তুমি শুধু ওই ছেলেকে ভুলে যাবে।আহারে অয়নের মতো ভালো ছেলে আর কয়টা পাওয়া যায়?গুন্ডা ছেলেটা কেন অয়নের উপর অত্যাচার করলো।”

” অয়ন ভাই ভালো?অয়ন ভাই মোটেও ভালো না।

” ঈশা একটা চড় লাগাবো।ঈশানের মোহে পড়ে এখন উদ্ভট কথা বলছো।”

মায়ের কথা উপেক্ষা করে বাবার দিকে তাকালো ঈশা।

” বাবা তুমি আমায় বুঝবে এই বিয়ে ভেঙ্গে দিও না ঈশান জানতে পারলে সব তছনছ করে ছাড়বে।”

ঈশার কথায় তেতে উঠলেন সুলতানা।মেয়ের হাত টেনে বলেন,

” তুই এখনো এই বিয়েতে মত দিচ্ছিস?”

” হ্যাঁ কারণ সত্যাটা আমি…”

আকস্মিক চড় পড়ার শব্দে মাথা তুলে তাকালেন মুজাহিদ হাসান।ঈশা গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অপরদিকে সুলতানা রেগে অগ্নিশর্মা। বড় হওয়ার পর বাবা মা কখনো ঈশার গায়ে হাত তুলেনি তুলবে কি করে?একমাত্র আদরের মেয়ে অথচ আজ চড় বসিয়ে দিল!গালে হাত দিয়ে মুজাহিদ হাসানের পাশে বসে পড়লো ঈশা তার মাথা একটুও কাজ করছে না।মুজাহিদ হাসান চোখ রাঙিয়ে তাকালেন সুলতানার দিকে।

” আমি বুঝতে পারছি তোমার খারাপ লাগছে।কিন্তু এখন যা তোমার কাছে প্রকাশ করবো সেটা আমি কখনো চাইনি তোমাকে জানাতে।যদি তুমি অয়নের ব্যপারটা জানার পরেও ঈশানের পক্ষপাত না করতে আমি জানাতাম না কিন্তু এখন জানাবো।নাও এই কল রেকডটা মন দিয়ে শুনবে।”

ঈশা হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিলো পুরোটা কল রেকর্ড সে শুনছিল ঈশানের খুব কাছের কেউ তার বিষয়ে একের পর এক বলছে।এগুলো কি আদৌ সত্যি?হয়তো তাই।কল রেকর্ডের মাঝামাঝি সময়ে যখন ঈশা শুনতে পেল ঈশান রেপিস্ট ঈশার মাথায় যেন আকাশটা ভেঙ্গে পড়লো।ভালোবাসা জমানো হৃদয়টায় এক নিমিষে খরার ন্যায় শুষ্ক চৌচির হয়ে গেল।

” বাবা এসব মিথ্যে আমি ঈশানকে বিশ্বাস করি বাবা।”

” নিজ কানে শুনেছো তুমি?এরপর আমার কিছু বলার নেই।”

“ঈশান রেপিস্ট নয় আমি ঈশানের সাথে কথা বলবো আমাকে জানাতে হবে এসব ষড়যন্ত্রের কথা।”

ঈশা উঠে দাঁড়ালো পা বাড়াতে পথ রুদ্ধ করলো সুলতানা।

” তুমি কোথাও যাবে না ঈশা।এখন তুমি ওসব কথা ঈশানকে জানাতে গেলে তোমার কি ধারণা ও তোমায় ছেড়ে দেবে?উলটো তোমার সঙ্গে খারাপ কিছু হবে।”

” সবটা না জেনে সত্যিটা না জেনে আমি তার এই মিথ্যার কাহিনী সত্যি ভেবে নিবো?আর বিয়েটে ভেঙেও দেব?”

“অবশ্যই ভাঙবে যা বলছি তোমার ভালোর জন্য বলছি। বিয়ে ভাঙার পর ঈশান নিশ্চয়ই আমাদের ছেড়ে কথা বলবে না আর সেই জন্য সব পরিকল্পনা করা আমাদের শেষ।এক্ষুনি তুমি ব্যাগপত্র ঘুছিয়ে নাও আমার বান্ধবী শম্পার বাসায় তোমায় পাঠিয়ে দিব।

” আম্মু…”

” ঈশা এতদিন আমরা জেনে এসেছি আমাদের অবাধ্য মেয়ে তুমি নও।”

ঈশা দ্বিতীয়বার কথা বলার সাহস পেল না।ছোট ছোট পা ফেলে এগিয়ে গেল নিজের রুমে।
.
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো।আজ ঈশাকে নিয়ে বের হওয়ার কথা ছিল বিধায় নিচে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিল ঈশান।এতগুলো কল দেওয়ার পরেও ঈশার নাম্বার বন্ধ দেখে কিছুটা দুশ্চিন্তায় পড়লো।উপায়ন্তর না পেয়ে ঈশাদের ফ্লাটে গেল ঈশান।দরজা খুললেন মুজাহিদ হাসান অনন্য দিনের তুলনায় তার মুখে হাসি নেই।মনে খটকা লাগলো ঈশানের কোন গন্ডোগোল হয়নি তো? ঈশান প্রতিদিনের ন্যায় সোফায় গিয়ে বসলো ভেতরের রুম থেকে কান্নার আওয়াজ স্পষ্ট শুনলো ঈশান।কে কাঁদছে?ভেতরটা ভয়ে কুঁকড়ে উঠলো ঈশানের।

” কিছু কি হয়েছে আঙ্কেল?ঈশা কোথায়?এতবার ফোন দিলাম ধরলো না।”

” তোমাকে কথাটা যে কি করে বলি…”

ভীষণ ইতস্ত বোধ করছিলেন মুজাহিদ হাসান দ্বিধাবোধ নিয়ে তাকালেন ঈশানের দিকে।

” ঈশার কিছু হয়েছে প্লিজ আমায় বলুন এভাবে চুপ করে আছেন কেন?”

” ঈশা নেই বাবা।”

” নেই মানে!”

“ও চলে গেছে কোথায় গেছে কি উদ্দেশ্যে গেছে আমরা কিচ্ছু জানি না।”

ঈশান উঠে দাঁড়ালো দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলো ঈশার রুমে।তার পিছু পিছু চললো মুজাহিদ হাসান।সুলতানা ঈশার রুমে বসে অলীক কান্না কাঁদছিলেন।ঈশানকে দেখে তার কান্নার আওয়াজ ক্রমাগত বাড়তে থাকলো।

” ঈশা হঠাৎ এমনটা কেন করবে?আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে।”

মুজাহিদ হাসান টেবিল থেকে একটি কাগজ এনে ঈশানের হাতে দিলেন।ঈশান সেটি পড়ে স্তব্ধ হয়ে যায় কাগজে লেখা ছিল, ” আমি আমাকে ঘুছিয়ে নিতে চাই।এই বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।আমি কেন বাড়ি ছেড়েছি সেই জবাবদিহি করতে বাধ্য আমি নই।ঈশানকে বলে দিও আমার অপেক্ষায় যেন না থাকে।”

ঈশান কয়েক সেকেন্ড চুপচাপ রইলো সুলতানার কান্নার স্বর তার মস্তিষ্কে উথাল-পাতাল ঝড় সৃষ্টি করছে।

” ঈশা এমন করতে পারে না কখনোই না।”

” আমি ভেবে পাচ্ছি না আমার মেয়ের এতটা সাহস কি করে হলো সে…”

ঈশানের সন্দিহান চোখের আদলে পড়ে মুজাহিদ হাসান কিছুটা ন্যাকা কান্নার ভান ধরলেন।মাথায় হাত দিয়ে ঘুরে পড়ার অভিনয় করে গড়িয়ে পড়লেন মেঝেতে ঈশান দ্রুত তাকে ধরে নেয়।

” আমার মেয়ে, আমার মেয়ে কেন এমন করলো।”

” আমি ঈশাকে খুঁজে বের করবো এভাবে বললেই সব শেষ হয়ে যাবে না।এমন দুঃসাহস দেখানোর জবাব তাকে দিতেই হবে।”

ঈশানের কণ্ঠে মিশে ছিল ক্ষোভ।সুলতানা ভয় পেয়ে গেলেন থতমত খেয়ে বলেন,

” আমি চাই না ওই মেয়েকে যে মেয়ে আমাদের সম্মানে কালি মেখে যায়।”

” কিন্তু আমার তাকে চাই।
ন্যায় করলেও চাই অন্যায় করলেও আমার তাকেই চাই।”
৭৫.
আতঙ্কে ঈশার মুখটা যেন নীল হয়ে গেছে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে বার বার।সুলতানার ছোট বেলার বান্ধবী শম্পা আগে তারা ঈশাদের এলাকায় থাকতো।গত তিন বছর আগে ভাড়া বাড়ি ছেড়ে নিজেদের এক তলার বাড়িতে উঠেছে।ঈশাদের বাড়ি হতে শম্পাদের বাড়ি আসতে প্রায় এক ঘন্টা লেগে যায়।তাই আগের মতো আসা যাওয়া খুব কম হয় তাদের।ঈশা শেষ বার এসেছিল প্রায় একবছর আগে।তাই তো জায়গাটা চিনতে তার খুব একটা অসুবিধে হয়নি।শম্পা নিজের মেয়ের মতো আদর যত্ন করেন ঈশাকে আজ যখন জানতে পারলো ঈশা আসবে তখন খুশি মনে হরেক রকমের রান্নার কাজে লেগে গেছেন এসব খাবার আদৌ ঈশার গলা দিয়ে নামবে?হয়তো না।শম্পার এক ছেলে সাঈদ আর ছেলের বউ নেহা এবং নাতনিকে নিয়ে বসবাস।রাত প্রায় বারোটা বাজতে চললো ডাইনিং টেবিলে সবাই মজা করে খাচ্ছে কিন্তু খাওয়ার গলা দিয়ে নামছে না ঈশার।ভয়ে আতঙ্কে তার জান যায় যায় অবস্থা।ওই দিকের কি খবর সেটাও এখনো জানা হলো না।ঈশার এই উদাসীন ভাব দেখে কিছুটা রেগে গেলেন শম্পা।

” তোর মা বাবা কবে থেকে এত হেঁয়ালিপনা শুরু করেছে বলতো?তোর বিয়ে দিবে একটু খোঁজ খবর নিবে না?”

শম্পার ছেলে সাঈদ মাথা তুলে তাকালো ঈশার দিকে হাসিখুশি চঞ্চল মেয়েটার কি হাল হয়েছে।

” চিন্তা করিস না ঈশা তোর ভাইয়া আছে না?তোর জন্য যোগ্য পাত্র খুঁজে বের করবো।”

সাঈদের কথায় মলিন হাসলো ঈশা।নেহা তার পাতে এটা ওটা বেড়ে দিচ্ছে।সাঈদের পাশে বসেছে নেহার ভাই অলক ছেলেটা বারবার অপাদমস্তক খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে ঈশাকে।এই মেয়েটাকে সে কোথাও যেন দেখেছে কিন্তু কোথায় দেখেছে? তা মোটেও মনে আসছে না।ঈশাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে একপ্রকার নিজের সাথে নিজে যুদ্ধ করছে অলক।
.
ঘামে ভিজে একাকার ঈশানের গায়ের শার্ট।ছেলেটে হন্য হয়ে খুঁজছে ঈশাকে।ফ্লাটের সিসি ক্যামরা থেকে স্পষ্ট দেখা গেছে ঈশা কাধে ব্যাগ নিয়ে মাথায় ওড়না চেপে হাটা ধরেছে।এরপর আর ঈশার সম্পর্কে কোন হদিস পেল না ঈশান।মেয়েটার প্রতিটা আত্নীয়র বাড়িতে যোগাযোগ করেছে কিন্তু ঈশা নেই।ঈশান যতটা পারা যাত আশেপাশে লোক লাগিয়ে খুঁজছে ঈশাকে।মাহমুদা এই সম্পর্কে কিচ্ছু জানেন না অবশ্য তাকে এসব জানাতে ঈশান নিজেই বারণ করেছে।

” ঈশান চল খেয়ে আসি আন্টি বার বার ফোন করছেন।”

রাসেলের কথায় কিছুটা রেগে গেলো ঈশান।
” তোকে বলেছিলাম আম্মুকে ম্যানেজ করতে, বলবি অফিসে আছি এত বিরক্ত কেন করছিস রাসেল?”

” ঈশান প্লিজ চল খেতে যাই।না খেলে তোর শরীর খারাপ হবে।”

” এই ব্যপারে আরেকটা কথা বললে খুব খারাপ হয়ে যাবে রাসেল।আগে ঈশাকে খুঁজে আন এই মেয়ের মাথায় হঠাৎ কোন ভূত ঢুকেছে যে সে পালিয়ে গেছে?সে কি বোঝাতে চাইছে?তার ফ্রিডম চাই?আমি কি তাকে ফ্রিডম দি নাই?”

” ঈশান আমার সন্দেহ হচ্ছে ঈশা যদি চলে যাবে তাহলে আজ কেন তোর সাথে বের হওয়ার জন্য রাজি হবে?ঈশা তোকে ভালোভাবে চেনে তোর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার মূল্য কতটা সেটা ঈশা জানে এমনটা সে করবে নারে।”

রাসেলের কথা শেষ হতে রাজিব এগিয়ে আসে ঈশানের কাছে।ছেলেটারো আজ বেহাল দশা ঈশানের প্রতিটা নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করা যে তার দায়িত্ব।

” ভাই ঈশার ফুফু,খালা,মামা সবার বাড়ির আশেপাশে খোঁজ নিয়েছি ঈশার সাথে তাদের কোন যোগাযোগ হয়নি।তবুও আমি লোক রেখেছি সন্দেহ জনক কিছু পেলে আমাদের জানাবে।”

” হুম তুই এবার বাড়ি যা।”

” জি ভাই।”

ঈশানের নির্দেশ পেয়ে রাজিব চলে গেলো।হৃদয় এতক্ষণ তার লোকদের সাথে আলাপ পরামর্শ করছিল রাত প্রায় সাড়ে বারোটা বাজে এবার তার বাড়ি ফেরা দরকার তাই ঈশানের কাছে গিয়ে বলে,

” আমি আমার লোকদের চারদিকে ছড়িয়ে দিয়েছি বাস স্ট্যান্ড,হসপিটাল,রেল স্টেশন,রেস্টুরেন্টে আরো কিছু জায়গায় ছড়িয়ে দিয়েছি খবর পেলে আমাকে জানাবে।”

“তাহলে তুমি বাড়ি যাও।”

হৃদয় তার গাড়ি নিয়ে চলে গেলো। ঈশাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে রইলো ঈশান এবং রাসেল।রাসেলের ক্লান্ত মুখখানি দেখে মায়া লাগলো ঈশানের কপট হেসে সে বলে,

” বাড়ি যাবি?চল যাই।”

” ঈশা এমনটা কেন করবে?আমার মাথা কাজ করছে না।অনু কাঁদছে ঈশা তাকেও কিছু বলেনি।”

“চলে গিয়ে লাভ নেই রাসেল ঠিকি আমার সামনে সে আসবে ধরা পড়বে।”
#চলবে___